তুমি আসবে বলে পর্ব-২০+২১+২২

0
260

#তুমি আসবে বলে
# নুসাইবা ইভানা

পর্ব- ২০

ভোরের সোনালী রোদ জানালার সাদা পর্দা ভেদ করে চোখে পরতেই পিটপিট করে চোখ খুলে আরহা। রাতে যদিও দেরি করে ঘুমিয়েছে তবুও আজ তৃপ্তির ঘুম হয়েছে। ফ্রেশ হয়ে এসে গুনগুন করতে করতে নিচে নেমে আসলো।
নীলু বুঝতে পারছেনা হঠাৎ কি এমন হলো!
যে চেহারায় হামেশাই বিষাদে ছেয়ে থাকতো। সে চেহারায়
আজ আলো ফুয়ারা। গালের নখের আঁচড়ের দাগগুলো অনেকটা চলে গেছে। নীলু আরহাকে ডেকে বললো, সত্যি করে বল তো তোর এ পরিবর্তনের পেছনের উদ্দেশ্য কি?
– আপুই বললাম তো আমি সব ভুলে নতুন করে শুরু করতে চাই!
– আয় বোস আমার পাশে আজ তোকে নিজের হাতে খাইয়ে দেবো।
– আজ তুমি বসো তোমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেবো কয়েকদিন পর শশুর বাড়ি চলে যাবে।
– পাকা বুড়ি তোকে বিয়ে না দিয়ে কোথাও যাচ্ছি না।
– আমার বিয়ে তো হবে পুরো শহর জানবে আজ আদিয়াত নুজহাত আরহা বিয়ে। আমি ভাবছিলাম কি আপুই আমার শনিবারের যে প্রোগ্রাম রয়েছে সেখানে এই মুখ ঢেকে যাবো না। প্রথম বারের মতো আমার সব ভক্তরা তাদের প্রিয় সঙ্গীত শিল্পীর চেহারা দেখবে। নিজেকে কার জন্য লুকিয়ে রাখবো বলো ! এবার সময় এসেছে নিজের মতো বেঁচে থাকার।
– আচ্ছা তুই যেটা ভালো মনে করিস সেটাই হবে। জানিস আমি ভাবতেই পারছিনা তুই সত্যি সব ভুলে নতুন ভাবে শুরু করছিস। চল আজকে সারাদিন ঘুরে বেরাবো।
– জিজুকে ভুলে যাচ্ছো সে কখন আসবে জিজ্ঞেস করো। বিয়ের ডেট ফাইনাল করি।

দুজনেই গল্প করতে করতে নাস্তা শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো।
আরহার রুমে এসে নুর কে কল করলো কালকের পার্টিতে বিশেষ কে কে এসেছে সেই তালিকা চাইলো। নুর বলল, তুই এক কাজ কর আমাদের বাসায় চলে আয় দুজন মিলে খুঁজে দেখছি। আমার ফ্রেন্ডের হৃদয়টা কে চুরি করলো।
– বাজে বকিস না আমার খুব পছন্দের ঝুমকো ছিলো ওইটা।।

