তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব-৪১+৪২+৪৩

0
311

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৪১
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

–কেনো আমাকে আশা করেছিলে না বুঝি’।ভুল সময়ে চলে আসলাম।এখন দু’জন মিলে,আমাকে মেরে ফেলবে।

–আপু তুমি আমাকে যেমনটা ভাবছো।আমি আসলে ঠিক তেমনটা নই।আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলছি।তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।

–তুমি আমাকে কি বলবে অধরা।তুমি তো’ আমার থেকে-ও বড় খেলোয়াড়।তুমি সেই কুইন।যে,কি না বীর’কে ফোন করে এখানে সেখানে আসতে বলতে।

–আপু আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলছি।প্লিজ আহান’কে কিছু বলো না আপু।আমি সব সমস্যার সমাধান করার জন্য এসেছি।

–কি করবে আমাকে মেরে বিশ নাম্বার খুন পরিপূর্ণ করবে।

–আপু এভাবে বলছো কেনো’।আমি বিনা কারনে কাউকে মারি নাই।আমি যাদের মেরেছি।তারা মানুষ রুপি জানোয়ার,অমানুষ,পশু।বিশ্বাস না হলে তুমি বীর’কে বলতে পারো’।বীর আপুকে সত্যি কথা’টা বলো না।

–কাকে সত্যি কথা বলার কথা বলছো কুইন।সে,নিজে-ও ডক্টর শারমিন’কে সাহায্য করেছে পালাতে।বীরে’র কথা শুনে অধরা অবাক হয়ে বলল।

–মানে’।

–অধরা তুমি বীরের কথা শুনো না।আমি তোমাকে সবটা বুঝিয়ে বলছি।

–আপু আমি তোমার সবকথা শুনবো।তুমি প্লিজ আহান’কে কিছু বলবে না।

–অধরা আহান তোমার স্বামী।তোমার উচিৎ ছিলো না,আহান’কে সবকিছু জানিয়ে দেওয়া’র।

–তিতলি আমি চলে এসেছি।তাড়াতাড়ি আমার টাকা আমাকে বুঝিয়ে দাও।বলল শারমিন।

–খালা তুমি।

শারমিন থতমত খেয়ে বলল।

–অধরা তুই।

–আপু তুমি খাল’কে চিনো’।

শারমিন পালিয়ে যেতে লাগলে,অধরা খপ করে ধরে ফেললো।

–আজকে তোমাকে জ্যান্ত পুতে ফেলবো।বলো আমার বাবা-মা কোথায়।আমি এমনিতে-ও আমার বাবা-মাকে কাছে পাচ্ছি না।তোমাকে বাঁচিয়ে রেখে লাভ নেই।

–মনির যদি আমার না হয়।তাহলে আমি সবকিছু এলোমেলো করে দিব।কাউকে বাঁচতে দিব না।

–সবাইকে মারা’র জন্য তুমি নিজে বেঁচে থাকলে,তো সবাই’কে খুন করবে।

–তারমানে তুই সেই সাইকো কুইন।সেজন্য তোর বাবা-মায়ের এত গর্ব তোকে নিয়ে।

–খালা বলো না আমার বাবা-মা কোথায়।আমার মা তো তোমার নিজের বোন হয়।নিজের বোনের সাথে বেইমানি করতে তোমার বিবেকে বাঁধা দিচ্ছে না।

–এই মহিলার বিবেক বলতে কিছু নেই অধরা।দিনের পরে দিন আমার থেকে টাকা নিয়ে এখানে সেখানে পালিয়ে বেড়িয়েছে।বলল তিতলি।

–তুমি-ই বা’ সাহায্য করেছো কেনো আপু।

–তোমার বাবা আর আমার বাবা বিজনেস পার্টনার ছিলো’।একটা কম্পানি দু’জন মিলে ভাগ করে চালাই তো’।কিন্তু তোমার বাবা আমার বাবার সাথে বেইমানি করে।পুরো কম্পানি নিজের নামে করে নেয়।আর আমার বাবা বসে যায় পথে।আমি তখন ছোট ছিলাম অধরা।আমি নিজের বাবার অসহায়ত্ব দেখেছি।এক বেলা খেলে দু’বেলা না খেয়ে থেকেছি।আমার বাবা পথে পথে ঘরেছে,শুধু টাকা অভাবে একটা চাকরি করতে পারে নাই।সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে এসে ক্লান্ত শরীরটা মাটিতে এলিয়ে দিয়েছে।বুকে হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখে বুকের ব্যাথা কমানোর চেষ্টা করেছে।বুকে হাত দিয়ে চেপে ধরলে-ই কি বুকের ব্যাথা কমে যায়।আমার বড় আব্বুরা আমাদের দেখতে পারে নাই।মামারা আমার মাকে কত অপমান করতো।কত বাজে কথা শুনিয়েছে।তার ঠিক নেই।আমাদের জীবন যতটা সুন্দর দেখায় ততটা সুন্দর ছিলো না অধরা।আমি তোমাকে কষ্ট দিয়ে তোমার বাবাকে বোঝাতে চেয়ে ছিলাম।প্রিয় কিছু মানুষ কষ্ট পেলে কেমন লাগে।বলে’ই তিতলি থামলো’।

অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।

–তুমি যে,গুলো বলেছো’।এগুলো যদি আমার বাবা করে থাকে,তাহলে আমার বাবা নিসন্দেহে অন্যায় করেছে।আমি নিজে আমার বাবার শাস্তি দিব।বাবা’কে শাস্তি দেওয়ার জন্য তাকে চাই।কিন্তু সে,কোথায় বলো না আপু।কোথায় লুকিয়ে রেখেছো’।

–আমি জানি না অধরা।আমার সাথে ডক্টর শারমিনের শেষ কথা হয়েছিলো,কক্সবাজার গিয়ে।সেখানে গিয়ে আমি তাকে টাকা দিয়ে ছিলাম।এর পরে দেখা হয়েছে কি না’ আমার সঠিক মনে নেই।তোমার বাবা-মা কোথায় ডক্টর শারমিন জানে’।

–আমি ওদের বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় নিয়ে গিয়ে ছিলাম।কিন্তু উনি তোর বাবা-মাকে আমার থেকে কেঁড়ে নিয়ে গেছে।আমি মনে করেছি,তুই নিয়ে এসেছিস।তোর বাবা-মাকে সেজন্য আমি বাংলাদেশ এসেছি।বলল ডক্টর শারমিন।

বীর বুকে হাত দিয়ে বলল।

–হায় সাইকো কুইনে’র চোখে মুখে কি অসহায়ত্ব।বেশ মজা লাগছে জানো তো’।কুইন জানো শারমিন’কে পালাতে কে’ সাহায্য করেছে।বীর নিজেই করেছে।

