তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব-৩২+৩৩+৩৪

0
335

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৩২
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

–একটু আস্তে ডলুন।এত জোরে হাত ডলতে শুরু করছেন।একটু পরে আমার হাত খুলে পড়ে যাবে।তখন সবাই বলবে,আহানের বউয়ের হাত নেই।

–বললে বলবে।তুমি ভালো হও।আর খারাপ হও।তুমি আমার-ই থাকবে।তোমাকে সারাজীবন আমি খাওয়াবো,পড়াবো।তাই তুমি আমার কথার গুরুত্ব দিবে।সবার কথার না।মনে থাকে যেন।

–কি হয়েছে এত রেগে আছেন কেনো।

–তুমি আবার বলছো কি হয়েছে।ঐ ছেলের সাহস কি করে হয়।তোমার হাত ধরার।তুমিই-বা কিছু বললে না কেনো”?

–তাই বলে আপনি ওনার হাত পুরিয়ে দিবেন।তাছাড়া উনি তো মাফ চেয়েছেন।

–একদম জানে মেরে ফেলবো।তুমি শুধু একান্ত আমার।তোমার ওপরে অন্য কারো নজর পরুক তা আমি চাই না।এখন থেকে বোরখা পরে বাসা থেকে বের হবে।মনে থাকে জেনো,না হলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

–একটা ছেলেকে আমি চিনি না।হুট করে এসে আমার হাত ধরেছে।তাই আপনি তার হাত পুরিয়ে দিয়েছেন।একটা মেয়ে আমার চোখের সামনে আপনাকে জড়িয়ে ধরে ছিলো।এখন আপনাকে কি করা উচিৎ।

–সেটা তোমার ব্যর্থতা।তোমার স্বামীকে অন্য একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরেছে।সেটা দেখে’ও তুমি মেয়েটি’কে কিছু বলো নাই।সেজন্য আমার বউয়ের হাত কেউ ধরবে।আমি’ও ভদ্র ছেলের মতো সেটা চুপচাপ সয্য করবো।এটা যদি ভেবে থাকো তাহলে,তোমার ধারনা ভুল।তাছাড়া আমি তো কোনো ভুল করি নাই।কোনো মেয়ে’র কাছে যাই নাই।মেয়েটা এক কথাই নির্লজ্জ আমি কিছু বুঝে উঠার আগে জড়িয়ে ধরেছিলো।আমি তো ধরি নাই।তোমার উচিৎ ছিলো মেয়েটি’কে থাপ্পড় মেরে,চুলের মুঠি ধরে।মেয়েটি’কে আমার অফিস থেকে বের করে দেওয়া।আমি তোমাকে বললাম।কারো রুমে আসতে হলে,অনুমতি নিতে হয়।তখন তোমার উচিৎ ছিলো।আমাকে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলা।ঘরে বউ রেখে তুই এখানে অনেক মেয়ের সাথে নষ্টামি করছিস।আবার আমাকে অনুমতি নেওয়া শেখাচ্ছিস।একটা দজ্জাল বউ বউ ভাব আসতো তাই না বলো।তোমরা সব বউরা যদি এমন হতে,তাহলে স্বামীরা অন্য মেয়ের কাছে যাওয়ার সুযোগ-ই পেতো না।আর তোমার কথা বাদ-ই দিলাম তুমি তো একদম নিরামিষ।তুমি তো ভালোবাসতে-ই জানো না।একদমে কথা গুলো বলে থামলো আহান।খুব শান্ত ভাবে-ই কথা গুলো বলল।অধরা খুব মনযোগ সহকারে আহানের কথা গুলো শুনছিলো।আসলে-ই সে,একটা নিরামিষ।আহান নিজের অধিকার ঠিক বুঝে নেয়।অধরা কেনো তাহলে নিজের অধিকার ফলাতে পারে না।আহান আজ যেমন ছেলেটি’কে শাস্তি দিলো।অধরা কেনো সেদিন রুহি’কে শাস্তি দিলো না।কেনো আহানের সাথে ঝগড়া করলো না।ভাবতে-ই নিজরে প্রতি নিজের-ই রাগ হলো অধরার।অধরা পলকহীন ভাবে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে।

–এভাবে দেখার কিছু নেই।আমি তোমার-ই জামাই।সারাজীবন দেখতে পারবে।এখন-ই যদি সব দেখে ফেলো।পরে কি দেখবে।একটু দেখে তুলে রাখো পরে দেখবে।আহানের কথায় অধরা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো।আহান আবার বলতে শুরু করলো।

–জানো অধরা আমি খুব সহজে রাগী না।কিন্তু একবার যদি রেগে যাই পরিণাম খুব ভয়াবহ হয়ে যায় জানো।তাই তোমাকে বলছি আমাকে কখনো রাগি’ও না।ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসো।আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।বলে-ই আহান চলে গেলো।অধরা ফ্রেশ হয়ে নিলো।ফ্রেশ হতে গিয়ে অধরা হাতে ব্যাথা অনুভব করলো।খুব শক্তভাবে-ই আহান তার হাত ধুইয়ে দিয়েছে।মনে থাকলে কোনো ছেলে তো দূর।ছেলের ছায়ার ওপর দিয়ে’ও হাটবো না।মনে মনে ঠিক করে নিলো অধরা।ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসলো অধরা।তারপরে কালো রংয়ের সালোয়ার কামিজ নিয়ে আবার ওয়াশরুমে গেলো।চেঞ্জ করে বাহিরে আসলো।আহানে’র থেকে সাহায্য নিয়ে,শাড়ী’টা গুছিয়ে আলমারিতে রেখে দিলো।

রাতে সবাই খেতে বসেছে।খাওয়ার সময় কথা বলতে নেই।তাই সবাই চুপচাপ খাচ্ছে।রুহি খাওয়ার পাশাপাশি আঁড়চোখে আহান’কে দেখে যাচ্ছে।তা অধরা’র চোখ এড়ালো না।অধরা চুপচাপ খেয়ে উঠে চলে গেলো।যাওয়ার আগে আহান’কে বলে গেলো ছাঁদে আসতে,কথা আছে।আহান খেয়ে ছাঁদে চলে গেলো।অধরা ছাঁদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।আহান গিয়ে অধরাকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরলো।হঠাৎ করে কারো স্পর্শ পাওয়ায় অধরা’র পুরো শরীর কেঁপে উঠলো।আহান অধরা’র কাঁধে থুতনি রেখে বলল।

