তুমি কেন আগে আসোনি? পর্ব-১৫

0
653

“তুমি কেন আগে আসোনি?”

১৫.
পানির ছিটকা মুখে পরতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো সিনথিয়া। আতঙ্কে পুরো শরীর থরথর করে কাপছে। সিনথিয়া এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো। জাভেদ ভ্রু কুচকে বললো,

— “আর ইউ ওকে সিয়া? কি হয়েছে তোমার? এভাবে ভয় পেয়েছো কেনো?”
— “পা..পানি ক..কে মেরেছে?”
— “আমি মেরেছি। কেনো?”
— “কেনো?”
— “ফজরের সময় হয়েছে। তোমাকে তখন থেকে ডাকছি উঠছোই না তাই হালকা পানি মেরেছি।”
— “ওহ আচ্ছা। আযান দিয়ে দিয়েছে?”
— “হু.। একটু আগেই দিয়েছে।”
— “ঠিকাছে আপনি মসজিদে যান।”
— “তুমি তখন এভাবে ভয় পেয়েছিলে কেনো?”
— “কি..কিছু না।”

জাভেদ সিনথিয়ার সামনের চুল এলোমেলো করে হেসে বেরিয়ে গেলো। সিনথিয়া জাভেদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ পানি মারায় ভিষণ ভয় পেয়েছে। কারণ সায়ান প্রায় মধ্যেরাতে নিজের কামভাব পূরণের জন্য এইভাবে পানি মেরে তুলতো। আজও তাই ভেবেছে। যার কারণে আতঙ্কে কেঁপে উঠেছিলো।

সকাল দশটার দিকে জাভেদ বাসায় ফিরলো। সাথে দুইজন বন্ধু। তারা নতুন ভাবি দেখতে এসেছে। জাভেদ রুমে এসে সিনথিয়াকে রেডি হতে বললো। কারণ জানতেই সিনথিয়া ভয় পেলো। আবার বুঝি পরপুরুষের মনোরঞ্জনের বস্তু হতে হবে? জাভেদ বেরিয়ে গেলো। সিনথিয়া ফুপিয়ে কেঁদে ফেললো। এখন কি করবে? আবার সেই একই ঘটনা ঘটছে ওর জীবনে। বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছে। আর পারছে না লড়তে।

সাবিনা রুমে এসে সিনথিয়াকে এভাবে দেখে বিচলিত হলো। সিনথিয়াকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে বললো,

— “কাদছিস কেনো?”
— “মা আমি..।”

সিনথিয়া কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না। বারবার আটকে আসছে। সাবিনা শান্ত করলেন সিনথিয়াকে। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

— “এবার বল কি হয়েছে?”
— “উনার দুইজন বন্ধু এসেছে আমাকে দেখতে। আর উনিও বলে গেলেন রেডি হতে। মা আমি আর পারছি না। যেই দিন থেকে দীনে ফিরেছি সেইদিন থেকে লড়াই করতে করতে আমি ক্লান্ত। আমি আর পারছি না।”

সিনথিয়া গলার স্বর বসে গেছে। সাবিনা রেগে গেলেন। রেগে বললেন,

— “গর্দভটা দিনদিন আরো গর্দভ হচ্ছে। তুই আমার রুমে যা। দেখি কিভাবে তোকে নিয়ে যায় ওদের সামনে। আজকে যদি বাড়াবাড়ি করে তো চড় খাবে আমার হাতের।”

সাবিনা সিনথিয়াকে অতশির রুমে রেখে গেলেন। জাভেদ রুমে এসে দেখলো তার মা বসে আছে রেগে। জাভেদ এগিয়ে গিয়ে বললো,

— “মা তুমি এখানে? কিছু হয়েছে? সিনথিয়া কই? ওরা ওয়েট করছে।”
— “এই তোর কি আক্কল জ্ঞান সব লোপ পেয়েছে? কি বলছিস তুই তোর কোনো ধারণা আছে? শুন তোর যদি খুব বেশি দেখা সাক্ষাৎ করার ইচ্ছা থাকে তুই যা বাইরে। জনে জনে দেখা সাক্ষাৎ করে আয়। আমার ঘরের বউ, মেয়ে কোনো পরপুরুষের সামনে যাবে না। যদি জোর করিস তো ঘর থেকে বের করে দেবো তোকে।”

সাবিনা হনহন করে চলে গেলেন। জাভেদ হতভম্ব। কি জন্য ওর মা রেগেছে বুঝলো না। এভাবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর নিজেই নিজের মাথায় থাপ্পড় দিয়ে বললো,

