তুমি শুধু আমারই হবে পর্ব-০৭

0
147

#তুমি_শুধু_আমারই_হবে
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৭

বিকেলবেলা অনামিকা রান্নাঘরে রান্না করছিল, ওয়াজিফা তার রুমে ছিল। রান্না করতে করতে অনামিকা অসুস্থ বোধ করে মাথাটা কেমন যেন ঘুরছিল। সে চুলাটা বন্ধ করে ড্রয়িং রুমে এসে সোফায় একটু বসে। মিসেস মেরিনা বাসায় নেই, আব্দুর রহমান ও এবেলায় একটু ঘুমান। অতিরিক্ত খারাপ লাগায় কি করবে সেটা অনামিকা কিছুতেই বুঝতে পারছিল না। রান্না প্রায় শেষের দিকে তাই সে আবার গিয়ে রান্না শুরু করে। মিনিট পাঁচেকের মাঝে রান্না একদম সেরে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে একদম বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। তার যেন আর বসে বা দাঁড়িয়ে থাকার সাধ্য নেই।
নিজের রুম থেকেই এবার ভাঙা গলায় ওয়াজিফাকে ডাকতে থাকে কিন্তু কোনো সাড়া পায় না। কোনরকম সাড়া না পেয়ে সে বিছানার পাশে রাখা গ্লাসে পানি ঢেলে গলা ভিজিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে হয়তো একটু পর ভালো লাগবে। কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি না দেখতে পেয়ে মুহিবকে কল করে। রিং হচ্ছে কিন্তু ফোন তুলছে না। দুই তিনবার ফোন করেও মুহিবকে পাওয়া যায় না। অতঃপর সে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে।

প্রায় সন্ধ্যার দিকে মেরিনা বেগমের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে অনামিকার। ক্লান্ত চোখে মাথার উপরের দিকে তাকাতেই মেরিনা বেগমকে দেখতে পায়। ক্লান্ত স্বরে বলে ওঠে, “মা!”

” হ্যাঁ আমি। এই সন্ধ্যার সময়ে শুয়ে আছো কেন? দেখেও তো ক্লান্ত মনে হচ্ছে। তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? রান্নাঘরে দেখলাম চুলার উপরেই পাতিল, খাবার বেড়ে তো টেবিলেও রাখোনি। ”

অনামিকা শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে উঠে বসে। মিসেস মেরিনাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

” কেমন যেন খারাপ লাগছিল মা। মাথা ঘুরছিল, বমি পাচ্ছিল, সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসছিল। রান্নাঘরে আর দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে রুমে চলে এসেছি। কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছি তা জানি না।”

” শরীর খারাপ লাগছে! সে কী কথা? জ্বর আসে নি তো দেখি?”

মেরিনা বেগম সাথে সাথে অনামিকার কপালে হাত দিয়ে জ্বর আছে কি না দেখেন। অনামিকা মায়ামাখা নজরে মেরিনা বেগমের দিকে তাকিয়ে থাকে। কয়েকদিন আগেও এই মানুষটা কতই না খারাপ ব্যবহার করেছে তার সাথে! আর আজ! উনি নিজেই এসেছেন তার খোঁজ নিতে, আবার জ্বর এসেছে কী না সেটাও দেখছেন! অনামিকার চোখ দুটো যেন টলমল করতে থাকে। এটাই তো সে প্রায় তিন বছর যাবৎ চেয়ে এসেছে আল্লাহর কাছে। অবশেষে কি তার দোয়া কবুল হলো!

মেরিনা বেগম কপালে হাত দিয়ে দেখেন অনামিকার শরীর ঠান্ডা। তার মানে অনামিকার জ্বর আসে নি, হয়তো শরীর দুর্বল। তিনি অনামিকার পাশে বসে বলেন,

” ঠিকমতো খাচ্ছো না হয়তো তাই না? দেখেই মনে হচ্ছে অনেক দুর্বল হয়ে গেছো। একেই তো মা-বাবা নেই মানে খবর নেওয়ার কেউ নেই। মামা-মামি যতই ভালোবাসুক সপ্তাহেও তো দেখি না খোঁজ নিতে বা মাসে একবার আসতেও দেখি না। আমিও তোমাকে ভালোবাসি না তুমি ভীষণ অপছন্দের মানুষ আমার তাহলে নিজের যত্ন নিজের নিতে হবে তো নাকি? কয়েকদিন পর একেবারে অসুস্থ হয়ে যাবে আর আমার ছেলে দোষারোপ করবে আমাকে যে আমি হয়তো খেতে দেই নি।”

” না না মা ওরকম কিছু না। এমনিই একটু শরীরটা খারাপ লাগছিল। এখন একদম ঠিক আছি।”

” হ্যাঁ তা তো মুখ দেখেই বুঝতে পারছি। তুমি বোসো এখানে আমি তোমার জন্য একটু স্যালাইন পানি নিয়ে আসছি। একদম চোখ মুখ বুজে খেয়ে নিতে হবে।”

কথাগুলো বলে মেরিনা বেগম অনামিকাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। অনামিকা বসে বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে ছিল। তার শাশুড়ি সত্যিই তার জন্য স্যালাইন পানি নিয়ে আসতে গেল! তার যত্ন করছে! তিনি এই কয়েকদিনে সত্যিই বদলে গেছেন? কিসের মাধ্যমে বদলে গেলেন তিনি!

