তৃ-তনয়া পর্ব-১১১+১১২+১১৩

0
548

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ১১১
(নূর নাফিসা)
.
.
পরদিন,
দিনের যতক্ষণ ঘরে ছিলো আজ সারাদিনও নাহিদাকে বই নিয়ে বসতে দেখলো না মেহেদী। এমনকি রাতেও দেখছে না। ডিনার করে মেহেদীর পাশাপাশি সে-ও আজ তাজের সাথেই টাইম পাস করছে। মেহেদী বললো,
– পড়তে বসো না?
– না।
– রিভিশন শেষ?
– উহুম।
– তাহলে?
– এক্সাম দিবো না।
– কেন?
– তুমিই তো চাও না।
– এখন ঢং! চারটা দিয়ে এখন আমি চাই না! বই নাও!
নাহিদা চুপচাপ শুয়েই আছে। মেহেদী পায়ের আঙুল দ্বারা চিমটি কাটলো নাহিদার পায়ে, এবং বললো,
– তোমার কি প্রব্লেম হয় যাতায়াতে?
– উহুম।
– তো ওঠো, বই নাও হাতে। আর কয়েকটা আছেই বাকি। যাও…
মেহেদীর স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখে নাহিদা এবার উঠে বসলো পড়ার জন্য।
.
রাতে খাওয়াদাওয়ার পর ঘরে এসে নাফিসা ফোন হাতে নিয়ে বসেছে। খাবার বেশি খেয়ে ফেলেছে বোধহয়! নড়াচড়া করলেই বদহজম হওয়ার সম্ভাবনা আছে! খাওয়ার পর সাথে সাথে শুয়ে পড়লেও গ্যাস্ট্রিকের ঝামেলা হতে পারে। তাই একটু সময় কাটাতে অনলাইনে প্রবেশ করলো। ইমরান বললো,
– ভালোই তো! ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত, মশারী টানাবে কে?
– আলসে লোক কোথাকার! একদিন টানালে কি হয়?
– একদিন? গত চারদিন ধরে একটানা আমি টানিয়ে যাচ্ছি আর তুমি এখনো একদিন বলো? সপ্তাহের সাতদিন শেষ হয়ে গেলেও তো তোমার একদিন শেষ হয় না!
বলতে বলতে ইমরান মশারী টানিয়ে নিচ্ছে। নাফিসা খিলখিল করে হেসে বললো,
– এমন করে না জানু। সত্যি খারাপ লাগছে। দেখোনা, তাই চুপচাপ এসে বসে গেছি!
– এটা কি খুব কষ্টকর কাজ?
– সেটাই তো! তাহলে তুমি টানিয়ে দিলে কি হয়!
– আমি টানিয়ে দিলে বউ আলসে হয়।
নাফিসা আবারও হেসে উঠলো। অনলাইনে এসে ভালো লাগছে না বিধায় আবার বেরিয়ে গেলো। অত:পর গ্যালারিতে প্রবেশ করলো। ইমরান বিছানায় তার হাত থেকে ফোন টেনে বললো,
– তোমার না খারাপ লাগছে, তো ফোনে কি?
– এই দাঁড়াও দাঁড়াও! খেয়ে এসেছি মাত্র এখনই শুয়ে পড়বো! বরং ছবি দেখে টাইম পাস করি।
– না, ছবি দেখতে হবে না।
– দাও না। তাজ’র ছবিগুলো দেখে রেখে দিবো।
ইমরান তার হাতে ফোন দিলো। নাফিসা একের পর এক ছবি দেখছে আর ইমরানকে জিজ্ঞেস করছে, “এটা বেশি সুন্দর না? তাজ কি ভাইয়ার মতো দেখতে না? ঠোঁট আর গাল মনে হয় আপুর মতো, তাই না? চোখ দুটো পুরোই ভাইয়ার মতো! হাসিটা খুব সুন্দর না?”
থেমে থেমে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে। কিন্তু উত্তরের আশায় থাকছে না। উত্তর যেন সে নিজেই ভাবছে। ইমরান তাজের ছবির সাথে সাথে নাফিসার আনন্দ দেখছে। অত:পর নাফিসার দিকে প্রশ্ন ছুড়লো,
– বলোতো তোমাদের তৃ-তনয়া’র মধ্যে কে বেশি সুখী?
এমন প্রশ্নে নাফিসা ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ইমরানের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার ফোনে দৃষ্টি স্থির করলো। ইমরান আবার বললো,
– বলো?
– কি বলবো?
– তোমাদের মধ্যে কে বেশি সুখী?
– জানি না।
এমন উত্তরে ইমরান কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো,
– কি জানো তবে? ঘোড়ার ডিম?
– হু।
– হা হা হা… আচ্ছা, বলো তোমাদের মাঝে কে সবচেয়ে বেশি অসুখী।
নাফিসা ব্রু কুচকে বললো,
– আমাকে চোখে পড়ে না তোমার?
ইমরান তার মুখের হাসি ভাবটা বিলীন করে বললো,
– সত্যিই কি তুমি অসুখী?
নাফিসা তার চেহারায় তাকিয়ে এখন নিজেই অপরাধ বোধ করছে! এতোক্ষণ মজার সাথে নিলেও এবার বুঝতে পেরেছে ইমরান সিরিয়াসলি জিজ্ঞাসা করেছে তাকে! তাকে চুপ থাকতে দেখে ইমরান বললো,
– কি হলো? বলো? তুমি আমার কাছে সুখে নেই?
– হুম।
– তাহলে বললে যে!
– এমনিই বলেছি। মজা করেছি।
– আচ্ছা! তাহলে এবার সিরিয়াসলি বলো, সবচেয়ে বেশি অসুখী কে?
– নাজিয়া আপু।
– আমার মতে, প্রশ্নই আসে না! আরাফ ভাইয়ার মতো মানুষের কাছে ভাবি অসুখী থাকবে, এটা ভাবতে পারো তুমি!
– ভাবা আর না ভাবার কি আছে! তুমি দেখছো না? ভাইয়া ভালো হলেই কি, সংসারে আর কেউ নেই?
– আছে, তবে মেয়েদের সাংসারিক জীবনে সুখের মূল উৎস হলো হাসব্যান্ড। এটা জানো তুমি?
নাফিসা তার দিকে স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তাকালে সে আবার বলতে লাগলো,
– দেখো, আমার পুরো পরিবার যদি তোমার বিপরীতে থাকে বা তোমাকে মেন্টালি টর্চার করে তবুও তুমি সংসারে টিকে থাকবে। যদি আমি তোমাকে সাপোর্ট করি, তোমার সঙ্গ দেই এবং খুব ভালো রাখার চেষ্টা করি। আর যদি এমন হয়, আমার পরিবার তোমার যথেষ্ট কেয়ার করে কিন্তু আমি ভালো না, আমার চরিত্র ভালো না, আমার স্বভাব ভালো না, মাদক সেবন করি, তোমাকে শারীরিক বা মানসিক ভাবে টর্চার করা শুরু করি। তাহলে যতই সাপোর্ট থাকুক, তুমি দুদিনও টিকবে না আমার সংসারে। হয় বাবার বাড়ি গিয়ে চুপচাপ বসে থাকবে নতুবা থানায় মামলা করবে। কিন্তু এই সংসার আর জোড়া লাগবে না। তাহলে বলো, ভাবি কি সুখে নেই?