— “শালা আম্মু আপু ঠিকই বলে। তুই দিন দিন গর্দভ হচ্ছিস। কিভাবে ভুলে গেলি সিনথিয়া একজন সম্মানিত নারী। সে কোনো পরপুরুষের সামনে যায় না। ধুর ছাই! সবসময় শুধু উলটা কাজ করি। ভাগ্যিস আম্মু এসেছিলো। আপু আসলে নিশ্চিত আমার পিঠে পরতো। বাবাগো।”

জাভেদ তার বন্ধুদের বাইরের একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাইয়ে দিলো। বাসায় আসতেই দেখলো সিনথিয়া রুমে বসে আছে। জাভেদ অপরাধীর ন্যায় রুমে ঢুকলো। সিনথিয়াও ভয় পাচ্ছে। সিনথিয়া ভাবছে ওর কারণে মা বকা দেয়ায় জাভেদ ওর উপর চিল্লাবে। কিন্তু সিনথিয়ার ভাবনা ভুল প্রমাণিত করে জাভেদ সিনথিয়ার সামনে হাটু গেড়ে বসে দুই কান ধরে সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। বিষ্ময়ে সিনথিয়া দাঁড়িয়ে গেলো। জাভেদ অপরাধীর মতো মুখ করে বললো,

— “সরি সিয়া। এবারের মতো মাফ করে দাও। সত্যিই আমার মাথায় ছিলো না তোমার পর্দানশীলের ব্যাপারটা। মায়ের বকা খাওয়ার পরেই বিবেক কাজ করেছে। প্লিজ বউটা মাফ করে দাও।”
— “উঠুন আপনি।”
— “আগে বলো মাফ করেছো?”
— “হুম করেছি। উঠুন।”

জাভেদ উঠে দাড়ালো। কপাল থেকে ঘাম ঝরছে। তা দেখে সিনথিয়া জাভেদকে বিছানায় বসিয়ে নিজের আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দৌড়ে রান্নাঘরে গেলো। দুই মিনিটের মধ্যেই ট্যাং-এর শরবত বানিয়ে এনে জাভেদকে দিলো। সিনথিয়া জাভেদের পাশে বসে নরম স্বরে বললো,

— “আপুর কাছ থেকে শুনেছি আপনি হাফেয। এটা কি একেবারেই মিথ্যে?”
— “না।”
— “তাহলে?”

জাভেদ উঠে গিয়ে আলমারি খুলে একটা ফাইল নিলো। সেটা সিনথিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সে আলমারির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

— “এখানে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আছে।”

সিনথিয়া অবাক হয়ে ফাইল খুলে কাগজপত্র বের করলো। বিষ্ময়ে দাঁড়িয়ে গেলো। একটার পর একটা সার্টিফিকেট দৃষ্টিগোচর হচ্ছে আর সিনথিয়া অবাক হয়ে দেখছে। সিনথিয়া একবার জাভেদের দিকে আরেকবার সার্টিফিকেটের দিকে তাকিয়ে বললো,

— “আকীদা কোর্স ইন তাইবা একাডেমি। কুরআন বুঝার মূলনীতি, হাদিস বুঝার মূলনীতি, ডিপ্লোমা ইন ইসলামিক স্টাডিজ। এরাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স, অনার্স কমপ্লিট। ঢাকা ইউনিভার্সিটি, মাস্টার্স। বিজন্যাস কম্পানি থেকে পুরষ্কার, ম্যাডেল এগুলো সত্যি? কুরআন হিফয কোর্স? আট মাস। আট মাসে কতটুকু শেষ হয়েছে? আ..আঠারো পারা.?”

সিনথিয়া চোখ বন্ধ করে নিলো। চোখ খুলে আবার হাতের কাগজপত্রের দিকে তাকিয়ে বললো,

— “জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি নাকি আমি এখনো ঘুমিয়ে আছি? এসব কিভাবে..? আকীদাও সহিহ। সালফে সাহলীনদের আকীদা।” জাভেদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো, “আপনিও আমার স্বপ্নে এভাবে এসেছেন? এতো সুন্দর স্বপ্ন দেখছি আমি?

জাভেদ মুচকি হাসছে। সিনথিয়ার মুখে অভিব্যক্তি দেখে খুব ভালোলাগা কাজ করছে। সিনথিয়া জাভেদের মুখে হাত বুলিয়ে বললো,

— ” আমি স্বপ্নে আপনাকে ছুয়ে দিয়েছি। সত্যিই এতো সুন্দর স্বপ্ন কিভাবে দেখছি? বাস্তবের মতো লাগছে। আল্লাহ প্লিজ এই স্বপ্ন যেনো কোনোদিন না ভাঙে। আমি এই স্বপ্নের ভেতরেই থাকতে চাই। আহ…!”

