তুমি শুধু আমার পর্ব-১২

0
683

#তুমি শুধু আমার
#written by ayrin
#part12

মেহের রান্না ঘরে গিয়ে দেখলো রিহান মেহেরের পছন্দের সব রকম খাবার বানিয়েছে৷মেহের এসব দেখে হতভম্ব হয়ে রিহানের দিকে তাকিয়ে থাকলো সে কিছুতেই বুঝতে পারছেনা রিহান এসব কি করছে। মেহেরকে দেখে রিহান বললো দেখতো এখানে তোমার পছন্দের কিছু খাবার বাদ পরেছে কিনা?
মেহের এখনো বিষ্ময় নিয়ে রিহানের দিকে তাকিয়ে আছে।ওর পছন্দের সব খাবারই রয়েছে।
রিহান মেহেরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেহেরকে বললো ফ্রেশ হয়ে এসে এগুলো খেয়ে বলো কেমন হয়েছে। কত কষ্ট করে রান্না করেছি,

মেহের রিহানকে কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে বাহিরে এসে দেখলো রিহান সব খাবার ডাইনিং টেবিলে সব সাজিয়ে রাখছে। মেহেরকে দেখে বললো তোমার কি কোন শাড়ি নেই?

মেহের- শাড়ি দিয়ে কি করবেন আপনি?

রিহান- আমি কিছু করবো না,তুমি পরবে তারাতাড়ি একটা শাড়ি পরে আসো।
মেহের- আমি কেন শাড়ি পরতে যাবো আজব?
রিহান- রিহান মেহেরের হাত ধরে বেডরুমে নিয়ে এসে বললো তুমি পরবে নাকি আমি নিজেই পরিয়ে দিবো?

মেহের বুঝতে পারলো আজ তার শাড়ি পরতেই হবে। সে অগত্যা একটা শাড়ি বের করলো পরার জন্য। রিহান তখনো রুমেই দাড়িয়ে আছে। মেহের রিহানকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো এখনো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?

রিহান- বাহিরে না গেলে কি খুব অসুবিধে হয়ে যাবে, এখানেই থাকি না?
মেহের রিহানের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতেই রিহান বললো যাচ্ছি যাচ্ছি এভাবে তাকানোর কিছু হয়নি।
রিহান বাহিরে চলে গেলে মেহের ইউটিউব থেকে বিডিও দেখে শাড়ি পরে ফেললো৷
শাড়ি পরে বাহিরে আসতেই দেখলো নিহান আকাশ সহ তাদের ভার্সিটির আরো চারজন বন্ধু। তাদের নাম তাহিয়া,মিমি, রাইসা আর মাহিম।

মেহেরকে দেখতে পেয়েই তাহিয়া বললো আরে ঐযে মেহের চলে এসেছে।
তাহিয়ার কথা শুনে রিহান সেদিকে তাকাতেই তার চোখ মেহেরের উপর আটকে গেলো৷ একনজরে তাকিয়ে আছে মেহেরের দিকে।
মেহের রিহানের এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।

রিহানকে এভাবে মেহেরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিমি বললো উহু উহু রিহান ভাইয়া আমাদের বান্ধবীর দিকে এভাবে তাকালেতো নজর লেগে যাবে।
রিহান মেহেরের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো লাগুক আমার নজরই শুধু আমার বউয়ের উপর লাগুক।
একথা শুনে সবাই একসাথে ওওওও ওহ-হো বললো।

মেহেরের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো একেতো সকাল থেকে রিহান কিরকম বিহেভ করছে তারমধ্যে আবার আজকে আকাশদের কে দেখে মেহেরের মনে হচ্ছে ওরা সবাই ওর আর রিহানের বিয়ের জথা জেনে গিয়েছে৷ তা-না হলে রিহানের মুখে বউ ডাক শুনে এমন রিয়েক্ট করতো না।