– সেভাবে দেখতে গেলে তো সবাই বেশি বেশি সুখী!
– তুমি তোমাদের সম্পর্কে জানোই না।
– তুমি জেনে জেনে উল্টাইছো।
– তোমার চেয়ে বেশিই জানি মনে হয়!
– আচ্ছা! তো বলো কে সবচেয়ে বেশি অসুখী?
– না, তোমার মুখ পাতলা!
– অই, আমি কার কাছে গিয়ে কি বলছি! খবরদার এখন এসব বলে বলে কথা ঘুরানোর চেষ্টা করেছো তো!
ইমরান হেসে বললো,
– আচ্ছা, ঘুরাচ্ছি না!
– তো বলো?
– নাহিদা আপু তুলনামূলক বেশি অসুখী।
– মোটেও না।
– মোটেও। টাকার মাঝেই কি সব সুখ দেখো? আমি গরীব, তবুও তুমি আমার আমার কাছে যতটা সুখে আছো, আমি মনে করি নাহিদা আপু তার অর্ধেকও নেই।
– জ্বি না। টাকার মধ্যে কোনো সুখ দেখছি না আমি। কিন্তু মেহেদী ভাইয়ার ফ্যামিলির মতো ফ্যামিলি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর!
– হয়তোবা এমন ফ্যামিলি পাওয়া দুষ্কর কিন্তু এমন মেহেদী ভাইয়ার অভাব নেই।
– কি বলতে চাইছো তুমি? ভাইয়া খারাপ?
– না। ভাইয়াকে খারাপ বলছি না। তবে আমার মনে হয়েছে আপুর সাথে ভাইয়ার আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভালো না। আমি এখন পর্যন্ত দেখলাম না তারা দুজন কখনো হেসে ফ্রী মাইন্ডে কথা বলেছে!
– তুমি তো তাদের বাসায় গিয়ে পড়ে থাকো, তাই না?
– এমন বোকার মতো কথা বলো কেন? যুক্তি চাইলে যুক্তি দেখাতে পারি। এমন রেগে যাওয়ার কি আছে?
– আমি রেগে যাচ্ছি না। তবে তোমার কথায় কোনো যুক্তিও খুঁজে পাচ্ছি না। ক্লিয়ার করো…
– তুমি ভাইয়াদের সাথে বা পরিচিত কারো সাথে কথা বললে কি আমি তা নিয়ে রাগারাগি করেছি কখনো?
– না।
– প্রয়োজনে বা কুশলাদি বিনিময়ে কথা বলতেই পারে যেটা আমি স্বাভাবিক মনে করি। কিন্তু ভাইয়া। আমার সামনেই পরোক্ষভাবে রাগারাগি করেছে আপুর সাথে। ওইযে, আমাদের বিয়ের পর ভার্সিটিতে প্রথমবার আশিক গেলো যে সাথে, আর আপুও গিয়েছিলো সেদিন। দেখা হওয়ার পর কথা বলেছিলো আপু আমাদের সাথে। ভাইয়াও কোনো প্রয়োজনে গিয়েছিলো বোধহয়। আমাদের সাথে কথা বলতে দেখে সেখানে তার মুডটা যেন কেমন ছিলো! খোচা মেরে কথা বলা যাকে বলে! আপুও খুব লজ্জিত বোধ করেছিলো সেদিন! তারউপর আমাদের বাসায় দাওয়াত করলাম, ভাইয়া এলো না! আপু তার কাজের ব্যস্ততা দেখালো, অথচ তুর্য বললো বাইরে দেখে এসেছে! বেবি হওয়ার পর হসপিটাল গেলাম তখনও কেমন বিষন্নতায় দেখলাম! গত সপ্তাহে যে তাদের বাড়িতে গেলাম বেবিকে দেখতে, তখনও কারো সাথে কাউকে কথা বলতে দেখলাম না একবারও! কেমন যেন ইগনোর ভাব চলছিলো তাদের মাঝে। অন্যের ব্যাপারে এতোটা লক্ষ্য করা অনুচিত কিন্তু চোখের সামনে পড়ে গেছে বিষয়গুলো! সেই ধারণা থেকে বলতে পারি তোমাদের দুই বোনের তুলনায় নাহিদা আপু বেশি অসুখী।
– একটা সত্যি কথা বলবো? গত সপ্তাহে তাদের বাসায় আমিও লক্ষ্য করেছিলাম বিষয়টা! হসপিটালেও একবার এমন কিছু চোখে পড়েছিলো। কিন্তু তার আগে আর এমন কিছু মনে হয়নি। সবসময় ভাইয়াকে ফ্রী মুডে দেখেছি। পরে বোধহয় কিছু হয়েছে!
– তুমি আবার এসব নিয়ে কিছু বলতে যেও না। যদি কিছু হয়েও থাকে, তাদের বুঝ তাদের দ্বারাই মিটিয়ে নিতে দাও। হাসব্যান্ড ওয়াইফের মাঝে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি সুপারিশ করলে সমস্যা বেড়ে যায়। যদি তোমাকে জানায় বা হেল্প চায়, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। এখন বাদ দাও এসব৷ অনেক সময় নিয়ে জিড়িয়েছো। ঘুমাও এবার।
– তো এটা বললে না, কে বেশি সুখী?
– তোমার মতে যদি নাজিয়া আপু আরাফ ভাইয়া বাদে তার পরিবারের দিক থেকে অসুখী হয়ে থাকে তো কে সুখী তুমিই বলো?
– হু, বুঝিই তো! সেই ঠেলে ধাক্কিয়ে নিজের ক্রেডিটটাই তুলে ধরবে।
– না, আমি তুলে ধরছি না কিছু। তুমিই বলো কে সুখী? সিরিয়াসলি বলবে, আমি এতে কোনো রাগ বা মন খারাপ করবো না। তুমি কি আমার দ্বারা কোনো দিক থেকে অসুখী?
– উহু।
– জেরিনের সেই ইস্যু বাদে আমার ফ্যামিলি দ্বারা?
– উহুম। তবে বড়মা’র মতো আম্মা একটু ফ্রি মাইন্ডের হলে ভালো হতো। কেমন যেন গম্ভীর হয়ে থাকেন। একদমই মিশুক না।
– মা এভাবে থেকে অভ্যস্ত! হয়তোবা বংশের দোষ! নানিও এমনই ছিলেন! ওসব বাদ। তুমি কোনো দিক থেকে নির্যাতিত কি-না সেটা বলো?
– উহু।
ইমরান মুচকি হেসে বললো,
– ঘুমাও।
সে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লে নাফিসা তার বুকের একপাশে মাথা রেখে শুয়ে বললো,
– শুনো…
– হুম?