– আচ্ছা আয় বাসায় আয়।

আরহা নীলুকে বলে বেরিয়ে পরলো নুরের বাসার উদ্দেশ্যে।

ইমতিহান সেই কখন উঠেছে কিন্তু মেঘের উঠার কোন খবর নেই। সমারিও দশটার দিকে এসেছে কিন্তু বারটো ছাড়িয়ে গেলোও মেঘের ঘুম ভাঙার কোন হদিস না পেয়ে। সামিরা ইমতিহানকে জিজ্ঞেস করলো, সত্যি করে বলতো রাতে তোরা কই ছিলি?
-রাতে একটা বার্থডে পার্টিতে ছিলাম সেখান থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত একটা বেজেছে।
– না মানে মনে হচ্ছে মেঘ কারো প্রতি ইন্টারেস্টেট
– তোরা মেয়েরা পারিসও বটে যা ইচ্ছে ভেবে নিস
– দেখ যা ভাবি তার ৯৮%সত্যি হয়
– হইছে বুঝেছি তোরা সব জান্তা শমশের।
– চুপ থাক আর তোরা কি ছুপা রুস্তম। প্রেম করছিস অথচ একবারো নিজের মুখে স্বীকার পর্যন্ত করিস নি!
– আরে নিজেই তো শিউর হতে পারিনি তবে এবার সরাসরি দেখা করাবো।
এর মধ্যেই ইমতিহানের ফোনে মেসেজ নোটিফিকেশন আসলো। সামিরা ইমতিহানের ফোনটা নিয়ে মেসেজ দেখে হাসতে লাগলো, জোড়ে পড়ে শোনাচ্ছে। সারাদিন বউ, বউ করে পাগল করে দাও অথচ বারোটা বাজতে চললো তবুও গুড মর্নিং উইশ করতে পারলেনা। যাও আজকে সারাদিনে নো টেক্সট নো কল। কিরে তুই তো অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেছিস বউ। হা হা এবার তোর বউয়ের অভিমান ভাঙা।
– মেয়েদের এই এক সমস্যা আরে গুড মর্নিং উইশ ইম্পরট্যান্ট নাকি ভালোবাসা। ভুল তো হতেই পারে?
– সব ভুল শুধু তোদের হয়। চিন্তা করে দেখ একটা মেয়ে তোকে কতটা ভালোবাসলে তোর একটা মাত্র গুড মর্নিং টেক্সট না পেয়ে রেগে যায়।
– এটাতো ভেবে দেখিনি
– মাথায় গোবর থাকলে ভাববি কি করে। তোরা তো একটা মেয়ে পটে যাওয়ার আগ পর্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে মাথায় তুলে রাখিস। তখন সেকেন্ডে সেকেন্ডে টেক্সট করতে পারিস। যদি একবার পটে যায় তো ব্যস এভারেস্ট জয় করে ফেলেছিস এবার তোদের টাইম কমতে থাকে টেক্সট ছোট হতে থাকে গুরুত্ব কমতে থাকে।
– এতোদিন যে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরালো। সে বেলায়!
– মেয়েটাতো তোকে বলেছিলো ইমতিহান আসো আমার পিছনে ঘুরে ঘুরে নিজের সময় নষ্ট করো!

পেছন থেকে মেঘ বলে উঠলো সকাল সকাল ঝগড়া শুরু করে দিয়েছিস!
– উঠেছে নবাব সিরাজুদ্দৌলা তা কি নেবেন কফি না ক্লোল ড্রিংকস
– আপাতত কড়া করে এক কাপ ব্লাক কফি হলে ই হবে।
– তা রাতে কি চুরি করায় ব্যস্ত ছিলেন!
– না বউয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। কথাটা বলেই বুঝে ফেললো ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে।

সামিরা বললো, বিয়ে করে নাও তাহলে বউ শুধু স্বপ্নে না বাস্তবেও থাকবে।

বাদ দে কি বলতে কি বলে ফেলেছি চল সবাই মিলে ঢাকা শহর ঘুরে আসি কি বলিস!
– যেখানেই যাও রাতে ডিনার আমাদের বাসয় করতে হবে।

ইমতিহান ফোনে কথা বলছে। কথা শেষ করে বললো, না রাতে হবু বউয়ের বাসায় ডিনার করবো। এটা মানা করতে পারবো না সামি।
– মানা করতে হবে না। আমি যাবো তোদের সাথে।
মেঘ বলল, আমি হয়তো যেতে পারবো না আমার একটু ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে।
– তোর আবার কি ইম্পরট্যান্ট কাজ! তবে গেলে কিন্তু তোরি লাভ হতো ভেবে দেখতে পারিস!

সামিরা বলল,তোর বউকে দেখে ওর কি লাভ?
– লাভ আছে না ওর ভবিষ্যৎ ভাবি কেমন সেটা জানতে হবে না!

মেঘের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে সত্যিটা বললাম না শতহোক ইচ্ছে করে কাউকে জ্বালাতে চাই না।

– তোরা কি এমন কথা বলছিস আমাকে শোনানো যাবে না।
ইমতিহান বললো বাদ দে তো এবার চল চাচ্চুর বাসায়।
লাঞ্চ সেখানে করবো আর নীলিমার কথাটাও বলবো। তাদের নিয়েএ বিয়ের ডেট ফিক্সড করে রাখবো, বাবা, মা আসলে বিয়ে।

