তুমি আসবে বলে পর্ব-১২

0
267

# তুমি আসবে বলে

# নুসাইবা ইভানা

পর্ব -১২

মেঘ বসা থেকে উঠে চলে আসলো নিজের বাসায় দীর্ঘ
চার বছর পর এই বাসায় আসলো বাড়ির সামনে আসতেই বুকের ভেতর কেমন চিন চিন ব্যথা অনুভব করলো। শ্বাস ভারী হয়ে আসছে। এখনো বাড়িটা আগের অবস্থায় আছে। যে বাড়ীকে সবাই চৌধুরী বাড়ি নামে চিনতো সে বাড়ি আজ পোড়া বাড়ি নামে পরিচিত। পৃথিবীর সবচেয়ে হতভাগা হয়তো মেঘ নিজের বাবা,মার লাশটা পর্যন্ত ছুয়ে দেখতে পারেনি সেদিনের কথা মনে পরলে আজো ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠে চোখের সামনে ভেসে উঠে সেই মর্মান্তিক দৃশ্য
একা পা, এক পা, করে এগিয়ে যাচ্ছে বাড়ি ভেতরের দিকে যতো সমানে এগোচ্ছে হার্ট তত দ্রুত উঠানামা করছে। গলা শুকিয়ে আসছে হুট করেই মেঘ থেমে গেলো নাহ মেঘ আর ভেতরের দিকে যেতে পারবে না এখনো কানে বাজছে সেদিনের তার মা,বাবা,আর নীলুর মায়ের আত্ম চিৎকার। অতি দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলো। বাহিরে এসে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে। চোখের সামনে তিনটি মানুষকে আগুনে পুড়ে দগ্ধ হয়ে ছটফট করতে করতে মৃত্যুর মুখে চলে যেতে দেখলো আর কিছুই করতে পারলো না। মেঘের চোখে অসম্ভব হিংস্রতা দেখা যাচ্ছে। চোখ দুটো দিয়ে যেনো আগুনের ফুলকি বেড় হচ্ছে। নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। মনে মনে শুধু একটাই কথা বাজছে এসব হয়েছে ওই মেয়েটার জন্য ওই মেয়েই আমাদের জীবনের কাল। সুন্দর একটা সুখী পরিবারকে গিলে ফেলেছে। ছাড়বো না কিছুতেই না। “যাস্ট ওয়েট এন্ড সি। এই এই মেঘ চৌধুরী তোমাকে যদি খুঁজে বের করে ধ্বংস না করে দেয় তবে তার নামও মেহের আফরোজ মেঘ নয়।

প্রান্ত একজন তরুণ মিউজিক প্রডিউসার তবে সদ্য তরুণ প্রজন্মের সিঙ্গার আদিয়াত নুজহাতের জন্য এক প্রকার পাগল। কিছুদিন আগেই তার প্রডাকশনে লঞ্চ হয়েছে নতুন মিউজিক ভিডিও। যেমন দেখতে মিষ্টি মেয়েটি তেমনি তার মধুর সুর। এক গুচ্ছো হলুদ গোলাপ নিয়ে নিলো প্রান্ত সাথে বকুল ফুলের দু’টি মালা। মনে মনে বলছে আগুন সুন্দরী তেমার রুপের আগুনে পুড়ে দগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। এবার তোমার প্রেমের আগুনে পুড়ে ছাই হতে চাই! “আই লাভ ইউ মিস আদিয়াত নুজহাত।এর মধ্যেই প্রান্তর এসিস্ট্যান্ট এসে বলে, স্যার আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।
– কে
– স্যার মধ্য বয়স্ক একজন লোক
– বলে দাও আজ কারো সাথে দেখা হবে না। আমি ব্যস্ত আছি।

মধ্য বয়স্ক লোকটি প্রান্তর কথা শুনে চলে গেলো মোটা ফ্রেমের চশমাটা ঠিক করে নিয়ে নিজের গাড়ীতে যেয়ে বসে ড্রাইভার কে বলে ড্রিম হলিডে পার্কে চলো।

সনিয়া বেগম আর হায়দার মিয়া বেশ ভালো আছেন সব মান অভিমান শেষ করে দুজনে সুখে সংসার করছেন। গঞ্জের হাটে তাদের বড় একটা কাপড়ের দোকান আছে, মেয়েটাকেও বিয়ে দিয়েছেন ছেলেটা স্কুলে পড়ে। এতো সুখের মাঝেও নিজের একমাত্র বোনের মেয়েটার কথা ভুলতে পারেন না। দু’বার ঢাকা এসে খুজে গেছে কিন্তু ঠিকানা ছাড়া ঢাকা শহরে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না।

আরহা আজ ভারী মেকাপে আড়াল করেছে নিজের চেহারার ক্ষত। সুন্দর একটা ব্লাক আর রেডের কম্বিনেশনে ড্রেস পরেছে সাথে চুল গুলো ছাড়া, কিছু মেচিং অর্নামেন্টস।
নীলু আরহাকে দেখে বলে, কিলার লুক আজকে কত ছেলে ঘায়েল হবে কে জানে!
– যত ছেলেই ঘায়েল হোক যার হওয়ার কথা ছিলো সেতো ফিরেও তাকাচ্ছে না। আচ্ছা বলতো আমি যদি তার সামনে স্ত্রীর অধিকার চাই তাহলে সে কি আমাকে ফিরিয়ে দেবে!
-আবার সেই কথা বাদ দে তো দেরী হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি চল।
– মেনে নেবে না তাই তো! কেনো নেবে না মেনে বলো আমি তো এখন নিজেকে তার যোগ্য করে তুলেছি।
– আরহু এসব কথা বাদ দে আর কখন এসব কথা মুখে আনবি না।

