তুমি যে আমার পর্ব-০৬

0
671

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_6

বর্ষা বিছানায় জরোসরো হয়ে বসে আছে। আর লোকটা বাথরুমে ঢুকে গেছে। লোকটা ওকে দরজার বাইরে বের করে দেওয়াতে। ও মনে মনে খুশি হয়েছিলো। এই বুঝি ছাড়া পাওয়ার একটা সুযোগ পেলো। এখান থেকে বের হওয়ার কোন রাস্তা পাওয়া জন্য ঠোঁটের কোনে হাসি চলে এসেছিলো। কিন্তু বর্ষার সমস্ত আশায় জল ঢেলে দিয়ে আবার রুমে নিয়ে আসলো। আচমকা টানে বর্ষা ভয় পেয়ে যাই। আর লোকটার বুকের উপর আছড়ে পরে।লোকটা নিজের থেকে সরিয়ে বিরক্ত মুখ করে বলে,

‘ তোমার মতলব আমি খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছি?’

বর্ষা বিস্মিত হয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আবার কি মতলব করলাম?

লোকটা আবার আমার দিকে এগিয়ে এসে একদম আমার গা ঘেষে দাড়িয়ে বলল, ‘নিজেকে খুব চালাক মনে করো তাই না। আমাকে রাগিয়ে এখান থেকে পালানোর সুযোগ খুঁজছিলে! বাট ইট ইজ নট সো ইজি টু ফল দি ট্রাম্পেট।’

বর্ষা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। বর্ষা পালাতে চাই ঠিক কিন্তু তখন বর্ষা এসব ভাবিনি কিন্তু লোকটা উল্টা ভাবছে। নিজে বোকামো করে ওকে ধমকাচ্ছে।

বর্ষা কিছু বলতে যাব তখন তূর্য নিজের হাত বারিয়ে বর্ষার কপালে হাত রেখে গালে সাইড করতে করতে বলে,

‘ আমার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ না হ‌ওয়া পর্যন্ত তুমি এখানে থেকে এক পাও নড়তে পারবে না। কাজ শেষ হলে আমি নিজেই তোমাকে তোমার পরিবারের কাছে দিয়ে আসব।’

বর্ষা ভয়ার্ত গলায় বলে উঠলো, ‘আপনার উদ্দেশ্য কি? আর কেন আমাকে……

তূর্যের আগুল বর্ষার গাল বেয়ে গলায় এসে থেমেছে। তূর্য এর এমন স্পর্শে বর্ষা হার্টবিট ঝড়ের গতিতে লাফাচ্ছে। দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে শরীরে প্রত্যেকটা লোম খাড়া হয়ে উঠছে। বর্ষাকে সম্পুর্ণ কথা শেষ করতে দিল না তূর্য। কথার মাঝেই তূর্য নিজের মাথা হেলিয়ে বর্ষার কানের কাছে নিয়ে গেল নিজের মুখ,
বর্ষার ঘাড়ের তূর্যের গরম নিঃশ্বাস পড়ছে। তাতে ওর সারা শরীর কেঁপে উঠছে।

‘আমার উদ্দেশ্য তুমি।’

তুর্যের ফিসফিসে কথাটা শুনে বর্ষা থমকে গেল বিষ্মেয় হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তুর্য ফট করে ওর কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বলল,,

‘ইউ লুক সো হট ইন মাই শার্ট।’

বর্ষা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে কথাটা বলে অসভ্য লোকটা ঠোট কামড়ে হেসে বাথরুমে চলে গেলো। এক নম্বরে অসভ্য লোক। সামনে কিছু না বলতে পারলে মনে মনে লোকটা চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে বর্ষা। কিন্তু লোকটা কাছে এলে ভয়ে গুটিয়ে যায়।