আরহা নুরদের বাসায় এসে একে একে সব গেস্টদের খুঁজে বের করলো। না এখানে মেঘ নামে কোন অতিথি নেই। আরহা নুরকে বললো,মনে করে দেখ না আর কেউ বাদ পরলো নাকি যার কথা তোর মনে নেই।
– না সবার কথাই তো মনে আছে।
– তাহলে আমি আজ যাই পরে কথা হবে কেমন।
– আরহা বের হচ্ছে আর মেঘের গাড়ি প্রবেশ করছে গাড়ির লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে কারো চলে যাওয়া দেখছে মেঘ যদিও পেছন থেকে দেখা যাচ্ছে।
ইমতিহান মেঘকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে, সাথে বিদেশি থাকতেও তুই দেশীর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস।
সামি বললো ইদানীং তোদের কথা আমি বুঝতে পারিনা কি বলিস!
– তোর বুঝতে হবে না নেমে পর চলে এসেছি।

তিনজন বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো ওদের দেখে নুরের মনে পরলো কাল রাতে তো এরা দুজন ছিলো এদের তো ধরাই হয়নি। নূর হেসে বললো, কেমন আছো ভাইয়া?
– এইতো ভালো তুই কেমন আছিস?আম্মি কোথায়?
– আমি ভালো আছি। আম্মু কিচেনে। তোমরা বসো।
– তুইও বস এ হলো সামিরা, আর মেঘ আমার ফ্রেন্ড
নূর অল্প সময় বসে তাড়াতাড়ি এ পাশে এসে কল করলো আরহাকে। রিসিভ করতেই নূর বললো, শোন আমার কাজিন আর তার বন্ধু এসেছিলো।
– নাম বল
-ভাইয়ার নাম তো। আরহা আর বলতে না দিয়ে বললো তোর ভাইয়ের নাম বাদ দে তার ফ্রেন্ডের নাম বল!
– তার নাম তো মেঘ
– জোড়ে চিৎকার করে বলে কিহহহহহহহ।
– এতো জোড়ে চিৎকার করছিস কেনো।
– এখন তারা কোথায় সেটা বল।
– আমাদের বাসায়। কিন্তু কেনো।

– আমি আসছি তারপর দেখ কেনো। কল কেটে আরহা গাইতে লাগলো, লা,লা লালা,লা, লা লা।

মনে মনে বলছে আসছি ছোট সাহেব আমাকে যে ভাবে নাচিয়েছেন তার চেয়ে কয়েক গুন বেশি নাচাবো আপনাকে। ড্রাইভার গাড়ি ঘুরাও।

#চলবে

#তুমি আসবে বলে

# নুসাইবা ইভানা

পর্ব-২১

পেছন থেকে এক হাত দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে আরহাকে ধরে আছে মেঘ। আরহার পিট মেঘের বুকের সাথে লেপটে আছে।নিজের জালে কি নিজ ই আটকে গেলো আরহা!
মেঘের হাত আরহার কোমড়ে প্রথম কোন পুরুষের স্পর্শ আবার সেই পুরুষটি যদি হয় নিজের একান্ত প্রিয় মানুষ। আরহা দম আটকে আসছে মনে হচ্ছে এখনি মা*রা যাবে। একেমন অনূভুতি এ অনূভুতির সাথে আগে কখন পরিচয় হয়নি আরহার। এখন কি ভাবে পালাবে। মেঘ আরহার কানের কাছ থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে কাঁধে থুতনি রেখে বলে। তো বিবিজান এবার কি ভাবে পালাবেন আজতো আর রেহাই নেই।
মেঘের এতটুকু কাছে আসা যেনো আরহাকে বরফের মতো জমিয়ে দিয়েছে।নিশ্বাস নিচ্ছে বারবার মনে হচ্ছে কেউ শ্বাস আটকে দিচ্ছে। গাল দুটো লাল হয়ে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবছে এতো সহজে তো ধরা দেবো না ছোট সাহেব। কিছু একটা করতেই হবে। এর মধ্যে কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে মেঘ আরহাকে ছেড়ে দিলো সুযোগে আরহা পর্দার আড়ালে চলে গেলো। মেঘ মিটিমিটি হাসছে। মনে মনে ভাবছে বাচ্চামি গেলো না শুধু হাতে পায়ে বড় হয়েছে।
সামিরা এসে মেঘ কে বলে নিচে চল তুই একা এখানে কি করিস!
– তুই যা আমি আসছি
– না আমার সাথে যাবি আর এক্ষুনি যাবি হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো।

মেঘ অনিচ্ছা সত্ত্বেও গেলো।
মেঘ চলে যেতেই আরহা বের হয়ে আসলো। এর মধ্যে নুর এসে বলে এবার বল কাহিনিটা কি?
– সে অনেক কথা বলবো তোকে তবে এখন নয়। শুধু যেনে রাখ মেঘ চৌধুরী শুধু আরহার। এখন তোকে একটা কাজ করতে হবে। খুব নিপুন ভাবে করবি আমার ড্রেসটা পরে তুই নিচে ওদের সামনে যাবি।

-তুই করতে চাইছিসটা কি?
– কনফিউজড। নিচে এই ঝুমকোটা নিয়ে যাবি আর বলবি আমার এই ঝুমকোর আরেকটা হারিয়ে গেছে তোমরা কেউ দেখেছো!