–এত রাতে,ফাঁকা ছাঁদে একা একটা ছেলেকে ডেকেছো।তোমার ভয় লাগছে না।অধরা ভ্রু কুঁচকে আহানে’র দিকে তাকালো।

–আমি মনে হয় পরপুরুষ-কে ডেকেছি।সেজন্য ভয়ে আমার মরে যেতে হবে।আপনার ভালো না লাগলে চলে যান।ধরে রাখি নাই।

–তাহলে ডাকলে কেনো,জানো না এভাবে কখনো কোনো ছেলে’কে একা ডাকতে নেই।ডেকেছো তুমি,এসেছি তোমার ইচ্ছায়।কিন্তু যাব আমার ইচ্ছায়।রাগ তো আমার করা উচিৎ।সেখানে তুমি কেনো রাগ দেখাচ্ছো।

–আপনি আপনার এক্সকে এই বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি বিদায় করুন।ওকে আমার সয্য হয় না।কোনদিন না জানি ওকে আমি খুন করে ফেলবো।

–এটা করলে আমার খুব উপকার হয়।আর তুমি তো এসব কাজে এক্সপার্ট।তোমার কাছে খুন করা কোনো বিষয় না।

–মানে”?

–মানে তোমার যে,রাগ তুমি রেগে গেলে,আমাকে’ও খুন করে ফেলতে পারো।তাহলে একটা মেয়ে’কে শেষ করতে পারবে না।মেয়েটা আবার যে,সে মেয়ে না।খালি অধরা’র জামাইয়ের দিকে নজর দেয়।অধরা’র উচিৎ মেয়েটি’কে শাস্তি দেওয়া।

–কার জন্য দিব।অধরা’র জামাই তার এক্সকে ভালোবাসে।অধরা’কে তো ভালোবাসে না।তাই অধরা কিছু বলতে পারে না।হাজার হলে-ও একটা মাত্র জামাই অধরা’র।

–রাগের বেলায় ষোল আনার এক আনা’ও কম দেখায় না।অধরা কি বুঝে না।তার জামাই তাকে রাগানোর জন্য এসব বলে।ঘরে সুন্দরী বউ রেখে অন্য মেয়ে’কে ভালোবাসতে অধরা’র জামাইয়ের বইয়ে-ই গেছে।

–তারমানে আপনি রুহি আপুকে ভালোবাসেন না।

–আগে পড়ে কখনোই ভালোবাসি না।রুহির সাথে আমার রিলেশন ছিলো ঠিকি।কিন্তু রুহি আমার কাছে ফ্রেন্ডের মতো ছিলো।ওকে কখনো ছুঁইয়ে দেখতে ইচ্ছে করেনি।কখনো দেখার জন্য মনটা অস্থির হয়ে উঠেনি।কথা বলতে না পারলে,নিজেকে পাগল মনে হয় নাই।সে কাছে না থাকলে,আমার দম বন্ধ হয়ে আসে নাই।কিন্তু এমন একজন আছে,যার জন্য আমার সবকিছু হয়।অধরা এবার আগ্রহ নিয়ে আহানে’র দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।অস্থির হয়ে,আহান’কে বলল কে সে।

–তোমাকে বলবো কেনো”?

–তাহলে কাকে বলবেন।

–যে,আমাকে ভালোবাসে,আমি যাকে ভালোবাসি তাকে বলবো।তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না।

–তারমানে আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন।আমাকে আগে বলে দিলে কি হতো।

–আগে বললে কি হতো।আহানের প্রশ্ন শুনে অধরা অস্থির গলায় জবাব দিল।

–তাহলে আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম না।নিজের সবটুকু দিয়ে ভালো…

আহান ব্যাকুল হয়ে অধরা’র দিকে তাকিয়ে আছে।শুধুমাত্র অধরা’র মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য।অধরা থেমে গেলো দেখে আহান অধরা’কে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসলো।অধরা’র কপালে নিজের কপলা ঠেকিয়ে আস্তে করে বলল।

–আমাকে কি অধরা বলো।

আহান অধরা’র এতটা কাছে চলে আসায়।অধরা নিজরে দু’টি আবেশে বন্ধ করে নিলো।ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে অধরা।সময়ের সাথে নিশ্বাসের গতিবেগ কেমন জানি ভারি হয়ে আসছে।কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলছে।ইচ্ছে করছে।এই জোছনা রাতে আহানে’র মাঝে হারিয়ে যেতে।কিন্তু হঠাৎ করে-ই আহানে’র থেকে দূরে সরে আসলো অধরা।

–তিতলি আজকে’র চাঁদ টা অনেক সুন্দর তাই না বলো।চলো না ছাঁদে যাই।দু’জন মিলে চাঁদের সুন্দর্য উপভোগ করবো।

–তোমার কি হয়েছে বলো তো।এত ভালো ব্যবহার করছো যে,কার রাতে আমার সাথে যে,জানোয়ারের মতো ব্যবহার করছো।কোনো স্বামীর ব্যবহার এমন হতে পারে বলে আমার মনে হয় না।তোমার মতো স্বামী যেনো আল্লাহ কাউকে না দেয়।আহান আর অধরা ছাঁদে গেছে জন্য তুৃমি যাবে।সেটা আমি বুঝি না মনে করছো।

তিতলি’র কথা শুনে,বীর শক্ত করে তিতলির চুলের মুঠি ধরে বলল।

–তোর খুব কথা হয়েছে তাই না।আমার মুখে মুখে কথা বলছিস।আমাদের কথা যদি একটা’ও বাহিরে যায়।তাহলে তোর অবস্থা আমি কি করবো।তুই নিজের জানিস না।চোখের পানি মুছে ফেল,হাসি মুখে রুম থেকে বের হবি।তবু’ও তিতলি থামলো না।ফুপিয়ে কান্না করে-ই যাচ্ছে।তা দেখে বীর রেগে জোরে ধমক দিলো।তিতলি ভয়ে চুপসে গেলো।কান্না থামিয়ে দিলো।

–দুই মিনিট সময় দিলাম।ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসো।আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।তিতলি দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ওয়াশরুমে গিয়ে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।তারপরে চোখ মুখে পানি দিয়ে,ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে তিতলি।বীর তিতলি’র কাছে এসে,তিতলির হাত ধরে বাহিরে নিয়ে গেলো।