তখন থেকে বর্ষা বিছানার উপর বসে আছে। লোকটার ফোন ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখা। বর্ষা এক দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। একবার ফোনটা হাতে নিয়ে বাপি কে কল করতে পারলে ভালো হতো। দু’দিন চলে গেল ও মাম্মা বাপ্পির থেকে দূরে আছে। তারা নিশ্চয়ই ওর জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছে ও তো পাচ্ছে। খুব মিস করছি মাম্মা বাপ্পীকে।দুদিন ধরে না গোসল করতে পারছি। না খেতে পারছি। দুদিন বর্ষা একবার খেয়েছে। পেটের ভেতর যন্ত্রণা করছে খিদের জন্য। ইঁদুর দৌড়াচ্ছে মনে হয়। লোকটা তো গোসল করছে এই সুযোগে আমি ফোনটা নিয়ে একবার কল করে দেখি‌। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বাথরুমের দরজার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালো বর্ষা। মনে মনে দোয়া দরুদ পড়ছে। যেন বাপির সাথে কথা বলতে পারে। কাঁপা পায়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো। আর ফট করে ফোনটা হাতে তুলে নিলো। হাত কাঁপছে লোকটা যদি বেড়িয়ে যায় তাহলে তো আমাকে খুব বকবে?
একদিকে ভয় ও মিইয়ে যাচ্ছি অন্যদিকে শেষ একটা চেষ্টা করার জন্য সাহস পাচ্ছে। এই সুযোগে দ্বিতীয়বার পাব কিনা জানিনা। মোবাইলের স্ক্রিনে আলো জ্বলতেই লোকটা মাক্স পরিহিত চেহারা ভেসে উঠলো। লোকটা সব জায়গায় খালি মাক্স পরা ছবি দিয়ে রাখা। এই মাক্স পরা লোকটা তো ওকে প্রথম দিন কিডন্যাপ করেছিল। তার মানে এই লোকটা ওকে সেদিন তুলে এনেছে। আর ও ভেবেছিল দুইজন দুই কিডন্যাপার। এই লোকটা ওকে চড় মেরেছিলো। সাথে সাথে বাম গালে আমার হাত চলে গেলো।

জীবনে ফার্স্ট কেউ ওকে আঘাত করেছিল। আর সেই লোকটার হলো ইনি। বর্ষা সবকিছু মনে করে রাগ পুষে রাখলে মনে। কখনো সুযোগ পেলে এই লোকটাকে ও ছাড়বে না। কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেবে। কিন্তু সেই সুযোগ কি ও কখনো পাবে? পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা। চার বার ট্রাই করলো কিন্তু কিছুতেই খুলছে না। বর্ষা তুই এত বোকা। একবারও ভাবলিনা লোকটা অবশ্যই ওনার ফোনের লক দিয়ে রেখেছে। আর ও কি সুন্দর খুশিমনে এখানে চলে এলো।
বর্ষা পঞ্চম বার ট্রাই করে রেগে ফোনটা শব্দ করে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখল। চোখের কোনায় জল চলে এসেছে। মাম্মা বাপির সাথে কথা বলতে পারল না। ও ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়েই নিচু হয়ে চোখের জল ফেলতে লাগলো।

এদিকে তুর্য বাথরুমে থেকে শব্দটা শুনতে পেয়ে তাড়াতাড়ি টাউজার আর টি-শার্ট পরে বেরিয়ে এসেছে। বেরিয়ে এসে দেখতে পায় বর্ষা ফোনের উপর হাত থেকে নিচু হয়ে কাঁদছে। ওর বুঝতে বাকি থাকলো না কি করতে গেছিলো মেয়েটা। রাগ হয় ওর খুব। ও রেগে বর্ষার কাছে গিয়ে হাতের কবজি ধরে ওর দিকে ফিরিয়ে বলে,

‘তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার ফোন ধরেছে?’

বর্ষা ইমোশনাল হয়ে ওই খানে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। আর এই রাক্ষস লোকটার কথা ভুলেই গেছিলো। তবুও এখন যেন ভয় হচ্ছে না। ও নিজেও তূর্যের দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।

‘আপনার থেকে কম। আপনার ও তো সাহস কম না আপনি আমাকে ধরে এনেছেন।কিডন্যাপ করেছেন আমার বাপিকে চেনেন। খুব তাড়াতাড়ি বাপি আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করবে আর তখন আপনাকে কঠিন শাস্তি দেবে?’

