তৃ-তনয়া পর্ব-১০৮+১০৯+১১০

0
566

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ১০৮
(নূর নাফিসা)
.
.
ডাক্তার রক্তের ব্যবস্থা করতে বলেছিলো বিধায় ব্লাড গ্রুপ মেচিং এ আসিফ এক ব্যাগ দিয়েছে, আর তার পরিচিত একজনকে ডেকেছিলো সে এক ব্যাগ দিয়েছে। মেহেদী জানতো, নাজিয়া নাফিসা ও নিয়াজ উদ্দিনের রক্তের গ্রুপও তার সাথে ম্যাচিং। যদিও তাদের মধ্য থেকে শুধুমাত্র নাফিসা দিতে পারতো কিন্তু পরিচিত লোক থাকায় আসিফ নিষেধ করলো। কেননা মেয়েরা এমনিতেই দুর্বল প্রকৃতির! তাই রক্ত দিলে নাফিসা খুব সহজেই উল্টো শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে! এদিক বিবেচনায় ছেলেদের কাছ থেকে নেওয়াটাই ভালো। রক্ত দিয়ে লোকটি মাত্রই চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পরেই মেহেদীর বাবা-মা হাজির। তারা এখানে আসার সময় আবার নিয়াজ উদ্দিনকে কল করে জানিয়েছে নাহিদাকে হসপিটালে নেওয়া হয়েছে। মেহেদীকে দুইহাত একত্রিত করে থুতনি ধরে রাখতে দেখে মেহেরুনের ভেতরটা চেপে গেলো! এতোটা টেনশনে ছেলেকে বোধহয় আর কখনোই দেখেননি তিনি! মেহেরুন মেহতাজকে মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
– নাহিদার অবস্থা কি বেশি খারাপ?
– জানি না মা। ডাক্তার বললো সিজার করানো বেটার!
– হঠাৎ করে কি হলো আল্লাহই জানে! খেয়েছিলো কিছু?
– হ্যাঁ, ভাত খেয়েছি সবাই একসাথে।
মেহেরুন মেহেদীর কাছে এসে বসলো। পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,
– এতো চিন্তা করছো কেন বাবা! আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। আল্লাহ সব ভালো করবেন।
কথা কানে পৌছেছে ঠিকই কিন্তু মস্তিষ্কে পৌছাতে পারেনি। তার চোখ লাল এবং হালকা ভেজা হয়ে আছে! মায়ের এই সান্ত্বনা যেন আজ গায়ের চামড়াও স্পর্শ করতে পারছে না! কি করে করবে! মনের ভেতর যে হাজারো অশান্তি আর হাজারো অপরাধে সৃষ্ট পাহাড় গড়ে উঠেছে!
সবাই চিন্তিত। আরিশা তার বাবার কোলে ঘুমাচ্ছে আর আয়াশের চোখ যেন নিভু নিভু! যদি পারতো তো দাদুর কাছে রেখে আসতো আয়াশকে। কিন্তু এমন একটা পরিস্থিতিতে এখান থেকে যেন নড়তেও পারছে না আসিফ! টেনশন সবার মাঝেই উপস্থিত! মেহেরুন আয়াশকে বেঞ্চিতে শুয়িয়ে দিলেন। আয়াশ নানুর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যাচ্ছে।
ঘন্টাখানেকের মধ্যে রুমানা বেগম ও নিয়াজ উদ্দিনও এসে গেছেন। সারাটা রাস্তা মায়ের মন কাঁদছে ভীষণ। এখন এসেও গম্ভীরমুখে বসে আছে। কারো সাথেই কারো কোনো কথা হচ্ছে না। শুধু নিয়াজ উদ্দিন, জহিরুল ইসলাম ও আসিফের মাঝে টুকটাক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর তারা দূরে থেকেই দেখতে পেল থিয়েটারের লাল বাতিটা নিভে গেছে। একটা নার্স দুইবার তাদের সামনে দিয়ে আসা-যাওয়া করলো। কিন্তু কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করার সুযোগ পেল না! পরিশেষে ডাক্তারের দেখা পেলে তারা সকলেই তার কাছ থেকে কিছু শোনার জন্য মনযোগ দৃষ্টি নিক্ষেপ ও কান পেতে আছে। মেহেদী বসা থেকে উঠে দাড়িয়েছে। ডাক্তারের চেহারাটাও গম্ভীর। ডাক্তার জানালো মেয়ে বাবু হয়েছে। বাবু সুস্থ আছে কিন্তু পেটে চাপ পড়ায় মায়ের একটু সমস্যা হয়েছে। কথাটা শোনার পরই রুমানা বেগমের চাপা কান্নার নিচু শব্দ শোনা গেলো! মেয়ের অবস্থার কথা শুনে যেন তার ভেতরের কান্নাটা বাইরেও এসে দেখা দিয়েছে!এখানে আসার পর তার নিকাব খোলা ছিলো। এখন ওড়না দিয়ে মুখ চেপে তিনি কান্না করছেন! ডাক্তার ফারহানা মুহুর্তেই বুঝে গেছেন তিনিই পেশেন্টের জননী। সন্তানের কোনো বিপদ-আপদে সবার আগে সাধারণত মায়ের আর্তনাদই ভেসে আসে! মেহেরুন মেহতাজকে ইশারা করলো আয়াশের কাছে এসে বসতে। মেহতাজ এসে বসলো এখানে। তার চোখেও পানি৷ মেহেরুন রুমানা বেগমের কাছে এগিয়ে গেলেন। মেহেরুনের চোখেও পানি। ডাক্তার ফারহানা রুমানার উদ্দেশ্যে বললেন,
– কাঁদছেন কেন! আপনার মেয়ের তেমন কিছু হয়নি আশা করছি। আল্লাহকে ডাকুন। ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে।
অত:পর মেহতাজকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– বাচ্চাকে এভাবে রেখেছো কেন? এভাবে অসমতল জায়গায় শুয়ে থাকলে হাড়ে আঘাত পাবে। ওই কেবিনে ফাঁকা বেড আছে। সেখানে রাখতে পারো। আর বাচ্চাদের হসপিটালে না নিয়ে আসাই ভালো। সবদিক থেকেই কষ্টকর।
ডাক্তার চলে গেলেন। মেহেদী দাঁড়ানো থেকে আবার বসে পড়লো! এমন হাল ছেড়ে বসায় পাশে থাকা মেহতাজ তার দিকে তাকালো। এক হাতে কাধ আঁকড়ে ধরে তাকে শক্ত হওয়ার সংকেত দিলো। মেহেদী দুই আঙুলে চোখ কচলে নিয়েছে। এবার দুহাতেই মুখ চেপে বসে আছে। মেহতাজের ধারণা, যদি মেহেদীটা সেই ছোট্ট মেহেদী থাকতো তাহলে বোধহয় আজ গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতো! মেয়েরা তো অল্পতেই কেদে ফেলে, আর ছেলেদেরকে আল্লাহ তায়ালা পাথর ন্যায় তৈরি করেছে! যার ফলে কাঁদতেও তাদের কষ্ট হয়!
