তৃ-তনয়া পর্ব-৫৭+৫৮+৫৯

0
716

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ৫৭
(নূর নাফিসা)
.
.
সকালে ইমরান কল করেছে নাফিসার ফোনে। নাফিসা রিসিভ করে সালাম দিলো। ইমরান সালামের জবাব দিলো এবং বললো,
– কি করছো?
– ফোন কি আমার প্রেত রিসিভ করেছে যে আপনার জানা নেই কি করছি আমি!
ইমরান হেসে বললো,
– সত্যিই জানি না আমি।
– আপনার সাথে কথা বলছে কে?
– আমার বউ।
– তো কাকে জিজ্ঞাসা করেছেন কি করছে?
– আমার বউকে।
– তাহলে বুঝতে পারছেন না আপনার সাথে ফোনে কথা বলছি!
– এ…ই…টুকু উত্তর এতো পেচিয়ে পেচিয়ে বললে!
– আপনি তো কচি খোকা, তাই ভেঙে ভেঙে বুঝিয়ে দিলাম!
ইমরান আবারও হেসে বললো,
– যাক, এখন বলো বুড়িটার কি আজ এক্সাম নেই?
– কিসের এক্সাম?
– তোমার না ইনকোর্স এক্সাম চলছে?
– তো?
– যাবে না ভার্সিটিতে?
– না।
– কেন?
– এমনি।
– আজ এক্সাম নেই?
– আছে।
– তাহলে যাবে না কেন?
– এক্সাম দিয়ে কি হবে! পড়াশোনা করবো না।
– কেন?
– সব কিছুতে কেন খুজেন কেন! ইচ্ছে হয়েছে আমার, তাই করবো না।
– বোকামি করো না। এক্সাম দিতে যাও।
– দিবো না।
– নাফিসা, এখন জেদ করছো পরে কিন্তু আফসোস করবে। আর তখন সুযোগ থাকবে না। সুযোগ হাতছাড়া করো না।
– করবো না আফসোস।
– তবুও, পড়াশোনা করতে হবে। আমার বউ অবশ্যই প্রকৃত এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে শিক্ষিত হতে হবে।
– তো করতেন শিক্ষিত মেয়েকে বিয়ে। আমার মতো এমন মূর্খকে বিয়ে করেছেন কেন!
– কথার মোর অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিচ্ছো কেন! তুমি এখনো শিক্ষিত, তবে আমি চাই নিজের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত করো। আমি নিতে আসবো ভার্সিটি পৌছে দেওয়ার জন্য?
– না। দেবো না এক্সাম। রাখি এখন। আল্লাহ হাফেজ।
ইমরানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নাফিসা কল কেটে দিলো। ইমরান আবার কল করলো তবুও সে কেটে দিলো। ফোন সাইলেন্ট করে তারপর বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। রুমানা বেগম রান্না করছে। নাফিসা তার বাস্তবায়নকৃত প্রথম উদ্যোগের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চলে গেলো। খামারের মুরগি প্রায় অনেকটা বড় হয়েছে। তিন-চার দিন পরে বেচে দেওয়া যাবে। নাজিয়া ঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে বললো,
– নাফিসা?
– কি?
– তোর নাকি এক্সাম আছে? ভার্সিটি যাবি না?
– না।
– কেন?
– এমনি। এক্সাম দিবো না।
– পাগল হয়ে গেছিস! রেডি হয়ে ভার্সিটি যা।
– পড়াশোনা শেষ আমার। অনেক হয়েছে, আর লাগবে না।
– একটা মাইর দিবো! যাস না?
নাফিসা তার কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো না। নাজিয়া ফোনে কাউকে নাফিসার বলা কথাগুলো বলতে বলতে আবার ঘরের ভেতরে চলে গেলো। নাফিসা নিশ্চিত ইমরান নাজিয়ার কাছে কল করেছে! এতে লাভ হবে নাকি! বলেছে তো বলেছেই! যাবে না সে এক্সাম দিতে!
.
নিয়াজ উদ্দিন বাজার থেকে ফিরেছে। নাফিসা নাস্তা দেওয়ার জন্য প্লেট ধুয়ে ঘরে যাচ্ছিলো। এমন সময় ইমরান উপস্থিত। নাফিসা বিড়বিড় করে বললো, “আরেকটু আগে এলে তো আরেকটা প্লেট বেশি নিয়ে বের হতাম!”
ইমরান তার বিড়বিড় শুনে ব্রু হালকা কুচকে হাসিমুখে বললো,
– থাক, আর কষ্ট করতে হবে না। খেয়ে এসেছি আমি।
– তো এসেছেন কেন?
