তুমি শুধু আমার পর্ব-০২

0
958

#তুমি শুধু আমার
#written by ayrin
#part2

হসপিটালের করিডোরে অনবরত পাইচাড়ি করছে নিহান। কিছুক্ষণ পর পর মাথায় দুই হাত দিয়ে বসে আছে। তখন দেখলো অপারেশন থিয়েটার থেকে একজন নার্স দ্রুত পায়ে কোথাও চলছেন। নিহান তৎক্ষনাৎ নার্স এর পিছু পিছু গিয়ে অস্থির গলায় প্রশ্ন করছে মেহের কেমন আছে, মেহের ঠিক আছে তো? ওর গুরুতর কোন আঘাত লেগেছে কিনা।

নিহানের এতগুলো প্রশ্নগুলোর উত্তরে শুধু নার্স এটাই বললো পেসেন্ট এর অবস্থা এখন ভালো। অনেক বেশি ব্লিডিং হয়েছে,,বাকিটা ডক্টর থেকে জেনে নিবেন।

নিহান স্তব্ধ হয়ে গেলো কথাটা শুনে। এরকম পরিস্থিতিতে সে আগে কোনদিন পরেনি। তাই কি করবে না করবে ভেবে রিহান কে ফোন দিলো।

রিহানের মাত্র চোখ দুটি বুঝে আসছিলো ঘুমে। তখনি ফোন আসলো,,আলসেমি করে ফোন রিসিভ করলোনা। ফোনের সংখ্যা যখন পাচঁ হলো,,সে চিন্তিত মনে উঠে ফোন হাতে দিলো,, নিহানের কল দেখে মনে হলো ও সপ্তম আসমান থেকে মাটিতে পরে গিয়েছে। কারণ গত চার বছর নিহান রিহানকে নিজের ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টেও রাখেনি। সেই নিহান আজকে তাকে ফোন দিয়েছে তাও আবার পাচঁ বার,,,

তাই আর কিছু না ভেবে তারাতাড়ি রিসিভ করলো।তখনি শুনতে পেলো নিহান কান্নারত গলায় বলছে ভাইয়া ও কি মরে যাবে। মেহের কি মরে যাবে। ভাইয়া তুমি ওকে বলোনা আমি আর রাগ করবোনা ওর সাথে।

এদিকে রিহান হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে। সে কিছুই বুঝতে পারছেনা কি হয়েছে। রিহান নিহানকে বললো তুই কোথায় আছিস,, নিহান রিহানকে ঠিকানা বলার পর রিহান বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো।

রিহান হসপিটালে পৌছানোর পর নিহান কে দেখলো ডক্টরকে উত্তেজিত হয়ে কিছু জিজ্ঞেস করছে। উত্তরে ডক্টর বললেন,,

ডক্টর – মুচকি হেসে বললাম। রিলাক্স,, পেশেন্ট এখন ঠিক আছেন। তবে সময়মতো হসপিটালে না নিয়ে আসলে অনেক ক্ষতি হয়ে যেত। তবে উনাকে কয়েকদিন কোন রকম যেন প্রেশার না দেওয়া হয়।

নিহান এতক্ষণে যেন নিজের অস্তিত্ব ফিরে পেল। মেহের কে নিজের বোন মনে করে সে। সবচেয়ে বড় কথা মেহের ছাড়া আর কেউ ওকে অতটা বুঝতে পারেনা। যতটা বুঝে মেহের তাকে। অনেকেই তাদের বন্ধুত্ব দেখে হিংসা করে ওদের।

কিছুক্ষন পর মেহেরের সেন্স আসলো। নিজেকে হসপিটালে দেখে কিছুটা হতভম্ব হলো,,,

আশেপাশে তাকিয়ে দেখে ওর থেকে কিছুটা নিহান সোফায় বসে ঘুমিয়ে আছে। আর তার পাশে রিহান কে দেখে হকচকিয়ে গেলো। মেহেরের খুব পানির তৃষ্ণা লেগেছে। কিন্তু নিহানকে ডাকতেও পারছেনা। তাই নিজেই উঠে বসার চেষ্টা করছে।

রিহান এতক্ষণ ফোন স্ক্রোল করছিলো। মেহের কে জাগ্রত অবস্থায় দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হলো।

রিহান কিছুটা ইতস্তত ভাবে মেহের এর সামনে দাড়িয়ে বললো কিছু লাগবে তোমার?

মেহের একপলক রিহানের দিকে তাকিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললো নিহান কে একটু ঢেকে দিবেন প্লিজ।

রিহান- নিহান এতক্ষণ তোমার জন্য অনেক চিন্তিত ছিলো।মাত্র কয়েক মিনিট হবে ঘুমিয়েছে। এখন ওকে জাগালে ওর শরীর খারাপ হতে পারে। মেহের কে আবারো বললাম তোমার কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলো,, নাহয় নার্স ডেকে দিচ্ছি ।

মেহের কিছু না বলে আবার চোখ বুঝে ফেললো। রিহান বুঝতে পারলো মেহের তার সাথে কথা বলতে আগ্রহী নয়। কিন্তু মেহের কে দেখে রিহানের মনে হয়েছে তার কিছু প্রয়োজন।

রিহান এবার মেহেরের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেহের পানির গ্লাস এর দিকে তাকিয়ে আছে। রিহান বুঝতে পারলো মেহেরের তৃষ্ণা পেয়েছে। কিন্তু তাও আমাকে মুখ ফুটে কিছু বলছেনা। রিহান মনে মনে বলছে এই মেয়ের এতো অহংকার কেনো। আমার কি ঠেকা পরেছিলো ঐ মেয়েকে পানি দেওয়ার। শুধুমাত্র অসুস্থ দেখে মানবতার খাতিরে পানি দিচ্ছি,,তা নাহলে জীবনেও দিতাম না।

