তুমি নামক যন্ত্রণা পর্ব-০৩

0
2357

#তুমি_নামক_যন্ত্রণা
লেখকঃ আবির খান
পর্বঃ ০৩
জান্নাতকে নিয়ে আবির ওর বাসার দিকে যাচ্ছে। রাস্তাটা এখনো ফাঁকা। ভোরের আলো একটু একটু করে বের হচ্ছে। আবির গাড়ির জানালাটা খুলে দিয়েছে। জান্নাত গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বসে ছিল। তাই স্নিগ্ধ সকালের ঠান্ডা মধুর হাওয়া এসে ওর মুখে লাগছিল। ও চোখ বন্ধ করে তা অনুভব করছে আর মনে মনে ভাবছে, আবিরের বাসায় তার পরিবারের লোকেরা ওকে দেখে কি বলবে? কিভাবে আবির ওনাদের সাথে ওকে পরিচয় করাবে? কি বলবে আবির? যে দেহের বিনিময়ে ভাইকে বাঁচাতে চেয়েছিল এই মেয়েটা। তাই ওকে আমি সাহায্য করছি! আবিরের পরিবার কি তা মেনে নিবে? নাকি ওনারা ওকে কতটা নিচ কতটা খারাপ ভাববে। হয়তো গা ধাক্কা মেরে বাসা থেকে বের করে দিবে৷ নয়তো কাজের লোকের সাথে রাখবে৷ আর যখন আবিরের ইচ্ছা হবে তখন ওকে ভোগ করবে৷ এটাই হয়তো ওর কপালে লেখা ছিল। জান্নাত এসব করুন পরিস্থিতির কথা ভেবে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে। আবির লুকিং গ্লাসে সেটা খেয়াল করে। ও জান্নাতকে আড় চোখে দেখে মনে মনে বলে,

– তোমাকে এতটা জ্বালাবো জান্নাত যে তুমি পাগল হয়ে যাবে৷ কিন্তু আমাকে ছাড়তে পারবে না। কারণ তোমার জীবনটা এখন আমার কাছে। হাহা৷

আবির জান্নাতকে নিয়ে আর জান্নাত ওর আসন্ন কঠিন জীবন নিয়ে ভাবতে ভাবতে ওরা বাসায় চলে আসে। আবির বাড়ির মেইন ফটকের সামনে এসে হর্ণ দিতেই জান্নাত চোখ মেলে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসে। দারোয়ান দ্রুত গেইট খুলে দিলে আবির বাড়ির ভিতরে গাড়ি নিয়ে ঢুকে। জান্নাত ওর সম্মুখে বিশাল বড়ো একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি দেখছে৷ আধুনিক কারুকার্যে রূপায়িত পুরো বাড়ির সামনাটা। বাড়িটার সামনে আবার একটা বাগান আছে। সেখান থেকে অসম্ভব সুন্দর মিষ্টি একটা ঘ্রাণ এসে জান্নাতের নাকে লাগছে। জান্নাতের খুব ভালো লাগে ঘ্রাণটা। ওকে অনেকটা রিফ্রেশ করে দেয় এই ঘ্রাণ। আবির গাড়ি থামাতেই ওর লোকেরা এসে দ্রুত ওদের দরজা খুলে দেয়। ও আর জান্নাত একসাথে গাড়ি থেকে নামে। জান্নাত অবাক পানে আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে৷ এরকম বাসা কিংবা জায়গা ও সিনেমাতেই শুধু দেখেছে। আজ প্রথম নিজের চোখের সামনে দেখছে। আবির গাড়ির চাবিটা ওর লোকদের দিয়ে জান্নাতের কাছে যায়৷ জান্নাত এক নজর আবিরের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে। আবির মুচকি একটা হাসি দিয়ে ওর হাতটা ধরে ওকে নিয়ে বাসার দিকে হাঁটা দেয়। জান্নাত বাধ্য মেয়ের মতো আবিরের সাথে যাচ্ছে৷ তবে ওর মনের অবস্থা খুব খারাপ। একদিকে ভাইয়ের যন্ত্রণা আর এখন আবিরের পরিবার হয়তো আরেক যন্ত্রণার কারণ হবে৷ কিন্তু ওকে যে সবটাই মেনে নিতে হবে, ভাইকে বাঁচাতে হলে৷ আবির কারি কারি টাকা দিচ্ছে ওকে। আর ও এটুকু কষ্ট মেনে নিতে পারবে না? জান্নাত নিজেকে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে প্রস্তুত করে নেয় আসন্ন ঝড়ের জন্য৷ ওরা বাসার গেইটের কাছে যেতেই একজন বয়স্ক লোককে দেখতে পায়। তার বয়স আনুমানিক ষাটের ধারাধার হবে। সে ওদের দেখে বলে,

