তুমি আছো তাই পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0
500

#তুমি_আছো_তাই
#অন্তিম_পর্ব
#লেখিকা_তাসনিম

“অনু এই অনু বেলা ১১ টা বাজতে চললো,ওঠ এখনো ঘুম থেকে যে উঠছিস না,পরে এয়ারপোর্টে যাবি কিভাবে তুই না শাকিলকে বললি ওর সাথে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যাবি”

অনু ঘুম ঘুম চোখে আনিকার দিকে তাকালো, কি বললো ও এতক্ষণ বুঝতে পারছে না,অনু আস্তে আস্তে উঠে বসলো,আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ও ওর রুমে এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলো।শাকিল কোথায় ওদের তো কাবিন হয়েছিল, এখন অনুষ্ঠান হচ্ছিল, কোথায় গেল এসব।

“কিরেএএ,শাকিল রা তো রেডি,তুই যাবি এয়ারপোর্টে”

“এয়ারপোর্টে কেন যাবো”

“ওমা কি বলিস এসব,দুুদিন আগে তোর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কি হয়েছিল তুই কি করছিলে মনে পড়ছে না তোর”

অনুর আস্তে আস্তে সব মনে পড়তে থাকলো,তার মানে এতক্ষণ সব স্বপ্ন ছিলো।শাকিল সত্যি চলে যাচ্ছে।

“রেডি হয়ে খেয়ে নে”

অনু ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো,শাকিলের বাসার জন্য ওরা সবাই বেরিয়ে গেলো।শাকিল অনু কে বললো,

“থ্যাংক ইউ সো মাচ তুমি না থাকলে আজ আমি যেতে পারতাম না,সত্যি তুমি আছো তাই আমি যেতে পারছি”

“হুমম,আপনি আপনার স্বপ্ন পূরণ করবেন, কিন্তু একটা কথা ”

“হ্যা,বলো না”

“আংকেল আন্টির খেয়াল রাখবেন”

“হ্যাঁ,এজন্যই তো তাদের সাথে নিয়ে যাওয়া,তুমি আসলে বুদ্ধি টা ভালো দিয়েছো,তোমাকে যতই ধন্যবাদ জানায় না কেন সবই কম হবে”

“ধন্যবাদ কেন দিতে হবে আমি কি বন্ধু হিসেবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি না”

“অবশ্যই পারো,তাই তো করেছো”

“শাকিল,অনু চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে পরে ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে”

সবাই এয়ারপোর্টের জন্য বেরিয়ে পড়লো,শাকিল আর ওর বাবা মা সব ফর্মালিটি পূরণ করে ভিতরে চলে গেল, আধঘন্টা পরে তাদের ফ্লাইট, তারা ইউএসএ চলে যাবে ওখানেই সেটেল্ড হয়ে যাবে,আর আসবে না।অনু ওর বাবা মা কে বললো,

“তোমরা বাসায় চলে যাও আমার একটু নোটস নিতে হবে,এতোদিন তো ভার্সিটি যায় নি সেগুলো নিতে হবে”

“ঠিক আছে যাও, তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসো”

অনু একলা হাঁটতে লাগলো,আর সেদিনের কথা ভাবতে লাগলো।

অনুর জন্মদিনের সন্ধ্যায় যখন অনু তার বাবা কে বলে বিয়ে না করার কথা তখন তার বাবা তার গায়ে হাত তোলে,এরপর শাকিল কিছু বলতে গেলে অনু শাকিলকে আটকায় আর নিজেই বলতে শুরু করে।

“আপনারা এখানে যারা আছেন সবাই আমার বড়,আপনারা অবশ্যই সবকিছু আমার থেকে ভালো বোঝেন,আপনারাই কিন্তু আমাদের ছোটবেলা শিখাতেন জীবনে বড় হতে হলে বড় বড় স্বপ্ন দেখতে হবে,তাহলেই তোমরা জীবনে উন্নতি করতে পারবে, শাহেদ আংকেল আপনি আপনার ছেলেকে ইউএসএ পাঠিয়েছিলেন পড়ালেখার জন্য সে সেটা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে শেষ করেছে, এখন তার স্বপ্ন সে সেখানে জব করবে,আপনার বা আমার কারোর কোনো অধিকার নেই তার এই স্বপ্ন কে ভেঙে দেওয়ার আমরা কেউ এ অধিকার রাখি না,তাকে যেতে দিন আপনারা প্লিজ,দেখুন যদি আপনারা এমন ভেবে থাকেন যে উনি ওখানে গিয়ে আপনাদের ভুলে যাবে,তাহলে একদমই ভুল ভাবছেন বলে আমি মনে করি,তার যদি ভুলে যাওয়ারই হতো তাহলে উনি আর আসতেনই না পড়া শেষ হয়ে যাওয়ার পর তিনি জবে জয়েন করে ফেলতেন,প্লিজ আংকেল যেতে দিন ওনাকে”

“অনু,তুমি বুঝতে পারছো তুমি কি বলছো”

“হ্যাঁ আংকেল আমি বুঝতে পারছি,আপনারা যদি ভেবে থাকেন আমার ওনার সাথে বিয়ে না হলে জীবন শেষ হয়ে যাবে বা আমার বাবার সম্মান শেষ হয়ে যাবে তাহলে ভুল ভাবছেন আপনারা,কেন এমন হবে,আমি একজন শিক্ষিত মানুষ আমার যদি কখনো বিয়ে না ও হয় আমি নিজের খরচ নিজে বহন করতে পারবো,আমার বাবা আমাকে সেভাবে প্রস্তুত করেছেন,আর ওনার সম্মান কেন যাবে, আমার তো বিয়ে হয়ে তারপর ডির্ভোস হয়নি,জাস্ট হওয়ার কথা ছিল কিন্তু উনি ওনার ড্রিম পূরণ করতে চাই তাই বিয়ে টা হবে না এই তো,আমার কিংবা আমার পরিবারের কোনো সমস্যা হবে না,কেউ যদি কিছু বলেও তাহলে সেটা তাদের মানসিকতার সমস্যার, আপনাদের নিজেদের মন মানসিকতা বদলাতে হবে,একটা মেয়ের জীবনে বিয়েই সব না,সে নিজেও নিজের মতো থাকতে পারে,কারো ওপর নির্ভর করতে হয় না তাকে সবসময়”

“আর আমরা আমাদের ছেলে কে ছেড়ে কি করে থাকবো”

“হুমম আন্টি এটা ঠিক বলেছেন, আপনাদের ওনাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে,শাকিল আপনি কি আংকেল আন্টি কে আপনার সাথে নিয়ে যেতে পারেন না,তারা তো আপনাকে ছাড়া ভালো থাকবে না,ওনাদের খেয়াল রাখবে কে আপনি চলে গেলে”

“হ্যাঁ,আমি বাবা মার যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি”

“তাহলে তো হলোই,আংকেল আন্টি আর কোনো কথা নয় আপনারা ওনার সাথে ওনার স্বপ্ন পূরণ করতে যাবেন”

“সত্যিই আফজাল ভাই আপনার মেয়ে তো মেয়ে নয় এতো রত্ন,যে নিজের কথা না ভেবে অল্প কয়েকদিনের পরিচিত কারো জন্য সবার সামনে এভাবে রুখে দাঁড়ালো, আপনি অনেক ভাগ্যবান, এমন মেয়ে কয়জনের ঘরে জন্ম নেয়”

অনুষ্ঠানের সবাই অনুর প্রশংসা করতে লাগলো,আফজাল সাহেব কিছু বললেন না,তার নিরবতা অনুকে সমর্থন করলো।

বর্তমানে……….

ভালোবাসা মানে শুধু তাকে পেয়ে যাওয়ায় নয়,তাকে মুক্ত করে দেওয়াটাও ভালোবাসা, আজ যদি অনু শাকিলকে বিয়ে করতো শাকিলের মনে একটা অতৃপ্ত ইচ্ছা থেকে যেত,সে তার বাবা মা কে কখনো মেনে নিতে পারতো না।

অনু তার ভালোবাসা সেক্রিফাইজ করে শাকিলকে তার স্বপ্ন পূরণ করার সুযোগ করে দিয়েছে। শাকিল কখনো জানতেও পারবে না তার প্রতি অনুর কত টা ভালোবাসা ছিল।

হয়তোবা গোপনে বা অপ্রকাশেই ভালোবাসা সুন্দর, আর যাই হোক অনুর শাকিলের প্রতি ভালোবাসার কখনো ব্রেকআপ হবে না।

আকাশে প্লেন টা যেতে দেখে অনু মুচকি হাসলো,

“ভালো থেকো শাকিল,নিজের স্বপ্ন পূরণ করো,বাবার মার খেয়াল রেখো,নিজের খেয়াল রেখো”

অনুর চুলগুলো বাতাসে উড়তে লাগলো অনু নিজের মতো একলা হাঁটতে লাগলো………

#সমাপ্ত