তুমি শুধু আমার পর্ব-১৫

0
716

#তুমি শুধু আমার
#written by ayrin
#part 15

রিহান ছবি গুলো একবার দেখেই বুঝতে পেরেছে এগুলো এডিটিং করা ছবি৷ তাছাড়া মেহের কখনো এরকম কাজ করবেনা। রিহান মেহেরকে এখন ভুল করেও অবিশ্বাস করবে না৷ সে ছবি গুলো সাইডে রেখে দিয়ে কাজের প্রতি ফোকাস করলো।অফিস শেষে বাড়ি যাওয়ার সময় টেবিল থেকে ছবি গুলোও নিয়ে নিলো৷ মেহেরকে দেখাবে বলে৷

রিহান বাড়িতে ফিরে তার মাকে দেখে বললো, মা আজকে আমার জন্য ডেসার্ট বানিয়ো তো৷ রিহানের মা রিহানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,কারণ আজ অনেক দিন পর রিহান তার মায়ের সাথে এভাবে নরমালি কথা বলেছে৷

রিহানের মা অনেক খুশি হয়ে বললো তুই রুমে গিয়ে রেস্ট কর,আমি বানিয়ে দিচ্ছি।রিহান তার মাকে জরিয়ে ধরে বললো ধন্যবাদ মা। রিহানকে খুশি দেখে রিহানের মায়ের মন থেকে মেহেরের প্রতি ক্ষোভ টা ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে।

রিহান রুমে গিয়ে দেখলো মেহের বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে৷ সে পিছন থেকে মেহেরকে জরিয়ে ধরলো। মেহের খানিকটা চমকে উঠলো। পিছন ফিরে রিহানকে দেখে বললো আপনি হুটহাট এভাবে জরিয়ে ধরেন কেনো?কবে জানি আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়।

রিহান বললো বউ আমার, যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে জরিয়ে ধরবো, তাতে তোমার কি?

রিহানের রুমের পাশেই নিহানের রুম। নিহান বারান্দায় এসে রিহান আর মেহেরকে এরকম জরিয়ে ধরা অবস্থায় দেখে বললো, তোদের পাশের রুমে যে এক সিঙ্গেল ছেলের বসবাস আছে সেটা কি তোরা ভুলে গিয়েছিস৷
তোদের ভালুপাশা দেখে আমার মনে যে আগুন জলে।সে আগুন নিভবে কিভাবে৷

মেহের রিহানকে ছাড়িয়ে খানিকটা হেসে বললো কে আবার, পিচ্চি মেয়েটার কথা মনে আছে তো? ঐ মেয়েই তোর মনের আগুন নিভাবে। কি যেন নাম লামিয়া মনে হয়।

নিহান- কি যে বলিস তুই, ঐ মেয়ে তো বাচ্চা ওরে পালতে পালতে আমি বুড়ো হয়ে যাবনা।
মেহের বললো ততোটাও কিন্তু বাচ্চা না। আর তাছাড়া তোদের মধ্যে বেশি হলে পাচ বছর ডিফারেন্স হবে৷ এটা তেমন বেশিও না।

এতক্ষণ রিহান নিরব দর্শক হয়ে ওদের দুজনের কথা শুনেছিলো। আর নিহানকে মনে মনে গালমন্দ করছিলো৷
ও যখনি একটু রোমান্টিক মুডে যাবে তখনই এই ছেলে উরে এসে জোরে বসবে ৷কিন্তু মেহেরের মুখে যখন পাচ বছর বয়সের ডিফারেন্স কম, তখন সে মেহেরকে খুশিতে বললো তুমি কি জানো আমাদের মধ্যেও এজ ডিফারেন্স পাচ বছর।
মেহের আর নিহান একসাথে বললো তো এতে এতো খুশি হওয়ার কি আছে। রিহান মুখ গুমরো করে বললো কিছু না, বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
রিহান চলে যেতেই নিহান আর মেহের উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করলো।

সিমি রিহান আর মেহেরকে এরকম খুশি দেখে সে ভাবলো রিহান কি ছবিগুলো পায়নি? ছবি গুলো যদি দেখে থাকে তাহলে রিহান এরকম শান্ত কিভাবে আছে।
সিমিই মেহেরের পিক এডিট করে রিহানকে পাঠিয়েছিলো৷ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তার প্লেন ফ্লপ করে গেছে।

সিমি মনে মনে কিছু ভেবে ওর কাছে যে মেহেরের কয়েকটা এডিট করা ছবি ছিলো সেগুলো নিয়ে রিহানের মা’কে গিয়ে দেখালো। রিহানের মা ছবি গুলো দেখে একমুহূর্ত দেরি না করে রিহানের রুমের দিকে গেলো,মেহেরের সাথে কথা বলতে৷ রাগে জিদে নক না করেই রিহানের রুমে ঢুকে গেলো৷ কিন্ত ঢুকার পর মনে হলো নক না করে এসে অনেক বড় বোকামি করেছে। কারণ রিহান মেহেরকে কোলে বসিয়ে জরিয়ে ধরে লেপটপে কাজ করছিলো।

রিহান তার মাকে দেখে মেহেরকে ছেড়ে দিলো। মেহেরও অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। রিহানের মা ও এরকম পরিস্থিতিতে পরে কিসের জন্য এখানে এসেছিলো সেটাই ভুলে গেছে৷ কোন কিছু না বলে তিনি নিঃশব্দে রিহানের রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।