অধরা রেগে বীরের কলার টেনে ধরে বলল।

–জানোয়ারে’র বাচ্চা।আমার নুন খেয়ে আমার সাথে’ই বেইমানি করলি’।তুই জাসিন কুইন রেগে গেলে কি হয়।তোকে আমি বাঁচতে দিব না।এমন ভাবে টুকরো টুকরো করবো।রাস্তার কুত্তা-ও তোর দিকে তাকাবে না।

–আমি চাইলেই তোমাকে আঘাত করে পারি অধরা।কিন্তু যাকে ভালোবাসা যায়।তাকে আঘাত করা যায় না।বলল বীর।

–অধরা প্লিজ তুমি বীরকে ছেড়ে দাও।আমি ওর হয়ে, তোমার কাছে মাফ চাচ্ছি’।

বীর রেগে তিতলি’র চুলগুলো হালকা করে ধরে বলল।

–তোর সাহস কি করে হয়।আমাদের মধ্যে আসার।বউ আছিস বউয়ের মতো থাকবি।একদম আমাদের মধ্যে আসার চেষ্টা করবি না।তিতলি’র শরীরে আঘাত করার জন্য অধরা আরো রেগে গেলো’।অদ্ভুত ভাবে শরীরের মধ্যে অজানা শক্তি কাজ করতে শুরু করলো।অধরা কষে বীরকে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।

–তুই আমার সামনে আমার-ই বোনের গায়ে হাত দিস।তোর হাত আজ আমি কেটে ফেলবো।অধরা রুমের কর্নারে থেকে একটা চাকু বের করে নিয়ে আসলো।বীরে’র হাতে চাকু বসাতে যাবে।তখন’ই তিতলি এসে বাধা দেয়।অধরা রাগের বসে,তিতলিকে ধাক্কা দেয়।তিতলি পড়ে যেতে নিলে,কেউ এসে তাকে ধরে ফেলে।অধরা বীরের গলায় চাকু ধরে বলল।

–কুইনের সাথে বেইমানি করার শাস্তি একটাই মৃত্যু’।আমার বিশ নাম্বার খুনটা তোকে দিয়েই করবো বীর।

–তাহলে কুইন যে,একটা নিরপরাধ মানুষকে মেরেছে।একটা বাচ্চা মেয়েকে বাবা হারা করেছে।এখন কুইনে’র কি শাস্তি হওয়া দরকার’।

–কুইন কখনো নিরপরাধ মানুষকে মারে না বীর।বলে-ই বীরের গলায় চাকু চেপে ধরলো’।সাথে সাথে গলা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো’।

তিতলি সামনে থাকা মানুষটি’র দিকে তাকিয়ে মুখ দিয়ে অটোমেটিক বলল।

–আহান তুই।বলে’ই সামনে’র দিকে তাকিয়ে বলল।অধরা মেরো না বীর’কে।আমি বাঁচতে পারবো না।আহান আমি তোর পায়ে পড়ি অধরাকে থামা।আমার বীর’কে বাঁচিয়ে দে’।কথা দিচ্ছি বীরকে নিয়ে দূরে কোথা’ও চলে যাব আমি।

–আমার ছোট চাচা আমিরুল ইসলাম কে মনে পড়ে কুইন।কি নৃশংস ভাবে মেরেছিলে।পুরো বাংলাদেশ দেখেছিল।আজ আমি আমার চাচা মৃত্যুর পরিশোধ নিতে এসেছি।আমার ছোট বোনটা বাবা-র বিকট চেহারা’র পাশে বসে প্রচুর কেঁদেছিল।মাসের পরে মাস চলে যেতো’।আমার বোন বলতো বাবা আসে না কেনো’।কোনো উত্তর ছিলো না আমার কাছে।কিন্তু আজ তোমাকে শেষ করে,আমি আমার বোনের উত্তর।

–তোমার চাচা যে,নিকৃষ্ট কাজ করেছিল।শুনলে তোমার নিজের-ই ঘৃণা হবে।সেই বংশের ছেলে কত ভালো হবে।তার প্রমাণ তুমি দিয়ে দিলে’।তোমাকে আমি’ বলে-ই চাকু উঁচু করে বীরের দিকে তাক করলো।বীরের বুক বরাবর বসাতে যাবে।আহান এসে অধরা’র হাত ধরে ফেললো’।বীর শব্দ করে-ই হেঁসে ফেললো।অধরা এতক্ষণে বীরের শান্ত থাকার মানে বুঝতে পারলো।নিমিষেই অধরা’র সব রাগ উবে গেলো’।হাত অলগা হয়ে গেলো।পুরো শরীর ভয়ে অবশ হয়ে আসছে।ধীর গতিতে পুরো শরীর কাঁপতে শুরু করেছে।

–এত তাড়া কিসের সাইকো কুইন।আস্তে ধীরে সুস্থ মারুন।কুইন তো ভুল করে না।দিনে’র বেলা আসছেন খুন করতে।ধরা খেয়ে যাবেন।আপনার মতো বিচক্ষণ মানুষ এতবড় ভুল করে ফেললো’।আহানে’র কথা শুনে অধরা ভয়ে চুপসে গেলো’।মুখ দিয়ে একটা কথা-ও বের হচ্ছে না।বীর হাসতে হাসতে বলল।

–বাহ বাহ আমাদের কুইনের চোখে মুখে ভয়।মাফিয়া কুইনদে’র লিডার স্বয়ং সাইকো কুইন ভয় পাচ্ছে।তা-ও আবার একটা সাধারণ মানুষ’কে।এটা টিভিতে হেডলাইন দেওয়া উচিৎ।আহান দেখো কেমন মেয়েকে ভালোবাসো তুমি’।নিজের বউয়ের আসল রুপটা দেখে না-ও।

–তোমাকে আমি কি বলে ছিলাম অধরা’।বলল আহান।আহানে’র কথার উত্তর করতে পারলো না অধরা।আহান ধমকে বলে উঠলো’।

–কি হলো আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না।

–আমি আপনাকে সবকিছু বলতে চেয়ে ছিলাম।কিন্তু ভয়ে বলতে পারি নাই।যদি আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যান।

–বেইমানি কেনো করলে’।তোমাকে বলে ছিলাম না।সবকিছু সয্য করে নিব।কিন্তু বেইমানি সয্য করবো না।

–আমি আপনার সাথে বেইমানি করি নাই।শুধু আপনাকে হারানোর ভয়ে সত্যি কথা না বলি নাই’।

–এখন সবকিছু পুলিশের কাছে গিয়ে বলবে’।অধরা অবাক হয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে’।এই সুযোগে শারমিন অধরা’কে আঘাত করার চেষ্টা করলে আহান শারমিনের হাত ধরে ফেলে,শারমিনে’র হাতে ব্লেড থাকায় আহানে’র হাত কেটে রক্ত ঝড়তে শুরু করলো’।

–স্যার পুরোনো কাসন্দি আবার ঘাটতে শুরু করেছে অধরা আর বীর মিলে’।আহান সবকিছু জেনে গেছে।এখন অধরা’কে পুলিশে’র হাতে তুলে দিবে।

