তোমাকে নিয়েই গল্প পর্ব-০৫

0
1113

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:৫
#জুনাইনাহ_তাসনিম_অরহা

পিচ্চিটা ভূতের মুখোশ খুলে এখনো হাসছে।প্রথমে ভয় পেলেও এখন আর ভয় লাগছে না কারন এটা আর কেউ না সেই অসভ্য কাকার পাকনা ভাইপো।কিন্তু এ এখানে কেন??তাহলে কি কাকা ভাইপো আমার পিছু নিয়ে এখানেও চলে এলো??

–এই ছেলে এই ওইভাবে হাসছো কেন??আর এসব কি ধরনের ইয়ারকি হ্যা?

–তুমি ভিতু ভিতু।হাহাহহাহাহহাহহা তুমি ভিতু।

–খবরদার আমায় ভিতু বলবেনা।তোমাকে তো আমি..বের হও বের হও আমার ঘর থেকে…

–ওকে বের করে দিচ্ছিস কেন??আর তুই ওইভাবে চিল্লালি কেন?(দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি বাড়ির সবাই এসে হাজির।অন্তু ভাইয়া এসে সবার মধ্য থেকে এগিয়ে এসে কথাটা বলে)

–চিল্লাবো না তো কি করব?এই পিচ্চি ভুতের মুখোশ পরে আমাকে ভয় দেখায়ছে।এখন আবার ভিতু ভিতু করে ক্ষেপাচ্ছে এই জন্যেই তো ওরে এই ঘর থেকে বের করে দিচ্ছি।(রেগে গিয়ে)

–হাহহহাহহাহহাহাহহাহ(সবাই একসাথে হেসে ওঠা)

–বোন রে ওইটা তো তোর অন্তু ভাইয়ের ছেলে।আমাদের আয়ান বাবু(আকাশ ভাই হাসতে হাসতে বলে)

–হোয়াট??ও অন্তু ভাইয়ার ছেলে??(আমি অবাক হয়ে)

–হ্যা আমি তোমার অন্তু ভাইয়ারই ছেলে কাআআআআ…..হিহিহিহহহহিহি…

–আল্লাহ!শেষ পর্যন্ত এই ছিলো তোমার মনে?আমাকে কি শান্তিতে থাকতে দিবানা তুমি?(মনে মনে ভাবলাম)

–আয়ান বাবু এই কা টা আবার কি গো??(আকাশ ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলে)

–মেজোকাকু এইটা হলো সূচী ফুপিকে দেয়া স্পেশাল নাম।ও তোমরা বুঝবে না।

–আচ্ছা।তোমার দেয়া নাম অবশ্য আমাদের না বুঝারই কথা।তুমি তো জিনিয়াস আমাদের,পাকনা একটা(আকাশ ভাই আয়ানকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে বলে)

–আচ্ছা কা তুমি খেতে এসো।আমরা কি দুপুর পর্যন্ত তোমার অপেক্ষা করবো নাকি??খেতে এসো..

সবাই চলে যায়।কিন্তু আয়ান যেতে যেতেও দুষ্টু হাসি দিয়ে যায় যা দেখে সকাল সকাল আমার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেছে।পিচ্চিটা এখানে তারমানে ওই অসভ্য কাকাও আছে।ওনার কথা ভেবেই আমার মাথা থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত গরম হয়ে যাই।আমাকে কিভাবে ইনসাল্ট করলো সবার সামনে,আমি তো তার কাছে ক্ষমা চাইতেই গিয়েছিলাম।যদি ওই লোকটা এখানে থেকে থাকে তাহলে আমি তো ওনাকে খুন করে ফেলবো।

