তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব-৩৮+৩৯+৪০

0
292

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৩৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

সময়ে’র নিয়মে সময় চলেছে।সময় কখনো কারো জন্য থেমে থাকে না।স্রোতের মতো নির্ধারিত সময়ে বেয়ে চলে যায়।আহান আর অধরা’র বিয়ে’র আজ ছয়মাস পূর্ণ হলো’।বউ আমার রাগ করে,নানি বাড়ি চলে,গেছে।বউ’কে নিরামিষ বলা’ই ভেবে ছিলাম।আমিষে পরিনত হবে।আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমান করে দিয়ে,নানি’র বাসায় চলে গেছে।তবু’ও ভালোবেসে দিবে না।আসলে-ই নিরামিষ বউ নিয়ে সংসার করছি।তবু’ও এই নিরামিষ বউটা-ই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ।এই নিরামিষ মেয়েটা’কে ছাড়া দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়ে যায়।তাই যাচ্ছি অভিমানীর অভিমান ভাঙাতে।কলিং বেলে’র শব্দ হতে-ই আকাশ এসে দরজা খুলে দিলো।দুলাভাই’কে দেখে মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বলল।

–ভাইয়া ভেতরে এসো।কতদিন পরে এলে বলো তো’।আমাদের ভুলে গেছো।

–আমার যে,একটা পাকনা শালা আছে।সে,কথা কি আমি ভুলতে পারি।বলে-ই চকলেটে’র বক্স বের করে দিলো।আকাশ খুব খুশি হলো,ছেলে মানুষ হয়ে চকলেট পছন্দ করে আকাশ।অদ্ভুত লাগলে-ও সত্যি।মিনারা বেগম জামাই’কে দেখে এগিয়ে আসলো।

–বাবা তুমি বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো”?আকাশ তোর কান্ড জ্ঞান নেই।ভাইয়া’কে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস।

–না মা আকাশ দাঁড় করিয়ে রাখে নি’।আমি আকাশে’র সাথে কথা বলছি।কতদিন আসি না বলেন তো’।আপনারা কি খুব রাগ করেছেন।আমার ওপরে’।

–ছিঃ বাবা এভাবে বলছো কেনো”?মা হয়ে কি সন্তানে’র ওপরে রাগ করতে পারি।মিনারা বেগমে’র কথা শুনে,আহান মিষ্টি হাসি দিয়ে,তার সাথে নিয়ে আসা জিনিস গুলো মিনারা বেগমে’র হাতে ধরিয়ে দিলো।

–এসব নিয়ে আসার কি দরকার ছিলো বাবা’।

–আমি আমার মা-ভাইয়ে’র জন্য নিয়ে আসতে পারি না।আপনারা কি আমার পরিবার না।

–হ্যাঁ ওরা-ই তোমার পরিবার আমি কেউ না।বলল রুবিনা বেগম।আহান রুবিনা বেগমে’র কাছে গিয়ে বলল।

–না গো’ ডার্লিং তুমি আমার সব’।এমন ভাবে বলো না।বুকের বা-পাশে লাগে।আমার যদি অপশন থাকতো।তাহলে অধরা’কে ছেড়ে তোমাকে’ই বিয়ে করে নিতাম।আহানে’র কথা শুনে সবাই হো হো করে হেঁসে উঠলো।এই কয়দিনে আহানে’র অধরা’র নানি’র বেশ ভালো সম্পর্ক হয়ে উঠেছে।নিজে’র রুম থেকে সবকিছু শুনছিলো অধরা।রেগে বলল।

–আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার নানিকে বিয়ে করে নিলে-ই তো’ পারেন।

–এভাবে হেঁসো না ডার্লিং তুমি হাসলে,তোমার মুগ্ধতায় ডুবে যেতে ইচ্ছে করে।তোমার একটা হাসি আমাকে শেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।রুবিনা বেগম আহানে’র কান ধরে বলল।

–আমাকে এভাবে পটিয়ে লাভ নেই।যাকে গলানো’র দরকার,দেখো গিয়ে গলাতে পারো কি না’।জানি না মনে করেছো।দু’টি আবার ঝগড়া করেছো।যাও গিয়ে বউয়ে’র মান ভাঙা’ও।আহান সবার সাথে কুশল বিনিময় করে,অধরা’র রুমে’র দিকে গেলো।অধরা শাড়ী গুছিয়ে রাখছিলো।আহান গিয়ে সোজা অধরা’কে জড়িয়ে ধরলো’।অধরা রাগী দৃষ্টিতে আহানে’র দিকে তাকালো।

–পাশে’র বাসার আন্টির আমিষ মেয়ে’কে নিয়েই থাকতেন।হঠাৎ কি মনে,করে এই নিরামিষ মেয়ে’র কাছে আসলেন।

–আসার সময় পাশে’র বাসার আমিষ মেয়েটা’র সাথে দেখা হয়েছিল।মেয়েটা দেখতে কি মাশাল্লাহ’।

–হ্যাঁ তিন তলার ছেলেটা’ও জোস।একদম পুরাই আগুন।

আহান ভ্রু কুঁচকে অধরা’র দিকে তাকালো।মুখে গম্ভীর ভাব এনে বলল।

–ছেলে মানে,তুমি কোন ছেলে’র কথা বলছো।তুমি ছেলেদে’র দিকে তাকিয়েছো।অধরা’র থেকে দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াল আহান।দু’হাত পকেটে গুজে দিয়ে অধরা’র উত্তরে’র অপেক্ষা করছে আহান।

–হ্যাঁ আমাদে’র ছাদ থেকে তিনতলা দেখা যায় না।সেখানে নতুন ভাড়াটিয়া আসছে।একটা ছেলে-ও আছে।দেখতে একদম জোস।পুরা’ই আগুন।

–ছেলে দেখার জন্য তোমার ঐ দু-চোখ যদি না থাকে,তখন কি করবে অধরা।

–পাশের বাসার আন্টি’র মেয়ে’কে দেখার জন্য আপনাকে নিচে নামতে হয়।এখন নিচে নামার জন্য যদি আপনার পা’দুটি না থাকে।তখন আপনি কি করবেন।চৌধুরী সাহেব।

–শুনো পাশের বাসা’র আন্টির কোনো মেয়ে নেই।আমি মরিয়ম আন্টির মায়ের কথা বলছি।তুমি জানো ওনার বয়স কতো।পঁচাশি বছর বয়স।আর তুমি সত্যি সত্যি আমার কথা বিশ্বাস করে নিলে,তোমার মনে হয়।আমি ঘরে বউ রেখে অন্য মানুষে’র পেছনে ঘুরবো।

–আপনি-ও কিভাবে ভাবলেন,আমি ঘরে জামাই রেখে অন্য ছেলেদের দিকে তাকাবো।ছেলেটা’র বয়স মাত্র এগারো বছর।আকাশের সাথে পড়ে।দুজনের খুব ভাব হয়েছে।আমাদের বাসায় আসে।আকাশে’র সাথে খেলতে।দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ।তাই জন্য বললাম।আপনি আমাকে রাগিয়েছেন।আমি’ও আপনাকে রাগিয়েছি।হিসাব বরাবর।

–তাহলে এখন দৌড়ে আমার বুকে চলে আসো।

–আমিষ ছেলে হয়ে,নিরামিষ মেয়ে’র কাছে আসছেন।লজ্জা করছে না।

–সে,আমার কোনোদিনই ছিলো না।তোমার সাথে কথা বলে লাভ নেই।তোমার প্রিয় চকলেট নিয়ে এসেছি।খাবে নাকি আকাশ’কে দিয়ে দিব।বলে’ই পকেট থেকে চকলেট বের অধরা’র সামনে ধরলো।অধরা মুখ ঘুরিয়ে নিলো।আহান আকাশ’কে ডাক দিলো।ছুটে এলো ছোট আকাশ।

–ভাইয়া আমাকে ডাকছো।

–চকলেট খাবে আকাশ।

–এটা আবার বলা লাগে ভাইয়া।বলে-ই আহানে’র হাত থেকে চকলেট নিতে যাবে।তখনই অধরা আকাশ’কে ধমক দিয়ে বলল।