–থানা পর্যন্ত পৌঁছানো’র আগে অধরা’কে শেষ করে ফেলো’।অধরা যদি পুরোনো কাসন্দি ঘাটত শুরু করে,তাহলে আমি ধরা পরে যাব।অধরা যে,মেয়ে আমাকে এক সেকেন্ডের জন্য বাঁচিয়ে রাখবে না।

–আহানের দখলে অধরা।

–চিন্তা করো না।আমি আসছি।বাংলাদেশ আসছিলাম শান্তির জন্য।এসেই বিপদে পড়ে যাব।ভাবতে পারি নাই।রাখো দেখছি।খেলা ঘুরানো যায় নাকি।ফোনটা রেখে’ই লোকটি’র মাথায় চিন্তার পাহাড় জমে গেলো’।কাঁপিয়ে তুলছে পুরনো অতীত।কথায় আছে না।পাপ তার বাপকে-ও ছাড়ে না।তবে সত্যিটা সবার সামনে চলে আসবে’।আমি জানি অধরা এমন একটা মেয়ে,পুলিশ অধরা’র বিরুদ্ধে একটা প্রমান-ও পাবে না।আইন প্রমাণ ছাড়া কথা বলে না।এখন আমি কি করবো’।

রক্তমাখা হাত নিয়ে অধরা’র হাত ধরে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে আসলো আহান।

–ছাড়ুন আমাকে,কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।খালা পালিয়ে গেলো’।আমার খালা’কে ধরতে হবে।প্লিজ এমন করবেন না।আমি আপনাকে সব বুঝিয়ে বলছি।অধরা’র কোনো কথাই আহানের কানে যাচ্ছে না।গাড়িতে তুলে,গাড়ি চালাতে শুরু করলো’।

–আমি জানতাম আমার সত্যিটা জানার পরে,আপনি আর আমাকে ভালোবাসবেন না।আমাকে ঘৃণা করবেন।আমাকে ছেড়ে যাবেন না।আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।অধরা’র কথার কোনো উওর করছে না আহান।সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে।এক ঘন্টা পরে গাড়িটা থানার সামনে এসে দাঁড়ালো।অধরা’কে টানতে টানতে থানার ভেতরে নিয়ে গেলো।খুব সকাল হওয়া’র থানায় খুব একটা মানুষজন নেই।সবাই ঘুমোচ্ছে।দু’একজন দেখা যাচ্ছে।আহান গিয়ে অভিযোগ যিনি লেখেন তাকে ডেকে নিয়ে আসলো।তারপরে অধরা’র নামে অভিযোগ করলো’।তিনি অভিযোগ লিখা শেষ হলে,দু’টো মহিলা পুলিশ’কে ডেকে নিয়ে আসলেন।ওরা এসে অধরা’কে নিয়ে জেলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো’।অধরা ফ্যাল ফ্যাল করে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে’।আহান আস্তে করে বলল।

–তো’ সাইকো কুইন আপনার কেমন লাগছে।

–আপনি যদি আমাকে বিষ-ও দেন।সেটা আমি অমৃত মনে করে গ্রহণ করে নিব।আমাকে যদি সারাজীবন জেলে পঁচে মরতে বলেন।আমি বিনা শর্তে রাজি হয়ে যাব।আপনি আমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবেন তো’।অধরা’র কথা শুনে,আহান চোখ নামিয়ে নিলো’।চলে যেতে নিলে,অধরা ভেতরে থেকে দু-হাত বের করে আহানে’র হাত ধরে ফেললো’।বাহিরে এসে আটকানোর ক্ষমতা নেই।ভেতর থেকে একটু প্রচেষ্টা করলো অধরা।আহান অধরা’র হাত ছাড়িয়ে দিয়ে চলে গেলো’।অধরা নিচে বসে কান্না করতে শুরু করে দিলো’।

–আমি জানতাম আমার সত্যিটা জানার পরে আপনি আমাকে আর ভালোবাসবেন না।তাহলে কেনো আমাকে এভাবে এলোমেলো করে দিলেন আহান।আমার বেঁচে থাকা মুসকিল হয়ে যাবে আপনাকে ছাড়া।সারাজীবন যদি না-ই রাখবেন।তাহলে কেনো এত মায়ায় জড়ালেন।

হাসি-খুশি পরিবারটা নিমিষে-ই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।ড্রয়িং রুমে পিনপিন নীরবতা চলছে।তিতলি সবকিছু সবাইকে বলে দিয়েছে।ডক্টর শারমিন পালিয়েছে।আহান’কে ঘিরে বসে আছে সবাই।

–এটা তুমি কি করলে আহান।লোক জানাজানি হলে,কি হবে বুঝতে পারছো’।

–তুমি লোক জানাজানির কথা চিন্তা করছো বাবা।মেয়েটা প্রেগন্যান্ট।তার ওপরে শরীর দুর্বল।মেয়েটা যা কিছু করেছে।বাবা-মাকে কাছে পাওয়া’র জন্য করেছে।আহান অধরা’র কথা ভাবতে না পারে।কিন্তু অধরা’র শরীরে আহানে’র বাচ্চা বেড়ে উঠছে।নিজের বাচ্চার জন্য মায়া হলো না।এতটা পাষাণ বাবা তুই আহান।তোর কোনো কিছু হবার যোগ্যতাই নেই।মেয়েটা খুনগুলা কেনো করেছে।একটা বার জানতি।

–সত্যি আমি খুব পাষাণ আপু।আমার বাবা হবার কোনো যোগ্যতা নেই।আমি অনেক খারাপ আপু’।না হলে সবাই আমাকে এভাবে ঠকিয়ে দিত।বলে’ই আহান নিজের রুমে চলে গেলো’।সবাই হতাশার দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকালো’।

চলবে…..

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৪২
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

–তুমি আহান’কে ফোন করে’ ডেকেছিলে,তাই না বীর।

–এই না হলে,বীরে’র বউ।বীরে’র সাথে থেকে-থেকে’ “তোমার বুদ্ধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

