তুমি শুধু আমার পর্ব-০৩

0
816

#তুমি শুধু আমার
#written by ayrin
#part3

রিহান জোর করে মেহেরের হাত থেকে সুচ বের করলো। মেহের ব্যাথা পেয়েছে তাও চুপ করে আছে। রিহান মেহেরের হাতে একটা ওয়ান টাইম বেন্ডেজ বেধে দিলো। তারপর গিয়ে সোফায় বসে পরলো।

নিহান ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে রেজাল্ট চেক করলো। মেহের আর নিহান দু’জনেই প্লাস পেয়ে পাশ করেছে৷ এটা নিয়ে দু’জন দুজনকে বললো তাহলে আমরা আবারো সেম,,,

আসলে মেহের আর নিহান দুজনেই কাকতালীয় ভাবে সব পরিক্ষায় একই নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। অনেকেই বলেছে একসাথে বসার কারণে দুজনেই সেম লিখেছে তাই,,, তাই টিচার্সরা ওদের দুজন কে আলাদা বসাতো। তারপরও তাদের রেজাল্ট সেম আসতো।

কিছুক্ষণ পর মেহের ঘুমিয়ে গেলো। তখন রিহান নিহান কে বললো তুই বাড়িতে চলে যা আমি এখানে আছি। কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে আবার আসিছ।নিহান আচ্ছা বলে চলে গেলো। নিহান চলে যেতেই রিহান মেহেরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,,,
কিছুক্ষন পর মেহের কে নড়াচড়া করতে দেখে রিহানের হুস আসলো,,

নিজেই নিজেই বিরবির করে বলছে, এই মেয়ে কি আমাকেও যাদু করেছে নাকি। শুধু চেয়েই থাকতে মন চায়। অথচ এই মেয়ের জন্য এতদিন আমি আমার পরিবার থেকে আলাদা ছিলাম।

এখন থেকে এই মেয়ের দিকে আর তাকাবো না। আর এই মেয়ের সাথে ভালোভাবে কথাই বলবোনা। তাহলেই সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে।

একটু পরই মেহেরের ঘুম ভাঙ্গলো। রিহান কে একা দেখে ওর আবার অসস্তি হচ্ছে। চারপাশে তাকিয়ে নিহান কে খুঁজলো,, না পেয়ে রিহান কে জিজ্ঞেস করলো নিহান কোথায়?

রিহান মেহেরে মুখে নিহানের নাম শুনতেই কেন যেন রিহানের রাগ লাগছে। সারাক্ষণ শুধু নিহান আর নিহান। এখানে যে রিহান নামক একজন সুপুরুষ আছে সেটা কি মেহের দেখতে পায় না।

রাগের মাথায় বলেই ফেললো,, এত নিহান নিহান করো কেন? আমার জীবন নষ্ট করেছো,,এখন কি আমার ভাইয়ের জীবন টাও নষ্ট করবে? তোমাদের মতো মেয়েদের থেকে আর কিই বা আশা করা যায়,, তোমাদের মাথায় তো সারাক্ষণ এই চিন্তেই থাকে কিভাবে বড়লোকের ছেলেকে ফাঁসানো যায়। আমাকে পাওনি তাই আমার ভাইকে বেছে নিয়েছো।
মেহেরের মুখে নিহানের নাম শুনতেই রিহানের হিংসা হচ্ছে। তাই রাগের মাথায় এতগুলো কথা বলে ফেলেছে।

মেহের এতক্ষণ নিশ্বব্দে সব কথা শুনেছে। ওর এসব কথায় কষ্ট লাগেনা।কারণ গত পাঁচ বছরে এমন কথা রিহানের মা মেহের কে অনেক বার বলেছে। কিন্তু কেন যেন রিহানের মুখে এসব শুনে ওর ভীষন কষ্ট লাগছে।

মেহেরের আপন বলতে মাত্র দুজনই আছে,,নিহানের বাবা এবং নিহান।
আজ মেহেরের হোস্টেল ছেড়ে দিতে হবে,, তাই মেহের নিহান কে খুজছিলো। রিহান কে আর কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে থাকলো।

এদিকে রিহান রাগের মাথায় তো এতগুলো কথা বলে ফেলেছে। কিন্তু এখন ওর আপরাধ বোধ হচ্ছে। মেহের কে কিছু বলতে যাবে তখনই নিহান আসলো,, তাই আর কিছু বললো না।

নিহানকে দেখে মেহের বললো,,আমাকে রিলিজ দিবে কখন?

নিহান -আজ এখানে থাকতে হবে।

মেহের- আমি আজই বাড়ি ফিরে যেতে চাই প্লিজ,,

নিহান অনেক বার বলা সত্বেও মেহের হসপিটালে থাকতে রাজি হলোনা। এমনকি হসপিটালের বিল ও মেহের দিয়েছে। অবশেষে মেহেরের জেদ এর কাছে হার মেনে নিহান রিলিজ করিয়েছে মেহের কে।

নিহান- তোকে আমার বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইনা আমি। আর তুই একা থাকবি সেটাও রিক্স,, হোস্টেল থেকে তোর সব কিছু আমি নতুন বাড়িতে সিফট করে দিয়েছি। আর তোর চাহিদা মতোই ছোট একটা বাড়ি ভাড়া নিয়েছি।তুই যতদিন সুস্থ না হবি ততদিন রাবেয়া খালা তোর সাথে থাকবে।

(রাবেয়া নিহানদের বাড়িতে থাকে এবং নিহান রিহানের ছোট বেলার যাবতীয় কাজ উনিই করেছেন।ঘরের কাজেও টুকটাক সাহায্য করেন)

