#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৯
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
খুব তাড়াতাড়ি। তার আগে আমার কিছু মানুষের সাথে হিসাব চুকানো বাকি আছে। যাদের জন্য আমার প্রেয়সী প্রতি নিয়ত কষ্ট পেয়েছে তাদেরকে এর দাম দিতেই হবে। আমার প্রেয়সীর প্রত্যেকটা অশ্রুর ফোটার মুল্য তাদেরকে দিতে হবে। চরম মূল্য চুকাতে হবে সবাইকে। ( রাগী গলায়)
মহিলাটি ছেলেটির চোখ মুখ দেখে ভয় পেয়ে যায়। ছেলেটির চোখ থেকে যেনো আগুন ঝরছে। অতিরিক্ত রাগার ফলে ছেলেটির নাক মুখ লাল হয়ে গেছে। ছেলেটি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজের রাগ কনট্রোল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত।
২০
ছাদের রেলিংয়ের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে আছি। হঠাৎ করে আমার মন ভালো হয়ে গেলো কেনো? ছেলেটার চিঠি পড়ে। কেউ আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে এটা জেনে। আমি তো চাইতাম আমাকে কেউ একটুখানি ভালোবাসুক। তাহলে ছেলেটার প্রতি আমার কোনো ফিলিংস কাজ করছে না কেনো? আমি কী অন্য কাউকে ভালোবাসি? যাকগে এসব ভেবে ফুরফুরে মেজাজটা বিগড়ে দিতে চাই না।
হঠাৎ মৃদু বাতাস বইতে শুরু করলো। কী ভেবে যেনো খোপা করা চুলগুলো খুলে দিলাম। বাতাসের সাথে চুলগুলো উড়ছে। কিছু চুল চোখে মুখে আচড়ে পড়ছে। চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দেওয়ার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মুহূর্তটাকে খুব উপভোগ করছি আমি।
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে,
দেখতে আমি পাইনি তোমায়।
দেখতে আমি পাইনি।
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে,
বাহির পানে চোখ মেলেছি
বাহির পানে
যদি মন কাঁদে ,
তুমি চলে এসো ,
চলে এসো এক ভরসায়।
যদি মন কাঁদে ,
তুমি চলে এসো ,
চলে এসো এক ভরসায়।
এসো ঝরো ঝরো বৃষ্টিতে,
জল ভরা দৃষ্টিতে,
এসো কোমলো শ্যামলো ছায়াই।
চ…..
এক সাথে অনেকগুলো পদ ধ্বনি শুনে আমি গান গাওয়া বন্ধ করে দেই। বোঝার চেষ্টা করছি কারা এসেছে?
আভিয়ান এই মেয়েটা কে? অনেক সুন্দর গান গায় তো।
রনি ভাইয়ার গলা শুনে চমকে যায় আমি। তাহলে কী আভিয়ান ভাইয়ার বন্ধুরা এসেছে? এখন যদি তারা আমাকে এখানে দেখে তাহলে কেমন বিশ্রী একটা ব্যাপার ঘটবে?
ভার্সিটির কেউ জানে না যে আমি আভিয়ান ভাইয়ার কাজিন। আমাকে এখানে দেখলে অনেকগুলো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। যেটা আমি চাইছি না। এটা নিয়ে আভিয়ান ভাইয়া পড়ে জামেলা করবে। ফুফি এখানে আছে তাই আমি চাইছি না কোনো রকম ঝামেলা হোক আমাকে নিয়ে। ছাদের লাইট অফ করা। তাই ছাদ মোটামুটি অন্ধকার।আমি চুলগুলো এলোমেলো করে মাথায় ভালো করে উড়না টেনে নিলাম। রেলিং থেকে নেমে দিলাম ভৌঁ দৌড়। এক দৌড়ে উনাদের পাশ কাটিয়ে নিচে চলে এলাম।
আমি জানি উনারা আমার যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। হা করে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মশা গিলে ফেলুক তাতে আমার কি?
______________
দোস্ত মেয়েটা কে ছিল। এরকম ভূতের মতো দৌড়ে চলে গেলো কেনো?