রিহান মেহেরের দিকে পানি এগিয়ে দিয়ে বললো এই মেয়ে নাও পানি খেয়ে নেও। মেহের রিহানের কথায় চোখ খোলবেনা খোলবেনা বলেও চেয়ে ফেললো রিহানের দিকে। রিহানকে দেখতে কেন যেনো ওর ভালো লাগছে,, তাই একদৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে।

এদিকে রিহান বার বার মেহের কে ঢেকে চলছে। কিন্তু মেহেরের কোন পাত্তায় নেই। সে একদৃষ্টিতে রিহানের দিকে তাকিয়ে আছে। যার কারণে রিহান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরেছেে। ও মানুক আর না মানুক তারা দুজন স্বামী স্ত্রী।

রিহান মনে মনে বলছে দেখো এতক্ষণ অহংকার দেখিয়ে এখন কেমন আমার দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে।

রিহান মেহেরের মুখটা ধরে নিজেই পানি খাইয়ে দিলো। এতক্ষণে বাস্তবে ফিরে আসলো মেহের। এতক্ষণের কথা ভেবে অসস্তি ঘিরে ধরলো মেহের কে।
মেহের আবারো রিহান কে বললো নিহানকে একটু ঢেকে দিবেন প্লিজ। একটু জরুরি,,,

রিহান আর কিছু না বলে নিহানকে ডাকতে শুরু করলো। নিহানকে একবার ঢাক দিতেই নিহান ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠলো,,আর বললো মেহু ঠিক আছে।ওর কিছু হয়নিতো?

মেহের নিহানকে অস্থির হতে দেখে আস্তে করে নিহান কে ডাক দিলো। মেহের কে জাগ্রত দেখে নিহান তারাহুরো করে মেহেরের কাছে গেলো।

নিহান মেহেরের কাছে গিয়েই ওকে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। মেহের বললো আজ কি থাপ্পড় ডে,, সবাই শুধু চড় মারছে?

নিহান বললো এই মেয়ে তুই কি কখনো মানুষ হবিনা। রাস্তার মধ্যে অন্যমনষ্ক হয়ে চলতে নিষেধ করিনি তোকে আমি,,

মেহের বললো আমি পাশ করেছি না ফেল করেছি রে? ফেল করলে মনে হয় এক্ষুনি কোমায় চলে যাবো।

নিহান বললো এত কিছুর মধ্যে আমি রেজাল্টের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। এবার আমারও টেনশন হচ্ছে,,,

মেহের বললো তারাতাড়ি রেজাল্ট চেক কর,,,তারাতাড়ি দেখ আমার হার্ট অনেক জোরে বিট করছে,, মনে হয় এবার টাটা বাই বাই হয়ে যাবো,,, যাওয়ার আগে রেজাল্ট টা দেখে যেতে চাই অন্তত,,

নিহান বললো তুই মরার আগে আমার মেয়ের জামাই কে দিয়ে যা, তা নাহলে আমার মেয়ে জন্মের আগেই বিধবা হয়ে যাবে।তোকে যে কথা দিয়েছি তোর ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিবো।

রিহান দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ মেহের আর নিহানের কথা শুনছিলো। কিন্তু নিহানের লাস্ট কথা শুনে রিহানের চোখ কপালে উঠে গেলো। আর সাথে সাথে কাশতে লাগলো,,,

মেহের আর নিহান দুজনে কথা বলতে এতটাই ব্যস্ত
ছিলো তাদের সাথে যে রুহান ও আছে সে কথা বেমালুম ভুলেই গেছে।

মেহেরের অসস্তি হচ্ছে কারণ মেহের নিহান ছাড়া আর কারো সামনে এভাবে বাচ্চামো করেনা। তাই রিহান কে দেখে মেহেরের অসস্তি হচ্ছে। নিহানের রিহানের সাথে কথা বলতে কেমন যেন উশখুশ লাগছে। প্রায় চার বছর নিহান তার ভাইয়ের সাথে কথা বলেনা। কারন সে মনে করে রিহান যদি দেশের বাহিরে না যেত তাহলে ওর মা মেহের কে এত কষ্ট দিতোনা। তাই এতদিন রাগ করে রিহানের সাথে কথা বলেনি।

নিহান মেহের কে বললো আমি ফ্রেশ হয়ে এসে রেজাল্ট বের করছি। বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মেহের ঐপাশে নিহান এর ফোন দেখতে পেলো। নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই স্যালাইন এর সুচ হাতে বিধলো,, তাই মৃদু চিৎকার করলো আহ বলে,,,

তখনি রিহান এসে মেহের এর হাত ধরে বললো এতো অধৈর্য কেন তুমি,, কোন কিছু কি ঠিকভাবে করতে পারোনা?

মেহের নিজের হাত থেকে রিহানের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো আমি নিজের কাজ ঠিকভাবে করতে না পারলেও নিজের কাজ নিজেই করি। কারো দয়ার আমার দরকার নেই,,

রিহান মেহেরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে,, কেন যে এই মেয়েকে হেল্প করতে আসি। কথার কি তেজ দেখো,,, যেচে কেনো যে হেল্প করতে আসলাম। হাত থেকে যে রক্ত বের হচ্ছে কোন হুশ আছে তার। তিনি তো কথার তেজে মানুষকে রক্তাক্ত করতে ব্যস্ত,,

#চলবে