তুমি আসবে বলে পর্ব-২৩+২৪+২৫

0
291

#তুমি আসবে বলে

#নুসাইবা ইভানা

পর্ব-২৩

সামিরা, ইমতিহান দুজনেই বুঝতে পারছে না মেঘ কিছু না বলে কোথায় গেলো?
সামিরা বলল, আচ্ছা ইদানীং মেঘের আচরণে আমি বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করছি ও চাচ্ছে কি?
– দেখ সামিরা আমার মনে হয় মেঘ তোর সাথে ফ্রেন্ড ছাড়া অন্য কোন সম্পর্ক গড়বে না।
– সেটা আমি বুঝে নেবো। তুই শুধু বল ও কোন মেয়েকে পছন্দ করে?
– সঠিক বলতে পারবোনা। এই ছেলে ফোনটা ফেলে রেখে কই লাপাত্তা হলো!

মেঘ খানিকক্ষণ বসে থেকে উঠে আসলো এলোমেলো পায়ে সামনে এগিয়ে আসলো মধ্যবয়স্ক লোকটি মেইন রোডে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমি যে বড্ড বেশি অন্যায় করে ফেলেছি।এখন তার এ পাহাড় সম অভিমান আমি কি ভাবে দূর করবো।

– ভেঙে পরছো কেনো যা ভুল করেছো তার চেয়ে অধিক পরিমাণ ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দেবে। শুনো ভালোবাসার কাছে প্রতিটি মানুষ দূর্বল। ভালোবাসা এমন এক শক্তি যেখানে সব রাগ অভিমান তুচ্ছ। ভুলটা যেহেতু তোমার তাই সেটা শুধরে নেয়ার দায়িত্ব তোমার।
– আপনার জন্য সব সম্ভব হয়েছে। আপনি না বললে হয়তো এতো সহজে আমার ভূল ভাঙতো না।তবে ওই হিয়াকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না।
– তোমার কিছু করতে হবে না। সবাই সবার কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করবেই।
– কিন্তু তাই বলে এভাবে ছেড়ে দেবো
– তুমি ছেড়ে দাও কেউ না কেউ অবশ্যই শাস্তি দিবে।
– আচ্ছা চলুন আজ দু’জনে একসাথে অনেকটা সময় কাটাবো।
মধ্য বয়স্ক লোকটি হেসে দিয়ে বললো চলো তবে বাবা আজ শুধু দিনটা তোমার আমার। তবে মনে রেখো কাল থেকে কিন্তু তোমার ভালোবাসা জিতে নেয়ার লড়াই শুরু।
– তাতো অবশ্যই আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবো।

রাতের খাবার খেয়ে নীলুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আরহা।নীলু আরহার মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আরহা কোমল স্বরে বলল,আপুই আজকে বলোনা ওনার পুরো নামটা কি?
– আগে বল তুই কি ছোট সাহেবের কাছে ফিরতে চাস?
– আরহা চুপ করে রইলো। কি বলবে সে! যে মানুষটা তাকে এতো কষ্ট দিলো তাকেই সে চায়! খুব করে চায়।
– কিরে বল তুই মেনে নিতে পারবি তো?
– আপুই তুমি বলো তো নামের সাথে মানা না মানার কি সম্পর্ক?
– আচ্ছা ছোট সাহেবের নাম হচ্ছে মেহের আফরোজ মেঘ।
– আরহা বেশ অবাক হলো। সত্যি মেহের আফরোজ!
– হুম সত্যি।
– আচ্ছা তুমি আমাকে এতোদিন বলোনি কেনো ছোট সাহেব আর কেউ নয় আমার হ্যাসবেন্ড যাকে এতোদিন খুঁজেছি।
– তার পেছনে কারণ আছে। তুই জানলি কি ভাবে ছোট সাহেব আর কেউ নয় বরং তোর হ্যাসবেন্ড

– এখন বলবো না অপেক্ষায় থাকো পরে বলবো।
আরহা নিজের রুমে এসে ফোন বের করে সেই মেসেজগুলো দেখলো। তার মানে সেদিন আপনি আমায় হসপিটালে নিয়ে এসেছিলেন? ইশ আমি কেনো সেন্সলেস ছিলাম।এতোদিন আমি অপেক্ষা করেছি এবার আপনার অপেক্ষার পালা। আরহার এতো আনন্দের মধ্যেও একটা কথায় বিষাদ ছেয়ে যায়। উনি কি সত্যি আমায় ভালোবাসেন? কিন্তু হুট করে কি এমন হলো যার ফলে তার ঘৃণা চলে যেয়ে ভালাবাসার উদয় হলো!