‘আমাকে শাস্তি দিবে তোমার বাপি?’
তিরস্কার গলায় বলল তূর্য। ওর মুখে তিরস্কারের হাসি।

‘হ্যাঁ আমার বাপি আপনাকে কঠিন শাস্তি দেব এর জন্য। আপনি তার একমাত্র মেয়েকে কিডন্যাপ করেছেন। এর জন্য আপনার কি হাল করে দেইখেন। খুব তাড়াতাড়ি বাপি আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে।’

‘তোমার বাপি আমাকে শাস্তি দেবে। হাহাহা তোমার এই বোকা বোকা কথা শুনে আমার সাথে এখন হাসি পাচ্ছে।আর কি বললে তোমাকে উদ্ধার করবে খুব তাড়াতাড়ি করতে পারলে তো এই দুই দিনেই করতে পারত। দুইদিন যেহেতু পারেনি দু’বছরেও পারবে না। আমি না চাইলে তোমার নাগাল কেউ পাবে না।’

আচমকা বর্ষা তূর্য এর কলার চেপে ধরলো,

‘ কেন পাবে না ঠিক পাবে। আপনি একটা ফাজিল, অসভ্য, হনুমান,বাঁদর লোক আমাকে কিডন্যাপ করেছেন বাপির সাথে কথা বলতে দিচ্ছেন না। তারা আমার চিন্তায় কি করছেন আল্লাহ জানে। আপনার মতো খারাপ লোক জীবনে দেখি নি। এভাবে একটা নিষ্পাপ বাচ্চা মেয়েকে অত্যাচার করছেন।’

বর্ষা তুর্যের কলার ধরায় তো তূর্য রাগে আগুন হয়ে গেছে। চোখ গুলো লাল টকটকে হয়ে গেছে। আর বর্ষার এতসব কথা শুনে ওর রাগ আরো বেড়ে মাথায় উঠে গেছে।

ও রাগে দাতে দাঁত চেপে বর্ষার উদ্দেশ্যে বলল,,

‘মুভ ইউর হ্যান্ড।’

‘না ছাড়বো না। আপনি আমাকে এই মুহূর্তে আমার বাসায় দিয়ে আসুন। আমি আর এক মুহূর্তে এখানে থাকবো না।’

‘লাস্ট বার বলছি হাত সরাও আমাকে রাগিও না।’

‘ছাড়বো না বলছি তো।’

বর্ষা দ্বিতীয়বারের মতো না করায় তূর্য রেগে ওর হাত কলার থেকে ঝামটা মেরে ছাড়িয়ে বর্ষার গালে চড় মেরে দিল। বর্ষার গালে হাত দিয়ে চোখের জল ফেলছে। আর বিড় বিড় করে বলছে,

‘আপনি দ্বিতীয়বার আমাকে মারলেন।’

বলে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। আর তূর্য রেগে চিৎকার করে বলল,,

‘আর কখনো এমন সাহস দেখাতে গেলে দুই হাত কেটে রেখে দেবো। তূর্য এর কলারে হাত দেওয়ার শাস্তি পাবে তখন। আমার যখন সময় হবে আমি নিজেই তোমাকে বাসায় দিয়ে আসব তোমাদের মত মেয়েকে আমি আমার জীবনে রাখি না। আমার উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে এখানে থাকতে হবে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় তাই বাড়াবাড়ি করে লাভ নাই নিজের ক্ষতি হবে শুধু।’

এবার আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,’আপনার কোনদিন ভাল হবেনা কোনদিন না।’

‘আজ অব্দি আমার ভালো হয়নি এখন আর ভালো হওয়ার আশা রাখি না। তোমার যত খুশি বলতে পারো। আই ডোন্ট কেয়ার। তোমার ওই সব ফালতু কথা তুর্য কেয়ার করে না।’

বর্ষা ঘৃণার দৃষ্টিতে তূর্যের দিকে তাকালো। এই মানুষটা যতটা সুন্দর বাইরে থেকে তার মনটা তো টাই কুৎসিত।

#চলবে