#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_০৯
#Anika_Fahmida
এনগেজমেন্টের যথাসময়ে অনু তার মা-বাবাকে সাথে নিয়ে আদ্রের বাসায় পৌঁছে যায়। আদ্রের বাসাটা অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। চারপাশে প্রচুর লোকজন। সবাই হাসিখুশিতে মেতে আছে। আদ্রের এনগেজমেন্ট শুনে সুমি এবং রিনি ভীষণ কষ্ট পায়। তাই সুমি ও রিনি আসে নি। আরও অনেকগুলো মেয়েই আদ্রের এনগেজমেন্ট শুনে আসে নি। কারণ ওরা আদ্রকে ভালোবাসে। আদ্র অনুর জন্য ড্রেস এবং গয়না পাঠিয়ে দিয়েছিল। সেগুলোই অনু পড়ে এসেছে।
আদ্র অনুকে দূর থেকে দেখেই মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে কারণ অনুকে খুব সুন্দর লাগছিল। অনু আদ্রের দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চোখ নামিয়ে নিল। কিছুক্ষণ পর আদ্র অনুর হাত ধরে সবার সামনে এনগেজমেন্ট রিং পড়াতে নিলে অনু আদ্রের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। আদ্র অবাক হয়ে অনুকে জিজ্ঞেস করল,
–কি হলো অনু? হাত সরালে কেন? তোমাকে রিংটা পড়াতে হবে। হাত দাও বলছি।
অনু পেছনে সরে গিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
–তুমি কি করে ভাবলে আদ্র ভাইয়া যে আমি তোমাকে বিয়ে করবো? যেখানে তোমাকেই আমি বিয়ে করবো না সেখানে তোমার সাথে আমার এনগেজমেন্টও হবে না।
উপস্থিত সবাই অনুর কথায় থমকে গেল। সবাই ইতিমধ্যে নিজেদের মধ্যে আনাগোনা শুরু করে দিয়েছে। অনুর কথা শুনে আদ্র অবাক হয়ে বলল,
–এসব তুমি কি বলছো অনু? তোমার মাথা ঠিক আছে?
অনু কঠোর গলায় আদ্রকে বলল,
–আমার মাথা ঠিকই আছে আদ্র ভাইয়া। তোমার মতো বদমেজাজি, বেয়াদব, রাগী ছেলেকে আমি কোনোদিনও বিয়ে করবো না। আমার তো মনে হচ্ছে তোমার মাথায় সমস্যা আছে। তুমি আমার লাইফটাকে জাহান্নাম বানানোর জন্য আমাকে বিয়ে করতে চাইছো।
আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,
–অনু তুমি কিন্তু লিমিট ক্রস করছো।
অনু আদ্রকে হাসতে হাসতে বলল,
–আমি কেন লিমিট ক্রস করবো? আমার থেকেও সুমি আপু, রিনি আপু, তানিয়া আপু অনেক সুন্দর। তোমাকে তারা অনেক পছন্দও করে। তাদের রেখে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও এতেই তো বোঝা যায় তোমার মতলব ভালো না। আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।
আদ্র এবার রাগী স্বরে অনুকে বলল,
–অনু প্লিজ স্টপ ইট। কিসব উল্টা পাল্টা তুমি বলছো? বেশি বাড়াবাড়ি করো না। তোমার আমাকেই বিয়ে করতে হবে। ইউ হেভ নো অপশন।
অনু গম্ভীর স্বরে আদ্রকে বলল,
–তুমি যতই আমাকে জোর করো না কেন আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। আমার তো মনে হয় তোমার চরিত্র খারাপ। মেয়ে মানুষ দেখলে তোমার মাথা ঠিক থাকে না। তাই না আদ্র ভাইয়া? নাহলে কয়েকদিনের মধ্যেই আমার পেছনে এভাবে কুকুরের মতো ঘুরঘুর করতে না।
আদ্র এবার অনুর কথায় প্রচুর রেগে গেল। নিজের রাগকে আর আদ্র সামলাতে পারলো না। আদ্র অনুকে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল। চড়টা এতোটাই জোরে ছিল যে অনু মাটিতে ছিটকে পড়ে কাঁদতে লাগলো। চড় দেওয়ার কারণে অনুর গালটা লাল হয়ে গেছে। আদ্র অনুকে টেনে তুলে হাত মুচড়ে বললো,
–কি বললি তুই আবার বল? আমার চরিত্র খারাপ? মেয়ে মানুষ দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না? আমি কুকুরের মতো তোর পেছনে ঘুরঘুর করি? কি হলো আবার বল কি বলেছিস তুই?