– তোমাকে নিয়ে যেতে।
– আজ যাবো না আমি।
– বাসায় না, ভার্সিটিতে নিয়ে যেতে এসেছি।
– কোথাও যাবো না।
– চুপচাপ রেডি হও গিয়ে।
কথা বলতে বলতে ঘরে প্রবেশ করে রুমানা, নিয়াজ উদ্দিন ও নাজিয়ার দেখা পেয়ে সালাম দিলো ইমরান। নিয়াজ উদ্দিন বললেন,
– আরে, ইমরান যে! সঠিক সময়ে এসেছো। আরেকটু দেড়ি হলে আফসোস করতাম। এসো একসাথে খাই।
– বাবা, আমি খেয়ে এসেছি।
– এ কেমন কথা! এমন সময় কেউ খেয়ে আসে!
ইমরান মৃদু হেসে বললো,
– এখন আসতাম না। কিন্তু এসেছি একটু বিশেষ প্রয়োজনে। নাফিসাকে নিয়ে যাবো।
নিয়াজ উদ্দিন একটু বিস্মিত হয়ে বললো,
– এখন!
– বাসায় না, ভার্সিটিতে তার এক্সাম চলছে।
তাদের কথার মাঝখানে নাফিসা বলে উঠলো,
– আমি যাবো না।
ইমরান বললো,
– নাফিসা এটা ইনকোর্স এক্সাম। না দিলে সমস্যা হবে।
– কিসের সমস্যা হবে! আমি ভার্সিটিতেই যাবো না আর!
নিয়াজ উদ্দিন বললেন,
– এটা কেমন কথা নাফিসা! এক্সাম দিবে না কেন! তাছাড়া তুমি কি ইমরানের কথা অমান্য করো?
বাবার কথায় কিছুটা অসম্মানিত বোধ করে নাফিসা নতস্বরে কথার মোড় ঘুরিয়ে বললো,
– বাবা, আমি কোনো প্রিপারেশন নিতে পারিনি এক্সামের জন্য! গতদিন গুলোতে কিছুই পড়িনি। আগে যা পড়েছি সব ভুলে গেছি। তাহলে এক্সাম দিবো কি করে!
ইমরান তার চালাকি ধরতে পেরে বললো,
– প্রিপারেশন লাগবে না। এক্সাম হলে এটেন্ডেসটা দাও অন্তত। পরে ফাইনালের জন্য প্রিপেয়ার হবে। এখন এটেন্ডেস না দিলে ফাইনাল এক্সাম দিতে পারবে না।
নাফিসা বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ইমরানের দিকে! নিয়াজ উদ্দিন একটু কড়াভাবে বললেন,
– নাফিসা, তোমার বড় দুইবোনের বাড়ি থেকে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো নালিশ আসেনি যে তারা কারো কথা অমান্য করেছে। ভবিষ্যতে যদি তোমার নামে ইমরান ও তার পরিবার থেকে কোনো নালিশ আসে তাহলে কিন্তু খুব রেগে যাবে তোমার বাবা। ইমরান যা বলছে তা করো। নাস্তা করে ভার্সিটি যাও।
নাফিসা গোমড়া মুখু হয়ে প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে লাগলো। নিয়াজ উদ্দিন ইমরানকে বললেন,
– ইমরান, এরপর যদি কখনো বাড়ি থেকে খেয়ে আসো তাহলে কিন্তু অবশ্যই রাগ করবো।
ইমরান মৃদু হেসে বললো,
– বাবা, আমি জানতামই না এখানে আসবো। নাস্তা করে অফিসের জন্য রেডি হয়েছিলাম তখন নাফিসাকে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বললাম। সে জেদ করছিলো এক্সাম দিবে না, তাই আমাকেই আসতে হলো নেওয়ার জন্য।
– আচ্ছা, ভালো করেছো। তা কেমন এগিয়ে আছে তোমাদের স্কয়ার?
– ওটাতো দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠান, ভালোই চলছে সবকিছু।
– ভালো হলেই ভালো। বেশি খেলে তো বদহজম হবে। তা এক টুকরো মুরগির রান তো খেতেই পারো তাই না? এতটুকুর জায়গা হবে না পেটে?
বাবার কথায় কিছু মনে হতেই ওদিকে নাফিসা বললো,
– হুহ্! মুরগির রান খেয়ে কি হবে বাবা! নিজের নামের শেষেই তো রান লেগে আছে!
কথা বলে নিজেই হেসে উঠলো। নাজিয়াও শব্দহীন হেসে তার মাথায় হালকা ঠুসি দিলো ইমরানকে এভাবে লজ্জায় ফেলায়! রুমানা নাফিসাকে ছোটখাটো এক ধমক দিয়ে ইমরানকে বসতে বললো। নাস্তা করে নাফিসা বোরকা হিজাব পড়ে তৈরি হয়ে বেরিয়ে গেলো ইমরানের সাথে। রিকিশায় করে যাচ্ছে দুজন। মাঝপথে ইমরান বললো,
– নাফিসা?
