তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব-৩৫+৩৬+৩৭

0
345

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৩৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

অধরা আয়না’র সামনে দাঁড়িয়ে হিজাব পড়ছে।আহানে’র কড়া আদেশ বোরকা ছাড়া আর বাহিরে যেতে পারবে না অধরা।আহান অনেক গুলো বোরকা’ও কিনে নিয়ে এসেছে অধরা’র জন্য।অধরা রেডি হচ্ছিল।তখনি আহান অধরা’কে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে।অধরা আহানে’র দিকে ঘুরে বলল।

–কি হচ্ছে-টা কি ছাড়ুন আমাকে।

–ভোরে আমি তোমাকে কি বলেছিলাম,উত্তর দিলে না তো।এখন বলো রাখবে।

আহানে’র কথা শুনে,অধরা লজ্জায় আহানে’র বুকে মুখ লুকালো।কি অসভ্য ছেলে।দিন দিন বেশি অসভ্য হয়ে যাচ্ছে।আজকে নানি’র বাড়ি চলে যাব।আর আসবো না।আহান দু’হাতে অধরা’কে আবদ্ধ করে রেখেছে।

–তুমি মনে মনে যত-ই ছক কস না কেনো”?আজকে উত্তর না দিলে,তোমার মুক্তি নেই।

অধরা আস্তে করে বলল।

–আমাকে ছাড়ুন অফিসে’র দেরি হয়ে যাচ্ছে।আমার সাথে বেশি বাড়াবাড়ি করলে নানির বাসায় চলে যাব।বলে-ই আহানে’র কাছে থেকে সরে আসতে চাইলে আহান অধরা’র হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।দু’হাত দিয়ে ধরা’র গাল স্পর্শ করে বলল।

–#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব অধরা।খুব যত্নসহকারে রেখে দিব।এত সুন্দর করে রাখবো।যে,আমাকে ছেড়ে তোমার যেতেই ইচ্ছে-ই করবে না।আমাকে একটা সুযোগ দিবে,তোমাকে যত্ন সহকারে রেখে দেওয়া’র।তুমি থেকে যাও না অধরা।আমি সারাজীবন তোমাকে আমার কাছে রেখে দিব।আহানে’র কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিল অধরা।স্থির দৃষ্টিতে আহানে’র দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ করেই আহান’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল।

–সত্যি বলছেন।সত্যি আমাকে সারাজীবন আপনার কাছে রেখে দিবেন।কখনো আমাকে ভুল বুঝবেন না।কখনো আমাকে ঘৃণা করবেন না।কথা দিন কোনোদিন আমাকে ছেড়ে যাবেন না।সারাজীবন আমার সুখে-দুঃখে পাশে থাকবেন।

–তুমি কি ভুল বোঝার মতো,ঘৃণা করার মতো কোনো কাজ করেছো।করে থাকলে আমাকে বলতে পারো।আমি তোমাকে কিছু বলবো না।তবে তোমাকে সাবধান করতে পারি।আমার থেকে কিছু লুকাবে না।কারন আমি তোমার সবকিছু জেনেই তোমাকে ভালোবাসি।

আহানে’র মুখে ভালোবাসি কথা’টা শুনে,অধরা’র ভেতর টাই ধক করে উঠলো।সত্যি আহান তাকে ভালোবাসে।সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে অধরা’র কাছে।ঘুম ভাঙলেই এখন-ই স্বপ্নটা ভেঙে যাবে।ভেতরটায় অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে।দু-চোখ অশ্রুতে ভিজে আসছে অধরা’র।আহানের মুখে থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য আজ কতগুলো দিন ধরে ব্যাকুল হয়ে ছিলো অধরা।আজকে পৃথিবীর সবথেকে সুখী ব্যক্তি মনে হচ্ছে অধরাকে।

–আপনি সত্যি আমাকে ভালোবাসেন।

–পাগল নাকি।তোমার মতো ঝগড়ুটে মেয়েকে আমি কেনো ভালোবাসতে যাব।আমি তো কথার কথা বললাম।বলে-ই অধরা’র মুখ সামনের দিকে তুলল।অধরা’র চোখে পানি দেখে আহান বিচলিত হয়ে বলল।

–তুমি কান্না করছো কেনো”?আমার কোনো কথায় কষ্ট পেয়েছো।আমাকে মাফ করে দাও।আমার কোন কোথায় কষ্ট পেয়েছো বলো।আমি আর কখনো সেই কথা তোমার সামনে বলবো না।

–আপনি কোনো ভুল করেন নাই।সব কান্না কি কষ্টের হয়।কিছু কিছু কান্না সুখের-ও হয় চৌধুরী সাহেব।

–তারমানে আমার বউ রেডি তাই তো।আজ রাতে আমার বউ আমার জন্য অপেক্ষা করবে তো।অফিস থেকে এসে,আলমারি খুলে দেখবে সেখানে কিছু শপিং ব্যাগ আছে।পরে রেডি হয়ে থেকো।আজকে’র রাত’টা আমার চাই।

অধরা আহানে’র বুকে কিল মেরে বলল।

–অসভ্য ছেলে কোথাকার।একটু ভালো করে কথা বললে-ই খালি বাজে কথা বলে।আগে ভাবতাম ছেলেটা অনেক ভালো।এখন দেখছি ভালো না ছাই।

–আমি তোমার কাছে ভিষণ খারাপ হতে চাই অধরা।যতটা খারাপ হলে,তুমি আর আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারবে না।অধরা বিছানার পাশে থেকে ঝাড়ু হাতে নিয়ে আহানে’র দিকে ছুড়ে মারতে যাবে।তখন-ই আহান ওয়াশরুমে চলে যায়।হওয়াচ্ছি ওনাকে খারাপ বলে-ই অধরা নিচে চলে গেলো।

সারাদিন দু’জনের আর কোনো কথা হয় নাই।এই কয়দিনে অফিসে প্রচুর কাজ জমা হয়ে গেছে।দুজনেই আজ খুব ব্যস্ত।সারাদিন কাজ করে,ক্লান্ত শরীর নিয়ে রাত আটটার দিকে বাসায় ফিরলো অধরা।আহানে’র একটু দেরি হবে আসতে।সেজন্য অধরাকে আগে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।অধরা ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতে-ই অধরা’র মায়ের ফোন আসলো।অধরা মায়ের ফোন পেয়ে ভিষণ অবাক হলো।সাথে সাথে কল রিসিভ করলো।অধরা’র মা উত্তেজিত হয়ে বলল।

–অধরা তুই কই।তাড়াতাড়ি তোর নানির বাসায় আয়।তোর নানি অসুস্থ হয়ে পড়ছে।হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।আশেপাশে কেউ আমাদের সাহায্য করছে না।

–মা তুমি সামনের হসপিটালে নিয়ে যাও।আমি এখন-ই আসছি।বলে-ই অধরা তাড়াতাড়ি করে রেডি হতে লাগলো।হাত-পা কাজ-ই করছে না।ভয়ে পুরো শরীর কাঁপছে অধরা’র।অধরাকে তাড়াতাড়ি করে নিচে নামতে দেখে সবাই অধরা’র দিকে তাকিয়ে আছে।

–কি হয়েছে মা”?মাত্র বাসায় আসলে।আবার কোথায় যাচ্ছো।এত তাড়াহুড়ো করে।

–বাবা নানি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ছে।নানিদে’র দেখার মতো কেউ নেই।এখন আমাকে-ই যেতে হবে।