সিনথিয়া ভ্রু কুচকে নিজের হাতের দিকে তাকালো। জাভেদ চিমটি দিয়ে রক্ত বের করে দিয়েছে। সিনথিয়া রেগে তাকালো জাভেদের দিকে। জাভেদ হেসে বললো,

— “দেখো রক্তও বের হচ্ছে। তারমানে তুমি স্বপ্ন দেখছো না। বাস্তবেই ঘটছে।”

সিনথিয়া অনেকক্ষণ কথা বলতে পারলো না। এতটা বিষ্মিত হয়েছে যে কেঁদে ফেলেছে। জাভেদ কিছু বলেনি। সিনথিয়াকে এই মুহুর্ত অনুভব করতে দিয়েছে। সিনথিয়া সব কাগজপত্র হাত থেকে রেখে জাভেদের দিকে তাকিয়ে বললো,

— “তাহলে এখন আপনার এ অবস্থা কেনো? মানে নেশা করেন কেনো? আর..।”
— “এইতো বছর তিনেক আগে একজন নারীর প্রেমে পরে সব নিয়ামত হারিয়ে গেছে জীবন থেকে। সে আমার সব সম্পত্তি নিয়ে চলে গেছে আরেকজনের কাছে। আর আমি ধীরে ধীরে দীন থেকে ছিটকে গেলাম। আমার এই অবস্থা বাবা মেনে নিতে পারেনি। তিনিও হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান দুই বছর আগে। আমি আরো ভেঙে পরি। তারপর ধীরে ধীরে নেশার জগতে পা দিয়েছি।”

সিনথিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। জাভেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

— “আমি জানি এসব আমার উচিত হয়নি। কিন্তু আমি তখন বুঝতে পারছিলাম না আমি কি করছি কেনো করছি। সব হারানোর পর অনুভব করতে পেরেছি ফ্রি মিক্সিং কাজের ভয়াবহতা। কিন্তু আমি এই জগত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিলাম না। বারবার দোয়া করতাম কেউ একজন এসে আমাকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যাক। আমিও সহ্য করতে পারছিলাম না এই অন্ধকার জগতের ভার। আর তারপরই তুমি এলে আমার জীবনে।”

সিনথিয়া মাথা নিচু করে নিলো। জাভেদ সিনথিয়ার হাত ধরে বললো,

— “সিয়া তুমি আমাকে আবার গড়ে তুলবে প্লিজ? আমি না একদম ভেঙে গুড়িয়ে গেছি। আমার সাহায্যের প্রয়োজন। আমাকে সাহায্য করবে প্লিজ? আমাকে আবার আমার হাসিখুশি জীবনে নিয়ে যেতে পারবে? আমি এভাবে থাকতে চাইনা। আমারও কষ্ট হচ্ছে। শুধু একজোড়া হাতের প্রয়োজন যে আমাকে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করবে। তুমি হবে জাভেদ নামক এই ঘুড়ির নাটাইয়ের মালিক?”

সিনথিয়ার চোখ থেকে বিন্দু বিন্দু অশ্রু গড়িয়ে পরলো। মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। জাভেদ ফ্লোরে বসেই সিনথিয়ার কোলে মাথা রাখলো। একহাতে সিনথিয়ার হাত ধরে রাখলো শক্ত করে। সিনথিয়া মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আজ খুব ভালো লাগছে। খুউউব!

_____________________________
বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে। জাভেদ আজ দোকানে যায়নি। ঘরেই আছে। জাভেদের ছোটখাটো একটা কাপড়ের দোকান আছে। সেটা দিয়েই সংসারের সব সমস্যা মিটে যায় আলহামদুলিল্লাহ।

সিনথিয়া চায়ের কাপ নিয়ে রুমে এলো। জাভেদ চেয়ারে বসে ছোট টেবিলটার উপর ডায়েরি, ক্যালকুলেটর দিয়ে হিসাব নিকাশ করছে। চায়ের কাপ জাভেদের সামনে রেখে চলে যেতেই খপ করে হাত চেপে ধরলো জাভেদ। সিনথিয়া ফিরে তাকিয়ে বললো,

— “কি হয়েছে?”
— “এখানে বসো।”

পাশের চেয়ারে বসলো সিনথিয়া। জাভেদ ওর ডানহাতটা চেক করে কিছুটা শাসনের সুরে বললো,

— “এসব কি সিয়া? তোমার হাত পুড়েছে আর তুমি অয়েন্টমেন্ট না লাগিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছো?”
— “আরে এটা তো সামান্য। ও কিছু হবে না।”
জাভেদ চোখ রাঙিয়ে বললো,
— “সামান্য মানে কি? কতটুকু পুড়েছে তুমি দেখেছো? বসো এখানে। আমি অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিচ্ছি।”

