#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part:9
#Mishmi_muntaha_moon
আরিশ ভাইয়ার সাথে গাড়িতে বসে আছি।ভাইয়া কঠিন গম্ভীর হয়ে গাড়ি চালাচ্ছে।আমিও কিছুটা গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করলাম।
উনার সাথে কোনো কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। আমার হাজারবার থামাবার পরও জুবায়েরকে ইচ্ছামত মেরেছে।বেচারা ৩,৪ দিন আর হাটাচলা করতে পারবে বলে মনে হয় না। কিন্তু এতো মারার তো কোনোই প্রয়োজন ছিলো না। জুবায়েরে কথা শুনে মনে হলো আরিশ ভাইয়া কে আগে থেকে চিনে আর সম্মান ও করে তাহলে যদি বলতো আমি উনার বোন হই তাহলে আর জ্বালাতো না। কিন্তু শুধু শুধু উনি ঝামেলা করলো।
–
বাড়িতে এসেই রুমে চলে যাই।সাথে সাথেই তুবার কল এলো।
–হ্যা বল।
–ওয়াও জিনাত তোর ভাইয়া টা কত্তো কিউট। ইশ কি ধোলাই টা না দিলো ওই জুবায়েরকে।
–তুই কি এগুলো বলতে কল করেছি
–আরে নাহ শুন তুই পুরও কথা।উনি হয় তো তোকে লাইক করে তাই তো পসেসিভ বিহেভ করলো।
তুবার কথা শুনে মুড খারাপ হয়ে গেলো। এভাবেই এখন রাত্রি আর অদ্রির কথাগুলো মাথা থেকে যায় নি তার উপর সেই এক কথাই আবার শুনাচ্ছে।
–চুপ কর তো। আজেবাজে কথা বলবি না।উনি আমার ভাই হয়।ভাইয়ের সামনে বোনকে হেরেস করলে এমন বিহেব তো করবেই
–আচ্ছা তা যাই হোক হয়তো আমিই ভুল ভাবছি।শুন আমি ভাবছি আজ তুই আমাদের বাড়িতে আস আমরা একসাথে এসাইনমেন্ট করবো।
–দেখি বিকেল দিক দিয়ে আরিশ ভাইয়া পরাতে আসতে পারে। না আসলে তোদের বাসায় আসবো ওকে?
–আচ্ছা।
কল কেটে দিয়ে বারান্দায় যাই।আরিশ ভাইয়া আমায় ভালোবাসলে আমাকে উনি বলতো অবশ্য।উফফ আমিও কি সব ভাবছি ওরা দুজন মিথ্যা বলেছে আমাকে।
আরিশ ভাইয়া পরাতে এসেছে। কিছুক্ষন গম্ভীর মুখে পরা বুঝিয়ে আমাকে করতে বলল। আমিও সুন্দর মতো করে ভাইয়াকে দেখালাম। ভাইয়া কিছুক্ষন সুন্দর ভাবে দেখে চুপ করে গেলো।
পড়া শেষ করে বাহিরে গেলাম আম্মুরা কিছু নিয়ে কথা বলছে। আমি আপুর সাথে বসে বললাম
–কি কথা হচ্ছে?
–আন্টিরা কাল উনাদের দেশের বাড়ি যাবে।আন্টি আমাদেরও সাথে নিয়ে যেতে চাচ্ছে আর সেই ব্যাপারেই কথা হচ্ছে আমরা যাবো কি যাবো না!
