তুমি আসবে বলে পর্ব-৯+১০+১১

0
292

#তুমি আসবে বলে

#নুসাইবা ইভানা

পর্ব- ৯

আরহা রুমে এসে আয়নার সামনো দাঁড়িয়ে মেঘের মতো করে বলে,চোখ কি কপালে নিয়ে হাঁটো? চোখে দেখতে পাও না। হাত নাড়িয়ে অভিনয় করার সময় আয়নাতে খেয়াল করলো তার এক হাতে চুড়ি নেই। হাসি খুশি মুখটা মূহুর্তে চুপসে গেলো। আরহা বেডের উপর, আশেপাশে, ওয়াশরুমে, বারান্দায় সব জায়গায় খুঁজল। না পেয়ে হতাশ হয়ে বেডের পাশে বসে পড়লো কোথায় রেখেছে? এমন সময় নীলু এসে বললো তুমি এখনো গোসল করো নি? তাড়াতাড়ি যাও আরহা মুখ ভার করে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

মেঘ ফ্রেশ হয়ে এসে বেডে বসে পরলো, টেনশনে আছে, বুঝতে পারছেনা তার এখন কি করা উচিৎ? বাব, মায়ের কথা মতো থেকে যাওয়া নাকি চলে যাওয়া! এসব ভাবনার মাঝেই হঠাৎ চোখ গেলো সাইড টেবিলে গ্লাসের নিচে কার্ডটির দিকে হাত বাড়িয়ে সেটি নিলো কার্ডটি খুলে ছোট খাটো একটা ধাক্কা খেলো।গোটা গোটা অক্ষরে লেখা। ছোট সাহেব আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আসলে আমার ইঁদুরের দাঁত তো তাই কামড়ে দিয়েছি। আর কখনো হবে না। ক্ষমা করে দিন। কার্ডটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো মেঘ। মনে মনে ভাবছে আমাকে বশ করতে চাও এতোটুকু মেয়ে মাথায় কত বুদ্ধি। কার্ডটি ছুরে ফেলে দিলো।

হিয়া কোনমতে বাসা থেকে পালিয়ে মেঘের বাসায় চলে এসছে। তখন বিকেল প্রায় শেষ। আরহা আর মোর্শেদ আফরোজ গেছেন শপিংয়ে। মেঘ নিজের রুমে। মিসেস মারিয়া সোফায় বসে কফি খাচ্ছেন এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো নীলুর মা যেয়ে দরজা খুলতেই দেখতে পেলেন শাড়ি পরা একটি সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীলুর মা জিজ্ঞেস করলেন কাকে চাই?
-মেঘের বাসা না এটা
– জ্বি
– আমি মেঘের বন্ধুর ওয়াইফ
নীলুর মা সরে দাঁড়ালেন। হিয়া ভিতরে চলে আসলো
মিসেস মারিয়াকে সালাম করলো। মিসেস মারিয়া সালামের জবাব দিয়ে বললেন, “কে তুমি মা?
– আমি হিয়া ইমতিহানের ওয়াইফ
মিসেস মারিয়া হিয়ার কথা শুনে অবাক হলেন কি বলে এই মেয়ে, ইমতিহান তো বিয়ে করেনি। তুমি যা বলছো ভেবে বলছো তো?
– কেনো আন্টি বিশ্বাস হচ্ছে না।
মেঘ নিচে আসছিলো কফির জন্য। হিয়াকে দেখে বলে আপনি এখানেও চলে এসেছেন?
– শুনুন কিছু বলার আগে আমার কথাটা শুনুন আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি। কিছুদিন এখানে থাকবো। এর মধ্যে ইমতিহান এসে আমাকে বিয়ে করে নিয়ে যাবে। প্লিজ আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না।
– মেঘ বললো,ঠিক আছে থাকবেন। তাহলে তখন কাজী অফিসে যাওয়ার কথা কেনো বলেছিলেন?
– ভেবেছিলাম ভিডিও কলে বিয়েটা সেরে ফেলবো।
মেঘ আর কিছু না বলে, চলে গেলো। এমনিতেই আরহা নামক অশান্তি কমছিলো এখন আবার হিয়া নামক অশান্তি এসে জুটেছে।

মিসেস মারিয়া হিয়াকে গেস্ট রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। যদিও হিয়া মেয়েটাকে তার মোটেও পছন্দ হয়নি।