নাফিসা অন্যদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তার দিকে তাকালো। ইমরান বললো,
– এ সপ্তাহের পরের সপ্তাহে বিয়ের প্রোগ্রামটা সেড়ে ফেলি?
– কেন, এক বিয়েতে স্বাদ মেটেনি?
– কি ধরনের কথাবার্তা বলছো! আমি আমাদের বিয়ের প্রোগ্রামের কথা বলছি।
– কোনো প্রোগ্রাম হবে না।
– মাথা এখনো ঠান্ডা হয়নি! একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো, আমাদের আশেপাশের কিন্তু কেউ জানেই না বিয়ের কথা। এমন প্রোগ্রাম ছাড়া চুপিচুপি বিয়ে শুনলে লোকে কি বলবে৷ তাছাড়া বাবারও কিন্তু ইচ্ছে প্রোগ্রাম করে তোমাকে আমার বাড়ি পাঠানোর।
– রাখেন আপনার লোকের কথা! এতো লোকের চিন্তা মাথায় ঘুরে কেন! আপনার সংসার কি লোকে করবে! আসছে এখানে প্রোগ্রাম করে লোকের মুখ বন্ধ করতে! তাছাড়া কে বলছে কেউ জানে না চুপিচুপি বিয়ের কথা? দেয়ালেরও কান আছে, বুঝলেন! কোনো ঘটনা সংঘটিত হলে ঘন্টার মধ্যে ছড়িয়ে যায় আর সেখানে আজ পাচ দিন! প্রোগ্রাম করলে একে তো আযব লোকের আযব কটুক্তি শুনবেন অন্যথায় পাপ কামাই করবেন! ঘরোয়াভাবে বিয়েই ভালো। কোনো গানবাজনা নেই, কোনো কোলাহল নেই, প্রোগ্রামে কোন গ্যাঞ্জামও নেই! সব নিরবতা শান্তি আর শান্তি।
ইমরান মনে মনে বললো,
“কথা তো ঠিকই বলেছো৷ কিন্তু শান্তি আর আছো কোথায়! যখন পাগলামো শুরু করো, মনে হয় একটা পাগলকে বিয়ে করেছি। কি হয় সবসময় এমন শান্ত থাকলে!
নাফিসাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে সে আবার উল্টো পথে বাসে করে চলে গেলো তার কর্মস্থলে।

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ৫৮
(নূর নাফিসা)
.
.
হলো না আর প্রোগ্রাম। নাফিসার কথাগুলো ভেবে ইমরানও প্রোগ্রাম না করা ই উত্তম মনে করেছে। যা ভাবার ভাবুক লোকে। বিয়েতো হয়েই গেছে এখন। এমনকি নাফিসা তাদের বাড়িতে থেকেছেও। এখন প্রোগ্রাম করতে গেলে লোকে রংঢং ছাড়া কিছুই বলবে না!
তাই ইমরান এমনিতেই নাফিসাকে বাড়ি নিয়ে যেতে চেয়েছে। তিনদিন পর পরীক্ষা শেষ হলে নিয়াজ উদ্দিন ইমরানের বাড়ির সবাইকে দাওয়াত করেছেন। ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মেয়েকে বিদায় করবেন বলে। নাজিয়াকে নাফিসা আর যেতে দেয়নি। তার যাওয়ার পর যেতে দিবে নাজিয়াকে।
.
শুক্রবার সকালে নাস্তা করে মেহেদী রেডি হচ্ছে কোথাও যাওয়ার জন্য। নাহিদা বললো,
– কোথায় যাচ্ছো?
মেহেদী কোনো জবাব দিলো না। নাহিদা আবারও জিজ্ঞেস করলো,
– বাবা বাসায় যেতে বলেছে আজ। যাবে না?
– তোমার বাবা বললেই চলে যেতে হবে! মানুষের আর কোনো কাজ থাকতে পারে না! ঢং পেয়েছো এগুলো, যখন ইচ্ছে ডাকবে আর তখনই ছুটে যেতে হবে! যত্তসব!