আপনি আমাকে সব সময় এক রহস্যের বেড়া জালে আটকে রাখেন। খুব বাজে আপনি ছোট সাহেব! আমার ছোট্ট হৃদয়টাকে আর কত ক্ষতবিক্ষত করবেন। তারপর এই অসুস্থ হৃদয়ের চিকিৎসা কে করবে। এ ডাক্তার যে পৃথিবীতে নেই। এসব চিন্তা করতে করতে ঘুমের দেশে পারি জমালো আরহা।

মেঘ আর মধ্য বয়স্ক লোকটি বসে আছে এক সাথে মেঘ বলল,আচ্ছা আঙ্কেল এবার আমি জানতে চাই আপনি এতোদিন কোথায় ছিলেন? আপনার ফ্যামেলির থেকে দূরেই বা কেনো ছিলেন? কেনো এতো কাছে থেকেও নিজের মেয়েকে এতো দূরে রেখেছেন?
– শোন বাবা আমার একটা সময় খুব ভুল করে ফেলি। আর আশ্চর্যের বিষয় হলো সেই কাজটা যে ভুল সেটা বুঝতে বুঝতে আমাদের জীবন থেকে সব কিছু হারিয়ে যায়। আমিও ঠিক সেরকম ভুল করি। যে ভুল শুধু আমার জীবন নয় ধ্বংস করে দিয়েছিলো দুটি পরিবার
– আমি শুনতে চাই সেই ভুলের গল্প যা আপনার জীবন থেকে সব কেড়ে নিয়েছে!
– আমার আর শারমিনের ছিলো প্রেমের বিয়ে। শারমিনের গ্রাম থেকে তাকে নিয়ে চলে এসেছিলাম এ শহর। মেয়াটা বড্ড ভালোছিলো। তারপর একসাথে পড়া লেখা করলাম। আমি সিনিয়র সে জুনিয়র বিয়েটা গোপন রাখলাম। অবশ্য তেমার বাবা, মা আর আমার বাবা, মা জানতো বিয়ের বিষয়ে। সুন্দর জীবন চলছিলো। কিন্তু ভার্সিটি লাইফের শেষের দিকে আমি জড়িয়ে পরি জ*ঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে। পাল্টে যেতে থাকে আমার জীবন তবে শারমিন বা কেউ সে বিষয় অবগত ছিলোনা। বিয়ের দশ বছর পার হয়ে গেলেও আমাদের কোন সন্তান আসেনি। তুমিই ছিলে আমাদের সন্তান আমারা সবাই তোমাকে খুব আদরে বড় করতে লাগলাম, তুমি বড় হতে থাকলে আমি লুকিয়ে আমার কাজ করতে থাকলাম । তোমার বয়স যখন দশ বছর তখন আমি বড় একটা বো*মা হা*ম*লা ঘটাই কিন্তু ভুল ক্রমে সেখানে তোমার বাবাও উপস্থিত ছিলো। তাই তোমাদের কে কৌশলে বাহিরে পাঠিয়ে দেই। কারন আমরা একে অপরকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করতাম। তবে কথায় আছে পাপ তার বাপকেও ছাড়েনা। আমাকেও ছাড়েনি তোমরা চলে যাওয়ার তিন বছর পর সুখবর আসে আমি বাবা হবো। এতো আনন্দ আমার জীবনে হয়তো আর আসেনি। শারমিন ও খুব খুশি হয়েছিলো তোমার বাবা, মাকে খবর জাননো হলো। তখন তোমার মা, বলেছিল ইশতিয়াক তোমার যদি মেয়ে হয় তবে সে হবে আমার মেঘের বৃষ্টি। আমি বলেছিলাম দেখা যাক কে আসে!
মেঘ মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনছে। ইশতিয়াক সাহেব বললেন, জানো আমার মেয়েটার যখন একটু একটু করে তার মায়ের গর্ভে বেড়ে উঠছিলো তখন আমার সবচেয়ে বড় হা*ম*লা*র অর্ডার আসে। তাই তাদেরকে রেখে এসেছিলাম তাদের গ্রামে তার ভাইয়ের কাছে। যখন চলে আসছিলাম শারমিন আমাকে বলে ছিলো তুমি কখন আসবে? আমার কেনো মনে হচ্ছে ইশতিয়াক তোমার সাথে আমার শেষে দেখা!
আমি বলেছিলাম তুমি ভুল ভাবছো একটা বিজনেস মিটিং আছে শেষ করেই তোমাকে নিয়ে যাবো। কিন্তু সেই হা*ম*লা ঘটাতে যেয়ে আমি আটকা পরি চার বছর আমাকে ঘুম করে রেখে আমার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তারপর আরো চৌদ্দ বছরের সাজা দেয়া হয়। আমার মৃ*ত্যু দন্ড হতো তবে আমার ব্যপারে পুরোপুরি সব প্রমাণ না পাওয়া শাস্তি কিছুটা কম হয়। আমার জীবন থেকে ততদিনে সব হারিয়ে গেছে আমি জানতেও পারিনি আমার ছোট একটা পরির মতো মেয়ে হয়েছে!তাকে ছুঁয়েও দেখতে পারিনি। অভাবের কারণে শারমিনের ভাবি শারমিনের উপর বিভিন্ন অ*ত্যা*চা*র করতো।আমার একটা ভুলে আমার জীবন থেকে সব হারিয়ে গেলো। তোমার বাবা, মাকেও বলতে পারিনি শারমিনকে কোথায় রেখেছি।
আমার দিনগুলো জেলখানার অন্ধকার কুঠুরিতে কাটছিলো, মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যেতো মনে হতো কেউ আমাকে বাবা বলে ডাকছে। জেলখানার সব নিয়ম ঠিক মতো করে পালন করায় আমার শাস্তি কমে যায়। নয় বছর জেলে থেকে বের হয়ে প্রথমেই ছুটে যাই শারমিনের কাছে, তবে আমি বেশ দেরী করে ফেলেছি, আমার শারমিন ততদিনে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। টুকরো টুকরো খবর থেকে জানতে পারি আমার মেয়েটার কথা। তবে মেয়ের সামনে দাঁড়ানোর সাহস আমার ছিলো না। তার উপর প্রতি নিয়ত তার মামির অত্যচার, সব দেখেও চুপ করে থাকতাম। কিন্তু আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারলাম না তাই তোমার বাবা, মাকে বেনামি চিঠি পাঠিয়ে আরহার বিষয়ে জানিয়ে দেই। তারা এসে আরহাকে নিয়ে যায় তোমার বউ করে। জানো সেদিন ভেবেছিলাম আজ থেকে আমার মেয়েটার সুখে থাকা শুরু।