আমাদের ভূত ভেবে ও ভূতের মতো দৌড়ে চলে গেছে। ( আভিয়ান একটু হাসার চেষ্টা করে কথাটা বললো। )
মানে?
ও ভূতে ভয় পায়। আমাদের বাসায় ও আর আমি ছাড়া আর কেউ রাতে ছাদে আসে না। আজকে এতগুলো মানুষ একসাথে দেখে ভূত ভেবে দৌড়ে চলে গেছে।
লাইক সিরিয়াসলি আমরা ভূত।
কথাটা বলেই সবাই ছাদ কাঁপিয়ে হাসি শুরু করে।
ও তোর কে হয়?
কাজিন।
তোর কাজিনের নাম কী?
কি ব্যাপার ফাহিম আমার কাজিনের ব্যাপারে তোর এতো কিউরিসিটি কেনো? প্রেমে টেমে পড়ে গেছিস নাকি?
ফাহিম একটু হাসার চেষ্টা করে মাথা চুলকে বলে,
তুই তো জানিস আমি কণাকে পছন্দ করি। শুধু মাত্র তোর কথাই কণাকে প্রোপোজ করি নাই। ওকে দেখতে অনেকটা কণার মতো আর ওর গানের গলাটা অনেক সুন্দর।
তোদেরকে কী আমি আমার কাজিনের প্রশংসা করার জন্য ডেকে এনেছি?
সবাই একসাথে বলে, না।
তাহলে যে কাজের জন্য এসেছিস সেই কাজটা ঠিক করে কর।
মামা তোমার কাজিনের প্রসংশা করছি বলে তোমার এতো জ্বলছে কেনো? সামথিং সামথিং।
আভিয়ান তার বন্ধুদের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। সবাই ভয়ে চুপসে যায়।
২১
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি ঐ চিঠি প্রেরকটা কে? আর এতো সুন্দর গিফট কে দিলো? তখনি ধপ করে আমার পাশে কেউ শুয়ে পড়লো। প্রথমে ভয় পেলেও পরে অহিকে দেখে শান্ত হয়ে যায়।
তলে তলে তো ভালাই টেম্পু চালাও।
মানে?
এখন তো বুঝবাই না আমি কী বলি? আমরা জিঙ্গেস করলে এখন তো মানে মানেই করবা।
অহির বাচ্চা ঘুরিয়ে পেছিয়ে কথা না বলে ক্লিয়ার করে বল কী বলতে চাইছিস?
তুই তো তলে তলে ভালোই প্রেম করছিস। তোর সেই প্রেমিক পুরুষ তোকে গিফটও করছে।
মানে?
এইগুলো তুই কই পাইলি।
আমি অহির হাতে ঐ চিঠি প্রেরকের দেওয়া জিনিসগুলো দেখে চমকে যায়। আমি আমতা আমতা করে বলি,
কই পাবো আবার মেলা থেকে কিনছি।
মেলা থেকে কিনছিস ভালো কথা। তাহলে এভাবে আমতা আমতা করছিস কেনো?
