তুমি শুধু আমারই হবে পর্ব-২+৩

0
224

#তুমি_শুধু_আমারই_হবে
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
২+৩
#পর্ব_০২

” মুহিব তোকে আমি আবার বিয়ে দেব, এই বউকে তো আমার আগে থেকেই পছন্দ না একটা বাচ্চা দিতে পারবে না আবার কিছুক্ষণ আগে আমার রুমে এসে ঝগড়া করে গেছে। এই বউ আমি কিছুতেই রাখব না বলে দিলাম তোকে। তোর মনিকা আন্টি আগামীকাল আসবে আমি আর মনিকা তোর জন্য মেয়ে দেখতে যাব।”

স্বামী রহমান সাহেবের সামনে বসেই কাঁদো কাঁদো ভঙ্গিতে কথাগুলো ছেলে মুহিবকে বললেন মেরিনা বেগম। মুহিব মাত্রই অফিস ছেড়ে বাসায় এসেছে নিজের রুমে এখনও পৌঁছায়নি তার আগেই মা ডেকে নিয়ে এসব বলল। এমনিতে অফিসে বসের প্রেশার ছিল সারাদিন গাধার মতো খাটতে হয়েছে তার ওপর বাসায় এসেই এমন কথা শুনে মাথা যেন বিগড়ে যায় মুহিবের। মাকে রাগ দেখালেই কান্না করবে জন্য মাকে আর কিছু বলতে চায় না সে। ব্যাগ থেকে ওষুধ বের করে দিয়ে চলে যায়। ছেলে কিছু বলল না দেখে বেশ অবাক হয় মেরিনা। অন্যসময় হলে তো বলতো মা পাগলামি করো না তো, জীবন তো একটাই শান্তিতে কাটিয়ে দাও বড় বড় বিপদ এড়িয়ে চলো আর আমি অনামিকাকে ছাড়ব না কিন্তু এখন সে কিছুই বলল না তার মানে কি মুহিব ও চায় আরেকটা বিয়ে করতে! মেরিনা বেগমের মুখ খুশিতে চকচক করতে থাকে এটা ভেবে যে ছেলে রাজি হয়ে গেছে। নিজের স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে, ” দেখেছো মুহিব রাজি হয়ে গেছে, এই বউকে আমার আর সহ্য করতে হবে না।”

” তুমি কিন্তু ভুল করছো মেরিনা, এতটা পাষাণ হওয়া ঠিক না।”

” এই শোনো একদম ওই মেয়ের হয়ে সাফাই গাইতে আসবে না বলে দিলাম, একদম না। আমি মনিকাকে কল দিয়েছিলাম ও কালকে আসবে। দুইবোন মিলে একটা সুন্দরী মেয়ের সন্ধানে বের হব দরকারে।”

” ভুল করছো।”

” তোমার সাথে কথা বলাই ভুল আমার, যা তা মানুষ একটা।”
নিজে একা একা কথা বলতে থাকে রহমান সাহেব আর কিছু বলেন না তিনি পুরো বিষয়টি এখন ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন আল্লাহ যা ভালো হবে তাই করবে। মাঝে মাঝে অনামিকাকে দেখে রহমান সাহেবের আসলেই খারাপ লাগে মেয়েটা শাশুড়ির ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কত কি করে! রহমান সাহেব ভাবেন তিনি যদি সুস্থ সবল থাকতেন তাহলে অবশ্যই প্রতিবাদ করতেন ভেবে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলেন।

***
মুহিবকে রুমে প্রবেশ করতে দেখে অনামিকা তাড়াতাড়ি করে তার দিকে এগিয়ে আসে। কাধের ব্যাগটা নিয়ে নেয়। মুহিব ও প্যান্টের পকেট থেকে ফোন, ওয়ালেট বের করে অনামিকার হাতে দেয়। অনামিকা জায়গামতো সেগুলো রেখে দেয়। মুহিব পোশাক পাল্টে ওয়াশরুমে চলে যায়।
অনামিকা রুমের এলোমেলো জিনিসগুলো ঠিক করে সাজাতে থাকে। মুহিবের এলোমেলো কিছু একদম পছন্দ না, রুম এলোমেলো দেখলে সে ভীষণ রাগ করে। রুমটা ঠিক করে নিজের বি*দ্ধস্ত চেহারাটা লুকিয়ে নিজের মুখে সজিবতা ফিরিয়ে আনে। ততক্ষণে মুহিব ও ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে অনামিকার দিকে এগিয়ে আসে। সারাদিনের ক্লান্তি, মন খারাপ, মেজাজ খারাপ সবকিছু শীতল হাওয়ায় পরিণত হয় এই মেয়েটার কাছে আসলে কেন যেন মুহিবের সবকিছু ভুলে যেতে ইচ্ছে করে। অনামিকা আয়নার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল মুহিব এসে অনামিকাকে জড়িয়ে ধরে। অনামিকার বুকটা ভারি হয়ে ছিল মুহিবের স্পর্শ পেয়ে যেন বুক ভারি করা কান্নাগুলো ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায়। সে সত্যিই এবার আর কান্না থামিয়ে রাখতে পারে না। এই লোকটা তার কাছে থেকে হারিয়ে গেলে কীভাবে থাকবে সে! ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়ে দুই বছর যাবৎ এই লোকটাকে পেয়ে সব কিছু ভুলে গিয়েছিল মুহিব তাকে সবকিছু ভুলিয়ে দিয়েছিল। মুহিবের গাঢ় ভালোবাসায় সব ছোটখাটো ঝড় সে সয়ে নিত কিন্তু এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করেছে।