#চলবে

#তুমি আসবে বলে

# নুসাইবা ইভানা

পর্ব-২৪

মধ্যে রাতে আরহার ঘুম ভেঙে গেলো ফেরারি লাইটের আধো আলোতে চারপাশে চোখ বুলিয়ে উঠে বসলো
নিজের মনের মধ্যে কতশত প্রশ্ন যার কোনটার উত্তর
তার জানা নেই। ক্ষুদ্র জীবনে কমতো সাফার করতে হলো না! মানুষ বয়সে বড় হয়না। বড় হয় পরিস্থিতি, আর বাস্তবতায়। আরহা ধীর পায়ে বারান্দার দোলনায় এসে বসলো উদাসী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাস্তার ল্যামপোস্টের দিকে।কোথায় যেনো আরহা নিজের প্রতি নিজেই বিরক্ত যেই মানুষটা তাকে এতো অবহেলা করলো, এতোটা অবিশ্বাস করলো কেনো বেহায়া মনটা তাকেই ভালোবাসবে! কেনো তার কাছেই যেতে চাইবে? শুন্যে দৃষ্টি রেখে ভাবছে আপনি আমার জন্য ছায়া হতে পারতেন! সমস্ত ঝড়ঝাপটায় আমাকে আগলে রাখতে পারতেন!আমার কঠিন সময় গুলোতে আমার মাথাটা আপনার বক্ষপিঞ্জরে রেখে বলতে পারতেন এতো কিসের ভয় তোমার!আমি তো আছি। আমার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলতে পারতেন তোমার জন্য আমি আর আমার ভালোবাসাই যথেষ্ট। কেনো বললেনা। আমি আপনাকে এতো সহজে জায়গা দেবো না আমার জীবনে।