রাতে সবাই এক সাথে খেতে বসলো,মিসেস মারিয়া আরহাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন। বিষয়টা হিয়ার মোটেও পছন্দ হলো না খবার শেষ করেই মেঘ নিজের রুমে চলে গেলো। মিসেস মারিয়া সবার সাথে হিয়ার পরিচয় করিয়ে দিলেন। আরহাকে নিজের মেয়ে হিসেবে পরিচয় দিলেন।
হিয়া তাচ্ছিল্য হাসলো মনে মনে।

মিসেস মারিয়া আজ আরহার সাথে ঘুমোবে বলে ঠিক করলো।

আরহা রুমে এসে শুয়ে পরলো। যাক বাঁচা গেছে ছোট সাহেব কাউকে কিছু বলেনি।কিন্তু মনে মনে চিন্তা করছে এই বাসায় সবাই আছে তাহলে আমার বরটা কোথায়? তাকে তো দেখাই হলো না। মনে মনে ঠিক করলো কাল নীলুকে জিজ্ঞেস করবে। নিজের মায়ের ছবিটা বালিশের নিচ থেকে বের করে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

মিসেস মারিয়া এসে দেখেন আরহা ঘুমিয়ে আছে। আরহার শরীরে চাদর টেনে দেয়ার সময় আরহার হাতে ছবিটি খেয়াল করলেন। ছবিটি নিজের হাতে নিয়ে কিছু সময় বিষাদময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ভাবলেন জীবনের মোড় কখন কোন দিকে যায় কে বলতে পারো। গোছানো জীবনটাও হুট করে এক ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যেতে পারে! মিসেস মারিয়ার কি হলো জানা নেই হুট করে তার মনে হলো হয়তো নতুন কোন ঝড় আসবে তাদের জীবনে। আরহার রুমের দরজা বন্ধ করে চলে গেলেন মেঘের রুমে। ততক্ষণে মেঘ গভীর ঘুমে। ড্রিম লাইটের হালকা আলোতো মেঘের চেহারা স্পষ্ট। মেঘের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, তুমি যদি জানতে আরহা কে?তবে অবহেলা নয় মাথায় করে রাখতে। মিসেস মারিয়া নিজের রুমে চলে আসলেন পুরোনো ডায়েরি বের করে কিছুক্ষণ পুরোনো স্মৃতি মনে করলেন। কলম দিয়ে অনেক দিন পর ডায়েরিতে কিছু লিখলেন। ডায়েরি রেখে ঘুমিয়ে পরলেন মোর্শেদ আফরোজের পাশে। হঠাৎ করে কেমন ভয় করছে মিসেস মারিয়ার সব হারিয়ে ফেলার ভয়। যে ঝড় তেরো বছর আগে সব কিছু তছনছ করে দিয়েছিলো ঠিক সেরকম ঝড়ের আগমনের আভাস পাচ্ছেন।

সকালে আরহাকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হল ক্লাস এইটে। বছরের মাঝখান আবার ক্লাস ড্রপ দুটোর জন্য এখন আরহার পড়া লিখার পেশার একটু বেশী। আরহার জন্য তিন, চারটে প্রাইভেট টিউটর ঠিক করে দিলেন।

এভাবেই খুব ভালো চলছিলো আরহার জীবন। প্রায় এক সপ্তাহ পর হঠাৎ মেঘ আরহার রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল করলো।আরহার টিচার আরহার দিকে কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘ দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করেই স্যারের কলার চেপে ধরে বলে তোর সাহস হলো কি করে ওর দিকে বাজে নজরে তাকানোর? কলার ধরে টেনে নিচে নিয়ে আসলো ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলো বাসা থেকে। পকেট থেকে কিছু টাকা ছুড়ে মেরে বলে, তোদের মতো কিছু মানুষের জন্যই আজকাল কেউ টিচারদের বিশ্বাস করতে পারেনা।
ততক্ষণে বাড়ির সবাই ড্রয়িং রুমে উপস্থিত হয়েছে।মেঘ মিসেস মারিয়াকে বললেন আমি যে ক’দিন আছি ওকে আমি পড়াবো।

হিয়া ভ্রুকুচঁকে তাকিয়ে রইলো মেঘের চলে যাওয়ার দিকে। সেদিনের পর থেকে মেঘ একবারের জন্য কথা বলেনি হিয়ার সাথে। হিয়া বলতে চাইলেও এড়িয়ে গেছে।
বিষয়টি হিয়ার ইগোতে হার্ট করেছে। মনে মনে ভাবছে যে ছেলে নিজের বোনকে নিয়ে এতো পসেসিভ সে নিজের ওয়াইফের জন্য তো আরো পসেসিভ হবে।

