তোমাতেই সীমাবদ্ধ পর্ব-১০

0
1009

#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part :10
#Mishmi_muntaha_moon

আরিশ ভাইয়া একহাত দিয়ে আমাকে উনার সাথে চেপে ধরে চিল্লিয়ে বাস চালক কে ধমক দিতে লাগলেন এতো জোরে ব্রেক করার জন্য। কিন্তু উনি যে এখানে আমাকে এভাবে নিজের সাথে চেপে রেখেছে সেখানে উনার খেয়ালই নেই।
আমি ঠোঁট টা হাল্কা কামড়ে রেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি।আরিশ ভাইয়া কথা বলা শেষ করে একহাত দিয়ে সামনে থাকা কিছু চুল পিছের দিকে ঠেলে আমার দিকে তাকায়।তারপর বলে

–তুই তো বড্ড দুর্বল রে!তোর জন্য তো আমার মতো একটা স্ট্রং হাত চাই।

আমি উনার কথা শুনে ভাইয়ার হাত ছাড়িয়ে ঠিক হয়ে বসে বললাম

–আমার জন্য আমিই যথেষ্ট।

বলে জানালার দিকে ফিরে বসলাম। আরিশ ভাইয়াও বাকা হেসে উনার কাজে মন দিলেন

অর্ধেকের বেশি রাস্তা পাড় করে অবস্থা খারাপ। কিছুক্ষন নিঃশ্বাস বন্ধ করে রেখে বমি করে দিলাম একেবারে আরিশ ভাইয়ার পায়ের উপর। বমি টমি করে অবস্থা বেহাল হওয়ার পর কিছুটা শান্ত হলাম।ভাইয়া উনার পেন্ট পরিষ্কার করে আমার দিকে ব্রু কুচকে তাকিয়ে বলল

–এটাই বাকি ছিলো।বেয়াদব মেয়ে জার্নি করতে পারিস না তাহলে এসেছিস কেনো তোকে তো বাসায় একা রেখে আসা উচিত ছিলো।

ভাইয়ার কথা শুনে অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কাউকে ভালোবাসলে তার সাথে নিশ্চয়ই আরিশ ভাইয়ার আমার সাথে করা আচরণের মতো আচরণ করে না।উনি কি সত্যি আমায় ভালোবাসে নাকি?
আমাকে অন্যমনস্ক হয়ে থাকতে দেখে ভাইয়া আবারও একটু রেগে বলল

–কি ভাবছিস এতো?

ভাইয়ার কথায় ঠোঁট বাকিয়ে বললাম

–আমি জার্নি করতে পারি না কে বলল।রিকশা করে আমি পুরো দুনিয়া ঘুরতে পারবো।

–তাহলে বাসে আসলি কেনো? রিকশা করেই যেতি।

আমি কিছু বললাম না।সিটে গা এলিয়ে দিলাম।অনেক উইকনেস ফিল হচ্ছে।

হাল্কা ধাক্কায় চোখ খুলে আশেপাশে তাকিয়ে অবস্থা বুঝার চেষ্টা করলাম।আশেপাশে তাকিয়ে বাসের মতো মনে হতেই ঘার উচিয়ে উপরে তাকাই মিথিলা আপুর কাধে মাথা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম।উঠে ঠিক মতো বসতেই আপু বলল

–এতক্ষন কোথায় ঘুমিয়ে ছিলি খবর আছে?

আপুর কথা শুনে ধীর কন্ঠে বললাম

–কি বলছিস তোর কাধেই তো ঘুমিয়েছিলাম।

–জ্বী না আরিশ ভাইয়ার কাধে ঘুমিয়েছিলি।উনি একটু আগে আমাকে ডেকে তোকে উঠাতে বলে চলে গেলো।পুরো রাস্তা উনার কাধে ঘুমিয়েছিলি ভাবা যায়!