ডাক্তার যাওয়ার পরপরই বাচ্চাকে তোয়ালে দিয়ে পেচিয়ে কোলে নিয়ে নার্স বেরিয়ে এসেছে। প্রায় সকলেই এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াচ্ছিলো। তা দেখে নার্স বললো,
– এই দাড়ান দাড়ান। ভীড় করবেন না, একজন দুজন করে একটু দূর থেকেই দেখুন। এখন কোলে নেওয়া যাবে না।
বলতে বলতে নার্সই তাদের কাছে এগিয়ে এসেছে। দাড়িয়ে থাকা একে একে সবাই দেখছে। আর মেহেদী যেমন ছিলো তেমনই আছে। জহিরুল ইসলাম ডাকলো, “মেহেদী…? ”
কিন্তু মেহেদী মুখ থেকে হাত সরায়নি! মেহতাজ তার কাধে হাত রেখে ঝাকিয়ে বললো,
“মেহেদী, তোর মেয়ে নিয়ে এসেছে…”
মেহেদী আর কারো দিকে না তাকিয়ে ঝটপট বসা থেকে উঠে অন্যদিকে হনহন করে হাটা শুরু করলো। এমনভাবে এখান থেকে উঠে গেছে যে কেউ তার চেহারাটা দেখারও সুযোগ পায়নি! তার এমন আচরণে অনেকেই বিস্মিত! কিন্তু তার কারণ শুধু মেহতাজেরই জানা! মেহেদীর বাবা-মা ভাবছে যেই ছেলে বাচ্চার জন্য এতো উত্তেজিত, সে এভাবে চলে গেলো কেন! আর তার শ্বশুর শ্বাশুড়ি এক মুহুর্তের জন্য ভেবে ফেলেছে জামাই বুঝি সন্তানের প্রতি অনিহা বোধ করলো! নতুবা দেখতে এলো না কেন? মন খারাপ?
আসিফ গেলো মেহেদীর পিছু পিছু। মেহেদী ওয়াশরুমে চলে গেছে। চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে রুমালে মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসে আসিফকে দেখতে পেল। আসিফ আরিশাকে মেহেদীর কাছে দিয়ে ওয়াশরুমে গেলো। অত:পর দুজন একসাথে আবার এদিকে এলো। এতোক্ষণে নার্স চলে গেছে অন্য কেবিনে। আর মেহেদী তাদের কাছে আসতেও পারেনি, থিয়েটার থেকে বেডে করে নাহিদাকে বের করে আনা হচ্ছে। সে সেখানেই দাড়িয়ে রইলো। তার খুব নিকট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চেহারা দেখেই ভেতরটায় মোচড় দিয়ে উঠলো! ইচ্ছে করছিলো তাকে একবার জড়িয়ে ধরতে। তাকে একেবারে ছোট্ট বানিয়ে সবার আড়ালে হৃদপিণ্ডে বসিয়ে রাখতে! ভেতরটা এমন খাঁ খাঁ করছে কেন! মেহেদী এক পা ও নড়লো না কোনদিকে! যতক্ষণ পর্যন্ত না চোখের আড়াল হলো, ততক্ষণ শুধু তার দিকেই দৃষ্টি স্থির হয়ে ছিলো। কেবিনে শিফট করা হয়েছে তাকে! সবাই-ই এতোক্ষণ যাবত তাকিয়ে ছিলো নাহিদার দিকে। মেহেদী স্বজনদের কাছে এসে মাকে জিজ্ঞেস করলো বাচ্চা কোথায়? মেহেরুন কেবিন দেখিয়ে দিলে সেদিকেই পা বাড়ালো সে। দরজা খোলাই আছে। বাচ্চাকে রাখার ব্যবস্থা করছিলো নার্স। মেহেদী কথা বলে কোলে নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলো। ডাক্তার ফারহানা ছিলো সেখানে। তিনি বললে নার্স মেহেদীর কাছে দিলো। খুব সাবধানে কোলে নিয়ে তাকালো তার কন্যা সন্তানের দিকে। এবার তার চোখ খুব তারাতাড়িই ঝাপসা হয়ে এসেছে! বাচ্চা চোখ খুলেনি এখনো। সবাইকে জাগিয়ে রেখে সে-ও ঘুমাচ্ছে, ওদিকে তার মা-ও ঘুমাচ্ছে! আর মেহেদীর কোলে বাচ্চাকে দেখে একটু দূরে দাড়িয়ে থাকা তার পরিবার কিছুটা খুশি হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এবার তারা সবাই নিশ্চিত, তখন মেহেদী অতি কষ্টে এমন আচরণ করেছিলো!
দুতিন মিনিট পরেই আবার নার্স বাচ্চাকে নিয়ে নিলো। মেহেদী চোখ মুছে চলে এলো সেখান থেকে।
ডাক্তারের কথামতো জহিরুল ইসলামের সাহায্যে আয়াশকে পাশের ফাঁকা কেবিনের বেডে রেখে আরিশাকে কোলে নিলো মেহতাজ। আসিফ রক্ত দিয়েছে বিধায় নিশ্চয়ই দুর্বলতা অনুভব করছে তবুও ঘুমন্ত মেয়েকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যা ভালো লাগছিলো না মেহতাজের। মেহতাজ একপাশে এসে বললো,
– খারাপ লাগছে না?