সিনথিয়া বাধ্য মেয়ের মতো বসে রইলো। জাভেদ ড্রয়ার থেকে অয়েন্টমেন্ট নিয়ে এসে আবার চেয়ারে বসলো। সিনথিয়ার হাতে অয়েন্টমেন্ট লাগাতে লাগাতে বললো,

— “সিয়া তুমি খুব কেয়ারলেস। নিজের একটুও যত্ন নাও না। এতোটা উদাসীন হলে কি চলে বলো? আমি তো সারাদিন বাসায় থাকি না। তাই সেরকম যত্নও নিতে পারি না। প্লিজ নিজের একটু যত্ন নিবে।”

সিনথিয়া এতোক্ষন শীতল চাহনিতে তাকিয়ে ছিলো জাভেদের দিকে। সামান্য একটা পোড়া জায়গার জন্য এতো কেয়ার? সায়ানদের বাড়িতে যখন ছিলো তখন তো কত হাত পুড়েছে। ফোসকা পরেছে। অথচ সায়ান ফিরেও তাকায়নি। অথচ এই লোকটা কতটা করছে সামান্য একটুর জন্য। সিনথিয়া মোলায়েম চাহনিতে তাকিয়ে রইলো। ধীরে ধীরে অশ্রু জমলো চোখে। জাভেদ এখন কাজে ব্যস্ত। একটু আগেই মলম লাগানো শেষ হয়ে গেছিলো। সিনথিয়া উঠে এলো। হৃদয় জুড়ে ভালোলাগার শিহরণ বয়ে চলেছে। সিনথিয়া যেতেই জাভেদ তাকালো। মুচকি হাসলো। সামান্য একটু কেয়ারে মেয়েটার চেহারায় যেই মুগ্ধতা এবং অভিব্যক্তি ছিলো সেটা জাভদেকে মায়ায় ফেলে দেয়। মায়ায় পরতে তো বাধ্য। তার সিয়া যে খুব মায়াবতী।

.
আজ আকাশটা বেশ মেঘলা। তবে বৃষ্টি নেই। চারিদিকে শীতল হাওয়া বইছে। সিনথিয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। এই ওয়েদারটা ওর সবসময় পছন্দের। খুব ভালো লাগে। এমন সময় ফুসকা খেতে ইচ্ছে করে খুব। সিনথিয়া মনে মনে ভাবছিলো এখন যদি জাভেদ ফুসকা নিয়ে আসতো তাহলে দুজন মিলে আনন্দ করে খেতে পারতো।

অনেকটা সময় বারান্দায় দাঁড়িয়েই কেটে গেলো। এরমধ্যে রুমের দরজা লাগানোর আওয়াজ এলো। সিনথিয়া ঘুড়ে দাড়াতেই দেখলো জাভেদ দাঁড়িয়ে আছে। হাতে ফুসকার প্লেট। সিনথিয়া এতোই বিষ্মিত এবং অভিভূত হয়েছে যে কথা বলার খেই হারিয়ে ফেলেছে। সিনথিয়ার অভিব্যক্তি দেখে জাভেদ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে। সিনথিয়াকে একটু সময় দিলো। আসলে মেয়েটা সুখ এতোই কম পেয়েছে যে, সামান্য একটুতেই খুব বেশি আশ্চর্য হয়ে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে।

জাভেদ চেয়ারে বসলো। সামনের ছোট্ট টেবিলের উপর ফুসকার প্লেট রাখলো। সিনথিয়া দাঁড়িয়েই ছিলো। জাভেদ ওকে টেনে পাশের চেয়ারে বসালো। ফুসকায় তেতুলের পানি ঢেলে সিনথিয়ার মুখের সামনে ধরলো। সিনথিয়া খাচ্ছে না দেখে নিজেই জোর করে মুখে পুরে দিলো। অবাক চোখে জাভেদকে দেখছে সিনথিয়া। জাভেদ মুচকি মুচকি হাসছে আর সিনথিয়ার মুখে ফুসকা পুরে দিচ্ছে। অনেক লম্বা সময় পর সিনথিয়া স্বাভাবিক হলো। জাভেদকে বললো,

— “সব আমাকে দিচ্ছেন যে? আপনি খাবেন না?”
— “কেউ কি সেই খেয়াল রাখে?”
— “মানে? আপনিও খান।”
— “কেউ নিজের হাতে খাইয়ে দিলে খেতাম আরকি।”
— “আ..আপনি আমার হা..হাতে খাবেন?”
— “নাহ। পাশের বাড়ির ভাবির হাতে খাবো। গর্দভ।”

