তুমি শুধু আমার পর্ব-১১

0
727

#তুমি শুধু আমার
#written by Ayrin
#part11

সারারাত রিহান ছটফট করছে কখন সকাল হবে আর কখন মেহেরের কাছে যাবে। তিনটার দিকে রিহান নিজের জামা কাপর লাগেজে তুলে রাখছে, আর বলছে সবসময় দেখি বউরা বাপের বাড়ি যাওয়ার আগে সব কিছু পেক করে। আর আমি আমার বউয়ের বাড়িতে যাবার জন্য জামা কাপর পেক করছি। তাও আবার নিজের বাড়ি থেকে পালিয়ে।
সবকিছু ঘুছিয়ে আযানের একটু আগে রিহান তাদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো। মেহেরের বাড়িতে যেতে যেতে আযান দিয়ে ফেলেছে। রিহান গাড়ি পার্ক করে ভেতরে আসলো। মেহেরের ফ্লাটের চাবি থাকায় ও কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই ভেতরে ঢুকে গেলো। তারপর বেড রুমে গিয়ে দেখলো মেহের পুরো বেডে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমাচ্ছে।

রিহান এটা দেখে বললো মহারানি কে দেখো কিভাবে ঘুমাচ্ছে মনে হয় অনেক দিন পর শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।আর এদিকে যে মহারানির মহারাজ তার চিন্তায় চিন্তায় অস্থির তাহার কি সে খবর রাখার সময় আছে।

তখনি রিহান মেহেরের কিছু অস্পস্ট কথা শুনতে পেল,
রিহান মেহেরএর কাছে গিয়ে একটু ঝুকতেই শুনতে পেলো মেহের বলছে প্রথিবির সবাই সার্থপর। প্রয়োজন শেষে কেউ কারো কথা মনে রাখেনা।মিষ্টার রিহান আপনার জন্য আমার জীবন টা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রতিনিয়ত আপনার মায়ের গালিগালাজ অভিশাপ আমাকে তিল তিল করে শেষ করেছে। আমি কি একবারো বলেছিলাম আপনার সাথে আমাকে বিয়ে দিতে কিংবা আপনাকে আমাকে বিয়ে করতে। তাহলে কেন করেছেন আমাকে বিয়ে?

বিয়ে করেই বা কেন চলে গিয়েছিলেন দেশের বাহিরে। লোকের মুখে প্রশংসা শুনেছেন আমার মতো একজন এতিম কে বিয়ে করে।আর আমি শুনেছি আপনার মা বোন থেকে আমি অপয়া আমার জন্য আপনি দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আপনার জন্য বিনা কারনে প্রতিনিয়ত আমাকে অপমানিত হতে হয়েছে। আর কালতো আপনার খালাতো বোন যখন আমাকে এত কথা বললো তখন তো একবারও আপনি তাকে কিছু বলেন নি। বলবেন কি করে সে তো আপনার পছন্দের মানুষ কিনা।আর এর পর ও আমার কাছে এসে নিজের অধিকার দেখান৷ এতকিছুর পর হয়তো সবাই ভুলেই গিয়েছে আমি একজন মানুষ। আমারও কিছু ইচ্ছে অনিচ্ছা আছে৷

একেতো নিজের বাবা মাকে এতো তাড়াতাড়ি হাড়িয়ে ফেললাম। সেই দুঃখ কাটাতে না কাটাতেই আবার নতুন করে দুঃখের সাগরে তলিয়ে গেলাম।

বাবা মা মারা যাবার কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের ছোট্ট আদরের বাচ্চামো করা মেয়েটা বুঝতে শিখে গেলো। মা বাবা তোমরা কেন আমাকে রেখে গেলে বলতো, আমাকে সাথে নিয়ে গেলে কি এমন হতো?তোমাদের মেয়েটার একা থাকতে যে খুব ভয় করে। এসব বলেই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।

রিহান তাড়াতাড়ি করে মেহেরকে বুকে জরিয়ে নিলো।রিহানের চোখেও আজ পানি৷ সে ভাবতে পারেনি তার মা মেহেরের সাথে এরকম বলে বিহেভিয়ার করেছে। তার রাগ করে দেশের বাহিরে যাবার কারনেই এই নিষ্পাপ মেয়েটাকে ভুগতে হয়েছে।

রিহান মনে মনে ভাবছে এতে তো তারও কোন দোষ নেই। নিজের ইচ্ছে না থাকা সত্বেও কারো সাথে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়াটা ঠিক না। এতে বিপরীতই হয় বেশিরভাগ।আর তখন আমার বয়সই বা কত ছিলো?তারও নিজের জীবন সঙ্গী কে নিয়ে কোন ইচ্ছে থাকতে পারে।তখন তো আর এত কিছু বুঝতাম না। যদি বুঝতাম তাহলে মেহের কে এতোটা কষ্ট পেতে হতোনা।আবার রিহানের মন খারাপ হলো এই ভেবে যে, মেহের শুধু নিজের দিকটাই ভেবে দেখলো একবারও তার দিকটা ভেবে দেখেনি বলে রিহানের মনে কালো মেঘের বসবাস হলো৷

কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ টিকলো না যখন বুঝতে পারলো মেহেরের শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছে তখন।সে তাড়াতাড়ি মেহেরের কপালে হাত দিয়ে জ্বর মেপে দেখলো,

কপালে হাত দেওয়ার পরই রিহানের মুখ থেকে এই কথা বেড়িয়ে আসলো আল্লাহ এর তো দেখছি জ্বরে শরীর পুরে যাচ্ছে। তাই এতক্ষন জ্বরের ঘুরে ঘুমের মধ্যে এসব বলে কান্নাকাটি করেছে। আগেরবার ও এরকম করেছিলো জ্বরের মধ্যে।

