তুমি আমারই রবে পর্ব-০৪ + বোনাস পর্ব

0
657

#তুমি_আমারই_রবে
#পর্ব_৪
#Nishat_Jahan_Raat (ছদ্মনাম)

—“আমি আসছি ডক্টর। “নাবিলা” ঠিক আছে তো?”

ঐ পাশ থেকে কি বলল জানি না। কিছুক্ষন পর হিমু আবার মিনমিনিয়ে বলে উঠল,,,

—“আমাকে জাস্ট দশটা মিনিট সময় দিন। আমি আসছি।”

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই হিমু কলটা কেটে পিছু ঘুড়তেই আমার মুখোমুখি হয়ে গেলো। আমি কৌতুহলী দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। আমাকে দেখেই উনি চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,

—“হোয়াট দ্যা হ্যাল। তুমি এখানে কি করছ?”

আমি থতমত খেয়ে মাথাটা নিচু করে বললাম,,,

—“কোথায় যাবেন আপনি?”

হিমু আমতা আমতা করে বলল,,,

—“অফিস থেকে জরুরী কল এসেছে। আমাকে এক্ষনি বেরুতে হবে।”

—“হিমু আপনি মিথ্যে বলছেন। আমি নিজ কানে শুনেছি আপনি কোনো এক ডক্টরের সাথে কথা বলছিলেন।”

—“হ্যাঁ আমি মিথ্যে বলেছি। তো কি হয়েছে? আমাদের সংসারটাই তো মিথ্যে সংসার!”

—“হ্যাঁ। আপনার কাছে মিথ্যে হতেই পারে। কিন্তু আমার কাছে এই সংসারটা চিরন্তন সত্য। কেনো বুঝছেন না আপনি বলুন তো?”

—“সামনে থেকে সরে যাও রূপা। আমাকে এক্ষনি বের হতে হবে।”

আমি বেশ সিরিয়াস হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

—“নাবিলা কে হিমু?”

সাথে সাথেই হিমু তেড়ে এসে আমার গালে চড় বসাতে গিয়ে ও থেমে গেলো। ডান হাতটা নিচে নামিয়ে উনি চোখ, মুখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“আড়ি পেতে সব শুনছিলে তাই না? এই অভ্যেসটা কি নতুন করে জন্মেছে?”

কোনো রূপ ভয় ভীতি ছাড়াই আমি মাথা নিচু করে উনাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,,

—“আপনার জন্যই অভ্যেসটা জন্মেছে। এর আগে কখনো এমন কিছু হয় নি যার জন্য আমাকে আঁড়ি পেতে আপনার কথা শুনতে হয়েছে।”

—“ঠিক বলেছ তুমি। সব দোষ আমার। নিজের মনের কথা না শুনে পরিবারের কথা শোনাটাই আমার দোষ ছিলো।”

কথা গুলো বলেই উনি আমাকে উপেক্ষা করে কাবার্ড থেকে প্যান্ট, শার্ট বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। আমি ওয়াশরুমের দরজার বাইরে থেকে চেঁচিয়ে বলছি,,,

—“প্লিজ বলুন নাবিলা কে? আমি জানতে চাই নাবিলা কে?”

অনেক চেঁচামেচি করে ও উনার মুখ থেকে কিছু বের করতে পারলাম না। আমি ও মনে মনে ঠিক করে নিয়েছি আজ উনাকে আমি ফলো করবই। উনি কোথায় যাবে, কার সাথে দেখা করতে যাবে আজ আমাকে জানতেই হবে। আর ঐ নাবিলা সম্পর্কে ও আমার খোঁজ নিতে হবে। জানতে হবে মেয়েটা কে। আপাতত উনাকে আর ক্ষেপানো যাবে না৷ বাড়ি থেকে বের হলেই উনার পিছু পিছু আমাকে ও ছুটতে হবে।

প্রায় দশ মিনিটের মধ্যে হিমু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। মেরুন কালার শার্টটাতে উনাকে হিরোদের চেয়ে কম সুন্দর লাগছে না। শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে উনি আমাকে ক্রস করে রুম থেকে বের হতে নিলেই আমি পেছন থেকে হিমুর ডান হাতটা টেনে ধরে বললাম,,,

