তুমি যে আমার পর্ব-০৯

0
661

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_9

বর্ষা গালে হাত দিয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে আছে। যেখানে জামাকাপড়ের ছড়াছড়ি। কালকে জামা কাপড়ের খোটা দেওয়া পর এক বস্তা জামাকাপড় নিয়ে এসেছে। এত জামাকাপড় দিয়ে আমি করবোটা কি?
পাগল নাকি এত জামা কাপড় কেউ আনে। যত্তসব আমিতো যেকোনো সময় চলে যাব। থাক আমার কি টাকা খরচ হয়েছে নাকি তার হয়েছে আমার কি!
কালকে আমাকে সেই আগের রুমটা এনে রেখেছে। শাটের ব্যাপারটা খুব ভালোভাবে ধামাচাপা দিছি। আমি নিজের হাতেই সেটা শুকাতে দিয়েছে। তাই আর জানেনা কিন্তু যখন পড়তে যাবে তখন ঠিক বুঝে যাবে। ভাত ফালানোর জন্য আমাকে আর ভাত দেবে না এটা আমার শাস্তি।
সেটা জানতে পেয়েছি পরে।এত কিছু করে ও নিজের খিদেটা কে দমন করতে পারিনি। তাই নির্লজ্জের মত তার কাছে খাবার চাইতে হয়েছে। আর খাবার চেয়ে তার কাছ থেকে কঠিন এক ধমক ও শাস্তির কথাটা জানতে পেরেছি।

‘খাবার নষ্ট করার জন্য তোমাকে আমি আর ভালো খাবার দেবো না তোমাকে এখন থেকে প্রতিদিন তিনটা করে ফল দেয়া হবে। চাইলে মুড়ি খেতে পারো তোমার জন্য স্পেশালি মুড়ি আনা হবে বাসায়।’

কি আমি মুড়ি খেয়ে থাকবো?’

‘ইয়েস।’

‘আপনি কি পাগল? আমার ভাতের খিদে লেগেছে জানেন? আর আপনি আমাকে মুড়ি খাইয়া রাখতে চান।’

‘ভাতে তো দিয়েছিলাম কিন্তু তোমার অতিরিক্ত মাত্রার জেদ। নিজের জেদের আর নিজের কাণ্ডকারখানা জন্য ভাত পাবে না তুমি।’

‘এটা আপনি করতে পারেন না। ভাত না খেয়ে কি থাকা যায়।’

‘থাকা যায় কিনা তাতে আমার কোনো মাথাব্যথা নাই। তোমাকে তাই খেতে হবে যা আমি তোমাকে দেবো। আর না চাইলে না খেয়ে থাকতে পারো।’