– বাবা আসছো? তোমাকে কত কল দিলাম কই ছিলা?
– আঙ্কেল সব বলবো। তার আগে পরিচিত হন৷ ও হলো এ বাসার নতুন সদস্য, জান্নাত। আজ থেকে ও এখানেই আমাদের সাথে থাকবে৷
~ আসসালামু আলাইকুম।
– অলাইকুম আসসালাম মা। মাশাল্লাহ খুব সুন্দরী মেয়ে তুমি।
– একদম ঠিক বলছেন। তাই তো নিয়ে আসলাম। হাহা।
– আচ্ছা আচ্ছা৷ তাহলে তোমরা তোমাদের রুমে যাও, ক্লান্ত মনে হচ্ছে অনেক।
– আর বইলেন না। আমার চেয়ে ও বেশি ক্লান্ত। উপরে কিছু খাবার পাঠায় দিয়েন। খেয়ে একটা ঘুম দিব৷
– আচ্ছা। আমি এখনি পাঠাচ্ছি।
– আসো জান্নাত৷

জান্নাতের মাথায় এখন লাটিমের মতো ঘুরছে৷ ও কিছু বুঝতে পারছে না। যেখানে আবিরের বাবা-মার থাকার কথা সেখানে এই বয়স্ক লোক! তাহলে তারা কোথায়? জান্নাত দেখেছে আবিরকে ওর পরিবার থেকে কেউ কোন কল দেয় নি। সারারাত বাইরে ছিল তাও। এখন বাসায় আসলো অথচ বাবা-মার কেউই ওর খবর নিতে আসলো না। এটা কেমন কথা! জান্নার আর মাথায় চাপ না নিয়ে ভেবে নেয় যে হয়তো তারা ঘুমাচ্ছে৷ বড় লোক বাবা-মা হয়তো এত গুরুত্ব দেয় না৷ এসব ভেবে জান্নাত নিজেকে একটা বুঝ দিয়ে চুপচাপ আবিরের সাথে ওর রুমের দিকে যেতে থাকে। এদিকে আবির বাসায় আসতেই দুষ্টামি শুরু করেছে। জান্নাতের হাতটা ধরে ওর আঙুল গুলো নিয়ে খেলা করছে ওর রুমের দিকে যেতে যেতে। জান্নাত যেমনটা অবাক হচ্ছে তেমন লজ্জাও পাচ্ছে। আর সে সাথে একরাশ তিক্ততা নিজের উপর ত আছেই। আবিরকে থামানোর কোন এবিলিটি ওর মধ্যে আর নেই৷ কারণ সেটা আবির কিনে নিয়েছে। ও যা চাইবে তাই করতে পারবে জান্নাতের সাথে। আবির দুষ্টামি করতে করতে ওর রুমের সামনে নিয়ে আসে জান্নাতকে। সার্ভেন্টরা দরজা খুলে দিলে আবির জান্নাতকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে। আবিরের রুমে ঢুকে জান্নাত পুরো থ হয়ে আছে। এত সুন্দর এত বড়ো রুম ও আগে কখনো দেখে নি। হোটেলের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি সুন্দর আবিরের রুমটা৷ জান্নাত যখন আবিরের রুম দেখছিল এই ফাঁকে আবির ওর রুমের বাইরে থাকা সার্ভেন্টদের চলে যেতে বলে। তারপর রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে জান্নাতের কাছে আসে। জান্নাত কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই আবির ওকে পিছনে থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আর কানের কাছে মুখ নিয়ে দুষ্টামি করে প্রথমে একটা ফু দেয়। আর সাথে সাথে জান্নাত কেঁপে উঠে। ওর পুরো শরীরে অন্যরকম একটা শিহরণ অনুভব হয়৷ ও আবিরের হাত দুটো ধরে ছাড়াবার জন্য৷ কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয়, এটা ও করতে পারবে না। কারণ অনেক আগেই আবিরকে ও নিজেকে সপে দিয়েছে। এবার আবির বলে,

