তুমি আসবে বলে পর্ব-১+২

0
425

#তুমি আসবে বলে
সূচনা পর্ব

#নুসাইবা ইভানা

“মম তোমার মাথা ঠিক আছে, একটা ১৩ বছরের বাচ্চা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করো কিভাবে?
“আমার পক্ষে এ বিয়ে করা অসম্ভব।

আর তাছাড়া আমি এখন বিয়ে করতে চাইছি না “আমার লাইফ মাত্র শুরু করেছি, এখনো অনেক কিছু বাকি আছে।
বুঝার চেষ্টা করো, আর তাছাড়াও একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করার মতো নিম্ন মানুষিকতা আমার না।
তোমরা শিক্ষিত সচেতন মানুষ হয়ে এরকম একটা কথা কি করে বলতে পারো? আমার বুঝে আসছে না।
“তোমরা ভাবলে কি করে আমি একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হবো!
আমার পরিচয়টাই তো দেয়া হয়নি, আমি মেহের আফরোজ মেঘ, বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। এবার অর্নাস সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি।
লন্ডনে থাকি। আমার পুরো ফেমেলি সেখানেই থাকতো।
দুদিন আগেই তারা বাংলাদেশ এসেছে। কালকে আমাকেও জরুরি তলব দিয়ে নিয়ে এসেছে। বাকি তো আপনারা দেখতেই পারছেন।
মিসেস মমতা : চৌধুরী (মেঘের মা) বিয়েটা তোমাকে করতেই হবে মেঘ
মেঘ: পাপা, তুমিতো অন্তত বুঝাও মমকে আমার পক্ষে এই বিয়েটা করা পসিবল নয়।
মোর্শেদ আফরোজ : বিয়েটা করে নও মেঘ।
পাপা তুমিও একি কথা বলছো; আমি ভেবেছিলাম তুমি অন্তত বুঝবে।

” তোমাদের যা ইচ্ছে কর আমি আজ এখনই চলে যাবো।

“মেঘ তোমার মনে আছে! তুমি বলছিলে আমি যা চাইবো তুমি তাই দিবে। তবে আজ কেনো পিছু হটে যাচ্ছো।
মেঘ এই মেয়েটি কে আমার চাই, এট এনি কস্ট
কথাটা বলে সামনে পা বাড়াতেই মিসেস মমতা চৌধুরী মেঘের হাত ধরে বলে, কোথাও যাওয়া হবে না তোমার। আমার সাথে এসো,বলেই মেঘের হাত ধরে একটা রুমে নিয়ে যায়।
মেঘ অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। তার মম কোনদিন তার সাথে জোর করেনি। আর আজ তার জীবনের এতো বড় একটা ব্যপারে তার কোনো কথাই শুনছে না।
মিসেস মমতা চৌধুরী বললেন, সামনে তাকও মেঘ
মেঘ দেখতে পায় একটা বাচ্চা মেয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।
নিষ্পাপ চেহারা, যেন গোলাপের কলি।
মেঘের আপসোস হলো এই নিষ্পাপ বাচ্চা মেয়েটার সাথে এতো বড় অন্যয় কেনো করছে তার মম?
আচ্ছা মেয়েটার মা বাবাই বা কেনো রাজি হচ্ছে?

হঠাৎ তার মম এর কথায় মেঘের ঘোর কাটে
কি ভাবছো,কেনো এই বাচ্চা মেয়েটার সাথে এতো বড় অন্যায় করা হচ্ছে??
তাহলে দেখো, বলেই মেয়েটির গা থেকে কাঁথা শরিয়ে দেয়

মেঘ দেখতে পেল, বাচ্চা মেয়েটার শরীরের যতটুকু অংশ দেখা যাচ্ছে, ততটুকু জায়গা নীল বর্ন হয়ে ফুলে আছে। মনে মনে ভাবছে এতোটুকু বাচ্চা মেয়েটাকে কে এভাবে নিষ্ঠুরের মতো মারতে পারলো?

