তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-০৮

0
1362

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৮
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

কেউ কানের কাছে ফুঁ দিয়ে কথাটা বলে কানের লতিতে কামড় দিলো। আমি সাথে সাথে পিছনে তাকালাম। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। সবাই সবার মতো ব্যস্ত। হঠাৎ নজর যায় আমার উড়না দিকে। উড়নার এক পাশে একটা কাগজ কেউ বেধেঁ রেখেছে। উড়না থেকে খুলে কাগজটা হাতে নিলাম। কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করলাম।

ধুলোকণা ডাকলাম বলে কী রাগ করলে? মাঝে মাঝে রাগ করা ভালো। আবার অতিরিক্ত রাগ ভালো না। উমম তাহলে তোমাকে বালিকণা ডাকি। ধুলোকণা হও বা বালিকণা তুমি তো আমারি। তোমার রাগী রাগী ফেইস দেখতে অনেক ভালো লাগে। তোমার রাগী ফেইস দেখে মনের কোণে একটা সুপ্ত ইচ্ছা জাগে। বলবো………. না থাক। যেদিন ইচ্ছেটা পুরণ করার অধিকার পাবো সেদিনই বলবো। তুমি বোধ হয় ভাবছো আমি কে? যতই ভাবো আমি কে তুমি তা জানতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি চাইছি। আমি কে তা না ভেবে ইন্জয় করো মুহুর্তটাকে।

চিরকুটটা পড়ে আমার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। এই ছেলেটা কী জাদু জানে নাকি? আমি কখন কী ভাববো বুঝলো কী করে?

কীরে তুই এখানে হিমালয় পর্বতের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? তখন তো আমাদের ফেলে রেখেই লাফাতে লাফাতে চলে এলি।

পিছন থেকে হালকা ধাক্কা দিয়ে কথাটা বললো অহি। আমি অহিদের দেখে তাড়াতাড়ি চিঠিটা লুকিয়ে ফেললাম। এই চিঠি দেখলে এরা এখন মেলাই ঘুরা বাদ দিয়ে চিঠি নিয়ে গবেষণা করতে বসে যাবে। গবেষণার বিষয়বস্তু হবে চিঠিটা কে দিলো? কেনো দিলো? কণাকে তো সরাসরি এসেই দিতে পারতো এভাবে লুকিয়ে দেওয়ার কী দরকার ছিল? ছেলেটার উদ্দেশ্য কী? ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি আমতা আমতা করে বললাম,

কোন দোকানে আগে যাবো সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছি।

আমি কিন্তু রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি ।

সাফাত ভাইয়ার কথায় আমি গাবড়ে যাই। সাফাত ভাইয়া কী বুঝে ফেললো নাকি? আমি চাই না আমার জন্য সবার আনন্দ মাটি হোক। যথা সম্ভব নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,

মানে?

তোকে কেউ প্রোপোজ করছে নাকি? তাহলে তো আমরা খুব খারাপ বডিগার্ড। সুন্দরী মেয়েদের ঠিক ঠাক গার্ড করতে পারলাম না। কী বলিস নোমান?

নোমান ভাইয়াও মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। সাফাত ভাইয়া মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলে,

আরে কণা তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো? আমি তো যাস্ট মজা করলাম। সত্যিই কী কেউ প্রোপোজ করছে নাকি? (ভ্রু কুচকে) নামটা বল একবার ঘুষি মেরে নাক ভেঙে দিবো।

উফ তোমরাও না কীযে বলো?

কথাটা বলেই একটা চুড়ির দোকানে ঢুকে পড়লাম। বাহারি রঙের চুড়ি দেখে আমার মন খুশিতে নেচে ওঠলো। অনেক রঙের চুড়ি কিনে নিলাম। কাঁচের চুড়ি আমার ভীষণ প্রিয়। সব রঙের দুই ডজন করে চুড়ি আমার কাছে আছে। নাচতে নাচতে একটা শাড়ির দোকানে ঢুকে পড়লাম। শাড়ির দোকানে ঢুকেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সবাইকে সবার প্রিয় মানুষ শাড়ি পছন্দ করে দিচ্ছে। বন্যাকেও নোমান ভাইয়া শাড়ি পছন্দ করে দিচ্ছে। আমাকে কে পছন্দ করে দিবে? আমার তো কোনো প্রিয় মানুষ নেই। এখন আর এই মেলায় থাকতে ইচ্ছে করছে না।

মন খারাপ করে এসে গাড়ির ডিকিতে বসে পড়লাম। সবাই সবার ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে মেলা থেকে বের হচ্ছে। আমার কী কোনো দিনও কোনো ভালোবাসার মানুষ হবে না যে আমাকে একটুখানি হলেও ভালোবাসবে। আমি তাকিয়ে সবাইকে দেখছি কেউ প্রাণ খুলে হাসছে তো কারো ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসি। ডিকি থেকে নেমে গাড়ির ভিতরে বসে পড়লাম। গাড়ির সিটে মাথা হেলিয়ে দিতেই রাজ্যের ঘুম এসে চোখে বর করলো। কালকে রাতে তো ঠিক করে ঘুমুতেই পারি না। ফুফির দেওয়া জিনিসগুলো দেখতে দেখতেই অর্ধেক রাত পার হয়ে যায়।

১৮

অহি, বন্যা, সাফাত আর নোমান এসে দেখে কণা গাড়ির সিটে মাথা হেলিয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন। যা দেখে চার জনেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।

আমাদের চিন্তায় ফেলে এই মেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। ঐদিকে আমরা চারজন হন্যে হয়ে তাকে সারা মেলা খুঁজে বেরাচ্ছি।

ওকে কিছু বলো না হয়তো ক্লান্ত ছিল তাই চলে এসেছে। দেখছো না এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ওকে আর ডাকার দরকার নেই।