–তুই খালি চকলেটে হাত দিয়ে দেখ’।তোর হাত আমি ভেঙে দিব।তোর কত চকলেট খাওয়া লাগে’।একটু আগে-ই না তোর ভাই তোকে এক বক্স চকলেট দিলো।সেগুলো এত তাড়াতাড়ি খেয়ে শেষ করে ফেললি।

–ধুর আপু কি যে,বলো না।ঐ কয়টা চকলেট খেয়ে পেট ভরে।অধরা আকাশে’র কান ধরে বলল।

–চকলেট কি পেট ভরে খাওয়া’র জিনিস।মা কি তোকে ভাত খেতে দেয় না।ভাত খাওয়া’র নামে নাম নেই।বাহিরে’র উল্টা পাল্টা খাবার খাওয়া’র বেলায় ওস্তাদ।

–চলো আকাশ বাহিরে থেকে ঘুরে আসি।

–চলো ভাইয়া ঘুরে আসি।এই পাগলের কথা শুনো না।বলল আকাশ।

–আকাশ দেব একটা থাপ্পড় লাগিয়ে।দিন দিন সাহস খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে।

–ভাইয়া যতক্ষণ আছে।আমার কোনো ভয় নেই।চাইলে’ও তুমি আমাকে ভয় দেখাতে পারবে না।

–হ্যাঁ আকাশে’র ভাইয়া থাকতে,আকাশে’র কোনো ভয় নেই।এমনিতে-ই নিরামিষ মেয়েটা’র কাছে থাকতে ইচ্ছে করছে না।বলে’ই বিছানার ওপরে চকলেট গুলো রেখে চলে গেলো।

অধরা’র নানি রান্না করছিলেন।আকাশ আর আহান’কে বাহিরে যেতে দেখে বলল।

–ভরদুপুরে কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি’।

–এই তো ডার্লিং একটু মোরে যাব।ঘুরে-ই চলে আসবো।তোমার জন্য কি নিয়ে আসবো।

–আসার সময় আমার জন্য পান নিয়ে এসো।তাহলেই হবে।আর কিছু লাগবে না।

–পানখোর ডার্লিং আমার তুমি চিন্তা করো না।হুকুম যখন করেছো তখন সঠিক সময়ে,তুমি তোমার পান পেয়ে যাবে।দু’জন মিলে বেড়িয়ে পড়ল।

অধরা নিজে’র রুমে বসে বসে চিন্তা করছে।যে,কাজের জন্য আসলো।সে,কাজ-ই তো করা হলো না।আহান থাকলে নিজে’র কাজ সফল করবে,কি করে সে,ছেলেটা এমন হয়ে গেছে।বউ ছাড়া একটা দিন ভালো মতো থাকতে পারলো না।অধরা ক’টাদিন থাকার জন্য এসেছিলো।আহান তার পরিকল্পনা’তে পানি ঢেলে দিতে চলে এসেছে।এখন কি বুঝিয়ে আহান’কে বাসায় পাঠাবো।এক রাত মানুষটা আমাকে ছাড়া থাকতে পারলো না।যদি বলি একমাস আমাকে ছাড়া থাকতে হবে।তাহলে মনে হয় বউয়ে’র শোকে দেবদাস হয়ে যাবে ছেলেটা।যে,মেয়েটা’কে একটা সময় দেখতে পারতো না।এখন সেই মেয়েটা’কে এতটা ভালোবাসে কেনো’?ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়।অপ্রিয় মানুষকে প্রিয় করে তুলে,এই প্রিয় হয়ে ওঠার অনুভূতিটা খুবই স্নিগ্ধ হয়।অধরা গোসল করে এসে,মায়ের রুমে এলো।

–মা তোমার সাথে আমার খুব জরুরি কথা আছে।

–কি কথা মা’।

–মা শারমিন খালা কোথায়’।

মেয়ে’র কথায় চমকে উঠলেন,মিনার বেগম।কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দিলো’।

–আমি জানি না।

–মিথ্যা কথা বলো না গো’ মা’।তুৃমি সবকিছু বলে দাও মা’।সবকিছু জানা আমার জন্য খুব দরকার।

–বললাম তো আমি জানি না।

–তবে সেদিন যে,তোমাদের বাসায় ডক্টর শারমিন’কে দেখলাম’।

–কবে দেখেছিস।মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর’।কিসব ভুলভাল বকছিস।ওটা তোর সাবিনা খালা ছিলো।তুই তো জানিস তোর শারমিন খালা আর সাবিনা খালা প্রায় একই রকম দেখতে’।

–তাহলে আমার বড় খালা কোথায় মা’।তোমরা না তিন বোন।সে,হিসেবে আমার বড় খালা কোথায়।

মিনারা বেগমে’র কলিজা কেঁপে উঠলো।মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।পুরো শরীরের রীতিমতো কাঁপুনি শুরু হয়ে গেছে।তবে সত্যিটা সামনে আসার সময় হয়ে গেলো।যে,ভয়টা এতদিন মাথায় বয়ে বেড়িয়েছেন।সেই ভয়টা তাকে এভাবে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো।

–তোর বড় খালা তার স্বামীর সাথে,আমেরিকায় থাকেন।জেনে শুনে তুই এমন প্রশ্ন করসিছ কেনো”?

–মিথ্যা বলছো মা তুমি।কেনো মিথ্যা কথা বলছো।আমি তোমার দু’টি পায়ে পড়ি মা’।সত্যি কথাগুলো বলে দাও না মা’।

মিনারা বেগম রেগে অধরা’কে হালকা ভাবে ধাক্কা দিয়ে বলল।

–এখন-ই আমার রুম থেকে বেড়িয়ে যা’।তোর মুখ আমি দেখতে চাই না।মায়ে’র হালকা ধাক্কাতে’ও অধরা পড়ে যেতে লাগছিলো।আজকাল অধরা’র শরীরটা-ও খুব একটা ভালো যায় না।নিজে’কে খুব দুর্বল মনে হয়।খাবারে’র প্রতি অনীহা বেড়ে’ই চলেছে।আজকাল কিছু কিছু খাবারে’র গন্ধ’ও সয্য করতে পারে না।বমি আসে,সবকিছু জেনে’ও ক্লান্ত শরীরটা’র ওপরে জোর খাটিয়ে চলেছে অধরা।দেরি হয়ে যাবার আগে সবকিছু সামনে নিয়ে আসতে হবে।দেওয়াল আঁকড়ে কোনোরকম নিজে’কে রক্ষা করলো অধরা।অধরা’র এমন দুর্বল শরীর দেখে মিনারা বেগম ভয় পেয়ে গেলেন।দৌড়ে মেয়ের কাছে আসলেন।

–খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলছি মা’।কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস।

–মনে’র আঘাতে’র কাছে,শরীরে’র এতটুকু আঘাত কিছু না মা’।যেদিন সত্যি কথা গুলো বলতে আসবে।সেদিন আমার সাথে কথা বলবে।তোমার সাথে অধরা আর কথা বলবে না মা’।তুমি ভালো থেকো।নিজের লড়াই নিজে-ই লড়তে জানে অধরা।বলে-ই নিজে’র রুমে দিকে যেতে লাগলো অধরা।হঠাৎ করে-ই অধরা’র মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।পরে যেতে নিলে,আবারো দেওয়াল আঁকড়ে ধরলো।মিনারা বেগম মেয়ে’কে আঁকড়ে ধরলে।অধরা আস্তে করে মায়ের হাত সরিয়ে দিয়ে চলে গেলো।মিনারা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়লো।আমি তোকে আর আকাশ’কে হারাতে পারবো না রে অধরা।আমি কিছুতে’ই তোকে সত্যি কথা বলতে পারবো না।ওরা আমার কাছে থেকে তোদের কেঁড়ে নিয়ে চলে যাবে।তোদের নিয়ে চলে গেলে,আমি কি নিয়ে বাঁচবো রে অধরা।আমার মনির-ও আজ আমার সাথে নেই।ডুকরে কেঁদে উঠলেন মিনার বেগম।