কথাটুকু বলেই বেরিয়ে গেলো মেহেদী। নাহিদার ভেতরটা জ্বালা করছে! গত কয়েকদিন যাবত মেহেদীর আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন! বাবার অসুস্থতার সময় থেকে তার সাথে তেমন কথা হতো না। হসপিটালে মুখ গম্ভীর ছিলো। মাঝে মাঝে ফোন কলে পেলে সেখানে যাবে কিনা জিজ্ঞেস করলে ব্যস্ততা দেখাতো। নাফিসার বিয়েতেও যেতে চাইছিলো না। জহিরুল ইসলাম বলাতে তারপর গিয়েছে। আগের মতো আর মজা করে না নাহিদার সাথে, একা একাই রেডি হয়ে অফিস যায়, ডাকে না আর কাউকে তার সবকিছু এগিয়ে দেওয়ার জন্য! নাহিদা স্বেচ্ছায় তাকে রেডি করতে গেলে মেহেদী সরিয়ে দেয়। দুদিন ভার্সিটি গিয়েছিলো। সে সাথে না নিয়ে রিকশাভাড়া দিয়ে গাড়ি নিয়ে অফিস চলে গেছে। এমনকি দিনশেষে কোলবালিশ ন্যায় তাকে আর কাছেও টানে না। সে কি নিয়ে এমন রেগে আছে নাহিদা বুঝতে পারছে না! এতোদিন ওবাড়িতে থেকেছে বলেই কি সে রাগান্বিত! বাবা অসুস্থ বলেই তো থেকেছিলো। অযথা তো আর পড়ে থাকেনি সেখানে! আর নিজ বাড়িতে বেড়াতে যাবে তাতে এমন রাগেরই বা কি আছে! না, এভাবে চলবে না। তার কাছেই স্পষ্ট জানতে হবে, এমন কেন করছে সে!
দুপুরের আগেই জহিরুল ইসলাম, মেহেরুন ইসলাম, মেহতাজ ও আসিফের সাথে তাদের বাড়িতে গেলো নাহিদা। মেহেদী আগেই বলে দিয়েছে তার বাবার কাছে যে, সে যেতে পারবে না। বাড়িতে আসার পর নাহিদাকে বারবার একই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে, “মেহেদী আসেনি কেন?” সঠিক উত্তর তো তারও জানা নেই! তাই সে শান্তনামূলক উত্তর দিয়েছে, “মেহেদীর জরুরী কাজ আছে। তাই আসতে পারেনি।”
আজ আয়েশা বেগমও এসেছে তাদের বাড়িতে। এতোদিন মনমালিন্য থাকলেও রুমানা বেগম আজ একটু খুশি হয়েছে তিনি এসেছেন বলে। অতীত ভুলে বর্তমান মেহমানদের নিয়ে মেতে উঠেছেন আজ। তবে আয়াতও আসেনি আশিকও আসেনি! সারাদিন আয়োজন শেষে সন্ধ্যায় তিন মেয়ে তিন বাড়িতে চলে গেছে। বাড়ি আজ ফাঁকা! আছে শুধু দুজন পিতামাতার নিস্তব্ধতা আর বাইরে ঝিঝি পোকার গুঞ্জন।
ঘর শূণ্য, দুয়ার শূন্য, শূন্য জনক-জননীর মন!
ক্ষণে পূর্ণতা, ক্ষণে শূন্যতা কাদায় ভীষণ!
যুগে যুগে লালিত তনয়া হায়,
আজ অন্যের ঘরে পূর্ণতা আনতে পাড়ি জমায়!
যেতে নাহি দিব হায়, তবু চলে যেতে হয়!
তবুও চলে যায়!
.
বহুদিন পর আজ মানুষটার চেহারা মনযোগ দিয়ে দেখছে। কতদিন দেখে না তাকে, কতদিন থাকে না তার পাশে, কতদিন হলো হয়না মনের সাথে মনের আলাপন! কিন্তু আজ! আজ হয়তো সেই অতৃপ্তিতে তৃপ্তি আনার সময় এসেছে। ক্লান্তিকর ও বিষন্নতায় আচ্ছন্ন মুখে আজ অন্যরকম আনন্দ ভেসে আছে তার। হয়তো এই আনন্দ খালি চোখে দেখা দুষ্কর! কিন্তু যদি কেউ মনের দৃষ্টি দ্বারা দেখার চেষ্টা করে সে নিশ্চিত পুলকিত হয়ে উঠবে!
নাজিয়াকে এক জায়গায় স্থিরভাবে বসিয়ে অগোছালো ঘরটাকে গুছিয়ে নিচ্ছে আরাফ। কাজের ফাঁকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঠোঁটের এক কোনে মৃদু হাসি ফুটিয়ে আরাফ তার কাছে এসে বসলো এবং বললো,
– কি দেখো এমন করে?
টলমল করছে দুনয়ন তবুও পলকহীন দৃষ্টি! প্রতুত্তরে মৃদু হাসি ফুটানো মুখে নির্দ্বিধায় উচ্চারিত হলো,
– তোমাকে।
– কেন?
– অনেক দিন দেখিনা তাই।
– চোখের সামনেই তো ছিলাম।
– মনের সামনে তো আর ছিলে না! তখন যে দেখেও দেখতে পাইনি!