নীলু মনে মনে বেজায় খুশি। তার অবশ্য কারন আছে সেদিন যখন আরহা জানতে চেয়েছিলো তার বর দেখতে কেমন? এখন সে কোথায়? তখন নীলু বলেছিলো সে রুপকথার দেশে তোর জন্য যাদুর কাটি আনতে গেছে, আর দেখতে একেবারে রাজকুমার। এতোদিনে নীলুর সাথে আরহার ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

আরহা নিজের রুমে বসে ভাবছে এই লোক এতো রাগী। সেদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে শাওন তার হাত ধরেছিলো বলে কি রাগটাই না দেখালো।
আমি তো কিছুতেই ছোট সাহেবের কাছে পড়বো না।

এমন এসব নীলু পিছন থেকে এসে বলে, ভালোই হলো বল এখন থেকে রোজ দু’চারটা বেতের বারি পরবে তোর পিঠে

খুব খুশি তুমি তাই না!
– হুম অনেকককককক
– শুনো প্রত্যেকটা আঘাতের হিসেব রেখে দেবো পরে আমার বর আসলে প্রতিশোধ নেবো।
নীলু জোড়ে হেসে হেসে বলে হ্যঁরে তুই বরের চেহারা না দেখে বিয়ে করে নিলি! এবার তোর বর যদি তোর নাকের ডগায় ঘুরে বেরায় তাও তো চিনতে পারবি না।
-আরহা রাগ দেখিয়ে বললো,কে বললো চিনতে পারবো না। মা বলেছিলো নিজের মানুষের গা থেকে আপন আপন গন্ধ পাওয়া যায়। ঠিক সেই গন্ধ শুকে চিনে নেবো।
– ওরে পাকা বুড়ি। তোর বার্থডে কবে? না মানে ১৩ থেকে ১৪ কবে হবে?
– এই শুনো কাউকে বলবেনা, আমার বার্থডে তো এই মাসের একুশ তারিখে।
– সতি বলছিস!
– আরে মিথ্যে বলবো কেনো?
– এদিকে আয় তো আরহা!
– আরহা কাছে আসতেই নীলু আরহারকে বলে তুই তো বড় হয়ে যাচ্ছিস
– আমি কি সব সময় ছোট থাকবো নাকি?
এরমধ্যেই মেঘ আরহার রুমে আসলো। মেঘকে দেখে নীলু আস্তে করে বের হয়ে গেলো। মেঘ আরহার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, পরিক্ষায় ফেল করে আমাদের বাড়ির নাম ডুবানোর প্লানিং করছো?