মেঘ সব সময় ভাবতো তার দুটো বাবা,মা ছোট বেলায় তাদের ভালোবাসায় কোন কমতি ছিলো না আজ কেবল শুন্যতা হৃদয় জুড়ে হাহাকার।
ইশতিয়াক সাহেব বললেন, তবে কে জানতো আমার মেয়ের জীবনে সুখ শুধু মরিচীকা,আমি আড়াল থেকে সব সময় তোমাদের খেয়াল রাখতাম যেদিন ওই অগ্নিকাণ্ড ঘটে সেদিন আমি চেষ্টা করেও মোর্শেদ, আর মারিয়াকে বাঁচাতে পারিনি। আমি এটাও আশা করিনি তুমি আমার বাচ্চা মেয়েটার উপর এতো বড় আঘাত করবে। তুমি যখন গরম রড ওর হাতে চেপে রেখেছিল ওর আর্তচিৎকারে আমার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছিলো। ওকে যখন ওই অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রেখে চলে গেলে বিশ্বাস করো তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে আমি তাকে জী*বি*ত রাখতাম না। কিন্তু আরহা যেমন আমার মেয়ে তুমিও আমার ছেলে। একটা কথা মনে রেখো কিছু ক্ষত শরীরের চেয়ে হৃদয়ে ক্ষত করে বেশী। শরীরের ক্ষত সেরে গেলেও হৃদয়ের ক্ষত রয়ে যায়। শরীরে ক্ষত মলমে সেরে যায় কিন্তু হৃদয়ের ক্ষত ভালোবাসা ছাড়া অন্য কিছুতে সারে না। নিষ্টুরের মতো তুমি আমার মেয়েটাকে রেখে চলে গেলে। দুটি বাচ্চা মেয়ে কোথায় থাকবে, কি করবে তা চিন্তাও করলে না। এই সমাজটা, এই যুগে মানুষ খুব কম! সব মানুষের মুখোশে প*শু। ছিড়ে খেয়ে ফেলতো মেয়ে দু’টোকে ঠিক তখন একজন ওদের আশ্রয় দেয়। তোমার প্রতি আমার রাগ নেই তবে অভিমান আছে! তুমি একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে কিভাবে ওদেরকে একা ফেলে চলে গেলে? তোমার কি একবারো মনে হয়নি এই মেয়ে দুটোর আমি ছাড়া কেউ নেই! তোমার কি মনে হয় এতো সহজে তুমি আরহাকে পেয়ে যাবে? তুমি জানো সে এখন বাংলাদেশর টপ লেভেলের সঙ্গীত শিল্পী। যার নাম যশ খ্যাতি কোন কিছুর অভাব নেই।
মেঘ যেনো বাকহারা আজ যেনো সে শব্দ শুন্য এতো এতো অন্যায় সে করেছে অথচ তার অনূভুতিতে কখনো আসেনি সে কত বড় অপরাধী। সামনের মানুষটির চোখে চোখ রাখতে পারছে না। ইশতিয়াক সাহেব উঠে এসে মেঘের পিঠে হাত রেখে বলল, নিজের ভুল বুঝতে পেরে তা সুধরে নিতে ক’জন পারে! তুমি তো তোমার ভুলের জন্য অনুতপ্ত তাহলে নিজের দৃষ্টি কেনো লুকাচ্ছো। জিতে নাও নিজের ভালোবাসর মানুষটিকে রাঙিয়ে দাও নিজের রঙে, বুঝিয়ে দাও সে তোমার হৃদয়ের রানী। হয়ত সহজ হবে নয়ত কিছুটা কঠিন তবে যে কোন বিনিময়ে ভালোবাসা জিতে নাও। জীবনে টাকা পয়সা আসবে যাবে। তবে একবার যদি ভালোবাসার মানুষটা চলে যায় আর ফিরে পাওয়া যায়না। ভালোবাসার মানুষ কে ছাড়া সুখে তো থাকা যায় তবে শান্তি পাওয়া যায় না। সব কিছু থাকার সত্বেও কেমন একটা শূন্যতা ঘিরে থাকে সারাক্ষণ। যেন মনে হয় জীবন থেকে সব রঙ মুছে গেছে। জীবনে সুখে থাকার জন্য সবাই বলে টাকার প্রয়োজন। তবে আমি মনে করি তার চেয়েও দু’জন মানুষের মধ্যে ভালোবাসা থাকা বেশি প্রয়োজান। কুঁড়ে ঘরে থেকেও শান্তিতে থাকা যায় যদি ভালোবাসার মানুষটা পাশে থাকে। আবার কোটি টাকা থাকা সত্ত্বেও দুজন মানুষ এক ছাদের নিজে বসবাস করা সত্বেও কোন শান্তি থাকেনা। টাকা মানুষকে সাময়িক আনন্দ দিলেও চিরস্থায়ী সুখ দিতে পারে না। একটা কথা জানো নিজের অভিজ্ঞতা দেখে বলছি অনেক এমন বড়লোক দম্পতি দেখেছি যাদের নিজেদের মধ্যে শা*রী*রি*ক মিলন ছাড়া অন্য কোন সম্পর্ক নেই। সামাজিক কারনে হয়তো তারা এক ছাদের নিচে থাকে তবে দু’জনেই নিজেদের মতো বাঁচে। সেখানে কোন ভালোবাসা নেই, নেই একে অপরের উপর অভিমান, আর না আছে আবদার, আর না আছে একজনের অপর জনের প্রতি আসক্তি।