মিসেস মেরিনা কিছুক্ষণের মধ্যে এক গ্লাস স্যালাইন পানি নিয়ে রুমে এসে অনামিকার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন,

” নাও এটা খেয়ে নাও। কয়েকদিন একটু ভালো করে খাওয় দাওয়া করবে, আর কাজও একটু কম করতে হবে। তুমি বিশ্রাম নাও আমি বাকিটা দেখে নেব।”

আজ মিসেস মেরিনার ব্যবহার, কথাবার্তা সব যেন অন্যরকম লাগছে। সত্যিই কি তিনি বদলে গেলেন! আজকে হঠাৎ অনামিকার মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে। ভালোবাসার মানুষগুলো প্রতিদানস্বরূপ যখন ভালোবাসাই ফিরিয়ে দেয় তখন আসলে ভালো লাগার শেষ থাকে না।

শরীরটা তখনও ঠিক হয় নি। তাই সে তখনই শুয়ে পড়ে মিসেস মেরিনাও রুমের লাইট বন্ধ করে তাকে রেস্ট নিতে বলে চলে যান।

***
ওয়াজিফা নিজের রুম থেকে বেরিয়ে অনামিকার রুমের উদ্দেশ্যে ড্রয়িংরুমে আসতেই মিসেস মেরিনা তাকে আটকে দেয়।

” কোথায় যাচ্ছো ওদিকে?”

” ভাবিকে বলি একটু চা করে দিতে। এসময়ে চা ছাড়া কি ভালো লাগে!”

” তোমার ভাবি অসুস্থ, ওকে আর চা বানাতে হবে না। আমি বানিয়ে দিচ্ছি চা।”

” না থাক, আমিই যাই চা বানিয়ে রুমে যাই। তুমি খাবে তো তাই না আর বাবা?”

” কোরো একটু বেশি করে।”

” মা একটা কথা বলার ছিল।”

” হ্যাঁ বলো।”

” অরিন আসতে চাইছে বাসায়।”

” অরিন যেন কে?”

” ওই যে আমার স্কুলের ফ্রেন্ড। শুনেছে আমি বাড়ি এসেছি তাই আমাকে নক দিয়েছিল, বলল তুই যেহেতু বাড়ি এসেছিস আমিও আসব তাহলে অনেক মজা হবে। তোমার কাছে না শুনে তো আমি ‘হ্যাঁ’ বলে দিতে পারি না।”

মিসেস মেরিনা ভ্রু কুচকে কিছু একটা ভেবে আবার জিজ্ঞেস করলেন,

” মুহিবকে পছন্দ করতো ওই মেয়েটা?”

ওয়াজিফা মাথা নিচু করে প্রশ্নের উত্তর দেয়।

” হ্যাঁ মা ওটাই অরিন। তুমি যদি বলো তাহলে আসতে বলব নয়তো না।”

” নাহ, নিষেধ করতে হবে না৷ নিষেধ করলে তোর মুখ থাকবে? আসতে বল, নিজেকে যেন আয়ত্তে রাখে এটা বলে দিস। ”

” ঠিক আছে মা।”

ওয়াজিফা খুশিমনে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। চা করে রুমে গিয়েই অরিনকে জানাতে হবে বিষয়টা।
সে রান্নাঘরে ঢুকেই পানি চুলায় বসিয়ে দেয়।

মিসেস মেরিনা ডাক ছেড়ে বলেন, ” অনামিকাকেও এক কাপ দিস রে মা, মেয়েটার নাকি মাথা ধরেছে।”

***
মুহিব রুমের দিকে এসে দেখে লাইট অফ, চারদিকে অন্ধকার। সে ভাবছে রুম এভাবে রেখে অনু গেল কোথায়! মুহিব রুমের লাইট অন করতেই দেখে অনু বিছানায় শুয়ে ঘুমোচ্ছে। সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আটটা বাজে। এত তাড়াতাড়ি তো ঘুমানোর কথা না!
পকেট থেকে ফোনটা বের করে চার্জে বসিয়ে ব্যাগটা রেখেই অনামিকার পাশে গিয়ে বসে। মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে ডাকতে থাকে আস্তে আস্তে। অনামিকা চোখ তুলে তাকায়। মুহিবকে দেখে ধীরে ধীরে উঠে বসে।

” কি হয়েছে অনু? শরীর খারাপ লাগছে?”

” হ্যাঁ তখন একটু লাগছিল। এখন অনেক ঘুম পাচ্ছে।”

” কেমন খারাপ লাগছে?”

” মাথা ঘুরছিল, দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না,চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছিল।”

” তোমার শরীর খুব দুর্বল, এখন থেকে সময়মত না খেলে খবর খারাপ আছে বলে দিলাম। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করবে না আর চোখে অন্ধকার দেখবে তাই না?”

” এই তুমি আমাকে বকছো কেন?”

” বকলাম কোথায়?”

” এই যে জোরে জোরে কথা বলছো।”

” ঠিক আছে এখন বসে থাকো, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। ”

” ঠিক আছে। ”

” চুপচাপ বসে থাকবে, আমি আসলে দুজন একসাথে খেতে যাব।”

” হুম।”

” যেতে পারবে তো নাকি খাবার রুমে নিয়ে আসতে হবে? আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর দেখবো।”

মুহিব ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। অনামিকার চোখে যেন গোটা রাজ্যের ঘুম ভর করে৷ আজকে শরীর খারাপ হওয়ায় অসম্ভব ঘুম পাচ্ছে তার। সে আর বসে থাকতে না পেরে বিছানায় আবার শুয়ে পড়ে। মুহিব এবার বেরিয়ে দেখবে অনামিকা আবার ঘুমিয়ে পড়েছে এটা ভেবে চোখ খোলা রাখার চেষ্টা করে সে কিন্তু কিছুতেই কিছু কাজ হয় না। এবার চোখের পাতা দুটিই বিশ্রামে গা এলিয়ে দেয়।

#চলবে……..