অধরা নিজে’র রুমে এসে বিছানায় শুইয়ে পড়ল।অন্য দিনে’র তুলনায় শরীরটা আজ বেশি খারাপ লাগছে।হয়তো অতিরিক্ত টেনশনের কারণে।অধরা’র খেয়াল হলো সে,সকালে খায় নাই।সেজন্য হয়তো আরো বেশি খারাপ লাগছে।নিচে নামতে যাবে।তখন-ই চোখ যায়,আহানের দেওয়া চকলেট গুলোর দিকে।আনমনে হেঁসে উঠে অধরা।চকলেট গুলো নিয়ে খেতে শুরু করে।অধরা’র খুব ভালো লাগে,অধরা যখন অভিমান করে,আহান ছোট ছোট উপহার দিয়ে অধরা’র অভিমান ভেঙে দেয়।সুখ,দুঃখ,রাগ,অভিমা,ঝগড়া করে বেশ যাচ্ছে,তাদের সুখের সংসার।যতই সময় যাচ্ছে।অধরা’র ভয় ততই তীব্র হচ্ছে।আচ্ছা আহান তাকে ভুল বুঝবে না তো’।আহান যদি সবকিছু জানার পরে অধরা’কে ঘৃণা করে।যার চোখে এক আকাশ পরিমাণ ভালোবাসা দেখেছি।তার চোখে ঘৃণা দেখলে সইবো কেমনে,বাঁচতে পারবি না অধরা।গভীর চিন্তায় মগ্ন অধরা।

আহান ঘুরে এসে সোজা অধরা’র কোলে মাথা রেখে শুইয়ে পড়ল।হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেয়ে,আহানে’র দিকে তাকালো।ঘেমে একাকার হয়ে গেছে আহান।অবাধ্য এলোমেলো চুলগুলো কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।

–এভাবে তাকিয়ে থেকো না।প্রেমে পড়ে যাবে।

–আমার বইয়ে গেছে।টো টো করা শেষ দু’জনের।দেখুন তো রোদের মধ্যে গিয়ে।চেহারা’র কি নাজেহাল অবস্থা করে নিয়ে এসেছেন।

–কেনো এখন বুঝি ভালো লাগছে না আমাকে।

অধরা আহানে’র কথা শুনে,হেঁসে বলল।

–আপনি যেমন-ই হন না কেনো’?আপনি সব সময় আমার কাছে সুন্দর।

শার্টের ওপরে’র দু’টো বোতাম খুলে দিলো আহান।প্রচুর গরম লাগছে।ক্লান্ত চোখে বলল।

–একটু স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারছো না।দেখছো জামাই ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।কোথায় শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিবে।তা-না করে,আমার সাথে ঝগড়া করছো।কিছু জানো না তুমি।অধরা হেঁসে শাড়ির আঁচল দিয়ে আহানে’র মুখ মুছিয়ে দিতে দিতে বলল।

–হ্যাঁ আমি কিছু জানি না।আপনি না-হয় আমাকে শিখিয়ে পড়িয়ে আপনার মনের মতো বানিয়ে নিবেন।মনে’র মতো মানুষ পাওয়া,সেটা ভাগ্য।আর নিজের মনের মতো বানিয়ে নেওয়াটা’ই হচ্ছে ভালোবাসা।

–তুমি আমাকে ভালোবাসো বলে মনে হয় না।নিরামিষ বউ একটা।

–আপনি তো’ আমাকে ভালোবাসেন।আচ্ছা আপনি আমাকে কতটা ভালোবাসেন।

–আমার ভালোবাসা’র গভীরতা মাপতে যেও না অধরা।আমার ভালোবাসার গভীরতা মাপতে গিয়ে,তুমি সেই অতল গভীরে তলিয়ে যাবে।

–আপনি আমাকে কখনো ঘৃণা করবেন না তো’।কিছুটা ভীত হয়ে বলল অধরা।

–তোমার শরীরে’ ক্যান্সারে’র জীবানু পেলে-ও একজীবন কাটিয়ে দেওয়া’র প্রতিজ্ঞা করতে পারি।কিন্তু প্রতারণা’র গন্ধ পেলে এক সেকেন্ড’ও নয়।

আহানে’র কথায় পুরো শরীর কেঁপে উঠলো।সমস্ত ভয় জেঁকে ধরেছে অধরা’কে।অধরা’র হাত কাঁপছে দেখে আহান অধরা’র হাত ধরে বলল।

–তোমার কি শরীর খারাপ অধরা’।তোমার পুরো শরীর কাঁপছে কেনো’?তুমি কি কোনোকিছু নিয়ে চিন্তা করছো।তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমাকে বলো।আমি আছি না।তোমার কষ্টে’র ভাগ আমি নিতে পারবো না ঠিকি।কিন্তু তোমার হাজারো অশান্তির মাঝে,আমি তোমার শান্তি’র কারন হবো। কথা দিলাম।অধরা আহান’কে জড়িয়ে ধরে কান্না
করে দিলো।মানুষটা’ তাকে এতটা বুঝে কি করে।এই মানুষে’র ঘৃণা আমি কেমনে সইবো।এই মানুষটা’র থেকে ঘৃণা পাওয়া’র চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়।অধরা’র কষ্ট কারন খুঁজে বের করছে পারছে আহান ঠিকি।কিন্তু অধরা’র এমন কষ্ট আহানে’র ভেতরটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে।মেয়েটা কি দেখতে পাচ্ছে না।তবে কেনো এত কষ্ট দিচ্ছে তাকে’।

চলবে…..

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৩৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

রাত বাজে এগারো’টা অধরা ঘুমিয়ে গেছে।আহান ছাঁদে’র এক কর্নারে দাঁড়িয়ে আছে।মন’টা ভিষণ খারাপ।অধরা কিভাবে তাদের বিয়ের কথা ভুলে গেলো’।তবে কি’ সত্যি অধরা তাকে ভালোবাসে না।সেজন্য অধরা’র মনে কোনো অনুভূতি নেই।একবার সামনে থাকা কেকের দিকে তাকাচ্ছে,আরেকবার ফোনে’র দিকে।ছোট ছাঁদটা’র ভেতরে পুরো ছাঁদে মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখেছে আহান।মোমবাতি’র আলোয় ছাঁদের সুন্দর্য দিগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।আকাশে’র দিকে তাকিয়ে,একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।হাতে থাকা ফোনটা’ নিয়ে অধরা’কে ফোন দিলো।প্রথম বার কল কেটে গেলো’।আহান আবার কল দিলো’।অধরা ঘুম ঘুম চোখে ফোন ধরে বলল।

–হ্যালো কে”?

–আমি আহান’।

অধরা সাথে সাথে পাশ ফিরে তাকালো।পাশে তাকিয়ে অধরা অবাক হয়ে গেলো’।এত রাতে আহান কোথায় চলে গেলো’।

–আপনি কোথায়’।

–ছাঁদে’।

–এতরাতে ছাঁদে কি করেন’।

–একটু ছাঁদে আসতে পারবে’।

–আপনার কি মন খারাপ’?