আরহা কি বলবে বুঝতে পারছেনা এই লোককে দেখলেই তার কথা ফুরিয়ে যায়।

#চলবে

#তুমি আসবে বলে

#নুসাইবা ইভানা

পর্ব -১০

সেদিনের পর থেকে আরহাকে পড়ানোর দায়িত্ব মেঘের, মেঘের মনে আরহাকে নিয়ে যে অভিমানের মেঘ জমেছিল তাও কেটে যাচ্ছে আস্তে আস্তে সব কিছু ঠিক চলছে সন্ধ্যে বেলা মেঘ আরহার রুমে আসলো আরহাকে পড়াতে মেঘকে দেখলেই আরহার ভিষণ ভয় হয়। এই তো সেদিন একটু ভুল হয়েছিলো ম্যথে তাই বলে এক ঘন্টা বাগান পরিস্কার করিয়েছে কি বজ্জাত। মেঘ আরহাকে অন্যমনষ্ক দেখে বলে, এসব ভাবনা আমার চলো যাওয়ার পর ভেবে নিও। এখন পড়তে বসো। যা পড়া দিয়েছিলাম কম্পিলিট করেছো?
-জ্বি
– ফাইনাল এক্সামের আর কতদিন বাকি আছে?
– দু’মাস নয়দিন
-বোর্ড এক্সাম যেভাবেই হোক রেজাল্ট ভালো হতেই হবে।
এর মধ্যে নীলু চলে আসলো নীলুও মেঘের কাছে পড়ে আরহার সাথে।
পড়া শেষ হতেই নীলু চলে গেলো।
আরহা একি ভাবে বসে আছে একটুও নড়ছে না নিজের দু’হাত পেটে রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছে। অপেক্ষায় আছে কখন মেঘ এ রুম থেকে বের হবে।
মেঘ আরহার দিকে খেয়াল করলো চেহারায় কেমন খিঁচে রেখেছে চোখ টলমল করছে, মনে হচ্ছে এখুনি বৃষ্টি নামবে। মেঘ খানিক সময় আরহার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। উঠে চলে যাবে এমন সময় আরহাকে বললো,আমাকে এক গ্লাস পানি দাওতো!
আরহার যেনো শুনতেই পেলো না মেঘ কি বলেছে। একি ভাবে বসে আছে। মেঘ আবার বললো, বললাম তো পানি খাবো নিয়ে এসো।
আরহা মনে মনে খুব রাগ হচ্ছে এমনিতেই এই অসহ্য যন্ত্রণা তারপর এই লোকের বিরক্ত কর কথা।
মেঘ রেগে বললো, এই উঠো তুমি, উঠে দাঁড়াও। আর না হয় বলো কি সমস্যা তোমার?
– নিচু স্বরে বললো, আপনাকে বলা যাবেনা৷ আপনি চলে যান।
– কি এমন কথা আমাকে বলা যাবে না বলতেই হবে বলো।
আরহা এবার কেঁদেই দিলো, কেনো জোড় করছেন বললাম তো বলা যাবেনা।
– আমাকে বলো কেউ তোমাকে কিছু বলেছে, স্কুলে কারো সাথে ঝগড়া হয়েছে?
আরহা তো নিজেই বুঝতে পারছে না তার কি হয়েছে! সেদিন নীলু বলেছিলো তেরো থেকে পনেরো বছর বয়সের মধ্যে মেয়েদের প্রতি মাসে কিছু হয়। আর সেটাকে পিরিয়ড বলে। তখন পেটে যন্ত্রণাও হয়। আরহা বুঝতে পারছে না সেটাই হলো নাকি অন্য কিছু?
আরহাকে চুপ থাকতে দেখে মেঘ উঠে এসে আরহাকে এক টানে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে, বললাম তো বলো কে তোমাকে কি বলেছে!
আরহার উত্তর দেয়ার পূর্বেই মেঘের চোখ গেলো চেয়ারে লেগে থাকা রক্তের দিকে, মেঘ আরহাকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলে, এটা কি তোমার প্রথম বার, মানে এর আগে এরকম হয়েছে তোমার!
আরহা মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। মেঘ নিজের ফোন বের করে একটা ভিডিও প্লে করে আরহার হাতে দিয়ে বল, তুমি এই ভিডিও দেখতে থাকো আমি আসছি। আর হ্যঁ আমি না অব্দি এখানেই বসে থাকবে একটুও নড়বে না। আমি যাবো আর আসবো।
ভিডিও দেখে আরহা বুঝতে পারলো তার কি হয়েছে, এখন ভিষণ লজ্জা পাচ্ছে ছি ছোট সাহেবের সামনে এসব হতে হলো!
এর মধ্যে মেঘ প্রয়োজনীয় জিনিসটা নিয়ে এসেছে। মেঘে আরহার হাতে প্যকেটটা ধরিয়ে দিয়ে বলে যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। আর কিছু খেয়ে এই ঔষধটা খেয়ে নিও তাহলে কষ্ট কম হবে। আর শুনো চেয়ার টা পানি দিয়ে পরিস্কার করে রেখো।
মেঘ চলে যেতেই আরহা ছুটে যায় ওয়াশরুমের দিকে।

রুমে এসে মেঘ ভাবছে একটা বাচ্চাকে পেলেপুষে বড় করে বউ হওয়ার উপযোগী করে তুলতে হবে। তবে বাচ্চাটা কিউট আছে। “আই লাইক ইট।

এভাবেই ছোট ছোট কেয়ার আর শাসনে চলছিলো আরহা আর মেঘের জীবন। ইদানীং তো বলতে গেলে মেঘ আরহাকে চোখে হারায়। আরহার প্রতি তার এতো কেয়ার দেখে। মিসের মারিয়া আর মোর্শেদ আফরোজ ভিষণ খুশি।
তবে সত্যিটা জানার পর থেকে হিয়া মেনে নিতে পারছে না। হিয়া সহ্য করতেই পারছেনা আরহাকে।
যদিও আরহা মেঘের ওয়াইফ এই কথাটা মেঘ নিজেই বলছে হিয়াকে। তবে এটাও বলেছে এই কথা আরহা এখনো জানেনা তার হ্যাসবেন্ড কে?