“মেঘ তার মায়ের দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকায়

মিসেস মমতা চৌধুরী মেঘের দৃষ্টি বুঝতে পেরে
বলতে থাকে, ভাবছো কোন অমানুষ এই বাচ্চা মেয়েটাকে এভাবে মারলো?
মেঘ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
মিসেস মমতা চৌধুরী বললেন, তার আগে তুমি কথা দাও এই বিয়ে টা তুমি করবে।
-মম বিয়ে কেনো করতে হবে?
তুমি ওকে আমাদের সাথে নিয়ে গেলেই তো হয়।
মিসেস মমতা চৌধুরী : যদি নিয়ে যেতে পারতাম, তবে তোমাকে বিয়ে করতে বলতাম না।
তোমার কাছে আমি অনুরোধ করছি বিয়েটা করে নাও তুমি।

মেঘ বুঝতে পারছেনা, একটা বাচ্চা মেয়েকে সে বউ হিসেবে কি ভাবে মেনে নিবে।
এটা কি ভাবে সম্ভব ২৩ বছরের একটা যুবক কিনা ১৩ বছরের একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করবে?
” না! মেঘ কিছুতেই পারবে না এই বিয়ে টা করতে
দরকার পড়লে, পুলিশের সাহায্য নিয়ে মেয়েটাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে।
” তবুও বিয়ে করা তার পক্ষে অসম্ভব।

হ্যাঁ এটা ঠিক মেঘের জীবনে এখনো কোনো মেয়েকে বিশেষ ভালো লাগেনি।তবে সামিরাকে মেঘ কি উত্তর দেবে। খুব তো বড় মুখ করে বলেছিল সট্যাডি শেষ না হওয়া অব্দি এসবে জড়াবে না। আর এখন ডিরেক্ট বিয়ে।
মেঘ ভাবছে কি ভাবে এসব থেকে বের হওয়া যায়।

আবার মনে মনে ভাবছে, বিয়ে করবো ঠিক আছে। তাই বলে একটা বাচ্চা মেয়েকে?
কেনো যে বাবা, আর মমকে বাংলাদেশ আসতে দিলাম।এখন লও ঠেলা।

মিসেস মমতা চৌধুরী মেঘের কাঁধে হাত রেখে বলে কি এতো ভাবছিস বল তো। আমি তো বলছি এই বিয়ের ব্যপারটা গোপন রাখবো। তুই না চাইলে কেউ জানবে না।

– মম সিরিয়াসলি বিয়েটা করতেই হবে?
– হুম করতেই হবে। ভাবতে পারিস এটা তোর কাছে আমাদের শেষ চাওয়া।

– মেঘ আবকর ভাবনায় পরে গেলো। কি করে বিয়েটা আঠকানে যায়।

– অতশত না ভেবে বিয়েটা করতে রজী হয়ে যাও। মেঘের হাত দুঠো ধরে বলে, তোমাকে অনুরোধ করছি মেঘ তুমি শুধু বিয়েটা করে মেয়েটাকে আমার করে দাও।
তোমার ওর কোনো দায়িত্ব নিতে হবে না।
তুমি তোমার মতো পড়াশোনা কন্টিনিউ কোরো বা তুমি তোমার মতো থেকো, তোমাকে কখন ওর দায়িত্ব নিতে হবে না।
তুমি ওকে বিয়ে করে আমার মেয়ে বানিয়ে দাও।
ও বড় হওয়ার পরও যদি তোমার মনে হয় তুমি ওর সাথে থাকতে পারবে না, তাহলে আমি নিজে তোমাদের ডিভোর্স করিয়ে দেবো।
তুমি বিবাহিত সেই বিষয় আমরা ছাড়া অন্য কেউ জানবেনা।
“তুমি না চাইলে কোনদিন ও জানবেনা
আমি ওয়াদা করছি তোমাকে।
“তবুও বিয়েটা করো!

-মেঘ নিজের মায়ের এমন আকুতি ভরা আবদার কি করে ফিরিয়ে দেবে? আর কি করেইবা এই বাচ্চা মেয়েটাকে বিয়ে করবে?
মেঘ দোটানায় ভুগছে, একদিকে তার মম আর অন্য দিকে তার আত্মমর্যাদা।
মেঘ বুঝতে পারছে না এখন তার কি করা উচিৎ।
মেঘ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, মম তুমি যা চাও তাই হবে ।
তুমি কোনদিন আমাকে ফোর্স করতে পারবে না! এই মেয়েটাকে মেনে নিতে।
“আর একটা কথা, বিয়েটা কেনো করতেই হবে, সেটা যদি বলতে।
-আমি তোকে সব বলবো মেঘ, আগে বিয়েটা কর
তোর মায়ের উপর বিশ্বাস রাখ।
আমি অপারগ না হলে কোনদিন তোকে এই বিয়ে করতে বলতাম না।