সিনথিয়া খুব আশ্চর্য হলো। কারণ সিনথিয়া প্রায় চাইতো সায়ানকে নিজের হাতে খাইয়ে দিবে। একদিন বলেছিলো। সায়ান নাক ছিটকে যা নয় তাই বলেছিলো। তারপর থেকে আর কোনোদিন সাহস হয়নি বলার। জাভেদ সিনথিয়ার মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,

— “থাক আমি খাবো না। আপনিই খান।”
— “আপনি কিভাবে জানলেন আমার এখন ফুসকা খেতে ইচ্ছে করছিলো?”
— “আমিতো তোমাকে হৃদয়ের কাছের মনে করি তাই দূরে থেকেও তোমার মনের খবর জেনে গেছি।”
— “কি..কিভাবে?”
— “ইটস ম্যাজিক।”

সিনথিয়ার অবাক চাহনি। জাভেদের মুগ্ধ নয়ন। সিনথিয়ার এই অভিব্যক্তি দেখতে বেশ লাগে জাভেদের। জাভেদ গলা খাকাড়ি দিয়ে বললো,

— “বুঝেছি। কেউ একজন নিজেই সব খেতে চায়। আমাকে দিবে না।”

সিনথিয়া একটা ফুসকা নিয়ে জাভেদের মুখের সামনে ধরলো। জাভেদ চোখ মেরে বললো,
— “দ্যাটস লাইক মাই গার্ল।”

জাভেদ ফুসকা নেয়ার সময় সিনথিয়ার হাতে কামড় বসালো। সিনথিয়াহ আহ! শব্দ করে ভ্রু কুচকে জাভেদের দিকে তাকিয়ে বললো,

— “এটা কি ছিলো?”
— “ফুসকা তো ঝাল। একটু চিনি নিয়েছি?”
— “চিনি নিয়েছেন মানে?”
— “চিনি মানে চিনি নিয়েছি। এখন একটু মিষ্টি লাগছে। তাও পুরোটা না।”
— “পুরোটা কেন লাগেনি?”
— “পুরোটা কিভাবে লাগবে? ওভাবে কি দিয়েছো নাকি?”
— “কিভাবে?”
— “উহ! সব বলে দিতে হয়?”
— “তো?”
— “চিনি চাই।”
— “নিয়ে আসবো?”
— “ওই চিনি নয় স্পেশালটা।”
— “সেটা কোথায়?”

জাভেদের ইশারায় সিনথিয়া থমকে গেলো। প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে যখন বুঝলো তখন লজ্জায় পরে গেলো। এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো। ইচ্ছে করছে কোথাও মুখ লুকিয়ে নিতে। জাভেদ হাসলো। বললো,

— “হয়েছে মুখ লুকাতে হবে না। ফুসকা খাইয়ে দাও তো।”
— “আমরা যে সব খেয়ে ফেলছি আম্মু আর আপু খাবে না?”
— “ওদের জন্য আলাদা করে এনেছি। ফ্রিজে আছে।”
— “ওহ!”
খাওয়া শেষে জাভেদ প্লেট নিয়ে যেতে যেতে সিনথিয়ার উদ্দেশ্য বললো,
— “যেদিন সময় হবে সেদিন আমি স্পেশাল মিষ্টান্ন নিয়ে নেবো। তোমার অনুমতি সেদিন প্রাধান্য পাবে না। গট ইট।”

সিনথিয়া চুপ রইলো। তবে একদিকে শীতলতা অনুভব করলো।

_______________________
আজ জাভেদ এবং সিনথিয়াকে দাওয়াত দিয়েছে সিনথিয়ার বাড়ির পরিবার। সেখানে আরো অনেকে আসবে। সিনথিয়ার দুই ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকদেরও দাওয়াত দিয়েছে। সায়ানরাও আসবে। জাভেদ বা সিনথিয়া কেউই যেতে চায়নি। বারবার ফোন করে বিরক্ত করায় একপ্রকার বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে।

সিনথিয়া লাল একটা থ্রিপিস পরেছে। সেটার উপর জাভেদের কিনে আনা কালো বোরকা। জাভেদ নেভি ব্লু শার্ট পরেছে। দুজনে সাবিনা এবং অতশি থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো। জাভেদের মটরসাইকেলে করেই রওনা দিলো সিনথিয়াদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

