তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব-২+৩

0
442

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ২_৩
#Jhorna_Islam

চারিদিকে শুনশান নীরবতা। কেমন কোলাহলহীন। মজার বিষয় হলো কারো কাছে এই নিরবতাটা উপভোগ্য বিষয়।আর কারো কাছে গা কা’টা দেওয়ার মতো।

দায়ান তার অফিস রুমে বসে গভীর চি’ন্তায় ব্যস্ত।বুঝতে পারে সোহার সাথে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে।তারই বা
কি করার আছে।সে চায়নি তার এই অভি’শপ্ত জীবনে কাউকে জড়াতে। এই তী’ক্ত জীবন থেকে নিজেই তো মু’ক্তি চায়। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল।আসলে মানুষ যেইটা না চায় প্রকৃতি মনে হয় উঠেপরে লাগে ঐটাই ঘটানোর জন্য।

তার উপর গত কয়েকদিন ধরে মেজাজ চড়াও হয়ে আছে।বিজননেসে একশ পারসেন্ট নিশ্চিত হয়ে যাওয়া ডিল গুলো হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এতো নিরাপত্তার পরও অফিসের ইনফরমেশন বাইরে লি’ক হচ্ছে। কেউ যে পিঠ-পিছে চা’ল চালতেছে বুঝতে পারতেছে। জাস্ট আর কয়েকটা দিনের অপেক্ষা বিশ্বাস ঘা/তকতার শাস্তি কি করে দিতে হয় দায়ান ভালো করেই জানে।এসব ভাবনার মধ্যেই দায়ানের ফোনটা বেজে ওঠে _____

– হ্যা রুশ বল।(দায়ানের খুবই কাছের বন্ধু+ পি.এ)

– স্যার এইদিকের কাজ সব শেষ। মিটিং টা সাকসেস হয়েছে।
– তোকে কতো বার বলেছি আমাকে স্যার বলবিনা।
– অভ্যাস হয়ে গেছে দোস্ত।

– তুই কোনোদিন ও শুধরাবিনা।আর শুনে খুশি হলাম ডিলটা আমরা পেয়েছি।আমি সঠিক মানুষকেই দায়িত্বটা দিয়েছি।

কথা বলার মাঝখানেই দরজায় কেউ নক করে।

কামিং বলেই আবার কথায় মনোযোগ দেয় দায়ান।সামনে তার অফিসের ম্যানেজার লিমন সাহেব এসে দাড়ায়।রুশের সাথে কথা শেষ করে। ম্যানেজার থেকে জানতে চায়,,,, যা যা ইনফরমেশন কালেক্ট করতে বলেছিলাম করেছেন?

স্যার আরেকটু টাইম লাগবে।”

ওকে।নেন তবে সঠিক ইনফরমেশন যেনো পাই।

জী স্যার,,, বলেই ম্যানেজার সাহেব বের হয়ে যান।
দায়ান আবার কাজে মনোযোগ দেয়।

———————-
পা টিপে টিপে বাসায় প্রবেশ করে সোহা।সবগুলো আলো জালিয়ে স্ব’স্তির নি’শ্বাস নেয়। হাত পা ধুয়ে নামাজ পড়ে নেয়।এখন রাতের খাবার রান্না করা দরকার। ভাবতেই রান্না ঘরের দিকে আগায়।
দায়ানের জন্য কি রান্না করবে ভাবতে লাগলো।সকালে যা ট্রেইলর দেখাইলো।রাতের খাবার মন মতো না হলে পুরা মুভি দেখাবে বুঝতে আর বাকি নেই।

রাতের জন্য ভাতটাই উপযুক্ত বলে মনে হলো।আগে চাল ধুয়ে ভাত বসায় দিল।ফ্রিজ থেকে ইলিশ মাছ নিয়ে শর্ষে ইলিশ রান্না করলো।সাথে ডাল,, রান্না করা খাসির মাংস ছিল ঐটা গরম করলো। সবই দায়ানের জন্য সোহা এসব খাবার তেমন একটা খায় না।নিজের জন্য সীমের ভর্তা করলো ঝাল ঝাল।