সময় থাকতে নিজের ভালোবাসা কে আগলে নাও সব ভুল বোঝাবোঝি মিটিয়ে নিয়ে ভালোবাসার মানুষটিকে আগলে রাখো। সে পাশে থাকলে কঠিন সময়টা অনায়াসে পার করতে পারবে। আর আমার বিশ্বাস তুমি পারবে।
– আমাকে পারতেই হবে আঙ্কেল, পারতেই হবে।

আরহা লাইট অন করে গিটার নিয়ে বসলো আগামীকাল কন্সার্টের জন্য গান রিহার্সালে করবে এখন কোনকিছু ভালো লাগছে না তাই গান গাওয়াটাই বেছে নিলো। গিটার হাতে টুংটাং শব্দ করে সুর তুলে গাইতে লাগলো……

Tu safa mera
hai tu hi meri manzil

tere bina guzara
Ae dil hai mushkil

junoon hai mera
Banoo main tere kabil

Tere bina guzara.
Ae dil hai mushkil

Yeh rooh bhi mari
Yeh jism bhi mera

Utna mera nahi
jitna hua tera

Tune diya hai jo
Woh dard hi sahi

Tujhse mila hai toh
lnaam hai mera

Mera aasmaan
dhoondheTeri zameen

Meri har kami ko hai
Tu laazmi

Zamee pe na sahi
Toh aasmaan mein aa mil

Tere bina guzara
Ae dil hai mushkil

এই রাতের বেলায় গিটারের শব্দ ঘুম ভেঙে যায় নীলুর আজ নীলু আর আরহা একাসাথেই ঘুমিয়ে ছিল। নীলু চুপিচুপি উঠে নিজের মোবাইল বের করে নীলুর গানের রেকর্ড করলো। আরহা গাইতে গাইতো চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। গান শেষ করে চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়িয়ে গিটার রেখে দিয়ে এসে শুয়ে পরে। আরহাকে উঠে আসতে দেখে নীলু ঘুমের অভিনয় করে শুয়ে পরে।

সকালের সোনালী রোদে চোখে পরতেই ঘুম ভেঙে যায় সমিরার। কাল রাতেও ঠিক মতো ঘুম হয়নি মনের মধ্যে কেমন অস্থিরতা কাজ করছে। মনে হচ্ছে মেঘকে সে হারিয়ে ফেলেছে। কাল থেকে মেঘের সাথে কোন রকম যোগাযোগ হয়নি। মেঘ কারো নাম্বার দিয়ে ইমতিহানকে কল করে শুধু বলেছিল, আজ রাতে আমি ফিরবো না। এই যে সামিরার ইচ্ছে করছিলো মেঘকে জিজ্ঞেস করতে কোথায় তুমি। কিন্তু পারলো না কারণ যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে অধিকার মূল্যহীন।

মেঘ ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে পোস্ট করলো….

তোমার মনের রাজ্যে এক ফালি সাদা মেঘ হয়ে তোমাকে সারাজীবন ছাঁয়া দিতে চাই।
কখন কখন রংধনু হয়ে তোমায় আমার রঙে রাঙিয়ে দিতে চাই।
(হৃদয়েশ্বরী)

আরহার ঘুম ভাঙলো বেশ বেলা করে। ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখলো নীলু মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। আরহা নীলুর পাশে বসে বলে,কি হয়েছে আপুই তোমার চেহারায় এমন মেঘ জমেছে কেনো?
– মেঘ জমলে তোর জীবনে জমবে। আমার জীবনে তো আমাবস্যা নেমে এসেছে।
– কি হয়েছে সেটা তো বলবা নাকি!
– নিজের ফোনটা বের করে বলে দেখ, তোর জিজু আমার পিকে ব্লাক হার্ট দিয়েছে।
– তাতে কি-হয়েছে?
– কি হয়েছে মানে! আমি ওর কে?
– ভালোবাসার মানুষ, হবু বউ
– তাহলে আমাকে কি হার্ট দিবে
আরহা বোকার মতো তাকিয়ে আছে। তোর বলতে হবে না আমি বলছি, রেড হার্ট।
– একটা দিলেই হলো এতে রিয়েক্ট করার কি আছে?
– তুই জানিস সয়তানের হৃদয় কালো থাকে। কালো হার্ট দিলে ওর সত্রুকে দিবে আমাকে কেনো!
– এর জন্য কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে দিয়েছো নিশ্চয়ই! এটাতো বুঝিয়ে বললেই হয়।আমি বলে দিচ্ছি যাতে তোমাকে সব সময় রেড হার্ট ইমোজি দেয়।