আরহার প্রতি সকলের ভালোবাসা সকলের কেয়ার দেখে হিংসে হয় হিয়ার। সে যে মেঘের পরিবার আর মেঘকে নিজের করে নিতে চাইছে! ইদানীং ইমতিহানকে ইগনোর করছে কথায় কথায় ঝগড়া হচ্ছে।

একদিন দুপুরে সবাই যখন খাবার খাচ্ছিলো ঠিক সেই মূহুর্তে মিসেস মারিয়া বলেন, মেঘ চলো আমরা সবাই কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসি!
মেঘ বললো যাওযায়। আর তাছাড়া সামনের সপ্তাহে আমার ফ্লাইট আমাকেও চলে যেতে হবে। তবে এবার গেলে সব ব্যবস্থা করে একে বারে ফিরে আসবো।

ঠিক আছে তবে আজ বিকেলেই রওনা হবো। তোমরা সবাই নিজেদের প্যকিং করে নিও।

আরহা তো ভিষন খুশি জীবনে প্রথম কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে। যদিও মাঝে মাঝে নিজের বরের কথা ভেবে মন খারপ হয়। তবে এটা ভেবে নিজেকে শান্তনা দেয় তার বর অনেক শিক্ষিত হয়ে ফিরে আসবে।ভালো কিছুর জন্য অপেক্ষা তো করতেই হবে! যদিও এসব কথা আরহাকে মিসেস মারিয়া বলেছে।
আরহা প্যকিং করছে এমন সময় মেঘ আরহার রুমে আসে।
মেঘ কে দেখে আরহা বলে কিছু বলবেন ছোট সাহেব!
– না তবে আগামীকাল তোমার জন্য সারপ্রাইজ রয়েছে।
– কি সারপ্রাইজ বলুন না।
– আগামীকাল নিজের চোখেই দেখে নিও।
আরহার রাগ হলো পুরো কথা না বলেই চলে গেলো বজ্জাত লোক!

মেঘ দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আরহার কথা শুনে মুখ টিপে হাসলো। আর মনে মনে বলছে কাল তুমি তোমার বরকে দেখতে পাবে। আমি তিন বছরের জন্য চলে যাচ্ছি তাই তোমাকে সত্যিটা বলে যেতে চাই। তৈরী থেকো বোকা বউ।

হিয়া নিজের রুমে বসে ভাবছে আমি এটা হতে দিতে পারি না কিছুতেই না যে ভাবেই হোক এদের আলাদা করতেই হবে। হিয়া কিচেনে আসলো কেউ তখন আশে পাশে নেই সবাই প্যকিং করতে ব্যস্ত।হিয়া গ্যসের পাইপটা লিক করে দিয়ে চলে আসলো। যদিও তার উদ্দেশ্য ছিলো শুধু আরহাকে কষ্ট দেয়ার কিন্তু ঘটলো ভিন্ন ঘটনা।

আরহা প্যকিং শেষ করে নিচে আসলো পানি নিতে রুমের জগে পানি ফুরিয়ে গেছে তাই। আরহা পানি নিয়ে কিচেন থেকে বের হচ্ছে তখন মেঘে নিচে নামছে মেঘ আরহার দিকে একবার ফিরে তাকালো। আরহা উপরে উঠছে এমন সময় মেঘ বলে একটু রেডি হয়ে নিচে আসো তোমাকে নিয়ে শপিংয়ে যাবো। চিন্তা করো না সাথে নীলুও যাবে তোমরা আসো আমি ওয়েট করছি।

