তুমি শুধু আমারই হবে পর্ব-০৬

0
170

#তুমি_শুধু_আমারই_হবে
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৬

“তুমি এক্ষুনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও অনু। আমি আমার ছেলের জীবনে তোমাকে আর দেখতে চাই না। তুমি এক্ষুনি বেরিয়ে যাও।”

অনামিকা কান্না করতে করতে শাশুড়ির পায়ে ধরে বসে পড়ে। ওদিকে মুহিব অনামিকার হাত ধরে টেনে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে। অনামিকা খেয়াল করে দেখে পিছন থেকে মিসেস মেরিনা হাসছেন। আব্দুর রহমান এগিয়ে এসে অনামিকার হাত ধরে আটকানোর আগেই মুহিব অনামিকাকে বের করে দিয়ে দরজা আটকে দেয়। অনামিকা দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকে। কান্নায় তার কণ্ঠস্বর জড়িয়ে আসছে। শব্দ করে কান্না করেই যাচ্ছে সে।

অনামিকার কান্নার আওয়াজ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। পাশে থেকে কারো ধাক্কায় পাশে তাকায় অনামিকা। মুহিব! অনামিকা ভালো করে খেয়াল করে দেখে সে নিজের রুমেই শয়নরত অবস্থায় আছে। তার মানে এতক্ষণ সে স্বপ্ন দেখছিল!
অনামিকা তাড়াতাড়ি করে উঠে বসে৷ এখনো তার গাল বেয়ে অশ্রু ঝরছিল। মুহিব সাইড টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি অনামিকার হাতে ধরিয়ে দেয়। অনামিকা গ্লাসটা নিয়ে অর্ধেক পানি নিজের গলায় ঢেলে নেয়। মুহিব গ্লাসটা নিয়ে পাশে রেখে অনামিকার দিকে এগিয়ে বসে। চোখ মুছে দিয়ে জিজ্ঞেস করে –

” কি হয়েছে বলো তো? খারাপ স্বপ্ন দেখেছো?”

অনামিকা মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁসূচক উত্তর বোঝায়। মুহিব অনামিকাকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে নেয়। মুহিব বুঝতে পারে তার খারাপ ভাবনাগুলোই হয়তো স্বপ্ন হয়ে ফিরে এসেছে। সারাদিন -রাত এই মেয়েটা তাকে নিয়ে চিন্তা করে।

অনামিকা কি স্বপ্ন দেখেছে সেটা বলতে চাইলে মুহিব বলতে নিষেধ করে। অনামিকাও আর এসব জানাতে চায় না। অনামিকা মনে মনে দোয়া করতে থাকে স্বপ্নটা যেন কোনদিন সত্যি না হয়।

রাত করে বাড়ি ফেরায়ও অনামিকার শাশুড়ি মিসেস মেরিনা কিছু বলেন নি এরকম পরিস্থিতিতে অনামিকা বেশ খানিকটা অবাক হয়েছে কারণ মিসেস মেরিনা তো কথায় কথায় ভুল ধরেন কথা শোনান কিন্তু রাত প্রায় সাড়ে এগারোটায় বাড়ি ফিরলেও কিছু বললেন না কেন? রুমে প্রবেশের পূর্বে শুধু বললেন, ” বাহিরের খাবার খেয়ে পেট না ভরলে ফ্রিজে খাবার আছে খেয়ে নাও দুজন।”
তারা খাবে না জানিয়ে তখন রুমে চলে এসেছিল। তখন যা ঘটেনি কিন্তু ভেবেছিল হয়তো খারাপ কিছু ঘটবে তাই সেটা স্বপ্নে দেখেছে।

****
জামান সাহেবের বাড়িতে গতকাল থেকে আত্মীয়স্বজন আসা শুরু করেছে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে তাও আবার অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত ছেলের সাথে। যদিও মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান তিনি করতে চেয়েছিলেন না, ছেলেই বলেছে বিয়ের সমস্ত খরচ তিনিই বহন করবেন।