– না।
– পারলে বাসায় চলে যাও না! কতক্ষণ থাকবে এভাবে! বাসায় গিয়ে এক গ্লাস গরম দুধ খেয়ে ঘুম দাও। ভালো লাগলে সকালে এসো।
– এতো চিন্তা করছো কেন! আমি ঠিক আছি।
সে চিন্তা করতে নিষেধ করলেই কি, চিন্তা থেকে মুক্তি আছে নাকি! মেহতাজ মাকে আয়াশের দিকে লক্ষ্য রাখতে বলে আসিফকে নিয়ে অন্যদিকে চলে এলো। এতো রাতে বাইরে হোটেল খোলা না-ও থাকতে পারে। তাই খুঁজে খুঁজে হসপিটালের ক্যান্টিন থেকে দুইটা সিদ্ধ ডিম কিনে খেতে বললো আসিফকে। নিজের ক্ষুধা বলে তাকে খাওয়ানোর জন্য এনেছে আগে জানলে নিশ্চয়ই আসিফ আসতো না তার সাথে। হসপিটালের খাবার তার কাছে ভালো লাগে না। কিন্তু কিছুই করার নেই, মেহতাজের জোরাজুরিতে খেতে হলো। এছাড়া উপায়ও নেই। মধ্যরাত না হলে অন্য ব্যবস্থা করে নিতো।
ফজরের নামাজ পড়ে নিয়াজ উদ্দিন আরাফ ও ইমরানকে জানিয়েছে নাহিদার কথা। নাহিদা অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও আরাফ সবার সুস্থতার কথা জানিয়েছে নাজিয়াকে। নতুবা নাজিয়া দুশ্চিন্তা করবে। আর আরাফ তখনই রেডি হয়ে বেরিয়ে গেছে হসপিটালের উদ্দেশ্যে। এদিকে নাফিসা শোনামাত্রই যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু ইমরান বললো নাস্তা করে তারপর যাবে। নাফিসার মন মানছে না। তবুও সে ইমরানের কথায় নাস্তা তৈরি করতে লাগলো। ইমরান বলেছে যত তারাতাড়ি নাস্তা তৈরি করে নাস্তা করে নিবে তত তারাতাড়ি তাকে হসপিটালে নিয়ে যাবে। ইমরানের বলার কারণ, হসপিটালে গেলে হয়তো খাওয়াদাওয়া কিছুই হবে না। বড়মা শুনে বেশি পরিমাণে নাস্তার ব্যবস্থা করে দিলেন সকলের জন্য।
মধ্যরাত থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত পর্যাপ্ত তাপমাত্রার জন্য বাচ্চাকে গ্লাসের ভেতর রাখা হয়েছে। বাচ্চা যখন স্বাভাবিক স্বরে কান্না করলো তখনই বের করা হয়েছে। এবার সজাগ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা বাচ্চাকে দেখতে পেয়েছে সবাই। একে একে কোলেও নিচ্ছে সবাই। কিন্তু নাহিদার এখনো সেন্স আসেনি! যার ফলে কারো মাঝেই খুশির ছিটাফোঁটা নেই। ভয় আর ভয়! হবে না নাকি তার জয়!

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ১০৯
(নূর নাফিসা)
.
.
অবশেষে এগারোটার দিকে নাহিদার দর্শন পেল তার পরিবার। নাহিদা তেমন কথা বলতে পারছে না কিন্তু বাকিদের মধ্যে স্ত্রীলোকেরা কথার সাথে কমবেশি সবাই কাঁদছে। এর মাঝে রুমানা বেগম ও নাফিসা একটু বেশি। নাফিসা তো কান্না পেলে কথাই বলতে পারে না। কথা বলতে গেলেই তার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসবে তাই চাপা কান্না নিয়েই অনেক্ক্ষণ যাবত সবার আড়ালে থেকেছে সে। নাফিসা নাস্তা নিয়ে এসেছিলো কিন্তু লাঞ্চ টাইমে সবার সেই নাস্তা হয়েছে। আসিফ আয়াশকে নিয়ে নিজের বাড়ি চলে গেছে। জহিরুল ইসলাম ও মেহতাজ তাদের বাসায় এসেছে গোসল করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য। রাতের জন্য সাথে কিছু রান্নাবান্না করে নিয়ে এসেছে সে।
.
আজ প্রায় দুদিন পর মেহেদী নাহিদার সাথে একা সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেয়েছে কেবিনে। নাফিসা ছিলো এতোক্ষণ যাবত, মেহেদীকে ফ্রী মুডে আসতে দেখে সে ইচ্ছে করেই বেরিয়ে গেছে। নাহিদা শুয়ে আছে, দৃষ্টি তার অন্যদিকে। মেহেদী তার পাশে বসে বললো,
– কংগ্রেচ্যুলেশন বাবুর আম্মু।
নাহিদা কিছু বললো না। মেহেদী এগিয়ে তার কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিতে চাইলে সে বিরক্তসহিত ঘাড় ঘুরিয়ে মুখে ফিরিয়ে নিলো। ভেতরটায় আবারও এক ধাক্কা খেলো মেহেদী! প্রথমবার যখন বাবুর আগমনী বার্তা পেয়েছিলো তখনও অভিনন্দন জানিয়েছিলো। আর তখনও তার দ্বারা এক ভুল সংঘটিত হয়েছিলো যার ফলে নাহিদা সেদিনও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। আজ এতোদিন পর আবারও সেই এক পরিস্থিতি! এতো আনন্দময় মুহূর্তেই কেন তার দ্বারা এমন ভুলগুলো হয় বারবার ভেবে পায় না সে! মেহেদী পাশে থাকা বাচ্চার দিকে তাকিয়ে আবার নাহিদার দিকে তাকালো এবং বললো,
– এখনো রাগ করে থাকবে? আমি যে মেয়ের আব্বু হলাম, আমাকে তো একবারও অভিনন্দন জানালে না!
নাহিদা অন্যদিকেই তাকিয়ে আছে। মেহেদী আবার বললো,
– কাজটা তো আমি ইচ্ছে করে করিনি। অজান্তেই হয়ে গেছে! ভাবতে পারিনি তুমি তখন সামনের দিকে এগিয়ে….
– মরে গেলাম না কেন আমরা মা মেয়ে!
কথাটা চরম আঘাত হানলো বুকের বাঁ পাশে! মনের অপরাধী ভাবটা দূর করতে মেহেদী তার কথা শেষও করতে পারেনি নাহিদার এমন কথা ভেতরটা মুচড়ে দিয়েছে! খুব কঠিন গলায় কথাটা বলেছে নাহিদা! যদিও স্বর খুব নিচু। এইটুকু বলতেই যেন সে হাপিয়ে উঠেছে যার ফলে এভাবে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে! নাহ, এটা হাপিয়ে উঠা নয়। এটা অতি কষ্টের ছাপ বহন করে! মেহেদী যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে! আর নাহিদা এবার তার দিকে তাকিয়ে আবারও সেই কঠিন স্বরেই বললো,
– এমন আধমরা হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলেই তো ভালো হতো না? ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আপনাকে এতো রেগে যেতে হতো না। আমাদের বিষয়গুলো নিয়ে বরাবর আপনাকে জেদ করতে হতো না। সব বিষয়ে এতো জেদ কেন আপনার? কই আমিও তো রাগ করি, তাই বলে কি জেদ করে এটাসেটা ছুড়ে ফেলে দেই? আপনি ইচ্ছে করে করতে চান নি, যেভাবেই হোক ঘটে গেছে না অঘটন? না করতেন এমন জেদ আর না কিছু ঘটার সম্ভাবনা থাকতো। সব কিছুতে এমন জেদ কেন দেখাবেন? আপনি জেদ করলেই সব মানতে হবে আমাদের? সব কথা আপনার কথায় কেন হবে? আমাদের কিছু ইচ্ছে থাকতে পারে না? বাবামায়ের থেকেও বেশি বুঝদার হয়ে গেছেন! আর আমরা যেন কিছুই বুঝি না! আজ জেদ করে বালিশ ছুড়ে মেরেছেন, হয়তো কাল জেদ করে মেয়েকেই ছুড়ে মারবেন! এর চেয়ে তো ভালো হয় আগেই মরে যাওয়া! এমন ভুগে ভুগে মরা তো অনেক কষ্টকর!