সকাল সকাল এই বস্তা ভড়া ড্রেস ও এক কৌটা ভড়া মুড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে সাথে কিছু ফল। খিদের যন্ত্রণায় আমার এই শুকনো মুড়ি চাবাতে হয়েছে।
সারাদিন আর ওই লোকটার মুখোমুখি হতে হলো না।
হব কিভাবে তিনি তার আসেন নাই। সারাদিন আমি রুমে বসে হাঁসফাঁস করলাম। কিভাবে এখান থেকে পালানো যাবে সেই সব নিয়ে চিন্তা ভাবনা করলাম। কিন্তু চিন্তাভাবনা করে ও কোন দিশা খুঁজে পাচ্ছি না। আমাকে যদি পালাতে হয় আগে রুম থেকে বের হতে হবে। কিভাবে বের হবো আমি রুম থেকে? আমাকে বের হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে তো আর তিনি দরজা খুলে রাখবে না। আর দরজা খুলে না রাখলে আমি তো বের ও হতে পারব না। বের হওয়ার কোন রাস্তা না পেয়ে আবার কতক্ষণ হাটুতে মাথা রেখে কাঁদলাম।
পরপর দুই দিন চলে গেল। কেউ দরজা খোলা ভেতরে এলো না। লোকটা হাওয়া হয়ে গেল নাকি। লোকটা যদি সত্যি হারিয়ে যায়। আমি এখান থেকে বের হব কি করে? বর্ষা দরজার কাছে এসে দরজা ধাক্কাতে লাগলো আর কেউ আছে কিনা জিজ্ঞেস করতে লাগলো কিন্তু কারো সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না। দুই দিন ধরে বর্ষা মুড়ি খাচ্ছে পেটের খিদে পেটেই আছে। এসব খেয়ে কি আর পেট ভরে। খিদেতে যা ফল দিয়েছিল সব খেয়ে ফেলেছি।
একটা আপেল আছে। লোকটা এভাবে হারিয়ে যাবে বলেই কি সবকিছু আগে থেকে ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। আমি কি এখানে বন্দি থেকেই পচে গলে যাব নাকি। আতঙ্কিত মুখ করে বসে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে বর্ষা। আচ্ছা বাসার বাইরে তো অনেক গার্ড দেখেছিলাম। তারা কি আছে? নাকি নাই‌ তারা ও।
আমি কি এই বাসায় একা আছি নাকি। ভীতু হয়ে গেলো বর্ষা ভয়ে কাঁপতে লাগলো। বর্ষা সিউর ওকে বাসায় একা বন্দি করে লোকটা কোথাও চলে গেছে। কেউ আছে আশা করে রাতে ঠিক থাকতে পেরেছে দুইদিন। কিন্তু আজ কি করে থাকবে।
বর্ষার ভয়ে হৃদপিণ্ড কাঁপছে। এখন এই দিনে বেলা ওর ভয় করছে। ঘড়ি আছে বিধায় কয়টা বাজে। দিন না রাত ঠিক পায় না। হলে তো তাও বুঝতে পারতো না।
দুপুরে গোসল করলো না ওইভাবে ভয়ে এক জায়গায় শক্ত হয়ে বসে রইল। ভয় নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকলো চারটার সময়। আর গোসল করে গোলাপি প্লাজো ও নীল গেঞ্জী পরে বেডের কোনায় বসে আছে। কাঁদো কাঁদো মুখ করে আপেল কামড়াতে লাগলো। এমন অত্যাচারিত হতে হবে জানলে সেইদিন ওই বোকার মত কাজ করতো না।
যে কয়দিন এখানে আছি অন্ততপক্ষে ভাত খেতাম ভাল ভাল খাবারের দিয়েছিল। এখন আমার জন্য এই শুকনো মুড়ি বেঁচে আছে। এটা খেয়ে আমার কতদিন বেঁচে থাকা সম্ভব। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।আজান পড়ার সময় হয়েছে কিন্তু আযানের শব্দ এখানে আসার পর আমি শুনি নাই। এখনও
আশেপাশে কোনো মসজিদ নাই বোধহয়। আমি অবশ্য তেমন একটা নামাজে পড়িনা। অতি আদরে হয়ে আমি কিছুটা বাঁদরী হয়েছি। মাঝে মাঝে পড়তাম কিন্তু সবসময় পড়া হতো না। আজকে নামাজ পড়তে ইচ্ছে করছে। কিন্তু জায়নামাজ ছাড়া। ভেবেচিন্তে জায়নামাজ ছাড়াই একটা ওড়না বিছিয়ে নামাজ পড়লাম।
রাতে এই মুড়ি আমার খাওয়ার ইচ্ছা হল না আর।তাই সাতটা বাঁচতেই আমি বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরলাম।জেগে থাকলে খিদে বেশি পায় তার থেকে আগেই শুয়ে পড়ি ঘুমিয়ে পড়লে কোন ভাবে রাত কেটে যাবে। দুর্বল হওয়ায় তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম ভাঙলো মধ্যরাতে বর্ষা ঘুমের মাঝে নিজের মুখের উপর কারো অস্তিত্ব খুঁজে পায়। কারো নিঃশ্বাস ওর চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। ভয়ে ওর হাত পা শক্ত আসে। ঘুম ছুটে পালিয়ে যায়। কেউ ওকে জাপ্টে ধরে আছে। বর্ষার যেন শরীরের সব শক্তি হা‌ওয়া হয়ে গেছে। লোকটাকে নিজের উপর থেকে সরাতে পারছে না।লোকটা নিজের শরীরের ভাড় ওর উপর দিয়ে রেখেছে। লোকটা গভীরভাবে ওর ঠোঁটে ছুয়ে দিচ্ছে।বর্ষা কি হতে চলেছে বুঝতে পেরে কাঁদতে চাইলে কিন্তু কাঁদতে পারছে না। ওর চোখ দিয়ে অঝোর-ধারায় পানি পড়ছে।
এই সব ওর সাথে কে করছে ও বুজতে পারছে না। ওই লোকটা কি আমার সাথে এসব করছে? ভাবছে বর্ষা! ওকে এখানে আনা হয়েছে এক সপ্তাহ হয়ে গেল এর আগে তো। কখনো ঐ লোকটা খারাপভাবে চাইনি তাহলে আজকে এসব কেন করছে। হঠাৎই লোকটা ওর ঠোঁট ছেড়ে দিলো। ছাড়া পেয়ে বর্ষা কাঁদতে লাগল শব্দ করে। বর্ষার এমন হঠাৎ কান্না দেখে লোকটা ভরকে গেল। না চাইতেও লোকটা বর্ষাকে ছেরে দিয়ে উঠে দাঁড়াল।
বর্ষা নিজের শরীরে কারো অস্তিত্ব খুঁজে না পেয়ে কান্না থামিয়ে হাঁটু ভাঁজ করে বসে পড়ল বেডের উপর অন্ধকারে। অন্ধকারে একটা অবয় দাঁড়িয়ে আছে। ও ভয়ার্ত চোখে সে দিকে তাকিয়ে আছে অশ্রু নয়নে। ভয়ে ওর সারা শরীর থর থর করে কাঁপছে।