–না,যদি আসতে পারো’।তাহলে আসো,না হলে ঘুমিয়ে পড়ো।বলে-ই আহান ফোন কেটে দিলো’।

অধরা অবাক হয়ে গেলো’।আহানে’র হলো-টা কি’।অধরা চোখ ডলে উঠে ছাঁদের দিকে গেলো’।ছাঁদে এসে চোখ বড় বড় হলে গেলো,পুরো ছাঁদ আলোয় ম-ম করছে।ছাঁদে’র মাঝখানে পাটি’র ওপরে কেক রাখা।তার চারপাশে মোমবাতি’র আলো গোল করে সাজানো’।একগুচ্ছ গোলাপ ফুল-ও আছে।নিমিষেই অধরা’র মন ভালো হয়ে গেলো।কিন্তু আহান কোথায়।অধরা’র চোখ গেলো পাশে’র কর্ণারে।আহান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।অধরা গিয়ে আহানে’র কাঁধে হাত রাখলো।আহান পেছনে ঘুরে তাকালো’।

–তুমি চলে এসেছো।চলো আমরা ছাঁদের মাঝখানে বসি।বলে-ই অধরা’র হাত ধরে নিয়ে ছাঁদের মাঝখানে বসলো।নিজে-ও অধরা’র পাশে বসে পড়লো’।

–আমি তোমাকে অনেক জ্বালাই তাই না অধরা’।তোমার জীবনে এই জ্বালানোর মানুষটা যদি না থাকে।

আহানে’র কথা শুনে,অধরা’র কলিজা কেঁপে উঠলো।হঠাৎ এমন করে কথা বলছে কেনো’।

–আপনি এভাবে কথা বলছেন কেনো”?আমাকে এসব কথা বলার জন্য এতরাতে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে আসলেন।

–তুমি আমাকে একটু-ও ভালোবাসো না।আমি জোর করে তোমাকে ভালোবাসি’।আচ্ছা তুমি রুমে চলে যাও।তোমাকে এতরাতে বিরক্ত করার জন্য স্যরি।

অধরা আহানে’র হাতের ওপরে হাত রেখে বলল।

–এই যে,আমাকে ছুঁইয়ে আছেন।এখন মিথ্যা কথা বললে,আমার ক্ষতি হয়ে যাবে।আপনি যদি চান আমার ক্ষতি হোক’।তাহলে মিথ্যা কথা বলবেন।আর যদি না চান।তাহলে,সত্যি কথা বলবেন।আপনার মন খারাপ কেনো’?

আহান হাত সরিয়ে নিয়ে বলল।

–বলো তো’ আজকে কি’।

–জানিনা’।

–তা জানবে কি করে’।আজকে আমাদের বিয়ে’র ছয়মাস পূর্ণ হয়েছে।তোমার কি সেদিকে খেয়াল আছে।আমি ভেবে ছিলাম।তুমি আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়া’র জন্য নানি’র বাসায় এসেছো।এখন দেখছি,তোমার মনে’ই নেই।

আহানে’র কথা শুনে,অধরা অসহায় দৃষ্টিতে আহানে’র দিকে তাকালো।আসলে-ই চিন্তা করতে গিয়ে,মানুষটা’কে বেশ অবহেলা করা হয়ে গেছে।মানুষটা আমাকে কতটা ভালোবাসে’।আর আমি কি না এই ছোট কথাটা ভুলে গেলাম।মানুষটা ঠিকি মনে রেখেছে।সত্যিই কি’ আমি মানুষটা’কে ভালোবাসি না।

–এত চিন্তা করতে হবে না।তুমি রুমে চলে যাও।

–স্যরি’।

আহান মন খারাপ করে বসে রইলো’।অধরা গালে হাত দিয়ে আহানে’র দিকে তাকিয়ে আছে।আহান উঠে চলে গেলো।পকেটে দু’হাত গুজে ছাঁদের এক কোণে গিয়ে দাঁড়াল।অধরা মুখ ফুলিয়ে চিন্তা করছে,কিভাবে আহানে’র রাগ ভাঙানো যায়।উঠে গিয়ে আহানে’র সামনে দাঁড়িয়ে দুই কান ধরে বলল।

–স্যরি এর পরে থেকে আর এমন হবে না।আহানে’র থেকে কোনো উওর আসলো না।অধরা আহানে’র কান ধরে বলল।

–এই দেখুন আপনার কান ধরে বলছি।আর হবে না।আহান অধরা’র হাত সরিয়ে দিলো’।

–একটা কথা বলুন তো’।

–কি’!

–আমি কার’?

–আমার’।

–তাহলে ভুলগুলো কার’।

–অবশ্যই আমার’।

–তাহলে রাগ করার কথা কার’।

–তোমার’।বলে-ই আহান ড্যাব ড্যাব করে অধরা’র দিকে তাকালো।মেয়েটা’র মাথায় কি বুদ্ধি রে’ বাবা।

–শুনুন আমি আপনার,তাই আমার ভুল গুলো-ও আপনার।নিন এখন ঝটপট স্যরি বলে ফেলুন।

–কি সাংঘাতিক মেয়ে তুমি’।

–এত বুঝি না বুঝছেন।আপনি আমার,এতকিছু যে,করলেন।কে,করেছে বলুন তো’।আপনার কথা মতো আমি করেছি।এখন আমি রাগ করেছি।আমার রাগ ভাঙান।

আধরা’র কথা শুনে,আহান হেঁসে দিলো’।আলতো করে অধরা’র কপালে চুমু খেয়ে বলল।

–চলো কেক কাটি।দু’জন মিলে কেক কাটলো।আহান একটু কেক অধরা’র গালে মাখিয়ে দিলো।অধরা মুখ গম্ভীর করে ফেললো’।তা দেখে আহান অধরা’র গালে’র সাথে গাল মিলিয়ে নিজে-ও কেক মাখে নিলো’।দুজনেই হেঁসে দিলো।

–আপনার মোমবাতি গুলো,যে ফুরিয়ে আসার পথে।

–ফুরিয়ে যাক।সমস্যা নেই।যার জন্য এতকিছু করলাম।সে,দেখে নিয়েছে।তুমি খুশি হয়েছো।

অধরা দু’হাত মেলে বলল।

–এতগুলো খুশি হয়েছি।

–তোমার জন্য একটা উপহার আছে।বলে-ই পকেটে থেকে ছোট একটা বক্স বের করলো।একটা সোনার চেইন বের করে,অধরা’র গলায় পড়িয়ে দিলো’।অধরা’ হঠাৎ করেই দাঁড়িয়ে পড়লো।আহান’ও অধরা’র সাথে দাঁড়িয়ে পড়লো।

–আপনি একটু দাঁড়ান।আমি নিচে থেকে একটু আসছি।আহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

–ঘুমিয়ে যাবে না তো আবার’।

–আরে না আমি যাব আর আসবো।বলে-ই যেতে নিলে,শাড়ীর সাথে পা বেঁধে হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে লাগলে আহান ধরে ফেললো।

–শাড়ী পড়তে পারো না।তাহলে শাড়ী পড়েছো কেনো’।

–আমার সব জামা-কাপড় আপনাদে’র বাসায়।এখানে একটা জামা-ও নেই।তাই শাড়ি পড়তে হয়েছে।

–ঠিক আছে সাবধানে যাবে।

–আচ্ছা বলে’ই অধরা নিচে গেলো’।একটু পরে হাতে ছোট একটা বক্স নিয়ে আসলো।গিফট পেপার দিয়ে মোড়ানো।আহানে’র হাতে দিয়ে বলল।

–এটা আপনার জন্য’।

–কি এটা’।

–খুলে দেখুন’।

আহান খুলতে লাগলো।খুলে ভেতরে সুন্দর কালো রংয়ের একটা ঘড়ি দেখতে পেলো।আহানে’র মুখে হাসি বিরাজমান করছে।দেখে-ই বোঝা যাচ্ছে।অনেক খুশি হয়েছে।

–এটা কার জন্য’।

–আমার শশুরে’র ছেলের জন্য।বলে-ই আহানে’র হাত থেকে ঘড়িটা নিয়ে পড়িয়ে দিলো’।

–আপনার পছন্দ হয়েছে।

–আমার বউ নিয়ে এসেছে।আর আমার পছন্দ হবে না।আমার নিরামিষ বউ একটু জামাইয়ে’র কথা ভেবেছে।

–একদম আমাকে নিরামিষ বলবেন না।

–বলবো কি করবে’।

–আপনি দেখবেন কি করবো’।

–নিরামিষ বউ’কে নিরা…আর বলতে পারলো না আহান।তার আগে-ই আহানে’র অধরে নিজে’র অধর ডুবিয়ে দিলো’ অধরা।একটু পরে আহান’কে ছেড়ে দিয়ে আহানে’র থেকে দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালো।