–তুমি আহান’কে এখনো চিনো নাই বীর’।তোমার কি মনে হয়।আহানে’র মতো শান্তশিষ্ট একটা ছেলে,ঠান্ডা মাথায়।তার বউকে থানায় রেখে আসলো।আহান’কে তুমি এতটা বোকা ভেবো না বীর’।আহানে’র ভালোবাসা’র সাথে নিজের ভালোবাসা’র তুলনা করো না।আহানে’র ভালোবাসা অনেক গভীর।তুমি যদি আহানে’র ভালোবাসা’র গভীরতা মাপতে যাও।তুমি নিজেই হারিয়ে যাবে।আহানে’র ভালোবাসা’র কাছে,তোমার ভালোবাসা কিছুই না।তুমি তো’ ভালোবাসতে-ই জানো’ না।আমার এখন আফসোস হচ্ছে,তোমার মতো কুলাঙ্গার’কে আমি ভালোবাসি।তোমার কোনো যোগ্যতা-ই নেই।কারো ভালোবাসার মানুষ হবার।তুমি যদি অধরাকে ভালোই বাসতে।তাহলে ওর এতবড় ক্ষতি করার আগে তোমার কলিজা কাঁপত।ভালোবাসলে-ই যে,তাকে পেতে হবে।এর কোনো মানে নেই।কিছু কিছু জিনিস হোক না অন্য কারো।কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে’র একটা উক্তি আছে না।”ভোগে নয় ত্যাগেই সুখ ।তুমি কি’ আমার সাথে সংসার করবে না।আমি তোমার সাথে আর সংসার করবো না।ভালোবেসে মায়ায় পড়ে এতদিন তোমার অবহেলা সয্য করে তোমার সাথে সংসার করছি।কিন্তু আর না তুমি এখন এই মুহুর্তে আমার বাসা থেকে বেড়িয়ে যাবে।তোমার মতো স্বামী আমার লাগবে না।তোমার জন্য আমার ভাইটার জীবন আবার এলোমেলো হয়ে গেলো’।আজ নিজেকে ব্যর্থ বোন মনে হচ্ছে।তোমাকে আমি ডিভোর্স দিয়ে দিব।কথা গুলো একদমে বলে-ই মাটিতে বসে কান্না করে উঠলো তিতলি’।

বীর এতক্ষণ তিতলি’র কথাগুলো শুনছিলো’।আসলে-ই সে কোনো কিছুর যোগ্য না।আগে তো’ বীর এমন ছিল না।তাহলে বীর এমন হতে শুরু করলো’ কবে থেকে’।অধরা একটা মরীচিকা।আমি সেই মরীচিকা’র পেছনে,ছুটতে ছুটতে নিজরে স্ত্রীকে’ই কষ্ট দিয়ে ফেললাম।তিতলি তো’ কোনো দোষ করে নাই।তাহলে তিতলি কোন অপরাধের শাস্তি পাচ্ছে।তিতলি’র মুখে ডিভোর্সের কথা শুনে বুকের মধ্যে খারাপ লাগছে কেনো।তবে কি মেয়েটা’র মায়ায় পড়ে গেলাম।নাকি আমি দুই-নৌকায় পা দিয়ে চলার চেষ্টা করছি।আজ নিজে’ই নিজে’কে ধিক্কার জানাতে ইচ্ছে করছে।

–কি হলো চোখে’র সামনে থেকে যাচ্ছো না কেনো’।তোমাকে আমি সয্য করতে পারছি না’।বীর এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।এক চুল পরিমাণ-ও সরছে না।তা-দেখে তিতলি রেগে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো’।এতকিছু হবার পরে-ও নির্লজ্জের মতো এখানে পড়ে আছে।এসব বলতে বলতে তিতলি আহানে’র রুমে’র দিকে গেলো’।

–তিতলি ঐ দিকে কোথায় যাচ্ছিস।

–আহানে’র কাছে যাচ্ছি আপু।আহানে’র সাথে আমার কিছু কথা আছে’।

–ঐ’ অমানুষে’র কাছে যাবি।যে,কি না নিজের বাচ্চার কথা-ও ভাবে নাই।

–না জেনে শুনে কাউকে ভুল বুঝতে নেই আপু’।

–তাহলে আহান কেনো অধরা’কে না জেনে শুনে থানায় দিয়ে আসলো’।

–আহান কি তোমাকে বলেছে,আহান না জেনে শুনে অধরা’কে থানায় রেখে আসছে।

–মেরে তোমার মুখ আমি ভেঙে দিব।বড়দের মুখে মুখে খুব কথা বলা শিখে গেছো’।

–সে,তুমি আমাকে মারতে-ই পারো’।কিন্তু আহানে’র নামে একটা বাজে কথা বললে আমি সয্য করবো না’।

–দুই বোন মিলে,কি শুরু করেছিস।এবার আমি দু’টোকে ধরে দিব।আফরোজা চৌধুরীর কথায় দু’জনে-ই চুপ হয়ে গেলো’।

–ঝগড়া করা বাদ দিয়ে দু’জন ভাইয়ে’র কাছে যাও।কেনো এমন করলো জানতে চাও।তোমাদের দু’জনকে আহান অনেক ভালোবাসে আশা করছি।যেটা আমাদের বলতে পারছে না।তোমাদের বলবে।মায়ের আদেশে দু’জন আহানে’র রুমে গেলো’।আহান ফ্লোরে’র মাঝখানে টান হয়ে শুয়ে আছে।আহান’কে এভাবে শুইয়ে থাকতে দেখে তিতলি দৌড়ে আহানে’র কাছে গেলো’।

–আহান এভাবে শুইয়ে আছিস কেনো’।

–এসব সব নাটক বুঝলি তিতলি’।

–আপু তুমি চুপ করবে’।ভালোবাসার মানুষ’কে সব সময় কাছে পা-ও তো’।তুৃৃমি কি করে বুঝবে,প্রিয় মানুষ’কে ছেড়ে থাকার বেদনা না।আল্লাহ না করুক।আজ যদি তোমার সাথে এমন হতো’।তিতলি’র কথা শুনে তিতির চুপ হয়ে গেলো’।কোনো কথা না বলে,আহানে’র রুম থেকে চলে গেলো’।আহান চুপচাপ দুজনের কান্ড দেখছিল।

–আমার জন্য তোমরা কেনো,শুধু শুধু নিজেদে’র মধ্যে ঝামেলা করছো’।

–তোর খুব কষ্ট হচ্ছে তাই রে আহান’।

সময়ে’র সাথে মানুষ বুঝি এভাবেই বদলে যায় আপু’।আহানে’র দু-চোখ লাল হয়ে আছে।চোখ-মুখে চিন্তার ছাপ।চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে।আহান’কে দেখলে-ই যে,কেউ বুঝে যাবে।আহান ভালো নেই।তাহলে এই ছোট বিষয়টা “তার প্রান প্রিয় তিতির আপু কেনো বুঝলো না।সময়ের সাথে কেনো,এভাবে বদলে গেলো’।আমার অবস্থা’টা একবার-ও জানতে চাইলো না।

–আপুর কথায় কিছু মনে করিস না।আপু চিন্তা থেকে বলেছে।

–হুম’।

–ফ্রেশ হয়ে আয়’।খেয়ে নিবি।সকাল থেকে কিছু খাস নি’।

–তুমি যাও’।আমি এখন ঘুমাবো’।তিতলি আর কথা বাড়াল না।উঠে চলে গেলো’।তিতলি যাওয়া’র পরে আহান কাউকে একটা কল করলো’।

দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে’।এখনো কোনো ফোন আসছে না।আহান অধীর আগ্রহে ফোনের দিকে চেয়ে রয়েছে’।ফোন আসছে না দেখে,হতাশ হয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল’।গাড়ি’টা এসে থানা থেকে একটু দূর দাঁড়াল।আহান গাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে-ই তাসরিফ এগিয়ে আসলো’।