একটুও সহ্য হচ্ছে না নাহিদার কথাগুলো। নিজেকে যেন নিজেই অপরাধের সমুদ্রে ডুবিয়ে দিচ্ছে। সে আর এক মুহুর্তও এখানে বসে না থেকে উঠে বেরিয়ে গেলো কেবিন ছেড়ে! নাহিদা চোখ বন্ধ রেখে হাত মুঠিবদ্ধ করে কাঁদছে! কথাগুলো তাকে শুনিয়েও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার! কেননা সে জানে ইচ্ছে করে করেনি মেহেদী। কিন্তু তার অনিচ্ছাকৃত জেদের কারণেই তো তাদের জীবন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে চলে গিয়েছিলো!
বাচ্চা জেগে কান্না শুরু করেছে। নাহিদা এক হাতে চোখ মুছে নিলো। কিন্তু বাচ্চাকে যে বাঁ পাশে রেখেছিলো নার্স! এই হাতে তো স্যালাইনের সিরিঞ্জ লাগানো! সে নড়বেই কি করে আর ধরবেই কি করে! তাই স্বর একটু উঁচু করে বাইরের দিকে হাক ছাড়লো,
“নাফিসা?”
এদিকে সে ডাকার সাথে সাথেই নাফিসা মাত্র পা রেখেছে কেবিনে। মেহেদীকে বেরিয়ে যেতে দেখেই সে প্রবেশ করছিলো। এগিয়ে এসে বাচ্চাকে কোলে নিলো। কেবিনে হাটতে হাটতে জিজ্ঞেস করলো,
– আপু? ভাইয়া কি রেগে আছে না-কি?
– কেন?
– মনে হলো যেন রেগে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো!
– না, রেগে নেই।
– বাবুকে কোলে নিয়েছে?
– এখন নেয়নি, ঘুমাচ্ছিলো বলে।
বাকিরা খাওয়াদাওয়া শেষে কেবিনে এলো। নাহিদার মা আজ বাড়িতে গিয়েছিলো। আর এখানে ছিলো, জহিরুল ইসলাম, মেহেরুন, নাফিসা ও আরিশাকে নিয়ে মেহতাজ। তখনকার পর থেকে সারাদিন আর মেহেদীর দেখা পায়নি নাহিদা। মেহেদী তখন বাসায় চলে গিয়েছিলো। রাতে আবার দেখতে পেয়েছে তাকে। বাকিরা ডিনার করতে গেলে সে বাবুকে কোলে নিয়ে বসেছিলো কিছুক্ষণ। কিন্তু কোনো কথা বলেনি দুজনের একজনও। নাহিদা অভিমানে আর মেহেদী অপরাধে! দুজনেই নিশ্চুপ!
বুঝেও অবুঝ থেকে যায় মন,
ক্ষোভে পুড়ে শুধু অন্তরে জ্বালাতন!
হসপিটালে প্রায় বারো দিন কাটিয়ে তারা নিজ আবাসস্থলে ফিরে এসেছে। কমপক্ষে একমাস নাহিদাকে বেড রেস্টে থাকতে বলেছে। ভারি কোনো কাজ করবে না৷ শুধুমাত্র সুবিধামতো সমতল জায়গায় চলাফেরা। তাও কিছুদিন পর থেকে। এমনিতেই সিজারিয়ান তারউপর ক্রিটিক্যাল পজিশন! সুস্থ হতে সময় আরও বেশি লাগতে পারে। সকল বিষয়ে খুব বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে তাকে।
হসপিটালে তো দৌড়াদৌড়ি আছেই, তারউপর বাড়িতে নিয়ে আসার পরও রুমানা বেগম প্রায় এক সপ্তাহের মতো থেকেছেন এখানে। যদিও মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে থাকাটা তার কাছে অস্বাভাবিক লাগে কিন্তু মেয়ের জন্য থাকতে হচ্ছে। মেহেদী এতোদিন মেহতাজের রুমে থেকেছে, রুমানা বেগম চলে যাওয়ার পর থেকে নিজ রুমে অবস্থান করছে। প্রায় অনেকদিন হসপিটালে থাকায় রুমানা বেগম থাকাকালীন মেহতাজ তার শ্বশুর বাড়ি ছিলো। রুমানা বেগম চলে যাওয়ার পরে আবার কিছুদিনের জন্য চলে এসেছে। সেই ভেবে যে, মা নিশ্চয়ই একা পারবে না সবটা সামলে নিতে। সে-ও নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করে, এমন একটা স্বামী ও পরিবার পেয়ে! এমনকি সমস্যা ব্যতিত সে বাবার বাড়িতেও তেমনভাবে পড়ে থাকে না। আসে মাঝে মাঝে, দু একদিন কাটিয়ে চলে যায়। বছরে দু তিনবার এসে মাসব্যাপী বেড়ানোর চেয়ে মাসে দুই বার পিতামাতাকে দেখে যাওয়াটাই ভালো মনে করে মেহতাজ। এতে নিজের মনটাও শান্ত থাকবে, শ্বশুরবাড়িতেও কথা শুনতে হবে না যে কারণে অকারণে বাপের বাড়ি চলে যায়। যেহেতু যৌথ পরিবার, শ্বাশুড়ি ও জা’র সাথে সম্পর্ক ভালো রেখেই চলছে সে।
বাবুর নাম রাখা হয়েছে মার্জিয়া নুসরাত তাজ। অফিস টাইম শেষে মেহেদী দিনের বাকিটুকু সময় বাসায়ই কাটায়। সকলের প্রয়োজন অপ্রয়োজন সবটাই লক্ষ্য রাখার চেষ্টা করে। তাছাড়া নাহিদা ও তাজের প্রতি এক্সট্রা কেয়ার তো আছেই! কিন্তু দুঃখ সেখানেই, নাহিদা তার সাথে কথা বলে না। সে যদি কিছু জিজ্ঞেস করে প্রয়োজন ভেদে কখনো উত্তর দেয় আবার কখনো দেয় না। মেহেদীও আর আগের মতো অতিরিক্ত কথা বলে না। কেমন যেন একটা অপরাধ বোধ করে! যেন ক্ষমা চাওয়াও অনুচিত। কেননা বারবার ভুল করবে আর বারবার ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করে দিবে তা তো আর হয় না। সে নিজেই মনে করে একটু শাস্তি হওয়া দরকার তার! কারণ তার জন্য বউ বাচ্চা হারানোর পথে চলে গিয়েছিলো! অবহেলায় কষ্ট হলেও তার স্বজন তার কাছে থাকলেই হয়। আপাতত আর কিছু চাই না তার।
একই ঘরে একই বিছানায় থাকে তবুও খুব দূরে দূরে! ইচ্ছা থাকলেও মন যায় না এগিয়ে, প্রতি রাতে শুধু কেঁদে কেঁদে মরে! সেদিনের পর এমন কোনো দিন হয়তো বাদ যায়নি যে নাহিদা মেহেদীর জন্য কাঁদেনি! কিন্তু সবটাই নিরব ছিলো! আজ তাদের ঘরে তাজমনি আছে, বিপরীতে কতোই না খুশি হওয়ার কথা ছিলো! অথচ সেখানে ঠাঁই নিয়েছে শুধু মান, অভিমান আর অপরাধের দেয়াল!