–আমি রুমে যাব।আমার ঘুম পেয়েছে।

–আমাকে এভাবে এলোমেলো করে দিয়ে,তোমাকে শান্তিতে ঘুমোতে দিব।

–মানে’।

–অপেক্ষা করো’ মানে বোঝাচ্ছি।বলে’ই আহান ছাঁদে’র মোমবাতি গুলো নিভিয়ে দিতে লাগলো’।অধরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আহানে’র কান্ড দেখছে’।আহানে’র মোমবাতি গুলো নেভানো শেষ হলে,অধরা’র কাছে আসলো’।কোনো কথা’ না বলে’ই অধরা’কে কোলে তুলে নিলো’।হঠাৎ করে কোলে নেওয়া’য় অধরা ভরকে গিয়ে ভয়ে আহানে’র গলা জড়িয়ে ধরলো’।

–আপনি এমন কেনো’।হুটহাট করে এভাবে কোলে তুলে নেন কেনো’।

–ভয় পেয়েছো’।

–আবার বলছেন’।আমাকে নামিয়ে দিন’।

–জ্বী না ম্যাডাম নামানো’র জন্য কোলে নেই নাই।

–আমি কি ছোট বাচ্চা আমাকে কোলে নিতে হবে’।

আহান কোনো কথা না বলে,দেখে শুনে নিচে নামতে লাগলো’।রুমে এসে অধরা’কে নামিয়ে দিলো’।হাতের ঘড়িটা খুলে টেবিলে রাখলো।অতঃপর আরো একটি রাত তাঁদের ভালোবাসা’র সাক্ষী হয়ে রইলো’।

পরের দিন সকাল বেলা দুজনে-ই অফিসে চলে গেলো’।গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সাইন করা লাগবে।অধরা আহানে’র রুমে’র কাছে এসে বলল।

–স্যার আসবো।

–আসুন ম্যাডাম’।আহানে’র কথা শুনে,হেঁসে রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো’ অধরা।

–স্যার এই ফাইল গুলোতে আপনার সাইন লাগবে।

–বসো’।আমি করে দিচ্ছি।অধরা আহানে’র সামনে’র চেয়ারে বসলো’।আহান ফাইল গুলো দেখে দেখে সাইন করছে।অধরা চুপচাপ বসে আছে।

–অধরা তোমার মন খারাপ’।

–না স্যার’।

–তাহলে চুপচাপ কেনো’।

–এমনি ভালো লাগছে না’।

–কোনোকিছু নিয়ে চিন্তা করছো।মনে’র মধ্যে কোনো কষ্ট থাকলে আমার সাথে শেয়ার করতে পারো’।নিজেকে হালকা লাগবে’।

–স্যার আমার কাজ আছে’।

–আচ্ছা যাও।বাসায় গিয়ে কোথায় যাবে।তখন কিন্তু বলতে-ই হবে।বলে-ই ফাইল গুলো অধরা’র দিকে এগিয়ে দিলো’।অধরা ফাইল গুলো নিয়ে দরজা’র কাছে আসতে-ই পড়ে যেতে লাগলো।মাথায় হাজারো চিন্তা,শরীরটা-ও ভালো যাচ্ছে না।একদম বাজে অবস্থা হয়েছে অধরা’র।না পারছে কাউকে বলতে,না পারছে সয্য করতে’।আহান ব্যস্ত হয়ে উঠে আসলো।

–অধরা সত্যি করে বলো’।তোমার কি হয়েছে।কয়দিন হলো দেখছি,তুমি খুব অস্বাভাবিক আচরণ করছো’।আহান কিছু বলতে যাবে।তার আগে-ই অধরা’র গা গুলিয়ে উঠলো।আহান’কে কোনো কিছু না বলে-ই অধরা বেড়িয়ে আসলো’।ওয়াশরুমে এসে,বমি করে দিলো’।চোখ মুখে পানি দিয়ে,আয়না’র দিকে তাকালো অধরা।চেহারা’র মধ্যে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।এভাবে আহানে’র সামনে যাবে কি করে’।এসব ভেবে-ই মুখ মুছতে মুছতে পেছনে’র দিকে ঘুরে দেখলো,আহান তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।অধরা’কে কিছু বলতে না দিয়ে অধরা’র হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসলো।

–শুনো তোমার হাত ছেড়ে দিচ্ছি।লক্ষি মেয়ে’র মতো আমার পিছু পিছু আসবে।আহান আগে আগে হাঁটছে অধরা পিছু পিছু।গাড়ি’র কাছে এসে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলল।

–যাও বসো’।

অধরা চুপচাপ গিয়ে গাড়ির মধ্যে বসলো।আহান-ও গাড়ির মধ্যে বসে গাড়ি চালাতে শুরু করলো’।অধরা চুপচাপ বসে আছে।মুখ দিয়ে একটা কথা-ও বের হচ্ছে না।আহান আঁড়চোখে একবার তাকিয়ে,গাড়িতে চালাতে মন দিলো’।গাড়ি’টা এসে একটি হসপিটালের সামনে দাঁড়ালো’।আহান গাড়ি থেকে নেমে এসে,দরজা খুলে বলল।

–নেমে এসো’।অধরা গাড়ি থেকে নেমে বাহিরে দাঁড়ালো’।

–আমি যাব না।আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন কেনো’।

–দেখো,আমি যা’ বুঝেছি।তুমি-ও তাই বুঝেছো।আমি রেগে যাওয়া’র চলো।অধরা অসহায় দৃষ্টিতে আহানে’র দিকে তাকালো’।আহান সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো’।অধরা আহানে’র পেছনে পেছনে গেলো’।একজন নার্সের কাছে গিয়ে আহান কি যেনো একটা বলল।তারপর একটা চেয়ারে অধরা’কে বসিয়ে দিলো’।দশ মিনিট পরে।ডক্টরে’র রুম থেকে একজন বেড়িয়ে এসে বলল।

–আহান চৌধুরী কে’?ভেতরে’র আসুন।

আহান অধরা’কে নিয়ে ডক্টরে’র কাছে নিয়ে গেলো’।

–আরে মিস্টার চৌধুরী সাহেব যে,আমার কাছে এসেছে।এতদিন পরে আমার কথা মনে পড়েছে বুঝি’।

–কি যে,বলো না আপু।কেমন আছো।আমাদের বাসায় ঘুরতে যেতে পারো না।তিতির আপু মাঝে মাঝে তোমার কথা বলে অনেক।

–আলহামদুলিল্লাহ ভাই ভালো আছি।ডক্টর হয়েছি।নিজের প্রিয় জনদে’র ঠিক মতো সময় দিতে পারি না।আমার নিজে’র কথা ভাবলে চলবে।পাশে’টা বউ নাকি।সমস্যা কি তাড়াতাড়ি বল ভাই।বাহিরে সবাই অপেক্ষা করছে।দেখে শেষ করতে হবে।

–হ্যাঁ আমার বউ।অধরা আপুর কাছে সমস্যার কথা বলো’।

অধরা আহানে’র দিকে তাকিয়ে আছে।

–আহানে’র দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে।তোমার কি হয়েছে সেটা আহান বলতে পারবে না গো আপু।আমাকে বলতে হবে।তাহলে-ই না আমি বুঝবো।তোমার কি হয়েছে।তারপরে অধরা সবকিছু ডক্টরে’র কাছে বলল।

–আচ্ছা বুঝলাম’।কয়েক’টা টেস্ট দিচ্ছি।করিয়ে নিয়ে এসে,আমার সাথে দেখা কর’ আহান।

–আচ্ছা আপু।বলে-ই নিলুফা’র থেকে কাগজটা নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো’।প্রায় ত্রিশ মিনিট ধরে বসে আছে অধরা আর আহান।এত লম্বা সিরিয়ালে’র মধ্যে তাদের সিরিয়াল-ই আসছে না।অধরা বিরক্ত হয়ে বলল।

