তুমি শুধু আমার পর্ব-১৪

0
721

#তুমি শুধু আমার
#written by ayrin
#part14

রিহান যখন মেহের কে নিয়ে তার রুমে আসলো।তখন মেহের বললো, আপনি কেন আমার কারনে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন। আমাকে নিয়ে যখন প্রবলেম তখন আমি একাই যাবো৷ আর তাছাড়া আমি আপনার সাথে থাকতেও চাইনা। মেহের আরো কিছু বলবে তার আগেই রিহান মেহেরের মুখ বন্ধ করে দিলো।ইয়ে মানে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরেছে।

রিহান- আমি আগে ভাবতাম তুমি খুব কম কথা বলো। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে ততই দেখছি তোমার কথা বলা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। কথা যখন এতোই বলতে মন চায় তাহলে আমার সাথে বসে একটু রোমান্টিক কথাই বলতে পারো। (রিহান চোখ মেরে মেহেরকে বললো)

প্রথমত মেহেরের দম বন্ধ হয়ে আসছে,রিহান মুখে হাত চেপে ধরায়। তার মধ্যে এসমস্ত কথায় মেহেরের চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম।

মেহেরকে এতো কাছে দেখে রিহান একনজরে মেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহের রিহানকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ছুটোছুটি করছে। রিহান মেহেরকে নড়াচড়া করতে দেখে আরো শক্ত করে মেহেরকে জরিয়ে ধরলো। এতে মেহেরের নড়াচড়া করার আর কোন শক্তিই নেই। স্টেচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। রিহান মেহেরের কপালে একটা চুমু খেলো। তখনই নিহান ভেতরে এসে বললো আমি রেডি।

নিহানকে দেখে রিহানের চেহারায় বিরক্তির আভাস ফুটে উঠল।মেহের নিহানকে দেখে নিজেকে রিহানের থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

নিহান যখন বুঝতে পারলো রং টাইমে এন্ট্রি করেছে সে আমতা আমতা করে বললো, তুই না বাড়ি থেকে চলে যাবে বলে রুমে আসলি । এখন সবকিছু পেক না করে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

ওহ বুঝতে পেরেছি তোরা এখন রোমান্টিক মুডে ছিলিস। আমি এসে তোদের ডিস্টার্ব করেছি। সরি ভাইয়া সরি মেহের।

রিহান- বুঝতেই যখন পেরেছিস ডিস্টার্ব করেছিস তখন এখানে না দাড়িয়ে থেকে বাহিরে গেলি না কেনো?

নিহান ইয়ে মানে মানে করতে বললো আমি ভেবেছিলাম ডিস্টার্ব হওয়ায় তোদের আর মুড নেই তাই দাড়িয়ে আছি।

রিহান নিহানকে জিঙ্গেসা করলো তুই এই লাগেজ নিয়ে ঘুরছিস কেন? কোথায় যাবি নাকি?

নিহান- তোদেরতো এটাই বলতে এসেছিলাম তোরা যেখানে যাচ্ছিস আমিও সেখানেই যাবো।

রিহান নিহানের কথার প্রতুত্তরে বললো কেন যাবি? এখব আমাদের যেভাবে ডিস্টার্ব করেছিস সবসময় সেভাবে ডিস্টার্ব করতে?

মেহের আর নিহান দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে ভাবছে এই কার পাল্লায় পরলাম। এর কি একটুও লজ্জা সরম নেই? নির্লজ্জের মতো কিভাবে এসব কথা বলে যাচ্ছে তাও আবার নিজের ছোট ভাইকে।

মেহের নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে না পেরে রিহানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো আপনার মতো নির্লজ্জ আমি আর একটাও দেখেনি।

রিহান- নির্লজ্জ বলো আর যাই বলো আমি তোমাকেই জরিয়ে ধরেছি৷ নিজের বউকেই তো জরিয়ে ধরেছি। অন্যের বউকে তো আর না, যে সরম পাবো।
আর লজ্জা তো নিহানের পাওয়ার উচিত। একেতো নিজের ভাইয়ের রুমে পারমিশন ছাড়াই ডুকেছে তার মধ্যে আবার নিজের ভাইয়ার রোমান্সে ডির্স্টার্ব করেছে।

নিহান- সময় ছাড়া অসময়ে তোরা রোমান্স করবি কেনো? আর তোদের যখন এতই রোমান্স করতে ইচ্ছে হয় তাহলে দরজা বন্ধ করে নিতে পারতি?
মেহের এই দুই ভাইয়ের কথা শুনে ওর ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজেরই সব টেনে ছিড়ে ফেলতে। তারপর চিৎকার করে বললো স্টপ,, কি শুরু করেছিস তোরা।

নিহান রিহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাহিরে থেকে রিহানের বাবা বললো ভিতরে আসতে পারি?
রিহান আর নিহান তাদের বাবার কন্ঠ শুনে দু’জনেই শান্ত হয়ে গেলো। কারণ তাদের দুজনেরই এই মানুষটার জন্য অনেক সম্মান এবং ভালোবাসা রয়েছে।

মেহের বললো আঙ্কেল ভিতরে আসুন,মেহের এবাড়িতে আসার পর উনার সাথে মেহেরের কোন কথাই হয়নি। মেহেরকে দেখে উনি অতি স্নেহে বললো কেমন আছো মা?

মেহের যথেষ্ট সম্মানের সাথেই উত্তর দিলো আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আঙ্কেল। আপনি কেমন আছেন?