–কি বলছো।কখন অসুস্থ হয়ে পড়লেন।আমাদের আগে জানাবে না।চলো আমি’ও যাচ্ছি তোমার সাথে।বলে-ই ওরা বেড়িয়ে পড়ল।দ্রুত গতিতে গাড়ি চলছে।অধরা আহান’কে কয়েকবার ফোন দিয়েছে।কিন্তু আহানে’র ফোন বন্ধ।রাস্তা যেনো শেষ হচ্ছে না।দ্রুত গতিতে সামনে থেকে একটা গাড়ি অধরাদে’র গাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে।ড্রাইভার যেদিকে গাড়ি ঘোরাচ্ছে।সামনের গাড়িটি অধরাদে’র গাড়ির সামনে বরাবর চলে আসছে।লোকটি ইচ্ছে করে কাজটি করছে।তা বুঝতে বাকি রইলো না কারো।চৌধুরী বাড়ির ড্রাইভার কম যায় কিসে।গাড়ি আবার উল্টো দিকে ঘুরিয়ে নিলো।সামনে থাকা গাড়ির ড্রাইভার হয়তো অবাক হয়েছে।কিন্তু দূর থেকে,না দেখে বোঝা সম্ভব নয়।তার গাড়ির স্পীড কমে যাওয়া দেখে একটু অনুমান করা যাচ্ছে।তিন রাস্তার মোরে এসে গাড়ি অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো।পেছনে থাকা গাড়িটি যখন-ই তাদের পেছনের দিকে যাবে।তার আগে-ই অধরাদের গাড়ির ড্রাইভার দ্রুত গতিতে ওদের ক্রস করে বেরিয়ে গেলো।পেছনের গাড়ির ড্রাইভার বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো।

–আচ্ছা বাবা ওরা কে বলুন তো।আমাদের এভাবে ফলো করলো কেনো।কি উদ্দেশ্য ছিলো।

–উদ্দেশ্য একটা আমাদের ক্ষতি করার।আমাদের যদি কিছু হয়ে যেত।তাহলে এক্সিডেন্ট বলে চালিয়ে দিত।

–সবটা কি সহজেই বুঝে গেলেন আপনি।

–চুলে আমার এমনি এমনি পাক ধরে নাই মা।

অধরা আর কোনো কথা বলল না।বেশ কিছুক্ষন পরে গাড়িটি অধরাদে’র বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো।অধরা জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে শুরু করলো।একটু পরে অধরা’র মা দরজা খুলে দিলো।এত রাতে অধরাকে দেখে বেশ খুশি হলো।কিন্তু অবাক হয়েছে সবচেয়ে বেশি।অধরার মা খুশি হয়ে বলল।

–তুই এত রাতে,আজ যে আসবি আগে বলিস নাই তো।

–নানি এখন কেমন আছে।তুমি আমার সাথে মজা করছো।দেখি সরো নানিকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।তুৃমি তো আমাকে ফোন করে বললে,নানি অসুস্থ।

–পাগল নাকি তুই।আমি কেনো তোকে ফোন করতে যাব।মা তো কালকে অসুস্থ ছিলো।তোকে জানাতে নিষেধ করেছে।তুই চিন্তা করবি তাই।কালকে স্যালাইন করে গিয়েছিল।ডক্টর ঔষধ দিয়ে গেছে।কালকের থেকে অনেক ভালো আছে তোর নানি।আমি আর আকাশ গিয়ে ডক্টর নিয়ে এসে ছিলাম।তাছাড়া তোর ছোট খালা আসছে।এখন আর কোনো সমস্যা নেই।

–ছোট খালা”?মা তুমি আমাকে ফোন দিয়ে বলেছো।নানি অসুস্থ কেউ তোমাদের সাহায্য করতে আসছে।আমাকে তাড়াতাড়ি আসতে বললে।

–কি রে মিনারা মেয়েকে বাহিরে দাঁড়া করিয়ে রাখবি।ভেতরে নিয়ে আয়।তখন-ই অধরার দৃষ্টি যায় শারমিনের দিকে।অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।তারপরে ভেতরে প্রবেশ করে নানির কাছে যায় অধরা।ভালোমন্দ কথা বলে,চলে আসতে চাইলে অধরা’র নানি তাকে আটকে দেয়।কালকে’র আগে যেতে দিবে না।কি আর করার বাধ্য হয়ে অধরা থেকে গেলো।কিন্তু আশরাফুল চৌধুরী থাকলেন না।রাতে খেয়ে চলে আসলেন।অধরা’র শরীর প্রচন্ড ক্লান্ত ছিলো।বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়লো।পরের দিন সকাল বেলা খেয়ে সোজা অফিসের উদ্দেশ্য রওনা দিলো।অফিসে এসে নিজের কাজে লেগে পড়লো।আহান এসে সোজা নিজের কেবিনে চলে গেলো।একবার’ও অধরা’র দিকে তাকালো না।অধরা আহানের যাওয়া’র প্রানে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।প্রতিদিন যাওয়ার আগে একবার অন্তত অধরা’র দিকে তাকিয়ে যায়।আজ কেনো তাকালো না।বড্ড অভিমান হলো অধরা’র।পরক্ষনে অধরা’র কালকের কথা মনে হলো।আহান কতটা আশা নিয়ে ছিলো।খুব রেগে আছে মনে হয়।অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কাজে মনযোগ দিলো।

সন্ধ্যায় অফিস থেকে বেড়িয়ে সোজা চৌধুরী বাড়িতে গেলো অধরা।এখনো অনেক হিসেব মেলানো বাকি আছে।কাল তো খালার সাথে কথা বলতে-ই পারলাম না।ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো অধরা।তিতলি চলে গেছে।কালকে তিতির চলে যাবে।পুরো বাসাটা একদম ফাঁকা হয়ে যাবে।ভাবতে-ই অধরা’র মন খারাপ হয়ে গেলো।সবার সাথে হালকা নাশতা করে নিজের রুমে গেলো।

ঘড়ির কাটা বারোটা ছুঁই ছুঁই আহান এখনো বাসায় ফেরে নাই।অধরা সন্ধ্যা থেকে চাতক পাখির মতো চেয়ে রয়েছে।কখন আহান আসবে।আহানে’র সাথে একটু কথা বলতে পারবে।অধরা’র অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আহান রুমে প্রবেশ করলো।অধরা আহানে’র কাছে এগিয়ে আসলে,আহান অধরাকে পাশ কাটিয়ে কাঁধে থেকে ব্যাগ রেখে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।একটু পরে গোসল করে রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে চলে গেলো।আহান অধরা’র সাথে কথা বলছে না দেখে,অধরা ভেতরে চাপা কষ্ট অনুভব করলো।মন খারাপ করে রুমে বসে রইলো।পরক্ষনে আহানে’র বলা কথা মনে হলো।আলমারি খুলে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ দেখতে পেলো।সেগুলো নিয়ে এসে বিছানায় বসলো।একটা একটা করে ব্যাগ গুলো খুলে দেখলো,লাল রঙের একটা শাড়ী,চুরি,আলতা,ম্যাচিং গহনা,মেহেদী,পায়েল আরো অনেক কিছু আছে।অধরা উপহার গুলো পেয়ে খুব খুশি হলো।আহান রুমে আসছে না।দেখে অধরা শাড়ি পড়ে সুন্দর করে সেজে নিলো।চুলগুলো খোলা রেখে পায়ে আলতা পড়ছে।আলতা দিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকলো অধরা।আলাত শুকিয়ে গেলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো অধরা।না খারাপ লাগছে না।বেশ ভালোই লাগছে।ড্রেসিং টেবিলের সামনে গালে হাত দিয়ে বসে আছে অধরা।আর অপেক্ষা করতে পারছে না অধরা।বাহিরে উঁকি দিয়ে দেখলো আহান কোথাও নেই।বাসার সবাই ঘুমিয়ে গেছে।তাহলে আহান গেলো কোথায়।বাসার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে আহান’কে দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে রুমের দিকে যাবে।তখনই মনে হলো ছাঁদে দেখা হয় নাই।অধরা ধীর পায়ে ছাঁদের দিকে এগোতে লাগলো।সেখানে গিয়ে আহানকে দেখতে পেলো।ছাঁদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।মাঝে মাঝে চাঁদের দিকে তাকাচ্ছে।আবার চোখ নামিয়ে নিচ্ছে।অধরা আহান’কে ভয় দেখানোর জন্য আস্তে আস্তে গিয়ে আহানকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে হাউ করে উঠলো।কিন্তু আহানের কোনো হেলদোল নাই।আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।

–আপনি রাগ করছেন।

–এভাবে কাউকে ভয় দেখালে মানুষ তো দূর থাকলো।ভূত ও ভয় পাবে না।বলল আহান।

–আপনি ভয় পান নাই।

–এখানে আসলে কি মনে করে।

–আপনি রাগ করছেন কেনো”?