যথাসময়ে পৌছে গেলো তারা। দুইজনে একসাথে ঢুকলো ভেতরে। লিডিংরুমে সবাই ছিলো। আসমা সহ সিনথিয়ার দুই ভাবি এগিয়ে এলো। জাভেদ সালাম দিয়ে চুপ করে রইলো। মিম সিনথিয়াকে দেখে জাভেদকে টিটকারি করে বললো,

— “বাহ! জাভেদ ভাই দেখছি বউকে একেবারে প্যাকেট করে ফেলেছেন।”
— “আমরা ভেতরে যেতে পারি?” সিনথিয়া বললো।
— “হ্যাঁ অবশ্যই। কেনো নয়?”
— “ধন্যবাদ ভাবি।”

সিনথিয়া নিজের রুমে গেলো। জাভেদ সবার সাথে লিডিংরুমের সোফায় বসলো। সায়ানকে দেখেই গা জ্বলে উঠলো। হারামখোরটার জন্য সেদিন সিনথিয়ার গায়ে হাত তুলেছে। জাভেদ নজর সরিয়ে নিলো৷ এখানে আরো অনেকেই আছে। জাভেদ তাদের সাথে কথা বলছে। সায়ান আসছি বলে উঠে গেলো।

সিনথিয়া বোরকা খুলে ওড়নাটা মাত্রই গায়ে জড়িয়েছে। এরমধ্যেই সায়ান এসে উপস্থিত হলো ওর রুমে। সিনথিয়া ভীষণ ঘাবড়ে গেছে। জলদি ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো। সায়ান কিটকিটিয়ে হেসে বললো,

— “ঢাকার আগেই দেখে ফেলেছি। আগের থেকে বেশ নাদুসনুদুস হয়ে গেছো দেখছি। ইশ! কেন যে তোমাকে ডিভোর্স দিলাম। নায়তো আজ তোমাকে…।”
— “বেরিয়ে যান ঘর থেকে। বেরুন বলছি।” সিনথিয়ার ভয়ে হাত কাপছে।
— “বেরিয়ে তো যাবোই। তার আগে একটু সময় দাও আমাকে। আফটার অল তোমার প্রাক্তন স্বামী বলে কথা। প্রমিজ কেউ জানতে পারবে না কিচ্ছু। এমন কি জাভেদও না।”

কথাটা বলেই সায়ান এগিয়ে আসলো সিনথিয়ার দিকে। হাত বাড়াতে যাবে তার আগেই জাভেদ এসে সিনথিয়ার সামনে দাড়ালো। জাভেদকে দেখে সিনথিয়া ওর পেছনে লুকিয়ে গেলো। জাভেদের চওড়া দেহের কারণে সিনথিয়াকে একটুও দেখা যাচ্ছে না। জাভেদ কিড়মিড় করে বললো,

— “তোর ছ্যাচড়ামির স্বভাব আর গেলো না তাইনা? শেষ পর্যন্ত অন্যের বউয়ের দিকেও নজর গেলো?”
— “শুন এতো ভাব নিস না। তোর বউ আমার ইউজ করা মাল।”
— “শালা এক ঘুষিতে মুখ ফাটিয়ে দেবো। মুখ সামলে কথা বল।”

সায়ান কিছু না বলেই হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো। জাভেদ সিনথিয়ার দিকে ফিরে তাকালো। নতজানু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। জাভেদ আলতো জড়িয়ে ধরে বললো,

— “আজ থেকে তোমার উপর কোনো খারাপ ছায়া পরতে দিবো না আমি। আমি সবসময় তোমার মাথার উপরে ছায়া হয়ে থাকবো।”

সিনথিয়া কিছু বলেনি। সায়ানের কথায় বেশ খারাপ লেগেছে। এই লোকটা কেনো যে ওর পেছনে এতোটা লেগেছে বুঝতেই পারছে না। ওর জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। আর কি চায় এরা মা ছেলে? অসহ্যকর।

.
খাবার টেবিলে সবাই বসেছে। জাভেদও মাত্র বসলো। সিনথিয়া ওর পাশে দাঁড়িয়ে খাবার সার্ভ করছে। জাভেদ বারবার চোখের ইশারায় বলেছে ওর পাশে বসতে। সিনথিয়া বসেনি। খাবার শুরুর এক পর্যায়ে মিম বললো,

— “সিনথিয়া তুমি তো আসলে বোরকা পরে। অথচ এই বোরকার ভেতরে করেও শয়তান নিয়ে হাজির হলে?”
— “মা..মানে?”
— “আসতে না আসতেই কি এমন ইঙ্গিত দিলে যার কারণে সায়ান তোমার ঘরে গিয়ে হাজির হলো?”
— “আম..আমি..।”
আসমা হুঙ্কার দিয়ে বললো,
— “সিনথিয়া এটা কি সত্যিই? তুই সায়ানকে ওর ঘরে যেতে বলেছিস?”