রিহান মেহেরের বেডের পাশের টেবিলেই দেখতে পেলো জ্বরের ঔষুধ রাখা আছে৷ আর প্রতিটা ঔষধের পাতা থেকে একটা করে নেই। রিহানের আর বুঝতে বাকি রইলো না মেহেরের আগে থেকেই জ্বর। আর এখান থেকে ঔষধ খেয়েছে। রিহানের এটা ভেবেই খারাপ লাগলো যে মেহের এত অসুস্থ হওয়া সত্বেও তার যত্ন নেওয়ার কেউ নেই।

এসব ভাবছিলো রিহান তখনই দেখলো মেহেরের ফোন বাজছে। রিহান ফোনটা নিয়ে দেখলো আকাশ নামে সেভ করা। রিহানের যতটুকু মনে আছে মেহেরের সাথে কাপল পিক তোলা ছেলেটার নামও আকাশ। আর এতো সকাল বেলায় কেনই বা ফোন দিচ্ছে?

কৌতুহল মেটাতে ফোন রিসিভ করলো রিহান।
রিহান ফোন রিসিভ করে কিছু বলবে তার আগেই শুনতে পেলো ও পাশ থেকে কেউ বলছে কিরে তোর জ্বর কমেছে। এখন ঠিক আছিসতো, নিহানকে জানিয়েছিস?
কালকে থেকে এতো জ্বর ছিলো তাও কাউকে বলিসনি। ভাগ্যিস আমি রাতে ফোন করেছিলাম তা নাহলে তো জানতেই পারতামনা। তুই এমন কেনো রে? অন্তত নিহানকে জানাতে পারতিস।আমি নাহয় তোর কেউ না কিন্তু নিহান তো তোর কাছের মানুষ। ভাই হিসেবে বলছি এবার অন্তত নিজের খেয়াল ঠিকমতো রাখতে শিখ।

রিহান আর কিছু না শুনেই ফোন কেটে দিলো। ওর যা বোঝার সে বুঝে ফেলেছে।

রিহান ভালো করেই বুঝতে পেরেছে আকাশ নামের ছেলেটার সাথে মেহেরের কোন সম্পর্ক নেই। মেহেরকে শুধু শুধুই সন্দেহ করেছে ভেবেই ওর অপরাধ বোধ হচ্ছে। রিহান মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো এখন থেকে সবসময় সে মেহেরের পাশে থাকবে।আর কখনো মেহেরকে ভুল বুঝবে না। এসব কিছু ভেবে মেহেরকে কিছুক্ষন জলপট্টি দিলো। মেহেরের জ্বর কিছুটা কমলে সে রান্নাঘরে গিয়ে মেহেরের জন্য সুপ বানালো৷ রিহান মোটামুটি অনেক খাবারই বানাতে জানে৷ দেশের বাহিরে থাকা কালিন বেশিরভাগ সময় নিজের খাবার নিজেকেই রান্না করে খেতে হয়েছে৷

মেহের ঘুম থেকে উঠেই দেখলো তার বেডের পাশেই এক কাপ কফি রাখা আর একটা চিরকুট৷ মেহের এসব দেখে চমকে গেলো তার কারণ এই বাড়িতে তো মেহের ছাড়া আর কেউ ছিলোনা।আর রিহান ও ঐ বাড়িতে আছে। তাহলে এগুলো করেছে কে? এসব ভেবে মেহের তাড়াতাড়ি চিরকুট টা খুলে দেখলো সেখানে লিখা ছিলো,

শুভ সকাল প্রিয়,
এখন থেকে তোমার প্রতিটা সকাল আমিময় শুভ হোক৷

মেহের চিরকুট টা পরে কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে ছিলো। তারপর কিছু একটা ভেবে চিরকুট রেখে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেড় হতেই দরজায় কিছু লেখা দেখতে পেলো, সেখানে লেখা ছিলো কফি শেষ করে ফ্রেস হয়ে বাহিরে এসো,তার আগে আসবে না। মেহের এসব কিছু দেখে আরো তাড়াহুড়ো করে বাহিরে আসলো, ড্রয়িং রুমে এসে সোফায় আরেকটা চিরকুট পেলো। মেহের সেটা খুলে পরতে শুরু করলো,

প্রিয় মহারানী
আমি জানতাম আপনি কারো কথা শুনেন না। কিন্তু বিশ্বাস করিনি৷ আজকে প্রমাণ পেলাম আপনি একজন অসম্ভব রকমের ত্যাড়া একজন মানুষ।

মেহের চিরকুট টা পরে রেগে বোম হয়ে ফুস ফুস করছে নাক ফুলিয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে৷ তখন ডাইনিং টেবিলে আরেকটা চিরকুট দেখতে পেলো। এটাতে লেখা ছিলো,

ইশশ, কি রাগ গো তোমার? আমি জানতাম তুমি রাগ করে নাক ফুলাবে। আর সেটা দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। তাই তোমাকে রাগানোর জন্যই এত কিছু করেছি। এখন তাড়াতাড়ি তোমার মহারাজের কাছে চলে আসো৷
ইতি
তোমার অপেক্ষায় অপেক্ষিত রান্নাঘরের মহারাজা।

মেহের তাড়াতাড়ি করে রান্নাঘরে ডুকতে কেউ তার সারামুখে ময়দা মাখিয়ে দিলো। মেহের নিজেকে সামলিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো,

#চলবে