অনামিকা, মুহিব, আব্দুর রহমান, মেরিনা বেগম আগের দিনই বিয়ে বাড়ি চলে এসেছে। মনিকা বেগমেরও আসার কথা ছিল কিন্তু ছেলে জরুরিতলব করায় বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে। অনামিকা যেন এই এত এত মানুষের মাঝে উনাকেই বেশি মনে করছেন কারণ যতগুলো দিন মনিকা বেগম তাদের বাসায় ছিলেন একদম নিজের মেয়ের মতো স্নেহ করেছে তাকে। প্রায় দুই সপ্তাহের মতো তিনি মুহিবদের বাসায় ছিলেন। দুইদিন আগেই বাসায় ফিরে গিয়েছেন তিনি।

সারাদিন বাসায় হৈচৈ চলছে। সবাই আনন্দ, কাজ সবেতেই ব্যস্ত। পার্লার থেকে কয়েকজন এসেছে জারাকে সাজাতে। সকাল সকাল গোসল দিয়ে জারা সাজতে বসেছে। সাজ ও প্রায় শেষের দিকে। পাশে বসেই সাজছে অনামিকা। তার সাজ ও প্রায় শেষ। বাহিরে থেকে এক পিচ্চি এসে অনামিকাকে জানালো মুহিব আঙ্কেল তাকে ডাকছে।
প্রায় দুই মিনিটের মাঝেই অনামিকার সাজ কমপ্লিট হয়ে গেল। অনামিকা নিজের শাড়ি ঠিক করে জারাকে জানিয়ে বেরিয়ে গেল। বাহিরে বের হতেই দেখে মুহিব দাঁড়িয়ে আছে। এপাশটায় বেশি মানুষ নেই। সবাই সামনের দিকে আছে। এখানে বউ সাজানো হবে হট্টগোল যেন না হয় সেজন্য জায়গাটা ফাঁকা রাখা হয়েছে। অনামিকা শাড়ির কুচি ধরে একটু উঁচু করে মুহিবের দিকে এগিয়ে আসে। মুহিব যেন নেশাক্ত চোখে অনামিকার দিকে কে আছে। অনামিকা এসে মুহিবের সামনে দাঁড়ায়।

” ডাকছিলে?”

” হ্যাঁ, দারুণ লাগছে তোমায়।”

” তাহলে তো আমার সাজ স্বার্থক।”

” মনে হচ্ছে বউ নিয়ে এত মানুষের মাঝে থেকে নির্জনে কোথাও চলে যাই।”

” কেন, এখানে কি হয়েছে?”

” এখানে তো আর তাকিয়ে দেখতে পারব না বারবার।”

” যাও, সরো তো। সবসময় মজা করতেই থাকো।”

” আমার মতো রোমান্টিক বর কই পাবে বলো তো?”

” খুঁজতে যাচ্ছে কে শুনি?”

” তাও কথা!”

” জি, ডাকছিলে কেন?”

এবার মুহিব একটু সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে,

” ওয়াজিফা কল দিয়েছিল।”

” কেন? কিছু বলেছে? ”

” আজকেই হঠাৎ করে ক্লাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ও নাকি বাসায় আসছি। ওকে কি এখানে আসতে বলব?”

” ওমা এটা আবার কেমন কথা? ওয়াজিফা এখানে আসবে এর জন্য আবার আমার অনুমতি লাগবে কেন? আমার একমাত্র ননদ কতদিন পর বাড়ি আসছে বলো তো! আসতে বলো এখনই, তুমি প্রয়োজনে বাজারের দিকে এগিয়ে যাও।”

” আচ্ছা দেখছি। জারার সাজ কতদূর? বরযাত্রীও প্রায় এসে গিয়েছে শুনলাম।”

” ওর এতক্ষণে হয়তো হয়েই গিয়েছে। মা কোথায়? কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো?”

” দেখলাম সামনের ওই রুমটায় বসে কথা বলছে কয়েকজনের সাথে।”

” আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে তুমি এগোও।”

” ঠিক আছে, আমার পরীটা যেন সাবধানে থাকে।”

” জি মশাই, আপনার পরী সাবধানেই থাকবে।”

মুহিব মুচকি হেসে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। মুহুর্তের মাঝে অনামিকার মুখটা কালো হয়ে যায়। শাশুড়ি তো কিছুদিন একটু শান্ত হয়েছে ননদ নামক প্রাণি এসে আবার কোনো ঝামেলা করবে না তো!
অনামিকা সেখানে আর না দাঁড়িয়ে শাশুড়ি কাছে যায়। বাহিরে থেকে দেখা যাচ্ছে তিনি এখানকার কয়েকজন প্রতিবেশীর সাথে গল্পগুজব করছেন। সে শাশুড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।

” মা আপনার কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো? কিছু লাগবে?”