রিহানের এতক্ষণে হুস আসে। ওর কিছুটা লজ্জাও লাগছে এভেবে যে এখানে যারা আছে সবাই তার থেকে বয়সে ছোট। আবার নিজেই নিজেকে নিজেকে এই বলে শান্তনা দিচ্ছে যে নিজের বউকেই তো বলেছি এত লজ্জার কি আছে?
তারপর সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করে ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্য বাহিরে বের হলো৷ শুধু মিমি আর নিহান বাদে। ওদের নাকি কি কাজ আছে।

রিহান মেহেরের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেহেরকে অন্যদিন গুলোর তুলনায় আজকে একটু বেশিই খুশি লাগছে।সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।
মেহেরের হাসতে দেখে রিহানের মুখেও হাসি ফুটলো। কিছু একটা ভেবে একজনকে ফোন করে বললো সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে হয়েছে তো?
তারপর বললো আচ্ছা আমরা আসছি।

মেহেরের আজকে অনেক ভালো লাগছে। মেহের মনে মনে ভাবছে নিহান থাকলে আরো ভালো হতো। কিন্তু ওর কি এমন কাজ পরলো আজ যে আমাদের সাথে ঘুরতে আসতে পারলো না।

দুপুরের খাবার রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে যখন বাড়ি ফিরবে তখন মেহেরের মন খারাপ হয়ে গেলো কারণ তাকে আবার একা একা থাকতে হবে এই ভেবে।
কিন্তু যখন সবাই বললো আজকে সবাই মেহেরের সাথেই থাকবে। তখন মেহেরের মন আবার ভালো হয়ে গেলো। বাড়ি ফিরতে যখন গাড়িতে উঠলো তখন তাহিয়া মেহেরের চোখ বেধে দিলো।
মেহের চোখ বাধতে দেখে তড়িঘড়ি করে বললো কি ব্যাপার চোখ বেধেছিস কেনো?
তখন উত্তরে রাইসা বললো তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে তাই এখন চুপচাপ বসে থাক।

গাড়ী এসে থামলো রিহানদের বাড়িতে।তাহিয়া মেহেরকে বললো তুই রিহান ভাইয়ার সাথে আয় আমরা এখানেই আছি বলে রাইসা, তাহিয়া, মাহিম ভেতরে চলে গেলো।

রিহানদের বাড়িতে তাদের নিকটাত্মীয় সবাই এসেছে৷
রিহানের মা আর সিমি কিছুই বুঝতে পারছেনা।সবাই কোন কথা বার্তা ছাড়াই এসেছে। এদিকে রিহানের বাবাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি আগে থেকেই সব জানতেন। রিহানের মা বারবার রিহানের বাবাকে ডেকে জিঙ্গেস করছেন কিন্তু তিনি কোন উত্তর দেননি।

সিমি তার মাকে জিজ্ঞেস করলো তারা এখানে কেন এসেছে? সিমির মা বললো নিহান নাকি সবাইকে ফোন করে আসতে বলেছে কি বলে জরুরি দরকার।

সিমি রিহানের মাকে বলছে নিহান কি জন্য সবাইকে ডেকেছে বলতো। আমার একটুও ভালোলাগছেনা মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে।

রিহানের মা- তুই এতো চিন্তা করছিস কেনো বলতো তেমন কিছুই হবেনা৷ নিহান হয়তো এমনি সবাই ডেকেছে৷ আর সবাই এসেছে ভালোই হয়েছে,আজ সবাইকে বলে দেবো যে আমার রিহানের বউ করে সিমিকেই আনতে চাই।

একথা শুনে সিমি কিছুটা লজ্জা পেলো কারণ সে রিহানকে ভালোবাসে। আর সে ভাবে রিহান ও তাকে ভালোবাসে৷ নাহলে ছোটথেকে ওর এত কেয়ার কেন করতো?