–কোনো খবর পেয়েছিস।

–না,রে তোরা আমাকে সঠিক খবর দিয়েছিস তো’।

–ভাই একদম টাটকা খবর জেনে,তোকে আমরা ইনফর্ম করেছি।কিন্তু উনি আসতে এতো দেরি করছে কেনো’।আমি বুঝতে পারছি না।হতে-ও পারে আমরা ভুল জেনেছি।বলল তাসরিফ।

–তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে’।আজ কতগুলো মাস ধরে সবকিছু কালেকশন করেছি।আমি একটা তথ্য-ও ভুল জোগাড় করি নি’।

–তাহলে উনি আসছেন না’ কেনো অধরা’কে বাঁচাতে’।তাহলে উনি কি’ অধরা’কে এতগুলো বছর ধরে ব্যবহার করেছেন’।

আহানে’র মুখে হিংস্রতা’র ছাপ ফুটে উঠেছে’।শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছে’।

–শুনো উকিল’কে আসতে বলেছো’।আজ রাতে-ই অধরা’কে জামিন করিয়ে,এমন ভাবে উধা-ও করে দিবে।কেউ যেনো,সন্দেহ না করে’।অধরা যদি মরে যায়।তাহলে অনেক বড় চাপ আসতে পারে আমাদের ওপরে’।পুলিশ’কে যত টাকা খাওয়ানো লাগে,খাইয়ে দাও।কিন্তু অধরা’কে আমার চাই’।

–সারাদিন খুঁজে উকিল জোগার করেছি’।উনি আসতে রাজি হয়েছেন।উনি বিকেলে আসতে চেয়ে ছিলেন’।এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে।জামিনের কার্যক্রম চলবে।

–টাকা দেখলে সব চলবে।টাকার কাছে কাঠের পুতুল-ও হা করে।তুমি যা-ও।আমার কিছু কাজ আছে করেই আসছি।সবকিছু রাতে’র আঁধারে করতে হবে।

রাত আটটা’র দিকে অনির্দিষ্ট সময়ে,নিদিষ্ট কারো দেখা পেয়ে অধরা’র মুখে হাসি ফুটে উঠলো’।এগিয়ে এসে বলল।

–স্যার আপনি এখানে’।

–তোমার বিপদ।আর আমি না এসে থাকতে পারি।

–কিন্তু আপনি কি করে জানলেন’।আমি থানায় আছি।

–অধরা আমি তোমার স্যার।শুধু তুমি না।দলের সবার খবর আমাকে রাখতে হয়’।

–আপনি না বলেছিলেন।আপনি এসব থেকে দূরে থাকতে চান।আপনার স্ত্রী ছেলে-মেয়েদে’র সময় দিতে চান।তাহলে কি মনে করে দেশে আসলেন।

–মেয়ের বিয়ে দিতে আসছি মা’।বেশি কথা বলো না।চলো আমার সাথে’।

–আমাকে মাফ করবেন স্যার আমি যেতে পারবো না’।

–এটা কেমন কথা অধরা’।

–স্যরি স্যার’।

ব্যক্তি’টি কিছু বলতে যাবে।তখন-ই আহান এসে লোকটি’র গলায় জড়িয়ে ধরে বলল’।

–বড় আব্বু কেমন আছেন’।

–আহান তুই’।

–আগে বলেন আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন’।

–ইয়ে মানে’।

–বড় আব্বু আপনি অধরা’কে চিনেন’।

–কে অধরা’।আহান অধরা’কে দেখিয়ে দিয়ে বলল।

–না আমি অধরা’কে চিনি না।আমার এক উকিল ফ্রেন্ড আছে।মেয়েটা’র জামিন করাতে আসছে।আমি’ও ওর সাথে আসছি।মেয়েটা তোমার কে’ হয়।

–আমার বউ হয়।

–তুমি বিয়ে করেছো আহান’।

–হ্যাঁ বড় আব্বু’।বউয়ে’র জন্য মন কেমন কেমন করে।সারাদিন আমাকে খুব জ্বালায়।রাগ করে খালি নানির বাসায় চলে যায়।শশুর আমার মারা গেছেন।তাই বউকে নকল শশুর বাড়ি রেখে গিয়ে ছিলাম।রাতে বউ’কে ছাড়া ঘুম আসে না।তাই নিতে চলে আসলাম।বলে’ই লজ্জা পাওয়া’র ভান ধরে দু-হাতে মুখ ঢেকে ফেললো’।

–অসভ্য ছেলে একটা’।আমি তোমার বড় আব্বু হই।মুখে লাগাম দিয়ে কথা বলো’।

–তোমাকে না নিয়ে কোথা’ও যাব না।আজ’কে তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবো।বড় আম্মু,ভাইয়া,আপু আসে নাই।

–হ্যাঁ এসেছে,তুমি আজ বাসায় চলে যাও।আমি কাল ওদের নিয়ে তোমাদের বাসায় যাব।

–চলো গো’ ‘বউরাণী’ বড় আব্বু কালকে আসবে’।আজকে তুমি আমার সাথে চলো’।

আহানে’র এমন ন্যাকামি দেখে অধরা রেগে আহানে’র দিকে তাকালো’।

–যে মানুষটা আমার সবকিছু না জেনে শুনে,আমাকে বারবার ভুল বুঝে,বারবার আমাকে দূরে সরিয়ে দেয়।তাকে আমার লাগবে না।

–না লাগলে নাই।আগে তুমি বের হয়ে আসো’।বাসায় সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।তোমাকে নিয়ে যেতে আরেক’টু দেরি হলে,আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবে’।

–স্যার অধরা ম্যাডামে’র জামিন বিকালে হয়ে গেছে’।উকিলে’র কথা শুনে আহান তার’ বড় আব্বুর দিকে তাকালো’।তার বড় আব্বু কোনো রকম পালিয়ে বের হয়ে চলে গেলো’।

–কেমন স্যার তোমার বিপদে এগিয়ে আসলো না’।বিপদের মধ্যে তোমাকে একা রেখে পালিয়ে গেলো’।আর আমার সামনে তোমাকে চিনে’ই না।

অধরা চুপ করে রইলো’।কারন আহানের প্রশ্নের উত্তর তার কাছে-ও নেই।

–চলো আমার সাথে’।অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে’।

–আমি যাব না আপনার সাথে’।

–তাহলে কোথায় যাবে।

–যেদিকে দু-চোখ যায় চলে যাব।তবু্-ও আপনার সাথে যাব না’।

–আজ’কে চলো সকালে চলে যেও’।অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে’।আমাকে রাগিয়ে দিও না।ফলাফল ভালো হবে না।

–তাতে আমার কোনো যায় আসে না’।আহান বেড়িয়ে গেলো’।তিতলি এসে অধরা’কে বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে গেলো’।অধরা বাসায় আসতে-ই সবাই অধরা’কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো’।আহান রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ছাঁদ চলে গেলো’।মনে মনে ঠিক করে নিলো’ আজ আর রুমে যাবে না সে’।সবার সাথে কথা বলে,ফ্রেশ হয়ে খেয়ে শুইয়ে পড়ল অধরা’।আহান রুমে নেই,বারবার দরজায় উঁকি দিচ্ছে আসছে নাকি।কিন্তু ফলাফল শূন্য’।অধরা নিজে’ই উঠে ছাঁদের দিকে গেলো’।সেখানে গিয়ে আহানকে দেখতে পেয়ে বলল।

–আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে’।

–বলো’।

–যার আমার প্রতি কোনো বিশ্বাস নেই।আমার প্রতি কোনো ভরসা নেই।আমি তার সাথে থাকতে পারবো না।আমার মুক্তি চাই।

–আচ্ছা’।

–বাচ্চাটা-ও আমি নিব।

–আচ্ছা’।

–আমি কালকে নানির বাসায় চলে যাব’।আর আসবো না’।গিয়ে আপনাকে ডি..

