তোমাতেই সীমাবদ্ধ পর্ব-১৫

0
857

#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#পার্ট :15
#Mishmi_muntaha_moon

বাড়িতে ফিরে কিছুক্ষন নিঃশব্দে বসে রইলাম।তখনই কোথা থেকে আপু এলো।আমাকে দেখে আমার পাশে এসে বসলো আর উতসাহ নিয়ে বলল।

–কোনো খবর শুনেছিস?

আপুর কথায় বিরক্ত নিয়ে আড়চোখে তাকিয়ে বললাম।

–আমি শুনেছি কি না সেইটা বাদ দিয়ে খবর টা বল।

–এই সপ্তাহ পর আরিশ ভাইয়ার বিয়ে আর পরের সপ্তাহে আমার আর নাহিদের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে আজ সব বড়রা কথা বলেছে।আর আন্টিও কিছুদিনের মধ্যে আরিশ ভাইয়ার সাথে কথা বলবে।আমি তো বলি বিয়েটা হলেই ভালো হবে কারণ আরিশ ভাইয়া যা কিউট আর হ্যান্ডসাম উনার সাথে ইতি আপুকে মানাবে। উনিও খুব সুন্দরী তাই না?

আপুও এই একরেশ ধরে কথা বলছে।এভাবেই মন মেজাজ ভালো না তার উপর এইসব কথা।

আমি বিরক্তে ঈষৎ ভ্রু কুচকে বললাম

–আপু আমার এই মুহূর্তে আরিশ আর ইতি আপুর বিয়ে হওয়া উচিত কেনো তা শুনার মুড নেই।পরে বলিস।আর তুই আরিশ ভাইয়ার বিয়ে নিয়ে ইন্টারেস্ট নাকি তোর নিজের বিয়ে নিয়ে তা আমার জানা আছে।

–তুইও না এক লাইন বেশি বুঝিস আর সাথে বলিসও।আর তোর ইদানীং মুড ভালো থাকে না কেনো ব্যাপার স্যাপার কি?

আপুর কথায় নিচের ঠোট কামড়ে ধরে চুপ করে রইলাম কারণ মুড খারাপের কথা তো আর প্রকাশ করবার না।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে আপু আবারো বলল

–একটা আইডিয়া দেই দেখবি মন ফুরফুরে হয়ে গেছে।আমি নতুন একটা রোমান্টিক উপন্যাস কিনেছি তুই পড়তে পারোস উফ খুব সুন্দর গল্প টা।

আমি গোমড়া মুখ নিয়ে বললাম।

–হুম দিস কিন্তু তুই এখন একটু যা রুম থেকে।

আপু ভেংচি কেটে যেতে যেতে বলল।

–আমার রুম থেকে আমাকে বের করে দিচ্ছিস। কিন্তু এখন যাচ্ছি একটু পরেই আসবো।

আপু উপন্যাসের বই রেখে চলে গেলো।
আমি একনজর বইয়ের দিকে তাকিয়ে বই তুলে বারান্দায় গেলাম।চেয়ারে বসে বইয়ের পাতা খুলে মনোযোগ দিয়ে পরতে লাগলাম।

প্রায় ২ ঘন্টার পর পুরো বই শেষ করলাম।গালে লেগে থাকা জল গুলো মুছে উঠে দারালাম।
উপন্যাস টা রোমান্টিক ছিলো বটে কিন্তু সেড ইন্ডিং।
ছেলেটার অন্য কোনো মেয়ের সাথে বিয়ে হয়ে যায় আর মেয়েটা? মেয়েটা অতি শোকে পাগল টাইপ হয়ে যায়।

এই গল্পটা পরে মনে অজানা এক ভয় ঢুকে যায়।আরিশ ভাইয়ার সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে গেলে আমি কি করবো আমিও কি পাগল হয়ে যাবো নাকি?
চোখ থেকে দুফোটা জল গড়িয়ে পরতেই দ্রুত মুছে নিলাম।

আপুর ওপর রাগটাও তরতর করে বাড়তে লাগলো।এমন স্টরি জানলে তো কক্ষনো পরতাম না।কপাল কিছুক্ষন হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখতেই ফোনের রিং বাজতে লাগলো।

দৌড়ে রুমে গয়ে দেখি আরিশ ভাইয়ার কল।
মোবাইল টা হাতে নিয়ে সাইলেন্ট করে পাশে রেখে দিলাম।