সব রান্না শেষ করে খাবার ডাইনিং এ সাজিয়ে রাখলো।কিছুক্ষন ভেবে খেতে বসে পরলো।দায়ান জীবনেও সোহার সাথে খাবে না।তাই অপেক্ষা করে লাভ নেই।খেয়ে ঘুমিয়ে পরাই ভালো।খাওয়া শেষে সব কিছু গুছিয়ে ঢাকনা দিয়ে রেখে দিল। খাওয়ার পর শরীর টা যেনো ক্লান্ত হয়ে গেছে আরো।চোখ আপনা আপনি বুঁজে আসছে।তাই আর দেরি না করে শুয়ে পরলো।শুয়ার সাথে সাথেই চোখে ঘুম পরিরা এসে ভর করলো।
_____________________
দায়ান রাত দশটার দিকে অফিস থেকে বের হয়েছে। পথে জ্যাম থাকায় আসতে বারোটার কাছাকাছি বেজে গেছে।দরজার সামনে এসে ভাবলো কলিং বেল বাজাবে।আবার কি মনে করে নিজের পকেট থেকে একস্ট্রা চাবি দিয়ে লক খুলে ভিতরে ঢুকে।পুরো বাড়ি শুনশান নীরবতা। দায়ান চারদিকে চোখ বুলালো হয়তো সোহাকে দেখার আশায়।কিন্তু কারো কোনো চি’হ্ন ও দেখা গেলোনা। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে।

নিজের রুমে ঢুকে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে।প্রচুর খিদে পেয়েছে।সকালে ঐ কান্ডের পর আর খাওয়া হয়নি।নানান ঝামেলায় খাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গেছে।

ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরের দিকে হাটা দিল। সকালে খাবার নিয়ে এমন করা উচিত হয়নি।এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। কে জানে মেয়েটা রান্না করেছে কিনা।জমিলা খালাটা ও বাড়িতে নেই।রান্না করে খাওয়ার মতো এনার্জি পাচ্ছে না।

রান্না ঘরে যাওয়ার টাইমে ডাইনিং এর দিকে চোখ যায় দায়ানের।অনেকগুলো প্লেট ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা।কৌতুহল হয়ে ডাইনিং এ এগিয়ে যায়।ঢাকনা খুলে খাবার দেখে স্বস্থির নিস্বাস ফেলে।প্লেট নিয়ে দ্রুত খেতে বসে পরে।
একটা প্লেটে ভর্তা দেখে আর লোভ সামলাতে পারল না দায়ান। অনেকদিন এসব খাবার খাওয়া হয় না। লোভে পরে খেতে গিয়ে বুঝতে পারলো কি ভুল করেছে।নাক,মুখ লাল হয়ে গেছে।কান দিয়ে যেমন ধো’য়া বের হচ্ছে।

“এই মেয়ে মানুষ নাকি ডাকাত।বিরবির করে বলতে লাগে দায়ান।এমন ঝাল কি ভাবে খায়?”ভেতর দিয়ে সব জ্ব’লে গেলো।কান দিয়ে ধোঁ’য়া বের হওয়ার উপ’ক্রম। পানি খেতে খেতে জান শেষ।
আর সাহসে কুলোয় নি ভর্তা দিয়ে খাওয়ার।বাকি আইটেম দিয়েই খাওয়া শেষ করে।খাওয়া শেষে তৃপ্তির ঢেঁ’কুর তুলে। অনেকদিন পর এধরণের খাবার খেলো দায়ান।মেয়েটার রান্নার হাত ভালোই।খাওয়া শেষে রান্নাঘরে প্লেট গুলো নিজ দায়িত্বে ধুয়ে রেখে আসে।

নিজের রুমের দিকে দায়ান যাওয়ার টাইমে সোহার রুমের দিকে একবার তাকায়। মেয়েটা মনে হয় লাইট জালিয়েই ঘুমিয়ে গেছে।আশচর্য এতো আলোর মধ্যে ঘুমোয় কিভাবে? মনে মনে একবার ভেবেছিল মেয়েটাকে সরি বলবে পরে আবার মত বদলে ফেলে। ইগো এসে হানা দেয়। দায়ান ও আর কিছু না ভেবে রুমে এসে লাইট অফ করে শুয়ে পরে।

মাঝরাতে হঠাৎ করেই সোহা ধর’ফর করে ওঠে বসে।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।টেবিল থেকে পানির বোতল নিতে গিয়ে দেখে খালি।পানি আনতে মনে ছিলোনা।তাই বোতল নিয়ে রুম থেকে বের হয় পানি আনার জন্য।

হঠাৎ করে সামনে কিছু একটা দেখে সোহার আ’ত্না কেঁ’পে ওঠে।
আল্লাহ গোওও,,,,,,,,,,,, বলেই এক চিৎকার মারে।

দায়ান দৌড়ে গিয়ে সোহার মুখ চে’পে ধরে। এই মেয়ে আস্তে। এতো জোড়ে কেউ চেঁ’চায়? তোমার জন্যতো মাঝ রাতে নিজের বাসায় ই গণ ধোলাই খেতে হবে।এমনভাবে চেঁচাচ্ছো যেমন ডাকাত পরেছে।বলেই সোহার মুখ থেকে হাত সড়িয়ে একটু পিছিয়ে আসে দায়ান।