রিহানের বাবা বললো ভালো। তার মেহের রিহান নিহান তিন জনের উদ্দেশ্যেই বললো আমার তোমাদের তিনজনের সাথেই আমার কিছু কথা আছে। তোমরা যদি শুনতে চাও তাহলে আমি বলতে পারি।

নিহান বললো বলো বাবা।

নিহানের বাবাও বলতে শুরু করলো,
দেখো রিহান তুমি প্রথমত মেহেরকে বিয়ে করে এখান থেকে চলে গিয়ে তোমার মায়ের চোখে মেহেরকে খারাপ বানিয়েছো। তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছোনা, তুমি কিভাবে তোমার মায়ের চোখে মেহেরকে খারাপ বানিয়েছো। তাহলে শুনো,
তোমাকে তোমার মা একটু বেশিই ভালোবাসে। তুমি বিয়ের পর যখন বিদেশ চলে গেলে তখন তোমার মায়ের মনে হয়েছে মেহেরের কারনে তুমি বিডি ছেড়ে চলে গিয়েছো। তাই সব রাগ জিদ মেহেরের উপর অত্যাচার করে মিটিয়েছে।

আর দ্বিতীয়ত, তুমি এখন মেহেরকে মেনে নিয়েছো ভালো কথা। মেহেরকে সাপোর্টও করছো তাও আমার বেশ ভালো লেগেছে। কিন্তু তোমার বাড়ি ছাড়ার ডিসিশন টা আমি মেনে নিতে পারছি না।
আর তুমি দেশ ছেড়ে চলে গিয়ে একবার বোকামি করেছো৷ যার খেসারত মেহেরকে দিতে হয়েছে। আর এখন বাড়ি ছেড়ে গিয়ে মেহেরকে তোমার মায়ের চোখে আরো খারাপ বানিয়ে দিচ্ছো। কারণ তোমার মা ভাববে মেহেরের কারনে তুমি আবার এবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছো।
যাইহোক, আমি যেটা বলতে চাইছি তুমি যদি এবাড়িতে থেকেই মেহেরকে এখন যেভাবে সাপোর্ট করছো এভাবেই করো। তাহলে মেহেরকে নিয়ে তোমার মায়ের যত সমস্যা তা সমাধান হতে পারে।

আর মেহের মা তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। তুমি তোমার দিক থেকে ঠিকই করেছো। কিন্তু এভাবে আর কতদিন বলো? আমাদেরও তো কিছু ইচ্ছে আছে তোমাদেরকে নিয়ে। তুমি তোমার শাশুড়ী মাকে ঠিক ভুল বুঝতে শিখাও। সবাই যদি পালিয়ে বেড়ায় তাহলে কিভাবে হবে বলো। আমি আমার মতামত জানালাম বাকিটা তোমাদের ইচ্ছে। আর রিহানের মা’কেও আমি বুঝাবো।

আর নিহান তুই এখনো ছোট বাচ্চা নেই। নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে শিখ। তোর মা তোর সাথে কোন কিছুই করেনি। তাহলে তুই কেন বাড়ি ছেড়ে চলে যাবি,ওদের টা নাহয় মানা যায় কিন্তু তুই কেন যাবি। এতে তোর মা ভাববে মেহেরের কারনেই তোরা চলে যাচ্ছিস। কিন্তু তোদের কে বাড়ি ছেড়ে যেতে, কিন্তু মেহের একবারো বলেনি।
অনেক তো হলো এবার ব্যাবসা বানিজ্যের দায়িত্ব তোরা নিজেরা বুঝে নিয়ে, আমাকে এসব থেকে এবার মুক্তি দে।

রিহানের বাবার কথা শুনে তারা তিনজনই চুপ করে থাকলো। আর ভাবছে ঠিকই তো বলেছে।
মেহের মনে মনে ভাবছে সে তো রিহানকেই মন থেকে স্বামী হিসেবে মানে। তাহলে সে কেন তার সব অধিকার ছেড়ে যাবে। আর রিহান যেখানে তাকে মেনে নিয়েছে সেখানে সমস্যা হওয়ার কোন কথাই নেই। এসব ভেবে মেহের মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো এখন থেকে সে এবাড়িতেই থাকবে।

রিহান, মেহের এবং নিহান কেউই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যায়নি। ঐ ঘটনার পর আজ পাচদিন হতে চললো। রিহানের মা এর মধ্যে মেহেরের সাথে আর খারাপ ব্যবহার করেনি৷ সব কিছু ঠিকঠাকই চলছে কিন্তু সিমির মনে শান্তি নেই সে এসব কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা। মেহেরের প্রতি রিহানের কেয়ার দেখে তার বারবার মনে হচ্ছে, মেহেরের জায়গায় তার থাকার কথা।

তাই সে প্লেন করছে মেহেরকে কিভাবে এখান থেকে সরানো যায়।আর সে ভেবেও ফেলেছে কিভাবে কি করবে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
মেহের এই কয়েকদিন খেয়াল করেছে,রিহান তাকে যথেষ্ট কেয়ার করে। অনেক যত্ন নিয়ে মেহেরকে আগলে রেখেছে।

রিহান তার বাবার বিজনেসে জয়েন করেছে কিছুদিন হলো। অফিসরুমে বসে রিহান তখন মেহেরের কথা ভেবে মুচকি মুচকি হাসছিলো।সে মেহেরকে প্রপোজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখনই একজন স্টাফ এসে তাকে একটা পার্সেল দিয়ে গেলো। সেটা খুলতেই দেখতে পেলো মেহেরের সাথে একটা ছেলের কিছু বিশেষ মূহুর্ত।যে কেউ ছবিগুলো দেখে ভাববে তারা কোন সম্পর্কে আছে,

#চলবে