–চলেন বাসায় চলে যাই।আমার ভালো লাগছে না।খুব বিরক্ত লাগছে।

–একটু কষ্ট করো’।এতক্ষণ যখন অপেক্ষা করেছি।আর একটু করি।আমাদের মতো সবাই সমস্যায় পড়ে-ই হসপিটালে এসেছে তাই না বলো’।অধরা আর কিছু বলল না।প্রায় চল্লিশ মিনিট পরে তাদের সিরিয়াল আসলো’।সকল টেস্ট করে রিপোর্ট পেতে পেতে দুই ঘন্টার-ও বেশি সময় লেগে গেলো’।এতক্ষণ বসে থাকতে থাকতে অধরা’র শরীর আরো নেতিয়ে পড়েছে।ঘেমে একাকার হয়ে গেছে দু’জন।ডক্টরে’র কাছে এসে,আরো বিশ মিনিট অপেক্ষা করা লাগছে।অবশেষে ডক্টরে’র কাছে পৌঁছালো দু’জন।ডক্টর রিপোর্ট গুলো দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল।

–কংগ্রাচুলেশনস চৌধুরী সাহেব আপনি বাবা হতে চলেছেন।আমি’ এমনিতে-ও আন্দাজ করতে পেরে ছিলাম।কিন্তু তখন বলি নাই।কারন আন্দাজ করে আমি কখনো কিছু বলি না।

এতক্ষণে’র সব ক্লান্তি নিমিষে-ই উধা’ও হয়ে গেলো’।আহানে’র মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো’।অধরা আহানে’র মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো’।পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে আহান’কে।মানুষটা হাসলে এত সুন্দর লাগে কেনো’।পৃথিবীর সব দুঃখ-কষ্ট ভুলিয়ে দেওয়া’র জন্য মানুষটা’র মুখের হাসি-ই যথেষ্ট’।

–কি রে আহান খালি হাসলে-ই হবে।মিষ্টি খাওয়াবি না।

–চলো তোমাকে মিষ্টির দোকানে বসিয়ে দিয়ে আসি।

–না রে ভাই।আজকে না।অন্য কোনো একদিন।আর একটা রুগী অপেক্ষা করে রয়েছেন।দেখে বাসায় যাব।মেয়েটা’কে আমার কথা দিয়েছি।আজকে আগে বাসায় যাব।কিন্তু তোর বউয়ে’র এত চিন্তা কিসের রে’।শরীর প্রচুর দুর্বল।খাওয়া দাওয়া একদম ঠিক মতো করে না।এভাবে চলতে থাকলে বেবির ক্ষতি হবে।ওকে চিন্তা মুক্ত থাকতে বলবি।নিয়মিত ভালো-মন্দ পুষ্টিকর খাবার খাওয়াবি।এমন সময় একটু এমন হয়।চিন্তার কিছু নেই।তোর বউয়ে’র শরীর অত্যন্ত দুর্বল।তোর বউকে এখন সম্পূর্ন বেড রেস্টে রাখবি কেমন’।এখন এখানে থেকে যা’।

–তাড়িয়ে দিচ্ছো আপু।

–এটা আমার বাসা না।যে,তোকে ভাত তরকারি রান্না করে খাওয়াবো’।তুই আমার ভাই তোর ওপরে আমার অধিকার আছে।তার জন্য-ই তোকে তাড়িয়ে দিচ্ছি।সবাইকে তো’ আর এভাবে বলতে পারবো না।জ্বালাস না।

–আচ্ছা আপু।আজ তাহলে আসি।তুমি সময় করে আমদের বাসায় ঘুরে এসো’।

–আচ্ছা ঠিক আছে।আহান অধরা’কে নিয়ে,হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে আসলো’।গাড়িতে উঠে বসলো দু’জন।অধরা একদম স্তব্ধ হয়ে গেছে।আহানে’র মুখে হাসি বিরাজমান।পৃথিবীর সমস্ত সুখ আহানে’র মুখে এসে ধরা দিয়েছে।

চলবে…..

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৪০
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

চৌধুরী বাড়িতে আজ খুশি’র মেলা বসেছে।সমস্ত খুশি এসে ধরা দিয়েছে,চৌধুরী বাড়ি’র প্রতিটা মানুষের মুখে।সবাই গোল হয়ে অধরা’কে ঘিরে বসে আছে।হাজার রকমে’র প্রশ্ন করছে।অধরা চুপচাপ সবার মুখের কথা শুনছে।বাড়ি’র সবার এত খুশি দেখে’ অধরা’র মনে ভয় জেঁকে বসেছে।সত্যিটা জানার পরে সবাই তাকে,এভাবে ভালোবাসবে তো’।সবার মুখে হাসি থাকলে-ও হাসি নেই অধরা’র মুখে’।

–কি ব্যাপার সবাই আজ এত খুশি কেনো’।বলল তিতির।

–নতুন অতিথি আসছে রে’ তিতির’।তুই খালামনি হতে যাচ্ছিস।বললেন মিসেস আফরোজা চৌধুরী।

–তাহলে তোমাদের আরো একটা খুশির খবর দেই।

–কি রে মা’।

–তোমাদের সামনে যে,নতুন বাসাটা হয়েছে।সেটা আমাদের বাসা।বলল তিতির।তিতিরে’র কথা শুনে,সবাই তিতিরে’র দিকে তাকিয়ে আছে।আহান খুশি হয়ে বলল।

–সত্যি বলছো আপু।তাহলে এখন থেকে প্রতিদিন দুপুর বেলা আমি বাটি নিয়ে তোমাদের বাসায় তরকারি নিয়ে আসতে যাব।

–কেনো তোমার বাবা তোমাকে খেতে দেয় না।বলল রোহান।

–তোর বাবার মতো।আমার বাবা গরু চোর না।তোর বাবা গরু চুরি করে,একটা বাড়ি করে ফেললো রে’ রোহান।

–এমন করে বলছো মামা।মনে হয়,চুরি করার সময় তুমি’ও আব্বুর সাথে ছিলে।

রোহানে’র কথা শুনে সবাই হেঁসে দিলো’।

–আহান মেয়েটা’কে নিয়ে ওপরে যা’।ক্লান্ত দেখাচ্ছে মেয়েটা’কে অনেক’।

–দেখাবে না মা’।ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে না।নিজের শরীরে’র যত্ন নেয় না।প্রচুর চিন্তা করে।নিলুফা আপুর কাছে নিয়ে গেছিলাম,আজকে।আপু বলল অধরা’র শরীর অনেক দুর্বল।

–আচ্ছা তুই চিন্তা করিস না।আমি’ও দেখবো।ও’ মেয়ে এখন থেকে কিভাবে না খেয়ে থাকে।কিভাবে নিজের প্রতি অযত্ন করে আমি’ও দেখবো’।

আহান আর কোনো কথা না বলে,অধরা’কে নিয়ে ওপরে চলে গেলো’।নিজের রুমে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচল অধরা।জামা-কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো’।গোসল করে মাথায় তোয়ালে মুড়িয়ে,হাতে ভেজা কাপড় গুলো নিয়ে বের হলো’।

–এই অবেলা করে গোসল দিলে অধরা।যদি ঠান্ডা লেগে যায়।দাও কাপড় গুলো আমার কাছে দাও।আমি মেলে দিয়ে আসছি।বলে’ই অধরা’র হাতে থেকে কাপড় গুলো নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে মেলে দিয়ে আসলো।

–মাথায় তোয়ালে মুড়িয়ে রেখেছো কেনো”?ঠান্ডা লেগে যাবে।বলে-ই অধরা’র মাথা থেকে তোয়ালে খুলে,যত্ন সহকারে চুলগুলো মুছে দিতে লাগলো।চুলগুলো মুছিয়ে দিয়ে।হালকা করে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে বলল।

–তুমি একটু এখানে বসো।তাড়াতাড়ি চুলগুলো শুকিয়ে নাও।আমি গোসল করে আসছি।বলে-ই আহান চলে গেলো’।অধরা কিছু বলছে না।দেখে-ও আহান চুপ করে আছে।পরে মাথা ঠান্ডা হলে,সবকিছু শুনে নিবে।অধরা বিছানায় বসে আছে।চিন্তা করছে,আজকে রাতে’ই একটা ব্যবস্থা করতে হবে।আহান গোসল করে
এসে অধরা’র পাশে বসলো।অধরা’র মুখে অজস্র ভালোবাসা’র পরশ এঁকে দিচ্ছে আহান।অধরা বিরক্ত হয়ে বলল।

–এত জালাচ্ছেন কেনো”?