দায়ানের কল আসায় কথা বলতে বলতে সেও পানি নিতে এসেছিল। আর সোহা তাকে ভালো করে না দেখেই চিৎকার করে ওঠে।

সোহা মিনমিনিয়ে বলে আমিতো ডাকাত ই ভেবেছিলাম।

হোয়াট! বলেই এইবার দায়ান চেঁ’চিয়ে ওঠে।

এবার আপনি চেঁ’চাচ্ছেন কেন? এইবারতো আপনিই মানুষ জড়ো করে ফেলবেন।আর তাছাড়া মাঝরাতে তো চোর-ডাকাত আর তেনারাই ঘুড়ে বেড়ায়।

আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে? আর হোয়াট ডু ইউ মিন বায় তেনারা? এরা আবার কারা?

সোহা দায়ানের কাছে এগিয়ে যায়।হুসসস আস্তে বলেন।এতো রাতে জোরে তেনাদের নাম নিতে নেই।তারা কিন্তু আমাদের চারপাশেই আছে।বলেই সোহা এদিক ওদিক তাকাতে লাগে।

দায়ান তো পুরাই অবাক।এই মেয়ে বলে কি? এই তেনারাই বা আবার কারা?

-তেনাদের আপনি চিনেন না?

– নাহ। দায়ানের সোজা উত্তর।

– আসলেই চিনেন না?

– আরে নারে বাবা।কতোবার বলবো?

– কিন্তু আপনার তো চিনার কথা।

– মানে?

– মানে হলো আমিতো ভেবেছিলাম আপনি তাদের দলেরই লিডার।বলেই সোহা রুমের দিকে ভো- দৌড়।

– দায়ান অবাক হয়ে সোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
কি বলে গেলো এই মেয়ে?

রুমে দৌড়ে এসে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয় সোহা।বাপরে! তোর সাহস আছে বলতে হবে সোহা।তুই কাকে কি বলে এসেছিস? নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করে।
পরোক্ষনেই নিজের হাত আপনা আপনি ঠোঁটে চলে যায়।ভাবতেই শরীর মন অজানা অনুভূতিতে শিহরিত হয়।দায়ান এতোক্ষন আমার এতো কাছে ছিল। ঠোঁটের উপর হাত রেখে ছিল।ভাবতেই ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি খেলা করে।

অন্যদিকে দায়ান সোহার যাওয়ার পানে আহাম্মকের মতো তাকিয়ে ছিল।এই মেয়ে কি পা’গল নাকি? কি আজে বা’জে বকে গেল? সব মাথার উপর দিয়ে গেল।এই মেয়ে দেখি কথার গোডাউন।আপন মনে ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে চলে যায়।এখন একটা আরামের লম্বা ঘুম দরকার।

——————————-

ভোরের স্নিগ্ধ রোদ চোখে পরতেই ঘুম ভেঙে যায় দায়ানের ।চারিদিকে পাখির কিচিরমিচির। আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ায়।ফ্রেশ হয়ে জগিং সুট পরে বেরিয়ে পরে জগিং এর জন্য। বাড়ির সামনে আসতেই বাগানের দিকে তাকিয়ে থমকে দাঁড়ালো দায়ান।বাগান টা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
চাচা,,,,,চাচা,,,,,বলেই জোড়ে দাড়োয়ান চাচা কে ডাকতে লাগে।

রহিম চাচা দায়ানের ডাক শুনে দৌড়ে আসে।
হাঁপাতে হাঁপাতে জানতে চায়,,,,, কি হয়েছে দায়ান বাবা? তোমার কিছু লাগবে?

না চাচা কিছু লাগবেনা।তুমি কি কারো হাতে এই বাগান পরিষ্কার করিয়েছো? ধরা গলায় জানতে চায় দায়ান।দৃষ্টি এখনো বাগানের দিকেই।কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে দায়ানের। কিছু মধুর স্মৃতি, আর কিছু বিষাক্ত স্মৃতি বুকে এসে হানা দেয়।ভিতরটা অস্থির হয়ে ওঠে।চোখের কোণে জলে টইটুম্বুর হয়ে ওঠে। একটু ছোয়া লাগার অপেক্ষায় যেনো আছে।ছোঁয়া লাগলেই টুপ করে পরে যাবে। চোখ পিট পিট করে পানি আটকানোর চেষ্টা করে দায়ান। কতোই না ভালো ছিল সেই মধুর দিনগুলো। তখন দায়ান ভাবতো সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষদের মধ্যে একজন। আর এখন সবই কল্পনা। একটা ঝড় সব ল’ন্ড ভ’ন্ড করে দিল।একটা সুখী ফেমেলি শেষ হয়ে গেল।ভালোবাসা উ’বে গেলো। এখন দায়ানের কাছে নিজেরে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দুঃখী মানুষের একজন মনে হয়। যার আশেপাশে ভালোমানুষির মুখোশ পরে থাকা লোক।নিজের বলতে কেউ নেই। সবাই নিজেদের স্বার্থের জন্য খোঁ’জ নেয়।