—“দাঁড়ান হিমু। ভেজা চুল নিয়ে বের হবেন না। ঠান্ডা লেগে যাবে। আপনি এক্টু দাঁড়ান। আমি আপনার চুলটা মুছে দিচ্ছি।”

হিমু কিছু বলল না। স্ট্রেইট দাঁড়িয়ে পড়ল। হয়তো উনি বুঝাতে চাইছে মৌণতা সম্মতির লক্ষন! আমি উনার সম্মতি বুঝে গেছি। উনার হাতটা ছেড়ে দিয়ে আমি তাড়াহুড়ো করে টাওয়াল এনে উনার মুখোমুখি দাঁড়ালাম। উনি ভাবলেসহীন হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। অথচ একবারের জন্য ও আমার দিকে তাকাচ্ছে না। উনার এমন আচরণে কোনো রূপ মনযোগ না দিয়ে আমি হাতে থাকা টাওয়ালটা দিয়ে খুব যত্ন করে উনার চুল গুলো মুছে দিলাম। ক্ষনিকের মধ্যেই উনি আমাকে ক্রস করে হুড়মুড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। টাওয়ালটা বেডের উপর ছুড়ে ফেলে আমি আলমারি থেকে সাইড ব্যাগটা বের করে পা টিপে টিপে উনার পিছু পিছু বাড়ির সদর দরজা ক্রস করে বাড়ির বাইরে চলে এলাম৷ উনি এতক্ষনে বাইক স্টার্ট দিয়ে রাস্তায় উঠে গেছে। বাড়ির গেইটের বাইরে পা রাখার আগেই আমার শ্বাশুড়ী মা এসে আমার ডান হাতটা চেঁপে ধরে বলল,,,

—“এই রূপা। এতো রাতে তুই এখানে কি করছিস? আর হিমু ই বা কোথায়?”

আমি থতমত খেয়ে পিছু ফিরে শ্বাশুড়ী মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

—“আপনার ছেলে কাউকে দেখতে হসপিটালে গেছে মা। আর আমি উনাকে এগিয়ে দিতেই এতো রাতে এখানে এসেছিলাম।”

জানি না কি হলো। শ্বাশুড়ী মা হঠাৎ ই খুব রেগে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“কি বললি তুই? হিমু হসপিটালে গেছে?”

আমি কৌতুহলী দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

—“হ্যাঁ মা। উনি তো তাই বলে গেলো।”

—“এই কথাটা তুই আমাকে আগে বললি না কেনো? হিমু কোন সাহসে এতো রাতে হসপিটালে গেলো?”

—“কেনো মা? কি হয়েছে? আপনি এভাবে রিয়েক্ট করছেন কেনো?”

মা আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়েই হনহনিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলো। আমি ও মায়ের পিছু পিছু বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়লাম। মা হম্বিতম্বি হয়ে ড্রইং রুমে ঢুকেই সোফার উপর থেকে উনার সেলফোনটা হাতে নিয়ে কারো নাম্বারে কল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমি বেকুব হয়ে মা কে দেখছি। মায়ের এমন অহেতুক রাগের কারণ আমি বুঝছি না। ক্ষনিকের মধ্যেই মা ফোনে খুব চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,

—“তুই কোথায় হিমু? আমাকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হলি কেনো?”

ঐ পাশ থেকে কি বলল জানি না। মিনিট দু এক এর মধ্যে মা আবারো চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,

—“আমি এতো কিছু শুনতে চাই না হিমু। তুই এক্ষনি, এই মুহূর্তে বাড়ি ফিরবি। ভুলে যাস না তুই আমাকে কথা দিয়েছিলি আমার কথার এদিক, ওদিক হবি না। তুই কিন্তু তোর কথা রাখছিস না হিমু। আমাকে হার্ট করছিস!’

শ্বাশুড়ী মা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আবারো বলল,,,

—“রূপা না খেয়ে তোর জন্য অপেক্ষা করছে হিমু। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আয়। এক্ষনি গাড়ি নিয়ে ব্যাক কর৷ আমি আর কোনো অযুহাত শুনতে চাই না। ফোনটা রাখলাম আমি। দশ মিনিটের মধ্যেই তুই বাড়ি ফিরে আসবি।”

মা ফোনটা রেখে দিলো। আর চোখ রাঙ্গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“স্বামীকে হাতের মুঠোয় রাখতে শিখ। বিয়ের পাঁচ মাসে ও স্বামীকে হাতের মুঠোয় রাখতে পারছিস না? রাত, বিরাতে হুটহাট করে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। আর তুই ও তাতে সম্মতি দিচ্ছিস। তোর থেকে অন্তত এটা আশা করি নি আমি।”

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মা হনহনিয়ে উনার রুমের দিকে মোড় নিলো। আগ পাছ না ভেবে আমি পেছন থেকেই মা কে উদ্দেশ্য করে জোরে চেঁচিয়ে বললাম,,,

—“মা নাবিলা কে?”

