তোকে চাই পর্ব-০২

0
1785

#তোকে_চাই
#পার্ট_২
#লেখনীতে_সুহাসিনী_চৌধুরী(ছদ্মনামের লেখিকা)

সাইফ অবাক কন্ঠস্বরে বলে উঠলো,

“এইটা কি হলো আজ?”

“ইট্স আ মিরাকল”

মেরিনের কথায় রুমকি বললো,

“ঠিক বলছিস মেরিন”

রোজ সবার এমন ফেস রিয়াকশন দেখে জিজ্ঞেস করলো,

“তোমরা সবাই এমন করছো কেন?কি হয়েছে?

জেরিন প্লেটে করে ফল নিয়ে রোজকে দিয়ে বললো,

” আরে রিক্ত রায়হান খান আজ তেমাকে স্যরি বলেছে।এইটা তো অবিশ্বাস্যকর।”

“কিন্তু কেন?”

মিরা রোজের মুখে একটা আপেলের টুকরো দিয়ে বললো,

“আগে খাও তারপর কথা বলো,ওকেই”

রোজ আপেলের টুকরোটা চিবাতে চিবাতে বলল,

“ওকে।এখন বলো”

রাইসা একটা কমলালেবু ছিলে মুখে পুরে নিয়ে বললো,

“শোনো তাহলে,আমি এই টিমে জয়েন করেছি প্রায় সাত মাস।আমার সাথে শুভ ভাইয়া আর মেরিন এক সাথেই জয়েন করে।বাকিরা সবাই তার আগেই এসেছে এই টিমে।তো আমাদের এতো দিনের জার্নিতে আমরা কখনো রিক্ত স্যারকে স্যরি বলতে দেখিনি।তাকে অ্যাটিটিউড বয় বলা চলে নিঃসন্দেহে।”

সাইফ একটা চেয়ার টেনে বসে বললো,বাকিটা আমি বলছি।

“আমি রিক্ত ভাইয়ার চাচাতো ভাই।ওর আর আমার বয়সের পার্থক্য প্রায় তিন বছর।আমি ছোট থেকেই দেখে এসেছি যত যাইহোক,পৃথিবী উল্টে গেলেও ভাইয়া কখনো কাউকে স্যরি বলতো না।সে যদি ভুল ও করতো তবুও স্যরি বলতো না।আর আজ তোমাকে স্যরি বলতে দেখে আমরা সবাই শক্ড হয়েছি”

“হুম বুঝলাম।এই স্যার বহুত দেমাগ দেখায় যা আজ এসেই বুঝেছি কিন্তু এনার মনে দয়া বলতে কিচ্ছু নাই।আমার গালটা কি করে দিয়েছে।পুরাই শয়তানের সাত নাম্বার নানা”

বলেই ঠোট উল্টিয়ে ফেললো রোজ।

ওর এমন কিউট ফেস আর এমন মজার কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো।

~দুইদিন পর~

সবাই মিটিং রুমে বসে আছে।রোজ এখন সুস্থ।তাই আজ থেকেই কাজে যোগ দিয়েছে।রোজের বিপরীত পাশে বসে আছে রিক্ত।এক ধ্যানে ফোন স্ক্রোল করছে।রোজ তা দেখে মুখ ভেংচি দিলো রিক্তকে।সে ভেবেছিল রিক্ত সেইটা খেয়াল করেনি।কিন্তু রিক্ত ফোনোর দিকে চোখ রাখলেও ওও রোজকেই পর্যবেক্ষণ করছে।তাই রোজের মুখ ভেংচি দেওয়া দেখে মুচকি হাসলো।এর মধ্যেই এসে হাজির হলেন রাশেদ রায়হান খান।সবাই চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো।

মিস্টার খান চেয়ারে বসে বললেন,

“সিট ডাউন”