আল্লাহর রহমতে মাসখানেক পার হওয়ার পর নাহিদা অনেকটা সুস্থ। তবুও এ পরিবার থেকে তার কাজ নিষিদ্ধ। আপাতত তার কাজ শুধু মেয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা। তাজের বয়স দেড় মাস। তাজকে কেউই নির্দিষ্ট একটা নামে ডাকে না। সবার মুখেই ঘুরেফিরে কখনো মার্জিয়া, কখনো নুসরাত আবার কখনো তাজ শোনা যায়। আর মেহেদী যেন “আব্বু” ছাড়া ডাকই দেয় না! মাঝে মাঝে তো জহিরুল ইসলামই সাড়া দিয়ে ফেলে আর হাস্যকর ব্যাপার ঘটে তাদের পরিবারে! প্রথম প্রথম ভুলে সাড়া দিলেও এখন যেন মজা করার জন্য জহিরুল ইসলামের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ব্যাপারটা! মেহেদী তাকে ডাকলে তিনি চুপ করে থাকেন, আর তার সামনে তাজকে ডাকলে তিনি সাড়া দেন!
ছুটির দিন। সকালে একসাথে নাস্তা করার সময় নাহিদা জহিরুল ইসলাম ও মেহেরুনের সামনে এক্সামের কথা তুললো। মেহদীও আছে এখানে। নাহিদার খুব ইচ্ছে এক্সামটা দেওয়ার। এখন সে অনেকটা সুস্থ আছে, তাছাড়া এক্সামের প্রিপারেশনও আছে মোটামুটি। একটু রিভিশন হলেই সম্ভব। এতোগুলো দিন পড়াশোনা করে একটা বছর গেপ রাখতে চাইছে না সে। মেহেরুন তার শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে তেমনভাবে সাপোর্ট করতে পারলো না। কিন্তু জহিরুল ইসলাম বলেছেন, যদি তার দ্বারা সম্ভব হয় তো শুধু শুধু একটা বছর নষ্ট করার প্রয়োজন নেই।
ঈদুল আযহার পর বাবার বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার আগেই ফর্ম ফিল-আপ করেছিলো নাহিদা। আর তারপরই ভেবে চিন্তে মেহেদীর নিষেধাজ্ঞা! আজ মেহেদী বাবামায়ের সামনে জোর দিয়ে কিছু বলতে পারলো না। আগেরমতো সেই জোরটা যেন হারিয়ে গেছে! রুমে এসে সে শান্ত গলায়ই বললো,
– তোমার কন্ডিশন কিন্তু এখনো স্বাভাবিক হয়নি। একটা বছর মিস করলে আহামরি ক্ষতি হবে না তোমার। এভাবে নিজেরও ক্ষতি করবে, বাচ্চারও ক্ষতি করবে।
নাহিদা তার কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো না। ঘুমন্ত তাজের পোশাক পাল্টে দিচ্ছে চুপচাপ। মেহেদীর নিষেধাজ্ঞাও আর ভালো লাগছে না তার। মেহেদী তার পাশে এসে বসলো এবং বললো,
– আমি তোমাকে কিছু বলছি। এক্সাম দিবে না তুমি।
নাহিদা এবার তার দিকে তাকিয়ে ধাধানো কন্ঠে বললো,
– আজ পর্যন্ত তো কোনো সাপোর্ট পেলামই না, প্রত্যেকটা কাজে শুধু বাঁধা দিয়ে গেছেন। অন্তত এই বিষয়ে পিছু না টানুন! নিজের একটা ইচ্ছে স্বেচ্ছায় পূরণ করার অধিকারও কি আমার নেই?
নাহিদার চোখে পানি চিকচিক করছে। মেহেদী আর কিছু বললো না। ঠিকই তো, সে তো কোনোদিক থেকেই সাপোর্ট করতে পারলো না এ পর্যন্ত! তার প্রতিটি কাজেই কি বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সে!
মেহেদী আর কোনো কথা বললো না এই বিষয়ে। নাহিদা পরদিন ভার্সিটি যেতে চেয়েছিলো এডমিট কার্ড আনতে। মেহেদী বলে দিলো অফিস যাওয়ার পথে স্যারের সাথে কথা বলে সে নিয়ে আসবে।
নাহিদা আর গেলো না। বহুদিন পর আবার সে বই হাতে নিলো। বাচ্চার দেখাশোনা ও অন্যান্য কাজের বাইরে সে বই নিয়েই বসে থাকে। এক্সাম চলছে, সে এক্সাম দিচ্ছে। এক্সাম বিকেলে হওয়ায় হাফ টাইম অফিস করে মেহেদী তাকে এক্সাম হলে নিয়ে যায়। যতক্ষণ নাহিদা বাইরে থাকে ততক্ষণ মেহেরুন দেখাশোনা করে তাজমনির। প্রতিটি এক্সামের মাঝে বন্ধ থাকায় নাহিদার অনেক সুবিধা হয়েছে। মা ও বাচ্চার মাঝে ঘনঘন দূরত্ব না হওয়ায় বাচ্চার প্রতি বেশি একটা প্রভাব পড়ে না। তবে নাহিদা পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করছে। তার এই সিদ্ধান্তটা অপছন্দ হলেও মেহেদী চুপচাপই থাকে।
চারটা পরিক্ষা দেওয়া হলো। পঞ্চম পরীক্ষার জন্য তার পড়াশোনা চলছে। রাতে ডিনারের পরই পড়তে বসেছে। রাত প্রায় বারোটা বাজতে চলেছে৷ নাহিদা খাটে বসে বই পড়ছে আর পাশেই বাবা-মেয়ে দুজনেই জেগে থেকে দুষ্টুমিতে মেতে আছে! তাজের দুমাস পূর্ণ হয়ে গেছে। সে এখন নানান শব্দ করে কথা বলে আর হাসতেও জানে। মেহেদী এখন তাকে হাসানোর চেষ্টাই করছে। নাহিদা কিছুক্ষণ পড়ায় মনযোগ দেয় আবার কিছুক্ষণ তাদের খুনশুটিতে! রাত বারোটা বেজে গেছে। নাহিদা উঠে বই রেখে বাথরুমে চলে গেলো। বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো মেহেদী টি টেবিলে চকলেট কেক রাখছে। মুহুর্তেই নাহিদার মুখের ভঙ্গি পাল্টে গেছে। মেহেদী মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে তার দিকে এগিয়ে এলো। আজ বহুদিন পর আলতো করে বাহুডোরে বেঁধে বললো,
“হ্যাপি এনিভার্সারি, মিসেস।”
সাথে সাথেই নাহিদার ভেতর চিনচিন ব্যাথা উঠে গেলো! ভাবতে গেলে মনে হয় সেদিন তার ঘরে এলো। অথচ আজ একটা বছর কেটে গেছে, সাথে তার রাজকন্যাও আছে! তা-ও নাকি দুই মাস পূর্ণ হয়ে গেছে! সময় কোনদিক দিয়ে চলে যায় খেয়ালই থাকে না!