ফ্রেশ হয়ে নিচে খেতে আসলাম।আমাকে দেখে মামি বলে উঠলো,
–এসে গেছিস মা।বস বস।
(আমি চেয়ার টেনে বসতেই যাবো তখনি কেউ একজন আমার চেয়ারটা টেনে বসে পড়ে।আমি খুব বিরক্ত হয়ে তাকাই।কিন্তু মানুষটার মুখ টা দেখে আরো বিরক্ত হয় প্লাস রেগে যাই।অবশ্য আগেই আন্দাজ করেছিলাম যে ভাইপো যখন এসে গেছে কাকাও আসবে।কিন্তু এখানে এইভাবে আবার আমার পিছনে লাগবে তা কে জানতো?)
–কি রে অভ্র তুই?ও বসতে যাচ্ছিলো তুই চেয়ারটা টেনে নিলি??(মামি বলে ওঠে)
–মা এটা আমার চেয়ার।আর আমার চেয়ারে বসেই আমি খাবার খাবো।ও তো বাড়ির গেস্ট অন্য কোথাও বসে খাক।এমনিতেও তো আমার ঘরটা ওরে দিয়ে দিয়েছো।আমি বাড়ির ছেলে হয়েও গেস্ট রুমে ঘুমাবো।হাই রে কপাল….
–ও মোটেও গেস্ট না।ও এই বাড়ির নাতনি।তোমার যতোটুকু অধিকার ওরও ততোটুকুই অধিকার মনে রেখো
(আমার মামা সাইড থেকে বলে ওঠে।মামাকে দেখে অসভ্যটা হালকা ভয় পেয়ে যায়।আমি মনে মনে বেশ খুশি হয় ওনাকে বকা খেতে দেখে)
–না বাবা আসলে…
–আজকে যা বলার বলেছো আগামীতে এসব কথা যেন না শুনি।সূচী মা তুই আমার কাছে আয়,আমার পাশে বস।

আমি হাসিমুখে মামার কাছে গিয়ে বসি।খেতে খেতে আমার কলেজ লাইফের গল্প করি।সৌরভও ওর স্কুলের গল্প করে।সবাই টুকটাক গল্প করছে শুধু ওই অসভ্যটা বাদে।হটাত সৌরভ বলে ওঠে,,
–অভ্র ভাই তুমি কি করো??

–কে আমি??(জনাব এমনভাবে কথাটা বলে যেন খেয়ালই করেননি)

–হ্যা তুমি।তোমার পড়াশুনা নিয়ে কিছু বলো

–আমি দা ইশরাক এহসান অভ্র কি করি সেটা জানতে চাস?

–হুম।

–আমি আসলে..

–কাকু মানুষের গায়ে জুস মেরে বেড়ায়(অসভ্য কাকার কথার মাঝে পাকনা ভাইপোটা বলে ওঠে)

–হ্যা এক্সাটলি।

–মানে??(সৌরভ অবাক হয়ে যায়)

–ও তুই বুঝবি না।যাই হোক আমার খাওয়া শেষ আমি উঠবো।পরে আলাদা দেখা করিস বুঝাই দিবানে।

অসভ্যটা টেবিল থেকে উঠে যায় আর যাওয়ার সময় আমার দিকে ৩২পাটি দাঁত বের করে হাসি দিয়ে যায়।ওনার হাসি দেখে মন চাচ্ছে ঘুষি মেরে সব গুলো দাঁত ফেলে দিই।তারপর বোকড়া হয়ে এতো কথা বলিস।হাহ!