ভালো লাগছে না।মিথিলা আপুর দেওয়া উপন্যাস টা যেনো বিরক্তির সীমা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।বোসা থেকে বিছানায় গা এলাতেই আবারো মোবাইল বাইব্রেট করে উঠলো।হাতরিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি ৩ মিসড কল আরিশ ভাইয়ার।আমি আরিশ ভাইয়ার নাম্বারের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে নাম্বারটা ব্লক লিস্টে ফেলে দিলাম।
তারপর উঠে বাহিরে যেতে দেখি আব্বু বসে টিভি দেখছে আপুও পাশেই বসে গভীর মনোযোগী হয়ে মোবাইল দেখছে।আমি ধীর পায়ে রান্নাঘরে গেলাম।আম্মু সেমাই রাদছে।আমাকে দেখে করাইয়ে খুন্তি চালাতে চালাতে বলল

–তোর বাবাকে চা টা দিয়ে আয়।

আমি আম্মুর কথা মতো চায়ের কাপটা তুলে হলের দিকে বাড়তে লাগলাম।
চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে রুমে যেতে নেবো তখন আবার বেল বেজে উঠলো।আবারো উলটো পথে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখি আরিশ ভাইয়া ব্লাক শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে।

আমাকে চোখে পড়তেউ ঈষৎ ব্রু কুচকে তাকালো আমার দিকে।
আমি কিছুক্ষন উবার দিকে শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে উল্টো হয়ে আমার রুমের দিকে যেই না ছুট লাগাবো তখনই আরিশ ভাইয়া খপ করে আমার হাত উনার হাতের মুঠোয় ধরে।
উল্টো হয়েই কিছুক্ষন ছাড়াবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকাই।
উনি এখনো আমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

আম্মু দরজার কাছে এসে আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকাতেই আরিশ ভাইয়া আমার হাত ধরে রেখেই আম্মুর উদ্দেশ্যে বলে।

–আন্টি আমার কাছে একটা ইম্পর্ট্যান্ট বুক আছে যা জিনাতের লাগবে তাই ওকে নিয়ে যাচ্ছি।

বলেই আমাকে টেনে হাটা ধরলো।আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না।

আমাকে নিয়ে উনাদের বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে নিলো এক জনমানবশূন্য জায়গা।জায়গাটা হয়তো আমাদের বাড়ির পাশেই।

আমার হাত টা ছাড়তেই আমি হাত চেপে ধরে ভ্রু কুচকে আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
উনি স্ট্রেইট হয়ে দাড়িয়ে দুই হাত পকেটে গুজে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল।

–কি হয়েছে?

আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে আমি চোখ এদিক ওদিক করে বললাম

–কিছুই না আমার আবার কি হবে সুস্থ সবল দাঁড়িয়ে আছি মরে যাই নি।

আমার এমন ত্যারা জবাব শুনে আরিশ ভাইয়া এক হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে কিছুক্ষন চুপ থেকে আমার আরেকটু কাছে এসে বলল।

–আমার নাম্বার ব্লক লিস্টে ফেলার সাহস কোথা থেকে এলো তোর?

আরিশ ভাইয়ার কথায় কোনোরকম শব্দ করলাম না চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
আমার জবাব না পেয়ে আমার গাল চেপে ধরে মুখ উনার দিকে ফিরিয়ে ধমকে বলল

–আমাকে ইগনোর করার সাহস কোথায় পেলি।

উনার ধমকে কেপে উঠি। উনার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে চোখ চোখ দুটো রক্তলাল হয়ে আছে। কঠিন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি উনার হাত গাল থেকে সরিয়ে বলি

–আপনি আমায় কল করে ডিস্টার্ব করছিলেন বলে আমি ব্লক দিয়েছি।

আরিশ ভাইয়া আমার কথা শুনে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে দ্রুত পায়ে চলে যায়।উনাকে চলে যেতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমিও বাড়ির দিকে যেতে লাগি।

বাসায় এসে খাবার খেয়ে বারান্দায় যাই।উনি ইতি আপুর সাথে বিয়ে করছে ঠিকই কিন্তু এমন ভাব করছে যেনো সব স্বাভাবিক কিন্তু কেনো এমন ভাব ধরে আছে তাই বুঝতে পারছি না।