অবশেষে গড়িয়ে পড়লো টলমলে জল। বৃদ্ধা আঙুল দ্বারা অশ্রুবিন্দু মুছে নিয়ে আরাফ বললো,
– ভুলে যাও না ভয়াবহ মুহুর্ত গুলোকে! কেবল সুখগুলোকে আঁকড়ে ধরে বাচতে শেখো।
– বিপদ এলে কি লুকিয়ে থাকা যাবে?
– তখন না হয় সুখময় মুহূর্তের মনোবল দ্বারা মোকাবেলা করবে। বিপদের অন্তে আবারও সুখ দ্বারা দুঃখ গুলোকে ঢেকে ফেলবে।
নাজিয়া আরাফকে একটু কাছে টেনে কপালে কোমল স্পর্শ দিলো। বিপরীতে আরাফের হাসি আরও প্রশস্ত হয়ে গেছে।
.
রাত এগারোটায় বাড়ি ফিরেছে মেহেদী। নাহিদা তখন বই পড়ছিলো। বই থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দেখলো খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে মেহেদীকে। দূর পথে ভ্রমণ করে এলে যতটা ক্লান্ত মনে হয় ঠিক ততটাই। কোথায় গিয়েছিলো সে!
মনে প্রশ্ন থাকলেও সেটা প্রকাশ করলো না নাহিদা। বই রেখে সে চুপচাপ নেমে এলো বিছানা থেকে। ওয়ারড্রব থেকে টিশার্ট আর ট্রাউজার বের করে দিয়ে মেহেদীর খুলে রাখা ব্লেজার ও শার্ট হাতে নিলো। ঘামে ভেজা শার্ট ও মোজা বাথরুমে রেখে এসে বাকিসব গুছিয়ে রাখলো চুপচাপ। মেহেদী হাতমুখ ধুয়ে এলে নাহিদা বললো,
– এসো, খাবার রেখেছি টেবিলে।
– খেয়ে এসেছি আমি।
রুমানা বেগম মেহেদীর জন্য খাবার পাঠিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু খেলো না মেহেদী! নাহিদার মুখটা মলিন হয়ে গেছে। সে আবার খাবার তুলে রেখে রুমে চলে এলো। মেহেদী নাহিদার বইপত্র একপাশে চাপিয়ে রেখে বুকে ভর করে শুয়ে পড়েছে। নাহিদা বই গুছিয়ে রেখে মেহেদীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
– মাথা কি ব্যাথা করছে?
মেহেদী কোনো জবাব না দিয়ে বিরক্তি নিয়ে হাত সরিয়ে দিলো। নাহিদা প্রায় কাদো কাদো কণ্ঠে বললো,
– এমন করছো কেন তুমি? ক’দিন ধরে শুধু রাগ আর জেদই দেখতে পারছি। কি হয়েছে বলবে তো?
এবারও মেহেদী কোনো জবাব দিলো না। নাহিদা চুপচাপ শুয়ে পড়লো। বুকের চিনচিন ব্যথা দুএক ফোটা অশ্রু হয়ে ঝরছে আর বালিশ তা শুষে নিচ্ছে। একা একা কি লড়াই করা যায়! কোনো কিছু না বললে কি করে জানবে কি হয়েছে তার!
.
ইমরান ওঘর থেকে নিজ রুমে এসে নাফিসাকে পেলো না। নিশাতের রুমে এসে দেখলো দুজন কথা বলছে ভার্সিটি আর কলেজ নিয়ে। কিন্তু তাদের কথপোকথনে পড়ার বিষয় নেই। শুধু পরিধি আর পরিবেশ নিয়ে জানাজানি করছে। ইমরান রুমে প্রবেশ করতে করতে বললো,
– তুমি এখানে কি করছো। আর নিশাত, তোর না এক্সাম! পড়া কোথায়?
– বইয়ে।
– বইয়ে থাকলে তোর রেজাল্ট ভালো হবে? পড়তে বস।
– আজ পড়বো না। ভালো লাগছে না।
– এজন্যই তো তোর বেড়াতে যাওয়া টোটালি অফ! কোথাও গেলেই সেদিন আর পড়াশোনা নেই। পড়তে না বসলে লিখতে বস। এক্সাম সামনে, কোনো হেয়ালিপনা চলবে না। নাফিসা তুমি রুমে যাও। পাশে কেউ থাকলে পড়বে না সে।
ইমরান নিশাতকে ধমক দিয়ে চেয়ার টেবিলে পড়তে বসতে বললো। নাফিসা বিছানা ছেড়ে নামতে নামতে নিশাতকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– নিশাত, যত পড়ার পড়ো। কিন্তু এটা মাথায় রেখো, পড়াশোনা মোটেও রেজাল্ট ভালো করার জন্য হবে না। সেটা অবশ্যই প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের জন্য হবে। প্রকৃত শিক্ষিত হতে না পারলে তোমার গোল্ডেন প্লাসও বৃথা! মানুষ প্রতিষ্ঠানে না গিয়েও প্রকৃত শিক্ষিত হতে পারে। আর বর্তমান মুর্খ সমাজ এটা বুঝে না! তাদের দরকার ভালো রেজাল্ট। ঘুম, বিশ্রাম, খাওয়াদাওয়া সব বাদ! শুধু পড়, পড়, আর পড়! পড়া হলেও আবার পড়, আরও পড়! মরে গেলেও আগে পড়ে তারপর মরে যা!