রুমের লাইট জ্বলতে বর্ষার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। ওর সামনে সেই লোকটাই বসে আছে যে ওকে কিডন্যাপ করেছে। লোকটার নাম জানা হয়নি এজন্য লোকটাকে কোন নামে সম্বোধন করতে পারে না বর্ষা। কিন্তু ও বিশ্বাস করতে পারছেন না এই লোকটা ওর সাথে এসব করতে যাচ্ছিল। বর্ষা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে তূর্য এর দিকে তাকিয়ে।

তূর্য মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল অসহ্য গরম লাগছে। বুকের কাছে শার্টের বোতাম কয়টা খুলে শুয়ে আছে। বর্ষা কান্না মাখা মুখে তূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। আস্তে আস্তে ওর কান্নার শব্দ বাড়ছে। হঠাৎই তূর্য চোখ মেলে তাকিয়ে উঠে বসলো আর বর্ষার মুখোমুখি হলো,

‘প্লীজ স্টপ ক্রায়িং। এতো কান্না কেউ করতে পারে তোমাকে না দেখলে জানতাম না ডিসকাস্টিং।’

বলেই তূর্য উঠে দাঁড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
বর্ষা ওইভাবেই কাঁদতে থাকলো। ওর কান্না থামছে না। তারমানে লোকদের জন্যই ওকে কিডন্যাপ করেছে। এখন নিজেকে কিভাবে বাঁচাবো আমি এই রাক্ষসটার থেকে।
ভেতরে ভেতরে ভয়ে কুকড়ে গেল বর্ষা। সমস্ত চঞ্চলতা যেন নিমিষেই মাটি হয়ে গেছে। রাতের ঘটনা পর থেকে ও আর নিজের কান্না থামাতে পারছেনা। সারাক্ষণই কাঁদছে। বাকি রাতটুকু বসেই কাঁদতেছে কাদতে কাঁদতে বসে বসে ঘুমিয়েছে। সকালে চোখ মেলে রাতের কথা মনে পরে আবার কাঁদতেছে। তুর্য সকালে দুবার এসেছেন দুবারই ওকে কাঁদতে দেখেছে। কিন্তু কিছু বলেনি শুধু উঁকি মেরে গেছে।
তৃতীয়বারের যখন তূর্য এসে দেখলো বর্ষা এখনো সেইভাবেই বসে কাঁদছে। ওর চোখ ফুলে আছে। এবার রেগে এগিয়ে এসে বর্ষার বাহু শক্ত করে ধরে টেনে সোজা করে বললো,

‘ আর একটা গলার সাউন্ড হলে তোমাকে কিন্তু আমি এবার গুলি করে দেবো।’

#চলবে……