নুর কে নিচে পাঠিয়ে নিজে সিড়ি কাছে দাঁড়িয়ে রইলো

নুর মেঘের পাশে বসলো আর চোখে একবার তাকালো মেঘ ড্রেস দেখে আরো ভালো ভাবে তাকালো এবার তাকিয়েই আছে এটা তো আরহা না মানুষের চেহারা কি এতো পাল্টে যায়। চার বছরে? কিছু একটা তো গোলমাল আছেই।

নুর ইমতিহানকে বললো,ভাইয়া এক কানের দুলটা দেখছো এর একটা কাল হারিয়ে গেছে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না তোমরা কেউ দেখেছো?

মেঘ তাকিয়ে আছে একবার ঝুমকোর দিকে একবার মেয়েটার দিকে। তার মানে আজ, কাল আমি এই মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছি! এটা হতেই পারেনা। মেঘের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করছে।
নূর বললো, ছোট সাহেব আপনি দেখেছেন?
– ছোট সাহেব ডাক যেনো মেঘকে আর একটু ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিলো। এবার বেশ গম্ভীর ভাবে মেঘ বলেই ফেললো, সেই তখন থেকে কি শুরু করেছেন? নাম কি আপনার?

ইমতিহান বললো, তুই এতো রিয়েক্ট করছিস কেনো! ওর নূরাইন তবে ছোট করে নূর ডাকে।

– তাহলে ওনাকে বলতে বল কে পাঠিয়েছে এখানে আর এসব কথা কে বলতে শিখিয়ে দিয়েছে!

– একদম রাগ দেখাবেন না তাহলে কামড়ে দেবো বলেই মুখে ভেঙচি দিয়ে চলে গেলো নূর।

মেঘ ভেবে পাচ্ছে না এটাই আরহা নাকি অন্য কেউ
মেঘকে নুরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইমতিহান বলে, ভাই কাহিনি কি বলতো! যে দিকে মেয়ে দেখিস তাকিয়ে থাকিস আবার বিয়ে করতেও চাইছিস না।
– বেখায়ালী ভাবে বলে ফেললো বউ থাকতে কিসের বিয়ে?
সামিরা বললো, বউ মানে?
– তোদের জন্য বলতে চাই একটা বলে ফেলি আরেকটা।

সামিরা বললো, তখন তুই চলে গেলি উপরে এমন ভাবে গেলি মনে হয় তোকে কেউ হাতছানি দিয়ে ডেকেছে।আসল কথাটা বল তো
– কি শুরু করলি তোরা, তখন ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম এমন ভাবে প্রশ্ন করছিস মনে হচ্ছে আমি ক্রি*মি*নাল

বিরক্ত লাগছে মেঘের তখন উপরে সেই ঝুমকটা দেখেই গিয়েছিলো। মেয়েটার মুখ ঠিক দেখে নিতে পারতে সামিরা না গেলে।

আচ্ছা ইমতিহান নূর কি তোর আপন কাজিন!
– তোর মাথাটা পুরো গেছে নুর আমার একমাত্র চাচ্চুর একমাত্র মেয়ে ছোট থেকে দেখছি।

এবার মেঘ নিশ্চিত হলো নূর আর আরহা এক না। তবুও মনের মধ্যে একটা কিন্তু রয়েই যায়।

নূর উপরে আসতেই আরাহা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। নুর আরহাকে বালিশ দিয়ে মে*রে বলে এবার বল কাহিনি কি?