মেহের নিহানের দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,, আর ভাবছে এই ছেলেটা না থাকলে হয়তো সে এতদিনে মরেই যেতো,,নিজের ভাই থাকলেও মনে হয় এত কিছু করতো না তার জন্য ।আর এই ছেলেটাকে নিয়েই মানুষের মনে কত কুৎসিত ধারনা।

মেহের হসপিটাল থেকে বাড়িতে এসেছে আজ দুদিন হলো। এখন অনেক টাই সুস্থ হয়ে গেছে। নিহান আর রাবেয়া খালার যত্নে সুস্হ না হয়ে উপায় নেই।

অন্যদিকে রিহানের চোখে মেহেরের চেহারাটাই বাসে।রাতে ঘুমাতেও পারেনা ঠিকমতো। মেহের কে নিয়ে ভাবতে ভাবতে তার সারারাত কেটে যায়। আবার মনে মনে বলে মেহের কে যদি স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয় তাহলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে। তারপর নিজের চিন্তাভাবনায় নিজেই বিরক্ত হয়।

রিহান ভাবছে সেদিন মেহেরের সাথে মিস বিহেভিয়ার করেছে তাই অপরাধবোধ থেকে মেহের কে নিয়ে বার বার ভাবছে। এসব কিছুতে সে বিরক্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেহের কে গিয়ে সরি বলবে।

তখন আবার চিন্তা করে সরি বললে তো অহংকারী মেহেরের দাম বেড়ে যাবে। তাই সে বলতে ও পারছেনা।

রাত দুটো বাজে,,
আজ ও রিহানের চোখে ঘুম নেই। অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় মেয়েটাকে চুপিচুপি দেখে আসবে,,, তাতে কেউ জানবেও না। আর তার চোখে বারবার মেয়েটার চেহারা আসবে না।

কিন্তু মেহেরের বাড়ির ঠিকানা ওর জানা নেই। কিভাবে জানবে ভাবছে,,, নিহানকে জিজ্ঞেসা করতে পারবেনা। তাহলে নিহান সবকিছু বুঝতে পেরে যাবে। অনেক ভাবার পর একটা আইডিয়া পেলো,,কিন্তু তার জন্য আজকের রাতটুকু অপেক্ষা করতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো।

পরের দিন সকাল হতেই রিহান রাবেয়া খালাকে ফোন দিলো,,,

ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই রিহান উৎসাহিত কন্ঠে বললো খালা আমি রিহান।

খালা- আরে রিহান বাবা তুমি আমার ফোন দিলা কোন দরকার?

রিহান- খালা তেমন কিছু দরকার নেই। তোমার হাতের স্পেসাল বিরিয়ানি টা খেতে ইচ্ছে করছে।

খালা- কিন্তু বাবা আমি এখন কিভাবে রান্না করে তোমাকে খাওয়াবো। আমি কয়েকদিনের মধ্যেই তোমাদের বাড়িতে চলে আসবো তখন নাহয় রান্না করে খাওয়াবো।

রিহান- কিন্তু আমার তো এখনি খেতে ইচ্ছে করছে। তুমি কোথায় আছো বলতো,, আমাদের বাড়ি থেকে কি বেশি ধুরে।

খালা – না না। তোমাদের বাড়ি থেকে বিশ মিনিটের রাস্তা। এই…. ঠিকানায়।

রিহান – তাহলে আমি আসছি তোমাকে নিতে,, তুমি রেডি থেকো ।

খালা- বাবা মেহের মামনি এখানে একা কিভাবে থাকবে?

রিহান বললো আমার অনেক বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে। আমিই তোমার ঐখানে চলে আসবো তুমি রান্না করে রাখো।
খালা কে আর কিছু বলতে না দিয়েই ফোন কেটে দিলো।

ফোন রেখে রিহান একটা বিশ্বজয়ের হাসি দিলো। নিজের বুদ্ধির নিজেই প্রশংসা করলো।

রাবেয়া বিরিয়ানি রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করার জন্য বাজারে চলে গেলো। মেহের ঘুমিয়ে থাকার কারনে মেহের কে না জানিয়েই গিয়েছেন। মেহের ঘুম থেকে উঠার আগেই চলে আসতে পারবেন ভেবে।

অনবরত কলিং বেল এর আওয়াজে মেহেরের ঘুম ভাঙ্গলো। ওর প্রচুর মাথা ব্যাথা করছে। কয়েকবার খালাকে ডেকে না পেয়ে নিজেই বিছানা ছেড়ে উঠলো।
দেয়াল ধরে ধরে দরজা পর্যন্ত গেলো। মেহের টিশার্ট আর লেডিস টউজার পরে আছে, চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।

দরজা খোলে রিহান কে দেখে চমকে গেলো। অন্যদিকে রিহানও ভাবেনি মেহের দরজা খোলবে। মেহের ভ্রু কুঁচকে রিহানের দিকে তাকিয়ে আছে।

রিহান একধ্যানে তাকিয়ে আছে মেহেরের দিকে। রিহানের চাহনি অনুশীলন করে নিজের দিকে তাকিয়ে মেহেরের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।

নিজেকে আড়াল করে, একটু কেশে বললো আপনি এখানে?

রিহানের এতক্ষণে হুস আসলো। ও মেহেরের থেকে চোখ সরিয়ে মিন মিন করে বললো ইয়ে মানে খালা,,,

তখনই পেছন থেকে খালা বললো আরে রিহান বাবা তুমি চলে এসেছো?

#চলবে