মিথিলা আপুর কথা শুনে ঘুম উড়ে গেলো। আরিশ ভাইয়ার কাধে ঘুমিয়েছিলাম।উফফ কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম খেয়ালই নেই।আর আমার তো জার্নির সময় ঘুমও পায় না। হয়তো বমির জন্য ঘুম এসেছিলো।

আপু আর আমি বাস থেকে নেমে আন্টিদের বাড়িতে গেলাম।দুই তলা বিল্ডিং।আর আশেপাশের ভিউ খুব সুন্দর।মেইন গেটের ভিতরে রাস্তার মত দুই পাশে বিভিন্ন ফুলের গাছ আর তার পিছনের দিকে ফল,শাক-সবজির গাছ।দেখতে খুবি সুন্দর লাগছে।দুই তলা বিল্ডিংয়ের উপর তলায় ভাড়া দেওয়া আর নিচ তলায় উনারা থাকে মাঝে মধ্যে আসলে।আমি আর আপু কিছুক্ষন হেটে ফুল গাছ আরও সকল গাছ দেখে ভিতরে যাই।ভিতরে যেতেই আম্মু তাড়া দিয়ে বলল

–তারাতারি গোসল করে নে।বমিও করলি গোসল করলে ভালো লাগবে।

আম্মুর কথায় আমিও সাই জানিয়ে আপু আর আমার থাকতে দেওয়া রুমে গিয়ে গোসল করে নিলাম।
গোসল করে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে বাহিরে গেলাম।সন্ধ্যা হয়ে গেছে।সোফার রুমে গিয়ে দেখি সবাই বসে আছে।আরিশ ভাইয়ার দিকে চোখ যেতেই দেখি উনি ব্লু রঙের পাঞ্জাবি পরে বসে মোবাইল টিপছে।ভাইয়ার পাঞ্জাবি দেখে বিস্ময় নিয়ে আমার থ্রি-পিস এর দিকে তাকালাম।আমার গায়েও ব্লু রঙের একটা থ্রি-পিস।রঙ মিলে গেলো কিভাবে কে জানে?ভাইয়া গভির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাতে আমি চোখ নামিয়ে আম্মুর পাশে বসলাম।কিছুক্ষন বসে উনাদের বিভিন্ন কথা শুনতেই আপু উচ্ছাসিত কন্ঠে বলল।

–ওয়াও জিনাত তোর আর আরিশ ভাইয়ার ড্রেসের কালার মেচিং হয়ে গেছে।

আপুর কথায় আমি আরিশ ভাইয়ার আড়চোখে তাকিয়ে দেখি উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।আপুর কথায় আবারও উনার দিকে তাকাই

–মেচিং ড্রেস পরলে পুরো কাপল মনে হয়।কাল আমরাও মেচিং কালারের ড্রেস পরবো ওকে?

আপুর কথায় নাহিদ ভাইয়া মুচকি হেসে বলল

–ওকে।

কালকে ঘুরতে যাওয়ার প্লেনিং করছে।এরই মধ্যে আরিশ ভাইয়াকে কেউ কল করায় উনি আন্টির উদ্দেশ্যে বলে

–আম্মু আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি তামিমের সাথে দেখা করতে।

বলে চলে যায়।

সকালে আমি আর আপু ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলাম।নিচে একটা ছেলে আর একাটা মেয়েকে দেখে আমি আপুকে বললাম

–আপু এরা কারা?

–এরা হয়তো আরিশ ভাইয়ার চাচাতো বোন হবে।কারণ উনার চাচা রা এখানেই থাকে হয়তো দেখা করতে এসেছে।

–ওহ।

আমি আর আপু নিচে গেলাম। মেয়েটার নাম ইতি আর ছেলেটার নাম ইহান।
ইহান ভাইয়া আমাকে দেখে আন্টিকে বলল।

–এইটা কে চাচি?

–আমার বোনের মেয়ে জিনাত।

–ওহ।

ইতি আপু আরিশ ভাইয়ার কাছে গিয়ে বলল

–কেমন আছো আরিশ ভাই?