মেরিনা বেগম শাড়ির আঁচলটা টেনে গায়ে জড়িয়ে বলে, ” নাহ এখানে আবার কি সমস্যা হবে? ভালোই লাগছে সবার সাথে কথা বলতে পেরে। তুমি চিন্তা কোরো না যাও আনন্দ করো।”

” মা একটা কথা।”

” কি কথা?”

” মা, ওয়াজিফার ছুটি হয়েছে। ও নাকি বাসায় আসছে, আমি আপনার ছেলেকে বলে দিয়েছি এখানে নিয়ে আসার কথা। আমরা কখন বাড়ি ফিরব তা তো জানি না।”

” আমার মেয়েটা আসছে! ভালো করেছো, আসুক এখানেই আসুক।”

” আচ্ছা মা আপনি এখানে সবার সাথে গল্প করুন আমি যাই জারার কাছে যাই, দেখি ওদিকে কি খবর।”

” ঠিক আছে যাও।”

অনামিকা আর দেরি না করে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। মেরিনা বেগম ও আবার নিজেদের মাঝে গল্পে মনোযোগ দেয়।

বিয়েটা খুব ভালোভাবে মিটে যায়। বরপক্ষ ও বউ নিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা দিয়েছে। কাছেপিঠের আত্মীয়রা বাড়ি যাওয়া শুরু করেছে। যাদের বাড়ি দূরে তারা হয়তো পরদিন যাবে। অনামিকাসহ তার শ্বশুরবাড়ির সবাই বাড়ি চলে এসেছে। সারাদিন ব্যস্ততায় কা*টানোর পর রাতে একটু স্বস্তি মিলেছে।
সবাই যার যার রুমে বিশ্রাম নিচ্ছে। অনামিকা শাড়ি বদলে নরম একটা থ্রিপিস পরে নেয়। সে ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে বসে চুল বাধছিল এমন সময় দরজায় নক করার শব্দ শোনা যায়। অনামিকা উঠতে যাবে ঠিক তখনই মুহিব ফোন রেখে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজার ওপাশে ওয়াজিফা দাঁড়িয়ে আছে।

” কি রে কিছু বলবি?”

ওয়াজিফা রুমের ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখে আবার ভাইয়ের দিকে তাকায়।

” আমার তো রাত জেগে পড়ার অভ্যাস। তুমি কি একটু ভাবিকে বলবে কিছু নাস্তা বানিয়ে দিতে। একটু নুডলস, চা আর বিস্কুট হলেই হবে। আমি নুডলস বানাতে গেলে আবার দেরি হয়ে যাবে। ”

” এতরাত জেগে পড়তে হবে না, অনেকদিন পর বাসায় এসেছিস শান্তি করে ঘুমা। ”

” একটু পর ঘুমিয়ে যাব, তুমি ভাবিকে বলো একটু বানিয়ে দিতে।”

মুহিব কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই অনামিকা এগিয়ে আসে। মুহিবের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,

” তুমি গিয়ে পড়তে বোসো আমি রান্না করে তোমাকে দিয়ে আসব।”

ওয়াজিফা জোরপূর্বক হেসে সেখান থেকে চলে যায়। মুহিব ভেতরের দিকে যেতে যেতে বলে,

” চলো আমিও যাচ্ছি তোমার সাথে।”

” তোমার যেতে হবে না। আমিই যাচ্ছি, তুমিও খাবে নাকি বলো।”

” হ্যাঁ, তবে আমিও যাচ্ছি চলো। ”

অনামিকা আবার না করতে যাবে তখনই মুহিব আবার বলে ওঠে, ” উহু আর কোন কথা না, চলো রান্নাঘরের দিকে যাই। তোমাকে এতরাতে একা একা কষ্ট করতে হবে না।”

অনামিকা আর কিছু বলে না, মুচকি হেসে রান্নাঘরের দিকে যায়। মুহিবও নিজের ফোনটা নিয়ে অনামিকার পিছু পিছু রান্নাঘরের দিকে যায়।

#চলবে……