ড্রয়িং রুমে তিতির আর আশা কাজ করছিলো।ওদের একসাথে দেখে তিতর বলল।

–কিছু লাগবে তিতলি।

–না আপু কিছু লাগবে না।বীর ছাঁদে যাবে।তাই ওকে ছাঁদে নিয়ে যাচ্ছি।

–আচ্ছা নিয়ে যা,ছাঁদে আহান আর অধরা’ও আছে।

–ভাইয়া আমি’ও যাব তোমাদের সাথে।বলল রুহি।

–আমরা’ও একটু পরে যাব রুহি।তোমার ভাইয়া।আর আমার বড় ভাই এখনি চলে আসবে।ওদের খাওয়া হলে,আমরা সবাই মিলে ছাঁদে গিয়ে আড্ডা দিব।এখন ওরা যাচ্ছে।তুমি ওদের মধ্যে গিয়ে কি করবে।তুমি আমাদের সাথে থাকো।ওরা যাক।বলল তিতির।তিতিরে’র কথা শুনে রুহি মলিন হাসলো।তারপরে বলল আচ্ছা।বীর আর তিতলি ছাঁদের দিকে এগোতে লাগলো।

অধরা ছাঁদের রেলিং ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো।আহান অধরা’র হাতের ওপরে হাত রেখে বলল।

–আমাকে কিন্তু বললে না আমাকে কি”?আর আমাকে নিয়ে কি বা স্বপ্ন দেখছো তুমি।

–আপনি সত্যি অন্য কাউকে ভালোবাসেন।কথা গুলো বলতে গিয়ে অধরা’র গলা ধরে আসছিলো।কেনো জানি ভেতরে থেকে কথা আসছিলো না।আহান অন্য কাউকে ভালোবাসে,কথাটা শোনার পরে কেনো জানি কান্না করতে ইচ্ছে করছে অধরা’র।আহান যদি-ও কথাগুলো মজা করে-ও বলে থাকে।তবু-ও মানতে কষ্ট হচ্ছে।না চাইতে-ও চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।আহান অধরা’কে নিজের বুকে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল।

–পাগলি মেয়ে কান্না করছো কেনো”?আমি তো মজা করছি।তুমি এত বোকা কেনো”?নিজের অধিকার টুকু বুঝে নিতে পারো না।আর কবে বুঝবে তুমি।তোমাকে বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত হয়ে গেছি আমি।

–এমন মজা করবেন না।আমি সয্য করতে পারি না।

–কেনো পারো না।এটা-ই তো আমি জানতে চাই।

–কেনো আপনি জানেন না।বোঝেন না কেনো আমি এমন করি।তা-ও বোকার মতো প্রশ্ন করেন।আমি যদি বলি আমি অন্য ছেলে ভালোবাসি।তখন আপনার ফিলিংস কেমন হবে।

–তোমাকে কিছু বলবো না।সোজা ছেলেটা’কে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিব।তখন তুমি আমার কাছে-ই আসতে বাধ্য হবে।আর সারাজীবন আমার সাথে-ই তোমাকে থাকতে হবে।তাই অন্য কাউকে ভালোবাসা তো দূরে থাকলো।আশেপাশে গিয়ে দেখবে।আমি তোমার কি অবস্থা করি।

–আপনি খুব চালাক এত সহজে আপনাকে হারাইতে পারবো না।কি সুন্দর ঠান্ডা মাথায় উত্তর দিচ্ছেন।আমি’ও তাহলে আপনার ভালোবাসার মানুষকে খুন করে ফেলবো।বলুন সেই মেয়ে কে”?কোথায় থাকে।একবার শেষ করে দিলে।আপনি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না।

–তুমি আমাকে কপি করলে অধরা।

–কথা কম বলুন।জোর করে হলে-ও আমি আপনার ভালোবাসা আদায় করে নিব।তবু্ও অন্য কারো হতে দিব না।

–জোর করে নিতে হবে না ‘বউরাণী’ তোমাকে ভালোবাসার জন্য আমি সব সময় প্রস্তুত।অধরা’র চুমু দিয়ে বলল।

মানুষটা ভিষণ চালাক।ভাব অধরা ভাব কিছু একটা করে।মানুষটাকে হারিয়ে দিতেই হবে।

–এত ভেবে লাভ নেই।আমাকে হারাতে হলে,তোমাকে আবার জন্ম নিতে হবে।অধরা কিছু বলতে হবে।তখনি তিতলি আর বীর আসে।পায়ের শব্দ পেয়ে দু’জন সরে দাঁড়ালো।বীর আর তিতলি ওদের পাশে এসে দাঁড়ালো।

চলবে…..

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৩৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

–রাত করে ছাঁদে কি করছিস তোরা’।বলল তিতলি।

–কিছু না এমনিতে-ই,তোমরা কি মনে করে আসলে,তুমি তো ছাঁদে আসা পছন্দ কর না আপু।বলল আহান।

–তোর ভাইয়া’র নাকি অনেক দিনে’র ইচ্ছে,বিয়ের পরে বউয়ে’র সাথে রাতে বসে চাঁদ দেখবে।

আহান আড়চোখে একবার বীরে’র দিকে তাকালো।তারপর গলা ঠিক করে নিয়ে বলল।

–কেনো ভাইয়া আগে কখনো চাঁদ দেখে নাই।নাকি ভাইয়া’র বাসায় ছাঁদ নেই।

–আহ আহান হচ্ছে-টা কি!দেব একটা।বড় ভাইয়া’র সাথে কেউ এমন করে কথা বলে।

–ভাই-টা আমার তাহলে,আমি একটু মজা করতে পারবো না।

–হ্যাঁ তিতলি আহান ঠিকি বলেছে।আহান যদি আমার সাথে মজা না করে।তাহলে,কে”?করবে বলো তো” তুমি একদম আহান’কে বকবে না।

তিতলি ভিত দৃষ্টিতে বীরে’র দিকে তাকালো।অধরা আহানে’র কাছে এসে বলল।

–চলুন আমরা নিচে যাই।ভাইয়া আর আপু একান্তে কিছু-টা সময় কাটাক।

বীর তড়িঘড়ি করে,বলে উঠলো।

–না অধরা তোমাদের যাওয়া’র দরকার নেই।একটু পরে বাসার সবাই আসবে।সবাই মিলে আড্ডা দিব।অনেক মজা হবে।

–এই তো ভাইয়া আমি চলে এসেছি।বলল রুহি।রুহিকে দেখে অধরা অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়াল।আহান গিয়ে অধরা’র পাশে দাঁড়াল।

–একদম ঐ মেয়ের কাছে যাবেন না।দশ হাত দূরে থাকবেন।এই মেয়ে এত ছ্যাঁচরা কেনো”?লজ্জা -সরম বলতে কিছু নেই।