– কি আমাকে সরাতে চেয়েছিলে? থামলে কেন? সরাও তো পারলে দেখিইইই…
~ না থাক। এটাই তো আমার ভাগ্য৷ আমি মেনে নিয়েছি। আপনার যা ইচ্ছা করেন আমার সাথে। আমি বাঁধা দিব না।
– বাহ! তাই নাকি? কেন আমাকে বুঝি ভালো লেগেছে? আমাকে পেতে ইচ্ছা করে তাই?
~ মজা করছেন? আমি সবসময় নিজেকে সামলে চলতাম। আমার কখনো কোন ছেলে বন্ধু ছিল না। আমি এড়িয়ে চলতাম। আর আজ ভাগ্যের জোরে এই অবস্থা। (জান্নাত কাঁপা কণ্ঠে কথা গুলো বলল)

জান্নাতের কথা শেষ হলে আবির চট করে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ফেলে। ওর কান্নাসিক্ত ভীতু মুখখানা দেখছে আবির। জান্নাত যে ভয় পাচ্ছে তা ও ভালো ভাবেই জানে। তাই ওকে আরও ভয় দেখানোর জন্য বলে,

– এখন তোমার সাথে আমাদের সেই বাকি কাজটা করবো। তোমাকে পাগল করে ফেলবো। কেউ শুনবে না তোমার আর্তনাদ। ভালো হবে না?

জান্নাত আবিরের কথা শুনে ভয়ে একটু নড়েচড়ে উঠে। ওর পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। তাও সাহস করে বলে,

~ আপনার যা ভালো লাগে করুন। আপনাকে কিছু বলার সামর্থ্য আমার নেই।
– তাই? তাহলে আসো।

বলেই আবির জান্নাতকে নিয়ে আস্তে আস্তে বেডের দিকে যাচ্ছে। জান্নাতের খুব কান্না পাচ্ছে। ও বড্ড ক্লান্ত৷ গায়ে একফোঁটা শক্তি নেই৷ তারমধ্যে আবির‍! জান্নাতের পা যেন চলছে না। আবির হঠাৎই জান্নাতকে ধরে বেডে বসিয়ে দেয়৷ ও খুব ভয় পাচ্ছে। ওর গলা শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে যাচ্ছে৷ জান্নাতকে বেডে বসিয়ে আবির ফ্লোরে ভর দিয়ে বসে ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। জান্নাত পুরো অবাক হয়ে যায়৷ আবির এমন করল কেন! জান্নাত ভেবেছিল এখন ও সব হারাবে৷ কিন্তু আবির উল্টো হাসছে৷ জান্নাত লজ্জায় এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে৷ আবির হাসতে হাসতে ওর কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে,

– ভয় নাই এখন কিছু করবো না। দাঁড়িয়ে ছিলে তাই বসিয়ে দিলাম। অনেক ক্লান্ত তুমি আমি বুঝি। যাই হোক তুমি বসে রেস্ট নেও আমি বরং সাওয়ার নিয়ে আসি। টাটা।