-বিয়েটা কখন করতে হবে।
মিসেস মমতা চৌধুরী বললেন, তোর বাবা কাজী আর গ্রামের মোরলদের নিয়ে আসছে।
তোর বাবা ওদের নিয়ে আসলেই বিয়ে
-মম আমি কিন্তু বিয়েটা শুধু তোমার জন্য করছি।
– বারবার এককথা কেনো বলছিস,আমার মনে থাকবে আরহা তোর বউ না আমার মেয়ে।
মেঘের বাবা হন্তদন্ত হয়ে রুমে ডুকে, মেঘ নিজের বাবাকে পেরেশানিতে দেখে, জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে?
তোমাকে বিচলিত দেখাচ্ছে কেন
এনি প্রবলেম?
মোর্শেদআফরোজ : মেঘকে কিছু না বলে, মিসেস মমতা চৌধুরীর দিকে এগিয়ে গেলেন। মেঘ তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু দেখছে। তার বাবা তার মাকে কিছু বলার ট্রাই করছে। মেগ বুঝতে পারছে কথাটা কোন গুরুত্বপূর্ণ। তবে তাকে বললে সমস্যা কোথায়?

মেঘ ভাবছে কে এই মেয়ে যার জন্য তার বাবা, মা দুজনেই এতোটা ডেস্পারেট। এই মেয়ের কথা তো আগে কখন শুনিনি মম ড্যাড এর মুখে। কি এমন সম্পর্ক এই মেয়ের সাথে যার জন্য তার বাবা মা, নিজের ছেলের ফিউচারের কথা না ভেবে এই মেয়েটার চিন্তা করছে?আচ্ছা এই মেয়ের বাবা, মা কেথায় এদের দেখছি কেনো?

কথাটা শুনে ,মমতা চৌধুরী চেহারায় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।
কি করে কথাটা মেঘকে বলবে। আর কথাটা শুনে মেঘ কি রিয়েক্ট করবে। আদৌ মানবে তো তাদের কথা।
এসব ভাবছে আর একবার মেঘের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার নিজের হাসব্যান্ডের দিকে তাকাচ্ছেে

কি করবেন বুঝতে পারছেন না। কি়ছুক্ষন চিন্তা করে তিনি সাহস যুগিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললেন…

.

চলবে

#তুমি আসবে বলে

#নুসাইবা ইভানা

পর্ব – ২

মেঘ তার মমকে বললো এভাবে মুখ দেখে যদি সমস্যার সমাধান করতে পারো তবে তাকিয়ে থাকো আর নয়তো বলো সমস্যা কোথায় বসে একটা সমাধান বের করি!
মিসেস মারিয়া বললেন, গ্রামের মোরোলরা বলছেন, শুধু বিয়ে হলেই হবে না।তোদের দুজনকে একসাথে এক রুমে এক রাতের জন্য থাকতে হবে।
মেঘ হেসে বললো ব্যস এটুকু কোন সমস্যা নেই তুমি বিয়ের ব্যবস্থা করো বাকিটা আমি সামলে নেবো।

শর্ত মেনেই বিয়ে হয়ে যায়। আরহা ছিল নিরব দর্শক তার কোন কিছুই বলার ছিলোনা একে তো মাত্র কয়েকদিন আগেই মাকে হারিয়েছে তার উপর মামির অত্যাচার এই বয়সেই তার জীবনটা বিষাক্ত হয়ে উঠেছে
মিসেস মারিয়া আর গ্রামের কিছু মহিলা মিলে আরহাকে হালকা সাজিয়ে একটা রুমে বসিয়ে রেখে আসলো।সবাই বেরিয়ে গেলে মিসেস মারিয়া আরহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন মা একটু ধৈর্য ধর সব ঠিক হয়ে যাবে আমি তোকে কথা দিচ্ছি তোর জীবনের সব আধার দূর করে এক নতুন ভোর এনে দেবো। কথাটা বলে আরহার কপালে চুমু খেয়ে চলে গেলেন। আরহা ফ্যলফ্যল করে তাকিয়ে রইল। তার মা তাকে মিসেস মারিয়া অনেক গল্প শুনিয়েছিল কিন্তু কোনদিন মিসেস মারিয়াকে দেখেনি আরহা।
আরহা খুব করে ইচ্ছে করছে কাউকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে আমার মাকে এনে দাও মা গান না শোনালে আমার ঘুম আসেনা। কিন্তু আপসোস আরহার আপন বলতে কেউ নেই এসব ভেবে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে আরহা।