–চলো আমরা নিচে চলে যাই।আমার’ও ভালো লাগছে না।

–নতুন জামাই মুখ ফুটে বলেছে,এখন কি করে যাব বলেন।উনি বলার পরে-ও যদি চলে যাই।তাহলে ওনার অসন্মান করা হবে।আমি চাই না।আমাদের জন্য তিতলি আপু কোনো কথা শুনুক।

রুহি আহানে’র কাছে এগিয়ে আসলো।

–আহান এখানে দাঁড়িয়ে,কি করছো।চলো ছাঁদের মাঝখানে সবাই গোল হয়ে বসি।বলে-ই আহানে’র হাত ধরতে যাবে।তখনি অধরা রুহি’র হাত ধরে ফেললো।

–রুহি আপু তুমি মনে হয়।ভুলে যাচ্ছে,আহান একজন বিবাহিত পুরুষ।আর কোনো বিবাহিত পুরুষের হাত হুটহাট ভাবে ধরা-কে এক ধরনের ছ্যাঁরামি বলে,যারা এই কাজ করে,তারা এক ধরনে’র নির্লজ্জ মেয়ে।আমি’ও কি তোমাকে তাদের মধ্যে ধরে নিব।

–অধরা মুখ সামলে কথা বলো।

–তুমি আগে তোমার হাত সামলা-ও।তারপরে আমি আমার মুখ সামলাবো।

–দেখছো ভাইয়া।অধরা আমাকে কিভাবে অপমান করলো।

–ঠিকি তো বলছে,তুই ওর স্বামীর হাত ধরতে যাস কেনো।তোকে আমরা এই শিক্ষা দিয়েছি।তোর জন্য যদি আমাদের বাসার অসন্মান হয়।তাহলে তোকে আমি ছেড়ে কথা বলবো না।বেয়াদব মেয়ে কোথাকার।তোকে বাহিরে পাঠানো একদম উচিৎ হয় নাই।যখন নাইন-টেনে উঠেছিলি।তখনি উচিৎ ছিল,তোকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া।কিন্তু বাবার জন্য দিতে পারি নাই।আগে বাসায় যাই।বাসায় গিয়ে বাবা’কে বলে তোর একটা ব্যবস্তা করবো।

–কিন্তু ভাইয়া অধরা’র আগে আমি আহান’কে চিনি।আহান আমার ফ্রেন্ড হয়।আমি আহানে’র হাত ধরতে-ই পারি।

–তুই আহানে’র ফ্রেন্ড বউ না।একটা মেয়ে হয়ে একটা বিবাহিত ছেলে’র হাত ধরতে যাস।তোর লজ্জা করে না।অধরা আমি ওর হয়ে মাফ চাচ্ছি।তোমরা কিছু মনে করো না।

–ভাইয়া বিয়ে হয়েছে আপনাদের।নিয়ে আসতে যাওয়া হয়েছিল আপনাদের।কিন্তু আপনার বোন আসলো,কি করতে।না মানে,আত্নীয়দে’র বাসায় আসতেই পারে।তাই বলে ভাইয়ে’র সাথে বিয়ের পরের দিন-ই ভাইয়ের শশুর বাড়ি চলে আসে,এটা আবার কেমন মেয়ে।অধরা’র কথা শুনে বীর চুপ করে রইল।

–আমার ভাইয়া’র শশুর বাড়ি।আমি আসতে-ই পারি।

–সে,তুমি আসতে-ই পারো।কিন্তু আমার স্বামীর থেকে দূরে থাকবে মনে থাকে যেনো।

–আহান দেখলে তোমার সামনে তোমার বউ আমাকে অপমান করলো।

–অধরা ভুল কিছু বলেনি।আমি বলে মনে করছি।আমি একজন বিবাহিত পুরুষ।তুমি আমার সাথে গা ঘেঁষাঘেঁষি একটু কম করবে।আমি যদি রেগে যাই।তাহলে কি হবে বুঝতে-ই পারছো।আমার বোনের ননদ তুমি।ভদ্রার খাতিরে কিছু বলছি না।ধৈর্যের সিমা পার হয়ে গেলে,কোনো কিছু দেখবো না।আপু তোমার ননদকে সাবধান করে দিও।বলে-ই অধরা’র হাত ধরে হনহন করে চলে যেতে নিলে,আশা,তিতর এসে হাজির হয়।

–কিরে কোথায় যাচ্ছিস।

–নিচে যাব আপু।তোমরা সবাই মিলে,আড্ডা দাও।

–কোথা-ও যাওয়া লাগবে না।দুলাভাইয়ের সাথে আড্ডা দেওয়া বাদ দিয়ে কোথায় যাবি।আমরা বড় বোন।আমরা তো আর ছোট বোনের জামাইয়ের সাথে মজা করতে পারি না।কিন্তু তোরা তো ছোট তোরা কিন্তু মজা করতে পারিস।আহান তিতিরে’র কথার ওপরে কথা বলতে পারে না।তাই অধরা-কে নিয়ে গিয়ে এক কোণে বসলো।

–শুনো কাল থেকে অফিসে যেতে হবে।অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।এই কয়দিনে।বলল আহান।

–আমার কাজ কে সামলিয়েছে।বলল অধরা।

–আদিল আর মিমি দু’জন মিলে করেছে।

–আচ্ছা আপনি চিন্তা করবেন না।আমি কাল থেকে অফিস জয়েন করবো।

–এখন থেকে তুমি বোরকা পড়ে বাহিরে যাবে।

–কিন্তু’?

–কোনো কিন্তু না।আমি যা বলবো তাই।

–আচ্ছা।

–তুমি একটু বসো।আমি রুম থেকে ফোন-টা নিয়ে আসি।

–যদি কিছু মনে না করেন।আমার টাও নিয়ে আসবেন।

–আমি পারবো না।

–তহালে আমি’ও আপনাকে ফোন চালাতে দিব না।

–দেখা যাবে।বলে-ই আহান নিচে চলে গেলো।রুহি এক কোণে দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসছিল।আহান চলে যাওয়ার পরে অধরা’র পাশে এসে বলসো।আস্তে করে বলল।

–আহান’কে নিয়ে খুব অহংকার না তোমার।এমন কাজ করবো না।সারাজীবন সতীন নিয়ে সংসার করে খেতে হবে।আহানে’র চরিত্রে এমন কলঙ্ক লাগাবো।আহান আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হবে।

কথাটা বলার সাথে সাথে রুহি’র গালে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো অধরা।নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে রুহির গলা চেপে ধরলো।