– শোন কাল রাতে তো ওরা আসলো না আজকেও আসতে মানা করে দিয়েছি তোর কনসার্ট আছে তাই।
কাল আসবে। ওর নাকি চাচ্চু আছে বাংলাদেশ তাদের নিয়ে আসবে।

নাস্তা করে আরহা একটু বাহিরে বের হওয়ার জন্য দরজা খুলতেই প্রচন্ড রকম অবাক হলো।

#চলবে

ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন
হ্যাপি রিডিং 🥰

#তুমি আসবে বলে

#নুসাইবা ইভানা

পর্ব- ২৫

আরহা দরজা খুলেই দেখতে পেলে দরজা থেকে মেইন গেট পর্যন্ত লাল,আর হলুদ গোলাপের পাপড়ি বেছানো
আর একটু একটু দূরত্বে বেলুন দিয়ে সরি লিখা। পায়ের কাছেই একটা কার্ড পরে আছে। হাত বাড়িয়ে কার্ড টা উঠিয়ে পড়তে লাগলো, বিবিজান আপনার অভিমান যদি পাহাড় সম হয়! তবে আমার ভালোবাসা সমুদ্র সম। আপনার সব অভিমান ধুয়ে মুছে নেবো আমার ভালোবাসার জোয়ারে। ভালোবাসি বউ পাখি। দূরে দাঁড়িয়ে আরহার দিকে তাকিয়ে ছিলো মেঘ আরহার এক্সপ্রেশন বোঝার জন্য। তবে আশা হত হলো মেঘ। আরহাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না সে রেগে আছে নাকি আনন্দিত হয়েছে। কোন রিয়াকশন ছাড়াই দরজা বন্ধ করে আবার সোফায় বসে পরলো।

কিছু একটা মনে পরতেই একটা সেফটিপিন নিয়ে বাহিরে আসলো, সেফটিপিন দিয়ে সব বেলুন গুলোকে আঘাত করতে ঠুস ঠাস শব্দে একের পর এক বেলুন ফাটাচ্ছে, বেলুনগুলোর মতো মেঘের মুখটাও চুপসে গেলো। কি ভেবে ছিলো আর কি হলো।
আরহা পিছন ফিরতেই নীলুকে দেখতে পেলো। দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। আর একটু সামনে এগোতেই আরহা শুনতে পেলো,এটা কি ঠিক হলো বিবিজান।
– কে আপনার বিবিজান?
– তুমি মিসেস মেঘ চৌধুরী জানোনা
– না জানিনা। আমি পিউর সিঙ্গেল
– আয়হায় এইটা কোন কথা নিজের জলজ্যান্ত স্বামী চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেও নিজেকে সিঙ্গেল দাবি করছো? নট ফেয়ার।
– আমার বাড়ির সামনে মাঝে মাঝে এমন দু’একজন পাগল দেখা যায়।
– এই তুমি আমাকে পাগল বললে!
– হুম বললাম তো!
-তাহলে পাগলামি করতে হয়
– একদম উল্টো পাল্টা কিছু করবেন না
– উল্টো পাল্টা মিন!
– মানে কেউ দেখে ফেললে আমার নাম খারাপ হবে।
-দেখুন মহারানী আপনার নামের সাথে আমার নাম যুক্ত তাই নিশ্চিত থাকুন দু’টোই হেফাজত থাকবে।
-আরহা সামনে পা বাড়াতেই মেঘ আরহার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে দু’হাত প্রসারিত করে বলে,একবার কি এখানটায় আপনার উপস্থিত দেয়া যায় না!
– আরহা নিশ্চুপ
– একবারের জন্য কি সুযোগ দেয়া যায় না। মানছি আমার অন্যায় ক্ষমার অযোগ্য তবুও যদি একটা সুযোগ দিতে তবে তোমাকে দ্বিতীয় বার অভিযোগ করার সুযোগ দিতাম না।
– কি শুরু করেছেন একবার আপনি, একবার তুমি, আগে ঠিক করুন কোনটা বলবেন। পরেরটা পরে ভেবে দেখা যাবে। বলেই পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।
মেঘ সে দিকে তাকিয়ে থেকে বলে অন্যায় যখন করেছিস তখন একটু খাটা খাটনি করেতই হবে। মনে হচ্ছে এমনে মেঘের বৃষ্টি নামাতে বেগ পেতে হবে। ব্যাপার না আমি দেখে ছাড়বো জানু তোমার মনে আমার প্রেমের মেঘ বৃষ্টি হয়ে কি ভাবে না ঝড়ে!