ও আমার বোন হলেও মনে হচ্ছে আপনার দরদ বেশি।

অবিয়েসলি আমি কণাকে তোমার থেকে বেশি ভালোবাসি।

মার থেকে মাসির দরদ বেশি। ( মুখ বাকিয়ে কথাটা বলে অহি)

কণার ক্ষেত্রে কিন্তু মাসির দরদটাই বেশি। কণার মা ওকে সহ্য করতে পারে না আর তোমার মা ওকে কতো ভালোবাসে। এখন তোমার সাথে ঝগড়া করার মুড নাই। সবাই গাড়িতে ওঠো।

_______________

অহির ডাকে আমার ঘুম ভাঙে। পিটপিট করে চোখ খুলি। চার চারটা মুখ আমার দিকে ঝুকে আছে দেখে হকচকিয়ে যায়। আমি আমতা আমতা করে বলি,

কী ব্যাপার তোমরা আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?

সত্যি করে বলতো কালকে রাতে তুই ঘুমিয়েছিল?

মানে??

আমার জানা মতে তোর ঘুম খুব পাতলা। একটু হালকা শব্দ হতেই তোর ঘুম ভেঙে যায়। আর আজকে আমরা চারজন সেই কখন থেকে তোকে ডেকে চলেছি। কিন্তু তোর কোনো পাত্তাই নেই।

ওহ। আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি গেলাম তোমরা থাকো। বাই এবরিবডি।

আমি চলে আসতে নিলেই বন্যা আমার হাত ধরে টেনে আবার সিটে বসিয়ে দেয়।

কী ব্যাপার বলতো? তোর ব্যবহার আজকে আমার গন্ডগোলে লাগছে। মেলায় যাওয়ার জন্য তুই সব থেকে বেশি এক্সসাইটেড ছিলি। আর তুই মেলা থেকে হুট করে চলে এলি।

তোর সব প্রশ্নের উত্তর কালকে ভার্সিটিতে দিবো। আমার এখন অনেক ঘুম পাচ্ছে। আমি গেলাম।

কথাটা বলেই দৌড়ে বাসার ভিতরে ঢুকে পড়লাম। দরজা খোলাই ছিল তাই ঢুকতে অসুবিধা হয়নি। এক দৌড়ে রুমে চলে এলাম। ঘুমের জন্য চোখ দুটো জ্বালা করছে। চোখ মুখে পানি দেওয়ার দরকার। হাতের জিনিসগুলো রেখে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। একেবারে ফ্রেশ হয়ে চেইন্জ করে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম। চুড়ির প্যাকেটটা নিয়ে বিছানার ওপর বসলাম। বিছানার ওপর বসতেই আমার নজর যায় বেড সাইড টৈবিলের ওপর।

যেখানে একটা রেপিং পেপারে মোড়ানো বক্স। আমি কৌতূহল বশত বক্সটা হাতে নেই। বক্সটার ওপর বড় বড় অক্ষরে আমার নাম লেখা। বুঝতে পারলাম এই গিফটটা আমার জন্যই কেউ রেখে গেছে। কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে আমাকে গিফট কে পাঠাবে। ভাবনা চিন্তা দুরে ঠেলে দিয়ে গিফট বক্সটা খুলতে শুরু করলাম। গিফট বক্স খুলতেই বেরিয়ে এলো একটা লাল শাড়ি তার সাথে লাল কাঁচের চুড়ি, একটা শিউলি ফুলের মালা, এক পাতা টিপ, লাল লিপস্টিক আর কাজল। এগুলো দেখে আমার চোখ চড়ক গাছ। এই গিফটগুলো আমাকে কে দিতে পারে। শাড়ির ভাজে একটা চিঠি পেলাম। চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলাম।

প্রিয় ধুলিকণা,

তুমি এতো মন খারাপ করে থাকো কেনো? কে বললো তোমার প্রিয় মানুষ নেই? তোমাকে একটুখানি না পাগলের মতো ভালোবাসার মানুষ আছে। তোমাকে মন খারাপ করে মানায় না। তোমাকে রাগী ফেইসেই মানাই। আমি তো চাই তোমার রাগের দহনে পুড়তে। এতদিন তোমার ভালোবাসার দহনে পুড়েছি এখন না হয় তোমার রাগের দহনেই পুড়লাম।

ইতি
তোমার ভালোবাসা

ওহ গড কে এই পাগল? আমি তাকে চিনিই না আর সে আমাকে নিজের ভালোবাসা বলে দাবি করছে। কিন্তু ছেলেটার পছন্দ আছে বলতে হবে। সবগুলা জিনিসই দারুন হয়ছে।

___________

বিকেলবেলা রুম থেকে বের হতেই আম্মুর সামনে পড়ে যাই। আমাকে কিছু বলতে যাবে তার আগে ফুফিকে দেখে ভয়ে চুপসে যায়। শুধু আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। যার অর্থ যত উড়ার উড়ে নে। তোর ফুফি তো আর এখানে সারাজীবন থাকবে না। একবার তোর ফুফি যাক দেখ পড়ে তোর কী হাল করি? আমি আম্মুর দৃষ্টিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ছাদে চলে যাই।

১৯

আমার আর তর সইছে না। কখন তোর প্রেয়সীর সাথে দেখা করাবি?

খুব তাড়াতাড়ি। তার আগে আমার কিছু মানুষের সাথে হিসাব চুকানো বাকি আছে। যাদের জন্য আমার প্রেয়সী প্রতি নিয়ত কষ্ট পেয়েছে তাদেরকে এর দাম দিতেই হবে। আমার প্রেয়সীর প্রত্যেকটা অশ্রুর ফোটা মুল্য তাদেরকে দিতে হবে।

চলবে…….