তোমাতেই আমি মগ্ন পর্ব-০৭

0
331

#তোমাতেই_আমি_মগ্ন 🌸

#পর্ব_০৭

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

নিশান চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।দিশা কিছুক্ষণ চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থেকে বললো,

আপনি বিয়ার খান?(দিশা)

নিশান গলা ঝাঁঝিয়ে বললো,

ইয়ে মানে বিদেশে থাকতাম তো তাই আরকি……(নিশান)

দিশা নিশানকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

Bad habit.আচ্ছা আবির ভাইয়া-ও কি ওইসব খায়?(দিশা)

আরে না আবির অনেক ভালো ছেলে।ও ওইসব খায় না।(নিশান)

আপনিও তাহলে খাওয়া ছেড়ে দিন।কারণ ওইসব খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর।(দিশা)

আপনি যখন বলেছেন তখন তো ছেড়ে দিতেই হবে।(নিশান)

মানে?আমি বললাম বলে ছেড়ে দিবেন?(দিশা)

দিশা নিশানের দিকে তাকিয়ে আছে।নিশান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দিশার কানের কাছে মুখ এনে বললো,

আমি কিন্তু কালকে আপনাকে খুব ভালো করে নোটিশ করেছি।একটু আলাদা ভাবেই।(নিশান)

নিশান মুচকি হেসে দিশার সামনে থেকে চলে গেল।দিশা নিশানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।



অনুলতা…..(আবির)

অন্না হোটেলের চারিপাশটা ঘুরে দেখছিল।হঠাৎ করে আবির এসে ডাক দিলো।অন্না পিছনে ফিরে দেখে আবির দাঁড়িয়ে আছে।

অন্নাকে দাঁড়াতে দেখে আবির অন্নার কাছে এগিয়ে গেলো।

কিছু বলবেন আপনি?(অন্না)

তুমি আমার সাথে এক কাপ কফি খেতে যাবে প্লিজ।আসলে কালকে পরিস্থিতিটা এমন হয়েছিল তুমি ক্যাফে থেকে বের হয়ে চলে গেলে আর আমি…..থাক এইসব বলে আর লাভ নেই।তুমি যদি যাও তাহলে আমার ভালো লাগবে।(আবির)

অন্না কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,

আচ্ছা চলুন।(অন্না)

///

অন্না আর আবির ক্যাফেতে বসে আছে।

অনুলতা তুমি বসো আমি বরং অর্ডারটা দিয়ে আসি।(আবির)

অন্না মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।আবির উঠে চলে গেলো।অন্না সামনে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে কালো কোর্ট আর প্যান্ট পড়ে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছে।ছেলেটাকে দেখে অন্না বেশ অবাক হয়েছে কারণ ছেলেটা ফাহাদের মতো দেখতে।

অন্না চোখ-মুখ শক্ত করে ছেলেটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

আপনি এখানে?(অন্না দাঁতে দাঁত চেপে বললো)

ছেলেটা মোবাইল নামিয়ে বললো,

সরি।আপনি কি আমাকে চিনেন?(ছেলেটা)

আপনাকে আমি কি করে ভুলে যাই মি.ফাহাদ হোসেন।(অন্না)

আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।আমি ফাহাদ হোসেন না।আমার নাম ফারাবী খান।(ফারাবী)

ফারাবী কানে ফোন দিয়ে কথা বলতে বলতে হেঁটে চলে গেল।অন্না হা হয়ে তাকিয়ে আছে।ফারাবী ক্যাফে থেকে বের হওয়ার আগে একবার অন্নার দিকে তাকালো তারপরে ক্যাফে থেকে বের হয়ে চলে গেল মোবাইলে কথা বলতে বলতে।

এটা কি করে সম্ভব?অবিকল ফাহাদ হোসেনের মতো দেখতে।ফাহাদ কি আমার সাথে মজা করলো?এতোটা মিল কি করে হতে পারে?উনি কি ফাহাদ নাকি সত্যি ফারাবী খান?(অন্না)

অন্নার হাত-পা কাঁপছে।অন্না ধীর পায়ে হেঁটে চেয়ারে এসে বসলো।আবির এসে দেখে অন্না মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।আবির এসে অন্নার পাশে বসলো।