মেঘ চলে যাওয়ার আগে নীলুকে বললো, নীলু আমি অন্যায় করেছি সেটা মানছি, তবে তোমার কি মনে হয় আমি ওকে নতুন ভালোবাসি! চার বছর আগেই ওর প্রেমের বিজ আমার হৃদয়ে বপন করেছি!সেই বিজ থেকে চারা গজিয়ে একটু একটু করে বেড়ে উঠছে । আমিও ভালো থাকতে পারিনি। মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি। তোমরা নিজেদেরটা চিন্তা করলে একবারও আমার কথা ভেবে দেখেছিলে! নিজের চেখের সামনে নিজের বাবা, মাকে জ্বলে পুড়ে শেষ হতে দেখেছি। ওই সময় আমার মাথা ঠিক ছিলো না। বার বার মনে হচ্ছিল ওই মেয়েই আমাদের সাজানো সংসার তছনছ করে দিয়েছে। আমার জায়গায় তোমরা থাকলে কি করতে?

নীলু কিছু বলবে তার আগেই, মেঘ বলে কিছু বলতে হবে না। তবে মনে রেখো আরহা শুধু আমার। মেঘ চলে গেলো।
এতো ক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে সামিরা মেঘকে দেখছিলো একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে মেঘ চলে যেতেই মেয়ের চেহারাটা স্পষ্ট দেখতে পেলো। যদিও বিরিয়ানির বদলে খিচুড়ি দেখলো সামিরা। আর ভুল করে খিচুড়িকেই বিরিয়ানি ভেবে নিলো। সেখান থেকে সোজা চলে আসলো ইমতিহানের বাসায়।

ইমতিহান সবে মাত্র ঘুম থেকে উঠে নিজের জন্য এক কাপ কফি তৈরি করে আরাম করে সোফায় বসে প্রথম চুমক দিয়েছে ওমনি সমিরা এসে সেটা ইমতিহানের হাত থেকে নিয়ে টেবিলের উপর রেখে ইমতিহানের পাশে বসে বলে, আমার সংসার ভেঙে যাচ্ছে আর তুই আরাম করে কফি খাচ্ছিস
– ইমতিহান হাসতে হাসতে বলে কোন জন্মের সংসার! আর তুই বিয়ে করলি কবে?
– দেখ আজকে নিজের চোখে দেখলাম একটা মেয়ের সাথে মেঘ কথা বলছে।
– তোরা মেয়ে মানুষরা পারিসও বটে কথা বলতেই পারে।
– চুপ থাক হাদারাম শুধু কথা না ওই মেয়ের বাসার সামনে ফুল বেছানো। আর আমার মনে হয় এটা মেঘ করিয়েছে।
– এবার ইমতিহান বেশ জোড়েই হাসতে লাগলো। সামিরা এসে ইমতিহানের গলা চেপে ধরে বললো হাসি থামা বলছি, আমি কি জোক্স বলছি তুই এমন মেন্টালের মতো হাসছিস।

ইমতিহান হাসি থামিয়ে বললো, হতে পারে ওই বাসায় আগের দিন কোন অনুষ্ঠান ছিলো! আর মেয়েটা কোন ভাবে মেঘের পরিচিত তাই কথা বলেছে!এই তোদের সমস্যা কি বলবি,সন্দেহ করা কি তোদের রক্তে মিশে আছে!
– তোরা যে ভালো মানুষ তাই সন্দেহ করি। আর তাছাড়া যেখানে ভালোবাসা আছে সেখানে তাকে হারানোর ভয়ে একটু আধটু সন্দেহ থাকা স্বাভাবিক। তোদের মতো মাথা মোটা ছেলেরা বোঝেনা। তারা শুধু আমাদের সন্দেহ দেখে ভালোবাসা না।
– সারাদিন প্যারায় রেখেও তোদের স্বাদ মেটে না। তাও বলবি এটা করলা কেনো ওটা করলা কেনো ।
– ওলে বাবুরে আর তোমরা কি করো নিজেদের মেয়ে ফ্রেন্ড থাকলে ইট’স ওকে, আর গার্লফ্রেন্ডের ছেলে ফ্রেন্ড থাকলে তোর কয়জন লা*গে।
– হুদাই বাজে বকছিস, ছেলে মানুষের মন অনেক উদার থাকে এসব ছোট খাটো বিষয় নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না।
– তাই আচ্ছা আমার জায়গায় যদি তুই দেখতি তোর গার্লফ্রেন্ড কোন ছেলের খুব ক্লোজ হয়ে দাড়িয়ে কথা বলছে।
– থাপড়ে ওর দাঁত ফেলে দেবো। প্রয়োজন হলে দুরত্ব রেখে কথা বলবে!