জাভেদ সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। অপ্সরাও সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। উৎসুক সবার দৃষ্টি সিনথিয়ার দিকে। সিনথিয়া ভীষণ ঘাবড়ে গেছে। জাভেদের দিকে একবার তাকিয়ে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

— “আম..আমি ব..বলিনি ম..মা।”
— “তুমি তো কিছুই বলো না সিনথিয়া। তারপরেও ছেলেরা তোমার রুপের মোহে পরে তোমার পেছনে ঘুড়ে তাইনা?” মিম বললো।
— “আম..আমি।”
— “সিনথিয়াই রুমে যাওয়ার আগে আমাকে ইশারা করেছিলো।” সায়ান বললো।

সিনথিয়ার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে। জাভেদ চোয়াল শক্ত করে বসে রইলো। অপ্সরা ঘৃণাভরা নজরে তাকালো সায়ানের দিকে। কারণ অপ্সরার কাছে সায়ানের মুখোশ খুলে গেছে। রিহা বললো,

— “আসলে এতাদিন পর আসলো। আর এসেই প্রাক্তন স্বামীকে দেখে পুরানো মায়া জেগে উঠেছিলো। তাই হয়ত কথা বলতে চেয়েছে। তাইনা সিনথিয়া?”
— “ন..না। আমি ক..কি..।”
— “তোমার চরিত্র দেখছি এখনো আগের মতোই আছে সিনথিয়া।” আরশি বললো।

আসমা এবার রেগে তেড়ে এসে সিনথিয়ার বাহু চেপে ধরে গালি দিয়ে বললো,

— “মা** এখনো নষ্টামি করে বেড়াস বাইরে তাইনা?”

কথাটা বলেই হাত উঠালো চড় মারতে। তৎক্ষনাৎ জাভেদ দাঁড়িয়ে গিয়ে সিনথিয়াকে টেনে নিয়ে এলো নিজের পেছনে। আর চড়টা এসে পরলো জাভেদের গালে। জাভেদ চোয়াল শক্ত করে নিয়েছে। উপস্থিত সবাই থমকে গেছে। ভয়ে সিনথিয়া থরথর করে কাপছে। পেছন থেকে খামছে ধরলো জাভেদের শার্ট। আসমা আমতা-আমতা করে বললো,

— “বাবা তুমি এগিয়ে এলে কেনো? আমিই ওকে ঠিক করে দিতাম।”
জাভেদ আসমার দিকে না তাকিয়ে সিনথিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— “সিয়া রেডি হয়ে এসো আমরা এখনই বাসায় যাবো।”
— “বাবা এসব কি বলছো?” আসমা বললো। জাভেদ এবার ধমক দিয়ে বললো,
— “সিয়া কি বলেছি তোমাকে? যাও তাড়াতাড়ি।”

সিনথিয়া তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে বোরকা পরে নিলো। হামিদ জাভেদের হাত ধরে বললো,

— “ভাই তুমি কেনো এসবের মাঝে আসতে গেলে? এই মেয়েটার স্বভাবই এমন। যেখানেই ছেলে দেখবে সেখানেই লুটিয়ে পরবে। মা ঠিক করে দিতো ওকে। তুমি কেন..।”

জাভেদ হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিলো। এরমধ্যেই সিনথিয়া উপস্থিত হয়েছে। জাভেদ সিনথিয়ার হাত শক্ত করে ধরলো। খাওয়া শুরু আগেই এসব কথা উঠেছিলো তাই জাভেদ খাবারে হাত লাগায়নি। সিনথিয়াকে নিজের দিকে টেনে এনে বললো,

— “যেই ঘরে আমার স্ত্রীকে সম্মান করা হয়না। সারাক্ষণ পলিটিক্স চলে কিভাবে আমার স্ত্রীকে অপমান করবে, অপদস্থ করবে সেই ঘরে আর এক মুহুর্তও না। আর কোনোদিন আমরা এমুখো হবে না মনে রাখবেন।”
— “আরে জাভেদ তুমি কার জন্য এমন করছো বলো তো? এই মেয়ে কতটা ধুন্ধুর তা বুঝবে পরে।” মিম বললো।
— “কে কতটা ধুন্ধুর সেটা আমার বুঝা হয়ে গেছে। কে কতটা নিচ এবং চরিত্রহীন সেটাও আমার দেখা এবং জানা হয়ে গেছে। আরেকটা কথা ভাবি। আমি সেসব কাপুরুষদের মতো নই যারা নিজের স্ত্রীকে ছোট ছোট কাপড় পরিয়ে অন্য পুরুষের সামনে এনে মনোরঞ্জনের বস্তু করে দেয়। আমার সিয়া একমাত্রই আমার। ওকে দেখার অধিকারটাও আমার। পৃথীবির সব সম্পদ একদিকে আর আমার অর্ধাঙ্গিনী অন্যদিকে। সিয়া আমার কাছে এতোটাই মূল্যবান।”