–আমি রাগ করি নি।

–তাহলে কথা বলছেন না কেনো”?

–তাহলে এখন কে,কথা বলছে।

–কাল থেকে কথা বলছেন না।

–অনেক রাত হয়েছে।যাও ঘুমিয়ে পড়ো।সারাদিন কত কাজ করো।

–আপনি-ও চলুন আপনি তো আমার থেকে বেশি কাজ করেন।

–তোমাকে যেতে বলছি না।একটু ধমক দিয়ে-ই বলল আহান।অধরা চমকে উঠলো।আহানে’র এমন ব্যবহারে অধরা খুব কষ্ট পেলো।অধরা চলে যাওয়া’র এক পা এগোতে-ই আহান অধরা’র হাত ধরে বলল।

–অধরা স্যরি আমি তোমার সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলতে চাই নাই।আমি…আর বলতে পারলো না।অধরা’র দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা এত সুন্দর করে কখন সাজলো।মেয়েটা’কে না দেখে-ই কষ্ট দিয়ে ফেললাম।আমি তো ওকে কষ্ট দিতে চাই নাই।অধরা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।দু-চোখ পানি এসে ছলছল করে।আহান উত্তেজিত হয়ে অধরা’কে বুকে টেনে নিয়ে বলল।

–প্লিজ অধরা কান্না করো না।আমি তোমার কান্না সয্য করতে পারি না।বুকের মাঝখানে টাই প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করি।আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম।আমি রাগ করলে তুমি আমার রাগ ভাঙাতে আসো কি না।আমি রাগে করলে তোমার কোনো যায় আসে কি না।আমি আর এমন ভুল করবো না।বিশ্বাস করো আমি একটুও রেগে নেই।তোমার ওপরে।বলে-ই অধরা’র সামনে তুলে পরম যত্নে অধরা’র চোখের পানি মুছিয়ে দিলো।অধরা কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠলো।

–আমি আপনাকে বলতে চেয়েছিলাম।আমি আপনাকে কথা দিয়ে ছিলাম।আপনার অনুমতি ছাড়া কোথাও যাব না।কালকে আপনাকে অনেক বার ফোন দিয়ে ছিলাম।কিন্তু আপনি ফোন ধরেন নাই।বিশ্বাস করুন আমার নানি খুব অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল।তাই আমি আপনাকে না বলে-ই চলে গিয়েছিলাম।বাবা-ও ছিলো আমার সাথে।

–আমি জানি,আমি সব জানি আমাকে এত কৈফিয়ত দিতে হবে না।যখন চাইবো তখন দিলেই হবে।

অধরা কিছু বলতে যাবে।তার আগেই আহান অধরাকে থামিয়ে দিলো।অধরা’র অধরযুগল নিজের আয়ত্তে করে নিলো।অধরা চোখ বন্ধ করে নিলো।আজ কেনো জানি মানুষ টাকে বাঁধা দিতে ইচ্ছে করলো না।বেশ কিছুক্ষণ পরে অধরা’কে ছেড়ে দিয়ে,অধরা’র কাঁধে মাথা রেখে বলল।

–দিবে কি অনুমতি তোমাকে আমার করে নেওয়া’র।অধরা কিছু বলল না।চুপ করে মাটির নিচে তাকিয়ে আছে।ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে।আহান অধরা’কে নিজের দিকে ঘুরালো।অধরা সাথে সাথে দুই হাতে দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো।আহান অধরা’কে কোলে তুলে নিলো।সাথে সাথে অধরা দু-চোখ মেলে তাকালো।আহানের দিকে একবার নজর নিয়ে,চোখ নামিয়ে নিলো।আজকাল মানুষটাকে দেখলে অধরা’র কেমন জানি সরম লাগে।দু’হাতে আলতো করে আহানে’র গলা জড়িয়ে ধরলো অধরা।আহান অধরা’র কানের কাছে ফিসফিস করে বলল।

–নিরবতা সন্মতির লক্ষন।তবে কি আমি তাই ধরে নিব।আহানে’র এমন কথা শুনে লজ্জা লতা গাছের মতো মিইয়ে গেলো অধরা।আহানে’র বুকে নিজের মুখ লুকালো।আহান রুমে এসে অধরা’কে বিছানায় শুইয়ে দিলো।তারপরে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে,অধরা’র কাছে এসে,অধরা’র কপালে আলতো করে অধর ছুঁইয়ে দিলো।অধরা’র হাতের ভাজে নিজের হাত মিলিয়ে দিলো।এই প্রথম এত ভালোবাসা।এই প্রথম এত কাছে আসা।দু’জনের মধ্যে কিঞ্চিৎ পরিমান দুরত্ব নেই।পূর্ণতার রেশ ঘিরে ধরলো আহান আর অধরা-কে,কেউ চাইলে’ও আজ তাদের আলাদা করতে পারবে না।তাদের ভালোবাসার পূর্ণতা দেখে স্বয়ং চাঁদ’ও মুখ লুকিয়ে ফেললো।

চলবে…..

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৩৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

‘পরের দিন সকাল অধরা’র আগে ঘুম ভাঙলো।ঘুম ভাঙতে-ই দেখলো আহান তাকে দু’হাতে আবদ্ধ করে রেখেছে।কাল রাতে’র কথা মনে পড়তে-ই লজ্জায় মিইয়ে গেলো অধরা।আহানে’র কপালে’র অধর ছুঁইয়ে উঠে বসলো অধরা।আহান বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।অধরা শাড়ী ঠিক করে,জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।একটু পরে,গোসল করে এসে সোজা নিচে চলে গেলো।আজকে শুক্রবার।অফিস যাওয়া’র তাড়া নেই।অধরা নিচে এসে দেখলো,আশা বাসার কাজের মেয়েটি’র সাথে খুব সুন্দর ভাবে কাজ করছে।অধরা’ও খুব ইচ্ছে হলো,ভাবির সাথে কাজে সাহায্য করবে।তাই কোনো কথা না বলে রান্না ঘরে চলে গেলো।অধরা’কে এত সকাল সকাল দেখে আশা অবাক হবার ভান ধরে আশা বলল।

–আরে আধু রাণী যে,এত সকাল সকাল রান্না ঘরে এসেছো।তা-ও আবার সাত সকাল বেলা গোসল করে।ঠান্ডা লাগে নাই।

আশার কোথায় অধরা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।অধরা’র যদি অদৃশ্য হয়ে যাওয়া’র কোনো উপায় থাকতো।তাহলে এখন-ই আশার সামনে থেকে উধাও হয়ে যেত।আশার কথার মাঝে-ই তিতির পেছনে থেকে বলে উঠলো।