কোথাই আমতা আমতা করছি? তুই হঠাৎ করে এমন ভাবে প্রশ্ন করলি যে আমি চমকে গেছে।
আচ্ছা বাদ দে। তোর পছন্দ কিন্তু সেই। এখন থেকে শপিং করতে গেলে আমি তোকেই নিয়ে যাবো।
আচ্ছা এখন যা।
তুই আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস।
আরে বাপ তোরে আমি তাড়িয়ে দিলাম কই? যাস্ট যেতে বলছি। ফুটবল স্যার যে এসাইনমেন্ট দিছে তা শেষ করে ফেলেছিস।
আরে না আমার তো মনেই ছিল না। উফ স্যারটা এতো পড়া যে কেন দেয়? যাই বন্যাকেও একটু প্যারা দিয়ে আসি। আমি জানি ঐ মাইয়া নোমান ভাইয়ার সাথে পিরিতের আলাপ করতে করতে এসাইনমেন্টের কথা বেমালুম ভুলে গেছে।
ওদের দুজনকে একসাথে কতো সুন্দর লাগে। সারাদিন টম এন্ড জেরির মতো ঝগড়া করে। দিনে একশ বার ব্রেকআপ করে আবার দুজন দুজনকে ছাড়া এক মিনিটও থাকতে পারে না।
একদম ঠিক বলছিস।
_______________
হঠাৎ করে ইচ্ছে জাগলো আর্ট করার। প্রায় এক বছর ধরে কোনো রকম আঁকা আঁকি করি না। অনেক দিন পর রং তুলি নিয়ে বসলাম। খট করে দরজা খোলার আওয়াজ হলো। আমার রুমে অহি আর বড় আম্মু ছাড়া আর কেউ আসে না। বড় আম্মু দিনের বেলা আসে রাতে আসে না। তাই দরজার দিকে তাকিয়ে মানুষটাকে দেখার প্রয়োজন মনে করলাম। না দেখেই বলে ফেললাম,
অহি তুই না একটু আগে গেলি আবার চলে এলি। দুই মিনিটের জন্যও তোর রুমে মন টিকে না।
আমি অহি না।
আম্মুর কন্ঠ শুনে আমি হতভম্ব হয়ে যায়। আমি কী ভুল শুনলাম নাকি? না আমি কল্পনা দেখছি। তাড়াতাড়ি হাতে একটা চিমটি কাটলাম। না এটা স্বপ্ন না সত্যি। তাহলে কী আমি ভুল শুনলাম? আমি তাড়াতাড়ি দরজার দিকে তাকালাম। দরজার সামনে আম্মুকে দেখে আমি ভূত দেখার মতো চমকে যায়। এটা কি সত্যিই আম্মু নাকি ভূত। আম্মু কোনো দিনই আমার রুমে আসে না। আমার ৭ বছর বয়স পর্যন্ত এক আন্টির সাথে আমি এই রুমে থাকতাম। আন্টির ছেলে লেখাপড়া শেষ করে একটা ভালো চাকরি পেয়ে যায়। চাকরি পাওয়ার পর আন্টির ছেলে আন্টিকে নিয়ে এখান থেকে চলে যায়। এরপর থেকে আমি একাই এই রুমে থাকি। আম্মুকে কোনো দিনও আমার রুমে আসতে দেখি নাই। আম্মু এক পা এক পা করে এগিয়ে এসে ঠিক আমার সামনে দাঁড়ায়।
তোর মনে হয় না তুই বেশি বাড়া বাড়ি করছিস। তোর ফুফিকে দেখে তুই একটু বেশিই উড়ছিস। তোর এই ডানা চাটতে আমার দুই মিনিট সময়ও লাগবে না।
দুই মা মেয়ে আমাকে ছাড়াই আড্ডা দিচ্ছিস।
ফুফির কন্ঠ শুনে আম্মু ভয় পেয়ে যায়। ফুফিকে এখানে এই সময় আম্মু মোটেও আশা করেনি।
নিজের মায়ের সাথে আড্ডা দেওয়ার কপাল নিয়ে আমি জন্মায়নি। তুমি তো আর জানো না আম্মু আমার সাথে আড্ডা দিতে নয় থ্রেট দিতে আসছে। ( মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে। )
২২
হোয়াট দ্যা হেল। এই মেয়ে তুমি এখানে কী করছো?
তুমি কফি চেয়েছিলে তাই দিতে আসছি।
কফি দিতে আসলে এভাবে জড়া জড়ি করতে হয়।
আমি নিজেকে কনট্রোল করতে পারি নাই। আফটার শাওয়ার লোকে তোমাকে যে কি হট লাগছে।
আমার রুম থেকে এখনি বেরিয়ে যাও। তোমাকে যেনো নেক্সট টাইম আমার রুমের আশেপাশে না দেখি।
না আমি যাবো না।
আমি মেয়েদের শরীরে টার্চ করি না। নাহলে থাপড়ায়া তোমার গাল লাল করে দিতাম।
চলবে…….