সবাই বসে পরলো।

“আজ এখানে আমাদের সাথে নতুন একজন জুনিয়র অফিসার জয়েন করেছে।যার প্রতিভার কোনো শেষ নেই।মাত্র ২১ বছর বয়সেই সে সিআইডি টিমের মেম্বার হয়েছে শুধুমাত্র তার যোগ্যতা দিয়ে।সেই মেয়েটি হলো “জান্নাতুল রোজ রিনজা”আশা করি তোমরা সবাই তাকে সাদরে গ্রহন করবে।

মিস্টার খানের কথাটি শুনেই রোজ উঠে দাড়ালো এবং সবাইকে হাই জানালো।যদিও সবাই আগে থেকেই পরিচিত হয়ে গেছে।এইটা শুধু ফর্মালিটি।

রিক্ত মিস্টার খানের দিকে তাকিয়ে বললো,

“এইবার আসল টপিক নিয়ে আলোচনা করা হোক?”

“হ্যা,আজকের কেসটা খুবই কনফিডেনসিয়াল।তাই এই কেসটা শুধুমাত্র তোমাদের এই ১২জনের টিম মেম্বার্স জানবে।যা কিছু করার তা তোমাদেরকেই করতে হবে এবং খেয়াল রাখবে সেটা মাত্র দু’দিনের মধ্যেই।”

রাকিব যে কিনা জুনিয়র অফিসার পদে আছে সে বললো,

“স্যার তাহলে এইবার কেসটা সম্পর্কে ডিটেইলস জানানো হোক আমাদের।”

“অবশ্যই।শোনো সবাই এই কেসটা বাচ্চা এবং নারী পাচারকারী চক্রের।এই চক্রকে ধরার অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছে পুরো পুলিশ টিম।কিন্তু তারা না পারায় কেসটা এইবার আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।এই পাচারকারী গ্যাংটা প্রায় অনেকগুলো বছর ধরে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে নির্ভয়ে।তাদের ধারণা তাদেরকে কেউ ধরতে পারবেনা।কিন্তু আমাদেরকে ঐ গ্যাংয়ের এমন অযাচিত ভাবনা ভুল প্রমাণিত করতে হবে।”

রিক্ত বলে উঠলো,

“এই গ্যাংটা এখন কোথায় আছে তার লোকেশন কি ট্র্যাক করা গেছে?”

“গুড পয়েন্ট।আমাদের একজন গুপ্তচর ঐ গ্যাংয়ের লোকেশন ট্র্যাক করতে পেরেছে।তবে তা শিউর না।কারণ সেই পাচারকারী চক্র খুব দ্রুত জায়গা পাল্টে ফেলছে।গুপ্তচরের পাওয়া খবর অনুযায়ী তারা এখন একটা জঙ্গলের মাঝ বরাবর কোথাও আছে।তোমাদেরকে যা করতে হবে তা আজকে থেকেই করতে হবে।এই নাও এই কেসটার ফাইল।আর হ্যা রিক্ত এবং শান্ত এই কেসে তোমাদের টিম লিডার।আশা করি তোমরা অন্যান্য সব কেসের মতো এই কেসটাতেও সফল হবে।বেস্ট অফ লাক”

এই বলেই মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন মিস্টার খান।

রিক্ত আর শান্ত খুব ভালো করে ফাইলটা নিয়ে দেখলো।এবং তার উপর ভিত্তি করে শান্ত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“যেহেতু এই কেসটা বেশ জটিল।আর পাচারকারী গ্যাংটা চালাক বিধায় খুব দ্রুতই জায়গা পাল্টিয়ে ফেলছে।তাই আমাদেরকে অনেক সতর্কতার সঙ্গে এই কেসটা হ্যান্ডেল করতে হবে”

এইবার রিক্ত বলতে শুরু করলো,

“ফাইলটা ভালো করে দেখে আমাদের মনে হচ্ছে এই চক্রটা এইবার প্রায় ১০০জনকে পাচার করবে।যার অধিকাংশই নারী।এবং কিছু সংখ্যক শিশু।এখানে কিন্তু আমাদের একটু অসতর্কতার জন্য অনেকের প্রাণহানি হতে পারে।তাই সবাইকে খুব কেয়ারফুল থাকতে হবে”

সবাই রিক্তর কথায় সমস্বরে বললো,

“ইয়েস স্যার”

রিক্ত এইবার একটা ম্যাপ এনে টেবিলের উপরে রাখলো।

“এইটা সেই ম্যাপ যে জঙ্গলে পাচারকারী গ্যাংটা রয়েছে।আমাদের সবাইকে একত্রিত হয়ে এই কাজটা করা যাবে না।সবাইকে চারটি দলে ভাগ হয়ে যেতে হবে,যাতে জঙ্গলের চারিদিকে আমাদের নজর সমানভাবে থাকে।শান্ত,জেরিন আর শুভ একটা দলে থাকবে।মিরা,রাকিব আর মেরিন একটা দলে থাকবে।রাইসা,রুমকি আর সাহাফ একটা দলে থাকবে।আর আমি,সাইফ আর রোজ একটা দলে থাকবো।”

রিক্তর দলে রোজ থাকবে এই কথাটা শুনে রোজ এক প্রকার বিরক্ত হলো।রোজ মনে মনে বলছে,

“এই Mr. Arrogant এর সাথে আমাকে কাজ করতে হবে যে কিনা পুরাই একটা অ্যাটিটিউডের ডিব্বা।”

রোজের ভাবনায় এক বালতি জল ঢেলে দিয়ে রিক্ত আবারো তার বক্তব্য দিতে শুরু করলো।

“শোনো সবাই জঙ্গল এলাকায় নেটওয়ার্ক পাওয়া খুব মুশকিল।তবুও সবাই কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে রাখবে যেন একে-অপরের সাথে কানেক্টেড থাকতে পারো।আর হ্যা সেখানে আমাদের সবাইকে ছদ্মবেশে যেতে হবে।তোমরা সবাই চারিদিকে খেয়াল রাখবে যে কে কখন কোথা থেকে বের হচ্ছে বা যাচ্ছে।নজর রাখবে সবার উপরে।আমি,রোজ আর সাইফ সেখানে যাবো ক্রেতা হয়ে।আর সাথে অবশ্যই রিভলবার ফুল লোডেড করে রাখবে।পারলে এক্সট্রা গুলি রাখবে সবার সাথে।”

এরপর আরো কিছু কথা বলার পর সবাইকে যার যার বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে সন্ধ্যা ৬টায় ডিরেক্ট মেকআপ রুমে ডাকা হলো।

সবাইকে বিভিন্ন বেশে সাজানো হয়েছে।রিক্ত,রোজ আর সাইফকে সাজানো হয়েছে বিদেশি পার্টি হিসেবে।সবার মুখ ঢাকা।আর সাথে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরা।

শান্ত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“আমাদের এখন বের হতে হবে।আর হ্যা সবাই নিজেদের ব্লুটুথ অন রাখবে।পাশাপাশি গোপন ক্যামেরাটাও সেট করে রাখবে যাতে আমাদের হাতে প্রমাণ থাকে সব কিছুর।আর পায়ে বুট জুতার ভেতরে যে ছুরিটা আছে তা সাবধানে রাখবে।প্রয়োজনে কাজে লাগবে।এখন চলো আমরা বেরিয়ে পরি।জঙ্গল এরিয়াতে আমরা সবাই আলাদা হয়ে যাবো।কিন্তু বাকি পথ এক সাথেই যাবো।”

এরপর সবাই বেরিয়ে পড়লো সেই পাচারকারী চক্রকে ধরার জন্য।রোজের খুব এক্সাইটেড লাগছে।জীবনে প্রথমবার কোনো কেসে সরাসরি যুক্ত থাকছে তাও জুনিয়র অফিসার হয়ে।অবশ্য এর আগেও অনেক কেসে রোজ থেকেছে তবে তা সাময়িক ভাবে।তাই কিছুটা হলেও অভিজ্ঞতা রয়েছে।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে রোজ চললো নিজেকে প্রমাণ করতে।

চলবে????

ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।