–ওহ।
আমি উঠে আবারও রুমে চলে গেলাম। একটু পর আপু এসে খুশি হয়ে বলল
–ওয়াও আব্বুর কোনো আপওি নেই আর আব্বুর নেই তো আম্মুর ও নেই।
আমি আপুকে এতো খুশি দেখে ভ্রু কুচকে বললাম
–এতো খুশি হচ্ছিস কেনো। ভাব নাহিদ ভাইয়ার সাথে এই কয়েকদিন দেখা হবে না কথাও হবে না ভালো করে কারণ ঘুরতে যাচ্ছি তাহলে একসাথেই থাকবো বেশিরভাগ।
আমার কথা শুনে আপুর মুখের হাসি উড়ে গেলো। নিজে নিজে কিছু ভেবে বলল
–ইটস ওকে তিন দিনিই তো কোনো ব্যাপার হলো? হাহ
আপু ভাব নিয়ে চলে গেলো। আপুর কথা বলার ধরনে হেসে দিলাম। আপু একটু ফানি টাইপের আমি কোনো কারণে মন খারাপ থাকলে অনায়াসে হাসিয়ে ফেলে। আপু আবারও একটু পর এসে বলল
–ড্রেস চুস করে নে কাল সকালেই যাবে বললো। আর সকালে আমারা পুরো ফেমিলি আন্টিদের বাড়িতে যেতে বলেছে।
আপু নিজের জিনিসপত্র গুছাতে লাগল।আমিও ব্যাগে তিনটা জামা নিয়ে আপুর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি একটা বড় ব্যাগ আর একটা ছোট।আমি অবাক হয়ে বললাম
–তুই কয়টা ড্রেস নিয়েছিস?
–আরে ৫ টা ড্রেস আর মেকাপ এর সরঞ্জাম। এই ছোট ব্যাগ দেখছিস না এইটাতে সব মেকাপ।
আমি বিস্ময় নিয়ে বললাম
–ওহ!!
–
সবাই রেডি আর সবসময়ের মতো আপু এখনও সাজছে।আমিও নিচে যাচ্ছি না আপুর সাজগুজ করা দেখছি।আমরা সবাই একসাথে বাসে করে যাবো বলে প্লেন করেছে আন্টি আর আম্মু মিলে।
আমি ছোট বেলায় বাসে উঠলে বমি করতাম কিন্তু এখন এতোটা হয় না যদি আমি জানালার সাইডে বসি আর কানে হেডফোন গুজে গান শুনলে কোনো কথাই নেই।কিন্তু এখন যেহেতু ফেমিলিদের সাথে যাচ্ছি তাহলে কানে হেডফোন গুজে বসে থাকা তো যায় না।
আপুর রেডি হওয়া শেষ হতেই বাহিরে যাই।আপু চলে যায় আমি আরিশ ভাইয়ার রুম ক্রস করতে গিয়ে কিছু পরার আওয়াজে থেমে গিয়ে রুমের ভিতরে যাই।বুকসেল্ফ থেকে একটা ডায়েরি নিচে পরে গেছে।এই ডায়েরি আমি আরও একবার দেখেছিলাম। আর রাত্রি আর অদ্রি যেটার কথা বলছিলো তা কি এখান থেকেই দেখেছে?হয়তো।
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কিছুটা সাহস নিয়ে ডায়েরি খুললাম। নতুনভাবে কিছু পেজ লিখা হয়েছে।খুলে মনোযোগ দিয়ে পরতে লাগলাম
“মনে হচ্ছে আমি আরও গভীরভাবে ডুবে যাচ্ছি এই প্রেমময় বাস্তবতায়।নিজেকে সামলানোটা এখন আরও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই গভীর রহস্য প্রকাশ্যও পাচ্ছে।কিন্তু তোমার কাছে হয়তো এখনো সব ধোয়াশার মতো অথবা তুমি ভাই বোনের এই সম্পর্কের মাঝে হাড়িয়ে ফেলছো আমার প্রকাশ্য চোখের আকুলতা”
লেখাটা পরে কিছুক্ষন স্থির হয়ে রইলাম তারপর আবারও পাতা উল্টালাম।
“কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার স্কলারশিপ এর ব্যাপারে একটা কল এসেছিলো।আরও আগে আসলে হয়তো আমি খুশিমনে টিকিট গ্রহন করতাম কিন্তু এখন যে তোমার সাথে থাকার ইচ্ছা আমার অস্তিত্বে মিশে গেছে।তাই একটা ট্রিকস বের করেছি।টিকিটের পিছে তোমার নাম লিখে নিয়েছি যখনই সেই টিকিট টা দেখে মনে হবে আমি কিছু ভুল করেছি তখনই তার অপর পাশে তোমার নামটি দেখবো কারণ তোমার থেকে দূরে থাকার মতো শাস্তি তো আর দুটি নেই”
ডায়েরির ভিতরেই সেই টিকিট টা ছিলো।টিকিট টা দেখা মাত্র আগ্রহ ধরে না রাখতে পেরে টিকিটের উল্টা পিঠ দেখলাম স্পষ্ট ভাবে লিখা “জিনাত”
ডায়েরিটা অফ করে বুকসেল্ফের নির্ধারিত জায়গায় রাখলাম।এখন এই সত্যি টা জেনে ডায়েরির আর কোনো অংশ পড়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
নিচ থেকে ডাক পরায় ওরনার কোনা দিয়ে মুখটা হাল্কা মুছে নিচে গেলাম।সবাই বাহিরে যাচ্ছে আমিও উনাদের পিছু পিছু গেলাম। বাহিরে গিয়ে আন্টি আপুর উদ্দেশ্যে বলল
–নাহিদ কেও সাথে আসতে বলতি আমাদের সাথে গিয়ে ঘুরে আসতো।
আন্টির কথা শুনে আপু উচ্ছাসিত কন্ঠে বলল
–একদম ঠিক বলেছেন আন্টি।আমি এক কাজ করি এক্ষুনি কল করে বলি। ও নিশ্চয়ই আসবে।
আন্টির কথায় আংকেল ও সায় দিয়ে বলল
–হ্যা কল করে দেখ আসলে আমরাও খুশি হবো।
আপু খুশিতে গদগদ করে এক সাইডে গিয়ে ভাইয়াকে ফোন করলো।
–
নাহিদ ভাইয়া এসেছে আপুর অনুরোধে।আন্টি,আংকেল আম্মু,আব্বু আর আপু, নাহিদ ভাইয়া একসাথে বসেছে।আর আমি একা জানালার সিটে বসে আছি।তখনই কোথা থেকে আরিশ ভাইয়া এসে আমার পাশে বসলো।ভাইয়া বসতেই বাস চলতে শুরু করল।ভাইয়ার দিকে তাকানো অবস্থায় হঠাৎ বাস স্টার্ট হওয়ায় তাল সামলাতে না পেরে মাথায় সামনের সিটের সাথে বারি খেলাম।সাথে সাথে আরিশ ভাইয়া ধমক দিয়ে বলল
–কেমন কেয়ারলেস হলে এমনটা হয় মানুষের সাথে।সাধারণত একটা বাসে নিজেকে সামলাতে পারিস না তাহলে সারাজীবন কি করে সামলাবি।ডাফার।
ভাইয়ার কথায় কোনোরকম প্রতিক্রিয়া না করে ঠিক হয়ে বসলাম।কিছুটা উঁকি দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি আপু ভাইয়ার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত।আর আন্টি আংকেল আম্মু আব্বু মিলে কিছুর ব্যাপারে কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে।
আমি আবারও গোমড়া মুখ নিয়ে বসে পরলাম।আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি কারো সাথে কথা বলছে। হয়তো অন্য দেশের কারো সাথে কারণ ইংলিশ এ কথা বলছে।
আমি আবারও অন্যমনস্ক হয়ে বসে থাকতেই বাস জোরে ব্রেক করলো। আমি আবারও সামলাতে না পেরে পরে গেলাম কিন্তু এবার সামনের দিকে না একেবারে আরিশ ভাইয়ার প্রশস্ত বুকে গিয়ে পরলাম
চলবে….