বলেই আবির জান্নাতের গালে আলতো করে একটা মিষ্টি পরশ বুলিয়ে দিয়ে উঠে পড়ে৷ জান্নাত মুহূর্তেই আবার সেই অন্যরকম শিহরণটা ওর শরীরে অনুভব করে৷ আবিরের স্পর্শ এতটাই পাওয়ারফুল। তবে এখন আবিরের কান্ড দেখে ও স্তব্ধ হয়ে আছে। ও রীতিমতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে কথা বলার। আবির উঠতেই ওদের খাবার নিয়ে আসে। ও সার্ভেন্টদের কাছ থেকে খাবার নিয়ে রেখে দিয়ে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে সাওয়ার নিতে চলে যায়। জান্নাতের কেন জানি আবিরকে খুব রহস্যময় লাগে। কি যেন একটা আবিরের মধ্যে আছে। নাহলে এভাবে হঠাৎ করে ওর মতো একটা মেয়েকে পাহাড় সমান সাহায্য কেন করতে যাবে! জান্নাত আপাতত উত্তর খুঁজে পায় না। ওর নজর যায় খাবারের দিকে। খুব ক্ষুধা লেগেছে ওর। অজান্তেই কখন যেন খাবারের কাছে চলে যায় ও৷ গিয়ে দেখে কি কি খাবার দিয়েছে। জুস, ব্রেড, কলা, জ্যালি আর কনফ্লেক্স। জান্নাত কিছু না ভেবেই খাওয়া শুরু করে। আবিরের জন্য অনেকটা খাবার রেখে বাকিটা ও খেয়ে ফেলে। ও যখন সব শেষে জুসটা খেয়ে গ্লাসটা রাখে ঠিক তখন দেখে আবির হেলান দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। জান্নাত হয়তো এর জন্য লজ্জা পাওয়ার কথা৷ কিন্তু জান্নাত লজ্জা পায় তবে অন্য একটা কারণে। আর সেটা হলো আবিরের খালি গা৷ জান্নাত দেখে আবির শুধু একটা ট্রাউজার পরে ওর সিক্স প্যাক খালি গায়ে তোয়ালেটা গায়ের উপর ফেলে ওর দিকে তাকিয়ে এখন হাসছে। জান্নাত লজ্জায় দ্রুত মুখ লুকিয়ে ফেলে। আবির হাসতে হাসতে আলমারির কাছে গিয়ে টি-শার্ট বের করতে করতে বলে,

– লজ্জা পেলে হবে না৷ এখন থেকে আমাকে এভাবে দেখেই অভ্যস্ত হতে হবে তোমাকে।

জান্নাত লজ্জায় লাল হয়ে আছে। আবির জামা পরে জান্নাতের কাছে এসে বলে,

– যাও এবার তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি খাই। অনেক ক্ষুধা লেগেছে।
~ আচ্ছা।

বলেই জান্নাত মুখ লুকিয়ে চলে যেতে নিলে আবির খপ করে ওর হাত ধরে টান মেরে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। জান্নাত আঁতকে ওঠে৷ ও লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। আবির ওর হাতের তোয়ালেটা ওকে দিয়ে বলে,

– এটা না নিয়ে কই যাচ্ছিলে।
~ ওহ! সরি খেয়াল ছিল না। (তোয়ালেটা নিয়ে)

আবির জান্নাতকে ছাড়ে না। ওকে ধরে রাখে। জান্নাত আস্তে করে বলে,

~ ছাড়ুন। নাহলে ফ্রেশ হবো কিভাবে?
– একটা শর্তে ছাড়বো। (দুষ্টু হাসি দিয়ে)
~ কি শর্ত? (চিন্তিত কণ্ঠে)

আবির ওর গালটা জান্নাতের কাছে এনে ইশারায় জান্নাতকে বুঝিয়ে দেয় ওকে কি করতে হবে৷ জান্নাত আবিরের কান্ড দেখে ভীষণ লজ্জা পায়৷ ও মাথা নাড়িয়ে না না করে৷ আবির গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে,

– ডিলললল…
~ আচ্ছা আচ্ছা। (ভীতু স্বরে)