–ভাবি অধরা’র না জানি ঠান্ডা লাগে নাই।তোমার বুঝি খুব ঠান্ডা লেগেছে।আমার জানা মতে তুমি অধরা’র আগে গোসল করে রান্না ঘরে প্রবেশ করেছো।তিতিরে’র কোথায় আশা’ও লজ্জা পেলো কিন্তু প্রকাশ করলো না।ক্রোধিত দৃষ্টিতে তিতিরে’র দিকে তাকালো।

–ফালিজ মেয়ে ভাবি হই আমি তোমার।সন্মান করে কথা বলো।

–আমি’ও তো সেটাই বলছি ভাবি।বড়’রা ছোটদের যা শিখাবে,ছোটরা তাই শিখবে।তুমি অধরা’কে বললে,আমি তোমার থেকে শিখে,তোমাকে বললাম।

–তবে রে।

অধরা বাঁচতে চাইলে পালা’ও।বলে-ই অধরা’র হাত ধরে দৌড়ে দিলো তিতির।তিনজন গোল গোল হয়ে ড্রয়িং রুমে ঘুরছে।আফরোজা চৌধুরী রুমে থেকে নাশতা করার জন্য ড্রয়িং রুমে আসছিলো।তিনজনে’র খুনসুটি দেখে থমকে গেলেন।মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওদের হাসি-খুশি মুখ গুলো দেখছে।নিজে’র পরিবারে’র এত সুখ-শান্তি দেখে, মিসেস আফরোজা চৌধুরী’র কলিজা শীতল হয়ে গেলো।

–তিতির দাঁড়াও বলছি।আমি যদি তোমাকে ধরতে পারি।তাহলে আজ তোমার খবর আছে।আমি তোমাকে দাঁড়াতে বলছি।বড়দের কথা শুনো না।তিতলি’র মতো বেয়াদব হয়ে যাচ্ছো নাকি।মুখ ফসকে বলে ফেললো আশা।সাথে সাথে মুখ চেপে ধরলো।এটা আমি কি বলে ফেললাম।তিতলি তো আমার ছোট বোন।আমি কি করে ওকে বেয়াদব বললাম।নিমিষে-ই আশার মন খারাপ হয়ে গেলো।আশা-কে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে তিতির নিজে-ই আশার কাছে এলো।আশা চলে যেতে লাগলে তিতির বলল।

–ভাবি আজ অন্তত মন খারাপ করো না।আজকে আমি চলে যাব।আমি জানি তুমি আমাদের কতটা ভালোবাসো।তুমি হয়তো উত্তেজিত হয়ে বলে ফেলেছো।আমি কিছু মনে করি নাই।

আশার আর তিতিরে’র সম্পর্কটা একদম নিজে’র বোনে’র মতো।কেউ দেখলে বলবে-ই না।এদের সম্পর্কটা ভাবি ননদে’র।আশা তিতির’কে ছোট বোনের মতো ভালোবাসে,শাসন করে,ভুল করলে বকে।তিতির ও আশা বলতে পাগল আশার কাছে-ই নিজের মনের কথা গুলো বলতে পারে তিতর।আশা অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে আছে।

–বিশ্বাস করো তিতির।আমি তিতলি’কে নিয়ে এসব কথা বলতে চাই নাই।কিভাবে যে,মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলো।তিতলি তো আমার ছোট বোন তাই না।আমার পরিবারে’র সদস্য।

–আমি জানি ভাবি তোমাকে এত কৈফিয়ত দিতে হবে না।মাঝে মাঝে আমরা এমন কিছু কথা বলে ফেলি,
যেটা আমার বলতে চাই না।কিন্তু আমাদের মুখ দিয়ে সেই কথা বের হয়ে যায়।পরে কথাটা ভেবে আমাদের প্রচুর অনুশোচনা হয়।এখন তোমার তাই হচ্ছে।আমি বলি কি এসব নিয়ে চিন্তা না করে।চিন্তা করো কিভাবে পরিবারে আরেকটা সদস্য বাড়ানো যায়।চৌধুরী বাড়ি একদম ফাঁকা হয়ে গেছে।আমি চলে গেলাম।তিতলি’ও চলে গেলো।ভাইয়া’কে বলবো নাকি।অসভ্য মেয়ে বলে-ই আশা তিতির’কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো আশা।

–আমি সত্যি অনেক ভাগবতী মেয়ে জানো তিতির।এত ভালো একটা পরিবার পেয়েছি।তোমার মতো বোন পেয়েছি।বাব-মা পেয়েছি।একজন চরিত্রবান স্বামী পেয়েছি।একটা মেয়ে’র সুখী হতে হলে,এর থেকে বেশি কিছু লাগে না।

–এই তো লক্ষি ভাবি আমার।বোকার মতো মন খারাপ করলে।এখন যদি মন খারাপ করো তাহলে খালামনি ডাক শুনতে পারবো না।আশা তিতির’কে ছেড়ে দিয়ে,তিতিরে’র কান টেনে বলল।

–আমাকে বলছো কেনো”?বাড়িতে বউ আমি একটাই নাকি।আরো বউ আছে অধরা’কে বলতে পারছো না।দু’জনের দৃষ্টি অধরা’র দিকে।অধরা গোল গোল চোখ করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।দু’জন কিছু বলতে যাবে।তখনই আফরোজা চৌধুরী আসলেন।মা হয়ে মেয়েদের এসব কথা-বারতা শোন সত্যি-ই অনেক লজ্জা জনক।তিনি ড্রয়িং রুমে এগিয়ে আসলেন।সবাই একদম ভদ্র মেয়ে হয়ে গেলো।আশরাফুল চৌধুরী খবরে’র কাগজ নিয়ে সোফায় এসে বসলেন।আহানে’র বড়ভাই ফোনে ভিডিও দেখতে দেখতে এসে বাবার থেকে দুরত্ব বজায় রেখে বসলো।আহান ফ্রেশ হয়ে একদম ফুরফুরে মেজাজে নিচে নামলো।এসে-ই ভাইয়ে’র কোলে ধপাস করে শুইয়ে পড়ল।সাথে সাথে আহানে’র বড় ভাই চিৎকার দিয়ে উঠলো।

–ও মা আমার পায়ের ওপরে হাতি পড়ছে।তাড়াতাড়ি আমাকে বাঁচাও।বলল আহানের বড় ভাই।

–এই তুই আমাকে হাতি বললি কেনো”?বলল আহান।

–তুই আমার কোলে শুইয়ে পড়লি কেনো”?

–আমার ভাই আমার ইচ্ছে,দরকার পড়লে আমার ভাইয়ে কোলে উঠে ঘুরে বেড়াবো।

–এ্যাঁ আমার বইয়ে গেছে।তোর মতো হাতিকে কোলে নিয়ে আমি ঘুরে বেড়াবো।

–আম্মু দেখছো,ভাইয়া আমাকে হাতি বলছে।

–আমি জানি নে বাপু।আমাকে পাগল মনে হয়।আমি তোমাদের দু’ভাইয়ের মাঝে কথা বলে বোকা হবো নাকি।তোমাদের দু’ভাইয়ের মাঝে যে,কথা বলবে সে,নিজেই খারাপ হয়ে যাবে।তোমরা ঝগড়া করো ঠিকি।কিন্তু দিনশেষে এক হয়ে যাও।খারাপ হয় সে,যে তোমাদের মাঝে কথা বলে।