জড়িয়ে ধরেও অনামিকার অবস্থানের অপরিবর্তন দেখে সামনের আয়নার দিকে তাকাতেই দেখে অনামিকা কান্না করে যাচ্ছে, শব্দহীন কান্না এই কান্নায় শুধু চোখের পানি গড়িয়ে যাচ্ছে। মুহিব এবার অনামিকাকে সামনের দিকে ফিরিয়ে নেয়। পরম আদরে চোখের পানি মুছে দিতেই এবার যেন অনামিকার কান্নার মাত্রা বেড়ে যায়। এক ঝটকায় মুহিবকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে ফুঁপিয়ে কান্না করতে থাকে অনামিকা। মুহিব এবার বুঝতে পারে হয়তো তার মা অনামিকাকে কিছু বলেছে। এটা ভেবে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে যে তার মা এখনো অনামিকার মতো মেয়েকে ভালোবাসতে পারলো না। অথচ অনামিকাকে ভালো না বেসে থাকা সম্ভব না তাই তো ওর জেঠাতো বোন জারাকে বিয়ের জন্য দেখতে গিয়ে অনামিকাকে এক নজর দেখেই মেয়েটার মায়ায় পড়ে যায় সে।
আলতো করে অনামিকার মাথাটা বুক থেকে তুলে তার দিকে তাকাতে বলে।

” এই অনু, কি হয়েছে বলো আমায়? কান্না কেন করছো? তুমি জানো না তোমার হাসিমুখ আমাকে শান্তি দেয়, সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে! তুমি কান্না কেন করছো বলো তো?”

অনামিকার চিবুকে আঙুল দিয়ে মুখটা উঁচু করে নিজের দিকে করে তাকে প্রশ্নটা করে। অনামিকা মাথা ঝাঁকিয়ে ‘কিছু না’ বলে আবার মুহিবের বুকে মাথা রাখে। মুহিব তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

” অনু, বলবে না আমায়? তোমার কান্না যে আমায় অস্বস্তি দিচ্ছে বুঝতে পারছো না তুমি? বলো প্লিজ, আম্মা কিছু বলেছে তোমায়?”

অনামিকা এবার মুহিবকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আস্তে করে কান্নাজড়ানো গলায় বলে, ” আমি তোমাকে ছাড়তে পারব না মুহিব। অন্য একটা মেয়ে এসে তোমার ওপর অধিকার দেখাবে, তুমি তাকে আমাকে যেভাবে খাইয়ে দাও ওভাবে খাইয়ে দেবে, জড়িয়ে ধরবে, মন খারাপ থাকলে হাসাবে, মোট কথা তোমার পাশে আমি অন্যকাউকে সহ্য করতে পারব না। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ছাড়া আমার সুন্দর একটা দিন কল্পনা করতে পারি না। মা-বাবার ভালোবাসা আমি পাই নি তোমাকে পেয়ে আমি আমার সব না পাওয়া ভুলে গিয়েছি প্লিজ তুমি মাকে বলে দাও তোমাকে যেন আমার কাছে থেকে কেড়ে অন্য কাউকে না দিয়ে দেয় প্লিজ……”

” আরে বাবা, আম্মা আমাকে তোমার কাছে থেকে অন্যকাউকে দিয়ে দেবে কেন? আমি তোমার ছাড়া আর কারো হব না তুমি দেখে নিও।”

” আমি সত্যিই তোমাকে অন্যকারো পাশে কল্পনাও করতে পারব না। ”

” কল্পনা করতে হবে না তোমার, আমি শুধু তোমারই রবো।”

” সত্যি তো? প্লিজ আমাকে কারো কথায় বা চাপে পড়েও ছেড়ো না।”

” ছাড়বো না, এবার বলো তো কি হয়েছে?”