নিজের মাঝে অপরাধের দেয়াল থাকায় সেদিনের পর থেকে অপ্রয়োজনে মেহেদী তার কাছ ঘেঁষেনি। কিন্তু আজ বহুদিন পর একটু চেষ্টা করলো। কিন্তু এতেও লাভ হলো না! নাহিদা স্থিরভাবে দাড়িয়ে আছে। মেহেদী নিজ থেকেই ছেড়ে দিয়ে তার হাত ধরে টানলো কেক কাটার জন্য। নাহিদা তাকে উপেক্ষা করে খাটে চলে গেলো। মেহেদীর চেহারায় বিষন্নতা নেমে এসেছে। তবুও সে নাহিদার কাছে এসে বললো,
– এসো। কাটবে না কেক? আজও এভাবে থাকবে?
থেমে থেমে বলা তিনটি কথার একটিতেও নাহিদা কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো না। সে কাথা নিয়ে ঝটপট শুয়ে পড়লো। মেহেদী তাকে জোরাজুরি না করে হতাশ হয়ে কেকের কাছে চলে এলো! আর কখনোই কোনো কিছু নিয়ে জোর করবে না সেটা আরও আগেই ঠিক করে নিয়েছে৷ তাজ তার পাশে কাউকে না পেয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় নিজের ভাষায় ডাকছে। এদিকে নাহিদা মুখ ঢেকে শুয়ে পড়েছে। ভেতরটা তার কষ্টে ফেটে যাচ্ছে! অশ্রু গড়াতে সমিয় নেয়নি একটুও! একের পর এক ফোঁটা পড়ে বালিশ ভিজে যাচ্ছে! কিন্তু কান্নার কোনো শব্দ হচ্ছে না। একটু পর আবার কাথা একটু ফাঁক করে তাকালো, দেখার জন্য যে মেহেদী সেদিনের মতো জেদ করে এই কেকটাও ছুড়ে ফেলেছে কি-না! কিন্তু না, মেহেদী তার আচরণে কষ্ট পেলেও নিজের মতো এনিভার্সারি সেলিব্রেট করছে মেয়েকে নিয়ে! সে টুলের উপর বসেছে তাজকে কোলে নিয়ে। তাজের হাতে ছুরিটা স্পর্শ করিয়ে বাবা মেয়ে কেকে ছুরি চালান করলো। অত:পর মেহেদী আঙুল দিয়ে একটুখানি চকলেট নিয়ে তাজের মুখে দিলো। তাজ সেটুকু খেয়ে আবারও খাওয়ার জন্য জ্বিভ ঠেলে বের করে আনছে! মেহেদী কেক ঢেকে রাখতে রাখতে বললো, “না, আব্বু। এতো খাওয়া যাবে না। তোমার এসব খাওয়া নিষেধ। এটুকুই অনেক হয়ে গেছে। যখন দাঁত উঠবে তখন খেও আবার।”
মেহেদী জেদ না দেখানোর কারণে আজ খুব ভালো লাগলো নাহিদার। একটু না, মেহেদীর মাঝে সে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে এই ক’দিনে৷ আর আজ, আরেকটু দেরী করলেই দৃশ্যটা মিস করে ফেলতো নাহিদা! তারও খুব ইচ্ছে করছিলো তাদের সাথে যুক্ত হতে! তিনজন একসাথে ছুরিতে হাত রেখে কেক কাটতে! মেহেদীকে নিজ থেকে একবার জড়িয়ে ধরে বিবাহবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানাতে! কিন্তু হলো না তার কিছুই! সকল ইচ্ছে কেবল অভিমানে গড়ে তোলা দেয়ালের আড়ালেই রয়ে গেলো!

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ১১০
(নূর নাফিসা)
.
.
সন্ধ্যার সাঁজে সমুদ্রের তীরে হাটছে দুজন৷ মেহেদীর কোলে তাজ আর পাশাপাশি নাহিদা। আজও তার অভিমান ভাঙেনি। তীব্র বাতাস আর শো শো শব্দ ভেসে আসছে কানে। তাজ বারবার মুখে আঙুল দিচ্ছে আর মেহেদী টেনে নামিয়ে নিচ্ছে। মেহেদী খুব মলিন স্বরে বললো,
– এতো কাছে আছো সবাই তবুও শূন্যতায় ডুবে আছি আমি। এভাবে কি সবসময়ই অভিমান নিয়ে দূরে দূরে থাকবে?
– আমি তো দূরে নেই।
– সত্যিই কি তাই? তাহলে আমি শূন্যতা অনুভব করি কেন?
– আমি কি জানি!
মেহেদী ছোটখাটো এক নিশ্বাস ফেলে আবার বললো,
– আমাদের মাঝে কি সব আগের মতো ঠিক হবে না? আমরা কি আবার আগের মতো হতে পারি না?
– আগের মতো হতে গেলে তো আবারও আগের ভয়াবহতাগুলো এসে দেখা দিবে। সেটাই প্রত্যাশা করেন আপনি?