দুই ভাই অসহায় দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।আহানে’র বড় ভাই আহানে’র চুলে হাত দিয়ে নাড়ছে।আহান ড্যাব ড্যাব করে এখনো মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।একটু পরে দুই ভাই গল্প জুড়ে দিলো।সেই কি বকবক টাই না জুড়েছে।কতদিন পরে দুই ভাই মন খুলে এভাবে গল্প করে।ওরা কি বলছে,নিজেরা-ই হেঁসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে।ধৈর্যের মাত্র শেষ করে ফেলছে দুই ভাই।মেয়েদের থেকে-ও বেশি গল্প জুড়েছে।কেউ এদের দেখলে বলবে এরা ছেলে মানুষ।আশরাফুল চৌধুরী বিরক্ত হয়ে খবরে’র কাগজ নিয়ে দূরে সরে গেলো।ওদের বকবকের কারনে খবরের কাগজ পড়তে পারছে না,ঠিক মতো।খুশিতে আফরোজা চৌধুরী’র চোখে পানি এসে জমা হলো।কখনো ভেবেছিল তার সংসারটা আবার পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।এত সুখ-শান্তি তার পরিবারে ধরা দিবে।এত সুখ সইবে তো।কারো কুনজর যেনো আমার পরিবারে না পড়ে।আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করে,দোয়া চাইলেন আফরোজা চৌধুরী।

–অধরা,এই অধরা এদিকে একটু আসো তো।বলল আহান।

–যাও তোমার ডাক পড়েছে।অধরা আলু কাটছিলো।আহানে’র ডাক শুনে হাত ধুয়ে আহানে’র কাছে গেলো।অধরা’কে দেখে আহান বলল।

–আমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।আমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসো।

–আপনি খালি পেটে কফি খাবেন।

তখন-ই আহানের বড় ভাই বলল।

–পেটুকে’র পেট খালি আছে নাকি বোন।ওর পেট কাটালে একশো জনের খাবার বের হবে।

আহান ভাইয়ে’র দিকে বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকালো।অধরা কোনো কথা না বলে,রান্না ঘরে চলে গেলো।কফি বানিয়ে আহানে’র হাতে দিয়ে চলে আসতে নিলে,আহান আবার ডাক দিলো।অধরা ঘুরে দাঁড়ালো।

–রুম থেকে ল্যাপটপ নিয়ে আসো।অফিসে’র কিছু জরুরি কাজ আছে শেষ করতে হবে।অধরা বাধ্য মেয়ে’র মতো ল্যাপটপ নিয়ে আসতে চলে গেলো।ল্যাপটপ এনে আহানে’র হাতে দিলো।আহান আবার বলল।

–প্লিজ রাগ করো না আমার ফোন টা একটু দিয়ে যাবে।অধরা আবার উপরে গিয়ে ফোন এনে দিলো।আশা আর তিতির হাসছে আগে দুজনের সম্পর্ক টম এন্ড জেরির মতো ছিলো।এখন তাদের সম্পর্কটা ভালোবাসায় ভরা।সকালে সবাই নাশতা করে যে,যার মতো বেড়িয়ে গেলো।দুপুরে’র আগে সবাই চলে আসলো।গোসল করে ছেলেরা মসজিদে চলে গেলো।মেয়েরা বাসায় নামাজ পড়ে নিলো।অধরা নামাজ পড়ে আহানের জন্য অপেক্ষা করছে।আহান রুমে আসতে-ই অধরা দৌড়ে আহানের কাছে গেলো।

–জিলাপি কোথায়”?অধরা’র কথা শুনে আহান কিছুটা ভরকে গেলো।

–মানে”!

–আপনি যে,মসজিদে নামাজ পড়তে গেলেন।আপনাকে জিলাপি দেয় নাই ওরা।

অধরা’র কথা শুনে,আহান কি রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারছে না।

–আমি নামাজ পড়তে গিয়ে ছিলাম।জিলাপি নিয়ে আসতে যায় নাই।তোমাকে আমি বাজারে থেকে অনেক গুলো জিলাপি কিনে এনে দিব।

–বাজারে’র জিলাপি আর মসজিদের জিলাপি এক হলো নাকি।আপনি আমার জন্য জিলাপি নিয়ে আসেন নাই।আপনার সাথে কথা নেই।বলে-ই অধরা চলে যেতে নিলে,আহান অধরা’র হাত ধরে কাছে নিয়ে আসলো।

–তুমি কি ছোট বাচ্চা।যে,এমন জেদ করছো।রাগ করো না।বিকালে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব।অধরা বারবারই ঘরতে ভালোবাসে।আহানে’র কথা শুনে বলল।

–পুরো বিকেল আজ আমাকে নিয়ে ঘুরতে হবে রাজি।

–রাজি এখন আমাকে চুমু দাও।অধর দেখিয়ে বলল আহান।অধরা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।অধরা কিছু বলছে না দেখে,আহান নিজে-ই অধরা’র অধরে নিজের অধর ছুঁইয়ে দিলো।তারপরে অধরা’কে বুকের সাথে মিলিয়ে নিলো।

বিকেলে প্রায় হয়েই আসছে।অধরা রেডি হয়ে আহান’কে ডাকতে শুরু করলো।দুপুরে খেয়ে আহান ঘুমিয়েছে।এখন’ও উঠার নামে নাম নেই।অধরা ডেকে ডেকে ক্লান্ত হয়ে গেলো।আহান উঠছে না দেখে বোরকা খুলতে যাবে।তখনই আহান অধরা’র হাত নিজের কাছে বসালো।

–আপনি জাগা থেকে-ও উঠছেন না।আপনি যাবেন না।বললে-ই পারতেন।শুধু শুধু মিথ্যা আশা দেওয়ার কি ছিলো।

–তোমাকে একটা কথা বলবো।আমার কাছে এসো।

–আপনি আর আমি ছাড়া কেউ নেই।আপনি বলুন।

–কথাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আমার বুকে মাথা রাখো।কানে কানে বলবো।আহানে’র কথা শুনে মনে হচ্ছে সত্যিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা।তাই অধরা আহানে’র মুখের কাছে কান নিয়ে গেলো।আহান অধরাকে দু’হাতে আবদ্ধ করে ফেললো।অধরা’র কানে ফিসফিস করে বলল।

–বরের ঘুম টাও ঠিক করে ভাঙতে পারো না।কোথায় আদর করে ভালোবাসে ভুলিয়ে ভালিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তুলবে।

–আমি এত ন্যাকামি করতে পারি না।

–খালি ঝগড়া করতে পারো।

–যাব-ই না আপনার সাথে’।

–আমার-ই ভালো আমার টাকা বেঁচে যাবে।

অধরা উঠে মুখ ঘুরিয়ে বসলো।আহান উঠে অধরা’কে জড়িয়ে ধরে ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলল।

–একটু বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।আহান ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে নিলো।অধরা আগের ন্যায় বসে আছে।কোনো হেলদোল নেই।আহান অধরা’র হাত ধরে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।ফুটপাতের রাস্তা ধরে হাঁটছে দু’জন।কারো মুখে কোনো কথা নেই।এভাবে ঘুরতে আসার কোনো মানে হয়।আহান রেগে কিছু বলতে যাবে।তার আগেই অধরা ভারি কণ্ঠে বলে উঠলো।আমি ফুচকা খাব।রাস্তার বিপরীত পাশে গাছের নিচে ফুচকাওয়ালাকে দেখিয়ে দিয়ে বলল অধরা।আহান দেখেশুনে রাস্তা পার হয়ে ফুচকার দোকানে এসে ফুচকাওয়ালাকে এক প্লেট ফুচকা দিতে বলল।

–এক প্লেট কেনো”?আপনি খাবেন না।

–না।

–কেনো”?