হঠাৎ করে ভাবনার ছেদ ঘটে রহিম চাচার কথায়।

বাবা এগুলাতো মা জননী করেছে।কাল সারাদিন এসব নিয়েই ছিল।সবকিছু নিজ হাতে করেছে।

মা জননী কে চাচা?

“তোমার বউ” আমাদের বউমাই করেছে বাবা।ভারী মিষ্টি একটা মেয়ে।যেমন ব্যবহার তেমন হাতের কাজ সবদিক দিয়েই প’টু।দায়ান বাবা এইবার তুমি একজন সঠিক মানুষ বেছে নিয়েছো।দেখো বউমা তোমার রঙহীন জীবনে রঙ নিয়ে আসবে।

“তোমার বউ” কথাটা শুনেই দায়ানের বুকটা ধক করে উঠলো।পরের কথাগুলো গুরুত্ব দিলোনা।এজীবনে কাউকে আর জড়াতে ইচ্ছে করে না।

দায়ান আর কথা না বাড়িয়ে বাগানের দিকে তাকাতে তাকাতে বেড়িয়ে গেলো।

আমি জানি দায়ান বাবা এই মেয়েই তোমার জীবন টা বদলে দিবে।
রহিম চাচা ও নিজের কাজে চলে যায়।

——–
রোদের কড়া তাপে যেনো শরীর ঝ’লসে যাওয়ার উপক্রম। সাথে প্রচন্ড চি’ৎকার চেচামেচির আওয়াজে ধরফর করে উঠে বসে সোহা।চারিদিকে চোখ বোলিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে পুরাই টা’সকি।হায় আল্লাহ! এগারোটা বা’জে।
গেলোরে গেলো সব গেলো।আজ আমার ক’পালে শনি-রবি সব ওঠে নৃত্য করবে।বলেই ওয়াশরুমের দিকে দৌড়। দশ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে পরলো।

মাথার ওড়না টা’নতে টা’নতে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।রান্নাঘর থেকে টুংটাং আওয়াজ আসছে।এই সময় রান্না ঘরে কে? জমিলা খালা তো বাড়িতে না।মাথায় আসতেই রান্না ঘরের দিকে উঁ’কি দেয়।ওমা উনি রান্না ঘরে? তাও রান্না করছে? এ আমি কি দেখছি?

দায়ান পিছনে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে পিছনে তাকায়।তাকিয়ে দেখে সোহা তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

ঘুম ভাঙলো মেডামের? আমিতো ভাবলাম আজ আর ভাঙবেই না। কিছুটা ঠা’ট্টার সঙ্গে’ই বলে দায়ান।

সোহার মুখটা চু’পসে যায়।মিনমিনিয়ে বলে “সরি”। ঘুম ভা’ঙতে দেরি হয়ে গেলো একটু।আপনি এবার গিয়ে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নিন।বাকিটা আমি করে দিচ্ছি।

প্রথমত একটু না অনেকখানি ই লেট করেছেন।দ্বিতীয়ত আজ শু’ক্রবার আমার অফ ডে।আর আপনার আর কিছু করতে হবে না।সবকিছু ডান।ডাইনিং এ গিয়ে বসো। আমি খাবার দিচ্ছি। তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

আমার সাথে এই রা*ক্ষসের আবার কি কথা? না জানি কি বলে।আমাকে আবার বাড়ি থেকে ভের করে দিবে নাতো? সোহার ভাবনার মাঝেই দায়ান আবার বলে উঠে,,,,,

কি হলো যাও গিয়ে বসো।নিজে চেয়ার টেনে বসে পরে। সোহাকে চোখের ইশারায় চেয়ারে বসতে বলে।সোহা আস্তে আস্তে গিয়ে বসে।নানান চিন্তা ভাবনায় মুখটা শুকিয়ে একটুখানি হয়ে গেছে।