– আমি সবার চেয়ে বেশি সুখী।
– আমার ক্রেডিট প্রয়োজন নেই।
– তবুও আমি দিবো তোমাকে ক্রেডিট।
দুজনেই প্রশান্তির হাসি হেসে ঘুমের জন্য প্রস্তুত!
.
প্রেগন্যান্সির সাড়ে ছয় মাস শ্বশুর বাড়ি কাটিয়ে নাজিয়া তার বাবার বাড়ি এসেছে। তারপর থেকে মাঝে মাঝে আরাফ এখানে এসে থাকে। নাজিয়া চলে আসার পর থেকেই আয়েশা বেগমের রাগারাগি! সে কি কম করেছে ছেলের বউকে? তাহলে নাতি/নাতনির যত্নের জন্য বাপের বাড়ি কেন গেলো!
না, গত কয়েক মাস কম যত্ন নেয়নি নাজিয়ার। কাজের লোকের সাথে ঘরের কাজকর্ম সব তিনিই করেছেন। নাজিয়ার খাওয়াদাওয়ার দেখবালও করেছেন। কিন্তু মায়ের মন যে মানে না। রুমানা বেগম তার মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে আসবেনই, সেটা আগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে নিয়েছেন।
আয়েশা বেগম যত্নস্বরূপ কিছুটা শাসনে যেমন রেখেছেন নাজিয়াকে, তেমন ভয়ও দেখিয়েছেন। তার ভাষ্যমতে এটা ভয় না হলেও নাজিয়ার কাছে এটা খুবই ভয়ংকর! তিনি প্রায়ই বলতেন, “খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করো। যা দরকার সব আইনা দিমু। তবুও নাতি নাতনির মুখ দেখাইয়ো। এই সাজসন্ধ্যায় দুয়ার খুইলা রাইখো না! নানান আপদ ঘরে ঢুকে! মাইয়ালোকের, সব দিকে নজর রাইখা ই চলতে হয়। তুমি ভালো থাকবা তো বাচ্চা ভালো থাকবো। বাপের বাড়ি যাইবা, ঠিকঠাক মতো চইলো!”
যদিও তিনি শাসন সরূপ বলতেন কথাগুলো কিন্তু নাজিয়ার মনে এক প্রকার ভয় জন্ম নিতো! সে পারবে তো তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে?
আর আরাফ! আরাফকে নিয়ে ভাবলে সবসময়ই কান্না আসে নাজিয়ার! লোকটা দিনরাত এক করে ফেলে তার যত্ন নিতে! স্কুল, কোচিং কমপ্লিট করে ছুটে আসে বাড়িতে। নাজিয়া কি করেছে, কি করেনি সব রকম জিজ্ঞাসাবাদ চলে। কোনো কিছু ভুল হলে একটু আধটু রাগ দেখায় কেন সে সেদিকে একটু যত্নবান হতে পারলো না। কোনো কাজে হাত লাগালেও তাকে সাবধান করতে রাগ দেখায়, কেন ডাক্তারের নিষেধ সত্ত্বেও সে সেদিকে ধাবিত হয়! আরাফ তার মন ভালো রাখতে চেষ্টা করে সবসময়, ঘটে যাওয়া অঘটনকে ভুলিয়ে দিতে সাহায্য করে, মনে সাহস যোগাতে অবদান রাখে। এতো পরিশ্রমের পরও কত রাত যে তার জন্য সে নির্ঘুম কাটিয়েছে সেই হিসেব নেই! নাজিয়া যেমন শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেছে, আরাফ তার সঙ্গ দিয়ে গেছে। পা টিপে দেওয়া পর্যন্ত বাদ রাখেনি লোকটা! শুয়ে বসে দিন কাটাতে কাটাতে নাজিয়া নিজেই বিরক্ত হয়ে পড়তো! আরাফ তাকে যথাসম্ভব সাপোর্ট করে, কখনোই সে আলাদাভাবে বাচ্চার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়নি। তার প্রয়োজন নাজিয়ার সুস্থতা। সে ভালো থাকলে ইনশাআল্লাহ বাচ্চা ভালো থাকবেই। কিন্তু নাজিয়ার ভয় সেখানেই! সবাই তার প্রতি এতো যত্নবান, সে কি সবার মন রক্ষা করতে পারবে? তাদেরকে সুস্থ ও সুন্দর বাচ্চা উপহার দিয়ে ঘর আলোকিত করতে পারবে তো?

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ১১২
(নূর নাফিসা)
.
.
নাজিয়ার বর্তমান অবস্থা পরীক্ষা নিরীক্ষার ভিত্তিতে ডাক্তার আট মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই সিজার করতে বলে। ডাক্তারের দেওয়া নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী তারা হসপিটাল হাজির হয়। নাজিয়া আজ খুব ভয়ার্ত! থিয়েটারে প্রবেশ করার পূর্বে নাজিয়া পিছু ফিরে বারবার তার স্বজনদের দিকে তাকাচ্ছিলো! কখনো মা, কখনো বাবা, কখনো নাফিসা আবার কখনো আরাফ! শেষ পলকটা আরাফের উপরই পড়েছিলো! বাবা গম্ভীর, মা ও নাফিসা কান্না চাপা রেখেছে যা স্পষ্ট! আর আরাফ পলকহীন তাকিয়ে ছিলো তার দিকে! লোকটার মাঝে যে ভয়ের তরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছে তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে নাজিয়া! আর তার মনের অবস্থা সকলেরই জানা! ভয় জমা ভারী মন নিয়ে সে প্রবেশ করলো থিয়েটারে! কে জানে, এটাই নাকি আবার তার স্বজনদের শেষ দেখা হয়! চোখের সামনে তো নিয়মিতই ঘটে যাচ্ছে এমন শত শত ঘটনা! মহান আল্লাহ তায়ালা তার হায়াত আরও বহুদূর রেখেছেন কি-না একমাত্র তিনি ছাড়া আর কে ই বা জানেন!