অনামিকা এবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চোখ নাক মুছে নেয়। মুহিবও অনামিকার চোখ মুছে দেয় আর বলে,

” ইশ চোখ মুখের কি অবস্থা করেছো দেখেছো? বাচ্চাদের মতো কি কান্নাটাই না জুড়ে দিয়েছিলে!”

” কান্না পেলে কি করব? তোমাকে দেখেই তো আরও বেশি কান্না পেয়ে যায় আমার মনে হয় এই লোকটা আমার জীবন থেকে চলে গেলে আমি কি করব? তোমার মতো করে কেউ যে আমাকে ভালোবাসতে পারবে না।”

” আমাকেও তোমার মতো কেউ বুঝবে না কোনদিন, আমি হারিয়ে গেলে তুমি ছাড়া পাগলের মতো কেউ খুঁজবেও না ।”

” অনেক বেশি ভালোবাসি কিন্তু…..”

” হ্যাঁ জানি তো এই মেয়েটা, অনামিকা নামের মেয়েটা আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। এবার আমাকে বলো তো কি হয়েছে? এসে বসো, বসে বলো এসো।”

মুহিব অনামিকাকে হাত ধরে নিয়ে যায় দুজনই বিছানায় বসে। এবার অনামিকার হাত দুটো ধরে চোখের দিকে তাকায়। অনামিকা মুহিবের দিকে থেকে চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়।

চলবে…..

#তুমি_শুধু_আমারই_হবে
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৩

” মুহিব, তোমার আম্মা জারাকে কল দিয়েছিল, তার সাথে তোমার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।”

অনামিকার কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় মুহিবের। তার মা আসলেই এমন কাজ করেছে! এসব কথা বলার আগে একটাবারও তার ছেলের কথা ভাবলো না! অনামিকার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, ” আম্মা আসলেই এটা বলেছে?”

” হ্যাঁ জারা আমাকে কল দিয়েছিল, কল দিয়ে সে আমাকে জানিয়েছে। জারা না জানালে তো আমি জানতামই না। মা’র সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম আমিও কড়া কথা বলেছি আর উনিও আমাকে বলেছেন তোমাকে অন্যকারো সাথে বিয়ে দেবে। ”

” এটা নিয়ে আমার অনু ভয় পেয়েছে?”

” উনি বলেছে কালকে নাকি তোমার আন্টি আসবে, উনি আসলে দুইবোন মিলে মেয়ে দেখতে যাবে।”

” চিন্তা করো না এসব কিছুই হবে না।”

” হুম। ”

” এখন চলো খাবার দেবে, খুব ক্ষিধে পেয়েছে।”

” ঠিক আছে।”

অনামিকা ডাইনিংরুমে চলে যায়, মুহিব বসে বসে মায়ের কথা ভাবতে থাকে। একেই তো বিয়ের পর থেকে তার মা অনামিকাকে পছন্দ করে না কারণ তিনি জারাকে পছন্দ করেছিলেন।

দুই বছর আগে মুহিবের মা কারো মাধ্যমে জারার খোঁজ পায়। ভালোভাবে খোঁজ খবর নিয়ে তার বাড়ির ঠিকানাও যোগার করে।
এক প্রকার জোর করেই মুহিবকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। গাড়ি করে যাওয়ার সময় জারাদের বাড়ির সামনেই মোড় ঘুরার সময় আরেকটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে গাড়ির সবাই পড়ে যায়। বাহিরে উঠোনেই অনামিকা দাঁড়িয়ে ছিল। ছোট কো বাচ্চাকে দিয়ে দোকানে কিসমিস নিয়ে আসতে পাঠিয়েছিল। বাড়ির সামনে ছোটখাটো একটা দূর্ঘটনা ঘটতেই আশেপাশে থাকা মানুষগুলো সেখানে জড়ো হয়ে যায়। অনামিকাও দৌঁড়ে গিয়ে সেবাশুশ্রূষা করে। সেখানেই অনামিকাকে মুহিবের ভালো লেগে যায়। কেউ কাউকে চিনে না প্রথম দেখাতেই অনামিকাকে পছন্দ করে ফেলে সে। জারার বাড়ির লোক এসে তাদের সবাইকে বাড়িতে নিয়ে যায়। রাস্তায় হট্টগোলের মাঝেই এক পর্যায়ে অনামিকাকে হারিয়ে ফেলেছিল মুহিব। চারপাশ খুব ভালোভাবে খুঁজেও অনামিকাকে আর দেখতে পায় নি সে।
জারার বাড়িতে একটা রুমে সবাইকে বিশ্রাম নিতে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই বসে আছে মেয়ে দেখবে বলে।