আদ্র অনেক হিংস্র রূপ ধারণ করেছে। চোখ মুখ আদ্রের লাল হয়ে গেছে। অনু ভয় পেয়ে আদ্রের এই রাগী রূপ দেখতে লাগলো যা অনু আগে কোনোদিন দেখে নি। দেখবে কি করে? অনু তো আদ্রের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। অনু হাতে ভীষণ ব্যথা করছে। অনু কাঁদতে কাঁদতেই আদ্রকে বললো,
–আমার হাত ছাড়ো আদ্র ভাইয়া। আমার ব্যথা লাগছে।
আদ্রের বাবা আনোয়ার হোসেন আদ্রকে বলল,
–আদ্র ওর হাত ছেড়ে দাও। কি শুরু করলে?
আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে থেকেই রেগে ঘন নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে আনোয়ার হোসেনকে বলল,
–না বাবা। আমি অনুকে ছাড়তে পারবো না। এখন তো আরও ছাড়বো না। আমাকে এসব কথা বলার ওর সাহস হয় কি করে? তুমি কোনো কথা বলো না বাবা।
অনু ভয় পেয়ে তার বাবা আরমান রহমানের দিকে তাকিয়ে ডাকতে লাগলো,
–আব্বু আদ্র ভাইয়ার কাছ থেকে আমাকে বাঁচাও। তোমার মেয়েকে মেরে ফেলবে আব্বু। আমাকে বাঁচাও।
অনু আদ্রকে সবার সামনে বিয়ে করতে অস্বীকার করায় এবং আদ্রকে ভীষণ অপমান করায় আরমান রহমান অনুর উপর খুব রেগে গেছেন। তাই তিনি কিছু না বলে রেগে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। অনু বুঝতে পারল তার বাবা রেগে আছেন। অনু তার মা আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে অসহায় স্বরে বলল,
–আম্মু তুমি তো আমাকে বাঁচাও।
আমেনা বেগমও অনুর উপর রেগে আছেন। তাই আমেনা বেগম অনুকে রাগী স্বরে বলল,
–তুই সবার সামনে আমাদের মান সম্মান কিছুই রাখলি না। তোর বাবার মান সম্মানের কথাও চিন্তা করলি না। তোর মতো মেয়ে মরে যাওয়াই ভালো।
আমেনা বেগমের কথা শুনে অনু ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। রেহেনা পারভিন আদ্রকে গম্ভীর স্বরে বলল,
–আমি আগেই বলেছিলাম এই মেয়ে তোর যোগ্য না। তুই আমার কথা শুনলি না বাবা।
আদ্র নিজের দুই চোখ বন্ধ করে গম্ভীর স্বরে রেহেনা পারভিনকে বলল,
–চুপ করো মা। আমি কিছু শুনতে চাই না।
আদ্র অনুর দিকে আবারও চোখ লাল করা রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। অনু আদ্রের এই দৃষ্টি দেখে শুকনো ঢুক গিললো। অনু মনে মনে বলল,
–আমি এখন কি করে এই আদ্র ভাইয়ার হাত থেকে বাঁচবো? আমি কি একটু বেশি সাহস দেখিয়ে ফেললাম? এমন কিছু হবে আমি তো ভাবি নি। আদ্র ভাইয়া এতোটা ভয়ংকর আমি তো বুঝতে পারি নি। আদ্র রাগী স্বরে অনুকে বলল,
–আমি চরিত্রহীন তাই নারে অনু? আজ আমি তোকে দেখাবো চরিত্রহীনরা কেমন হয়।
আদ্রের কথা শুনে অনুর বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠল। আদ্র সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–আজ আমার এবং অনুর এনগেজমেন্ট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হলো না। আপনারা সবাই যে যার বাসায় চলে যেতে পারেন।
অনেকেই চলে যেতে লাগলো। আর অনেকেই ভাবছে এখন আদ্র কি করবে? তাই বেশিরভাগ মেহমান দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো। অনু আদ্রকে বিরক্ত হয়ে বলল,
–আমার হাত ছাড়ো আদ্র ভাইয়া।
আদ্র অনুর হাত মুচড়ে বলল,
–এই হাত ছাড়ার জন্য আমি ধরি নি। চল আমার সাথে।
অনু ভয় পাওয়া স্বরে আদ্রকে বলল,
–আমি তোমার সাথে কোথাও যাবো না। ছাড়ো আমাকে। ছাড়ো বলছি। কেউ বাঁচাও আমাকে।
কেউ এগিয়ে আসার সাহস পেল না। কারণ আদ্রকে সবাই ভয় পায়। আদ্র অনুকে সিঁড়ি দিয়ে টানতে টানতে উপরে নিতে লাগলো।
#চলবে…