– শোন ওই লোকটা আমার….
– তোর কি সেটা বল!
– ঝুমকটা চুরি করেছে
– তুই সত্যিটা বলবি নাকি আমি ওই ভাইয়াকে ডেকে আনবো!
– তোর ভবিষ্যৎ দুলাভাই
– কিহহহহহহহহহহহ।কবে? কখন? কেমনে কি?
– আরে রিলাক্স আমি তাকে দেখে হালকা করে বাঁশ খেলাম আরকি।
– তোর অনেক সিনিয়র হবে।এরচেয়ে প্রান্ত ভাই বেস্ট।
– তবে তুই প্রান্তকে রাখ আমাকে মেঘের সাথে উড়ে বেড়াতে দে!
– বইন সত্যি কইরা ক’তো তোর মাথা ঠিক আছে কিনা কি সব আবল তাবল বলছিস।
– আই এম ইন লাভ নুরী ভালোবাসার নেশায় আমার মাথাটা গেছে।
– মজা করছিস, তবে ছেলেটা কিন্তু হ্যান্ডসাম আছে।
– নজর দিব না ওইটা আমার সম্পত্তি। শোন তোর ভাইকে জিজ্ঞেস করে ওই ছেলের পুরো নাম বের করে দিতে পারবি?
– ওকে জান্স চেস্টা করে দেখবো।

– এবার যা খাবার নিয়ে আয় কখন থেকে না খাইয়ে বসিয়ে রেখেছিস
– আমি এখন নিচে যেতে পারবো না। তোমার বাঁশ আমাকে লাঠি হয়ে তেড়ে আসবে।
– তোর যেতে হবে না আমি যাচ্ছি।
– যা, যা তোকে পেলে খেয়েই ফেলবে

আরহা আশেপাশে কাউকে দেখ পেলো না। ধীর পায়ে নীচে আসলো। এ বাসা নিজের বাসার মতোই মিসেস মারিয়াদের মৃত্যুর পর এখানেই ছিলো দু’বছর তাই বলতে গেলে এটা নিজের বাসার মতোই। এক গ্লাস পানি পান করে আপেলে একটা কামড় বসিয়েছে সেই মূহুর্তে মনে হলো কেউ এদিকে আসছে আরহা ডানে বামে না তাকিয়ে সোজা বাসা থেকে বের হয়ে গেলো

মেঘ এদিকটায় আসছিলো কাউকে চলে যেতে দেখে মেঘও বের হয়ে গেলে আরহা। গাড়িতে বসে ড্রাইভার কে বললো দ্রুত ড্রাইভ করো।
মেঘও গাড়ি নিয়ে ফলো করছে। আরহা মনে মনে বলছে নিজেই জমকে ডেকে এনেছি।

হিয়া হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে তার এক পা, আর এক হাত কেউ কে*টে দিয়েছে। সাথে হুমকিও দিয়েছে সত্যি কথা বলার। দু’চোখ থেকে নিরব অশ্রু ঝরে পরছে, আজ ইমতিহানের বলা শেষ কথা গুলো মনে পরছে, ইমমিতান বলছিলো, আমি তোমাকে সত্যি ভালোবেসেছি,হয়তো তুমি অভিনয় করেছো! তুমি আমাকে ঠকিয়েছো। ভাবছো ভালো থাকতে পারবে! তবে একটা কথা মনে রেখো রিভেঞ্জ অফ নেচার বলে একটা কথা আছে জানো তো! তুমি চাইলেও প্রকৃতি তোমাকে ভালো থাকতে দেবে না। তবে তোমার চেয়ে বেটার কাউকে পাঠিয়ে আমার লাইফা গুছিয়ে দেবে। যে ঝড় তুলে তুমি আমার হৃদয় তছনছ করে দিয়েছো, সে হৃদয় পরম যত্নে কেউ জোড়া লাগিয়ে দেবে। ক্ষত চিহ্ন কিন্তু থাকবেই তাদের দীর্ঘ শ্বাস তোমাকে নিঃস্ব করে দেবে।
বা হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিয়ে বলে, আমি ম*রে কেনো গেলাম না এ যন্ত্রণার থেকে তো মৃ*ত্যু ভালোছিলো।হিয়ার মা এসে হিয়ার মাথায় হাত রাখলেন। নিজের মায়ের উপস্থিতি টের পেতেই জড়িয়ে ধরেলো এক হাতে। নিজের মেয়ের এমন করুণ অবস্থা দেখে তিনিও চোখের পানি সামলে রাখতে পারলেন না। সান্তনা দেয়ার ভাষা নেই। নিজেকেই ব্যর্থ মনে হচ্ছে। হয়তো আরো শাসন করলে আজ এ পরিনতি দেখতে হতো না।

আরহা একটা ফাঁকা জায়গার ড্রাইভার কে গাড়ি থামাতে বলে, কারণ আর পারা যাচ্ছে না সেই কখন থেকে পিছু নিয়েছে আরহা গাড়ি থেকে বের হয়ে আসতেই মেঘ আরহাকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা শুরু করে। আরহার ড্রাইভার সামনে এগিয়ে আসতেই মেঘ বলে, আমার জিনিস আমি নিয়ে যাচ্ছি একদম মাঝখানে আসার চেস্টা করবেন না।

আরহা ভয়ে কোন কথা বের করছে না। আরহাকে নিয়ে একটু সামনে যেতেই….