আবির আর কিছু বলার আগেই জান্নাত ওর নরম ঠোঁটটা আবিরের গালে বুলিয়ে দেয়। আবির খুব খুশি হয়ে হাসতে হাসতে ওকে ছেড়ে দেয়৷ আর জান্নাত ছাড়া পেয়ে লজ্জায় দৌড়ে পালায়। সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। আবির সত্যিই অনেক পাজি। অবশ্য জান্নাত যেমনটা ভেবেছিল ঠিক তেমনটা আবির না৷ আবির কেমন জানি ওকে জাদু করছে। আবির ওকে এত জ্বালাচ্ছে তাও ওর প্রতি কোন বিরক্ত কিংবা রাগ ওর হচ্ছে না৷ বরং অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছে৷ ও জানে না ওর সাথে এসব কি হচ্ছে৷ আর আবিরের মূল উদ্দেশ্যই বা কি তাও ও বুঝতে পারছে না। আবির ওকে আপনও করছে না আবার ছেড়েও দিচ্ছে না। মানে কেমন জানি। জান্নাত আর ভাবতে চায় না। এখন ভাইটার জন্য অনেক চিন্তা হচ্ছে ওর৷ আজ সন্ধ্যার পর হয়তো ওর ভাইটার অপারেশন করা হবে৷ জান্নাত দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আবিরের খাওয়া দাওয়া শেষ। ও তোয়ালেটা এক জায়গায় রেখে, আবিরের দিকে তাকিয়ে দেখে, ও বেডে শুয়ে ফোন চালাচ্ছে। জান্নাত এখন একটু ঘুমাতে চায়। ও রুমের মধ্যে একটা বড়ো সুন্দর সোফা দেখতে পায়। ব্যাস আস্তে করে চুপিচুপি গিয়ে সোফার উপর শুয়ে পড়ে। আর মনে মনে ভাবে,

~ এ কেমন জীবন! সবার জীবনটা কত সুন্দর স্বচ্ছ হয়। হাসিখুশি আর আনন্দে পরিপূর্ণ থাকে। কিন্তু ওর কপালটাই খারাপ। ছোট ভাইটার যখন ১০ বছর তখন ওদের মা মারা যায়৷ ওর বাবা একা দিন পরিশ্রম করে টাকা আয় করতেন৷ ওদের পড়া লেখা করাতেন৷ যেভাবে হোক সংসারটা ভালোই চলতো। কিন্তু দিন যেতে যেতে জান্নাতের বাবা একদিন রাতে ঘুমের মধ্যেই স্ট্রোক করেন। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ হয়ে যায়। তখন জান্নাতের বয়স ২০ আর ওর ভাইয়ের ১৫। জান্নাত ভার্সিটি ছেড়ে দিয়ে টিউশনিতে নামে। দিন রাত ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে যা টাকা আয় করতো তা দিয়ে বাসা ভাড়া খাওয়া এবং ভাইয়ের স্কুলের খরচটা যেত কোন মতে। এভাবে একবছর কাটে। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে সব কেমন জানি উল্টা পালটা হয়ে যায়৷ জান্নাতের ভাইটা বুকের ব্যথায় অজ্ঞান হয়ে যায়৷ আর এরপর কি হয় তা তো জানাই৷ ধীরে ধীরে জমানো টাকা সব শেষ হয়ে যায়। ছাত্র-ছাত্রীরা পড়া বন্ধ করে দেয়। টাকার অভাবে ওর আদরের ভাইটা ছটফট করতে থাকে। শেষমেশ ভাইয়ের জন্য নিজের দেহটাকে বলি দিয়ে দেয় জান্নাত। কিন্তু হঠাৎ কোথা থেকে যেন আবির এসে ওর জীবনটাকে অন্যরকম করে দিচ্ছে। যা কখনো ভাবে নি স্বপ্নও দেখে নি সেসব ওর সাথে হচ্ছে৷ যার একমাত্র কারণ আবির।

জান্নাত যখন আবিরের কথাই ভাবছিল হঠাৎই ও ফিল করে ওকে কে যেন শক্ত বাহুডোরে তুলে ফেলেছে। জান্নাত তাকিয়ে দেখে আবির! ও পুরো অবাক। কি করছে আবির? ওকে কোলে কেন তুলল? আবির কিছু না বলে ওকে নিয়ে সোজা বেডের উপর সুন্দর করে শুইয়ে দেয়৷ জান্নাত বেশ অবাক হয়ে মুহূর্তেই উঠে বসে। আবিরও বেডের উপর উঠে ওর সামনে বসে ওর হাত দুটো এক করে ধরে রাগী গলায় বলে,

– এই মেয়ে তুমি কাকে জিজ্ঞেস করে সোফায় গিয়ে শুয়েছো বলো?