অনুলতা কি হয়েছে তোমার?(আবির)

আবিরের কথায় অন্না মাথা উঠিয়ে বসলো।

না আবির বাবুকে কিছু বলা ঠিক হবে নাহ্।হয়তো গিয়ে ঝামেলা করতে পারেন।আগে আমার নিশ্চিত হতে হবে।(অন্না মনে মনে বললো)

কিছু না।আসলে হঠাৎ করে কিছুদিন আগের ঘটনা মনে পড়ে গেল তাই।(অন্না)

অনুলতা নিজেকে শক্ত করো।আর এগুলো ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করো।(আবির)

যতই ভুলে যেতে চাই না কেন সেই মুখটা তো বারবার আমাকে দেখতে হয়!তাহলে কিভাবে ভুলতে পারবো আমি?(অন্না মনে মনে বললো)




অন্না হোটেলের রুমে এসে বসে আছে।সে ফাহাদ আর ফারাবীর মধ্যে মিল খোঁজার চেষ্টা করছে।

ফাহাদের তো নাকের ডগায় একটা ছোট তিল ছিল কিন্তু ফারাবীর তো সেটা নেই।আর ফাহাদের গলায় একটা ট্যাটু ছিল।সেটাও ফারাবীর নেই।আর ফারাবী ফাহাদের থেকে কিছুটা লম্বা হবে।ফাহাদের সাথে ফারাবীর চেহারা অবিকল মিল রয়েছে।তবে এই বিষয়গুলোয় তো মিল নেই।আর ভয়েসটাও মেইবি একটু ডিফারেন্ট।তবে ফাহাদের সাথে অনেককিছু না মিললেও কালকে রাতে আমাকে যেই ছেলেটা বাঁচিয়ে ছিলো তার সাথে অনেক মিলে যাচ্ছে।বিশেষ করে হাইট আর ভয়েস আর শরীরের গঠন তো আছেই।ওফ!আমি জাস্ট পাগল হয়ে যাবো।কিছুই তো বুঝতে পারছি না।এটা কি ফাহাদ নাকি ফারাবী?(অন্না)

অন্না আনমনে বসে আছে।দিশা,তিথি আর নিতু রুমে এসে দেখে অন্না চুপচাপ বসে আছে।

কি রে অন্না তোর আবার কি হলো?(তিথি)

তিথির কথায় অন্নার ধ্যান ভাঙ্গলো।

আরে কি হবে আমার?এমনিই বসে ছিলাম।(অন্না)

আরে রেডি হয়ে নে তাড়াতাড়ি।সন্ধ্যা তো হয়ে গেলো।পার্টি শুরু হয়ে যাবে।(নিতু)

হুম তোরা রেডি হতে শুরু কর।আমিও রেডি হচ্ছি।(অন্না)




সব মানুষজন চলে এসেছে।আবির দাঁড়িয়ে আছে অন্নার অপেক্ষায়।

কি রে দোস্ত!ওমন হা হয়ে গেটের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?(নিশান)

আরে অন্না এখনো আসছে না।(আবির)

আবির তুই অন্নাকে কিছু বলেছিস?(নিশান)

না।আর ও-কে কিছু আমি বলতেও চাই না।(আবির)

আবির যা করবি ভেবে চিন্তে কর।(নিশান)

নিশান প্লিজ এখন উল্টাপাল্টা কোনো কথা বলিস না।(আবির)

নিশান দেখলো দিশা একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।নিশান দিশার দিকে এগিয়ে গেলো।

কি ব্যাপার এমন একা একা দাঁড়িয়ে আছেন যে?(নিশান)

আরে ওরা তিনজনে এখনো আসছে না।(দিশা)

তিনজন মানে?(নিশান)

অন্না,নিতু আর তিথি।(দিশা)

চলে আসবে।আপনার এতো টেনশন করতে হবে না।(নিশান)

আপনি জানেন কিছু?এই বাংলোর আশেপাশে ভূত-প্রেতের বসবাস।(দিশা)

দিশার কথা শুনে নিশানের কাঁশি শুরু হলো।

আরে আপনার আবার কাঁশি শুরু হলো কেন ভাই?(দিশা)