৯.
স্নিগ্ধা ভাবি মানে অন্তু ভাইয়ার বউ মানুষটা অনেক ভালো।এই প্রথমবার দেখা কিন্তু মনেই হচ্ছে না যে আমাদের প্রথম দেখা।উনি আমাদের এমন ভাবে আপন করে নিয়েছেন যেন যুগ যুগ ধরে পরিচয়।তবে উনি কিছুদিন ধরে অসুস্থ।আবার মা হতে চলেছেন তো,সেকেন্ড প্রেগন্যান্সিতে একটু প্রবলেম ছিলো।বাড়ির সবাই বাচ্চাটা এ্যাভর্সন করাতে বলেছিলো কিন্তু উনি করাননি।জিদ ধরে বাচ্চাটা রেখেছেন।এখন ওনার সাড়ে সাত মাস চলছে।সেসব নিয়েই গল্প করছি ভাবি,আমি আর বড়াপু ভাবির ঘরে বসে।
–আচ্ছা ভাবি ছেলে না মেয়ে হবে আপনার?(আপু জিজ্ঞেস করে)
–জানি না গো।আল্ট্রাসোনো করাইনি।তোমার ভাইয়া চেয়েছিলো কিন্তু আমি বললাম থাক।আল্লাহ যা দিবেন তাতেই খুশি।
–হুম ভালো করেছেন।এতে করে এক্সাইটমেন্ট থাকবে বেশি।
–হ্যা ঠিক,আমার ছোট ননদিনি যে খুব বোঝে।
–হ্যা তা তো বুঝি(নিজের জামার কাল্পনীয় কলার ঠিক করতে করতে)
–বেশি বোঝে বলেই টেনেটুনে ভার্সিটিতে উঠা লেগেছে।যদি পড়াশুনা করতো তাহলে ভালো মেরিটে,ভালো সাবজেক্ট নিয়ে পড়তে পারতো।
–আহ সুমনা পড়ালেখার কথা বাদ দাও।তারপর বলো আমার নন্দাদের কি অবস্থা?
–কি যে বলো ভাবি।ওসব কিছু নেই(আপু আমতা আমতা করে বলে)
–আর ছোট জনের??
–আমারও নেই।ওসব ফালতু কাজে টাইম ওয়েস্ট করার মতো টাইম আমার নেই।(আমি ভেংচি দিয়ে কথাটা বলি)
–প্রেম করার মতো চেহারাটাও নেই(পুরুষ কন্ঠ শুনে সবাই সাইডে তাকাই,অসভ্যটা এখানেও চলে এসেছে আমাকে অপমান করতে)
–অভ্র এসব কি কথা হ্যা??সূচীর প্রেম করার মতো চেহারা নেই মানে?কতো সুন্দর চেহারা,যে কোন ছেলেই তো এক দেখায় ওর প্রেমে পড়ে যাবে।(ভাবি আমার মুখে হাত দিয়ে বলে)
–হাহহাহাহহাহাহ হাসিও না আর ভাবি।ছেলেরা নাকি এক দেখায় ওর প্রেমে পড়ে যাবে।হাহহাহাহহাহহাহ…..
–ভাবি আসলে কিছু মানুষের সুন্দর কিছু দেখার চোখ বা মন কোনটাই নেই।অন্তরে বিষ আর চোখে যতোসব পচা জিনিস দেখার অভ্যেস।(আমি টিটকারি করে বলি)
–মানে??(ভাবি অবাক হয়)
–মানে কিছু না ভাবি।তোমার ছোট ননদ মানুষ চেনে না এটাই বুঝালো।যাই হোক,তোমার কাছে মাথা ব্যাথার ওষুধ হবে।থাকলে দাও তো প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।
–হ্যা আছে তো।ওই যে ওই ড্রয়ারে।সূচী বোন ড্র‍য়ার থেকে ওরে একটু বের করে দিবা?
–আমি??
–হ্যা কোন সমস্যা?
— না না।সমস্যা আর কিসের?দিচ্ছি।

আমি ড্রয়ার থেকে ওষুধ বের করে ওনার হাতে দিই।উনি ওষুধটা নিয়ে আস্তে করে বলেন,
–তুমি না আসলে অসুন্দর না
(আমি চোখ উঁচু করে ওনার দিকে তাকাই)
–তুমি আসলে শাঁকচুন্নির মতো দেখতে।হাহহাহহাহহাহাহ….
অসভ্যটা হাসতে হাসতে চলে যায় আর আমি রাগে ফুসতে থাকি।

চলবে।