তোমাতেই সীমাবদ্ধ পর্ব-১৩

0
804

#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part:13
#Mishmi_muntaha_moon

একদিন পর আমার জ্বর পুরোপুরি কমে যায়।আরিশ ভাইয়া ইদানীং খুব ভালো ব্যবহারই করে আমার সাথে

উফফ ভাবলেই ভালো লাগে আরিশ ভাইয়া আমার বয়ফ্রেন্ড। আসলেই কি বয়ফ্রেন্ড উনি তো আমায় প্রপোজ করেনি…তো কি হইসে ভালো তো বাসে।

এটা ভেবে ভেবে নিজে নিজেই মুচকি হাসছি ওই সময়ই আরিশ ভাইয়া রুমে প্রবেশ করে। আরিশ ভাইয়া কে দেখে নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে গভীর দৃষ্টিতে ভাইয়ার দিকে তাকাই। আরিশ ভাইয়া আমার রুমে এসে সোজা পড়ার টেবিলে পাশের চেয়ারে বসে গম্ভীর মুখে আমাকে ইশারা করে সামনের চেয়ারে বসতে বলে।
গত দুইদিন পড়ায় নি তাহলে কি আজ পড়াবে নাকি?
ফ্যালফ্যাল চোখে আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বেড থেকে নেমে ভাইয়ার সামনে থাকা চেয়ারে বসি।
মৃদু কন্ঠে আরিশ ভাইয়াকে বললাম।

–আপনি আমাকে পড়াবেন এখন?

আরিশ ভাইয়া গভীর মুখে টেবিল থেকে ইংলিশ বই বের করে বলল

–এইটা পরানোর সময় তাহলে পরাতেই আসবো অবশ্যই।

আরিশ ভাইয়ার কথায় মুখ গোমড়া করে ফেললাম।গত দুইদিন না পরে এখন আলসেমি লাগছে। পড়তে।কিছুটা মন খারাপ করে বললাম

–আরিশ ভাইয়া আপনি কাল থেকে আমায় পরা স্টার্ট করিয়েন আজ আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে।

আমার কথা শুনে আরশ ভাইয়া রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায় সাথে সাথে আমি খাতা কলম সামনে রাখি।কাল পর্যন্ত তো ভালোই ছিলো কতো খেয়াল রেখেছিলো আর আজ আবার আগের মতো স্ট্রিক্ট হয়ে আছে।

লিখতে লিখতে হাত ব্যাথা হয়ে গেছে।সব এসাইনমেন্ট আমাকে দিয়ে লিখালো।হাতের ব্যাথা মেজাজ টা খিটখিটে হয়ে আছে।আরিশ ভাইয়া পরনো শেষ করে চেয়ার থেকে উঠে আমার গালে হাত রেখে বলল

–যখন আমি পরাতে আসবো তখন আমি শুধুই স্যার।না ভাইয়া না অন্য কিছু বুঝলি?আর এখন পড়া শেষ করে নে রাতে কোথাও নিয়ে যাবো।

আরিশ ভাইয়া চলে গেলো।আমি গোমড়া মুখ করে বসে আছি।মাথা থেকে সব চিন্তা ভাবনা ঝেরে পড়া শেষ করে বাহিরে গিয়ে দেখি আন্টি এসেছে।হাদিমুখে আন্টির পাশে গিয়ে বসি।

–দুইদিনের জ্বরে কতোটা দুর্বল হয়ে পরেছিস।

আন্টির কথায় হেসে ফেললাম।আশেপাশে চোখ বুলিয়ে আন্টিকে বললাম

–আন্টি ইতি আপু কোথায়?চলে গেছে নাকি?

–নাহ।ইতি কিছু কাজ করছিলো তো তাই বলল ও আরিশের সাথে আসবে।

আন্টির কথায় হাসি চলে গিয়ে বিরক্ত ভাড় করলো।এই ইতি আপু কেনো যে শুধু আরিশ আরিশ করে বিরক্তকর।

কিছুক্ষনের মধ্যেই আরিশ ভাইয়া আর ইতি আপু আসলো।উনাদের একসাথে দেখে রাগে উঠে রুমে চলে গেলাম।

রুমে চুপচাপ বসে আছি।যাবো না উনার সাথে কোথাও।কিছুক্ষন বাহিরে উকিঝুকি দিয়ে বিরক্ত হয়ে পরলাম।উনি কি বুঝতে পারে নি যে আমি রেগে আছি তাহলে তো অবশ্যই রাগ ভাঙাতে আসতো।কিন্তু আরিশ ভাইয়া আমার ভাবনায় জল ঢেলে দিয়ে কোথা থেকে এসে হাত টেনে ধরে বাহিরে নিয়ে গেলো।আরিশ ভাইয়া উনার গাড়ির সামনে এসে হাত ছেড়ে স্ট্রেইট হয়ে দারালো।

–আপনি এভাবে টেনে কেনো নিয়ে এলেন।আপনার উচিত ছিলো আমাকে মানানোর।হাহ।

আমার কথায় আরিশ ভাইয়া এক ভ্রু উচিয়ে বলল

–কেনো।আমি কি তোর বয়ফ্রেন্ড নাকি?

আরিশ ভাইয়ার কথায় অবাক হয়ে তাকালাম।

–তাহলে কি আপনি আমার ভাই???