দুজনেরই হাটা থেমে গেছে। মেহেদী চুপ হয়ে গেছে এবং নিষ্পলক তাকিয়ে আছে নাহিদার দিকে! নাহিদার চোখে পানি চিকচিক করছে। তাজ কান্না করতে করতে নাহিদার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। নাহিদা শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে তাজকে কোলে নিলো। এবং সমুদ্র তীর থেকে বিপরীতে হাটা ধরলো। কয়েক কদম এগিয়ে এসে পেছনে তাকিয়ে দেখলো, মেহেদী সেখানেই দাড়িয়ে আছে। প্যান্টের পকেটে দুহাত রেখে বিশাল সমুদ্রের সীমান্তে তাকিয়ে আছে সে। নাহিদা আবার হাটতে লাগলো। খুব কষ্ট লাগছে তার! এমন দিন আসবে তা কি প্রত্যাশা করেছিলো কখনো! তাজকে কোলে নিয়ে হেটে যাচ্ছে আর এক হাতে চোখ মুছে যাচ্ছে। হেটে হেটে কিছু দূর এগিয়ে আবারও পেছনে ফিরে তাকালো। এবার কেউ নেই সেখানে! মেহেদী কোথায় গেলো! আশেপাশে তো কোনো লোকজনই নেই! দুপাশে প্রস্তর বালির মাঠ আর বরাবর বিশাল সমুদ্র! একটা কাকপক্ষীও চোখে দৃশ্যমান হচ্ছে না! এইটুকু সময়ের মধ্যে সে কোথায় হারিয়ে গেলো! সে কি তবে সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে! সে কি তার দ্বারা কষ্ট পেয়ে তাকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেছে! নাহিদা খুব ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠলো, “মেহেদী…..!” এবং দৌড় দিলো সমুদ্রের দিকে!
চোখ খুলে বসে পড়লো নাহিদা! হাপাচ্ছে সে! ঘুমের মধ্যে নাহিদার মুখে আবল-তাবল উচ্চারণে মেহেদীর ঘুম ভেঙে গেছে। তাজের ওপাশে থেকেই সে এতোক্ষণ যাবত ঝাকিয়ে ডাকছিলো নাহিদাকে। আর নাহিদা এখন চমকে উঠে বসে পড়েছে। খুব ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে সে! তার চেহারায় ভয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বাচ্চাকে পাশে ও মেহেদীকে বাচ্চার ওপাশে দেখতে পেয়ে বুঝতে পারলো এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো সে! মেহেদী জিজ্ঞেস করলো,
– কি হয়েছে?
নাহিদা কোনো জবাব না দিয়ে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! মেহেদী বুঝতে পেরেছে সে দুঃস্বপ্ন দেখেছে নিশ্চয়ই! তাই ওপাশ থেকে নেমে নাহিদার পাশে এসে বসলো সে। জগ থেকে পানি ঢেলে নাহিদার মুখের সামনে ধরলো। ওপাশ থেকে এপাশে আসা অব্দি একবারের জন্যও মেহেদী থেকে দৃষ্টি সরায়নি নাহিদা। আর এখন মেহেদী পানির গ্লাস এগিয়ে ধরলে সে ঝাড়ি দিয়ে গ্লাস সরিয়ে দু’হাতে ঝাপটে ধরে হুমড়ি খেয়ে পড়লো মেহেদীর বুকে! মেহেদী গ্লাস ঠিকমতো ধরে রাখায় হাত থেকে গ্লাস পড়েনি কিন্তু গ্লাসের পানি পড়ে গেছে ফ্লোরে! আর এদিকে নাহিদা কান্না করতে করতে বারবার বলছে,
“সরি! সরি প্রিয়!”
মেহেদী গ্লাস রেখে নাহিদাকে সোজা করার চেষ্টা করলো। কিন্তু নাহিদা তাকে ছাড়ছে না। বরং আঁকড়ে ধরে বারবার বলে যাচ্ছে, “সরি, আর কখনো রাগ করবো না৷ আর কখনো তোমার অবাধ্য হবো না। একদম হারাতে দেবো না তোমাকে!”
“নাহিদা, হয়েছে কি? তাকাও আমার দিকে! কাঁদছো কেন তুমি? এই যে, বাবু উঠে যাবে কিন্তু!”
মেহেদীর কোনো কথায়ই কাজ হচ্ছে না। সে নিশ্চিত নাহিদা কোনো দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছে। তাই মেহেদীই চুপ করে রইলো তার কান্না থেমে আসা পর্যন্ত। এক হাতে নাহিদাকে জড়িয়ে অন্য হাত তাজের উপর রাখলো যেন ঘুম ভেঙে না যায়। নাহিদার কান্না কমে এলে মেহেদী বললো,
– দুঃস্বপ্ন দেখেছো?
– হু।
– সেজন্য এতো কান্না করার কি আছে! স্বপ্ন তো স্বপ্নই! বেশি দুশ্চিন্তা কর বিধায় এমন।
মেহেদীর উন্মুক্ত বুকে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে নাহিদা বললো,
– হ্যাপি এনিভার্সারি, মিস্টার।
কণ্ঠটা যেন ভাঙা শোনা গেলো, সর্দি লাগলে যেমন স্বর ভেঙে যায়! এখনো ঠিক তেমনই শোনা গেলো। তবে উক্ত কথায় মেহেদীর ভেতর এক প্রকার শিহরণ বয়ে গেলো! ঘুমানোর পূর্বের ঘটনা মনে করে সে নিশ্চুপ হয়ে আছে। নাহিদা আবারও একই কাজ করলো এবং একই কথা বললো। এবার মেহেদী নিজেকে একটু ফ্রেশ মাইন্ডে আনতে বললো,
– এতোক্ষণ ঘুমিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখে এখন কি জেগে জেগে সুস্বপ্ন দেখছো?
নাহিদা তার কথায় পাত্তা না দিয়ে আরও একবার ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বললো,
– অভিনন্দন, তনয়ার আব্বু।
সব শুভেচ্ছাগুলো যেনো জমা করে রেখেছিলো এতোদিন, যা আজ প্রকাশ করে যাচ্ছে সে! এবার কন্ঠটা পরিষ্কার শোনা গেছে! মেহেদী আবার বললো,
– আমার তো মনে হয় এখন আমিই সুস্বপ্ন দেখছি! বলি কি, এসব সকালে মনে থাকবে তো তোমার? এক মিনিট দাড়াও, আমি বরং ফোনে রেকর্ড করে নেই।
নাহিদা মাথা তুলে তার দিকে তাকিয়ে বললো,
– কি শুরু করেছো তুমি!
– আমি! আমি তো কিছুই শুরু করলাম না! তবে অনুমতি পেলে শুরু করতে পারি!
নাহিদা স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মেহেদীর সমস্ত মুখে চোখ বুলালো। মেহেদী মাথাটা নিচু করে কপালে কপাল ও নাকে নাক লাগিয়ে বললো,
– কি দেখলে স্বপ্নে?
– দুঃস্বপ্ন বলতে হয় না।
– ইশ! স্বপ্নটা হুট করে এসে আমার কি যে উপকার করলো!