অপারেশনের জন্য দু ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। আসিফ নিজ থেকেই এসেছিলো রক্ত দিতে। একজন সুস্থ মানুষ তিন মাস অন্তর রক্ত দান করতে পারে। আর সে শেষ রক্ত দান করেছিলো নাহিদাকে প্রায় চার মাস হয়ে গেছে। তাই আজও সে এগিয়ে এসেছে তাদের সাহায্য করতে। একদিকে মানবতা, অন্যদিকে নাহিদার সূত্রে আরাফের সাথে তার বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আরেক ব্যাগ রক্ত নাফিসা দিতে প্রস্তুত ছিলো। কিন্তু আরাফের সাথে ম্যাচ না হলেও আশিকের সাথে নাজিয়ার রক্তের গ্রুপ ম্যাচ হয়েছে। আয়াতেরটাও ম্যাচিং। ডাক্তার নাফিসাকে উপেক্ষা করে আশিককে গ্রহণ করেছে। কারণ একটাই, মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের শক্তিসামর্থ্য ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। যার ফলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম। আর আশিক আগেই প্রস্তুত ছিলো, তার ভাবির অপারেশনে রক্তের প্রয়োজন হবে ভেবে।
অপারেশন করার পর ডাক্তার সুসংবাদ নিয়ে বেরিয়েছেন, নাজিয়ার যমজ বাচ্চা হয়েছে। এক ছেলে এক মেয়ে! ছেলেটা হৃষ্টপুষ্ট আর মেয়েটা তুলনামূলক দুর্বল! নাজিয়া বিপদমুক্ত সেই প্রত্যাশাই করছেন ডাক্তার। তবে নিশ্চিত বলতে পারবেন জ্ঞান ফেরার পর। আসিফ সুসংবাদ পাওয়ার পরই বাসায় ফিরে গেছে।
টুইন বেবি হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেটা আরাফ জানতো আরও আগেই। ডাক্তার জানিয়েছিলো বিষয়টা। কেবল আরাফই জানতো, নাজিয়াকেও জানতে দেয়নি কারণ সে প্রেশার বেশি নিতে পারে সেই ভয়ে।
তার অপারেশন করা হয়েছে মধ্যাহ্নে। আর জ্ঞান ফিরেছে অপরাহ্নে। কিন্তু তাকে নিয়ে ঝামেলা একটু দেখা দিয়েছে। তার প্রেশার আগেই হাই ছিলো, যার কারণে সিজার করতে হলো। এখনও প্রেশার হাই আছে! একটু পরপরই খিচুনি দেখা যাচ্ছে! ডাক্তার পড়ে গেলো টেনশনে! তাকে যথাসম্ভব ঘুমন্ত রাখার চেষ্টা করছে তারা। ছেলে বাবুটাকে নরমাল রাখলেও মেয়ে বাবুটাকে বিশেষ ট্রিটমেন্টে রেখেছে। পর্যাপ্ত তাপমাত্রার জন্য কয়েক ঘন্টা শুধু ছেলে বাবুটাকে গ্লাসের ভেতর রাখা হয়েছে। সন্ধ্যায় নাহিদা এসেছে মেহেদীর সাথে। তার এক্সাম শেষ হয়েছিলো কিছুদিন আগে। আজ তার ভাইভা ছিলো তাই দিনে আসতে পারেনি। মেয়েকে বাসায় রেখে আসতো কিন্তু সারাদিন এমনিতেই দূরে ছিলো তাই এখন নিয়েই এসেছে হসপিটাল। তাছাড়া এখানে তার প্রয়োজনভেদে বেশিক্ষণ কাটাতে হতে পারে সেই ভেবেও সাথে নিয়ে আসা। সারারাত তো আর এমন দূরে রাখা যাবে না! টুইন বেবি হয়েছে সেটা ফোনে জেনে খুশি হলেও এখানে এসে নাজিয়ার অবস্থা দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেছে!
রাত আটটা/নয়টার পর নাজিয়ার প্রেশার কিছুটা কমেছে, তারপরই ছেলে বাবুকে তার পাশে নিয়ে আসা হয়েছে। দু-তিন ঘন্টা অপেক্ষা করে যখন দেখলো প্রেশার অনেকটা স্বাভাবিক, তখন ডাক্তার তার ব্যাপারে আশংকা মুক্ত হলো। সবার আগে আরাফ দেখা করেছে নাজিয়ার সাথে। অবশ্য ডাক্তার তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করার জন্যই ডেকেছিলো। পরে ডাক্তার চলে গেলে সে তার সাথে কথা বলার সুযোগ পেল। কেবিনের একপাশে নার্স ছিলো। সে ছেলে বাবুর ড্রেসিংয়ে ব্যস্ত। আরাফ নাজিয়ার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে নিচু স্বরে বললো,
– আলহামদুলিল্লাহ, দুইটা বাবু এসেছে আমাদের ঘরে। জানো তুমি?
নাজিয়া পলক ফেলে মুখে একটু হাসির রেখা টানার চেষ্টা করলো। বিপরীতে আরাফ ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
– বাবুদের আম্মুর কেমন লাগছে এখন?
নাজিয়া কম্পিত কন্ঠে বললো,
– আলহামদুলিল্লাহ।
আরাফ নার্সের দিকে একবার তাকিয়ে নাজিয়ার কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিলো নার্সের দৃষ্টির অগোচরে। নাজিয়া বললো,
– বাবুরা কেমন আছে?
– ভালো।
– বাবুদের আব্বু ভালো আছে?
আরাফ ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে চোখে হ্যাঁ সূচক পলক ফেললো। নাজিয়া তার বাবামায়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই আরাফ নার্সের কাছে জিজ্ঞাসা করে বাকিদের দেখা করতে বললো। তারা সবাই দেখা করলো। চোখে পানি থাকলেও নাজিয়ার মুখে হাসি দেখে এখন সবার মুখেই হাসি লেগে আছে। নাহিদাও এতোক্ষণ যাবত অপেক্ষা করছিলো নাজিয়াকে ও বাবুদের দেখার জন্য। আপুর সাথে কথা বলার পর ছেলে বাবুকে কোলে নিয়েছিলো। মেহেদী নাফিসার কাছে তাজকে দিয়ে নাহিদার কানে কানে কিছু বললো! “এভাবে দেখছো কেন গো? চিন্তা করো না, নেক্সট ইয়ারে আমরাও নাহয় ছেলে বাবু চাইবো আল্লাহর কাছে। কেমন? তাজেরও তো একটা ভাই দরকার!”
ফলশ্রুতিতে নাহিদা চোখ রাঙিয়ে তাকালো এবং মেহেদী মুখে দুষ্টুমি হাসি ঝুলিয়ে বেরিয়ে গেলো।
অনেকে নাজিয়ার দিকে মনযোগী হলেও অন্যপ্রান্তে থেকে তাদের খুনসুটি লক্ষ্য করছিলো নাফিসা। এখানে আসার পর থেকেই কয়েকবার লক্ষ্য করেছে তাদের দিকে। আর যখন কানে কানে কিছু বলছিলো তখন সে ইমরানকে খোচা মেরে দেখাচ্ছিলো যে তাদের মাঝে সব ঠিক আছে। নাফিসা তাকে মুখে কিছু বলেনি ঠিক কিন্তু তার ভাবভঙ্গিতে ইমরান স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে সে এটাই বুঝাতে চাইছে। ইমরান কিছু বললো না। একটু পর মেহেদী কেবিনে এসে নাহিদাকে মৃদু স্বরেই বললো,
– বাসায় যাবে না? এগারোটা বেজে যাচ্ছে তো। এখানে প্রয়োজন না হলে বাসায় চলে যাওয়া ই ভালো হবে। স্পেশালি বাবুর জন্য। কাল সকাল সকাল না হয় আবার এসো?