–আমি সাইন করে দিব।কথা বলা শেষ হলে,এবার যেতে পারো’।

অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলো’।

চলবে…..

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৪৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

মানুষ সময়ে’র সাথে কিভাবে এত’টা পরিবর্তন হয়ে, যেতে পারে’।যে,মানুষ’টা কাল আমাকে চোখে হারাত,
আজ সেই মানুষটা’র চোখ মুখ তীব্র ঘৃণা দেখতে পাচ্ছি’।এভাবে আমাকে এলোমেলো করা’র খুব দরকার ছিল আহান’।আমাকে এভাবে এলোমেলো না করে দিলে-ও পারতেন।কোনো অপেক্ষা ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারতাম।এত ভালোবাসা’র পরে,এত অবহেলা আমি সয্য করতে পারছি না’।আপনার অবহেলা আমাকে মৃত্যু যন্ত্রনা দিচ্ছে’।না পেয়ে হারানো অনেক ভালো।কিন্তু পেয়ে হারানো’র কষ্ট যে,আমি সয্য করতে পারছি না।আপনি তো’ বলেছিলেন।আমাকে সারাজীবন আপনার কাছে রেখে দিবেন।আজ আপনার সেই কথা কোথায় গেলো’।আমি মুক্তি চাইলাম।আর আপনি বিনাবাক্যে আমাকে মুক্তি দিয়ে দিলেন।এমন ভাবে কথা বললেন,আমি গুরুত্বহীন একটা মানুষ।আমার কোনো গুরুত্বই নেই আপনার জীবনে’।তাহলে এতদিন ভালোবাসা নামক ছলনা করলেন আহান’।একটা কথা মনে রাখবেন,নারীর মস্তিষ্কে নিরবে তৈরি হওয়া’ প্রতিশোধ,পুরুষের ছলনা’র থেকে-ও দিগুন তিক্ত’।আপনার সাথে দেখা না হলে-ই সবথেকে ভালো হতো’।আগে পাগল ছিলেন,আর আজ আমাকে পাগল বানাইয়া ছাড়লেন আহান’।সত্যি আপনার তুলনা হয় না’।কথা গুলো ভেবেই ডুকরে কেঁদে উঠলো অধরা’।

অধরা যাওয়া’র পরে,মাথা নিচু করে বীর ছাঁদে প্রবেশ করলো’।চোখ-মুখে অনুশোচনা’র ছাপ’।আস্তে করে এসে,আহানে’র পাশে বসলো’।আহান আগে’র ন্যায় আকাশে’র দিকে তাকিয়ে আছে’।চিন্তা করছে হয়তো’।একদিনে’ই চেহারায় মলিনতা এসে গেছে’।ছেলে’টা সারাদিন কিছু খাই নি’।এই ছোট বিষয়’টা বীর লক্ষ করেছে’।ভাবতে’ই নিজের প্রতি অবাক হলো’ বীর।আহানে’র কাঁধে হাত রেখে বলল’।

–আমার ওপরে রাগ করেছো’।সত্যি আমি মানুষে’র মধ্যে পড়ি না।তা-না হলে এত সুন্দর সুখের সংসার’টা নিমিষে-ই এলোমেলো করে দেই।মরীচিকা’র পেছনে,ছুটতে গিয়ে নিজের সময় করেছি নষ্ট।সাথে দিয়েছি নিজের স্ত্রীকে কষ্ট।কি করবো বলো’।মনের এটা বিষয় আছে না বলো’।কতগুলো বছর ধরে,অধরা’কে ভালোবেসে আসছি।না পেলে তো’ অভিযোগ করবো’ই।কিন্তু যখন জানলাম অধরা আমার না।তখন থেকে তিতলি’কে ভালোবাসা’র অনেক চেষ্টা করেছি।অধরা’কে ভোলার জন্য তিতলি’কে বিয়ে করেছি।শুনে ছিলাম একজন স্ত্রী চাইলে নাকি সব পারে’।তবে আমার মন থেকে অধরা’কে কেনো বের করতে পারলো না আহান’।আজ আমার জন্য সবার জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে’।তুমি অধরা’কে যেমন মেয়ে ভাবছো’।অধরা ঠিক তেমন মেয়ে না’।অধরা নিরপরাধ মানুষদে’র গায়ে ফুলের টোকা-ও দেয় নাই।মেরেছে তাদের যারা মানুষ রুপি জানোয়ার।যারা ছয় বছর,আট বছরে’র বাচ্চাদে’র ধর্ষণ করেছে।পুলিশে’র হাতে দিলে টাকার জোরে বের হয়ে আসতো’।তাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলো ক্ষমতাশীল।অধরা সবাইকে এমন ভাবে মেরেছে’।পিস পিস করে নদীতে,ময়লা’র ড্রেনে,মাগুর মাছের পুকুরে ফেলে দিয়েছে।এমন করে মৃত্যু দিয়েছে।অধরা’র বিরুদ্ধে কেউ কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবে না।অনেকে’র তদন্ত হয়েছে।কিন্তু মৃত ব্যক্তির রুমে এমন কিছু চিঠি পাওয়া গেছে’।যেটা দেখার পড়ে তদন্ত ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছে’।এখন তুমি বলো’ এসব লোকের বেঁচে থাকার অধিকার আছে’।তুমি অধরা’কে ভুল বুঝো না আহান।অধরা তোমাকে সবকিছু বলে দিতো’।কিন্তু আমি তোমার চোখে অধরা’কে খারাপ বানানো’র ফোন দিয়ে ডেকে ছিলাম।একদমে কথা গুলো বলে থামলো’ বীর।

আহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।তারপরে বলতে শুরু করলো’।

–তোমাদের দোষ দিব কি’।আমার নিজের ভাগ্যটা-ই খারাপ।কাউকে ভালোবাসলে তাকে,না পেলে অভিযোগ করা’টা স্বাভাবিক।কিন্তু তুমি একা ভালোবাসলে তো’ হবে না।দ্বিতীয় মানুষটি’কে-ও ভালোবাসতে হবে’।একতরফা ভালোবাসা বিষের চেয়ে-ও বেশি বিষাক্ত’।সব কিছুর ওপরে জোর চললে-ও মনের ওপরে যে,জোর চলে না ভাইয়া’।আশা রাখছি তুমি-ও একদিন আপু’কে ভালোবাসতে পারবে’।ছোট একটা জীবন কষ্ট পেয়ে নষ্ট করো না।যতটা পারবে জীবনটা সুন্দর করে কাটানো’র চেষ্টা করবে’।

–অধরা’র কথা এড়িয়ে যাচ্ছো’।সারাদিন কিছু খাও নি’।আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসি’।বীরের কথা শুনে আহান হাসলো’।তারপরে বীর’কে বলল সে,নিচে গিয়ে খেয়ে নিবে।কিন্তু বীর আহানে’র কথা শুনলো না।খাবার নিয়ে আসতে নিচে চলে গেলো’।আহান আনমনে হেসে উঠলো’।

–তুমি কার কথা বলছো ভাইয়া,ও আমায় কোনোদিন ভালোবাসেনি।আমি বোকার মতো তার কাছে,গিয়েছি বারবার।কখনো নিজ থেকে কাছে টেনে নেয় নাই।আমি কাছে টানলে তবে-ই আসছে।তবু-ও বিরক্ত হয়ে-ই এসেছে।আমি নামক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটাবো অধরা’র জীবন থেকে,অধরা বলে না।আমি ওর জীবনটা এলোমেলো করে দিয়ছি।এবার আমিই ওর জীবন সুন্দর করে সাজিয়ে দিব।আমার কিছু দায়িত্ব আছে।সেগুলো পালন করা শেষ হলেই আমার শান্তি।আর অধরা’র মুক্তি।নিজ মুখে মুক্তি চেয়েছে।কতটা বিরক্ত আমার ওপরে’।তোমাকে ধরে রাখার ক্ষমতা আমার নেই অধরা।কিন্তু তুমি থেকে গেলে সারাজীবন রেখে দেওয়া’র ক্ষমতা আমার আছে।শরীরে’র ওপরে জোর চালানো যায়।কিন্তু মনের ওপরে না।তুমি যে,আমাকে কতটা ঘৃনা করো’।তোমার চোখেমুখে তা আমি স্পষ্ট দেখেছি।কথা দিলাম,আমার দায়িত্ব গুলো পালন হয়ে গেলে।এই বিরক্তিকর মানুষটার মুখ আর দেখতে হবে না তোমাকে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে চোখ গুলো কখন যে,লাল হয়ে গেছে।সেদিকে খেয়াল’ই নেই আহানে’র।

ড্রয়িং রুমে কিছু পড়ার আওয়াজ পেয়ে,ড্রয়িং রুমে আসলো তিতলি।এসে বীরকে দেখে রেগে গিয়ে বলল।

–আজকাল খাবার চুরি করে-ও খেতে শিখে গেছো।তোমাকে না বাসায় চলে যেতে বলছিলাম।তা-ও কেনো নির্লজ্জের মতো পড়ে আছো।

–আস্তে কথা বলো সবাই শুনে ফেলবে’।

–সবাই জানুক তাদের জামাই একটা চোর।রাতের অন্ধকারে খাবার চুরি করে খায়।

–আমাকে এখনো জামাই বলে স্বীকার করছো তাহলে’।তাছাড়া খাবার গুলো আমার জন্য না।আহানে’র জন্য।সারাদিন না খেয়ে আছে।

–মাথায় লাথি দিয়ে পায়ে সালাম করতে গেছো’।ভাইটার আমার যা’ ক্ষতি করার করে-ই দিয়েছো’।আবার কি ছক কসছো’।

বীর তিতলি’র হাত ধরে বলল।

–আমি আমার ভুলগুলো বুঝতে পেরেছি তিতলি’।প্লিজ আমাকে মাফ করে দিয়ে একটা সুযোগ দাও।কথা দিলাম,পৃথিবীর সবথেকে ভালো স্বামী হয়ে দেখাবো’।

–এসব কথা বলে তুমি আমার মন গলাতে পারবে না।দেখি সরো,তুমি সত্যি কথা বলছো নাকি।আহানকে জিগাস্যা করে আসি।

–আহান ছাঁদে আছে।তুমি যাও আমি খাবার বেড়ে নিয়ে আসছি।বীরের কথা মতো তিতলি ছাঁদে চলে গেলো’।গিয়ে সত্যি আহান’কে দেখতে পেলো’।তিতলি’কে দেখে আহান উঠে’ এসে।তিতলিকে ছাঁদের দরজা’র বাহিরে রেখে বলল’।

–যাও তো আমাকে বিরক্ত করো না’।ভয় নেই মরে যাব না।একা থাকতে দাও।বলে’ই দরজা লাগিয়ে দিলো’।তিতলি অসহায় দৃষ্টিতে বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে আছে’।

–তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো’।আহানে’র কাছে যাও নি’।

–আহান একা থাকতে চায়।কেউ যেনো’তাকে বিরক্ত না করে।বলে’ই তিতলি চলে গেলো’।

পরের দিন সকাল বেলা,সূর্যের মিষ্টি রোদ শরীরে ওপরে এসে পড়তে’ই ঘুম ভেঙে যায় আহানে’র’।বিরক্ত হয়ে উঠে নিচে চলে গেলো আহান’।বাসার বেশিভাগ মানুষ-ই উঠে পড়েছে’।নিজের রুমের দিকে গিয়ে দরজা বন্ধ পেলে,নিচে চলে আসে’।মায়ের রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে অফিস যেতে নিলে,মিসেস আফরোজ চৌধুরী আটকে দেয়’।

–দাঁড়া কোথায় যাচ্ছিস’।

–অফিসে যাচ্ছি আম্মু’।

–আমাকে বুঝাস এই সাত সকাল বেলা অফিসে যাচ্ছিস।খাবার খাবি তারপরে যেখানে খুশি যেখানে যাবি’।

–আমার ক্ষুদা নেই আম্মু।ক্ষুদা পেলে অফিসে গিয়ে খেয়ে নিব’।

–আমি তোর মা’ নাকি তুই আমার মা’।

আহান মাথা নিচু করে ফেললো’।

–চুপচাপ টেবিলে গিয়ে বস’।আমি খাবার নিয়ে আসছি।বলে’ই রান্না ঘরের দিকে গেলেন’।খাবার মাখিয়ে নিয়ে এসে’।আহানে’র মুখের সামনে ধরলো’।আহান বিনাবাক্য খাবার মুখে পুরে নিলো’।আহানে’র খাবার শেষ হলে,অধরা নিচে আসে’।কোনো কথা না বলে বাসা থেকে বরে হয়ে যেতে লাগলে’।অধরা’র পথ আঁটকে দাঁড়ায় আহান’।