–আজকে তোমাকে জ্বালাইতে জ্বালাইতে বিরক্ত করে ফেলবো।

–ডক্টর আপুটা কে ছিলেন।আপনি কিভাবে তাকে চিনেন।

–ওটা নিলুফা আপু।তিতির আপুর বেস্ট ফ্রেন্ড।

–সেজন্য তোমার সাথে এমন ভাবে কথা বলল।

আহান অধার’র দিকে তাকিয়ে আছে।অধরা আমতা আমতা করে বলল।

–না মানে আপনার সাথে’।

–সত্যি করে বলো তো’।তোমার এত চিন্তা কিসের’।মানুষের মাথা কতটা খারাপ হলে,এসব ভুলভাল কথা বলে।

–আপনি কাকে ভুলভাল বলতে দেখলেন।

–অধরা তুমি খুশি হও নি’।

–খুশি হবো না কি হয়েছে।

–তোমার মধ্যে আমি কোনো অনুভূতি দেখতে পাচ্ছি না।

–সব অনুভূতি কি প্রকাশ করতে হবে।

–আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে তুমি খুশি হও নাই।তোমার কি আমার সাথে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে।যদি আমাকে নিয়ে তোমার কোনো সমস্যা হয়।তাহলে বলতে পারো আমি তোমাকে মুক্ত করে দিব।জোর করে আমার সাথে সংসার করতে হবে না।আর বাচ্চাটা-ও আহান’কে কিছু বলতে না দিয়ে,আহান’কে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে’ই কান্না করে দিলো অধরা।আহান শক্ত করে অধরা’কে নিজের সাথে মিলিয়ে নিলো’।কিসের এত কষ্ট মেয়েটা’র।সারাদিন কি নিয়ে এত চিন্তা করে।ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।তবু’ও কাউকে কিছু বলছে না।আহান অধরা’র চোখে পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল।

–অধরা আমার দিকে তাকাও।কি হয়েছে,আমাকে বলো’।তোমার কোথায় কষ্ট হচ্ছে’।

–আমাকে কখনো ঘৃণা করবেন না তো’।

–পৃথিবীর সবথেকে নিকৃষ্ট মানুষটা’ও যদি তুমি হও।তবু’ও আমি তোমাকে ঘৃণা করতে পারবো না।বরং অভিশাপ দিব।যেনো,তুমি সবসময় ভালো থাকো।

–আপনি এত ভালো কেনো’।

–খুব বেশি ভালো।

–হ্যাঁ’।

–তাহলে ভালোবেসে দাও।

–আমি পেয়ারা খাব।আমার জন্য পেয়রা নিয়ে আসুন এখুনি।আহান হেঁসে বলল।

–তুমি পেয়ারা খাবে,একটু অপেক্ষা কর।আমি এখন-ই নিয়ে আসছি।বলে-ই আহান উঠে চলে গেলো’।আহান চলে যাওয়া’র সাথে সাথে অধরা কাউকে ফোন করে বলল।

–আজকে শেষ রাতে দেখা করবে।আমার কথার নড়চড় যেনো না হয়।বলে’ই ফোন রেখে দিলো’।প্রায় ত্রিশ মিনিট পরে আহান পেয়ারা হাতে দিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।অধরা তখন শুয়ে শুয়ে ফোন স্ক্রল করছিলো।আহান’কে দেখে উঠে বসলো’।খুশি হয়ে আহানে’র হাতে থেকে পেয়ারা গুলো নিতে যাবে।তখন-ই আহান তার হাতের মুঠোয় করে আনা মুড়ি গুলো অধরা’র মুখে পুরে দিলো’।অধরা মুড়ি গুলো খেয়ে বলল।

–এটা কি হলো’।

–তুমি গোসল করেছো’।দানা-পানি কিছু খাও নাই।আম্মু বলেছে,গোসল করার পরে ফল খেতে হয় না।তাই আসার সময় হাতে করে এক মুঠো মুড়ি নিয়ে আসছি।এখন খাও।

–আপনি এসব বিশ্বাস করেন।

–আমি আম্মুর কথা শুনি।অধরা আর কোনো কথা না বলে,খেতে শুরু করলো’।আহান অধরা’র দিকে তাকিয়ে আছে।অধরা একটা পেয়ারা,এগিয়ে দিয়ে বলল।খাবেন।

–তুমি খাও।আর কি খাবে বলো।যা যা খেতে ইচ্ছে করবে।আমাকে বলবে।এনে হাজির করার দায়িত্ব আমার।

–বাচ্চার জন্য এতো ভালোবাসা।কই আমাকে তো’।এত ভালোবাসেন না।

–জ্বী না ম্যাডাম আমার কাছে সবার আগে তুমি।তারপরে সবকিছু কিছু’।

–আচ্ছা ডক্টর যদি বলে মা’কে অথবা বাচ্চার মধ্যে একজন কে’ বাঁচাতে বলে।তখন আপনি কি করবেন।

–একদম বাজে কথা বলবে না।তোমার কাছে থাকবো’ই না।বলে-ই রেগে রুম থেকে চলে গেলো আহান।অধরা আহানে’র যাওয়া’র দিকে চেয়ে থেকে হালকা হাসলো।

সন্ধ্যার দিকে তিতলি আসলো বাসায়।তিতলি’কে দেখে সবাই বেশ খুশি হয়েছে।কতদিন হলো মেয়েটা আসে না।কেউ ভেবেছিল তিতলি’র মতো মেয়ে,একদিন গুছিয়ে সংসার করবে।

–কি রে’ মা’ রাত করে এলি কেনো’।সকাল করে আসলে কি হতো’।বাবা-মাকে ভুলে গেছিস।কতদিন পরে আসলি।

–বাসায় নতুন অতিথি আসছে।এটা শোনার পরে আর থাকতে পারলাম না।চলে আসলাম তোমাদের সাথে আনন্দ ভাগ করতে।

–একদম ভালো করেছিস।এখন যা ফ্রেশ হয়ে আয়।তিতির’কে দেখে তিতলি তিতির’কে জড়িয়ে ধরলো।

–আপু কেমন আছো।তুমি দিন দিন এত মোটা হয়ে যাচ্ছো কেনো’।একটু কম করে খাবে বুঝলে।দুলাভাইয়ে’র সবকিছু খেয়ে ধংস করে ফেললে।

–কেনো রে’।তোর জামাই তোকে খেতে দেয় না।তুই দিন দিন এত শুকিয়ে যাচ্ছিস কেনো।

–দুলাভাই তোমাকে কোন দোকানের চাল খাওয়ায় আপু।আমাকে দোকানে’র নাম বলো।আমি’ও বীরকে বলবো।সেই দোকান থেকে চাল কিনে নিয়ে আসতে।যেনো তোমার মতো মোটা হতে পারি।তিতলি’র কথা শুনে,সবাই হেঁসে দিলো’।তিতলি আর কোনো কথা না বলে,নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো।

–মা অধরা কোথায়।অধরা’র সাথে আমার অনেক কথা আছে।বলল তিতলি।

–নিজের রুমেই আছে।আহান মেয়েটা’কে নিচে নামতে দিচ্ছে না।তিতলি কোনো কথা না বলে,ওপরে চলে গেলো।অধরা’র রুমের কাছে এসে বলল।

–আসবো’।অধরা শুইয়ে ছিলো।তিতলি’র কথা শুনে,উঠে বসলো।

–এসো আপু।অনুমতি নেওয়া’র কি আছে।

–শুনলাম বাসায় নতুন অতিথি আসছে।শরীরে’র যত্ন একদম-ই নেওয়া হয় না।আহান আমাকে সবকিছু ফোন করে বলছে।