#চলবে

#তুমি আসবে বলে

#নুসাইবা ইভানা

পর্ব- ২২

মেঘ একটু সামনে পা’বাড়াতেই কু*কু*রে*র সাথে পা আটকে ধপাস করে নিচে পরে যায়। আরহা নিচে মেঘ উপরে, মেঘের এক হাত আরহার পিঠের নিচে আরেক হাত মাথায়। বেশ আরাম করে কু*কু*র*টি ঘুমাচ্ছিল তার সাধের ঘুম ভেঙে যাওয়ায় কুকুরটি ঘেউ, ঘেউ শুরু করে দিয়েছি। আরহার অবস্থাতো ভয়ে শেষ। এতোক্ষণে মুখের উপর থেকে ওড়নাটা সরে গেছে মেঘ এক দৃষ্টিতে আরহার দিকে তাকিয়ে আছে, সেই মুখ সেই চোখ, সেই চেহারা এতোবছরে জেনো আরো রূপবতী হয়েছে মেয়েটা। মেঘ আরহার কাছে থাকায় গালের অস্পষ্ট ক্ষত গুলো বোঝা যাচ্ছে। তবে এগুলো কিসের চিহ্ন!

আরহা চিৎকারে মেঘের হুঁশ ফেরে, সেই কখন থেকে বলে যাচ্ছে আমাকে ছাড়ুন আমি ব্যাথা পাচ্ছি আরহার কথা যেনো শুনতেই পাচ্ছে না কেউ! তাই এবার জোড়ে চিৎকার করে বললো ছাড়ুন আমাকে। মেঘ আরহাকে নিয়ে উঠে বসলো। আরহা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো, নিজের শরীর থেকে ধুলো ছাড়াতে ছাড়াতে বললো, আমার কোমড়টা মনে হয় ভেঙেই গেছে, আল্লাহ গো এখন আমাকে কে বিয়ে করবে! মেঘ বোকার মতো তাকিয়ে আছে,আরহা হুট করে কান্না থামিয়ে নিজেকে নিজে বললছে, কি করছিস আরহা এখন স্ট্রং হতে হবে, লাইক হায়াতের মতো, মুরাদকে এতো ভালোবাসার পরেও ভয় পায়না বরং সব সময় নাকানিচুবানি খাওয়ায়। আরহা মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে, আপনার সাহস হলো কি করে আমাকে টাচ্ করার!
– তুমি তো জানোই বরাবর আমার সাহস বেশি
– আপনার সাহস আপনি কু*কু*র*কে দেখান আমাকে দেখাতে আসবেন না।
– ওকে সাহস দেখানোর আগেই পালিয়ে গেলো।
এবার তোমাকে দেখাবো।
– আচ্ছা আপনি কে বলুন তো! বলা নেই কয়া নেই, হুট করেই একটা মেয়েকে কোলে তুলে নিলেন!
– বিবিজান আপনাকে কোলে নিতে আমার অনুমতি নিতে হবে!
– ওই কে আপনার বিবিজান?
– আপনি
– দিনের বেলা স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন, একটা সিঙ্গেল সুন্দরী মেয়ে দেখলেন আর ওমনি বউ বানিয়ে নিলেন!
– তুমি আর সুন্দরী! সেওড়া গাছের পেত্নী।
– আপনি কি হুম অসভ্য চরম অসভ্য।
– আরহা কি বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছো, তুমি তো যথেষ্ট বড় হয়েছো।
– আমার নাম নুজহাত।