–অনেক দিন ধরে তোর বেয়াদবি সয্য করছি।তুই আমার সামনে আমার স্বামীর নামে কথা বলছিস।তোর মতো কিছু নোংরা মেয়ের জন্য,সব মেয়েদের বদনাম হয়।তোর মতো মেয়েদের জন্য ভালো ভালো মেয়েদে’র সংসার নষ্ট হয়।তুই যদি ভেবে থাকিস,আমার সংসার’টা এভাবে নষ্ট করবি।আমি অধরা সেটা হতে দিব।তাহলে তোর ধরনা ভুল তোকে আজ আমি মেরে-ই ফেলবো।বলে-ই আরো শক্ত করে রুহির গলা টিপে ধরলো।রুহির নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।হাত দিয়ে গলা থেকে অধরা’র হাত সরানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু অধরা’র শক্তির সাথে ব্যর্থ হচ্ছে।অধরা’র শক্তি যেনো,দ্বিগুন বেড়ে গিয়েছে।রাগে চক্ষু লাল বর্ন ধারণ করেছে অধরা’র।তিতির,আশা এসে ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।অধরা দু-এক কদম পিছিয়ে আসলে-ও রুহির গলা থেকে হাত সারাচ্ছে না।এক পর্যায়ে রুহি জিভ বের হয়ে আসলে,বীর দৌড়ে এসে রুহির থেকে অধরাকে আলাদা করে দিলো।অধরা’র হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথে রুহি কাশতে কাশতে নিচে বসে পড়ে।ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে।রুহির কাছে মনে হচ্ছে,সে মৃত্যুকে খুব কাছে থেকে দেখে এসেছে।আর একটু হলে ভেতর থেকে প্রাণপাখি-টা উড়ে চলে যেনো।প্রচুর কাশি হচ্ছে রুহির।অধরা রেগে রুহির দিকে এগোতে যাবে।তখনি তিতির অধরা’কে ধরে ফেলে।

–অধরা পাগল হয়ে গেছো।মেয়েটা মারা যাবে।

–মরে যাক।ওর মতো নির্লজ্জ মেয়ের মরে যাওয়া-ই উচিৎ।আজকে ওকে আমি মেরে-ই ফেলবো।আমার স্বামীর চরিত্রে কলঙ্ক লাগাবে।এত সাহস হয় কি করে,আমার সামনে এমন কথা বলার।ওকে আমি এখনো বাঁচিয়ে রেখেছি।এটা-ই ওর ভাগ্য ভালো।বলে-ই রুহির চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলল।

–অনেক সয্য করেছি তোকে।এখন এই মুহূর্তে আমার বাসা থেকে বেড়িয়ে যাবি।বলে-ই টানতে টানতে নিচে নিয়ে আসলো।চিল্লাচিল্লি শুনে আহান,আহানের বড় ভাই,তিতরে’র স্বামী,আশরাফুল চৌধুরী,আফরোজা চৌধুরী সবাই বেড়িয়ে আসলেন।

–অধরা মা তোমার কি হয়েছে।তুমি মেয়েটা’র চুল ধরে আছো কেনো।মেয়েটা ব্যাথা পাচ্ছে।

–বাবা এই মেয়েকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছি।এটাই ওর ভাগ্য ভালো।বলে-ই দরজা খুলে ধাক্কা দিয়ে রুহিকে ফেলে দিলো।তারপরে দরজা লাগিয়ে।ভেতরে এসে বলল।

–বাবা আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি।অনেক সন্মান করি।তাই আপনার কাছে,আমি সব বলছি।ঐ মেয়ে আমাকে বলেছে।আহানে’র চরিত্রে এমন কলঙ্ক লাগাবে আমাকে নাকি সতিন নিয়ে সংসার করে খাওয়া লাগবে।বাবা আপনাকে আমি বলে গেলাম।আজকের পরে যদি ঐ মেয়ে চৌধুরী বাসায় আসে।আজ যদি কেউ ঐ মেয়ে’কে বাসার ভেতরে ঢুকতে দেয়।ঐ মেয়েকে খুন করে বাড়ি থেকে বেড়বো।আর কোনোদিন এই বাড়ির মুখ দেখবো না।এই সব মেয়েদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।যারা অন্যের সুখের সংসার নষ্ট করে দেয়।ওকে আমি কি কারনে বাঁচিয়ে রাখবো।অন্যের সংসার নষ্ট করার জন্য।ইচ্ছে করছে এখনি খুন করে ফেলি।অধরা’র পুরো শরীর রাগে কাঁপছে।যা আহান দূর থেকে’ও হাতের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছে।

–কি বাসায় মেয়েকে বিয়ে দিলে বলো তো”।যার বোন এমন ভাই না জানি কেমন হবে।কেমন বেয়াদব মেয়ে আমার ছেলের চরিত্রে কলঙ্ক লাগাবে।আগে জানলে এই মেয়েকে আমার বাসায়-ই ঢুকতে দিতাম না।বললেন আফরোজ চৌধুরী।

–আহান তুমি অধরা’কে নিয়ে ওপরে যা-ও।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

–আমি কোথাও যাব না।ঐ মেয়ে খালি এই বাসায় প্রবেশ করে দেখুক।তখন বেঁচে গেছে।এখন আর জীবন হাতে নিয়ে ফিরতে পারবে না।

বীর অসহায় দৃষ্টিতে সবকিছু দেখছে।রুহি আজ যা করেছে,সত্যি তা খুব লজ্জা জনক ব্যাপার।রেগে বাবাকে ফোন দিলো বীর।

–হ্যাঁ বাবা তোমার বেয়াদব মেয়েকে এসে নিয়ে যাও।আমাকে কি একটু শান্তিতে বাঁচতে দিবে না।এখানে এসেও ঝামেলা সৃষ্টি করে দিয়েছে।

–এত রাতে কি হয়েছে।

–এত কথা বলতে পারবো না।আজ ওর জন্য যে অসন্মানিত হলাম।আজকের পরে থেকে,তোমার মেয়ে যেনো আমার সামনে না আসে।বলে-ই কল কেটে দিলো।বীরের বাবা টিভি-তে বসে খবর দেখছিলেন।বীরের কথা শুনে বেশ বিরক্ত হয়ে,বীরের মাকে বলে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন।আজ তার আশকারা পেয়ে মেয়ে এত উশৃংখল হয়ে গেছে।মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে।

