তুমি শুধু আমারই হবে পর্ব-০১

0
350

#তুমি_শুধু_আমারই_হবে
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#সূচনা_পর্ব

” আপা তোর জামাইকে আমি কেন বিয়ে করব? তোর শাশুড়ি আমাকে ফোন করে তোর জামাইয়ের সাথে আমার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। উনি এই প্রস্তাব কীভাবে দিতে পারলো বল তো! আমি তো মুহিব ভাইকে নিজের আরেকটা ভাইয়ের মতোই দেখি। মানছি আমার বাবা-মা তোদের বিয়ের আগে উনাকে আমার জন্য পছন্দ করেছিলেন কিন্তু এখন তো তোরা বিবাহিত তাহলে উনি আমাকে এসব কেন বললেন? তোদের মধ্যে কি কিছু হয়েছে?”

চাচাতো বোনের কথায় বেশ অবাক হলো অনামিকা। তার শাশুড়ি কেন তার চাচাতো বোনকে মুহিবের সাথে বিয়ের প্রস্তাব দিবেন? বোনের এমন কথার প্রত্যুত্তরে কি বলবে সেটা বোধগম্য হচ্ছে না। কিছু বলার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে জারা আবার বলে ওঠে, ” কি রে আপা কথা বলছিস না কেন? কিছু হয়েছে তোদের?”

অনামিকা এবার একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
” তুই আমার সাথে আগামীকাল দেখা করতে পারবি?”

” হ্যাঁ, বল কোথায় দেখা করতে হবে?”

” আমি তোকে বলে দেব আর প্লিজ তুই বড়বাবা আর বড়মাকে কিছু বলিস না আগেই।”

” আচ্ছা ঠিক আছে বলব না। কোথায় দেখা করবি আমাকে জানিয়ে দিস কিন্তু।”

অনামিকা জারার সাথে কথা শেষ করে ফোনটা রেখে দেয়। মুহিব তখনো বাসায় ফিরে নি। তার তো অফিস ছুটি সাতটায় এখন সাড়ে আটটা বাজতে চলল। মুহিব বাসায় ফেরার আগেই শাশুড়ি মায়ের সাথে এ ব্যাপারে আগে কথা বলতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় অনামিকা। এ সময় শাশুড়িকে একাই পাওয়া যাবে ভেবে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে শাশুড়ির রুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে আসলেই উনি রুমে একা আছেন।

” মা আসব?”

দরজায় অনামিকাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু বিরক্তিতে কুঁচকে গেল মেরিনা বেগমের। কড়া মুখে জবাব দিলেন,

” এখন আবার কি চাই তোমার?”

” জবাব।”

রুমে ঢুকতে ঢুকতে উত্তর দিলো অনামিকা। মেরিনা বেগম ছেলের বউয়ের এমন আধো উত্তরে যেন আরও চটে গেলেন।

” তুমি কি আমার সাথে মশকরা করতে এসেছো অনু?”

” আপনার সাথে আমার মজার সম্পর্ক না মা, তাহলে আমি কেন আপনার সাথে মজা করব?”

অনামিকার এমন মাটিতে না পড়তে দেওয়া কথাগুলোতে যেন বেশ অবাক হচ্ছেন মেরিনা বেগম। এর আগে অনামিকা এভাবে তার সাথে কখনও কথা বলে নি আজ তার মুখে এমন খৈ কেন ফুটছে এটাই ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।

” আজ হঠাৎ বোবা থেকে বাচাল হয়ে গেলে কীভাবে?”

” পরিস্থিতি আমাকে বাচাল হতে বাধ্য করছে মা, আর আমার খারাপ পরিস্থিতি আপনিই তৈরি করছেন। কেন একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের এতটা খারাপ করতে চাইছেন মা?”

” কি! তোমার সাহস তো কম না আজ আসুন মুহিব, তার বউয়ের নাকি মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হয় না তার ও জানা উচিৎ তার বউ আমার সাথে কেমন ঝগড়া করে।”

” মা একদম কথা ঘুরাবেন না, আপনি জারাকে ফোন নিয়ে মুহিবের সাথে বিয়ের কথা বলেছেন কেন? আপনার কি মনে হয় আমি আপনার ছেলেকে ছেড়ে দেব? আমি এখনও ম*রে যাই নি মা।”

” ম*রে যাও নি জন্য ছেলের বউ আনতে পারব না? তাহলে তুমি ম*রলেই বউ নিয়ে আসব। তুমি তো জানো তুমি আমার ছেলের ঠিক কতটা অযোগ্য, দেখতে ইচ্ছে করে না তোমাকে আমার। আমার ভোলাভালা ছেলেটার মাথা খে*য়ে বসে আছো, তোমাকে মেনে নেওয়ার কোন কারণ আমি দেখি না।”

” আমি ম*রলে ছেলেকে বিয়ে দেবেন মানে? আপনি কি আমাকে খু*ন করার হুমকি দিচ্ছেন নাকি? শুনুন মা আমি ম*রলে আপনার ছেলেকেও নিয়েই ম*র*ব বলে দিলাম। আর কি বললেন আমি আপনার ছেলের যোগ্য না? আমি শর্ট ড্রেস পরে, বাহিরের পুরুষদের সাথে ফ্রি*লি মিশলেই যোগ্য হতাম? এসবের জন্যই জারাকে আপনার পছন্দ হয়েছে? আমি ওসব করলে আপনাকে রান্না করে খাওয়াবে কে? আপনার মেয়ে তো রান্নাঘরের ধারেকাছে কখনও আসে না। ”