– হুম, যাবো।
নাহিদা বলতে বলতে ওদিকে রুমানা বেগম শুনে বললো,
– হ্যাঁ, তোর অযথা এখানে থাকার প্রয়োজন নেই। এতো মানুষ হসপিটালে থাকাও ঠিক না। রাত বেশি হয়ে গেছে, সাবধানে চলে যা। মেহেদী, আর দেরি করো না।
তারা বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে। এগিয়ে দিতে সাথে গেলো ইমরান ও নাফিসা। কথা বলতে বলতে বের হচ্ছে এমন সময় আশিকের সাথে দেখা! আশিক রক্ত দান করে বাসায় গিয়েছিলো বিশ্রামের জন্য। এরপর শপিংমলে গিয়েছিলো বাবুর মশারীসহ কিছু আসবাব আনতে। এখন মেহেদীকে দেখে হ্যান্ডশেক করলো। সাথে নাহিদাকেও জিজ্ঞেস করলো,
– কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন, ভাইয়া?
– আলহামদুলিল্লাহ।
অত:পর নাফিসার কোলে থাকা তাজের দিকে তাকিয়ে নাহিদাকে জিজ্ঞেস করলো,
– মেয়ের নাম কি রেখেছো?
– মার্জিয়া নুসরাত তাজ।
– সুন্দর নাম।
এদিকে নাফিসা জবাব দিলো,
– সুন্দর দেখে তো রাখছেই!
আর আশিক বললো,
– হু, তাইতো আপনি হিংসায় ফেটে যাচ্ছেন! সবাই সুন্দর সুন্দর নাম রেখে ফেলছে যার ফলে আপনার মেয়ের জন্য নামের অভাব পড়ে যাচ্ছে! দেখবো নে, নিজের মেয়ের নাম কি রাখেন! ভাইয়া, আসি তবে। বাসায় যেয়েন, আল্লাহ হাফেজ।
মেহেদী জবাব দিলো,
– ওকে, আল্লাহ হাফেজ।
নাফিসার কথায় প্রত্যুত্তর করে আশিক মেহেদীকে বিদায় দিয়ে চলে গেলো! আশিকের কথায় সবার মুখে হাসি থাকলেও নাফিসার মুখ কাচুমাচু! বাদড়টা যেন সবসময় তাকে পঁচাতে প্রস্তুত থাকে! যদি পারতো, চিড়িয়াখানায় রেখে আসতো এই বাদড় দেবরটাকে! শুধুমাত্র ইমরানের জন্য পারে না সে এক ধাপ এগিয়ে যেতে! নতুবা এই আশিক্কার খবর নিয়ে ছাড়তো!
নাহিদা, মেহেদী চলে গেলে তারা দুজন কেবিনের দিকে হাটতে লাগলো। নাফিসা বললো,
– দেখছো তোমার ভাই আমার সাথে কেমন শত্রুতা করে! আমি নাকি নাম নিয়ে হিংসা করি! এটা যদি আমার মেয়ের নাম বলতাম তো নিশ্চিত যা তা বলে পঁচিয়ে ফেলতো! আর কি সুন্দর করে তাদের জিজ্ঞেস করলো কেমন আছে! আমিও তো তার বেয়াইন প্লাস ভাবি! অথচ আমার ক্ষেত্রে ভালো মন্দ দূরে থাক, সালাম দিয়েই ঝগড়া শুরু করে! কতটা বজ্জাত তোমার ভাই! দেখেছো!
– তুমি ভাবি বলেই তো এমন করে!
– শুধু কি ভাবি! বিয়ের আগেও সবার সাথে ঠিকই ভালো ব্যবহার আর আমার সাথে ঝগড়া! কি যে ক্ষতি করছি আমি সেটাই বুঝি না! আপুও তো তার বেয়াইন ছিলো তখন, কই আপুর সাথেও তো আবার ভালো ব্যবহারই ছিলো!
ইমরান স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে যেন কিছু ভাবলো তারপর উত্তর দিলো,
– ওইযে, আগেই তো বলেছি তোমাদের সম্পর্কে তোমার চেয়ে আমি বোধহয় একটু বেশিই জানি!
– মানে!
– কিছু না, বাদ দাও।
– বাদ দিবো কেন! এমন অর্ধেক কথা বলবে না আমার সামনে! যেটা বলতে পারবে না সেটা তুলবেই না!
– তাইতো বাদ দিতে বললাম। প্রথমে ভেবেছিলাম জানো। এখন জানোনা যেহেতু আর জানার প্রয়োজন নেই। পুরোনো কথা তুললে জটিলতা বাড়ে।
– তুমি না বলছো আপুর সাথে ভাইয়ার আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভালো না! দেখালাম তো তার প্রমাণ! আর কতো ভালো হতে হবে!
– তুমিও তো দেখছো এবং বলছোও!
– হু, বলছি। ওটা হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য ছিলো। আমরা যেমন একদিনে মিটিয়ে ফেলতে পারি ওরা হয়তো পারেনি। তবে এখন পেরেছে তো?
– হয়তো। আর ভালো থাকলেই ভালো। সবাই চায় সংসার সুখের হোক। কেউ তো আর অশান্তির জন্য সংসার বাধে না।
– সেটাই। তোমার ভ্রান্তি দূর করলাম প্রমাণ দেখিয়ে।
– এহ! কি আমার উকিল বউটারে!
নাফিসা ভেঙচি কেটে কেবিনে প্রবেশ করলো। মায়ের কাছ থেকে বাবুকে কোলে নিলো। কিছুক্ষণ রাখার পর ইমরানের কাছে দিতে যাবে দেখলো ইমরান বেরিয়ে যাচ্ছে তার বাবা ও আরাফের সাথে কথা বলতে বলতে। এদিকে আশিক এসে তার কাছ থেকে নিয়ে নিলো। আশিক নিয়েছে দুই মিনিটও হয়নি, নার্স এসে বাচ্চাকে নিয়ে গেলো! আর নাফিসা হেসে উঠলো! আশিক তাকে হাসতে দেখে বললো,
– হাসেন? ভাবি, আপনার বাচ্চাকাচ্চাদের একদিনও কোলে নিবো না। দেখে নিয়েন।
– লাগবে না আপনার কোলে নেওয়া! হুহ্, যেনো আমার বাচ্চাকাচ্চা তার কোলে উঠার জন্য বেহুশ হয়ে যাচ্ছে!
– হবে না আবার!
– হু, উল্টাইবো!
আশিক হেসে উঠলো। নাফিসা নাজিয়ার পাশে এসে বসলো। মা কথা বলছে আর সে-ও শুনছে। কিন্তু ভাবছে অন্যকিছু! ইমরান কিসের অতীত বললো যেটা সে জানে না!

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ১১৩
(নূর নাফিসা)
.
.