আরহা আর নীলু বের হয়ার সময় হিয়াও তাদের সাথে যুক্ত হলো। নীলু হিয়াকে দু’চোখে সহ্য করতে পারে না।
মেঘ গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো আরহাকে দেখেই গাড়ির সামনের দরজা খুলে দিলো। এটা ছিলো আরহার প্রতি মেঘের প্রথম ভালোবাসা প্রকাশ মেঘ চাইছিলো আরহা সামনে এসে বসুক ঠিক সে সময় হিয়া সামনে বসতে নিলে মেঘ আস্তে করে হিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে এখানে আরহা বসবে। হিয়া চুপচাপ পিছনে যেয়ে বসে, নীলুও যাওয়ার আগে আরহার কানে মুখে বলে যায তুই সামনে বস। না হলে মনে হবে ছোট সাহেব আমাদের ড্রাইভার। আরহাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো পিছনের সিটে।
আরহা মুখ ফুলিয়ে বসে পরলো মেঘের পাশের সিটে
মেঘ গাড়ি ড্রাইভ করছে আর ভাবছে কি হতো যদি তোমার বযস আর দু’বছর বেশী হতো। তাহলে জমিয়ে প্রেম করা যেতো। এই যে তিন বছরের জন্য চলে যাচ্ছি অথচ তোমাকে একবার জড়িয়েও ধরতে পারবো না। আর না পারবো একটু মন খুলে কথা বলতে।

শপিং শেষ রেস্টুরেন্টে সবাই মিলে কিছু খেয়ে নিলো। যদিও মেঘ চাইছে আরহার সাথে কিছু স্মৃতি তৈরি করতে। কিন্তু রাতে যেহেতু তাদের বের হতে হবে তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পরলো। মেঘ চোরা চোখে আরহার দিকে তাকাচ্ছে আর ভাবছে কবে তুমি আমার পূর্ণ বউ হবে বোকা পাখি! ইশ কত বছর অপেক্ষা করতে হবে। ততদিনে আমাকে ভুলে যাবে না তো বোকা পাখি?
আরহা মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে, আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করুন বাসায় যেতে হবে তো! আমাকে তো পরেও বকতে পারবেন!
মেঘ বোকা বনে গেলো এখানে বকা আসলো কোথা থেকে? মুচকি হেসে বলে সারাদিন বকার কাজ করলে তো বকা খেতেই হবে। আর কথা না বারিয়ে ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলো। তবে কে জানতো তাদের এই সুন্দর মূহুর্ত কিছু সময়ের জন্য। তারপর তাদের জীবনে এমন ঝড় বয়ে যাবে। দুটি মানুষের জীবন তখন একেবারে ভিন্ন পথে মোড় নেবে।
কি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য সে বিষয়ে কেউ অবগত নয়।

#চলব

#তুমি আসবে বলে
(গল্পের নতুন মোড়)