রিহান মেহেরের দিকে তাকিয়ে বললো মা এভাবে চলে গেলো কেন?
মেহের রিহানকে চোখ রাঙ্গিয়ে বললো তাহলে কি বসে বসে ছেলে আর ছেলের বউয়ের নেকামি দেখবে।

রিহানের মা’কে যখন সিমি এভাবে যেতে দেখলো তখন ও মনে মনে ভেবে ফেলেছে এখন মেহেরের কি অবস্হা হবে। ওর এসব ভেবেই মনে মনে শয়তানি হাসি দিচ্ছিলো। কিন্তু যখন রিহানের মা’কেও চুপচাপ শান্ত ভাবে আসতে দেখলো। তখন মনে হলো ওর সমস্ত চিন্তা ভাবনা খুশি সব মনে হয় ড্রেনে তলিয়ে গেছে৷
সিমি এবার ভাবছে এতো ছোট ছোট চাল চেলে ও রিহানকে পাবেনা। তার জন্য বড় কোন কিছু করতে হবে।
______________________

নিহান নিচে এসে সিমিকে অন্যমনষ্ক দেখে বললো কি ব্যাপার আফা আপনার?

সিমি নিহানের কথা শুনে বিরক্ত ভঙ্গিতে বললো এসব কি ধরনের ভাষা নিহান?

নিহান-ওমা, আফাকে আফা বলবো না। আপনি জানেন না বড়দের সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয়। ওহহো আপনি কিভাবে জানবেন, আপনি তো আবার কাউকে সম্মান দিতে জানেন না৷

সিমি নিহানের দিকে তাকিয়ে বললো ডিজগাস্টিং। বলে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।

নিহান সিমির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো ইয়ে মানে আফা আপনি বিয়ে কবে করবেন? আপনার জন্য আমার সিরিয়ালটা আটকে আছে। তাই বললাম বয়স তো কম হলোনা। এখন একটু বিয়ে শাদি করে আপনার মায়ের নাতি পুতি দেখার ইচ্ছেটা পূরণ করুন। আর তাছাড়া আর কয়দিন পর আপনার মতো বুড়ো মেয়েকে আর কেউ বিয়েও করতে চাইবেনা।

সিমি এসব শুনে কিছু বললো না। কারণ এখন ওর মেইন টার্গেট হলো মেহেরকে রিহানের থেকে আলাদা করা। আর তার জন্য মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। তাই নিহানের এসব কথা গায়ে মাখালো না।

নিহান সিমির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে এই মেয়ে কিছু না বলেই এভাবেও চলে গেলো কেন? নিশ্চয়ই মনে মনে অন্য কিছু ভাবছে। তা-নাহলে এই মেয়েতো এত কথা শুনানোর পরও চুপ থাকার কথা না ৷ এসব ভাবতে ভাবতে সে বাইক নিয়ে বাহিরে বের হলো।

নিহান মনে মনে ভাবছে জীবন টা আমার সিঙ্গেলই কাটাতে হবে মনে হয়। আচ্ছা আমার ফিউচার বউ টা এখন কি করছে? সেও কি আমাকে মিস করছে,যেমন আমি তাকে করি? আহা বউয়ের কথা ভাবলেই কেমন লজ্জা লজ্জা লাগে।

নিহান এসব ভাবতে ভাবতেই বাইক চালাচ্ছে। তখনই সে একটা কিউট মেয়ে দেখতে পেলো। একটু ভাব নিয়ে মেয়েটার সামনে বাইক থামালো। মেয়েটাই এগিয়ে এসে বললো আমাকে একটু সামনের কলেজে পর্যন্ত লিফ্ট দিতে পারবেন। নিহানের মনে হলো এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।

কিন্তু বাস্তবে একটু গম্ভীর হয়ে বললো ইয়াহ,সিউর কেন নয়।আপনি উঠুন,,

মেয়েটা উঠে বাইকে বসলে নিহান মেয়েটাকে জিঙ্গেস করলো আপনার নাম কি? মেয়েটি উত্তরে বললো তানিয়া রহমান মেঘলা।
নিহান আবারো জিজ্ঞেস করলো আপনি কি ঐ কলেজেই পড়েন?

তানিয়া – নাহ আমি ওখানকার টিচার্স। নিহান কথাটা শুনা মাত্রই বাইক থামিয়ে দিয়ে বললো আপনার বয়স কত?
তানিয়া বললো আমার বয়স বেশি না। যদিও মেয়েদের বয়স বলতে নেই তবুও আপনাকে বলছি কারণ আপনাকে আমার ভালো লেগেছে। আমার বয়স সামনের মাসে তেরো তারিখে একত্রিশ হবে।

এবার নিহানের ফেস সত্যি সত্যিই কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো। কোনমতে তানিয়াকে কলেজের সামনে নামিয়ে দিলো। মেয়েটা যাওয়ার সময় ওর নাম্বার ও চেয়েছে। সে না দিয়েই চলে এসেছে। বাড়িতে এসে মেহেরকে বলার পর থেকেই মেহের হাসতে হাসতে ফ্লোরে লুটোপুটি খাচ্ছে। আর সে থেকেই নিহান গাল ফুলিয়ে বসে আছে।

রিহান রুমে এসে নিহান আর মেহেরকে এই অবস্থায় দেখে বললো কি ব্যাপার বলোতো,এভাবে হাসছো কেন তুমি?
মেহের কি বলবে তার তো হাসিই থামছেনা। আর রিহান সে তো মেহেরের হাসির দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ হয়ে।

নিহানের সেটা দেখে মনে হলো কেউ ওর কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিয়েছে। নিহান জোরে বললো স্টপ,,,

#চলবে