আহান অধরা’কে অধরা-কে এক প্রকার জোর করে রুমে নিয়ে আসলো।

–মেয়েটা কোথায় আছে দেখ তো তিতির।বলল আশরাফুল চৌধুরী।

–খবরদার তিতির তোর পা আমি ভেঙে দিব।একদম ঐ মেয়েকে বাসার মধ্যে নিয়ে আসবি না।বলল আফরোজা চৌধুরী।

তিতির অসহায় দৃষ্টিতে একবার বাবার দিকে তাকাচ্ছে।আরেকবার মায়ের দিকে।এখন কার আদেশ পালন করবে সে।

–আপু আপনার যাওয়ার দরকার নেই।আমি বাবা-কে ফোন করে বলে দিয়েছি।বাবা আসছে রুহিকে নিয়ে যাবে।বলল বীর।

–শুনো মা তুৃমি একদম রুহির সাথে বীরের তুলনা করবে না।বীর রুহির থেকে যথেষ্ট ভালো।বলল তিতলি।

বীর তিতলির কোথায় অবাক হলো।আফরোজা চৌধুরী কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।তিতির এখনো দাঁড়িয়ে আছে।বীর তিতলিকে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

–দাঁড়িয়ে থাকিস না মা।তুই রুমে যা।সমাজে আমার একটা মান সন্মান আছে।আমার বাসার সামনে থেকে মেয়েটার যদি কিছু হয়।তাহলে আমার-ই দুর্নাম হবে।সেজন্য আমি নিজের দায়িত্ব পালন করছি।আজাকে পরে থেকে ও মেয়ে আমার বাসায় প্রবেশ করতে পারবে না।তোরা সবাই নিশ্চিতে থাক।আমার সাজানো সুখের সংসারে কারো কালো ছায়া পড়তে দিব না।বাবার কথা শুনে তিতির রুমে চলে গেলো।আশরাফুল চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল।

–আমি কি মানুষ চিনতে ভুল করলাম।এর প্রভাব যদি আমার তিতলি ওপরে পরে।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

–তুমি আমার নামে মিথ্যা কথা বললে কেনো তিতলি।

–তুমি আমার স্বামী।সবার সামনে তোমাকে ছোট করতে পারি না।কেউ তোমাকে ছোট করলে আমি প্রতিবাদ করবোই।আচমকাই বীর তিতলিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।

–তিতলি অধরা আমার হবে না।আমি অধরার চোখে আহানে’র জন্য তিব্র ভালোবাসা দেখছি।অধরার আহানের প্রতি একদম আকৃষ্ট হয়ে গেছে।আহান নামক ব্যক্তিটি আমার অধরা-কে গ্রাস করে ফেলছে।অধরাকে আমি কোনোদিন পাব না তিতলি।বীরের কথা গুলো শুনে তিতিল’র কাছে মনে হচ্ছে,কেউ তার বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করছে।তার-ই ভালোবাসার মানুষ অন্য কাউকে ভালোবাসে।কথা গুলো কলিজায় ধারালো অস্ত্রের মতো আঘাত করছে।হঠাৎ করে-ই বীর তিতলি-কে ছেড়ে দিয়ে,দূর সরে দাঁড়ালো।আবেগের বসে সে কি বলে ফেললো।তিতলি নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।বীর উল্টো দিক হয়ে ঘুরে আছে।

চলবে…..

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৩৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

–তুমি অধরা’কে কিভাবে চিনো বীর।কবে থেকে তুমি অধরা’কে ভালোবাসো।তুমি জানো না অধরা আমার ছোট ভাইয়ের বউ।আর একটা বিবাহিত মেয়ে’কে ভালোবাসা জঘন্যতম অপরাধ।

–তোমার ভাইয়ে’র আগে আমি অধরাকে চিনি।তোমার ভাইয়ে’র আগে আমি অধরা’র জীবনে আসছি।তোমার ভাই আর তুমি আমাদের জীবনে ঢুকে পড়েছো।আমি তো ভাবছিলাম।অধরা তার বাবা’কে বাঁচানোর জন্য তোমার ভাইকে বিয়ে করেছে।এখন অধরা তোমার ভাই’কে ভালোবেসে ফেলছে।আমি তোমার ভাই’কে শেষ করে ফেলবো।অধরা যদি আমার না হয়।তাহলে আমি অধরা’কে তোমার ভাইয়ের হতে দিব না।কথা-টা শেষ হওয়া মাত্রই তিতলি বীরের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।বীর অবাক নয়নে তিতলি’র,দিকে তাকিয়ে আছে।এটা’ও কি সম্ভব।যে,মেয়েটা কয়েক বছর ধরে তাকে পাগলের মতো ভালোবেসে আসছে।আজ সেই মেয়েটা আমাকে মারলো।

–খবরদার বলছি।আমার সাথে যা খুশি করো।দরকার পড়লে আমার মারতে মারতে শেষ করে দাও।তবু-ও আমার ভাইয়ে’র দিকে নজর দিও না।তোমার বোন একবার আমার ভাইয়ে’র জীবন-টা এলোমেলো করে দিয়ে গিয়ে ছিলো।অধরা-কে পেয়ে আমার ভাইকে আমি ভালো থাকতে দেখেছি।তিন বেলা নিয়ম করে হাসতে দেখেছি।এবার আমি তোমাদের দু’ভাই বোন’কে কিছুতে-ই আমার ভাইয়ের হাসি কেঁড়ে নিতে দিব না।এর জন্য যদি তোমার হাতে আমাকে মরতে হয়।তবু-ও আমি মরতে রাজি।

–তোমার ভাই আমার বোনের জন্য ডিপ্রেশনে যাই নাই।তোমার ভাই তো আপনের জন্য…

–আপন!তুমি আপনকে চিনলে কিভাবে।আর আপন-ই বা কোথায়।আহান আপনে’র জন্য ডিপ্রেশনে কেনো যাবে।আহান আপন’কে বেস্ট ফ্রেন্ড কম মনে করতো।নিজের ভাই বেশি মনে করতো।ছোট থেকে বড় হয়েছে দু’জন।আর তুমি নিজের বোনের দোষ আপনে’র ঘাড়ে দিয়ে দিচ্ছো।

বীর রেগে তিতলি’র চুল টেনে বলল।

–তোকে আমি সব প্রশ্নে উত্তর দিতে বাধ্য নই।আমার বউ হবার খুব শখ ছিলো না তোর।আমার বউ হবার কি জ্বালা তোকে আমি বুঝাবো।না তোকে বাঁচতে দিব।না দিব মরতে তুই কাউকে কিছু বলতে-ও পারবি না।তিলে তিলে শেষ করে দিব।