আহান আর কোনো কথা বলল না।ফুচকাওয়ালা ফুচকা বানিয়ে দিলে অধরা খেতে শুরু করলো।আহান অন্য দিয়ে ঘুরে তাকিয়ে আছে।অধরা একটা ফুচকা আহানের মুখের সামনে ধরতেই আহান খুশি হয়ে খেয়ে নিলো।ফুচকা খেয়ে দু’জন আবার হাঁটা শুরু করলো।অধরা’র বোরকা’য় কিছু একটা আটকে যাওয়ায় অধরা কিছুটা পিছিয়ে পড়ল।বোরকা ঠিক করে পেছনে তাকাতেই একটা হিস্টপুষ্ট মোটা একটা কুকুর দেখতে পেলো।অধরা সচরাচর কুকুর দেখে ভয় পায় না।গ্রামে থাকতে কত কুকুরকে সে নিজেই ভয় দেখিয়েছে।কিন্তু এত বড় কুকুর আগে কখনো দেখে নি অধরা।কেমন জানি ভয় লাগছে অধরা’র।কুকুরটি অধরা’র দিকে-ই তাকিয়ে আছে।অধরা কি মনে করে দৌড়ে দিলো।আহান কয়েক হাত দূর চলে এসেছে অধরা’র থেকে।অধরা দৌড়ে গিয়ে আহানের হাত ধরে বলল।

–আহান কুত্তা”!

অধরা’র কথা শুনে আহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো।অধরা এমন ভাবে বলছে।যে,কেউ মনে করবে তাকে বলা হয়েছে।

–অধরা তুমি ভুলে যাচ্ছো,আমি তোমার স্বামী হই।আমি তোমার থেকে সন্মান টুকু আশা করতেই পারি।আহানের কথা শুনে অধরা অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো।

–আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।আমি আপনাকে বলি নাই।আপনি পেছনে তাকান।

আহান পেছনে তাকিয়ে বোকা বনে গেলো।সত্যি তার পেছনে মোটা গঠনের একটা কুকুর দাঁড়িয়ে আছে।আহান কুকুরটির দিকে এগিয়ে গেলো।কুকুরটি দৌড়ে পালালো।

–স্যরি আমি মনে করেছি তুমি আমাকে বলেছিলে।আসলে প্রথম দিন আমাকে,

–হয়েছে আর বলতে হবে না।বলে-ই অধরা আগে আগে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে।আহান দৌড়ে অধরা’র কাছে এসে বলল।

–অধরা ফুল নিবে।

–হ্যাঁ।

–এখানে বসো আমি তোমার জন্য ফুল নিয়ে আসছি।বলেই আহান চলে গেলো।একটু পরে একটা হাতে চুরি আরেক হাতে ফুল নিয়ে হাজির হলো।ফুল আর চুরি পেয়ে অধরা খুব খুশি হলো।আহানের মেয়েটাকে এইজন্য সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।মেয়েটা ছোট ছোট উপহার পেলে খুব খুশি হয়।মেয়েটাকে খুশি করার জন্য বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না।পুরো বিকেল দু’জন ঘুরে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এলো।বাসায় আসতে-ই আহানের চোখে মুখে অন্ধকার নেমে এলো।

চলবে…..

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৩৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

–এতক্ষণ লাগে তোদের আসতে,আপন সেই কখন থেকে তোদের জন্য অপেক্ষা করছে।বলল তিতির।

নিমিষে-ই আহানে’র হাসোজ্জল মুখে মেঘের আধার ঘনিয়ে এলো।বহুকষ্টে নিজের রাগ সংযত করে যাচ্ছে।ধীর পায়ে আহান বাসার ভেতর প্রবেশ করলো।অধরা আহানে’র পাশে দাঁড়ালো।আপন এসে দৌড়ে আহান’কে জড়িয়ে ধরে বলল।

–কেমন আছিস ভাই আমার।আমাকে কি ভুলে গেছিস।এখনো আমার ওপরে অভিমান জমিয়ে রেখেছিস।আহান ধাক্কা দিয়ে আপন’কে দূরে সরিয়ে দিলো।

–আমাকে ছুঁইয়ে দেখিস না আপন।তুই আমাকে ছুঁইয়ে দিলে,ঘৃণায় আমার পুরো শরীর রি রি করে উঠে।এখন-ই আমার বাসা থেকে বের হয়ে যা’।

–কি রে’ আহান তুই এমন করে কথা বলছিস কেনো আপনে’র সাথে,ছেলেটা কতদিন পরে আসলো বল তো।কি রে আপন তুই এতদিন কোথায় ছিলি।আপনে’র প্রতি তিতরে’র ভালোবাসা-ই হয়ে উঠলো বিষ।আহান নিজে’র নিয়ন্ত্রণ ক্ষনে ক্ষনে হারিয়ে ফেলছে।অধৈর্য হয়ে নিজে’র প্রাণ প্রিয় বোনকে বলে’ই ফেললো।

–তোমার যে,আজ শশুর বাড়ি যাওয়া’র কথা ছিলো।তা গেলে না যে’।

আহানে’র মুখে এমন কথা শুনে,তিতির অবাকে’র শেষ পর্যায়ে চলে গেলো।সে,সত্যি দেখছে।তার প্রাণ প্রিয় ভাই তাকে এমন কথা বলল।আহান সে,দিকে পাত্তা না দিয়ে আপনে’র কলার ধরে শাসিয়ে বলল।

–রাসকেল কোন সাহসে,চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করেছিস।এখন-ই বেড়িয়ে যা’।দারোয়ান চাচা তোকে কিভাবে বাসার মধ্যে প্রবেশ করতে দিলো।আমি বলে ছিলাম না।আপন নামের কোনো ব্যক্তি চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করবে না।তবে কেনো এই জানোয়ারটা’কে বাসার মধ্যে নেওয়া হলো।

অধরা ড্যাব ড্যাব করে আহানে’র দিকে তাকিয়ে আছে।সম্পূর্ণ নতুন আহান’কে দেখছে।এটা কি সেই আহান একদম শান্তি-শিষ্ট খুব সহজে রেগে যায় না।অধরা’র ভাবনার মাঝে-ই আপন লালসার দৃষ্টিতে অধরা’র দিকে তাকায়।আহানে’র কাছে এসে বলল।

–এটা কে’ রে’ আহান নিশ্চয়ই তোর বউ অধরা তাই না।দেখতে মাশাল্লাহ রুহি’র থেকে-ও দিগুন সুন্দরী।তোর বউ আমাকে বুকের মাঝখানে আগুন জ্বালিয়ে দিলো রে’।এই দেখ আমার বুকের ভেতরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।তোর বউকে আমার চাই।কথাটা শেষ হবার সাথে সাথে আহান আপনে’র গালে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।গলা চেপে ধরে বলল।

–জানোয়ার,একদম এক ভুল দ্বিতীয়বার করার চেষ্টা করিস না।প্রথমবার ছেড়ে দিয়েছি।এবার জানে মেরে ফেলবো।তুই যে,চোখ দিয়ে আহানে’র প্রাণে নজর দিয়েছিস।আজ আমি তোর দু-চোখ উপরে ফেলবো।

আপন আহানে’র কথার উত্তর দিতে পারলো না।খুব শক্ত হাতে-ই আহান গলা চেপে ধরেছে।আপনে’র অর্ধেক জিভ বের হয়ে এসেছে।এখনই আহান’কে না থামালে,আপনে’র মৃত্যু অনিবার্য।অধরা ধরতে গেলে,আহান অধরা’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।এতটাই হিংস্র হয়ে গেছে আহান।আহানে’র এমন হিংস্রতা দেখে বাড়ির প্রতিটি মানুষের কলিজায় দাগ কেটে গেলো।আহান আপন’কে ছেড়ে দিতেই আপন কাশতে কাশতে নিচে পড়ে গেলো।মুখ দিতে রীতিমতো রক্ত উঠতে,শুরু করে দিয়েছে।নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে,জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আপন।বাসার সবাই নীরব দর্শকের মতো ভূমিকা পালন করছে।আহানে’র রাগ সম্পর্কে বাসার সবাই বেশ অবগত।ছেলেটা খুব সহজে রাগে না।আপনে’র সাথে কি এমন হয়েছে।যার,জন্য ছেলেটা এতটা হিংস্র হয়ে উঠলো।হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে,তিতির দৌড়ে এসে,
আপন’কে টেনে তুলল।তারপরে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের করে পালিয়ে যেতে সাহায্য করলো।আহান চাকু হাতে ড্রয়িং রুমে আসতে-ই আপন’কে দেখতে না পেয়ে বিকট শব্দ করে,চিৎকার দিয়ে উঠল।কেঁপে উঠলো চৌধুরী বাড়ির প্রতিটি কোণা।ড্রয়িং রুমে’র কাঁচের টেবিল’টা লাথি দিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেললো।কয়েক মিনিটে’র মধ্যে পুরো ড্রয়িং রুম তছনছ হয়ে গেলো।

–আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে কাজ-টা একদম ঠিক করলে না আপু।এর পরিনাম খুব ভয়াবহ হবে।আহানে’র শহরে বেইমান প্রবেশ নিষিদ্ধ।আজ তুমি সেই বেইমানে পালাতে সাহায্য করলে।আজ আমার অধরা’র দিকে কুনজর দিয়েছে।ওর চোখ তুলে ফেলতাম।কেনো করলে আপু।আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করবো না আপু।কখনো না।বলে-ই আহান নিজের রুমে চলে গেলো।হাসোজ্জল বাড়িটা নিমিষে-ই স্তব্ধ হয়ে গেলো।কারো মুখে কোনো কথা নেই।পিনপিনে নীরবতা চলছে ড্রয়িং রুমে,সবার মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলছে।অধরা’র কাছে সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।তার শান্ত-শিষ্ট বরটা’র মাঝে-ও এতটা হিংস্রতা লুকিয়ে আছে।কই আগে তো কখনো প্রকাশ করে নি।আহানে’র ভালোবাসা পরিমান এতটাই গভীর।এতটা ভালোবাসা মানুষের মধ্যে।এত ভালোবাসা আমার জন্য লুকিয়ে রেখেছে।কই কখনো প্রকাশ করে নি তো’।যে,ছেলে তার বউয়ের দিকে কুনজরে তাকানো’র শাস্তি এভাবে দিতে পারে।কেউ যদি তার বউ’কে ছুঁইয়ে দেয়।তাহলে তার কি অবস্থা হবে।ভাবতে-ই অধরা’র পুরো শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো।নীরবতা কাটিয়ে আশরাফুল চৌধুরী বললেন।

–ড্রয়িং রুম’টা পরিষ্কার করিয়ে দাও।ছেলেটা আমার এত রেগে গেলো কেনো”?আপন কানে কানে কি জানি বলল।শুনে’ই রেগে গেলো।সুখের সংসারে আবার নতুন অশান্তি চলে এলো।এখন আহান’কে কেউ বিরক্ত করবে না।মাথা ঠান্ডা হলে,আস্তে ধীরে শুনে নিব।সবাই সন্মতি জানালো।সবাই মিলে,ড্রয়িং রুম পরিষ্কার করে নিলো।আজ কারো মুখে কোনো কথা নেই।সবাই ড্রয়িং রুমের ফ্লোরে বসে আছে।আহান ওপরে গিয়ে দরজা লাগিয়েছে।আর রুম থেকে বের হয় নাই।ঘড়ির কাটা বারোটা ছুঁই ছুঁই আহান দরজা খুলছে না।দেখে,অধরা’র মনে অজানা ভয় ধরা দিলো।দৌড়ে গেলো আহানে’র দরজার সামনে।নিজেকে আর স্থির রাখতে পারছে না।

–আহান দরজা খুলুন।সেই কখন ওপরে এসেছেন।প্লিজ দরজা খুলুন।আমার অনেক চিন্তা হচ্ছে।এভাবে নিজে’কে কষ্ট দিবেন না।কি হয়েছে আমাকে বলুন।আমি আছি না,আপনার সব দুঃখ কষ্ট দূর করে দিব।একবার শুধু দরজা’টা খুলুন।

জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে আর চিৎকার করে কথাগুলো বলছে।আহানে’র কোনো সাড়াশব্দ নেই।অধরা’র মনে ভয় জেঁকে বসেছে।রেগে গিয়ে বলল।

–আপনি দরজা খুলবেন।নাকি আমি দরজা ভেঙে ফেলবো।

এবার’ও আহানে’র কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেলো না।অধরা’র কেমন জানি দম বন্ধ হয়ে আসছে।নিশ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে,সবকিছু কেমন জানি বিষাক্ত লাগছে অধরা’র কাছে।দরজা ধাক্কিয়ে নিস্তজ হয়ে,নিচে বসে পড়ল অধরা।সময়ে’র সাথে কান্নার বেগে বেড়ে চলেছে।সবাই এসে,আহান’কে ডেকে গেলো।কারো ডাকে সাড়া দেয় নি আহান।কয়েক বছর আগে আহান এমন করতো।যখন রুহি চলে গিয়েছিল।আজ আবার’ও এমন পাগলামি করছে আহান।তবে কি আহানে’র পাগলামি রুহিকে নিয়ে নয়।অন্য কিছু নিয়ে।কি সেটা কেউ রহস্যের সমাধান করতে পারলো না।অধরাকে সবাই মিলে কত করে বোঝালো।সকালে আহান ঠিক দরজা খুলবে।আজকে’র রাতটা অন্য রুমে পার করে দাও।অধরা মানতে নারাজ জেদ ধরে।আহানে’র রুমে দরজা’র কাছে বসে রইলো।ঘড়ির কাটা প্রায় রাত তিনটা ছুঁই ছুঁই,আহান দরজা খুলে বাহিরে আসলো।চোখ গেলো দেওয়ালে’র সাথে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে থাকা অধরা’র দিকে।বুকের ভেতরে কেমন জানি মোচর দিয়ে উঠলো আহানে’র।একটা জানোয়ারে’র জন্য নিজে’র প্রিয় মানুষ গুলো’কে কষ্ট দিলো।আহানে’র চোখ গুলো ভীষণ ভাবে লাল হয়ে আছে।চোখ মুখ ফুলে উঠেছে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।বিধ্বস্ত চেহারা’র নিয়ে অধরা’র পাশে এসে বসলো।দু’বার আস্তে করে ডাক দিলো আহান।কিন্তু অধরা’র থেকে কোনো সাড়াশব্দ এলো না।কান্না করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে মেয়েটা।আহানে’র আর ইচ্ছে হলো না।মেয়েটাকে জাগিয়ে তুলতে।অধরা’কে কোলে তুলে নিলো।রুমে এসে অধরা’কে শুইয়ে দিলো।অধরা’র পড়নে এখনো বোরকা পড়া আছে।আহান খুব যত্ন সহকারে হিজাব আর বোরকা খুলে দিলো।অধরা একটু নড়েচড়ে উঠলো।আহান ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো।তারপরে একটা পাত্রে পানি নিয়ে এসে,অধরা’র মুখ মুছিয়ে দিতে লাগলো।মেয়েটা প্রচুর কান্না করছে।চোখের পানি শুকিয়ে গিয়েছে।কিন্তু তার দাগ স্পষ্ট রয়ে গেছে।আহান অধরা’র মুখ মুছিয়ে দিয়ে,নিজে’ও অধরা’র পাশে শুইয়ে পড়ল।পরের দিন সকাল বেলা আহানে’র আগে ঘুম ভাঙলো।সবার আগে গেলো তিতিরে’র রুমে,কালকে নিজের প্রান প্রিয় বোন’কে খুব বেশি-ই কষ্ট দিয়ে ফেলছে।দরজার কাছে এসে বলল।আপু আসবো।তিতির তখন ব্যাগ গুছাচ্ছিলো।এত সকাল বেলা আহান’কে দেখে বেশ অবাক হলো।শান্ত কণ্ঠে বলল।