আরহা মনে মনে বলছে তুমি যত যাই বলো আমি তো যাবোই তার কাছে। একবার শুধু ঠিকানা পাই!
– কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি চল তাড়াতাড়ি । দুজনেই বেরিয়ে পরলো। নীলু আরহাকে বললো আমার ভিষণ ভয় করছে
– আরে রিলাক্স মুডে থাকো ভয় কিসের?
– যদি ইমতিহান আমাকে পছন্দ না করে! যদি আমাকে রিজেক্ট করে তো!
– তোমাকে করবে রিজেক্ট তা কোন সুখে বলো, এতো সুন্দর এতো ভদ্র, এতো ভালো মেয়ে কই পাবে শুনি!
– আমি তো ওকে ভালোবাসি এসবের চেয়ে এটাই সবচেয়ে বেশি। তার প্রতি আমার প্রথম অনুভূতি প্রথম ভালোলাগা প্রথম ভালোবাসা। ও যদি আমাকে প্রত্যাখ্যান করে তবে আমি কিন্তু দেবদাস হয়ে যাবো।

আরহা হাসতে হাসতে বলে, দেবদাস হতে পারবা না তবে পারু হতে পারো, একটা সিরিয়াস কথা বলি মেয়ে মানুষ দেবদাস হতে পারে না। কারন কি জানো একটা মেয়ে একা একা বেঁচে থাকতে পারে না। আর সমাজ তাকে একা থাকতে দেবেও না। তবে পারুর মতো সারাজীবন অন্য পুরুষের বুকে মাথা রেখে ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের বুকে যত্ন করে রাখতে পারবে। সবার আড়ালে তার কথা মনে করে চোখের পানি ফেলতে পারে তবুও দেবদাস হতে পারে না।
– ওরে আমার পাকা বুড়ি কতো বড় হয়ে গেছে। আচ্ছা এটা বল দেবদাস মুভিটা কতবার দেখেছিস!
– হিসেব করিনি তবে পনেরো বারের বেশী হবে। জানো আমি এখানে একটা জিনিস বুঝতে পারিনা সবাই দেবদাসের কষ্টটাই দেখছে অথচ পারুকে সে নিজের ভুলে হারিয়েছে। সে তো মরে গেছ৷ অথচ সারা জীবনের জন্য পারুকে জি*ন্দা লা*শ করে রেখে গেছে
– পরে তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে দেব।
– ততদিনে সব শেষ হয়ে গেছে
নীলু খেয়াল করলো আরহার চোখে পানি টলমল করছে যেকোনো সময় ঝরে পরবে তাই কথা পাল্টে বললো, এই দেখ ইমতিহান আজকে আমাকে সেলফি তুলে পাঠিয়েছে।

আরহা দেখে বলে পুরাই হিরো এই হিরোকে কই পেলে তুমি?
– সে এক বিরাট কাহিনি অন্য কোনদিন বলবো।
আরহা বললো শুনো আগেই গলে যাবে না এটা প্রথম দেখা তাই স্ট্রং থাকবা।
– কিন্তু যদি দেখেই জড়িয়ে ধরে তখন
– মোটেই দিবানা এমনি বাহিরের দেশে বড় হয়েছে ক্যরেক্টার কেমন তাও তো দেখতে হবে!
– হুম

এদিকে ইমতিহান বলছে, একবার এক বাংলাদেশি ঠকিয়েছে আবার সেই একি বাংলাদেশি মেয়ের প্রেমে পরলাম এবার কি হবে কে জানে।
– এতো চিন্তা করছিস কেনো হিয়ার মতো সবাই না হিয়া মেয়েটা যে এতো নিচু মানসিকতার ভাবতে পারিনি। হতেই পারে এই মেয়ে একটু অন্যরকম এই মেয়ে ভালো আর তাছাড়া আগে দেখা কর পরে বুঝা যাবে।
– এরা দুই বোন বাবা,মা নেই ছোট বোন নামকরা সিঙ্গার আদিয়াত নুজহাত আরহা নাম শুনেছিস খুব ভালো গান করে।
– শেষের আরহা নামটা মেঘের হৃদয়ে কাঁটার মতো বিঁধলো। অস্ফুটে স্বরে বললো আরহা।
– হুম তবে নীলিমা ওকে আরহু বলে ডাকে।
– মেঘ মনে মনে বলছে আরহা নামে তো অনেক মেয়ে থাকতে পারে। মেঘের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে।
ইমতিহান তা দেখে বলে কিরে আরহার নাম শুনে তুই ঘামছিস কেনো? আগে থেকেই ক্রাশ খেয়ে বসে আছিস নাকি? তাহলে কিন্তু ভালোই হবে আমার শালীকা তোর ওয়াইফ।
মেঘ কাঁপা-কাঁপা কন্ঠে বললো তোর শালিকাকে কেনো বিয়ে করতে হবে! দুনিয়াতে মেয়ের অভাব আছে নাকি!
এর মধ্যেই ইমতিহানের ফোনটা বেজে উঠলো ইমতিহান ফোনটা রিসিভ করে হাসি মুখে বললো, কেমন আছো সুইটহার্ট?

আরহা কেশে বলে জিজু আমি আপনার সুইটহার্ট না সুইট ইনোসেন্ট শালিকা

ইমতিহান ফোনটা কান থেকে সরিয়ে মেঘের কানে চেপে ধরলো, ওপাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠে ভেসে আসলো খিলখিল হাসি জিজু ভয় পেয়েছেন নাকি? মেঘ উত্তর দিলো আমি তোমার বিয়াই সাহেব জিজু নাগো

আরহার ফোনটা হাত থেকে পরে গেলো জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে সেই পরিচিত কন্ঠ সেই স্বর কিভাবে হতে পারে?

#চলবে