রাগ আর অভিমানে এসে আরও একটা কঠোর সিদ্ধান্ত নিলাম যে,আর কখনো উনার সামনেই যাবো না।

হাতে থাকা মোবাইলের স্ক্রিন খুলে গেলারিতে গেলাম আরিশ ভাইউয়ার দু তিনটা ছবি আছে বেশি রাখি নি কারণ আপু আমার মোবাইল ধরে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে এক ছবি বারবার দেখতে লাগলাম।


পরের দিন রাত,,,

সারাদিন আরিশ ভাইয়াকে দেখতে পাই নি।উনি আর কোনো যোগাযোগ ও করে নি ভালো।
রাতে বসে টিভি দেখছি তখনই কাউকে আসতে
দেখে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাতেই দেখি আরিশ ভাইয়া।উনাকে দেখতেই টিভি অফ করে ছুটে রুমে গিয়ে দরজা অফ করে দিয়ে কাথা গায়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখি।
কিছুক্ষন পরই আপুর ডাক কানে ভেসে আসে।

–জিনাত,,,এই জিনাত আরিশ ভাইয়া ডাকছে তোকে।

আমি আপুর কথা শুনে গলা উচিয়ে বললাম

–না আপু আমি এখন দরজা খুলতে পারবো না আমি ঘুমাচ্ছি।তুই চলে যেতে বল উনাকে।

বলে বিছানা থেকে উঠে দরজার কাছে এসে কান খাড়া করলাম।

–থাক মিথিলা ডাকতে হবে না।

আরিশ ভাইয়ার মৃদু কন্ঠ কানে যেতেই ধীর পায়ে বারান্দায় গিয়ে দারাই।
রাস্তার পাশের দোকান গুলো থেকে হাল্কা আলোয় আরিশ ভাইয়ার একপাশ আলোকিত হয়ে আছে।
আরিশ ভাইয়াকে হঠাৎ আমার বারান্দার দিকে তাকাতে দেখে দ্রুত সাইড হয়ে দারাই।কিছুক্ষন পর আরিশ ভাইয়াকে চলে যেতে দেখে আবার বাহিরের দিকে তাকাই।

কি বলতে এসেছিলো কে জানে!কিন্তু আমার শুনার কোনো ইচ্ছে নেই।ঘুমও চোখে এসে ধরা দিচ্ছে না।ইচ্ছে করছে স্ট্যাচু হয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে থেকেই রাত পাড় করে ফেলি।


সকাল থেকে ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বাহিরে যাই।আরিশ ভাইয়ার কথা ভাবতে চাইছি নি।যতো হাসি খুশি থাকতে পারবো ততই আমার নিজের জন্য ভালো।
সকালের নাস্তা করে রুমে যেতেই তুবার ৩ টা কল দেখে কল বেক করি।

–জানিস কি হয়েছে??

তুবার এমন আকস্মিক কথায় ভ্রু কুচকে বলি

–কি হয়েছে?

–কাল আরিশ ভাইয়া অনিক কে ইচ্ছেমতো কেলিয়েছে তাও রাস্তার মাঝে সবার সামনে।আমি তো আমাদের ক্লাসের রিয়ার কাছ থেকে শুনলাম।

তুবার কথা শুনে রাগ উঠে যায়।কিছু না বলেই কল কেটে দেই।

এই আরিশ ভাইয়া কি ঝামেলা শুরু করেছে।
রাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছুক্ষন চুপ করে বিছানায় বসে থেকে আরিশ ভাইয়াদের বাড়িতে যাবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।

যেই ভাবা সেই কাজ।রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলাম আন্টিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

আন্টিদের বাড়িতে পৌছে দরজার বেল বাজাতেই আন্টি দরজা খুলে দেয়।

আন্টিও এসে আমার পাশে এসে বসল।
আমি কিছুক্ষন এদিক ওদিক করে আন্টির দিকে তাকিয়ে বলি।

–আন্টি আরিশ ভাইয়া কি বাসায় না??

আন্টি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে

–তুই জানিস না?

আন্টির কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকালাম।

–কি জানিনা?

–আরিশ কাল রাতেই বনানিতে গিয়েছে।ওখানে আমাদের যেই ফ্লাট টা আছে সেখানেই থেকে কোর্স করবে।কতো করে বললাম যেতে না তবুও শুনলো না।বললাম সকালে যাস তাতেও থামলো না রাতেই ব্যাগ পেক করে বেরিয়ে পরলো।খুবই রেগে ছিলো হয়তো তাই তো আমার কথাও শুনলো না ছেলেটা।

চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে।)