” বেরিয়ে যাও আমার রুম থেকে। তোমার এই বিশ্রি কথা আমার সহ্য হচ্ছে না। যে মেয়ে কোনদিন বাচ্চার মা হতে পারবে না তার মুখে এত বড় বড় কথা মানায় না একদম মানায় না।”

” বাচ্চার মা হতে পারলেই কথা বলতে পারবে মেয়েরা আর বাচ্চা না দিতে পারলে কথা বলতে পারবে না এমন নিয়ম কে তৈরি করেছে? আপনার ছেলে-মেয়ে না হলে কি বোবা হয়ে থাকতেন নাকি?”

” তোমার মুখের ভাষা শুনেই বুঝতে পারছি তোমার ওই বোনটা কেমন হবে! আমার ছেলেকে আমি অন্য কারো সাথে বিয়ে দেব, বিয়ে তো আমি দিবই তুমি দেখে নিও।”

” ঠিক আছে আমিও দেখে নেব আপনি কীভাবে আপনার ছেলেকে বিয়ে দেন। ভয় পাবেন না থা*নায় আমি যাব না, আমি নিজেই দেখে নেব আপনি কি কি করতে পারেন।”

অনামিকা শাশুড়ির রুম থেকে নিজের রুমে চলে আসে। বাহিরে বাহিরে শাশুড়ির সামনে তাকে শক্ত দেখালেও ভেতরে ভেতরে সে কাচের মতো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। এতদিন উনি অনামিকার সাথে খারাপ ব্যবহার করে এসেছেন। বিয়ের দুই বছরে কখনও তিনি একটাবারের জন্য ভালো ব্যবহার পায় নি মেরিনা বেগমের কাছে থেকে। তবু সে মুখ বুজে সব সহ্য করে গেছে ভেবেছে হয়তো খুব তাড়াতাড়ি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু ডাক্তার যেদিন জানালো অনামিকা মা হতে পারবে না সেদিন থেকে মেরিনা বেগমের ব্যবহার যেন আরও কয়েকগুণ খারাপ হয়ে গেল।
এই তো সেদিনের ঘটনা মুহিব আর অনামিকার বাচ্চা নেওয়ার কোন প্ল্যান ছিল না তারা ভেবেছিল বিয়ের চার পাঁচ বছর হলেই বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাববে। ওদিকে শাশুড়ি এমনিই ভালো ভাবে কথা বলে না তারপর এ, ও এসে যখন নিজের ছেলের বউ, নাতি নাতনীর গল্প করে তখন তার শাশুড়ি মুখের অবস্থা খুব বিশ্রী করে বলে, “তোমরা তো নাতি নাতনীর মুখ দেখে নিলে আমাদের যে কবে সৌভাগ্য হবে কে জানে! ছেলে তো বউ নিয়ে এসেছে নিজের জন্য এই বউ আমাদের কথা ভেবে ছেলেপুলে নিয়ে আসতে পারবে কি না কে জানে? সবসময় অসুস্থ থাকে শরীরের যা অবস্থা! ” এরকম নানারকম কথা তিনি ইনিয়েবিনিয়ে বলতেন। শ্বশুর- শাশুড়ির জোড়াজুড়িতেই মুহিব আর অনামিকা ভেবেছিল এবার একটা বাচ্চা নিয়েই নেবে সবাই যখন এত করে বলছে! তিন চার মাস পর যখন দেখলো অনামিকা কন্সিভ করছে না তখন দুজনেরই নিজেদের নিয়ে একটু কেমন খটকা লাগলো। দুজন ভাবলো আরও কিছুদিন দেখবে, সময়ের মতো সময় চলে গেল কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না তখন তারা সিদ্ধান্ত নিলো তারা ডাক্তার দেখাবে। অনামিকার শাশুড়ি আগে থেকেই অনামিকার দোষই দেন রেজাল্টটা পাওয়ার পর যখন জানা গেল অনামিকা কখনও মা হতে পারবে না সেটা যেন আরও মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো মতো কাজ করলো মেরিনা বেগমের কাছে। সেদিন থেকেই কথায় কাজে বুঝিয়ে দিচ্ছেন অনামিকা মুহিবের যোগ্য না, অনামিকার বাচ্চা জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা নেই আরও অনেককিছু।

অনামিকা নিজের দরজা বন্ধ করে কিছুক্ষণ কান্না করে তারপর কিছু একটা মনে করে আবার শাশুড়ির রুমে যায় শাশুড়ি তখনও বসেই ছিল। সে সোজা গিয়ে মেরিনা বেগমের পা ধরে মাফ চাইতে থাকে তখন ওরকম ব্যবহারের জন্য। শাশুড়ি কোন কথা বা কান্নায় কিছুতেই মন নরম করে না অনামিকা আনমনা হয়ে আবার নিজের রুমে ফিরে যায়। রুমে এসে বিছানায় বসে ভাবতে থাকে সত্যিই যদি মুহিবকে বিয়ে দিয়ে দেয় তার শাশুড়ি! অন্য একটা মেয়ের সাথে নিজের স্বামীকে কীভাবে মেনে নেবে সে!

চলবে……