দায়ান ইতিমধ্যে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।
সোহা পরেছে অস্ব’স্থিতে । একেই কিনা কি বলে দায়ান তার টেনশন। আবার প্রথম বার দায়ানের সাথে বসে একি টেবিলে খাওয়া।তাও জড়তা নিয়েই আস্তে আস্তে নিজের প্লেট নিয়ে খেতে শুরু করে।

বাড়িতে কে কে আছে? খেতে খেতেই জানতে চায় দায়ান।
জ্বি,,,,, বাবা-মা, বড় বোন আছে।( কি লোকরে বাবা নিজের বউ সম্পর্কে কিছুই জানেনা এই লোক? না জেনেই বিয়ে করে নিলো আজব।মনেমনে কথা গুলা আওড়ায় সোহা।)

স্টাডির কি খবর?

স্টাডি মানে?

কেন স্টাডি মানে জানোনা? পড়াশোনা! কতোদূর করেছো?

পড়াশোনা যেখানে আছে ভালো আছে।থাকুক না।

আবোলতাবোল ব’কতেছো কেনো? লিসেন,,,এসব ঘুড়িয়ে পেচিয়ে কথা বলার একদম চেষ্টা করবে না আমার সাথে।কিছুটা জোড় গলায়ই বলে দায়ান।

শ*য়তান নিজের ফ’র্মে বেক করে গেছে সোহা সাব’ধান।আস্তে আস্তে আওড়ায় সোহা।
মা,,মানে অনার্স ২য় বর্ষতে পড়তাম।

হুম গুড! বাট পড়তাম মানে কি? এখন আর পড়বানা? পড়ার ইচ্ছে নেই?

না- মানে বিয়ে হয়ে গেছেতো তাই।

তাই? ব্রু নাচিয়ে জানতে চায় দায়ান।

ভেবেছিলাম আর পড়াশোনা করে কি লাভ? এতো পড়ে আমি কি দেশ উ’দ্ধার করবো?বা’চ্চা কা’চ্চা মানুষ করার জন্য,,,,, অ-আ,,,,,ক-খ,,, জানলেই হয়।বলেই দাঁত দিয়ে জি’ভে কা*মড় মারে সোহা।হাত দিয়ে নিজের মুখ চে’পে ধরে।সোহারে তর কথার ট্রেন কই নিয়ে ব্রে’ক করছস।লে এবার সামলা ঠে’লা।

সোহার কথা শুনে দায়ান বি’ষম খায়। বড় বড় চোখ করে তাকায়।

না,,,, ইয়ে,,, মানে,,, সোহা কিছু বলতে যাওয়ার আগেই দায়ান থামিয়ে দেয়।

থামো মেয়ে।পড়াশোনার প্রতি তোমার যে কতো ভালোবাসা আমার বোঝা হয়ে গেছে। তাও কিছুই করার নেই। এখানে থাকতে গেলে পড়াশোনা তোমাকে করতেই হবে।নো অপশন! নিজের পায়ে দাঁ’ড়াতে হবে। এতোখানি পড়াশোনা করে মাঝ রাস্তায় ব’ন্ধ করে দিতে চাও? তোমার কাগজ পত্র গুলো আমাকে দিও।এখানকার একটা ভালো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রা’ন্সফার করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।

লে হালুয়া,,,, যেখানে বা’ঘের ভ’য় সেখানেই সন্ধে হয়।যেইটার থেকে বাঁ’চার জন্য লাফিয়ে লাফিয়ে বিয়ে করলো সেইটাই আবার ঘা’ড়ে এসে চাপতেছে। ভাবা যায় এগুলা?

কেনরে তর কি মনে হয় আমি তর পায়ে দাড়িয়ে আছি? পড়াশোনা ছাড়াই যদি নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায় তাহলে পড়াশোনা করার কি দরকার খা’মোখা? বর বরের মতো থাকনা। তুই কেন পড়াশোনা নিয়ে পড়বি? বড় পড়াশোনার কথা বললে সে কি আর বর থাকে? নাহ একদমই নাহ।ব*র্বর হয়ে যায়। খাবারে আঁকি’বুঁকি করে মনে মনে ভাবে সোহা।

দায়ান স’রু চোখে তাকিয়ে থাকে সোহার দিকে।

বিনিময়ে সোহা মেকি একটা হাসি ঠোঁটে ফুটিয়ে মাথা নাড়ে।

দায়ান খাবার শেষ করে নিজের মতো উঠে চলে যায়।

সোহা এবার গুন গুন করে,,,,,,,

দেখতে বর বর কিন্তু আস্তো ব*র্বর,,,
এসে জুটে গেছে কপালে।

#চলবে