–ভালো আছি তুই কেমন আছিস।আগের থেকে সুন্দরী হয়ে গিয়েছিস দেখছি।

আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে চটযলদি উনার মুখের দিকে তাকালাম।উনার মুখে এমন কথা খুব কমই শুনেছি আমি। হয়তো সুন্দরী মেয়ে দেখে মুখ থেকে বেড়িয়ে গেছে ছেলে বলে কথা।
আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে ইতি আপু লজ্জা পেয়ে বলল

–থেংক ইউ ভাইয়া।

উনার লজ্জাকে পাত্তা না দিয়ে আরিশ ভাইয়া গিয়ে ইহান ভাইয়ার সাথে কথা বলতে লাগলো।
আমি সোফায় বসে চিপস খাচ্ছিলাম তখনই হঠাৎ আরিশ ভাইয়া আর ইহান ভাইয়ার দিকে চোখ যেতেই দেখি ইহান ভাইয়া কিছু বলতেই আরিশ ভাইয়া ঘাড় ফিরিয়ে আমার দিকে একনজর তাকায় তারপর আবারও ইহান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে লাগে।
আমি উনাকে কথার মাঝে আমার দিকে এভাবে তাকাতে দেখে কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আবারও আমার কাজ করতে লাগলাম।

বিকেল দিকে আরিশ ভাইয়া আমি মিথিলা আপু,নাহিদ ভাইয়া,ইতি আপু, ইহান ভাইয়া বাহিরে গেলাম হাটতে।
আরিশ ভাইয়া নাহিদ ভাইয়া আর ইহান ভাইয়া কথা বলতে বলতে একসাথে হাটছে আর মিথিলা আপু ইতি আপু আর আমি একসাথে হাটছি।মিথিলা আপু ইতি আপুর সাথে কথা বলতে বলতে যাচ্ছে।আর আমি উনাদের সাথে সাথে হাটছি আমার কথা যেনো উনারা ভুলেই গেছে।
আরেকটু সামনে যেতেই আরিশ ভাইয়ার একটা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হওয়ায় থেমে যায়।আপু আর ইতি আপুও সেখানে গিয়ে দাড়িয়েছে। আমার আবার জুতো ছিড়ে গেছে কি এক ঝামেলা।উনাদের কথা বলতে দেখে আমি ঝুকে জুতো ঠিক করার চেষ্টা করতে লাগলাম।

অনেকক্ষন একটানা চেষ্টা করার পরও ঠিক করতে না পারায় ব্যর্থ হয়ে সামনে তাকাতেই দেখি আরিশ ভাইয়া আর উনার ফ্রেন্ড ছাড়া আর কেউ নেই।উনারা হয়তো কথা টথা বলে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে তাই বলে কি আমাকে একটু ডাক দিবে না।আমি মুখ ফুলিয়ে কোনোরকম হেটে আস্তে আস্তে করে সামনে বাড়তে লাগলাম।তখনই আরিশ ভাইয়ার ফ্রেন্ডের কথা কানে আসে।

–এই মেয়েটা কে আরিশ?

–জিনাত আমা,,,

ভাইয়াকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই ভাইয়াটা আবারও বলল

–তোর বোন টোন হবে তাই না?যাই হোক মেয়েটা খুবই সুন্দর।তোদের বাড়িতে মেয়ে রেখে আমি বিয়ের জন্য পুরো দুনিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছি।কালই মাকে নিয়ে তোদের বাড়িতে যাবো।

ওই ভাইয়ার কথা শুনে আরিশ ভাইয়া শক্ত কন্ঠে বলল

–ওর সাথে আমার এনগেজড হয়ে গেছে।তাহলে তুই বিয়ে করার আশা টা ছেড়েই দে।

ভাইয়ার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে পিছে ঘুরে তাকালাম।ভাইয়া কথাটা বলে ছেলেটাকে ওখানেই রেখে আমার দিকে বাড়তে লাগে।আমার কাছে আসতেই আমি অবাক হয়ে বলি

–কি বললেন আপনার ফ্রেন্ড কে?

ভাইয়া আমার কথা শুনে সাইড কেটে যেতে যেতে বলল

–কি বললাম।

ভাইয়া দ্রুত পায়ে হেটে সামনে বাড়তে লাগলো।আমি তারাতারি জুতো হাতে নিয়ে ভাইয়ার পিছে হাটা দিলাম।

চলবে—-
ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই