তোকে চাই পর্ব-০৮

0
1376

#তোকে_চাই
#পার্ট_৮(ধামাকা পর্ব)
#লেখনীতে_সুহাসিনী_চৌধুরী(ছদ্মনামের লেখিকা)

সকাল আটটায় ঘুম ভাংলো রোজের।বাকি সবাই আগেই উঠে পরেছে।ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙে পাশে তাকাতেই দেখতে পেলো রিক্ত বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে।রোজদের রুমের বেলকনি আর রিক্তর রুমের বেলকনি পাশাপাশি থাকায় রোজের রিক্তকে দেখতে সমস্যা হলো না।রোজ উঠে দাড়িয়ে বেলকনিতে চলে গেলো।সেখানে গিয়ে শুনতে পেলো রিক্ত ফোনে কাউকে বলছে,

“সব সময় তোমাকেই ভালোবাসি।তাই তোমাকে ছাড়ার কথা কল্পনাও করতে পারিনা মিস. কুইন।”

রোজ আর কোনোকিছু না শুনেই রুমের ভেতরে এসে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ওর একদম ভালো লাগছে না।রোজ নিজের মনে আওরাতে লাগলো,

“রিক্ত অন্য কাউকে ভালোবাসে তার মানে?আচ্ছা ওকে তো আমার ভালোই লাগেনা।তাহলে আমার কেন মনে হচ্ছে আমি খুব কাছের কিছু হারিয়ে ফেলছি।কেন মনে হচ্ছে রিক্তর মুখে অন্য কারো নাম আমি সহ্য করতে পারছিনা!কেন এমনটা হচ্ছে আমার সাথে?যে মেয়ে জন্মের পরেই নিজের পরিবার হারিয়েছে।নিজের বাবা-মাকে হারিয়েছে তার কপালে ভালোবাসা নামক সেই জিনিসটা নেই।এটা মেনে নিতে শেখ রোজ।”

এসব ভেবেই চোখে পানির ঝাপটা দিয়ে চোখ মুছে নিলো রোজ।এরপর ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে নিলো সবার সাথে ব্রেকফাস্ট করতে বাইরে যাওয়ার জন্য।রোজ বরাবরই জিন্স,লং টপস,স্কার্ট এসব পরে অভ্যস্ত।তাই আজকে একটা রেড কালার টপস আর ওয়াইট কালার জিন্স পরে গলায় রেইনবো কালারের প্রিন্ট করা স্কার্ফ জরিয়ে নিলো।চুলগুলো উঁচু পোনিটেল করে চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে রেড কালার লিপস্টিক,হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ পড়ে পায়ে ওয়াইট কালার হাই হিল পরে বেরিয়ে গেলো মিরাদের কাছে।মিরা,রুমকি,শুভ এরা সবাই রোজের জন্য আগে থেইকে রেডি হয়ে রিসোর্টের রিসিপশন রুমে বসে অপেক্ষা করছিলো।রোজকে নিচে নামতে দেখে রিক্ত রোজের দিকে এক পলক তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো।রোজকে কখনো এভাবে দেখেনি রিক্ত।আজ যেন নতুন কোনো রুপে রোজকে দেখছে রিক্ত।মুগ্ধতায় ভরপুর চাহুনি নিয়ে রোজকে দেখছে ওও।রোজ দেখতে উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের হলেও ওর চোখ দুটো মায়ায় ভরা।সরু নাক,গোলাপের পাপড়ির ন্যায় ঠোঁট,ঘন,কালো কোমড় অবধি লম্বা চুল,স্লিম ফিগার আর উচ্চতায় ৫”৬” মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে অজান্তেই রিক্তর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলো “মিস. কুইন” শব্দটি।রিক্ত নিজেই চমকে গেলো এই নামটা নিজের মুখে উচ্চারণ করতে দেখে।কারণ এই নামে রিক্ত শুধুমাত্র ওয়ানিয়াকে ডাকতো।ওয়ানিয়ার কথা মনে হতেই রিক্তর চোখ দুটল আবার লাল হয়ে উঠলো।এমন সময় রোজ ওদের সামনে এসে দাড়িয়ে এক পলক রিক্তর দিকে তাকিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“চলো সবাই এবার যাওয়া যাক”

রাকিব ফোন টিপতে টিপতে বললো,

“হ্যা হ্যা চলো সবাই।আমার খুব ক্ষুদা লেগেছে।”

এরপর সবাই সকালের ব্রেকফাস্ট করে একটুখানি বিশ্রাম নিয়ে রেডি হয়ে নিলো এক্সিবিশনে যাওয়ার জন্য।এক্সিবিশন টা সন্ধ্যার দিকে শুরু হলেও ওখানে গিয়ে সবকিছু ঠিক করতে সময় লাগবে বলে সবাই ১২টার মধ্যেই বেরিয়ে পরলো।গাড়িতে বসে রোজ ভাবতে লাগলো সেদিন কনফারেন্স রুমে বলা রিক্তর কথাগুলো।

সেদিন রোজ ওর কথা বলা শেষ করে সবার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নেয় ভয়ে।হয়তো ওর আইডিয়াটা কারো ভালো লাগেনি।ঠিক তখনই রোজের ভাবনা ভুল প্রমানিত করে রিক্ত বলেছিল,

“গ্রেট রোজ।আমি নিজে আজ তোমার কথাগুলো শুনে অবাক হয়ে গেছি।আমার নিজের মাথাতেও এতো সুন্দর আইডিয়া আসেনি।আসলেই তুমি জিনিয়াস।আমি চাই তোমার আইডিয়া ফলো করেই যেন কাজটা করা হয়।এতে কারো আপত্তি আছে কি?”

তখন সবাই উচ্ছাসিত কন্টঠ জবাব দেয় যে এতে কারো আপত্তি নেই।বরং এই আয়ডিয়াটা সবার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।

সেদিন রোজ খুব খুশি হয়েছিল।আর সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিল রিক্তর বলা কথাগুলো শুনে।

রোজের ভাবনার মাঝেই সবাই এসে নামলো সেই বাংলোর সামনে যেখানে আজকের এক্সিবিশনটা অনুষ্ঠিত হবে।ভেতরে গিয়েই সবার আগে মিস্টার কৌশিক মুখার্জির সাথে গিয়ে কুশল বিনিময় করলো সবাই।মিস্টার কৌশিক মুখার্জি আজকের এক্সিবিশন দেখার তত্বাবধানে আছেন।ওনার সাহায্য নিয়েই রোজ নিজে ডায়মন্ড যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে গিয়ে ওয়ার্নিং বেলটা ফিট করে রাখলো।এরপর সবাই চারিদিকে ছড়িয়ে গেলো ‘অর্কিড’ টিমকে ধরার জন্য।

~সন্ধ্যা ৬টা~

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ৬টা বেজে গেলো।চারিদিকে মানুষের কলরব।সবার মাঝে ‘অর্কিড’ টিমকে ধরা বেশ কঠিন একটা কাজ।সবার কড়া নজর সেই ডাইমন্ড এর দিকে।হঠাৎই সব লাইট অফ হয়ে যায়।আর ডাইমন্ড এর কাছে থাকা ওয়ার্নিং বেলটা বেজে উঠে লাল বাতি জ্বলে উঠলো।সবাই বুঝে গেছে যে ‘অর্কিড’ টিম তাদের কাজ করার জন্য এসে গেছে।রোজ খুব দক্ষতার সাথে সেইখানে গিয়ে ডিরেক্ট ‘অর্কিড’ টিমের লিডারের মাথায় গান তাক করলো।আর সাথে সাথেই সমস্ত লইট আবার জ্বলে উঠলো।কিন্তু সেই টিমের লিডার অত্যাধিক চালাক হওয়ার ফলে রোজের হাতের গানটা এক ধাক্কায় ফেলে দিলো।রোজ নিজেও ধাক্কা দেওয়ার ফলে মেঝেতে পড়ে গিয়ে ডান হাতে ব্যাপকভাবে আঘাত পেলো।রিক্ত সোজা গিয়ে অর্কিডের হাতে শ্যুট করলো।অন্যদিকে টিমের বাকি মেম্বাররা হামলা করলো সাহাফদের উপরে।শুরু হয়ে গেলো সেই ফায়ারিং।চারিদিকে গুলির শব্দে আৎকে উঠলো সাধারণ জনতা।এর মাঝেই রোজের মাথায় গান ধরলো ‘অর্কিড’ টিমের একজন।রিক্ত কৌশলের সাথে রোজের বিপরীতে এসে এক লাত্থি দিলো সেই ছেলেটার পেটে।যার দরুণ ছেলেটা ছিটকে পড়লো মেঝেতে।এভাবেই প্রায় ৩৫মিনিট ফায়ারিং করার পর বান্দরবন থানার পুলিশরা এসে ‘অর্কিড’ টিমের সবাইকে গ্রেফতার করলো।এক্সিবিশনে থাকা সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।আর রিক্তদের মুখে আরেকটা কেস সল্ভ করার উল্লাসের হাসি।সবাই হাসিমুখে এক্সিবিশনে উপস্থিত হলো।রাত ৯টায় এক্সিবিশন শেষ হওয়ার পর সবাই বেরিয়ে আসলো সেই বাংলো থেকে।রোজ ব্যাথার চোটে হাত নারাতে পারছেনা।অন্যদিকে রাইসাও ওর বা পায়ে আঘাত পেয়েছে মারামারি করার সময়।হাঁটতে গিয়ে পড়ে যেতে নেয় রাইসা।তখনি রাকিব এসে ধরে ফেলে ওকে।

“তুমি ঠিক আছো?”

রািসা রাকিবের প্রশ্নের জবাবে ছোট্ট করে উত্তর দেয়,

“হুম”

এই বলেই আবার হাঁটতে নিলেই ব্যাথায় চিৎকার করে উঠে রাইসা।রাকিব হুট করেই রাইসাকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ির সামনে এসে দাড়ায়।সবাই হা করে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।রাইসা লজ্জা পেয়ে রাকিবকে বলে,

“আরে আরে কি করছো!আমাকে নামাও বলছি”

“একেইতো হাঁটতে পারছো না।আবার বলছো নামিয়ে দিতে?”

রাকিবের কথা শুনে রাইসা চুপ করে রইলো।কারণ সত্যিই ও পা নাড়াতে পারছে না।

“সাহাফ গাড়ির লকটা খুলে দাও একটু প্লিজ”

সাহাফ অবাক হয়ে তাকিয়েই গেট খুলে দিলো।আর রাকিব রাইসাকে আস্তে করে বসিয়ে দিলো গাড়ির ভেতরে।দিয়ে নিজেও বসে পড়লো।এরপর একে একে সবাই গাড়িতে উঠার পর রিক্ত রোজকে বললো,

“তুমি আমার সাথে এসো”

“কোথায়?”

“আমি আর তুমি বাইকে করে যাবো।”

রোজ অবাক হয়ে বললো,

“বাইক?বাইক কোথা থেকে আসলো?”

“যেখান থেকেই আসুক,তোমাকে যা বললাম সেটা করো।”

“না,আমি গাড়িতেই যাবো সবার সাথে।”

“তুমি আমার সাথে যাবে মানে যাবেই।সো,আর একটাও কথা না বলে বাইকে উঠো জলদি।”

রিক্তর রাগী কন্ঠস্বর শুনে সবাই রোজকে রিক্তর সাথেই যেতে বললো।রোজও উপায়ন্তর না পেয়ে রিক্তর সাথে বাইকে বসলো।

“আমার পিঠে হাত রাখো।”

“কেন?”

“নয়তো পড়ে যাবে।”

“পড়বো না”

“বেশি কথা না বলে পিঠে হাত রাখো”

রোজ বিরক্ত আর রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো,

“রাখছি”

এই বলেই রোজ রিক্তর পিঠে হাত রাখলো।আর তখনি রিক্ত বাইক স্টার্ট দিলো।রোজের কেন জানি খুব ভালো লাগছে।চারিদিকে শো শো করে গাড়ি যাচ্ছে।ল্যাম্পোস্টের আলোয় রাস্তার দুই পাশে থাকা গাছগুলো দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।মৃদু বাতাসে রোজের স্কার্ফটা তাল মিলিয়ে উড়ছে।চুলগুলোও যেন আজ প্রতিজ্ঞা করেছে যে উড়বেই।রোজের খুব ভালো লাগছে এই মুহূর্তটা।জীবনে প্রথম কোনো ছেলের সাথে একা এভাবে বাইকে বসে রাতের শহর দেখছে।এ যেন স্বপ্নের ন্যায় লাগছে রোজের কাছে।রিক্ত বাইকের আয়নায় রোজের হাসিমুখ দেখছে।ওর নিজের মুখেও আজ হাসি ফুটেছে।আসলে রিক্ত এই বাইকটা রিসোর্টের একজন রিসেপশনিস্ট এর থেকে নিয়েছে।ওর কেন জানি রোজকে নিয়ে রাতের শহর দেখার ইচ্ছা করলো তাই যেই ভাবা সেই কাজ।রিক্ত রায়হান খান কখনো তার ইচ্ছার সাথে কম্প্রোমাইজ করেনা।তাই এক্ষেত্রেও করবেনা স্বাভাবিক।হঠাৎই বাইক থেমে গেলো।রোজ রিক্তকে জিজ্ঞাসা করলো,

“কি হলো?বাইক থামালেন কেন?”

“আরে আমি থামায়নি।বাইক নিজেই থেমে গেছে।”

“মানে?”

“মানে আমিও জানিনা।দেখি সরো তো।দেখতে হবে কি হয়েছে।”

রিক্তর কথায় রোজ বাইক থেকে নামলো।রিক্ত নিজেও বাইক থেকে নেমে দেখলো বাইকের টায়ার ফুটো হয়ে গেছে।রাস্তায় কিছু কাঁচের টুকরো পড়েছিলো।সেজন্যই এই অবস্থা।

“বাইকের টায়ার ফুটো হয়ে গেছে।”

“কিহহহহহ?তাহলে এখন কি হবে?”

“সেটা তো আমিও ভাবছি।এখানে কোনো গ্যারেজ ও দেখছিনা।”

রোজ চারপাশে তাকিয়ে দেখলো ওরা একটা নির্জন জায়গায় দাড়িয়ে আছে।আশেপাশে কিছু বাড়ি আর চারপাশ কেমন ভুতুড়ে টাইপ।গা ছমছমে পরিবেশ দেখে রোজ একটু ভয় পেলো।

“এখন কি হবে?আশেপাশে তো কাউকে দেখছিও নাহ।”

“এক কাজ করি চলো,এখানকার কোনো একটা বাড়িতে গিয়ে আজকের রাতটুকু থাকার জন্য অনুরোধ করি।এছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি নাহ।”

রোজ নিজেও রিক্তর কথাতে সহমত পোষণ করলো।এমনিতেই রাত ১০টা পার হয়ে গেছে।আর নেটওয়ার্ক ও নেই এখানে তাই আজকের রাতটুকু কারো বাড়িতে আশ্রয় না নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।এই ভেবেই দুজন বাইকটা এক সাইটে রেখে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে পা বারালো দূরের ঐ বাড়িগুলোর দিকে।রোজের বুক ঢিপঢিপ করছে ভয়ে।ওর কেন জানি মনটা বড্ড কু গাইছে।মনে হচ্ছে আজ বেশ খারাপ কিছু হতে চলেছে ওদের সাথে,যা ওদের কল্পনারও অতীত!!!

একটা বাড়ির সামনে দাড়িয়ে রিক্ত কড়া নারলো দরজায়।কিছুক্ষণ পর একজন মধ্যবয়স্ক লোক এসে দরজা খুলে বললো,

“কি চাই?”

রিক্ত বললো,

“আসলে চাচা আমরা খিব বিপদে পড়ে এখানে এসেছি।আমাদের বাইকের টায়ার ফুটো হয়ে গেছে।আর এখানে আশেপাশে কোনো গ্যারেজও দেখছি না।তাই উপায়ন্তর না পেয়ে আমরা একটু আজকের রাতটুকু আশ্রয়ের জন্য এখানে এসেছি।”

লোকটি গুরুগম্ভীর গলায় বললো,

“তোমরা স্বামী-স্ত্রী?”

রোজ চট করে বলে উঠলো,

“না না আমরা স্বামী-স্ত্রী নই।উনি আমার বস।”

কথাটা শোনা মাত্রই লোকটা চিৎকার করে কাদেরকে যেন ডাকলো,

“রকি,রিমন,সানি”

লোকটার চিৎকার শুনে ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে আসলো তিনজন ছেলে।

“কি হয়েছে আব্বা?”

“আর এরা কারা?”

“এই দুজন এখানে এসেছে নষ্টামি করতে।”

লোকটির কথা শুনে রিক্ত অবাক হয়ে বললো,

“মানে?”

তখনি সানি নামের ছেলেটি বলে উঠলো,

“উরিব্বাস,নষ্টামিও করবেন আবার তার মানেও জানতে চাইবেন।বাহ!বাহ!”

রোজ তখন বললো,

“না না আপনারা ভুল ভাবছেন!”

তখনি ঘর থেকে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা এসে বললো,

“চুপ করো বাছা।তোমাদের লজ্জা করেনা নষ্টামি করতে এসে ধরা পরার পরেও কথা বলতে?”

লোকটা আগের মতোই গুরুগম্ভীর গলায় বললো,

“ওদেরকে ঘরে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখো তোমরা।আমি এক্ষুনি পঞ্চায়েত ডাকার ব্যবস্থা করছি।গ্রাম্য প্রধান যা বলবেন তাই হবে।”

এই বলেই লোকটা কোথায় যেন চলে গেলো।আর ঐ ছেলগুলো এবং মহিলাটি জোর করে রিক্ত আর রোজকে একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখলো।রোজ রীতিমতো কেঁদে দিয়েছে।রিক্ত নিজেও চিন্তায় পরে গেছে।রাত ১ টার দিকে পঞ্চায়েত ডাকা হলো।রিক্ত আর রোজকে নিয়ে যাওয়া হলো সেখানে।

সবাই নানা রকম আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলো যে রিক্ত আর রোজকে আজ এখানেই বিয়ে দেওয়া হবে।

এই কথা শুনে রোজ আৎকে উঠলো।রিক্ত নিজেও চমকে গেলো।রিক্ত চিৎকার করে বলে উঠলো,

“অসম্ভব”

একজন বয়স্ক লোক বলে উঠলো,

“এই ছোকরা গলা নিচে।নষ্টামি করে আবার গলা উঁচু করছো হা।সাহস তো কম না।”

“এখানে সাহসের কি আছে।আমরা বিপদে পড়ে সাহায্য চাইছি আর আপনারা যা নয় তাই বলছেন।এগুলো কি ধরনের ভদ্রতা?”

“এই ছেলে এই তোমার তো দেখি বড্ড মুখ চলে আমাদের ভদ্রতা শেখাতে আসছো?নিজেরা নষ্টামি করবা তাতে কিছু না তাইনা?”

“আর এই মেয়ে তোমাকে তেমার বাবা-মা কেমন শিক্ষা দিয়ে বড় করেছে যে রাত বিরাতে পরপুরুষের সাথে নষ্টামি করতে আসো।”

রোজ কিছু বলছে না।শুধু চুপচাপ করে সব শুনছে।আর টুপটাপ করে চোখের পানি গাল বেয়ে পরছে।শেষ পর্যন্ত এসব শুনতে হলো ওকে?এতোটায় খারাপ মেয়ে ও?এসবই ভাবছে।এর মধ্যেই রিক্ত চিল্লাচিল্লি করতে লাগলো।ঐ সানি,রকিসহ আরো কয়েকজন ছেলে তেরে আসলো রিক্তর দিকে।যা দেখে রোজের পিলে চমকে উঠলো।ওও দৌড়ে গিয়ে রিক্তর সামনে দাড়ালো।তখনি একটা ছেলে ওর দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকালো।যা দেখে রিক্তর রাগে মুখ,চোখ লাল হয়ে গেলো।কপালের শিরা ফুলে উঠেছে।রিক্ত গিয়ে ঐ ছেলেটাকে মারতে লাগলো।রোজ এসব দেখে ভয়ে কুঁকড়ে গেলো।অবশেষে অনেক কষ্টে রিক্তকে ঐ ছেলেটার থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে দাড়ালো।এর মাঝেই সবাই আবার বাজে কথা বলতে লাগলো ওদেরকে নিয়ে।কথাগুলো ছিলো এমন,

“কি বেয়াদব ছেলেরে বাবা।পরিবার কি কোনো শিক্ষা দেয়নি!”

“আরে বড়লোকের উৎছন্নে যাওয়া ছেলেরা এমন মেয়েবাজই হয়।”

“মেয়েটাও কম বেহায়া না।এসব নষ্টা মেয়েদের জন্যই আজকে পুরো মেয়ে জাতিকে কথা শুনতে হয়।ছিঃছিঃছিঃ”

সবার এমন কুৎসিত কথা শুনে রোজের গা ঘিনঘিন করতে লাগলো।ছিহ কতটা নিচু মন-মানসিকতা এদের।

হঠাৎই কিছু মেয়ে এসে জোর করে রোজকে একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে একটা লাল শাড়ি,কিছু কাঁচের চুড়ি,আর ইমিটেশনের গহনা পরিয়ে দিলো।সাজ বলতে হালকা মেকআপ আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক।চোখের কাজল লেপ্টে গেছে কাঁদার ফলে।

রিক্তকেও জোর করে লাল পাঞ্জাবি-পাজামা পড়ানো হয়েছে।রিক্তর রাগে শরীর কাঁপছে।

অতঃপর রোজ আর রিক্তকে নিয়ে দুজনকে পাশাপাশি বসানো হলো।কাজি ডেকে বিয়ের নিয়ম-কানুন সব লিখা হলো।কিন্তু তা এতো সহজে নয়।রোজ আর রিক্তর মাথায় ওদেরই রিভলবার ঠেকিয়ে রেখেছে সবাই।তাই ওরা দুজন বাধ্য হয়ে এসব করছে।এতোটাই ভয়ানক এরা।

অবশেষে কবুল বলার পালা এলো।রিক্ত শুধুমাত্র রোজের মুখে দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কবুল বললো।রোজকে কবুল বলতে বলা হলে ওও কিছুতেই কবুল বলছিল না।তখনি একটা ছেলে বললো,

“হয় কবুল বলো।আর নয় হয় এক্ষুনি তোমার নাগরের খুলি গুলি করে উড়িয়ে দিবো।”

রোজ তৎক্ষনাৎ চিল্লিয়ে বললো,

“নাহহহহজহ প্লিজ।ওনাকে কি,কিছু কর,করবেন নাহ।”

পাশে থেকে একটা মেয়ে বললো,

“তাহলে কবুল বলো তারাতাড়ি”

রোজ আর কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে রিক্তর দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,

“কবুল কবুল কবুল”

আশেপাশের সবাই ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে উঠলো।

চলবে???