#নুসাইবা ইভানা

পর্ব- ১১

খোলা আকাশের নিচে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজছে আরহা আর নীলু। সামনেই বিশাল পুকুর বৃষ্টির পানি আড়াল করছে আরহার চোখ থেকে গড়িয়ে পরা অশ্রু কণাগুলো।মন খুলে কাঁদার জন্য বৃষ্টি সবচেয়ে বেশি উপযোগী আরহা চিৎকার করে কাঁদছে নীলু একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে। তবে কোন বাঁধা দিচ্ছে না। আরহা আর নীলু এই চার বছরে কত কিছু সহ্য করচছে তা শুধু ওরা দু’জনেই জানে। নীলু মনে মনে ভাবছে, এইটুকু মেয়ের জীবনে যা ঝড় বয়ে গেছে তাতে এ কান্না কিছুই না। কাঁদলে যদি নিজের মনটাকে একটু শান্ত করতে পারে। প্রায় ঘন্টা খানেক কাঁদার পরে নীলু এসে আরহার কাঁধে হাত রাখলো আরহা নীলুকে ধরে বলে কেনো আমার সাথেই এমন হয় বলো, আমি সত্যি অপয়া, অলক্ষী, আমার জন্য সবার খারাপ হয়। আমি এতোটাই হতোভাগা যে আমার সব প্রিয় মানুষ আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আচ্ছা তুমিও চলে যাবে তাই না!
– এসব কি বলছিস আমি কোথাও যাবো না তোকে ছেড়ে তুই আমার ছোট বোন। বোনকে কখনো একা ছেড়ে যাওয়া যায়!
– আচ্ছা আমার বর তো আর কোনদিন আমার কাছে ফিরবেই না। আমি চাইলেও তার মুখ দেখতে পারবো না তাই না আপু?
– ঠিক আসবে একদিন নিজের ভুলের জন্য ক্ষমাও চাইবে। আর না আসলেও বা কি এতো কম সময়ে জনপ্রিয় সিঙার আদিয়াত নুজহাত আরহা যার জন্য হাজার হাজার ছেলে পাগল। তাদের ভেতর থেকে একজনকে বেছে নেবো। কি বলিস আর তাছাড়া প্রান্ত বলে ছেলেটাকে আমার দারুণ লাগে।
– তাহলে তাকে তুমি রেখে দাও। আমি শুধু একবার তার মুখোমুখি হতে চাই বিয়ের পরদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমার সামনে না আসার কারণ জানতে চাই?
আমাকে আমার অধিকার থেকে কেনো বঞ্চিত করা হলো। ছোট সাহেব যা বললো তাই বিশ্বাস করলো একবারের জন্য আমার কাছে সত্যিটা জানতে চাইলো না। এসবের উত্তর তাকে দিতেই হবে।
নীলু মনে মনে ভাবছে কার কাছে যাবে তুমি সেই তো তোমাকে ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দিলো। তার ভুল কি ভাঙতে পারবে। তোমাকে যে এসম্পর্ক ত্যগ করতেই হবে। সে কোনদিন তোমার হবে না। কি করে বলবো তোমাকে। সে আর হয়তো ফিরবে না।
নীলু আরহার হাত ধরে বলে অনেক হয়েছে এবার চল
রাতে প্রোগ্রাম আছে। ভুলে গেছিস ড্রিম হলিডে পার্কে আজকের কনসার্ট। কম পক্ষে দুটো গান গাইতে হবে।
– চিন্তা করো না ঠিক পারবো।
– ঠান্ডা লেগে যাবে তো চল এক্ষুনি
আরহা বাসায় এসে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো। আয়নায় নিজেকে দেখে বলছে তোর রুপ মূল্যহীন। তোর সৌন্দর্যের কোন মর্যাদা নেই, কি হবে এই রুপ দিয়ে রাগে নিজের বড় নখ নিয়ে নিজের গালে আঘাত করে রক্তাত করে ফেললো। নীলু রুমে ডুকতেই এসব দেখে আরহাকে আটকালো। পাগল হয়ে গেছিস এসব কি করছিস।
– আমি এই রুপ,এই সৌন্দর্য চাই না এগুলো আমার অভিশাপ।
– চুপ আর একটাও বাজে কথা বলবি না। একজন সার্ভেন্ট ডেকে ফাস্টএইড বক্স আনিয়ে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে বললো, নিজেকে দোষ দেয়া বন্ধ কর!

দীর্ঘ চার বছর পর বাংলাদেশ ফিরেছে মেঘ সেদিনের পর আর এদেশের মাটিতে পা রাখেনি মেঘ। আজো আসতো না তবে ইমতিহানের গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে এসেছে। হিয়া নামক কালো অধ্যায় থেকে বেরিয়ে এসে নতুন ভাবে নিজের জীবন শুরু করেছে
ইমতিহান। তার ভুলের জন্য বন্ধুর জীবন নষ্ট করবে না। তাই এসেছে। নয়তো এদেশে ফেরার ইচ্ছে চার বছর আগেই দাফন করে গেছে।
ইমতিহান বলল, তুই কি আমাদের বাসায় যাবি নাকি নিজের বাসায়?
মূহুর্তে মেঘের ভিতর হাহাকার করে উঠলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, তুই এখন বাসায় যা আমি রাতে আসছি? মানুষ অতীত থেকে যতই পালাতে চায় অতীত ততই গভীর ভাবে সামনে আসে। পুরোনো ক্ষত গুলো বারবার দগ্ধ হয়ে উঠে।

আরহা দাঁড়িয়ে আছে পুরোনো কিছু ফটো ফ্রেমের সামনে স্থীর দৃষ্টি তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে কয়েক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পরতেই গাল দুটো জ্বলে উঠলো। তবে হৃদয়ে যে গভীর ক্ষত তার তুলনায় এ ক্ষত নিতান্তই নগন্য। মিসেস মারিয়া ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,তোমার ছেলে আমার দিকে ফিরেও তাকালো না। একটি বার আমার খোঁজ নিলোনা। কখনো জানতে চাইলো না আমি কেমন আছি! ভাবছো তোমার ছেলেকে ভালোবাসি যাকে চোখের দেখা দেখিনি তার প্রতি ভালোসা কোথা থেকে আসবে? তবে আমার হৃদয়ে তার জন্য জায়গা ছিলো সেই জায়গাটা আছো শূন্য। হয়তো কোনদিন আর পূর্ণ হবে না। কি দোষ আমার বলো, কেনো তোমরা সবাই আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেলে? আমার যে বড্ড কষ্ট হয়, এই একাকিত্ব আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়। তবে আমি খুঁজে বের করবো৷ “তাকে, বের করবোই। আমার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তাকে!