অমনি মা থেমে গেলো। পিছনে ঘুড়ে মা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“হোয়াট? নাবিলা কে?”

—“আপনার ছেলে যার সাথে দেখা করতে গেছে।”

—“নাবিলা নামের কোনো মেয়েকেই আমি চিনি না। আমার ছেলে ও এই নামের কাউকে চিনে না। তুই রুমে যা রূপা। হিমু এক্ষনি আসবে।”

চলে গেলো মা। আমি হতভম্ব হয়ে মায়ের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছি। মা কক্ষনো এতোটা রগচটা ভাব নিয়ে আমার সাথে কথা বলে নি। হিমুর হসপিটালে যাওয়া নিয়ে মায়ের এমন অহেতুক রাগের কারণটা ও আমি বুঝতে পারছি না। তবে মন বলছে মা সব জানে। ঐ নাবিলা মেয়েটাকে ও মা খুব ভালো করে চিনে। মা কিছু লুকাতে চাইছে৷ যা উনার চোখে, মুখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। তবে আমি ও চুপ করে বসে থাকব না। সত্যিটা আমি যে করেই হোক বের করেই ছাড়ব। সত্যিটা জানার পর যদি আমার হিমুকে ছেড়ে দিতে হয় আমি তা ও রাজি। অন্তত জোর করে কাউকে ধরে রাখা যায় না। আর সংসার করা তো সেখানে বিলাসীতা! আচ্ছা… বলে তো দিলাম! কিন্তু তাকে ছাড়তে পারব তো?

এর মাঝেই ড্রইং রুমে দ্বিতীয় কারো অস্তিত্ব টের পেলাম। পিছু ঘুড়ে তাকাতেই আমি হিমুকে দেখতে পেলাম। চোখ, মুখ লাল করে উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলাম উনি খুব কেঁদেছে। খুব বিষন্ন লাগছে উনাকে। এই অসহায় অবস্থায় উনাকে দেখে আমার বুকটা হঠাৎ কেঁপে উঠল। এক ছুটে উনার মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়াতেই উনি চোয়াল শক্ত করে আমার ডান হাতটা চেঁপে ধরে আমাকে টানতে টানতে আমাদের রুমটায় নিয়ে এলো। রুমের দরজাটা আটকে উনি আমাকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিলো। আমি ও বেকায়দায় বিছানায় ছিটকে পড়লাম। বাম হাতের কব্জিটায় অনেকটা জোরেই আঘাত পেলাম। তবু ও আমি ব্যাথা চেঁপে উনার দিকে তাকিয়ে গলা জড়ানো কন্ঠে বললাম,,,

—“আপনার কি হয়েছে হিমু? আপনি এতো রেগে আছেন কেনো? কি করেছি আমি বলুন?”

উনি ভীষণ রেগে সামনের চুল গুলো টানছে আর চেঁচিয়ে বলছে,,,

—“মায়ের কাছে তুমি কি বলেছ? বলো কি বলেছ?”

—“আমি কিছু বলি নি হিমু৷ মা নিজে থেকেই জিগ্যেস করেছিলো আপনি কোথায় গেছেন।”

—“আর তুমি ও বলে দিলে আমি হসপিটালে গেছি?”

—“কেনো হিমু? আমি কিছু ভুল বলেছি?”