সাড়ে এগারোটা বেজে গেলে তাদের এদিকে থাকা নিষিদ্ধ হয়ে গেলো! দুজনের বেশি থাকা যাবে না কেবিনে। বাকিদের চলে যেতে হবে নতুবা ওয়েটিংরুমে অবস্থান করতে হবে। রুমানা থাকবে আর নাফিসাও থাকতে পারে কিন্তু নাফিসা থাকবে না৷ এখানে ঘুমানোর ব্যবস্থা নেই। আর যতটুকু প্রয়োজন পড়তে পারে মা-ই সামলে নিতে পারবে। শুধু শুধু সারারাত এখানে বসে বসে বোর হওয়ার চেয়ে ভালো তাদের সাথে গিয়ে সময় কাটানো। তাই চলে গেলো। যাওয়ার পথে উপর তলায় মেয়ে বাবুটাকে দেখতে চেয়েছিলো। কিন্তু সেই সুযোগ হলো না এখন। ইমরান বাইরে গিয়ে খাবার নিয়ে এসেছিলো। মায়ের জন্য কেবিনে পাঠিয়ে দিয়ে তারা ওয়েটিং রুমে বসে খেয়ে নিলো। সবাই কথা বলছে আর নাফিসা ঝিমাচ্ছে। ইমরান নিচু স্বরে বললো,
– বাসায় চলে যাবে?
– না, এতো রাতে বাসায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
– ঘুমে তো একটু পর দেখবো মেঝেতে পড়ে আছো!
নাফিসা ঠোঁটের এক কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
– চলো একটু ওদিক থেকে ঘুরে আসি৷
ইমরান উঠে পড়লো। বাইরের দিকে হাটছে দুজন। হঠাৎই নাফিসার মনে পড়লো জিহানের ভাইয়ের কথা! দুদিন আগে পরিপূর্ণ বয়সে জিহানের ভাই হয়েছিলো। মা বাচ্চা উভয়েই সুস্থ আছে। দুদিন হসপিটালে কাটিয়ে আজ তাদের নানাবাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো। নাফিসা ইমরানকে বললো,
– ফোনটা দাও তো, ভাবির সাথে কথা বলি।
– কেন?
– জিজ্ঞেস করি, তারা হসপিটাল থেকে চলে গেছে নাকি!
– সারাদিন খবর নেই, এতোক্ষণে আসছে খবর নিতে!
– সারাদিন কি অবস্থায় ছিলাম তুমি জানো না?
– তো এখন কল করতে হবে! সকালে করা যাবে না?
– এখন মনে হয়েছে তো জানবো না!
– চলে গেছে তারা বিকেলেই।
– আম্মা গেছেন সাথে?
– না, বাড়ি ফাঁকা তাই মা আমাদের বাড়ি চলে গেছে।
– দাও, বাবুর কথা জিজ্ঞেস করি।
– সবাই ভালো আছে। এতো রাতে বিরক্ত করার প্রয়োজন নেই। সকালে কথা বলো।
– ওকে। এই, তুমি কিসের অতীতের কথা বলছিলে তখন?
ইমরান বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
– কোনো একটা কিছু মাথায় সাড়া দিলে তার শেষ না জানা পর্যন্ত শান্তি নেই! সারাদিন মাথায় ঘুরপাক খায়! তুমি ওকালতি পড়লে না কেন?
– ধুর! বলো না…
– না, চুপ। এসবে আর ঘাটাঘাটি করবে না। মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।
– এটা ঢুকছে যেহেতু এখন আর বের হবে না। বলো..
– কফি খাবে?
– ধুর! আমি তোমাকে কি বলছি! বলো.. কারো কাছে কিছু বলবো না। তোমার কাছেও তুলবো না, নিজেও ভাববো না। শুধু জানবো।
তার জোরাজুরিতে এবার ইমরান বলে দিলো,
– আশিক নাহিদা আপুকে পছন্দ করতো। এটা জানতে তুমি?
নাফিসা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে! ইমরান আবার বললো,
– এখানেই পার্থক্য তোমাদের সাথে তার আচরণের। নতুবা আশিক সবার সাথেই কমবেশি দুষ্টুমি করে।
নাফিসা এবার চুপচাপ হাটছে! আর ভাবছে এমন কিছু তার নজরে পড়েছে কি-না! সে তো তার আপু সম্পর্কে বেশ ভালো জানে। বলা যায় একসাথে চলাফেরা, খাওয়াদাওয়া, ঘুমানো সব আর সব! তাহলে সে কিছু জানতো না কেন! তার নজরে তেমন কিছু পড়েনি কেন! ইমরান কি সত্যি বলছে! মিথ্যেই বা বলবে কোন স্বার্থে! সে তো অন্যের ব্যাপারে এতো মাথা ঘামায়ও না, মিথ্যেও বলে না। একটু পর নাফিসা বললো,
– এখনো কি পছন্দ করে?
– পছন্দ তো পছন্দের জায়গাতেই আছে। এখন সে নিজেও বিয়ে করে নিয়েছে অন্যদিকে আপুরও সংসার আছে। ওসব ভেবে লাভ আছে!
– আমি আমার আপুকে যতদূর চিনি, আপু এসব রিলেশন পছন্দ করে না।
– হ্যাঁ, আশিক পছন্দ করতো কিন্তু আপু না। এক পাক্ষিক ছিলো ব্যাপারটা।
– ওহ! তাহলে তো হতেও পারে মেহেদী ভাইয়া জানতো আর আশিক ভাইয়াকে দেখেই সেদিন ভার্সিটিতে এমন রাগারাগি করেছে।
– হুম, হতেও পারে। কিন্তু আমিও তো ছিলাম সেখানে। ওটা একটু লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন ছিলো যে, ছোট বোনের হাসব্যান্ডের সামনে এভাবে বললে তার ওয়াইফ লজ্জায় পড়বে।
– হুম। কিন্তু জানো তো, ভাইয়া একটু এলোমেলো টাইপের। প্রথম প্রথম দেখে মনে হয়েছিলো অহংকারী! কিছুদিন যেতেই মনে হয়েছিলো একেবারে বাচ্চা টাইপের! মানে তোমাদের বয়সে বড় হলেও তোমাদের মতো এতো ম্যাচিউর মনে হয়নি। এমনিতে অনেক দুষ্টুমি করতো আর বাবামায়ের সামনে যেন ভেজা বিড়াল! লজ্জায় যেন মুখ থেকে কথা ই বের হয় না! এখনো কিন্তু বাবামায়ের সাথে তোমাদের মতো তেমনভাবে মিশুক না। তবে তার পরিবারের সাথে অনেক দুষ্টুমি করতে দেখা যায়৷ তাজ আসার পর তো কেমন একটা দায়িত্বশীল ভাব চলে এসেছে যা চেহারাতেই প্রকাশ পায়। কিন্তু দুষ্টুমি বোধহয় আগের মতোই আছে। আর আপুর কাছে জেনেছি ভাইয়া বাচ্চাদের অনেক ভালোবাসে। তো এখন নিজের মেয়ে আছে, কতোটা কেয়ারিংয়ে থাকে বুঝো এবার। আজই দেখো, এই সন্ধ্যায়ই তাজকেসহ আপুকে নিয়ে চলে এসেছে। এতোক্ষণ যাবত থেকে এই রাতেই আবার নিজ দায়িত্বে নিয়ে গেলো। এখানে কি আপুর প্রতিও কেয়ারিং প্রকাশ হয়নি? বাচ্চাকে নিয়ে এতোক্ষণ থাকা অব্দি রাগও তো দেখাতে পারতো। আর আশিক ভাইয়া যেহেতু আপুকে পছন্দ করতো সেহেতু আমার মনে হয় আপু সব জানিয়ে দিয়েছে। যেমনটা আমি তোমাকে সবটা জানাই বা তুমি তোমার সম্পর্কে আমাকে সবটা জানাও। তাইতো আজ আশিক ভাইয়ার সাথে কথা বলার সময়ও কোনো পার্শপ্রতিক্রিয়া নজরে পড়লো না! সেদিন ইফতারের দাওয়াতে আপুদের বাসায় কি যায়নি তারা?