এবার মেঘ আরহার একদম সামনাসামনি দাঁড়িয়ে পরলো,দুপুরের কড়া রোদ একটা বালুর মাঠে দাঁড়িয়ে আছে দুজনে আশেপাশে লোকজন নেই বলতে গেলে। মেঘ আরহার কোমড়ে একহাত রেখে নিজের কাছে টেনে আনলো, অন্য হাত আরহার গালে রাখলো, স্থির দৃষ্টিতে আরহার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, আমি জানি তুমি কে? তোমার এতো কাছে আসার পরেও যদি তোমার মুখ থেকে শুনতে হয় তুমি কে? তাহলে তোমাকে আমি। আর বললো না। আমাকে তোমার পরিচয় দিতে হবে না। তোমার হৃদয়ের এই বেসামল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া আমাকে বলে দিচ্ছে তুমি কে? তোমার দৃষ্টির অভিমান জানান দিচ্ছে তুমি কে? আরহা বাকরুদ্ধ এই মহূর্তে তার কি বলা উচিৎ! যেই মানুষটা অনায়াসে অবহেলায় ফেলে রেখে চলে গেছে তাকে নিজের দূর্বলতা দেখানো কি আদৌও যুক্তি যোগ্য? আরহা নিজের মনকে বুঝিয়ে এক ঝটাকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,

হ্যা, হ্যাঁ আমি আরহা,সেই আরহা যাকে নিজের পায়ে পিশে মে*রে ফেলেছেন।

সেই আরহা যে আপনার দেয়া ক্ষত এখনো বয়ে বেড়ায়।

আমি সেই আরহা যে বয়সের চেয়েও বেশি বাস্তবতা দেখেছে প্রতি নিয়ত বেঁচে থাকার লড়াই করেছে।

” তখন কোথায় ছিলেন? যখন রাস্তার কু*কুরের মতো দুটো মেয়েকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলেন কোথায় ছিলেন তখন?

একবার খোঁজ নিয়েছেন মেয়ে দু’টো কোথায় আছে কেমন আছে? কোন চিল,শকুন তাদের ছিড়ে খাচ্ছে নাকি!

তখন কোথায় ছিলেন?আজ নাম হয়েছে জস হয়েছে, আর চলে আসছেন অধিকার খাটাতে ।
যখন নিজের চোখের জল লুকানোর জন্য একটা প্রসস্থ হৃদয়ের প্রয়োজন ছিলো তখন একা ফেলে পালিয়েছেন।
আমাদের জীবনে “আপনার জায়গা নেই একদম নেই। কথা গুলো বলেই বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো আরহা।
মেঘ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরহার চলে যাওয়ার পানে। তার যে কোন ভাষা জানানেই আরহাকে আটকানোর, কোন অধিকার নেই এইটুকু বলার “শুনে যাও আমার কথা আমিও তো ভালো ছিলাম না। হৃদয়ের পিড়া নিয়ে বেঁচে ছিলাম।
একবার এই শূন্য হৃদয়ে পূর্ন করে দাও! কথা গুলো দলা পাকিয়ে গলায় আটকে গেলো। শব্দ হয়ে বেড় হয়ে আসতে পারলো না। আজ যেনো সব শব্দরা নির্বাসনে। কড়া রোদে হাঁটু মুড়ে বসে আছে মেঘ! আরহার প্রতিটি কথা হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। হাত,কা*ট*লে টকটকে লাল রক্ত ঝরে তা সবার চোখে পরে সবাই সেই ক্ষত সারাতে কতকিছু করে, তবে এইে যে, মেঘের হৃদয় থেকে তাজা র*ক্ত ঝরছে কই কেউ তো তা দেখছে না। এই যে হৃদযন্ত্রে অসম্ভব অসহনীয় ব্যথা হচ্ছে তা কেউ দেখছেনা।

আরহা রাস্তায় এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা সিএনজি নিয়ে চলে গেলো। মেঘকে এতোকিছু হয়তো বলার ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু এতো বছরের জমানো কথা গুলো আজ হয়তো বেরিয়ে এসে আরহাকে হালকা করলো! না হয় এতো কষ্টের ভার বহন করাতো সহজ কথা নয়! চোখের অশ্রু গুলো হয়তো আজ বাঁধ না মানার আন্দোলনে নেমেছে।

নীলু কখন থেকে অপেক্ষায় আছে আরহার। আজ ইমতিহান আসবে কাজের শেষ নেই তার উপর টেনশনে আছে কি ড্রেস পরবে!কি ভাবে সাজবে! নীলু নিজের ফোন বের করে আরহাকে কল করলো। রিং হচ্ছে তবে কেউ রিসিভ করছে না। নীলু এবার নূরকে কল করলো দু’বার রিংহতেই ওপাশ থেকে রিসিভ হলো, নীলু বললো, আরহা কোথায়?
– আরহা তো এখানেই ছিলো বললো খবার খাবে পরে নিচে গেলো আর কাউকে কিছু না বলেই চলে গেলো।
– তোদের বাসায় কেনো গিয়েছিলো সত্যি করে বল তো?
– সে তো অনেক কথা আপু
– যত কথাই হোক তুই বল!
– নুর সব কিছু বললো, নীলুকে।

ফ্লাশব্যাক….