তখনই শুনতে পেলো নিহান সবাইকে ডেকে ডেকে বলছে আজকে রিহান ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে আসবে এই বাড়িতে তারজন্য এতসব আয়োজন।

সিমি এসব শুনে রিহানের মায়ের দিকে তাকায় আর বলে খালামুনি এসব কি হচ্ছে রিহান তার বউকে নিয়ে আসবে মানে মেহেরকে নিয়ে আসবে। আর তার জন্যই আজকে এতো আয়োজন৷ কিন্তু তুমি যে বললে রিহানের বউ হিসেবে আমাকে আনবে?
আমি সত্যিই রিহানকে ভালোবাসি খালামুনি,তুমি কিছু করো প্লিজ৷
রিহানের মা সিমিকে শান্ত করে বললো রিহানের বউ করে তোকেই আনবো৷ তুই কিছু চিন্তা করিস না, যা হচ্ছে হতে দে৷

রিহান মেহেরের চোখের বাঁধন বাড়িতে ঢোকার ঠিক আগে মূহুর্তেই খুলে দিলো৷ মেহের চোখ খুলে রিহানের বাড়িতে নিজেকে দেখে ও তাড়াতারি বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য উল্টো হাটা দিলো, তখন রিহান মেহেরকে বললো কোথায় যাচ্ছো তুমি? আজ থেকে তুমি এ বাড়িতেই থাকবে।

মেহের রিহানকে কিছু না বলেই আবার বাহিরে উদ্দেশ্য রওনা হলো তখন রিহান বললো তোমার ঐ ফ্লাট এখন আর তোমার নেই। তোমার যাবতীয় সবকিছু এবাড়িতেই নিয়ে আসা হয়েছে।

মেহের রিহানের দিকে জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে তাকালে রিহান বললো আমরা ঘুরতে বের হবার পর মিমি আর নিহান সব নিয়ে এসেছে, আর তার জন্যই ওরা আমাদের সাথে ঘুরতে যায়নি।

মেহের- তাহলে এসব আপনার আগে থেকেই প্লেনে ছিলো। এসব কিছু কেন করছেন আপনি?

রিহান- হুম আগে থেকেই প্লেন করে রেখেছিলাম। এখন ভিতরে চলো নাহয় কোলে করে নিয়ে যাবো।

অগত্যা মেহের ভিতরে আসলো। মেহের আর রিহানকে আসতে দেখেই নিহান চিল্লিয়ে বললো ঐতো ভাইয়ারা চলে এসেছে৷

রিহান যখন মেহেরকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো তখন রিহানের মা এসে মেহেরকে থাপ্পড় মারতে নেয়। তখন রিহান তার মায়ের হাতটা ধরে বললো মা তুমি আগে কি করেছো না করেছো সেসব তুমি ভুলে যাও। মেহের আমার স্ত্রী,আর তুমি আমার স্ত্রীকে এভাবে সকলের সামনে বিনা অপরাধে তার গায়ে হাত তুলতে পারো না।

সিমি- তুমি এসব কি বলছিস রিহান। এই বাহিরের মেয়ের জন্য তুই খালামুনির সাথে এভাবে কথা বলতে পারিস না।

রিহান- বাহিরের মেয়ে আমার স্ত্রী নয় তুই। আর তুই বাহিরের মেয়ে হয়ে আমাদের ফেমিলির পার্সোনাল ব্যাপারে নাক না গলালেই খুশি হবো৷ ফারদার যদি আমার স্ত্রীকে বাহিরের মেয়ে বলিস তাহলে তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এইবাড়ি থেকে বের করে দিতে দ্বিতীয় বার ভাববো না।
রিহানের মা বললো রিহান তুই সিমির সাথে এভাবে কথা বলছিস তাও এই অপয়া মেয়ের জন্য?

রিহান বললো মা তুমি যদি মেহেরকে আরেকবার অপমান করো তাহলে আজকেই আমার এ বাড়িতে শেষ দিন।বুঝতে পেরেছো,

#চলবে