– হ্যাঁ, গিয়েছিলো।
– তো! কোনো প্রব্লেম থাকলে নিশ্চয়ই যেতো না।
– হুম। আগে থাকলেও হয়তো তখন ছিলো না। আর আমি তো নিশ্চিত ভাবে বলিনি কিছু। তুমি যতটুকু জানো সেটা থেকেই তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কে বেশি সুখী, আর আমি যতটুকু জেনেছি ততটুকু থেকেই বলেছিলাম। এখানে তো তাদের কাউকে সামিল করার প্রয়োজন নেই। সবাই যার যার জায়গায় ভালো থাকুক। তোমাকে ভালো রাখতে পারলেই কেবল আমি স্বামী হিসেবে সার্থক। এখন পারি কি পারিনা সেটা অবশ্যই তুমি বিচার করবে। আর আমার মতে, তেমনই হওয়া উচিত প্রত্যেকটা মানুষের।
ইমরানের কথার বিপরীতে নাফিসা মুচকি হাসলো। ইমরান বললো,
– এমন পেচিয়ে হিজাব পড়ে আছো, খারাপ লাগছে না?
– সত্যি বলবো? মাথাটা একটু ব্যথা করছে। খুলে ফেলি?
ইমরান আশেপাশে তাকিয়ে মানুষের আনাগোনা কম দেখে বললো,
– ওকে।
নাফিসা হিজাব খুলে নরমাল ওড়নার মতো মাথায় ঘোমটা দিয়ে হাটতে লাগলো। ইমরান দুই কাপ কফি নিয়ে এসেছে পাশের কফিশপ থেকে। প্লাস্টিকের কফি কাপে তারা চুমুক দিতে দিতে এই রাতের শহরের দৃশ্য উপভোগ করে নিলো। খাওয়া শেষে আবার চলে এলো বাকিদের কাছে। সারারাত আর ঘুম হয়নি কারো। নাফিসা পেছনের সিটে বসে ইমরানের কাধে মাথা রেখে হেলান দিয়ে দুই ঘন্টার মতো ঘুমিয়েছিলো। ইমরান তাকে ঘুমানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই পেছনের সিটে বসেছিলো।
সকাল হতেই আয়েশা বেগম চলে এসেছে নাতি নাতনিকে দেখতে। দুইটা বাচ্চা হওয়ায় তিনি যেন খুশিতে আপ্লুত! কাল বাড়ি জনশূন্য থাকায় তিনি এবং আলফাজ সাহেব আসেননি। তবে আজ চলে এসেছে কিছু নাস্তা নিয়ে। ওদিকে নাহিদাও মেহেরুনের সাথে হসপিটালে এসেছে নাস্তা নিয়ে। তারা বাবা ছেলে অফিস গেছে আর ড্রাইভারকে গাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে তাদের। দশটার পর তারা মেয়ে বাবুকে দেখতে পেয়েছে কিন্তু দূর থেকে। অত:পর নাফিসাকে নিয়ে ইমরান বাসায় চলে গিয়েছিলো। ইমরানকে অফিস যেতে হবে। আরমান হসপিটাল এসে দেখা করে গেছে তাদের সাথে।
আজ আর ইমরান নাফিসা কেউই যায়নি হসপিটাল। জেরিন যেহেতু তার বাবার বাড়িতে আছে সেহেতু নাফিসা নাজিয়ার কথা বলে শ্বাশুড়িদের কাছ থেকে এক মাসের ছুটি নিয়ে নিলো। ইমরানের কাছে গত রাতেই বলেছিল, ইমরান আপত্তি করেনি। কেননা নাজিয়া দুই বাচ্চা নিয়ে সেখানে যাবে, তার মা নিশ্চয়ই একা তিনজনের দেখাশোনা করতে পারবে না! সংসারের টানাটানিও তো আছে বেশ! বড়মা যেহেতু নাফিসাকে অনুমতি দিয়ে দিলো আবিদা বেগম আর নিষেধ করেনি। বোনের আপদে বিপদে যাবেই সেটা স্বাভাবিক মনে করেছেন তিনি। কেননা তিনি নিজেও যান তার বোনের কাছে। তবে কয়েকবার একটা কথাই বলেছেন যে, রুমানা বেগম পারবে না যখন তো আরাফের বাড়িতে রাখলেই পারতো। তার বোন আয়েশা বেগমও তো বারবার বলেছিলো নিজের কাছেই রাখবে! তো শুধু শুধু নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কি প্রয়োজন ছিলো তার বাবামায়ের!
আবিদার এ ধরনের কথা পছন্দ হয়নি নাফিসার কাছে। কেননা তার মা তো আর তাকে ডেকে নিচ্ছে না। সে না গেলেই কি নাজিয়ার যত্নাদি কম করবে তার মা! সে তো নিজ থেকেই মায়ের কষ্টটা বুঝতে পেরে যেতে চাইছে। আর আয়েশা বেগমই বা কেমন যত্ন নিবে! তিনিও তো একা মানুষ! যদি নাতি নাতনি নিয়ে পড়ে থাকে তো বাকি কাজে তো নাজিয়াকেই নজর দিতে হবে! আর নাজিয়া কি পারবে অসুস্থ শরীর নিয়ে এসব করতে, সে দিকটা একবার ভাবলো না আবিদা বেগম! তাছাড়া মাঝে মাঝে দেখে আসার জন্য নাফিসাও তো যাবে না নাজিয়ার শ্বশুর বাড়িতে। আবিদা বেগমের উক্ত কথাটুকু একাধিকবার উল্লেখ হলেও নাফিসা তা নিয়ে কিছু বলেনি। কেননা এখন এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। তার যাওয়াটা প্রয়োজন, তাকে যেতে দিলেই হয়।
হসপিটালে ছয়দিন কাটিয়ে নাজিয়া বাড়ি ফিরেছে। সাথে আয়েশা বেগমও এসেছেন নাজিয়ার বাড়িতে। কিন্তু মেয়ে বাবুকে হসপিটালে রাখা হয়েছে বিশেষ ট্রিটমেন্টের জন্য। আরাফ দিনে দুইবার যাচ্ছে মেয়েকে দেখতে। রাতে তার এদিকেও থাকাটা প্রয়োজন সেদিকেও থাকাটা প্রয়োজন! একা মানুষ থাকবে কি করে দু জায়গায়! আর হসপিটালে বাবুর পাশে একটা মেয়েলোক থাকলে বেশি ভালো হয়। তাই ইমরান নিজেই ঠিক করলো নাফিসাকে সেখানে থাকতে হবে। তারা চলে যাওয়ার পর প্রথমদিন আশিক একা থেকেছিলো। পরদিন থেকে নাফিসা আছে সেখানে। দিনে আশিক ও আরাফের আসাযাওয়া আছে। আর রাতে ইমরান আর নাফিসা থাকে। মেয়েটার অবস্থার কোনো উন্নতি দেখছে না! তা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত আরাফ! আর নাজিয়াও এখন পর্যন্ত এক বারের জন্য তার মেয়েকে কাছে পেল না! হসপিটাল থেকে আসার সময় কাছ থেকে একবার দেখে এসেছে কিন্তু কোলে নেওয়ার সুযোগ হয়নি। বাসায় বসে বসেও সে প্রতিক্ষণ চিন্তায় থাকে। তার মেয়েটা সুস্থভাবে ফিরবে তো তার কাছে!