–তবু-ও আমি তোমাকে ভালোবাসবো।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালোবেসে যাব।আল্লাহ জীবন একটাই দিয়েছে।মানুষের জীবন বিয়ে একবার-ই হয়।তুমি আমাকে মারো বকো যা,খুশি করো।শুধু নিজের চরিত্র-টা ঠিক রেখো।তাহলেই হবে।আমার আর কিছু লাগবে না।তিতলি’র কথা শুনে বীর দূরে সরে দাঁড়ালো।হয়তো চোখের পানি আড়াল করার চেষ্টা করছে।ভাগ্যের কি পরিহাস আমি যাকে ভালোবাসি।সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।ঐ অন্য জন আবার অন্য কাউকে ভালোবাসে,কি নিয়মে চলছে জীবন।ভেবে-ই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল তিতলি।বীর বাহিরে থেকে যতটা কঠিন দেখায়।ভেতরে ঠিক তার উল্টো।স্বচ্ছ নরম মনের মানুষ।একদিন তিতলি তার ভালোবাসা দিয়ে ঠিক বীরের মন জয় করে নিবে।সেই দিনের অপেক্ষা করছে তিতলি।

অধরা রেগে পুরো রুম এলোমেলো করে ফেলছে।আহান কিছু বলছে না।চুপচাপ অধরা’র কান্ড দেখে যাচ্ছে।এখন কিছু বলা মানে আগুনে ঘি ঢালা।তবু-ও অধরা’কে রাগানোর জন্য আহান বলল।

–একটা মেয়ে না হয় বলেছে আমার চরিত্রে কলঙ্ক লাগাবে।এত রেগে যাওয়ার কি আছে।

আহানের কথা শুনে স্থির দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকালো অধরা।

–ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো।আমি আহান চৌধুরী কাউকে ভয় পাই না।আমার কিন্তু আরেক’টা বিয়ে করতে কোনো সমস্যা নেই।তাহলে তোমার সতীন নিয়ে সংসার করে খেতে সমস্যা কোথায়।আহানে’র কোথার কোনো উওর না দিয়ে,অধরা এদিক ওদিক কিছু একটা খুঁজতে লাগলো।আহান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।আর বোঝার চেষ্টা করছে।কি খুঁজছে অধরা।কিছুক্ষণ খোঁজার পরে ড্রেসিং টেবিলে’র কোণায় থেকে বিছানা ঝাড়া ঝাড়ু বের করে আহানে’র দিকে ঘুরলো।

–তুমি বিছানা ঝাড়বে আগে বলবে তো দাঁড়া’ও আমি নেমে যাচ্ছি।বলে-ই বিছানা ছেড়ে বাহিরে’র দিকে দে দৌড়।পাগল খেপিয়ে দিয়েছিস আহান।বাঁচতে চাইলে পালা।আহানে’র পেছনে পেছনে অধরা’ও দৌড়ে দিলো।

–আপনি পালাচ্ছেন কেনো।আমি কি আপনাকে কিছু বলেছি।চলুন রুহি আপুকে নিয়ে আসি।তারপরে কালকে আপনাদে’র বিয়ে দিব।আমার’ও সতীন নিয়ে সংসার করে খেতে কোনো সমস্যা নেই।আপনি যদি দুই বউয়ে’র ভরনপোষন দিতে পারেন।তাহলে আমাদের মানিয়ে নিতে সমস্যা কোথায়।

অধরা’র কথা শুনে আহান দাঁড়িয়ে যায়।গোল গোল চোখ করে অধরা’র দিকে তাকিয়ে আছে।অধরা’র সুযোগ বুঝে দৌড়ে আহানে’র কাছে গিয়ে,আহানে’র চুলের ওপরে ঝাপিয়ে পড়ে।দু’হাতে শক্ত করে আহানে’র চুল ধরে আছে।

–এখন বলুন কি বলছিলেন,দ্বিতীয় বিয়ে করতে আপনার কোনো সমস্যা নেই।আমার কেনো সমস্যা তাই না।কোনো মুখ দিয়ে বলছিলেন জানি।এই মুখ আজ আমি কেটে ফেলবো।যেই গলা দিয়ে আওয়াজ বের করেছেন।এই গলাকে দুই টুকরো করে ফেলবো।বলে-ই এক হাত বাড়িয়ে ডাইনিং টেবিল থেকে চাকুটা নিয়ে।আহানকে সোজা করে আহানের গলায় ধরলো অধরা।আহান করুন দৃষ্টিতে অধরা’র দিকে তাকিয়ে আছে।

–কি হলো এখন কথা বলছেন না কেনো”?কয়টা বিয়ে করবেন বলেন।দুইটা কেনো”?আপনাকে আমি চারটা বিয়ে করাবো।তারপরে চার পিস করে চারজনের কাছে রাখবো।

–আস্তাগফিরুল্লাহ বউ।এসব তুমি কি বলছো।আমি কখন বললাম আমি বিয়ে করবো।আমার ঘরে পীরর মতো একটা বউ আছে।আমি আমার বউকে ছাড়া কারো কথা ভাবতেই পারি না।আমার বউ আমার জীবন।আমার বউ আমার স্বপ্নের রাজকন্যা।রাজ্যের রাণীর থেকে-ও আমার বউ বেশি সুন্দরী।এমন বউ রেখে কেউ কোনোদিন আরো একটা বিয়ে করতে চায়।

অধরা চাকু-টা আরো একটু আহানের গলায় চেপে ধরে বলল।

–নাটক কম করুন।রুমে কি বলছিলেন।সেগুলো বলুন।

–স্যরি আমার ভুল হয়ে গেছে।আমি মজা করছি।তওবা করছি।আর কোনোদিন এমন ভুল করবো না।চাকুটা সরাও আমার গলা কেটে যাবে।আমি মরে গেলে বিধবা হয়ে যাবে তুমি।

–আপনার গলাটাকে দুই পিস করে দেই।এক পিস আমি রাখবো।বাকি পিসটা-ও আমি রাখবো।দুই বিয়ে করার কত মজা বুঝাবো।

–কি দজ্জাল বউ।

–আমাদের এলাকায় একজন পুলিশ ভাড়া থাকতো জানেন।

–তো আমি কি করবো।আমাকে পুলিশে দিবে নাকি।পুলিশে দিও তা-ও ভালো।গলা থেকে চাকু টা সরাও।

–আরে শুনুন না।এত কথা বলেন কেনো।

অধরা চাকু সরিয়ে আহানে’র মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল।