অন্যদিকে জারাকে জোর করে রেডি করে দেওয়া হয়েছে। জারা কিছুতেই তাদের সামনে যেতে ইচ্ছুক না। অনামিকা বারবার বুঝিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। জানালার পাশে চুপ করে বসে আছে সে।

” জারা, আর দেরি করিস না। বড়বাবা এখনই চলে আসবে কিন্তু।” (অনামিকা)

” আসুক , আমি এখন বিয়ে করব না আপা। আর তোরই তো বিয়ে হলো না তাহলে আমি কেন এখনই বিয়ে করব?”

” ছেলের মা তোকে কোথাও দেখে পছন্দ করে সেই পরিপ্রেক্ষিতেই সবাই এসেছে। আর দেখলেই তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না তাই না? চল আমি এগিয়ে দেই…!”

” বাড়ির লোক আমায় কি পেয়েছিস আমায়? যে যখন যা বলবে তাই করতে হবে নাকি আমার?”

জারার বাবা জামান সাহেব রুমে প্রবেশ করেন। জামান সাহেবের সাথে সাথে রেহেনা বেগম ও আসেন মেয়েকে নিতে। মেয়েকে মুখ কালো করে এক কোণায় বসে থাকতে দেখে সেদিকে এগিয়ে যান।

” কি হয়েছে? এভাবে বসে আছিস কেন? অনু মা তোকে না বললাম ওকে নিয়ে যেতে!”

” হ্যাঁ বড়মা নিয়ে যাচ্ছি। জারা চল।।”

” মা আমি যাব না ওখানে, আমি এখন বিয়ে করব না।”

” তুমি গেলেই তোমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না, ওঠো।” (জামান সাহেব)

বাবার এমন একটা ধমকেই জারা উঠে দাঁড়ায়। এখন না গেলে হয়তো আরও কথা শুনতে হতে পারে তাই রেহেনা বেগম অনামিকাকে ইশারা করে তাড়াতাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। অনামিকাও আর দেরি না করে ওরনা দিয়ে নিজের শরীর এবং মুখের বেশির ভাগ অংশ ঢেকে জারাকে নিয়ে যায়। সবাই যে রুমে বসে আছে সেখানে গিয়ে দাঁড়ায়। বসতে বললে জারাকে বসিয়ে দিয়ে অনামিকা গিয়ে তার বড়মার পিছনে দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মুহিবের চোখ একবার অনামিকার ওপর পড়তেই বুঝতে পারে এটা বাহিরের সেই মেয়েটা। অনামিকাকে দেখতেই মুহিবের মুখে মুচকি হাসির রেখা দেখা দেয়। চোখের এই দেখাতেই যেন পেয়ে যাওয়ার অনুভূতি কাজ করছে।।
জারাকে দেখার পর্ব প্রায় শেষের দিকে অথচ মুহিবের মন পড়ে আছে অনামিকার কাছে। মুহিবের কাছে যখন জানতে চাওয়া হয় জারাকে তার পছন্দ হয়েছে কি না মুহিব প্রথমে কিছু বলে না পরে সে তার বাবাকে জানায় জারাকে নয় দরজার পাশের মেয়েকে সে পছন্দ করেছে। মুহিবের বাবা কথাটা মুহিবের মাকে জানায়। এ কথা শুনে মিসেস মেরিনার অবস্থা যেন আকাশ থেকে পড়ার মতো। এরকম একটা কথা তিনি কল্পনাও করেন নি যে জারাকে দেখতে এসে তার ছেলে অন্যকাউকে পছন্দ করে বসবে। বিষয়টা খুব গোলমেলে হয়ে যাওয়ার আশংকা করেন তিনি। মুহিবের একটা কথা তৎক্ষনাৎ তার কানে আসে, ” বিয়ে করলে ওই মেয়েকেই করব নয়তো আমি বিয়েও করব না বাড়িতেও আর আসব না।”
ছেলের এমন একটা কথায় বেশ অবাক হন তিনি। মিসেস মেরিনা বিষয়টা কীভাবে হ্যান্ডেল করবেন বুঝতে পারছিলেন না তাই তিনি জারার বাসায় এটা বলেন যে বাসায় গিয়ে ভেবে জানাবেন। উনারা সবাইও বিষয়টি মেনে নেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার ঠিক আগের মুহুর্তে মুহিব দুই মিনিট কথা বলতে চায় জারার সাথে। বিষয়টা একটু অন্যরকম দেখালেও কেউ আর না করে না। জারা আর মুহিবকে পাশের রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জারা আগে আগে রুমে চলে যায় পরে মুহিব ও যায়। জারা দাঁড়িয়ে আছে মুহিবও গিয়ে দাঁড়ায়, জারা একটা চেয়ার এগিয়ে মুহিবকে বসতে বলে। মুহিব জানায় সে বসবে না।

” আচ্ছা বলুন কি বলবেন?”