–প্লিজ তুমি যেও না’।শুধু পাঁচটা দিন ওয়েট করো’।আমি নিজে তোমাকে মুক্তি দিয়ে দিব’।দরকার পড়লে আমি,এই পাঁচ দিন বাসায়’ আসবো না।তবু-ও তুমি যেও না।বলে’ই অধরা’কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে,চলে গেলো’ আহান।মিসেস আফরোজা চৌধুরী আহানে’র দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে’।কয়দিন আগে-ও তার সংসারে সুখের কমতি ছিলো না।হঠাৎ কার কুনজর পড়ে আমার সুখের সংসারটা তছনছ হয়ে গেলো’।

এভাবে পাঁচটা দিন কেটে গেলো’।দিন যায় রাতে আসে’।কিন্তু আহান তার কথা মতো পাঁচটা দিন বাসায় আসে নাই’।এত জেদ কই থেকে আসে।একে তো নিজে আমাকে ভুল বুঝছে’।আবার নিজে’ই জেদ দেখায়।না চাইতে-ও বেহায়া চোখ-দুটো আহান’কে দেখার জন্য পাগল হয়ে আছে’।ড্রয়িং রুমে অধীর আগ্রহে বসে অধরা’।চাতক পাখির মতো দরজার দিকে চেয়ে রয়েছে’।কিন্তু আহানে’র আসার নামে কোনো খোঁজ নেই’।

–চোখ-মুখ একদম শুকিয়ে গেছে।শরীরটা-ও আগের থেকে কমে গেছে।এভাবে থাকলে তোমার সাথে,বাচ্চার-ও ক্ষতি হবে।তিতিরে’র কথায় মলিন হাসলো অধরা’।তিতরে’র সাথে গল্প করে।রাতে খেয়ে বিছানায় শুইয়ে শুইয়ে ভাবছে।আহান তাকে মিথ্যা কথা বলল।পাঁচ দিন পার হয়ে যাচ্ছে’।তবু্-ও তার দেখা নেই’।ঘড়িতে সাড়ে এগারো’টা বাজে’।চিন্তিত হয়ে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে’।ঘড়ির কাটা যখন এগারো’টা উনষাট মিনিট’।তখন’ই হন্তদন্ত হয়ে আহান রুমে প্রবেশ করে’।আহান’কে দেখে অধরা উঠে বসে’।অধরা’কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে,আহান বলে উঠলো’।

–হ্যাপি বার্থডে অধরা’।

আহানে’র মুখে জন্মদিনে’র শুভেচ্ছা শুনে,অধরা চমকে উঠলো’।আজ যে,তার জন্মদিন তার মনে-ই ছিলো না’।কিন্তু আহান জানলো কিভাবে’।কিন্তু আহানে’র মুখে অধরা নামটা শুনে নিমিষেই খারাপ মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো’।আমাদের সম্পর্কটা যদি আগে’র মতো থাকতো’।আহান কত আদুরে কণ্ঠে ‘বউরাণী’ আহানে’র বউ,আরো কতকিছু বলে সম্মোধন করত’।অধরা’কে অবাক করে দিয়ে আহান বলল’।

–পেয়ারা খাবে অধরা’।

অধরা’র সত্যি পেয়ারা খেতে ইচ্ছে করছিল।আহানে’র কথার ওপরে ঝটপট বলে উঠলো’।

–হ্যাঁ’।

–আচ্ছা দাঁড়া-ও বলে’ই বাহিরে গেলো’।হাতে পেয়ারা’র ব্যাগ,গোলাপ,আর রজনীগন্ধা ফুল নিয়ে আসলো’।

–এই নাও এগুলো তোমার জন্য’।তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে না-ও।তোমাকে কথাটা দিয়ে ছিলাম না।পাঁচ দিন পরে এসে,তোমাকে নিজ হাতে মুক্ত করে দিব।বোরকা পড়ে গায়ে চাদর মুড়িয়ে নিও।বাহিরে অনেক ঠান্ডা পড়েছে’।আজকে তোমার জন্মদিনে’র শ্রেষ্ঠ উপহার তোমাকে দিব।আমাকে নিয়ে আর কোনো অভিযোগ রাখতে পারবে না।বলে দিলাম।

–এতরাতে আমাকে নিয়ে যাবেন।

–দিনের বেলায় সবাই তোমাকে যেতে দিবে না।ভুলভাল বুঝিয়ে আমার সাথে থাকতে বাধ্য করবে।আর আমি চাই না তুমি বাধ্য হয়ে আমার সাথে সংসার করো’।তুমি চিন্তা করো না’।আমি আমার এক ফ্রেন্ড’কে আমার পিএ হিসেবে নিয়েছি।বাচ্চা হবার পরে তুমি আবার জয়েন হতে পারবে।আমি সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি।তুমি নিজেই নিজেকে চালাতে পারবে।এর জন্য বাধ্য হয়ে কারো কাছে থাকতে হবে না’।এখন কথা কম বলো সবকিছু গুছিয়ে না-ও।

–আপনাদে’র বাসার কোনো জিনিস আমার লাগবে না’।আমার জামা-কাপড় কয়টা শুধু নিব’।

–আচ্ছা ঠিক আছে’।গুছিয়ে নাও।একটু পরে অধরা তৈরি হয়ে আসলো’।অধরা’র হাতে থেকে আহান ব্যাগটা নিয়ে বলল।

–ভারি জিনিস একদম হাতে উঠাবে না।কথা না বলে চুপচাপ চলো’।অধরা কথাটা বাড়ালো না।আহানে’র পেছনে পেছনে গেলো’।যথা সময়ে গাড়ি এসে অধরাদে’র বাসার সামনে দাঁড়ালো’।আহান গাড়ি থেকে নেমে অধরা’কে বলল’।

–আমি তোমার চোখ-দুটো ধরতে পারি’।

–কয়দিনে এতটা পর করে দিলেন’।

–আমি তোমার আপন ছিলাম কবে’।

আহান কোনো কথা না বলে অধরা’র চোখ ধরে ফেললো’।

–কি করছেন’।

–মেরে তো’ আর ফেলছি না।তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।গেলে-ই দেখতে পাবে’।বলে-ই বাসার ভেতরে নিয়ে গেলো’।দরজাটা খোলায় ছিলো’।বাসার সবাই জানে হয়তো তারা আসবে’।পুরো বাসায় আলো জ্বলছে’।অধরা’র রুমটা শুরু অন্ধকার’।অধরা’কে রুমে নিয়ে এসে চোখ খুলে দিতে-ই পুরো রুমে আলো জ্বলে উঠলো’।

–সারপ্রাইজ’।বলল আহান’।

সামনের দিকে তাকাতে-ই অধরা’র দৃষ্টি স্থির হয়ে গেলো’।দু-চোখ ভরে পানি চলে এলো’।দ্রুত গতিতে হাত-পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে।এটা-ও সম্ভব।আহান এটা কিভাবে করতে পারলো’।

চলবে…..