কথা শেষে ইমরানের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো নাফিসা। আর নিশাত হেসে উঠলো!

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ৫৯
(নূর নাফিসা)
.
.
নাফিসা চলে যাওয়ার পর ইমরান নিশাতকে বললো,
– বেশি খারাপ লাগলে খেয়ে ঘুমিয়ে থাক।
নিশাত ভেঙচি কেটে বললো,
– উউউউউউউহহহহহ! ভাবির কথায় মানে লেগেছে বুঝি! এখন যে আবার দরদ উতলে পড়ছে!
ইমরান আবারও এক ধমকের সাথে বললো,
– চুপচাপ পড়! এগারোটার আগে উঠবি না পড়া থেকে!
নিশাত বই বন্ধ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে বললো,
– সেই কখন ক্ষুধা লাগছে! আর থাকা যাবে না! ঘুমও পাচ্ছে প্রচুর।
কথাটা বলে নিশাত ঘুমের ভান করে হাই তুলতে তুলতে বেরিয়ে যাচ্ছে ইমরানের পিছু পিছু। ইমরান বললো,
– অভিনয় আর কম জানোস না! অভিনেত্রী হিসেবে ফার্স্ট প্রাইজ পাবি!
– সেই সুযোগ টা তো আর দিলে না! তোমার জন্য একটা প্রোগ্রামেও পার্টিসিপ্যান্ট করতে পারলাম না!
– প্রোগ্রামে পার্টিসিপ্যান্ট করতে হবে না। পড়াশোনায় পার্টিসিপ্যান্ট কর। দরজা লাগিয়ে যা।
– তুমি খেতে যাবে না?
– পরে।
– এখনই চলো। সবাই একসাথে খেয়ে চলে আসবে। ঝামেলা কম হবে।
– যা, আসছি।
নিশাত চলে গেলো ইমরান নাফিসাকে সাথে নিয়ে তারপর বড় ঘরে চলে এলো। নাফিসার ইচ্ছে ছিলো না খেতে আসার। তা-ও ইমরান তাকে সাথে এনেছে ঘরে একা রেখে যাবে না বলে। নাফিসা খায়নি তবুও ড্রয়িং রুমে বসে ছিলো। এদিকে নিশাতও না খেয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়েছে বড় মায়ের রুমে।
নাফিসা রিমোর্ট হাতে নিয়ে একের পর এক চ্যানেল পাল্টে যাচ্ছে। ইমরান বললো,
– খাবারের প্লেট এখানে নিয়ে এসো।
– বললাম না, আমার খেতে ভালো লাগছে না। বিকেলে খেয়েছি আমি
– তাহলে আমারটা নিয়ে এসো।
– টেবিলে গিয়ে খেলে কি হয়! একজনের জন্য প্লেট নিয়ে টানাটানি!
– চেয়ার টেবিলে খাওয়া ভালো না। আরাম আয়েশে খাওয়া সুন্নাত। এখানে খাটে বসে আরাম করে খাওয়া যায়।
ইতোমধ্যে বড়মা ভাতের প্লেট নিয়ে হাজির। নাফিসা এবার উঠে চলে গেলো থালাবাটি এনে দেওয়ার জন্য। পানির জগ গ্লাস নিতে গেলে জেরিন তার হাত থেকে জগ গ্লাস নিয়ে টেবিলের খালি প্লেট গুলো দেখিয়ে বললো,
– নতুন বউ এবার সংসারের কাজে নতুন হাত লাগিয়ে পুরাতন হও। এখানে প্লেটে খাবার বেড়ে দাও। আমি এগুলো দিয়ে আসছি।
নাফিসা চুপচাপ খাবার বেড়ে দিতে লাগলো। আর জেরিন বড়মা আর ইমরানের জন্য খাবারের বাটি নিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর সে-ও প্লেট নিয়ে চলে গেলো সেখানে। টেবিলের দিকটা নাফিসাই সামলে নিচ্ছে। আরমান নিজেও খাচ্ছে, জিহানকেও খাওয়াচ্ছে। কতটা নির্বোধ মহিলা! ওদিকে সে আরামে খাচ্ছে আর বাচ্চাকে রেখে গেছে হাসব্যান্ড এর ভরসায়! নাফিসার ইচ্ছে করছিলো সে-ই খায়িয়ে দিক। কিন্তু বাচ্চা বাবার হাতে খাচ্ছে তাই সে আর কিছু বললো না। দাড়িয়ে দাড়িয়ে জিহানের খাওয়া দেখছে। খাওয়াদাওয়া শেষ হলে প্লেট হাতে নিয়ে ইমরান বেরিয়ে এলো ড্রয়িং রুম থেকে। নাফিসা ইমরানের দৃষ্টি স্বাভাবিক দেখলো না! সে কি তার উপর বিরক্ত নাকি সেটা ভাবছে নাফিসা! বিরক্ত হওয়ার মতো কোনো কাজ তো সে করেনি! বেশি ভাবলো না এ নিয়ে।
খাওয়া শেষে টুকটাক গুছিয়ে ইমরানের সাথে তাদের ঘরে চলে এলো। ইমরান গেইটের তালা খুলে প্রবেশ করে আবার লাগিয়ে দিচ্ছে। নাফিসা বললো,
– নিশাত আসবে না?