–সেই পুলিশটা’র চরিত্র খারাপ ছিলো।তিনি পরকীয়া’য় লিপ্ত ছিলেন,বহুদিন।তার স্ত্রী তাকে বহুদিন বুঝিয়েছে।কিন্তু তিনি তার স্ত্রীকে গালাগালি করতো।রাতে নেশা করে এসে মারধর করতো।এভাবে আর কতদিন সয্য করবে মেয়েটা পুলিশ’টি একদিন ভোর রাতে এসে ঘুমিয়েছে।তার স্ত্রী এতদিনের পুষে রাখা রাগ আজ সে,শেষ করবে।অনেক ভালোভাবে বুঝিয়েছে স্বামীকে।কিন্তু স্বামী বুঝলো না।তার স্বামী যদি তার না হয়।তাহলে তার স্বামীকে অন্য কারো হতে দিবে না।আর এমন পুরুষের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।যারা ঘরে বউ রেখে’ও অন্য মেয়েদের প্রতি আসক্ত হয়।তখন পুলিশের বউটি ঘুমন্ত স্বামীর লিঙ্গ কেটে দিয়ে পালিয়ে যায়।যেনো আর কোনো মেয়ের জীবন নষ্ট করতে না পারে।লোকটির সে কি আর্তনাদ।মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছিলেন পুলিশটি।পুরো এলাকা কেঁপে উঠেছিলো।পুলিশটির চিৎকার শুনে।এখন আপনি ভাবুন আপনি কি করবেন।যদি একই অবস্থা আপনার-ও করা হয়।তখন কি হবে মিস্টার আহান চৌধুরী। বলে-ই অধরা নিজের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো।আহান খুব মনযোগ সহকারে অধরা’র কথা গুলো শুনছিলো।অধরা’র শেষর কথা শুনে,একবার নিজের দিকে তাকাচ্ছে।আরেক বার অধরা’র দিকে।

–কি ডেঞ্জারাস মেয়ে রে বাবা।আমি জীবনে কোনোদিন দিন দ্বিতীয় বিয়ের কথা বলবো না।আমাকে সরাসরি হুমকি দিয়ে গেলো।ফ্লোরে থেকে ঝাড়ু তুলে আহানে’র দিকে ছুঁড়ে মারলো অধরা।আহান দুহাত দিয়ে ঝাড়ুটা ধরে ফেললো।

–আজকে সারারাত আপনি বাহিরে থাকবেন।এটা আপনার শাস্তি।আমার রুমে কোনো বেয়াদব পুরুষের জায়গা হবে না।বলে-ই গটগট করে চলে গেলো।

–প্রসঙ্গ যখন নিজের দুঃখ নিজে টেনে আনা।আহান তখন তুই নিজে-ই সেরা।এখন কি করে অধরা’র রাগ ভাঙাবো।আহান হালকা করে দরজা খুলে দেখলো রুহি আছে কি না।বাহিরে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।তারমানে রুহির বাবা এসে নিয়ে গেছে।আহান বাহিরে গিয়ে।বেলকনির দিকে তাকিয়ে আছে।এত উঁচুতে উঠবে কি করে।করিম চাচা’কে ডেকে বেলকনির সাথে মই বাঁধিয়ে নিলো।বেলকনি পর্যন্ত উঠে।রুমের মধ্যে উঁকি দিয়ে দেখলো অধরা বিছানায় নেই।জানালার পর্দার পাশে দিয়ে দেখতে পেলো।অধরা মাথায় চিরুনি করছে।আর গুনগুন করে গান গাইছে।আহান রুমের ভেতরে-ও যেতে পারছে না।পুরো বেলকনিতে গ্রিল দেওয়া আছে।নিরুপায় হয়ে অধরাকে ডাকলো।

–ও বউ দরজা-টা খুলে দাও না।আমার ভুল হয়ে গেছে।জীবন থাকতে আর কোনোদিন দ্বিতীয় বিয়ের কথা বলবো না।আমি কিন্তু মজা করছিলাম।আহানে’র কথার কোনো জবাব না দিয়ে,বেলকনির দরজা লাগিয়ে দিয়ে শুইয়ে পড়ল অধরা।আহান ড্যাব ড্যাব করে বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে।হতাশ হয়ে নিচে নেমে আসলো।বাসার ভেতরে এসে ড্রয়িং রুমে এসে।টিভি ছেড়ে দিয়ে,টিভি দেখতে লাগলো।টিভি দেখতে দেখতে ড্রয়িং রুমে-ই ঘুমিয়ে গেলো আহান।

ফজরের আজান কানে আসতে-ই অধরা’র ঘুম ভেঙে গেলো।উঠে অজু করে নামাজ পড়ে নিলো।নামাজ পড়ে ঘুমোতে যাবে।তখনি আহানে’র কথা মনে হলো অধরা’র।বাহিরে এসে এদিক ওদিক দেখতে লাগলো আহান কোথায়।নিচ থেকে টিভির আওয়াজ পেতেই নিচে আসলো।আহান হাত-পা ছড়িয়ে আরামে ঘুমোচ্ছে।এদিকে টিভির মনে টিভি চলছে।অধরা টিভি অফ করে দিয়ে আহান’কে ডাকতে শুরু করলো।

–এই শুনছেন।অনেক ঘুমিয়েছেন।উঠে নামাজ পড়ে নিন।নামাজ পড়ে আবার ঘুমাবেন।আহান ঘুম ঘুম উঠে দাঁড়াল।গম্ভীর মুখ করে নিজের রুমের দিকে গেলো।অধরা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।আহান অজু করে এসে নামাজ পড়ে নিলো।তারপরে গম্ভীর মুখ করে বিছানায় শুইয়ে পড়ল।

–অধরা”।

–বলুন।

–তোমার পেটে আমার একটা বাচ্চা রাখবে।

অধরা চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকালো।

–কি অসভ্য লোক একটা।সব সময় খালি বাজে কথা বলে।

–আমি কিছু বললাম তোমাকে।

অধরা উঠে চলে যেতে লাগলে আহান অধরা’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।একদম নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে,কানের কাছে ফিসফিস করে বলল।

–পালিয়ে যাবে কোথায়।দিনশেষে তোমাকে আমার কাছেই আসতে হবে।আহানে’র শীতল কণ্ঠে বলা কথা গুলো শুনে,অধরা’র পুরো শরীর কেঁপে উঠলো।পুরো শরীর কেমন জানি অবশ হয়ে আসছে।আহানে’র থেকে দূরে সরে আসার’ও শক্তিটুকু পাচ্ছে না অধরা।কোনো কিছু না বলে চুপ করে রইলো অধরা।

চলবে…..