–আয়’।

আহান রুমে’র মধ্যে এসে,সোজা নিজের বোনে’র কোলে মাথা রাখলো।ভাঙা গলায় বলল।

–আপু তুমি খুব বেশি কষ্ট পেয়েছো।আমি তোমাকে ওভাবে বলতে চাই নাই।কালকে আপন’কে দেখে আমার মাথা ঠিক ছিলো না।প্লিজ তুমি আমাকে মাফ করে দাও।তুমি প্লিজ চলে যেও না আপু।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আপু।এভাবে আমাকে কষ্ট দিয়ে চলে যেও না আপু।

–বিয়ে হয়ে গেছে।পর হয়ে গেছি আমি।এখন তোরা আমার কেউ নস।আমি তোদের বাড়ির মেহমান।দু’দিনের জন্য এসেছি।ঘুরে চলে যাব।তুই তো ভুল কিছু বলিস নাই।আমি কিছু মনে করি নি’।তোর দুলাভাই আসছে।আমাকে তৈরি হতে দে’।

–আপু তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।তুমি জানো না।আমি কারন ছাড়া কিছু করি না।প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও আপু।ছোট বাচ্চাদের মতো কান্না করে দিলো আহান।ছেলেদের কান্না যে,বড়ই বেমানান।আহানে’র কান্না তিতিরে’র মনে আঘাত করলো।যতই হোক ছোটবেলা থেকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছে আহান’কে।পৃথিবীতে মায়ের পরের স্থানটি হলো বড় বোনে’র।এত আদর,যত্ন দিয়ে ভাইকে মানুষ করেছে।ভাইয়ের কান্না সয্য করতে পারলো না তিতির’।ভাইয়ে’র মুখ তুলে চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলল।

–হয়েছে আমি তোকে মাফ করে দিয়েছি।তুই না বললে-ও এখন থেকে আমি এই বাসায়-ই থাকবো।কালকে তুই ওভাবে বলার পরে খুব কষ্ট হয়েছিল জানিস।রাগ করে ভাড়া বাসা ঠিক করেছি।সেখানে গিয়ে’ই থাকতাম।তুই জানিস তোর ভাইয়ের নিজের কোনো বাসা নেই।তোর ভাই তার বড় আব্বুর জমির ওপরে থাকতো।এখন তাড়া এসেছে।তাদের আমানত তো তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে।

–এখন তাহলে তোমরা থাকবে কোথায়।

–কেনো তোর আর তোর বউয়ে’র ঘাড়ে বসে খাব।দুই স্বামী-বউ মিলে কামাই করিস।কম টাকা তো কামাস না।আমরা না একটু বসে বসে ধংস করবো।আহান হেঁসে দিয়ে বলল।

–তুমি আমার জীবনটা নিয়ে নিলে-ও আমার কোনো আক্ষেপ থাকবে না আপু।

–তোদের জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

–কি সারপ্রাইজ আপু।

–ঐ তো বলবো না।সময় হলে জানতে পারবি।এখন বল কালকে এমন পাগলামি করলি কেনো।তারপরে আহান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সবকিছু বলতে শুরু করলো।সবকিছু শুনে,তিতির স্তব্ধ হয়ে গেলো’।ছোট বেলা থেকে,ভাই আমার দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষে রেখেছিলো।সময় মতো ছোবল বসিয়ে দিলো।আমার ছোট আহান ভেতরে ভেতরে এতটা কষ্ট পেয়েছে।আর আমরা গুন অক্ষরে-ও টের পেলাম না।আমরা মনে,করতাম রুহি’কে হারানোর জন্য আহান এমন করেছে।তিতির ভাইকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।

–আমাকে তুই মাফ করে দিস ভাই।আমি না জেনে তোকে ভুল বুঝেছি।আমার জন্য কাল আপন তার শাস্তি পাই নি’।আমি একটা বেইমান’কে কাল পালাতে সাহায্য করেছি।আবার অধরা’র দিকে বাজে নজর দিয়েছে।কাল তুই একদম ঠিক কাজ করেছিস।এভাবে সব সময় অধরা’কে আগলে রাখিস ভাই।অধরা’র কথা মনে হতে-ই আহানে’র মনে হলো অধরা কাল রাত থেকে না খেয়ে আছে।

–আপু তুমি আমাকে মাফ করে দিয়েছো তো’।

–আমি কি’ তোর ওপরে রাগ করে থাকতে পারি।

–আমাকে ছুঁইয়ে কথা দাও।তুমি এ’ বাড়ি থেকে চলে যাবে না।তিতির হেঁসে আহান’কে কথা দিলো’।

–আপু অধরা কাল রাত থেকে না খেয়ে আছে।আমি অধরা’কে কিছু খাইয়ে দিয়ে আসি।বলে-ই রুমে ত্যাগ করলো আহান।খাবার নিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করলো আহান।অধরা উঠে বসে আছে।দু-চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।চোখ-মুখ ফুলে গেছে।আহান ব্যস্ত হয়ে অধরা’র কাছে গেলো’।অধরা’কে ছুঁইতে যাবে,তখনই অধরা ঝাড়ি দিয়ে আহানে’র সরিয়ে দিলো।আহান হালকা হাসলো।

–আমার অভিমানী’র বুঝি বড্ড অভিমান হয়েছে আমার ওপরে’।

অধরা কোনো কথা বলল না।আগের ন্যায় নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।আহান আরো একটু এগোতে চাইলে,অধরা সরে বসলো।আহানে’র মাথায় দুষ্টুবুদ্ধি এসে হানা দিলো।

–জানো অধরা পাশের বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া আসছে।ভাড়াটিয়া আন্টি’র মেয়েটা কি যে,সুন্দর ভাবছি কি’।আর বলতে পারলো না।অধরা কান্না করা বাদ দিয়ে ভেজা চোখ নিয়ে আহানে’র দিকে তাকিয়ে আছে।রেগে বলল।

–তাহলে তার কাছেই যান।আমি আর আপনার কাছে থাকবো না।আমি আজ’ই নানিদের বাসায় চলে যাব।বলে’ই হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।কালকে এমনিতেই আহানে’র চিন্তায় অধরা’র প্রাণ যায় যায় অবস্থা।তার ওপরে আহানে’র এমন ধরনের মজা অধরা আর নিতে পারলো না।অধরা বিছানা থেকে নেমে যেতে লাগলে।আহান খপ করে ধরে ফেললো।

–কোথায় যাচ্ছো।অধরা’র কাছে থেকে কোনো উওর আসলো না।কান্নার জন্য মেয়েটা ঠিক মতো নিশ্বাস-ও নিতে পারছে না।আহানে’র আর সয্য হলো না।তার অভিমানী’কে পরম যত্নে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।অধরা খুব শক্ত করে-ই আহানকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো।ছেড়ে দিলে-ই আহান পালিয়ে যাবে।অনেক কষ্টে অধরা’কে বুঝিয়ে সুঝিয়ে খেতে রাজি করাতে সক্ষম হলো আহান।ভালোবাসা পেলে কে-ই বা না রাজি হয়ে থাকতে পারে।আহান নিজের হাতে যত্ন করে অধরা’কে খাইয়ে দিচ্ছে।অধরা চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো খাচ্ছে।মাঝে মাঝে বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে রাখছে অধরা।আহান বহু কষ্ট নিজের হাসি চেপে রেখেছে।মেয়েটা’র হাসলে মেয়েটা আর একটা দানা’ও মুখে নিবে না।

চলবে…..