জান্নাত ভীষণ ভয় পায়। আবির রেগে গেলে ওকে খুব ভয়ংকর লাগে৷ জান্নাত আমতা আমতা করে বলে,

~ না মানে…খুব ঘুম পাচ্ছিল তাই কিছু না বলেই শুয়ে পড়েছি। আর সোফা ছাড়া আমি কোথায়ই বা ঘুমাবো?
– সোফা ছাড়া কোথায় ঘুমাবা না? দাঁড়াও দেখাচ্ছি।

বলেই আবির হাত উঠিয়ে জান্নাতকে মারতে নেয়৷ জান্নাত ছোট একটা চিৎকার দিয়ে ভয়ে অন্যদিকে তাকায়। আবির জান্নাতকে বোকা বানিয়ে ধাক্কা দিয়ে বেডে উপর ফেলে দিয়ে ওর একদম কাছে গিয়ে বলে,

– এখানে ঘুমাবা৷ বুঝলে?(হাসি দিয়ে)

জান্নাত খুব ভয় পেয়েছে। বুকটা ধরপাকড় করছে। তার উপর আবির ওর এত কাছে। দুজন দুজনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ জান্নাত এখন কোন কিছু বলার পজিশনে নেই। ওদের মাঝে এই মধুর সময়টা যেন এখন থমকে গিয়েছে। কিন্তু আবির হঠাৎই জান্নাতের নাকে ওর নাক দিয়ে একটা ঘষা দিয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়ে। আর বলে,

– নেও এবার আরাম করে ঘুমাও। সোফার উপর কেউ ঘুমাতে পারে নাকি পাগলি? আমাকে এসে জিজ্ঞেস করবে না কোথায় ঘুমাবে৷ আমি কি বলতাম না? এখন থেকে আমার বেডে আমার সাথে ঘুমাবে।
~ আমার মতো একটা খারাপ মেয়ের সাথে আপনি ঘুমাবেন? আপনার ঘৃণা হবে না?

আবির জান্নাতের দিকে ফিরে শুয়ে ওর গালে হাত রেখে চুলগুলো নিয়ে খেলা করতে করতে বলে,

– কিসের জন্য তোমাকে ঘৃণা করবো? কি এমন করেছো তুমি? মুখে তো বেশ বড়ো করে বলো আমাকে ভোগ করবেন না অথচ পা দুটো থরথর করে কাঁপে যখন এগুলা বলো। শোনো খারাপ মেয়েদের কখনো এমন হয় না৷ তুমি যেহেতু খারাপ না তাই এমন হয়৷ সো নিজেকে ছোট করবানা অন্তত আমার সামনে না। নাহলে আমার রাগ সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা নেই। কি যে করবো তোমাকে….
~ আপনি সত্যিই অনেক অদ্ভুত! আপনাকে বুঝা অনেক কঠিন।

আবির জান্নাতের উপর থেকে হাত সরিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে,

– কখনো মন থেকে বুঝার চেষ্টা করলে অবশ্য বুঝবে। এখন ঘুমাও। সকালে আবার হাসপাতালে যেতে হবে, অফিসে যেতে হবে৷ উফফ! কত কাজ।

জান্নাত আবিরের সুন্দর চেহারাটার দিকে তাকিয়ে থাকে আর কিছু বলে না। ও ভেবেছে আবির হয়তো চোখ মেলে তাকাবে না। কিন্তু আবিরতো দুষ্টু কম না। ও হঠাৎই এক চোখ খুলে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়। জান্নাত লজ্জা পেয়ে দ্রুত চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে। আবির ওর হাতটা মুঠ করে ধরে শুয়ে থাকে। আর মনে মনে বলে,

– রঙধনুর সাত রঙ যখন তোমার মাঝে,
তোমাকে দূরে সরালে সে তো তার রঙ হারাবে।

বলে আবির ঘুমিয়ে পড়ে। ওর উষ্ণ হাতের স্পর্শে জান্নাত অজানা এক শান্তি খুঁজে পায়। ও একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।

পরদিন সকালে,

আবিরের বেডের ঠিক উপরেই জানালা। সেই জানালা ভেদ করে বাইরের কড়া রোদের আলো ওদের মুখের উপর এসে পড়ছে। রোদের তাপে সবার আগে জান্নাতের ঘুম ভাঙে। ও চোখ মেলার আগে অনুভব করে ও কিছু একটার সাথে বেশ আষ্টেপৃষ্টে মিশে আছে। জান্নাত আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকিয়ে যা দেখে তা দেখার জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ও দেখে….

চলবে…?