সামিরা হাসতে হাসতে বলে এই হচ্ছে তোদের উদারতার নমুনা।
– মাজা নিচ্ছিস
– মোটেই না।আচ্ছা তুই কোন ভাবে মেঘকে বলে দেখনা আমার ব্যপারটা
– আমার মনে হয় তুই নিজেই একবার কথা বলে দেখতে পারিস!

এর মধ্যে মেঘ এসে পরলো,ইমতিহানের পাশে বসতে বসতে বললো কি দেখার কথা হচ্ছে?
ইমতিহান বলল, তোর বউ
– আগে আমি নিজে ভালো করে দেখি। জানিস না বউ না যেনো নাগা মরিচ।
ইমতিহান মেঘের কাঁধে হাত রেখে বলে আজকে তোর নাগা মরিচকে দেখতে চাই! সামিরাও ইমতিহানের সাথে তাল মেলাচ্ছে, উভয়ের ধারনার বাহিরে ছিলো মেঘের উত্তর।

আরহা বসে বসে চিন্তা করছে ছোট সাহেব জানলো কি ভাবে আমার স্বপ্নের কথা? আপুই বলেছে? ভাবতে ভাবতে নিজের ফোন নিয়ে শুয়ে পরলো। এতোক্ষণে অনেক গুলো নোটিফিকেশন এসেছে মোবাইলে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো মেঘের টেক্সট সব টেক্সট একি রকম, বউ কথা কও, ও বউ কথা কও। ডাকে পাখি খোল আঁখি বউ পাখি। আরহা বিরক্ত হয়ে। বলে আসছে ঢং দেখাতে। কোন রিপ্লাই দিলো না। মনে মনে ভাবছে সিমটা চেঞ্জ করতে হবে নয়তো জ্বালিয়ে মারবে। সেদিন তো ঠিকি বলেছিরো আপনি আমার বউ নাকি গার্লফ্রেন্ড যে আপনার সাথে মজা করবো! আরহা এফবিতে ডুকতেই চোখ কপালে উঠে গেলে। কারণ কয়েকদিনে আগে যে , আইডির নাম ছিলো মেঘ জমেছে মনের আকাশে, সে আইডির নাম চেঞ্জ করে দিয়েছে, মেঘের আরহা। নাম দেখে আর বুঝতে বাকি নেই এটাকে। আরহা একটা টেক্সট করলো, পুরানো পাগল ভাত পায় না, নতুন পাগলের আমদানি। টেক্সট সেন্ট করে। নিজের আইডির নাম চেঞ্জ করে দিলো, তোমার আসার দরকার নেই।

নীলু আরহার রুমে এসে বলে এসব আবার কি নাম দিয়েছিস! কেউ এসব নাম দেয়।তোর ফ্রেন্ডরা সবাই তোকে জেকে ধরবে।
– ধরলে ধরকু আমার আইডি আমার ইচ্ছে যা খুশি তা নাম দেবো। তাতে কার জামাইয়ের কি!
– তাই বলে এই নাম, তোমার আসার দরকার নেই সো ফানি।
– এতো সিরিয়াস বিষয়কে তুমি ফানি বলছো! এটা মোটেই ঠিক না। আসছে এখন ভালোবাসতে,তখন কই ছিলো।
– আচ্ছা শোন আমি বলছিলাম কি
– তোমার কিছু বলতে হবে বরং তুমি প্রান্তকে আমাদের বাসায় ডেকো জিজু যেদিন আসবে।
– প্রান্তকে কেনো ডাকবো!তোর জিজুর বন্ধু কি প্রান্ত!
– না ওই অস্যভ লোকটা জিজুর ফ্রেন্ড, আর কোন ছেলে খুঁজে পেলে না।
– কি বলছিস তুই আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না
– তোমার বুঝতে হবে না চলো তো দুপুর শেষ হয়ে এসেছে খাবার খাবো। আজতো কনসার্ট আছে খেয়ে দেয়ে রেস্ট নিয়ে রেডি হতে হবে তো!

#চলবে