মেঘ রুমে ডুকতেই দেখতে পায় একটা নিষ্পাপ চেহারা তবে এই মিষ্টি চেহারাটা কেমন মলিন হয়ে আছে। খাটের মাঝে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে পরনের শাড়ি কিছুটা এলেমেলো হয়ে আছে আরহা
মেঘ নিঃশব্দে বাচ্চা মেয়েটির(আরহা)পাশে বসে মেয়েটির গায়ে সুন্দর করে কাঁথা জড়িয়ে দেয়
আরহার নিষ্পাপ চেহারার দিকে তাকিয়ে ভাবে তোমার জীবনে কত বড় ঝড় আসলো তুমি হয়তো তা বুঝতে ও পারছো না। তবে চিন্তা করো না তুমি আমার ওয়াইফ না আমার মায়ের মেয়ের পরিচয়ে বড় হবে।
বিছানা থেকে একটা কাঁথা আর বালিশ নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে মেঘ ভাবে কেনো যে বাংলাদেশ আসতে গেলাম
না আমি বাংলাদেশ আসতাম না এসব সাফার করতে হতো!

মাঝ রাতে কারো কান্নার শব্দে মেঘের ঘুম ভেঙ্গে যায়। এমনিতেই ফ্লোরে শোয়ার দরুন তার ঘুম আসছিলো না। যেই না চোখটা লেগে এসেছে ওমনি কান্নার শব্দ ভেসে আসে মেঘের কানে। বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে। বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে আরহা। মেঘ বিছানার পাশে আসতেই শুনতে পায় মেয়েটি বলছে আমাকে মে*রো না, আমাকে মে’রো না
মেঘ নিজেরর ফোনটা বের করে। মিসেস মমতা চৌধুরীকে কল করে। দু তিন বার রিং হওয়ার পরে রিসিভ হয়।
মেঘ অস্থির কন্ঠে বলে মম তাড়াতাড়ি এদিকটাতে আসো

মিসেস মমতা চৌধুরী আসতেই মেঘ বলে, দেখোতো মেয়েটার শরিরে বোধহয় জ্বর এসেছে!
– তুমি একটা বাটিতে করে পানি নিয়ে এসো আমি দেখছি। সিসেস মমতা চৌধুরী আরহার মাথা তার কোলে নিয়ে, পরম যত্নে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে এই যে চোখ খুলে দেখো “মা” আমি এসে পরেছি কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোর? আমাকে বল?
– মম পানি। মেঘের হাত থেকে পানির বাটিটা নিয়ে নিজের ওড়নার এক কোনা ভিজিয়ে আরহার মাথায় জল পট্টি দিচ্ছে। এতোটা যত্নে তিনি কাজটি করছেন মনে হচ্ছে তার মেয়ে।

মেঘকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে, মিসেস মমতা বেগম বললেন, মেঘ,তোমার শারমিন আন্টির কথা মনে আছে?
– যতদিন বেঁচে আছি ততদিন মামনিকে ভুলবো না মম
তবে মামুনি কোথায় হারিয়ে গেলেন!
– মিসেস মারিয়া কিছু বলবেন তার আগেই আরহা জ্ঞান হারলো। মিসেস মারিয়া বিচলিত কন্ঠে বললেন,মেঘ দ্রুত আরহাকে হসপিটালে নিতে হবে তুমি আরহাকে কোলে তুলি নিয়ে এসো। আমি তোমার বাবাকে ডেকে আনছি।

“মেঘ দাঁড়িয়ে আছে জীবনে প্রথম কোন মেয়েকে স্পর্শ করতে হবে! ভাবতেই বুকের ভিতর হাতুড়ি পেটা করছে। একবার হাত বাড়াচ্ছে তো আবার ফিরিয়ে আনছে। বার কয়েক এভাবেই করলো ধরছে তো ধরছেনা। নিজের প্রতি নিজে বিরক্ত হচ্ছে। শেষ বারের মতো চোখ বন্ধ করো লম্বা শ্বাস টেনে কোলে তুলেই নিলো। মেঘের চেহারায় বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট যেনো কেউ থাকে বেঁধে পেটাচ্ছে। একবারের জন্য তাকালো না আরহার দিকে। মনে মনে শুধু ভাবলো আসলেই এই মেয়ের তের বছর বয়স তো নাকি এটাও মিথ্যে কথা।এতো হালকা, যেনো মনে হচ্ছে পাট কাঠি।

গাড়ির পেছনের সিটে মিসেস মারিয়ার সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিয়েছে আরহাকে। নিজে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি ড্রাইভিং করছে লোকেশন ট্র্যাকিং করে যাচ্ছে হসপিটালে।পাহাড়ি এলাকা রাস্তা গুলো আঁকা বাঁকা তবু যথেষ্ট দ্রুত ড্রাইভিং করছে। যদিও কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে তবুও সামলে নিচ্ছে।