জারার প্রশ্নে মুহিব কীভাবে তার ব্যাপারটা বলবে বুঝে উঠতে পারে না। তবুও বলে-

” আসলে আমি যে কথাটা বলতে চাইছি সেটা সবার সামনে বলা যেত না তাই আলাদারুমে আসতে হলো।”

” জি বলুন।”

” আমি আসলে আপনাকে বিয়ে করতে পারব না।”

” সত্যি!” (জারা)

জারা বেশ খুশি হয়ে যায় মুহিবের কথায় তাই সে নিজের খুশিটা লুকোতে পারে না।

” আপনি খুশি হচ্ছেন যে?”

জারা এবার মুহিবের সাথে মুক্তভাবে কথা বলা শুরু করে।

” আরে আমিও চাচ্ছিলাম না বিয়ে করতে, বাবা-মায়ের জোড়াজুড়িতে আজ আপনাদের সামনে যেতে হয়েছে।”

” তাহলে তো ভালোই হলো, আরেকটা কথা।”

” জি বলুন।”

” আপনাকে যে মেয়েটা আমাদের সামনে নিয়ে এলো তাকে আমার খুব ভালো লেগেছে বলতে পারেন প্রথম দেখায়….”

” প্রেমে পড়ে গেছেন তাই না?”

মুহিবকে কিছু বলতে না দিয়ে জারা নিজেই বেশ উৎকন্ঠায় কথাটি বলে ফেলে। এই মেয়ে যে খুব কথা বলে সহজেই কারো সাথে মিশে যায় সেটা এই মুহুর্তে মুহিব বুঝে যায়। তাই মাথা হালকা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দেয় যে সে প্রেমে পড়েছে।

” আপনার নম্বর দেওয়া যাবে?”

” যাকে পছন্দ হয়েছে তার নম্বর নিন।”

” আপনারটাও লাগবে।”

” যদি কথা দেন শালিকা বানাবেন তাহলে নম্বর দিতে পারি, নইলে কাভি নেহি…..”

” কথা দিলে যদি না রাখতে পারি তাহলে তো মুশকিল হয়ে যাবে। কথা দিচ্ছি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”

জারা খুশি খুশি দুজনের নম্বর দিয়ে দেয়। সেদিনের মতো জারাদের বাড়ি থেকে মুহিব এবং তার পরিবার বিদায় নেয়। বাড়িতে এসে মিসেস মেরিনা ভীষণ ঝামেলা করেছিলেন। তবে দূর্ঘটনার সময়ের ঘটনায় হয়তো একটু জায়গা করে নেয় উনার মনে তাই তিনি ভেবে দেখবেন বলে জানান।

মুহিব অনামিকার সাথে কথা বলে তাকে পছন্দ করে সেটা জানায় কিন্তু অনামিকা স্রেফ না করে দেয় কারণ জারার সাথে তার বিয়ের কথা চলছে সেখানে অনামিকা কীভাবে বিয়ে করতে পারে! জারা নিজে অনামিকাকে সবকিছু বোঝায় এবং বাড়িতে সে নিজেই কথা বলে অনামিকা আর মুহিবের ব্যাপারে। জারার মা-বাবা অত্যন্ত ভালো মানুষ হওয়ায় তারা খুব সহজেই বিষয়টা মেনে নেন কারণ বলতে গেলে তারা অনামিকাকে জারার চেয়েও বেশি ভালোবাসে। অনামিকাকে তারা নিজের মেয়েই ভাবে।

বিয়ে অবধি সবকিছু ঠিক ছিল কারণ জারার বাবা- মা অসম্ভব ভালো মানুষ। মুহিব অনামিকাকে পছন্দ করেছে শুনে তারা খুব খুশি হয়েছিলেন৷ মুহিবকে বাসায় ডেকে অনামিকার ব্যাপারে সব জানিয়েছিলেন ওর বাবা-মা নেই ছোটবেলা থেকে জারার সাথেই এক বাড়িতে বড় হয়েছে। মুহিব তার বাড়িতে এই বিষয়টা লুকোয় বিয়ের পরেই জানাজানি হলে সবাই মেনে নেয় কিন্তু মিসেস মেরিনা মেনে নিতে পারেন না অনামিকার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন।

চলবে……