–উনি একটা পাগল।উনার কথা শুনো না আপু।

–ঐ পাগলটা’ই কিন্তু তোমাকে অনেক ভালোবাসে।তুমি অনেক ভাগবতী অধরা।

অধরা হালকা হেঁসে তিতলি’কে বলল আপু বসো।তিতলি অধরা’র পাশে বসে বলল।

–আমার ভাইটা তোমাকে অনেক ভালোবাসে অধরা।তুমি আমার ভাই’কে কখনো কষ্ট দিও না।তোমাকে ছাড়া আমার ভাইটা বাঁচতে পারবে না।

–উনি যদি আমাকে উনার কাছে রেখে দেন।তাহলে আমি সারাজীবন ওনার কাছে থেকে যাব আপু।

–অধরা তোমার সাথে আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।আমি তোমার অনেক ক্ষতি করে ফেলছি বোন।

অধরা তিতলি’র দিকে তাকিয়ে আছে।তিতলি কি ক্ষতি করেছে তার’।তিতলি কিছু একটা বলতে যাবে।তখনই আহান রুমে আসে।

–আপু কখন আসলে।

–একটু আগে আসছি।কেমন আছিস।

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।ভাইয়া আসে নাই।

–না রে আসে নাই।আহান তুই এত কিপ্টা কেনো রে’।খালি হাতে আমার সাথে কথা বলতে এসেছিস।লজ্জা করে না।তোর বাচ্চা হলে আমি তাকে বলে দিব।তার বাবা কি পরিমান কিপ্টা ছিল।

–আমি’ও বলে দিব।তার খালামনি কি পরিমানে কিপ্টা ছিল।তার খালামনি তাকে খালি হাতে দেখতে এসেছিলো।

–তোর মুখ আমি সেলাই করে দিব।নিচে গিয়ে দেখে আয় কতকিছু নিয়ে এসেছি।

–সেটা বাসার সবার জন্য নিয়ে এসেছো।আমার মেয়ের জন্য কি নিয়ে এসেছো।

–তোর মেয়ে হবে।কে বললো।

–আমি বললাম।

–না আমাদের ছেলে হবে।বলল অধরা।

–না আমাদের মেয়ে হবে।

অধরা আর তিতলি বলল ছেলে হবে।তারপরে তিনজন মিলে প্রচুর ঝগড়া করে,কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে নিচে গেলো।রাতে সবাই মিলে খেয়ে শুইয়ে পড়ল।আহান সব সময় অধরা’র সাথে থাকছে।তাই তিতলির সাথে কথা বলতে পারে নাই অধরা।পাশাপাশি দু’জন শুয়ে আছে।আহান ঘুমিয়ে গেছে।ঘুম নেই অধরা’র চোখে।যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে।তার জন্য যদি তার বাচ্চার ক্ষতি হয়।ভাবতেই অধরার শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো।এসব ভাবতে ভাবতে অধরা ঘুমিয়ে গেলো।ভোরের আজান কান আসতে-ই অধরা উঠে অজু করে নামাজ পড়ে নিলো।শেষ রাতে উঠার কথা ছিলো।উঠতেই পারলাম না।আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করেছে।হালকা অন্ধকার হয়ে আছে চারিদিকে।অধরা বোরকা পড়ে গায়ে চাদর মুড়িয়ে আস্তে করে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।পুরো ড্রয়িং রুম নিস্তব্ধ হয়ে আছে।অধরার গা ছমছম করে উঠলো।তাড়াতাড়ি করে বেড়িয়ে গেলো অধরা।অবশেষে নিদিষ্ট স্থানে এসে পৌঁছালো অধরা।অন্ধকার রুমে মাথা হাত দিয়ে বসে আছে একটি যুবক।অধরা ধীর পায়ে যুবকটির কাছে এগিয়ে আসলো।আস্তে করে বলল।

–বীর।অধরা’র গলার আওয়াজ পেয়ে বীর সামনের দিকে তাকালো।বীর মৃদু হেঁসে বলল।

–আমাদের কুইন’ও তাহলে কাউকে ভালোবেসে ফেললো।

–তোমার সাথে এসব কথা বলার জন্য আমি আসি নাই।

–আমাকে ভালোবাসে না কেনো অধরা।আমাকে ভালোবাসলে কি এমন ক্ষতি হতো অধরা’।আমাকে একবার ভালোবেসে দেখতে,পৃথিবীর সব নিয়ম ভেঙে তোমাকে আমার করে নিতাম।

–নাম ধরে কথা বলতে শিখে গেছো’।

–আমি তোমার ছোট নই কুইন।আমি তোমার থেকে যথেষ্ট বড়।শুধু স্যারের আদেশ তোমাকে ম্যাডাম বলি।যাই হোক আপনার নাম ধরে বলার জন্য স্যরি ম্যাডাম।

–শুনলাম ডক্টর শারমিন’কে নাকি আমাদের সব খবর তুমি দিচ্ছো।বেইমানি কেনো করলে বীর।

–তুমি কেনো আমাকে রেখে আহান’কে বিয়ে করলে।তোমার এত টাকার দরকার ছিলো।আমাকে বলতে টাকা দিয়ে ভরিয়ে দিতাম।তুমি কি জানতে না।আমি তোমাকে ভালোবাসতাম।তুমি কি আমার অনুভূতি বুঝতে পারতে না।নিজের পুরো জীবনটা তোমার জন্য শেষ করে দিলাম।তুমি আমাকে কেনো ভালোবাসলে না কুইন।তোমাকে যেদিন চৌধুরী বাড়িতে দেখেছিলাম।সেদিনই চিনে ফেলছিলাম।তিতলির মুখ যখন শুনলাম তুমি কিছু টাকার জন্য আহান’কে বিয়ে করেছো।বিশ্বাস করো আমার পুরো দুনিয়া এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো।তবু’ও আশা ছিলো তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে।কিন্তু তুমি আসলে না কুইন।তুমি আহান’কে ভালোবাসে ফেললে।আমাকে ভালোবাসে কি ক্ষতি হতো তোমার।

–বীর তুমি বিবাহিত।ঘরে তোমার বউ আছে।তাকে মন প্রাণ উজার করে ভালোবাসো। কুইন কখনো কাউকে ভালোবাসে না।আহানে’র কথা বলছো।আমি আহান’কে ভালোবাসি নাই।আহান আমাকে ভালোবাসতে শিখিছে।আহান এমন একটা মানুষ যাকে,ভালো না বাসে থাকার কোনো উপায় নেই।আমি তোমার সাথে এসব কথা বলতে আসি নাই।আসল কথায় আসো।

–আমি যদি তোমার সংসার শেষ করে দেই।

–তাহলে তোমাকে মেরে’ই বিশ নাম্বার খুন করা পূর্ণ করবো।

–যদি তোমাকে শেষ করে দেই।

অধরা শব্দ করে হেসে ফেললো।

–কুইন’কে তুমি মৃত্যুর ভয় দেখাচ্ছো বীর।কুইন সব সময় মৃত্যু হাতে নিয়ে ঘুরে।হাসালে বীর।

–কুইন কিন্তু একা নেই।এখন কুইনের সংসার হয়েছে।কুইনে’র পেটে বাচ্চা রয়েছে।কুইন না হয় নিজের কথা চিন্তা করে না।কিন্তু তার সন্তান,স্বামী,পরিবারের কথা তো’ চিন্তা করে।

–বীর খুব সাহস হয়ে গেছে।

–একদম আমাকে ধমকাবে না অধরা।এতদিন তোমাকে পাওয়ার জন্য সবকিছু করেছি।সেই তুমি আমার হলে না।আমি আর তোমার জন্য কিছু করবো না।

–অধরা না হয় তোমাকে ভালোবাসে না।আমি তো তোমাকে ভালোবাসি বীর।তাহলে আমাকে কেনো ভালোবাসলে না বীর।

–তিতলি তুমি।বলল বীর।অধরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।হাত-পা রীতিমতো কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে অধরা’র।

চলবে…..