–চুপ করে গাড়িতে বস।

আমি একনজর গাড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম

–না গাড়িতে যাবো না চলুন রিকশা করে যাই যেখানেই যাবো।আপনাকে বলেছিলাম না আমি রিকশা করে পুরো পৃথিবী ঘুরতে পারবো।

আমি তারাতারি করে একটা রিকশা থামিয়ে উঠে বসে পরলাম।আরিশ ভাইয়া গাড়ির চাবি পকেটে রেখে আমার পাশে বসতেই রিকশা চলতে শুরু করলো।
কিছুক্ষন পর একটা জমজমাট মার্কেটের সামনে এসে রিকশা থামলো।আমি নেমে অবাক চোখে আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম

–এখানে নিয়ে এলেন কেনো?

আরিশ ভাইয়া আমার কথার জবাব না দিয়ে হাত ধরে রাস্তা পার হয়ে মার্কেটের চিররে যেতে নিবে তখনই একটা মেয়েলী কন্ঠ ভেসে আসে।একটা সুন্দর মেয়ে দৌড়ে এসে আরিশ ভাইয়ার সামনে দারায়।প্রচন্ড খুশি হয়ে বলে

–ভালো আছেন?

আরিশ ভাইয়া মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?

–ভালো। আপনাকে আমি এতোদিন কতো খুজেছি জানেন।

মেয়েটার কথা শুনে আরিশ ভাইয়ার কানে ফিসফিসিয়ে বললাম

–এই মেয়েটা আপনাকে খুজেছে এমন বলল কেনো?

আমার কথা শুনে আরিশ ভাইয়া আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার মেয়েটার দিকে তাকালো।মেয়েটা আমাকে দেখে ভ্রু কুচকে বলল

–এই মেয়েটা কে?

আরিশ ভাইয়া কিছু বলতে নিবে তার আগে আমি বলি

–আমি উনার গার্লফ্রেন্ড।

আমার কথা শুনে মেয়েটা অবিশ্বাস্য হয়ে বলল

–আমি বিশ্বাস করি না।আরিশ ভাইয়ার মতো ছেলে তোমার মতো মেয়েকে গার্লফ্রেন্ড বানাবে।নেভার।

মেয়েটার কথায় রাগ মাথা চড়া দিলো।আমার মতো মেয়ে দ্বারা কি বোঝাতে চাইছে? রাগ নিয়ে কিছু বলতে নিবো তার আগে আরিশ ভাইয়া আমার হাত ধরে বলল

–সরি লেট হচ্ছে আমাদের।পরে কথা হবে।

আরিশ ভাইয়া আমাকে নিয়ে মার্কেটের ভিতরে গিয়ে পাশে থাকা একটা চেয়ারে বসিয়ে বলল

–তুই এখানেই বস আমি আসছি।

ভাইয়া যেতে নিতেই উনার হাত টেনে ধরে বললাম

–ওই মেয়েটা কে ছিলো।

–পরে বলি।

–না এক্ষুনি বলুন।নাহলে আমি চলে যাবো।

মুখ গোমড়া করে বসে রইলাম।ভাইয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমাকে বলল

–আমার স্টুডেন্ট ছিলো।

আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে বললাম

–আপনি আরও অনেক কেই পড়ান?

–নাহ এখন আমি কাউকে পড়াই না ওকে পরাতাম কারণ ও আমার এক ফ্রেন্ডের বোন হয়।

ভাইয়ার কথা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম।

আরিশ ভাইয়া দ্রুত পায়ে ভিতরের দিকে চলে গেলো।আর আমি বসে আছি।প্রায় আধা ঘন্টা পর এসে আমার হাত ধরে বাহিরে গিয়ে রিকশায় বসালো।কথা নেই বার্তা নেই খালি হাত টানাটানি করে।

রুমে এসে বালিশে হেলান দিয়ে বসলাম।আরিশ ভাইয়া একটা শপিং ব্যাগ আমাকে দিয়ে গেছে কিন্তু আরও একটা ছিলো যা উনার সাথে করেই নয়ে গিয়েছে কত্ত করে বললাম কি আছে ওইটাতে কিন্তু উনি বললই না।
শপিং ব্যাগ খুলে দেখি আংটি,চুলে বাধার অনেক গুলো কাঠি আর অনেক রঙের চুরি।
আংটিটা সাথে সাথেই হাতে পরে চুল থেকে বিনুনি খুলে হাত দিয়ে পেচিয়ে কাঠি বেধে নিলাম।
ফুরফুরে মনে বাহিরে গিয়ে আন্টির পাশে বসলাম।উনারা কিছি নিয়ে ডিস্কাস করছে।আন্টি আম্মুর উদ্দেশ্যে বলল।

–আমার ইতি মেয়েটাকে খুব ভালো লাগে।আমার আরিশের বউ হিসেবে ইতি একদম পার্ফেক্ট।

আন্টির কথা শুনে একরাশ গম্ভীর ভর করলো।
আরিশ ভাইয়া আর ইতি আপুর বিয়ে ভাবতেই মুখ তেতো হয়ে এলো।সব কিছু বিশ্রী লাগতে শুরু করলো।আমি মৃদু কন্ঠে আন্টিকে বললাম

–আরিশ ভাইয়া কি ইতি আপু কে পছন্দ করে নাকি।

আমার কথা শুনে আন্টি কিছুক্ষন নিজ মনে ভেবে হাসিমুখে বলল

–আমার তো তাই মনে হয়।

চলবে,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)