– নিশাত ঘুমিয়ে পড়েছে বড়মার রুমে। আজ আর আসবে না।
– আপনারা ভাইবোন আলাদা থাকেন কেন? ঝগড়াঝাটি আছে নাকি?
– কোথায় আলাদা?
– এইযে, উনারা সবাই এক বিল্ডিংয়ে আর আপনারা দুজন টিন শেডে।
ইমরান মুচকি হেসে রুমে প্রবেশ করতে করতে বললো,
– তোমার কি বিল্ডিংয়ে একটা রুম লাগবে?
– রুম আছে না-কি! সব তো ফুলফিলই।
– লাগলে বলো, ব্যবস্থা করে দিবো। ড্রয়িং রুমটা তোমার হয়ে যাবে।
– তাহলে ড্রয়িং রুম কোথায় যাবে?
– এই ঘরে শিফট করে দিব।
– প্রয়োজন নেই। আমি শুধু জানতে চাইলাম আলাদা থাকেন কেন। তাছাড়া এই ঘরটা নতুন মনে হয়। এটা না করে ওটাতেই দোতলা করে নিতে পারতেন।
– ওটা ফাউন্ডেশন দেওয়া না। বিধায় ওটাতে দোতলা সম্ভব না। আর আমরা আলাদা থাকি না। সবারই আলাদা রুম দরকার তাই এটা তুলে নিয়েছি। নিশাতের এই ঘর পছন্দ হয়েছে তাই এখানে তার রুম আলাদাভাবে নিয়েছে। তবে বেশিরভাগ সময় সে মা অথবা বড়মার সাথেই থাকে। মাঝে মাঝে এখানে। বাবার ইচ্ছে যৌথ পরিবার হবে আমাদের। ইনশাল্লাহ সেটাও সফল হবে। সবাই মিলেমিশে যৌথ পরিবার হয়ে থাকলে ভালো হবে না?
– আমার তো ভালোই লাগে। কিন্তু তেমন পাওয়া যায় না, এমনকি থাকেও না এরকম পরিবার। দ্বন্দ লেগে বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
– নিজেরা ঠিক থাকলে দ্বন্দের সম্ভাবনা থাকে না। যাক, পড়তে বসবে এখন?
– না।
– তাহলে আপাতত কষ্ট করে ঘুমাও। লাইট পরে বন্ধ করবো আমি।
নাফিসা গিয়ে শুয়ে পড়লো আর ইমরানকে দেখলো বুক সেল্ফ থেকে বই নিয়ে পড়ছে! সে কি তাহলে এখনো স্টুডেন্ট! হতে পারে। এজন্যই তো ভার্সিটিতে দেখেছিলো তাকে! সে কি ও-ই ভার্সিটিরই স্টুডেন্ট! কিসে পড়ে সে! নাফিসা মাথাটা একটু উঠিয়ে বইয়ের নাম দেখতে গেলে ইমরান তার দিকে তাকালো। নাফিসা সাথে সাথে আবার শুয়ে পড়লো। ইমরান বললো,
– প্রব্লেম হচ্ছে লাইট অন থাকায়?
নাফিসা মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে চোখের পাতা বন্ধ করে রইলো। সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে ইমরানকে কুরআন পড়তে দেখলো নাফিসা। সাধারণত পুরুষদের কুরআন পড়তে দেখাই যায় না। ইমরানকে দেখে ভালো লাগলো নাফিসার। ইমরানের পড়া হলে আবার সে কুরআন হাতে নিলো পড়ার জন্য। ইমরান টুপি রাখতে রাখতে বললো,
– তুমি কুরআন পড়বে আগে বলনি কেন, নিশাতের রুমে কুরআন শরীফ ছিলো।
– এটাতেই হবে।
নাফিসা কিছুক্ষণ পড়ে রেখে দিলো। আজ প্রথম শ্বশুর বাড়িতে কাজে হাত লাগিয়েছে। নিজের রুমসহ নিশাতের রুম ঝাড়ু দিয়েছে। অত:পর বড় ঘরে এসে দেখলো রান্নার কাজকর্ম মাঝামাঝিতে আছে। নাফিসা আবিদা বেগমকে বললো,
– আম্মা, কিছু করতে হবে?