আরহা তখন নীলুর বাসায় প্রবেশ করার আগে ভালো করে আশেপাশে দেখে নিলো মেঘ কর্নারে বসেছে!! আরহা সেই ঝুমকোটা বা পাশের কানে পরে নিলো তারপর কানের ঝুমকোটা দেখিয়ে সেখান দিয়ে হেঁটে আসলো।

মেঘ ঝুমকটা দেখতে পেল তবে মেয়েটা চেহারা ঠিক দেখা যাচ্ছে না শুধু এক পাশ।
আরহার জানা ছিলো মেঘের কাছেই ঝুমকটা রয়েছে আর কৌতূহল হয়ে মেঘ ঠিক উপরে আসবেই।

আরহার ধারনাই ঠিক হলো মেঘ বাহানা করে উপরে চলে আসলো মেঘ আরহার পিছন পিছন ভেতরে আসলো কয়েকবার অবশ্য মূদু স্বরে ডেকে বলেছে তুমি আরহা তাই তো! তবে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি

মেঘ বারকয়েক ডাকার পর সাড়া না-পেয়ে আরহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। প্রথমে হালকা করে ধরলেও তার হৃদয় যখন জানান দিলো এটা আরহা তখন আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে।

বর্তমানে……

আরহা বাসায় ফিরে আসলো নীলু আরহাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বলে তুই কেনো তার কাছে গেলি! তোকে আবার কষ্ট দেয়নি তো? বোন আমার বল তোকে কিছু করেনি তো, কোথায় আঘাত করেছে বল বনু চুপ করে থাকিস না। নীলুর চোখে পানি। আরহাকে দেখেই বোঝা যায় সে কতটা বিধ্বস্ত। এবার আরহা নীলুকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দিয়ে বলে, আপুই আমি তাকে কষ্ট দিয়েছি, যার জন্য এতো অপেক্ষা করেছিলাম। যাকে এতো ভালোবাসলাম তাকেই কষ্ট দিয়েছি। সে তো আবার চলে যাবে আর ফিরবে না।
আমাকে আর বিবিজান বলে ডাকবে না।
নীলু বুঝতে পারছেনা কি বলছে আরহা এতো কিছু কখন হয়ে গেলো। আরহা আবার বললো, জানো সে বলে, তোমার এতো কাছে এসেও যদি তোমার মুখ থেকে শুনতে হয়! তুমি কে তবে তোমায় আমি। আর বললোনা সে, আমায় সে ভালোবাসে সেটাই কি বলতে চাইলো আপুই! কি চায় সে বলো?আমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে মনে হচ্ছে একছুটে তাকে জড়িয়ে ধরে বলি আমাকে আপনার বক্ষ পিঞ্জিরায় একটু জায়গা দেবেন? মনটা এতো বেহায়া কেনো আপুই! বলো না কেনো তার কাছেই সুখ খুজতে চায়! যে দুঃখের অতলে ভাসিয়ে দিয়ে গেছে।
আরহার আকুতি ভরা কথা গুলো কাটার মতো বিঁধছে নীলুর হৃদয়ে। বনু তুই তো এতো দূর্বল না তুই এতো ভেঙে পরলে চলবে না। নিজেকে আরো শক্ত করতে হবে মনকে বশে আনতে হবে, নিজের সাথে নিজেকে লড়াই করতে হবে।সেদিনের আরহাকে আমি দেখতে চাইনা। আমি আজকের আরহাকে দেখতে চাই যে এতো সহজে ভেঙে পরে না। নিজেকে দূর্বল ভাবে না।

আরহা চোখের পানি মুছে নিলো আর কাঁদবো না।
– এই তো লক্ষী মেয়ে, যা পাঁচ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় খুব খিদে পেয়েছে দু’বোন একসাথে খাবো।

আরহা চলে আসলো নিজের রুমে উপর থেকে যতই নিজেকে স্ট্রং দেখাক ভেতরে ভেতরে আসলে ভিষণ কষ্ট পাচ্ছে। মনের মধ্যে রয়েছে হাজারো প্রশ্ন। হঠাৎ কি এমন হলো? যে মানুষটা আমাকে সহ্য করতে পারতো না সে এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছে!

#চলবে

ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন
হ্যাপি রিডিং 🥰