মিসেস মারিয়ার চেহার চিন্তার ছাপ স্পষ্ট, চোখের কোনেও জল জমা হয়েছে যে কোন সময় বৃষ্টির ধারার মতো গাল বেয়ে পড়বে।

হসপিটালে আসতেই মেঘ আর কিছু না ভেবে আরহাকে কোলে তুলে নিলো। দ্রুত পায়ে ইমারজেন্সি বিভাগে যেয়ে কথা বলে আরহাকে ভর্তি করালো এতো রাতে ডাক্তার পাওয়াটা কঠিন নাইট সিফটে যারা আছেন দু’ একজন ছাড়া বাকিরা হয়তো ঘুমোচ্ছে

একজন ডক্টর আরহা কে দেখছে সারা শরীরে কালশিটে দাগ গুলো দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এসব কিসের দাগ? দেখে তো মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে আঘাত করেছে, এতোটুকু মেয়েকে কেউ এভাবে মা*রে?

মেঘ নরম স্বরে বললো সেই বিষয়ে পরেও কথা বলা যাবে আগে চিকিৎসা করা জরুরি।
– তুমি বললেই হবে এতোটুকু মেয়ে এমন বউ সাজে কেনো? আপনারা কি মেয়েটিকে জোড় করে বিয়ে দিচ্ছেন?
– মেঘ রেগে ডক্টরের কলার ধরে বললো,তোকে বলেছি চিকিৎসা করতে গোয়েন্দা হতে বলিনি তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু কর! নাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।
মিসেস মারিয়া এসে মেঘকে সরিয়ে নিয়ে গেলেন, আস্তে করে বললেন এটা লন্ডন না বাংলাদেশ বুঝতে পারছো তোমার এমন ব্যাবহারের ফল কত খারাপ হতে পারে! চুপচাপ ডাক্তারকে সরি বলে বাহিরে অপেক্ষা করো।

সরি বলার মতো ছেলে “মেঘ” না তবুই একপলক আরহার দিকে তাকিয়ে কোনমতে ডাক্তারকে সরি বলে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে।

মোর্শেস আফরোজ ডাক্তারকে এসে সরি বললেন, ডাক্তার আরহাকে দেখে নার্সকে বললেন ইনজেকশন পুশ করতে কিছু ঔষধ লিখে দিলেন আর বললেন,মেয়েটির যত্ন নিতে হবে। আমি ইনজেকশন পুশ করে দিয়েছে সকালের মধ্যে জ্বর ভালো হয়ে যাবে।

ডাক্তার চলে যেতেই মিসেস মারিয়া আরহার পাশে বসে আরহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। চোখের অবাধ্য অশ্রু কণাগুলো গড়িয়ে পরছে।

এমন সময় মেঘ কেবিনে প্রবেশ করলো কোন কথা না বলে আরহাকে কোলে তুলে নিলো। কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলল, যদি তোমরা যেতে চাও আসতে পারো? আর থাকার ইচ্ছে হলে থাকতেও পারো। তবে আমি আর এ অনঞ্চলে এক মূহুর্তের জন্যও থাকবো না। কথা শেষ করেই লম্বা লম্বা পা ফেলে বেরিয়ে গেলো।

মেঘের বাবা, মা দুজনেই মেঘের পিছু পিছু আসলো। মোর্শেদ আফরোজ হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে বেরিয়ে আসলেন। বরাবরই তার ছেলেটা একটু রগচটা স্বাভাবের।

আরহাকে পিছনের সিটে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং করছে, মিররে বার কয়েক নিজের মমের সাথে চোখাচোখি হয়েছে।
যদিও কেউ কোন কথা বলেনি পিন ড্রপ নিরবতা।

ঢাকা আসতে আসতে ভোর হয়ে গেছে। আরহা তখনো গভীর ঘুমে, মেঘ তাকে কোলে তুলে নিতেই কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো। মেঘ খেয়াল করলো শরীরে এখন জ্বর নেই। মেঘ কোনমতে আরহাকে সোফায় রেখে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

অনেক বছর পর নিজের বাড়িতে এসে চোখের জল আটকাতে পারছেন না মিসেস মারিয়া।কতশত স্মৃতি ভেসে উঠছে চোখের সামনে।

এতো বছর এ বাসা খালি ছিলো সার্ভেন্ট আর কেয়ার টেকারা দেখা শুনো করছে।

মিসেস মারিয়া সোফায় বসে আরহার মাথাটা তার কোলে নিয়ে নিলেন। অপেক্ষা করছেন আরহার জাগ্রত হওয়ার।

#চলবে

ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন
হ্যাপি রিডিং 🥰