উনি কিছু বলল না। প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট টা হাতে নিয়ে দু দুটো সিগারেট একসাথে জ্বালিয়ে উনি এক নাগাড়ে ফুঁকছে আর আমার দিকে তাকিয়ে বলছে,,,

—“ডোন্ট ট্রাই টু টক মি। আই ওয়ান্ট টু বি এলোন।”

ব্যালকনীর সোফায় গিয়ে উনি বসে পড়ল। পাগলের মতো কিছুক্ষন পর পর উনি সামনের চুল গুলো টানছে আর সিগারেট ফুঁকছে। সারা গাঁ জুড়ে উনার ঘাম ঝড়ছে। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। ভেতরটায় তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। বুকে থাকা জমাট কষ্ট গুলো এক এক্টা পাহাড়ে পরিণত হচ্ছে। না চাইতে ও কষ্ট গুলো দীর্ঘশ্বাস হয়ে বের হচ্ছে। ইচ্ছে করছে আমি ও উনার সাথে বসে দু দুটো সিগারেট একসাথে ফুঁকি। তাহলে হয়তো উনার মতো আমার কষ্টগুলো ও কমবে।

কিছুক্ষন এভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে আমি ধীর পায়ে হেঁটে উনার পাশের সোফাটায় বসে পড়লাম। উনি এক ধ্যানে সিগারেট ফুঁকছে আর চুল টানছে। উনার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আমি আনমনেই বলে উঠলাম,,,

—“হিমু। আমাকে এক্টা সিগারেট দিবেন? আমি ও খাবো।”

উনি রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি আবারো বললাম,,,

—“দিন না প্লিজ৷ আমি ও আপনার মতো কষ্ট কমাতে চাই।”

আমার থেকে চোখ ফিরিয়ে উনি অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“হজম করার শক্তি আছে তো? এই জিনিসটা কিন্তু ভেতরটাকে ও দ্বগ্ধ করে দেয়।”

আমি অট্ট হেসে বললাম,,,

—“দিয়েই দেখুন না। হজম করতে পারি কি না৷ আর ভেতরের কথা বলছেন? সেটা তো অনেক আগেই দ্বগ্ধ হয়ে গেছে।”

—“বাজে বকো না। মেয়েরা স্মোকিং করে না। আবার আমাকে জ্বালাতে এসেছ তাই না? তোমরা কি কখনো আমাকে মুক্তি দিবে না?”

—“মুক্তি মানে তো মৃত্যু হিমু। আমি ও মুক্ত হতে চাই।”

হিমু চোখ জোড়া বুজে এক্টা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আনমনেই বলে উঠল,,,

—“বিশ্বাস করো, আমি “তাকে” মুক্তি দিতে চাই না!”

—“কে হিমু? কাকে আপনি মুক্তি দিতে চান না?”

হঠাৎই উনি চোখ জোড়া খুলে সিগারেটে ফুঁা দিয়ে বলল,,,

—“প্লিজ রূপা লিভ মি এলোন। তুমি যাও এখান থেকে।”

হিমু আমার মনের কৌতুহল আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। উনার সম্পর্কে জানার আকাঙ্ক্ষা গুলো যেনো বেগতিক বেড়েই চলছে। কি হলো জানি না, হঠাৎ ই আমি জায়গা থেকে উঠে গিয়ে উনার হাত থেকে জ্বলন্ত এক্টা সিগারেট ছিনিয়ে নিজের মুখে নিয়ে নিলাম। এক্টা ফুঁক দেওয়ার সাথে সাথেই আমার কাশি শুরু হলো। হিমু বেশ রেগে আমার হাত থেকে সিগারেট টা ছিনিয়ে নিয়ে মাটিতে ছুড়ে মারল আর চিল্লিয়ে বলল,,,

—“বলেছিলাম না হজম করতে পারবে না। সব বিষয়ে তোমার এতো বাড়াবাড়ি আমার পছন্দ না।”

কথাগুলো বলেই উনি বসা থেকে উঠে রুমে ঢুকে গেলো৷ আমি এখনো গলায় হাত দিয়ে কেশেই চলছি। চোখ দিয়ে টলটলিয়ে পানি পড়ছে আমার। এর মাঝেই হিমু এক গ্লাস পানি নিয়ে আমার পাশে এসে বসল। আমার হাতে পানির গ্লাসটা ধরিয়ে দিয়ে উনি চোয়াল শক্ত করে বলল,,,

—“পানিটা খেয়ে নাও। নেক্সট টাইম যদি এই কাজটা আবারো রিপিট করেছ তো, আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।”

হনহনিয়ে উনি রুমে চলে গেলো। পানিটা খেয়ে আমি রুমে ঢুকতেই উনাকে সোফায় ঘুমিয়ে পড়তে দেখলাম। ঘড়িতে মধ্যরাত ২ টার কাছাকাছি। আমার চোখে ও এতক্ষনে ঘুম চলে এলো। তবে মাথায় এখনো নাবিলা মেয়েটা ঘুড়ছে। যে করেই হোক নাবিলা পর্যন্ত আমাকে পৌঁছাতে হবে। কাল সকাল হতেই আমাকে বেরিয়ে পড়তে হবে নাবিলার খোঁজে। এই বিষয়ে আমাকে একমাএ হেল্প করতে পারে হিমুর বন্ধু রাহাত।

বিছানাটা কোনো রকমে গুছিয়ে আমি হিমুর দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লাম। খেয়াল করলাম হিমুর ডান চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ছে।

#চলবে,,,,,,

#তুমি_আমারই_রবে
#বোনাস_পর্ব
#Nishat_Jahan_Raat (ছদ্মনাম)

বিছানাটা কোনো রকমে গুছিয়ে আমি হিমুর দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লাম। খেয়াল করলাম হিমুর ডান চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ছে।

লোকটা কাঁদছে। কোনো রকম আর্তনাদ ছাড়াই। আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে উনার কান্না দেখছি। কতোটা ভালোবাসলে এক্টা পুরুষ অন্য এক্টা মেয়ের জন্য এভাবে চোখের জল ছাড়তে পারে? তা আমার ভাবনা শক্তির বাইরে। স্ত্রী হয়ে স্বামীর চোখে অন্য মেয়ের জন্য জল দেখার মতো শাস্তি হয়তো পৃথিবীতে আর দুটো নেই। এই মুহূর্তে আমি সেই শাস্তিটাই ভোগ করছি। ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে আসছে আমার। কষ্ট গুলো বুকের মাঝে দলা বেঁধে আছে। হু হা করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। দেয়ালে মাথা ফাঁটাতে ইচ্ছে করছে। মোট কথা, আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে!

সংসার জীবনে এসে আমি এক্টু শান্তি খুঁজেছিলাম। ভেবেছিলাম স্বামীকে পেয়ে প্রাক্তনকে ভুলে যাবো। পরিবারের লোক থেকে শুরু করে ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই বলেছিলো, বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। স্বামীর ভালোবাসায় আকাশকে ভুলতে তোর পাঁচ দিনের বেশি সময় লাগবে না। করে নে বিয়েটা। এরপরে ও আমি আকাশকে খুঁজেছি। টানা দু বছর আমি আকাশকে যতোটা পেরেছি, খোঁজার চেষ্টা করেছি। তিলে তিলে নিজেকে কষ্ট দিয়েছি৷ অনেক বার চেষ্টা ও করেছি সুসাইড করার কিন্তু হয়ে উঠে নি। মরতে গিয়ে ও থেমে গেছি। কোনো এক্টা অদৃশ্য শক্তি আমাকে থামিয়ে দিতো। দু বছরে প্রায় অনেক বারই আমি হসপিটালে ভর্তি ছিলাম। বাবা- মা আমার কষ্টটা চোখের সামনে দেখতে পারছিলো না। দিন দিন ওরা ভেঙ্গে পড়ছিলো। আমাকে বুঝাতে বুঝাতে উনারা ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলো৷ এক পর্যায়ে এসে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, এক্টা প্রতারক ছেলের জন্য আমি আমার মা বাবাকে কষ্ট দিতে পারি না। যে চলে গেছে তাকে নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। নিজেকে ভালো রাখতে হবে। সাথে নিজের সাথে জড়িত গোটা পরিবারটাকে।

আকাশ যাওয়ার প্রায় দুই বছরের মাথায় মা বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি হিমুকে বিয়েটা করি। বিয়েটা আমার মনের বিরুদ্ধে হলে ও আমি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। ভেবেছিলাম হিমু আমায় ভালোবেসে আপন করে নিবে! আকাশকে ভুলিয়ে দিবে। আমি এমন অনেক দেখেছি, যারা প্রাক্তনকে ছেড়ে বিয়ে করেছে তাদের মধ্যে অনেকেই বিয়ের পর সুখি হয়েছে। মানিয়ে নিতে নিতে এক পর্যায়ে ভালোবাসা হয়ে গেছে। আমি ও তাই চেয়েছিলাম। হিমুর তরফ থেকে এক্টু ভালোবাসা চেয়েছিলাম। সম্পর্কটাকে মানিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। দুজন দুজনকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এই পোড়া কপালে বিয়ের পাঁচ মাস পরে ও হিমুর ভালোবাসা পাওয়া হলো না। বাধ্য হয়ে আমি নিজে থেকেই হিমুকে এক্টু এক্টু করে ভালোবাসার চেষ্টা করছিলাম। বিশ্বাস করুন আমি বুঝতেই পারি নি সেই চেষ্টা টাই আজ আমার কাল হয়ে দাঁড়াবে! অন্য এক্টা সত্যের মুখোমুখি এসে দাঁড়াতে হবে!

হিমুর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আমি কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সেই ঘুম ভাঙ্গল আমার সকাল নয়টায়। ঘুম থেকে ধরফড়িয়ে উঠেই আমি সোফার দিকে তাকালাম। হিমু এখনো সোফাতেই ঘুমিয়ে আছে। মুখটা শুকিয়ে এক্টু হয়ে আছে। মায়া লাগছিলো উনার দিকে তাকিয়ে। উনার মুখের দিকে তাকালেই বুঝা যায় অন্য নারীর ভালোবাসায় উনি কতোটা কাঙ্গাল। সাথে সাথে উনার থেকে চোখ নামিয়ে আমি ধীর পায়ে হেঁটে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লাম। কিছুক্ষনের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে আমি রুমে এলাম। হিমু এতক্ষনে ঘুম থেকে উঠে রুমে পায়চারী করছে। আমাকে দেখেই উনি আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল,,,

—“মা কবে বাড়ি যাবে তুমি জানো?”

আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

—“মা থেকে গেলেই বা প্রবলেম কি?”

—“প্রবলেম আছে। তুমি বুঝবে না।”

—“কি প্রবলেম হিমু? আমাকে বলুন প্লিজ।”

—“সব ব্যাপারেই কারণ খুঁজতে যাও কেনো?”

—“কারণ আছে বলেই কারণ খুঁজি।”

—“তোমার এতো প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না। সরো সামনে থেকে।”

আমাকে সামনে থেকে সরিয়ে উনি ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। চোখে জল নিয়ে আমি রুম থেকে বের হয়ে কিচেন রুমে চলে এলাম। উনার জন্য নাশতা বানাতে হবে। উনি হয়তো ফ্রেশ হয়ে এক্ষনি অফিসে রওনা দিবে। তাই যা করতে হবে তাড়াতাড়ি করতে হবে। না হয় উনাকে না খেয়েই অফিসে যেতে হবে।

কিচেন রুমে ঢুকতেই শ্বাশুড়ী মা কে দেখতে পেলাম। কোঁমড়ে কাপড় গুঁজে উনি কিচেনে কিছু এক্টা করছে। উনার পাশে দাঁড়াতেই উনি এক গাল হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“কিরে এতক্ষনে ঘুম ভাঙ্গল?”

আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

—“হ্যাঁ মা। রাতে ঘুমোতে এক্টু দেরি হয়েছে তো তাই।”

—“কোনো ব্যাপার না। তুই এক্টু এখানেই দাঁড়া। আমি হিমুর জন্য বিরিয়ানী বেড়ে দিচ্ছি। ওর তো আবার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

—“আমি থাকতে আপনি রান্না করতে গেলেন কেনো মা? আমাকে এক্টু ডেকে দিলেই পারতেন।”

—“প্রতিদিন তো তুই ই আমার ছেলেকে রান্না করে খাওয়াস। আজ না হয় আমিই রান্না করে আমার ছেলেকে খাওয়ালাম।”

কিছু বললাম না আমি। চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। এর মাঝেই মা এক্টা প্লেইটে বিরিয়ানী বেড়ে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,

—“যা রুমে যা। বিরিয়ানীটা হিমুকে খাইয়ে দিয়ে আয়।”

আমি ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,

—“রুমে কেনো যেতে হবে মা? উনি তো রেডি হয়ে সরাসরি ডাইনিং টেবিলেই চলে আসবে।”

—“উফফফ তুই দেখছি কিছুই বুঝিস না। স্বামীকে হাতের মুঠোয় আনা এতো সহজ না। বেশি বেশি করে আলাদা সময় দিতে হয় স্বামীকে৷ প্রয়োজনে বেশি বেশি ভালো ও বাসতে হয়। তবেই তো স্বামী হাতের মুঠোয় থাকবে। ঘরে সুন্দুরী বৌ কে রেখে এদিক সেদিক তাকাবে না। বুঝেছিস?”