নাহিদার ঠোঁটে হাসির ঝিলিক ভেসে উঠলো! মেহেদী নাকে নাক ঘেঁষে কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিলো। অত:পর হাত বাড়িয়ে আবার গ্লাসে পানি নিলো। নাহিদা বললো,
– কুলি করবো আমি।
– যাও।
নাহিদা তার ভেজা গাল মুছতে মুছতে পা দিয়ে পাপোশ টেনে ফ্লোর মুছে দিলো। অত:পর বাথরুমে এসে চোখে মুখে পানি দিলো। সে বেরিয়ে এলে মেহেদী গেলো। নাহিদা গ্লাস নিয়ে পানি পান করতে গেলে চোখ পড়লো ঢেকে রাখা কেকের উপর! এক ঢোক পানি গিলে সে কেকটা দেখলো। একটুও খায়নি লোকটা! শুধুমাত্র মেয়ের হাত ধরে ছুরি একবার চালান করেছে আর একটুখানি চকলেট মেয়ের মুখে দিয়েছে। কেকের কোন টুকরোও করেনি। নাহিদা দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সময় ১টা বেজে ৫৫মিনিট। সে ছুরিটা হাতে নিয়ে বাবা-মেয়ের করা সেই দাগ হতে আরেক দাগ টেনে ত্রিকোণ আকৃতির টুকরো করলো। মেহেদী বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো সে কেক কাটছে। বিছানার দিকে যেতে যেতে বললো,
– আমরা অনেক মজা করেছি, তুমি মিস করেছো।
– মজা করেছো? আমাকে মিস করোনি?
মেহেদী জোরপূর্বক ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বললো,
– মন্দ হতো না, যদি তুমি থাকতে!
কথাটা শুনে নাহিদার হাত থেকে ফসকে গেলো কেকের টুকরোটা! মেহেদী তার জায়গায় শুয়ে পড়েছে। নাহিদা অন্যহাতে চোখ মুছে আবার টুকরোটা হাতে নিলো এবং বাকি কেক ঢেকে রাখলো। অত:পর মেহেদীর ওপাশে এসে বসে তার মুখের সামনে ধরে বললো,
– আ’ম সরি। রেলি, সরি ফর লেট দ্যা ভ্যালুএবল টাইম ওয়ান আওয়ার ফিফটি ফাইভ মিনিট!
মেহেদী একবার কেকের দিকে তাকিয়ে আবার তার দিকে তাকিয়ে আছে। নাহিদার দুচোখে অনবরত অশ্রু ঝরছেই! মেহেদীকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে আবার বললো,
– হ্যাপি এনিভার্সারি। ক্যান ইউ টেক ইট? ক্যান ইউ গিভ মি ইউর পিউর লাভ? আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ সো মাচ।
বর্ষপূর্তিতে প্রিয় মানুষটা এভাবে প্রপোজ করলে কি তাকে উপেক্ষা করা যায়! মুহুর্তেই যেন মেহেদীর অপরাধী মনোভাব বিলীন হয়ে গেছে! সে আরও কয়েক সেকেন্ড নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে শোয়া থেকে উঠে বসলো। এবং নাহিদার হাত থেকে কেক মুখে নিলো। অত:পর এগিয়ে এলো নাহিদার মুখের সামনে। অতি খুশিতে যেন নাহিদার অশ্রুপাত আরও বেড়ে গেছে! নাহিদা বাইরের অংশটুকু কামড়ে মুখে নিয়ে নিলো! মেহেদী তাকে শক্ত করে বাহুডোরে বেঁধে বললো,
– লাভ ফরএভার বাবুর আম্মু।
নাহিদা চুপচাপ মিশে আছে। কিছুক্ষণ এভাবে নিশ্চুপ থাকায় মেহেদী বললো,
– কি গো? ঘুমিয়ে পড়েছো? আমি ঘুমাবো কখন?
নাহিদা সোজা হয়ে বসলো। তার মুখ ফোলা দেখে মেহেদী বললো,
– খাওনি?
নাহিদা কিছু বললো না। মেহেদী তার দুইগাল চেপে ধরে বললো,
– হা করো দেখি?
নাহিদা ঠোঁট চেপে রেখেছে। মেহেদী বললো,
– মুখে জমিয়ে রেখেছো কেন? দাঁতে পোকা ধরবে তো! খেতে না পারলে দিয়ে দাও আমাকে।
মেহেদী তার গাল আরও চেপে ধরলো। নাহিদা নিশ্চিত সে এটা নিয়ে ছাড়বে। তাই তাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে দ্রুত অন্যপাশে চলে গেলো এবং মুখের খাবার চিবিয়ে নিয়ে বললো,
– ছি! কি খারাপ লোক!
মেহেদী হেসে উঠলো। নাহিদা আরও কিছুক্ষণ মুখে খাবারটা রেখে দিতো কিন্তু মেহেদীর জন্য পারলো না! সে পানি পান করে মেহেদীকে পানি দিলো। মেহেদী পানি পান করে রেক্সিনসহ তাজকে একটু এপাশে চাপালো এবং বড় কোলবালিশটা সাইডে রাখলো। অত:পর সে এসে নাহিদাকে তাজের দিকে চাপিয়ে জায়গা দখল করলো। নাহিদা বললো,
– এখানে কেন আবার! ওপাশে যাও।
মেহেদী তার পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে বললো,
– উহুম। অনেক ঘুম পেয়েছে। ডোন্ট ডিস্টার্ব মি!
এমনি তাজ জেগে ওঠে কান্না শুরু করলো। আর নাহিদা হেসে বললো,
– ইউর ডটার অলওয়েজ স্ট্যান্ড ফর ডিস্টার্বড ইউ! হিহিহি..!
– তার ঘুম কিন্তু ভাঙেনি। আপাতত তুমি চাইলেই সে শান্ত।
নাহিদা তাজকে কাছে টেনে বললো,
– ওকে চাইলাম।
– অভিমান ভেঙেছে?
– হুম।
– এতো বড় অভিমান কেন কর! আমার কষ্ট বেশি লাগে তো।
– সরি, আর করবো না কখনো। কিন্তু নেক্সট টাইম যদি জেদ করে কিছু করেছো তো বিপরীতে আমিও উল্টো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো। তখন আর অভিমান করবো না ঠিকই। কিন্তু অন্যকিছু করবো।
– অন্যকিছু! কি করবে শুনি?
– যা খুশি তাই করবো।
– যেমন?
– যেমন, বাবুর টয়লেট করা পোশাক ধুতে দিবো!
– হোয়াট! ইম্পসিবল! ডাইপার পড়িয়ে বাবু সারাদিন কোলে নিয়ে ঘুরতে রাজি, কিন্তু ওসব ইম্পসিবল!
– সময় আসুক, পসিবল করে ছাড়বো।