আবিদা বেগমের পরিবর্তে জেরিন জবাব দিলো,
– না, কিছু করা লাগবো না। কাথা মুড়ে ঘুমিয়ে থাকো। কাজকর্ম শেষ, এহন আসছে কিছু করা লাগবো কি-না জিজ্ঞেস করতে!
নাফিসার প্রচুর রাগ হলো! এ ধরনের প্যাচানো বাকা কথা তার মোটেও পছন্দ না। তবুও কোনো রাগ দেখালো না। বাবা-মা কাল বারবার বলে দিছে যাতে সকলের বাধ্য হয়ে থাকে আর কারো সাথে কোনো তর্ক না করে। তাই সে রাগ ঢেকে স্বাভাবিকভাবেই বললো,
– এতো প্রয়োজন হলে ডাকতে পারতেন। আমি তো আর আপনাদের পরিবারের কাজকর্মের রুটিন জানি না!
এবার জেরিন বললো,
– জানার চেষ্টা থাকলে না জানবে। থাক আর কথা বাড়ানোর দরকার নেই। থালাবাসন মেজে ফেলো। সংসারের কাজ শেষ হয় না কখনো। সারাদিনই একের পর এক কাজ হাজির থাকে।
নাফিসা আর কিছু না বলে বাসনকোসন মেজে ফেললো। তবে এটাই খারাপ লাগলো আবিদা বেগম কোনো উক্তি রাখলেন না। এরপর জেরিন আবার উঠুন ঝাড়ু দিতে বললো। নাফিসা উঠুন ঝাড়ু দেওয়ার সময় দুজন মহিলা এসেছে। একজন একটু বয়স্ক অন্যজন যুবতী। বয়স্ক মহিলাটি বললো,
– এইডা ইমরানের বউ গো?
নাফিসা কি বলবে বুঝতে পারছে না। নতুন বউ হয়ে নিজের পরিচয় কি নিজে দেওয়া ঠিক হবে! তাই সে চুপচাপ তার কাজ করে যাচ্ছে। নিশাত ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে বললো,
– হ্যাঁ, দাদু। ছোট ভাবি।
– বউ দেহি কতা কয় না! বোবা নাকি!
নাফিসার একদম সহ্য হয় না এ ধরনের কথাবার্তা। তবুও সে চুপ। পাশের যুবতী বললো,
– আম্মা, জোর কইরা ঘরে উঠছে না। এইজন্যে লজ্জা পাইতাছে।
নিশাত জবাব দিলো,
– কাকি, কি বলেন এসব! জোর করে আবার ঘরে উঠে কিভাবে!
বয়স্ক মহিলাটি বললো,
– হইছে তুই চুপ থাক। ভাবির লাইগা কি পিরিত! শয়তানি করন যায় না। কি গো বউ, এতো শরম পাও কে! এদিক ঘুইরা খাড়াও দেহি একটু।
নাফিসা জেদ নিয়ে ঝাড়ুটা মাটিতে আছাড়ে ফেলে ঘোমটা মাথার অর্ধেক পর্যন্ত নামিয়ে জোরপূর্বক মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
– কি, দাদি? ভালো আছেন?
– এতোক্ষণে!
– হু, এতোক্ষণেই। আমি তো চিনিই না, তাই জিজ্ঞাসাও করিনি। এবার বলেন।
– হ, ভালাই। দেখতে তো ডকসুন্দর, লম্বাচূড়া অই! নাকমুখ খাড়া।
– হ্যাঁ, খাড়া নাক দিয়ে একেবারে কোটার মতো ব্যবহার করে বরই পারতে পারবেন। হইছে এবার নাতবউ দেখা?
নিশাত খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো সাথে বাকি দুজনও। মহিলাটি বললো,
– নাতবউ দেহি ভালা মস্করা জানে! দেখছি, দেখছি, বাকিটুক নাতিরে দেহাইয়ো। আরমানের মায় কই, এহনই বউরে উডান ঝাড়ু দেওয়ায়।
বলতে বলতে দুজন বড় ঘরের দিকে চলে গেলো। উঠুন থেকে বল কুড়িয়ে নিয়ে নিশাত জিহানকে ডাকতে ডাকতে চলে গেলো। লোকমুখের কটুক্তিতে নাফিসা মনে মনে ফুসতে ফুসতে ঝাড়ু হাতে নিয়ে আবার নিজের কাজে মনযোগ দিলো।

চলবে।