আমি অট্ট হেসে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

—“নাবিলা কে মা? আপনারা কি লুকোচ্ছেন আমার থেকে?”

—“কাল রাতেই তো বললাম রূপা, আমরা নাবিলা নামের কাউকে চিনি না। এখনো কেনো এক জিনিস নিয়ে পড়ে আছিস বল তো? ভুলে যা এসব।”

আমি বুঝে গেছি মায়ের মুখ থেকে কখনো নাবিলা নামের সত্যিটা বের করতে পারব না। এর জন্য আমাকে অন্য রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে। কিছুক্ষন চুপ থেকে আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে আবারো বললাম,,,

—“মা…. আমি আপনার ছেলেকে হাতের মুঠোয় রাখতে চাই না। আর উনার থেকে জোর করে ভালোবাসা ও চাই না। আমি শুধু উনার অতীতটা জানতে চাই। আর ঐ নাবিলা মেয়েটাকে চিনতে চাই।”

এতোটুকু বলেই আমি কিচেন রুম থেকে বের হয়ে সোজা আমাদের রুমে চলে এলাম। রুমে ঢুকেই হিমুকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দেখতে পেলাম। অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে উনি। দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি খুব তাড়াহুড়োয় আছে। বিরিয়ানীর প্লেইটটা ডেস্কের উপর রেখে আমি পা টিপে টিপে বেডের কাছটায় এসে দাঁড়ালাম। হিমু খুব মনযোগ দিয়ে শার্টের হাতা গুলো ফোল্ড করছে। এই সুযোগেই আমি বেডের উপর থেকে উনার ফোনটা হাতে নিয়ে খুব সাবধানে উনার ফোনের লক খোলার চেষ্টা করছি। ফোনটাতে প্যাটার্ণ লক দেওয়া। অজান্তেই আমি প্যাটার্ণ লকে N লিখার সাথে সাথেই ফোনটা খুলে গেলো। তাড়াহুড়ো করে আমি ফোনের কন্ট্রাক্ট লিস্টে গিয়ে রাহাত ভাইয়ের নাম্বারটা আমার ফোনে টুকে নিয়ে উনার ফোনটা জায়গায় রেখে যেই না পিছু ঘুড়ে তাকাবো অমনি হিমু আমার মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,

—“কি করছিলে?”

আমি আমতা আমতা করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

—“কই কিছু না তো।”

—“সত্যিই কিছু না?”

—“হ্যাঁ কিছু না। আমি তো জাস্ট বিছানাটা গুছাচ্ছিলাম।”

উনি আমাকে ক্রস করে বেডের উপর থেকে উনার ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনে কিছু এক্টা করছে আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,

—“কিছু না হলেই ভালো।”

আমি কৌতুহলী দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

—“আপনি কি এখন অফিসে যাবেন?”

—“হুম কেনো?”

—“মা বিরিয়ানী রেঁধেছে খেয়ে যান।”

দু চামচ বিরিয়ানী খেয়ে উনি হুড়মুড়িয়ে রুম থেকে বের হতে নিলেই আমি পেছন থেকে বলে উঠলাম,,

—“অফিসের ব্যাগ ছাড়াই চলে যাচ্ছেন যে। আপনি কি এখন হসপিটালে যাবেন?”

তীব্র রেগে উনি পিছু ঘুড়ে আমার দিকে তাকিয়ে খানিক চেঁচিয়ে বলল,,,

—“এই কথাটা যেনো আমার মায়ের কানে না যায়। মাইন্ড ইট।”

আমি ছলছল চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

—“মা কে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে হিমু? আপনার মন যা চাইছে আপনি তাই করুন।”

হিমু অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। আমি দু কদম উনার কাছে এগিয়ে এসে বললাম,,

—“যাই করুন। আমাকে একেবারে ছেড়ে দিবেন না হিমু। আমি আপনার ওয়াইফ। আমার প্রতি ও কিন্তু আপনার কিছু কর্তব্য আছে।”

হিমু বেশ সিরিয়াস হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“কবে ডিভোর্স দিবে আমায়?”

—“ডিভোর্সটা কি খুব জরুরী?”