বউ বাচ্চাদের নিয়ে হসপিটালে থেকে সঞ্চিত টাকা ব্যয় করে হাতটান পড়ে গেছে আরাফের! যা সঞ্চয় ছিলো, সবাই যদি সুস্থ থাকতো তবে তাতেই পুষিয়ে নেওয়া যেতো। কিন্তু মেয়েটার কন্ডিশন ও এক্সট্রা ট্রিটমেন্টের জন্য তার সঞ্চয় নেই আপাতত! তাই সে আশিকের কাছ থেকে কিছু নিয়েছে আর ইমরানের কাছে ধার চেয়েছিলো। ইমরান তার সঞ্চিত অর্থ ব্যাংক থেকে তোলার আগেই নিয়াজ উদ্দিন এগিয়ে এসেছেন আরাফের হাতটান দূর করতে। তার পেনশনের টাকা থেকে তিনি নাতনির সকল খরচের ভার বহন করতে চাইলেন। এমনিতে আরাফ নিতে চায়নি। কিন্তু নিয়াজ উদ্দিন এমনভাবে আবদার রাখলেন ছেলের কাছে, যা আরাফ উপেক্ষা করতে পারেনি। আরাফ নিয়াজ উদ্দিনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়েছিল তখন। শ্বশুরের সাথে বোধহয় তার মতো বন্ধুত্ব জমাতে পারেনি কেউ! একদিকে তার বাবার চেয়েও কম না অন্যদিকে বন্ধুর চেয়েও কম না! নিয়াজ উদ্দিন নিজেও জানেন নাজিয়া ও ছেলেকে নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকলেও মেয়েকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছে আরাফ৷ যথাসম্ভব সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। কেউই চায় না তার সন্তানকে ছেড়ে দিতে! মেয়ের অবস্থার উন্নতি না দেখলেও সে আপ্রাণ চেষ্টায় আছে এবং আল্লাহর উপর ভরসা রেখে প্রার্থনা করে যাচ্ছে দিনরাত! যে কেউ তার চেহারায় লক্ষ্য করতে গেলে নিজেই ব্যথিত হয়ে যায়! নিজেকে নিয়ে ভাবার জন্য যেন একটা মিনিটও নেই তার কাছে!
অষ্টম দিন দুপুরে আরাফ হসপিটাল থেকে বাসায় এসেছে। নাজিয়া বসে আছে আর বাচ্চা ঘুমাচ্ছে দোলনায়। রুমের মধ্যে আপাতত আর কেউ নেই। আরাফ তার পাশে এসে বসলো। নাজিয়া হাত বাড়িয়ে তার চুলে নাড়াচাড়া করে বললো,
– গোসল করবে না?
– হুম।
– হসপিটালে নাফিসার সাথে কে আছে এখন?
– বাবা আছে। একটু পর আশিক যাবে তখন বাবা চলে আসবে। সন্ধ্যায় আবার ইমরান যাবে।
– দেখেছো, কতগুলো মানুষ কষ্ট করে যাচ্ছে আমাদের জন্য!
আরাফ ঠোঁটের এক কোনে জোরপূর্বক হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে নাজিয়ার সামনে আসা চুল কানের পেছনে গুজে দিলো। নাজিয়া আবার বললো,
– মেয়েটা কেমন আছে?
– আলহামদুলিল্লাহ।
– তাহলে হসপিটাল থেকে ছাড়ছে না কেন এখনো?
– এতো টেনশন করছো কেন তুমি? ছেড়ে দিবে দু এক দিনের মধ্যে।
– সেদিনই না বললো দু একদিনের মধ্যে ছাড়বে! তাহলে এখনো কেন দুএক দিন বাকি!
ইতোমধ্যে নাজিয়ার চোখ ভেজা হয়ে গেছে। আরাফ এগিয়ে এসে আলতোভাবে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– এতো টেনশন করছো কেন তুমি! ডাক্তার সব বুঝেই তো রাখছেন।
নাজিয়া আরাফকে যথাসম্ভব ঝাপটে ধরে কান্নার সাথে বললো,
– টেনশন তুমিই কম করছো কোনদিক থেকে! আমার ভীষণ ভয় করছে আরাফ! আর ভালো লাগছে না! কত সহ্য করা যায়! আল্লাহ আর কতদিন ধৈর্যের পরীক্ষা নিবে!
আরাফ বলার মতো কিছুই খুজে পাচ্ছে না! তার ভেতরটায়ও ভয় চেপে আছে। নাজিয়ার কান্নার শব্দ আন্দাজ করতে পেরে রুমানা বেগম এসেছিলো দরজার কাছে। আরাফকে পাশে দেখতে পেয়ে আবার চলে গেছেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আরাফ নাজিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
– কাদছো কেন তুমি! সব ঠিক আছে। আল্লাহ ভালো রেখেছেন আমাদেরকে। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি আমরা। নিরাশ হয়ে যেয়ো না কভু৷ আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। বাবুদের আম্মু, সোজা হও। এমন করলে প্রব্লেম হবে তোমার। বাথরুমে কেউ আছে?
নাজিয়া আরাফকে ছেড়ে চোখ মুছে বললো,
– আম্মা, গোসল করতে গিয়েছিলেন।
– বাবু কখন ঘুমিয়েছে?
– দশ পনেরো মিনিট হবে।
এমনি আয়েশা বেগম রুমে এলেন। আরাফকে দেখে বললো,
– মাইয়ারে দেইখা আইছস?
আরাফ বসা থেকে উঠে জবাব দিলো,
– হ্যাঁ, মা।
– ভালো আছে?
– আছে, আলহামদুলিল্লাহ।
– বাড়িতে আনবি কবে?
– দুএক দিনের মধ্যেই।
– যা, গোসল কর। আর বিকালে সময় পাইলে বাড়িতে গিয়া ঘুইরা আইছ। আয়াত একা আছে। জামাই নাকি আসবো, আসে কি-না কে জানে! তোর বাপেই আর কতক্ষণ বইসা থাকে ঘরে!
– আচ্ছা।
চলবে।