ভূ..ভূ..ভূত মানে?এখানে সত্যি ভূত আছে?আসলে আমি অনেক ভূতে ভয় পাই।(নিশান তুতলিয়ে বললো)

নিশানের এই অবস্থা দেখে দিশা খিলখিল করে হাসছে।নিশান এক দৃষ্টিতে দিশার হাসির দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ কিছু মনে হতে নিশান মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো।দিশা হাসি থামিয়ে চশমাটা ঠিক করে বললো,

কি হলো আপনি এমন মুখ গোমড়া করলেন কেন?(দিশা)

আমি আপনার ভাই হলাম কিভাবে?(নিশান)

দিশা মুচকি হেসে বললো,

তা আপনি কি আমার জামাই হন!(দিশা)

আপনি চাইলে আমি রাজি আছি।(নিশান)

দিশা চোখ গরম করতেই নিশান চলে গেলো।দিশা দাঁড়িয়ে হাসছে।

_🖤_

অন্না এসে চুপচাপ বসে আছে একটা চেয়ারে।তার বান্ধবীরা গল্পে ব্যস্ত।তাকে অনেক বার ডাকার পরেও সে যায়নি।তাই রাগ করে তারা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অন্না যতই সবার সামনে নিজেকে স্বাভাবিক দেখাক না কেনো আসলে তার বুকে এখনো তীব্র যন্ত্রণাটা রয়েছে।

আবির খেয়াল করলো অন্না একা একা বসে আছে।আবির কোর্টটা ঠিক করে অন্নার দিকে এগিয়ে গেলো।

অনুলতা একা বসে আছো যে?(আবির)

এখন আমার একা থাকলেই ভালো লাগে।(অন্না)

নিজেকে সবার থেকে আড়াল করা ঠিক না।(আবির)

আপনি যান না সবার সাথে গিয়ে কথা বলেন।আর একটু পড়েই তো আপনাদের খান কোম্পানির মালিক চলে আসবে।যে আপনাদের সাথে এতোবড় একটা ডিল করেছে।(অন্না)

আবির কিছু বলার আগেই তার বাবা ডাক দিলো।আবির উঠে গিয়ে তার বাবার পাশে দাঁড়ালো।

মি.খান সাহেব এই যে আমার ছেলে আবির।আর আবির উনি খান সাহেব।(আবিরের বাবা)

আবির হ্যান্ডশেক করলো।

আমার ছেলেও আসবে।আসলে এখন সবটা ওই সামলায়।আমি তো জাস্ট নামে চলি।(ফারাজ খান)

আচ্ছা আপনি এসে বসুন।(আবিরের বাবা)

একটু ওয়েট করেন আমার ছেলে চলে এসেছে।ও এখনি ভিতরে আসবে।(ফারাজ খান)

একটা ছেলে এসে ফারাজ খানের পাশে দাঁড়ালো।গায়ে নেভি ব্লু ব্লেজার,ব্লাক প্যান্ট,ব্লাক শার্ট,চুলগুলো স্পাইক করা।ছেলেটাকে দেখে আবির হা হয়ে তাকিয়ে আছে।আবির রাগে ফুসছে।আবির নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ছেলেটার কলার টেনে ধরে।

ছেলেটা চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে।

এই ফাহাদ হোসেন!তুই এখানেও চলে এসেছিস।তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো।(আবির দাঁতে দাঁত চেপে বললো)

আবিরের বাবা,অন্নার বাবা,খান সাহেব সবাই আটকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।আবির যেই ছেলেটার মুখে ঘুষি মারতে যাবে সেই ছেলেটা আবিরের হাত চেপে ধরলো।আবিরের হাত তার শার্টের কলারের থেকে খুব ধীরে সরিয়ে দিলো।তারপরে আবিরকে হালকা ধাক্কা দিলো।যার ফলে আবির দুই কদম পিছিয়ে গেলো।

বিয়েভ ইউর সেল্ফ মি.চৌধুরী।আমি ফাহাদ না।আমি ফারাবী।ফারাবী খান।সো আমার মনে হয় না দ্বিতীয় বার আপনি সেইম ভুল করবেন।(ফারাবী স্বাভাবিক ভাবে বললো)

তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।ও আমার ছেলে ফারাবী খান।ও কোনো ফাহাদ না।(ফারাজ খান)

আবির নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে।পাশে তাকিয়ে দেখলো অন্না দাঁড়িয়ে আছে।অন্না ইশারা করে আবিরকে নরমাল হতে বললো।

আই এম সরি।আমি আসলে বুঝতে পারিনি।উনার আর ফাহাদ হোসেনের মধ্যে অনেক মিল আছে।মিল বললে ভুল হবে দুজনে এক রকমই দেখতে।(আবির)

পৃথিবীতে এক রকম দেখতে সাতজন মানুষ হয় আবির সাহেব।(ফারাবী মুচকি হেসে বললো)

হুম হতে পারে।না জেনে রিয়েক্ট করাটা আমার ভুল হয়েছে।(আবির)

ইটস ওকে।(ফারাবী)

আবির হেঁটে চলে গেলো।অন্না দাঁড়িয়ে আছে ফারাবীর উল্টো পাশে।তার চোখ ফারাবীর দিকে।ফারাবীর আচরণ দেখে তার আর ফাহাদের কোনো মিলই পাচ্ছে না।

ফারাবী তাকিয়ে দেখলো সকালের ক্যাফের মেয়েটা তার দিকে তাকিয়ে আছে।ফারাবী মুচকি হেসে অন্নার দিকে এগিয়ে গেলো।অন্নার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,

কি ম্যাডাম ক্রাশ খেয়েছেন নাকি?(ফারাবী)

ফারাবীর কথায় অন্নার ধ্যান কাটলো।অন্না তাকিয়ে দেখে ফারাবী তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।অন্না মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।

বাই দ্যা ওয়ে আবির সাহেব কি আপনার হাসব্যান্ড নাকি?(ফারাবী)

আপনার এমন কেনো মনে হলো?(অন্না)

না মানে আপনিও সকালে আমাকে ফাহাদ ভাবলেন আর উনিও আমাকে ফাহাদ ভাবলো তাই আরকি!(ফারাবী)

না জেনে কোন কিছু বলা ঠিক না মি.খান।আর ফাহাদ হলো শুধু একটা নাম না।আমার জীবনের কালো দাগ।(অন্না শক্ত কন্ঠে কথাগুলো বললো)

অন্না ফারাবীর পাশে থেকে চলে গেলো।ফারাবী অন্নার যাওয়ার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

কালো দাগ মানে কি?(ফারাবী)

/\

পার্টি শেষ হয়ে গেলো।খান সাহেব আর ফারাবী চলে যাচ্ছে।সবাই দাঁড়িয়ে তাদের বিদায় জানাচ্ছে।ফারাবী অন্নার পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় বললো,

এমন পাতলা ওড়না গায়ে প্যাচিয়ে ঘুরে বেড়িয়েন না।এখানে কিন্তু প্রচুর ঠান্ডা।(ফারাবী)

ফারাবী মুচকি হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেলো।

তার মানে উনিই ছিলো কালকে।যে আমাকে গুন্ডাদের থেকে বাঁচিয়েছে।যাক তাহলে আমি ঠিকই চিনেছি।(অন্না মনে মনে বললো)

//🍂//

অন্না রাতে বিছানায় শুয়ে আছে।দিশা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।অন্নার চোখে ঘুম নেই।তার মাথায় একটা জিনিস ঘুরপাক খাচ্ছে ফারাবী কি ফাহাদ?নাকি দুজনে আলাদা?

একটা মানুষের সব পাল্টানো সম্ভব বাট ভয়েস আর হাইট তো পাল্টানো যায় না।তার মানে ফারাবী কি ফাহাদের জমজ ভাই?তবে ফারাবীর সাথে ফাহাদের স্বভাবের কোনো মিল নেই।ফারাবী কি সুন্দর ভদ্রভাবে কথা বলে,মহিলাদের যথেষ্ট সম্মান দিয়ে চলে,তারপরে তার হাসিতে কোন নোংরামি নেই যা ফাহাদের হাসিতে দেখা যায়।(অন্না)

#চলবে……………………………………

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন!]