—“এই ডিভোর্সটার জন্যই আমি “তার” মুখোমুখি হতে পারছি না। তাই ডিভোর্সটা আমার জন্য খুব ইম্পরটেন্ট।”

—“কার মুখোমুখি হতে পারছেন না হিমু? নাবিলার???”

হিমু পিছু ঘুড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আমি চিৎকার করে উনার যাওয়ার পথে তাকিয়ে বললাম,,,

—“আপনারা কেনো আমাকে সত্যিটা বলছেন না? কেনো বার বার আপনারা সবাই আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন? নাবিলা মেয়েটা কে হিমু? আমাকে অন্তত একবার সত্যিটা বলুন।”

পিছু ফিরে তাকালো না হিমু৷ বাড়ি থেকে বের হয়ে বাইক স্টার্ট করে রাস্তায় উঠে গেলো। কিছুক্ষন হাউমাউ করে কেঁদে আমি সেলফোনটা হাতে নিয়ে রাহাত ভাইয়ের নাম্বারে কল করলাম। নাম্বারটা বার বার বন্ধ আসছে। কিছুক্ষন ট্রাই করার পর আমি ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। উপায় বুদ্ধি না পেয়ে আমি টাকার পার্সটা হাতে নিয়ে এক ছুটে বাড়ির বাইরে চলে এলাম। তখনই মা পেছন থেকে আমাকে ডেকে বলল,,,

—“কি হলো রূপা? কোথায় যাচ্ছিস তুই?”

আমি থতমত খেয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“মা। আপনার ছেলে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ফোনটা বাড়িতেই রেখে গেছে। তাই আমি ফোনটা নিয়ে উনার অফিসে যাচ্ছি। অনেক দরকারী কল ও তো থাকতে পারে তাই না?।”

শ্বাশুড়ী মা কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল,,,

—“ইসসস ছেলেটা যে কি করে না। যা যা রূপা। তুই যা। ফোনটা হিমুকে দিয়ে আয়। তবে এক্টা শর্ত আছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।”

আমি এক্টা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে ডানে বায়ে দুবার মাথা নাড়ালাম। মা ও হাসি মুখে আমাকে বিদায় দিলো।

রাস্তায় বের হয়ে বাড়ির গেইটের কাছে দাঁড়াতেই এক্টা খালি সি.এন.জি দেখতে পেলাম। হাত দিয়ে সি.এন.জি টাকে ইশারা করতেই সি.এন.জি টা দাঁড়িয়ে গেলো। আমি ও আর দেরি না করে হিমুর অফিসের এড্রেস অনুযায়ী গাড়িতে উঠে পড়লাম।

ঘন্টা খানিকের মধ্যে আমি হিমুর অফিসে সামনে এসে পৌঁছে গেলাম। গাড়ি ভাড়া মিটিয়ে আমি হিমুর অফিসে পা রাখতেই অফিসের একজন কলিগ আমাকে দেখা মাএই হেসে হেসে বলে উঠল,,,

—“আরে আপনি মিসেস হিমু না? ঐ দিন যাকে হসপিটালে নিয়ে গেলাম?

আমি মলিন হেসে বললাম,,

—“জ্বি আমিই মিসেস হিমু। কিন্তু আপনি আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেছেন মানে বুঝলাম না?

—“ঐ দিন রাতে তো আপনার অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। হিমু একা পারছিলো না আপনাকে হসপিটালে নিতে৷ তাই তো সে আমাকে কল করে বলল আপনাদের বাড়ি আসতে। আর আমি ও চলে এলাম। পরে দুই বন্ধু মিলে ধরাধরি করে আপনাকে হসপিটালে নিয়ে গেলাম।”

—“ওহ্ আচ্ছা। ঐ দিনের উপকারের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।”

উনি একগাল হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“তা কি মনে করে অফিসে এলেন ভাবী? হিমু তো এক্টু আগেই বের হয়ে গেলো। এলো আবার বের ও হয়ে গেলো!”

আমি খুব সিরিয়াস হয়ে উনাকে বললাম,,,

—“উনি কোথায় গেছে আপনি জানেন?”

—“বলল তো হসপিটালে যাচ্ছে।”

—“কোন হসপিটাল? জানেন কিছু?”

—“হুম। ঐ তো সামনের হসপিটালটায়। আপনি গেলেই পেয়ে যাবেন।”

#চলবে….?