সায়ানের দিকে তাকিয়ে আঙুল তুলে শাসিয়ে বলল,

— “ফারদার যদি তোকে আমার সিয়ার আশেপাশে বা ওর ছায়ার আশেপাশেও দেখেছি তো মনে রাখিস সেইদিনই তোর শেষ দিন হবে। এই সিয়ার কারণেই সেই জাভেদ আবার ফিরে এসেছে যার দিকে তাকাতেই সবাই ভয় পেতো। মাইন্ড ইট।”

বেরিয়ে আসার সময় আসমা এবং আরশের সামনে পরলো ওরা। সিনথিয়ার বাবা কিছু বলবে তার আগেই জাভেদ বললো,

— “মেয়ের কদর বুঝবেন একদিন সেদিন সিয়া আপনাদের হাতের নাগালের বাহিরে থাকবে। আসি। আসসালামু আলাইকুম।”

বাইরে এসে সিনথিয়ার বরাবর দাঁড়িয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে একটা উষ্ণ ছোঁয়া দিলো। মোটরসাইকেলে বসতেই সিনথিয়া জাভেদের পিঠে মাথা হেলিয়ে দিলো। অনেকটা পথ আসার পর জাভেদ মোটরসাইকেল থামালো। এইদিকটায় মানুষ তেমন নেই। সিনথিয়া নেমে দাঁড়িয়ে অপরাধীর মতো মুখ করে বললো,

— “আপনি কেনো এসবের মাঝে আসতে গেলেন। আমার জন্যেই অপমানিত হতে হয়েছে আপনাকে।”
— “সিয়া তুমি আমার স্ত্রী। আমার অর্ধাঙ্গিনী। তোমার সম্মান মানে আমার সম্মান। আর তোমাকে অসম্মান করা মানে আমাকে অসম্মান করা। এতোগুলো মানুষের সামনে সবাই মিলে তোমাকে অসম্মানিত করছিলো, অপবাধ দিচ্ছিলো মানে ওরা আমার গায়ে অপবাদ দিচ্ছিলো। আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো? এতোটা কাপুরুষ আমি নই।”

সিনথিয়া হু হু করে কেঁদে ফেললো। জাভেদ ওকে বুকে টেনে নিয়ে বললো,

— “অনেক হয়েছে, অনেক সয়েছো। আর নয়। এখন থেকে আর কেউ তোমাকে না অপবাদ দিতে পারবে আর না অসম্মানিত করতে পারবে।”

এভাবেই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলো দুজনে। জাভেদ সিনথিয়াকে ছেড়ে মোটরসাইকেলে বসে বললো,

— “উঠো। আজ এক জায়গায় যাবো।”
সিনথিয়া মোটরসাইকেলে বসতে বসতে বললো,
— “কোথায় যাবেন।”
জাভেদ মোটরসাইকেল স্টার্ট দিয়ে বললো,
— “যেতে যেতে পথে পূর্ণিমা রাতে চাঁদ উঠেছিলো গগণে।”

সিনথিয়া ফিক করে হেসে দিলো। জাভেদের কাধে হালকা থাপ্পড় মেরে বললো,
— “গান গাইছেন যে? এসব ঠিক নয় বুঝেছেন?”
— “হুর! স্ত্রীর জন্য রোমান্টিক সব লাইন জায়েজ আছে।”
— “তাহলে রোমান্টিক থেকে একটা বলুন।”
— “চলোনা ঘুড়ে আসি অজানাতে, যেখানে নদী এসে থেমে গেছে।”

সিনথিয়া হাসছে। হাসতে হাসতে জাভেদের কাধে মাথা এলিয়ে দিয়েছে। কারণ জাভেদ গান গায়নি। এমন কমেডি করে বলেছে যে হাসতে হাসতে সিনথিয়ার পেট ব্যাথা হওয়ার উপক্রম।

সিনথিয়া এবং জাভেদ সত্যিই সত্যিই নদীর পাড়ে গেলো কিছুটা সময় কাটাতে। নদীতে পা ডুবিয়ে দুজনে বসে বসে রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছে।

~চলবে,,
® ”নুরুন নাহার