নীলু ডেকে বললো আরহা নিচে আয় তোর সাথে জরুরি কথা আছে। আলতো হাতে চোখের জলগুলো মুছে নিলো। খোলা চুলগুলো হেয়ার ব্যন দিয়ে আটকে নিয়ে নিচে চলে আসলো।কি এমন জরুরি কথা বলো,
– শোন ইমতিহান বাংলাদেশ আসছে আমার সাথে মিট করতে চাইছে দেখ কত গুলো মেসেজ করেছে,কি রিপ্লাই করবো , কেথায় আসতে বলবো বুঝতে পারছিনা।
– বাসার ঠিকানা দিয়ে দাও তাহলেই তো হয়।
– তুই বোকাই রয়ে গেলি আমরা দুজন মেয়ে থাকি বাসায়! একটা ছেলেকে বাসায় ডাকা ঠিক হবে না। তারচেয়ে আজ রাতের কনসার্টে আসতে বলি কি বলিস!
– আইডিয়া খারাপ আমরা কনসার্ট শেষে দুলাভাইয়ের সাথে দেখা করবো।
– আগেই দুলা ভাই! আজকে ফাস্ট দেখা আগে দেখ দেখতে যাচ্ছি সালমান খানকে, আর যেয়ে যদি দেখি আমিতাভ বাচ্চনকে।
– দুজনেই হ্যন্ডসাম
– তার মানে কি হুম বাবাও না দাদার বয়সি।
আরহা হাসতে হাসতে বলে, তোকে কতবার বলেছি ভিডিও কল করে একবার দেখেনে।
– তবে যাই বলিস আমার কেনো যেনো মনে হয় যে কয়টা পিক পাঠিয়েছে সব রিয়েল।
– শোন তোমার মনে এখন কি বাজছে জানো?
– কি
– প্রেম কি বুঝিনি আগে তো খুঁজিনি আজ কি হল রে আমার।
তুইতো ছিলি বেশ লুকিয়ে ভিনদেশ ইচ্ছে নিয়ে পালাবার।
– চুপ থাক শিল্পী হয়েছিস তাই সব সিচুয়েশনে গান গাইতে হবে! আমি আছি টেনশনে কি ড্রেস পরবো
কি ভাবে আমাকে দেখলে ইমপ্রেস হবে!
– এবার বোকা বোকা কথা তুমি বলছো। শুনো আজকে কোন কৃত্রিম প্রসাধনী ব্যবহার করবে না একদম ন্যচরাল থাকবা। যাকে ভালোবাসো, যার সাথে পুরো জীবন কাটাতে চাও তার সামনে নিজেকে নিজের মতো তুলে ধরো। কারণ পুরো জীবন তাকে তোমার এই সিম্পল ভাবেই দেখতে হবে।
– ঠিক বলেছিস তাহলে আজ নো মেকাপ।

মেঘ দাঁড়িয়ে আছে কবরস্থানে পাশাপাশি তিনটি কবর
যাওয়ার আগে একটা কাঠ গোলাপ গাছ লাগিয়ে ছিলো কবরের পাশে সেটিতে এখন ফুলে ফুলে রঙিন কিছু ফুল কবরের উপর ছড়িয়ে আছে। হাঁটু মুড়ে বসে পরলো, দীর্ঘ চার বছর পর মেঘের চোখ থেকে অশ্রু ঝড়ছে। ঢাকা শহরের ব্যস্ত নগরিতে হাজার মানুষের কবরের ভীরে প্রিয়জনের কবরের পাশে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে এক যুবক অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কবর রক্ষী।চার বছরে এই কবরের পাশে কোন ছেলেকে আসতে দেখেনি। তবে প্রতি মাসে অন্তত দু’বার করে দুটি মেয়ে আসে। তাকে টাকাও দেয় কবরের দেখা শুনা করতে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে।

মেঘ অস্ফুট স্বরে ডেকে উঠলো মম কয়েকবার ডাকলো মম কথা বলো বলবে না কথা! ওই একটা মেয়ে আমার জীবন থেকে সব কেড়ে নিলো। কেনো তাকে আমার জীবনে জড়ালে মম?আমার জীবনের সব রঙ মুছে দিয়েছে সে, আমি তাকে ক্ষমা করবো না কখনো না।

#চলবে