তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব-১২+১৩

0
271

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১২

আবরারের গরম নিঃশ্বাস কানে, ঘাড়ে আ*ছ*ড়ে পড়ায় শি*উ*রে উঠলো আরশি। বন্ধ চোখ জোড়া খুলে হঠাৎ এক ধা*ক্কা*য় আবরার কে দূরে সরিয়ে দিলো। হাঁটু গেড়ে বসে থাকার কারণে আরশির ধা*ক্কা*য় ফ্লোরে পড়ে গেলো আবরার। যদিও ব্য*থা লাগে নি। তবুও চোখ লাল করে আরশির দিকে তাকালো সে। রা*গী কণ্ঠে বললো,

— তোমার স*ম*স্যা কি মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি? একদিন ধা*ক্কা মা*রো তো একদিন পেটে গু*তা মা*রো। আমাকে আ*হ*ত করার ইচ্ছা আছে নাকি তোমার?

আরশি চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে চোখ মুখ খি*চে বললো,

— ওই লু*চু এমপি ওই আপনি বারবার কাছে আসেন কেন হ্যা? আমি কি আপনার রেজিস্ট্রি করা বউ নাকি যে এভাবে কাছে আসেন? একদম কাছে আসবেন না খবরদার।

আবরার হাত ঝে*ড়ে উঠে দাঁড়ালো। পকেটে হাত গু*জে বললো,

— বউ তো না তবে হতে কতক্ষন? আমি চাইলে এখনই তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করতে পারি। তবে কথা হচ্ছে তোমার মতো তি*তা করলা কে আমি বিয়ে করবো না। আমার বউ তো হবে সুইট সুইট। একেবারে তোমার বান্ধুবীর মতো।

আরশি মুখ বা*কি*য়ে বললো,

— আমারও আপনাকে বিয়ে করতে ব*য়ে*ই গেছে। ভাবখানা এমন যেনো আমাকে বিয়ে করতে চাইবেন আর আমি ড্যাং ড্যাং করে আপনার সাথে বিয়ে করে নিবো হুহ।

আবরার বাঁ*কা হেসে আরশির দিকে আগাতে আগাতে বললো,

— আমি চাইলে সব সম্ভব বুঝলে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি?

আরশি আবরার কে আগাতে দেখে আবরারের দিকে আঙ্গুল তা*ক করে বললো,

— ওই আপনাকে না বলেছি কাছে আসবেন না? একদম কাছে আসবেন না। দূরে থাকুন। নাহলে….

আবরার আরশি কে কথা শেষ করতে না দিয়েই বললো,

— নাহলে কি করবে?

আরশি আবরারের দিকে দুই কদম এগিয়ে গিয়ে হাত টা আবরারের মুখের কাছে নিয়ে বললো,

— এক ঘু*ষি তে আপনার এই সুন্দর থো*ব*ড়া টা ভে*ঙে দিবো। আর এই যে নখ দেখছেন? এটা আপনার চোখে গে*থে দিবো।

আরশির এক্সপ্রেশন দেখে শব্দ করেই হেসে দিলো আবরার। আবরার কে হাসতে দেখে রা*গে ফু*সে উঠলো আরশি। আবরার হাসতে হাসতে দুই হাত উঁচু করে বললো,

— আমি কিন্তু অনেক ভ*য় পেয়েছি মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। হাহাহা। তো তোমার কি মনে হয় তুমি আমার সাথে পারবে?

আরশি ভাব নিয়ে বললো,

— পারবো না কেনো? অবশ্যই পারবো। কিন্তু আমার এখন আপনার সুন্দর থো*ব*ড়া টা ফা*টা*নোর মুড নেই। আমি বাড়ি যেতে চাই।

কিছু টা চি*ন্তি*ত দেখালো আরশি কে। সে এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজতে লাগলো। আবরার সিরিয়াস হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

— কিছু খুঁজছো?

আরশি অ*স্থি*র কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,

— আমার ব্যাগ কোথায়? আর.. আর এখন কয়টা বা*জে?

আবরার নিজের হাত ঘড়িতে সময় দেখে বললো,

— তোমার ব্যাগ গাড়িতে আছে। আর এখন রাত ৮ টা বা*জে।

আরশি তা*ড়া দিয়ে বললো,

— আমার বাসায় যেতে হবে। অনেক লেট হয়ে গেছে।

আরশি কথা শেষ করে দরজার দিকে যেতে নিলে তার হাত টে*নে ধরলো আবরার। আবরারের শীতল হাত আরশির হাত স্পর্শ করতেই কেঁ*পে উঠলো আরশি। ঘাড় ঘুরিয়ে অদ্ভুত দৃষ্টি তে চাইলো আবরারের দিকে। আবরার আরশির হাত ছেড়ে দিলো। নরম গলায় বললো,

— তুমি আমার সাথে যাবে। আমি তোমাকে পৌঁছে দিবো। এতো রাতে একা যাওয়া টা ঠিক হবে না।

আরশি সরাসরি না*কো*চ করে বললো,

— কোনো দরকার নেই। আমি একাই যেতে পারবো। আপনার এতো দয়া দেখাতে হবে না। দয়া দেখানোর থাকলে এভাবে একটা মেয়ে কে কি*ড*ন্যা*প করে আনতেন না। তার সম্মানের কথা চি*ন্তা করতেন।

আরশির কথায় চো*য়া*ল শ*ক্ত হয়ে গেলো আবরারের। শ*ক্ত কণ্ঠে বললো,

— তুমি আমার সাথে যাবে মানে আমার সাথেই যাবে। আর একটা কথাও শুনতে চাই না। নাহলে এখানেই তোমাকে আ*ট*কে রেখে চলে যাবো। তুমি আমার ভালো রূপ দেখেছো, খা*রা*প রূপ টা দেখো নি। আর আমি চাচ্ছি ও না আমার খা*রা*প রূপ তোমার সামনে আনতে। ভালো চাও তো টে*রা*মি বাদ দিয়ে আমার কথা মেনে নাও।

আরশি রাজী হলো আবরারের সাথে যেতে। সে ভেবে দেখেছে আসলেই এখন একা যাওয়া টা তার জন্য ঠিক হবে না। সে কোথায় আছে তাও তো জানা নেই। তাই আবরারের সাথে যাওয়াটাই ঠিক হবে।

———

গাড়িতে বসে আছে আবরার আর আরশি। আবরার মনোযোগ দিয়ে নিজের ফোনে কিছু একটা করছে। একবারও আরশির দিকে তাকাচ্ছে না। আর না কোনো কথা বলছে। সামনে ড্রাইভার আর আবরারের হেড গা*র্ড বসে আছে। আরশি সমানে উ*স*খু*স করছে। আবরার কি তার কথায় ক*ষ্ট পেলো নাকি? নাহলে আগের দিন তো এতো চুপচাপ ছিলো না। আরশি আড়চোখে তাকালো আবরারের দিকে। মনে মনে বলতে লাগলো,

— আচ্ছা এমপি সাহেব কি আমাকে পছন্দ করেন? তার কথা বার্তায়, আমার প্রতি করা আচার-আচরণে কেনো যেনো মনে হয় উনি আমাকে পছন্দ করেন। কিন্তু এটা কি আদোও সম্ভব? কোথায় উনি আর কোথায় আমি। উনার সাথে তো আমার কোনো দিক দিয়েই মিলে না। আচ্ছা এমন নয় তো উনি এসব ইচ্ছা করে করছেন যাতে আমি উনার প্রতি দু*র্ব*ল হয়ে পড়ি। হ্যা, এমনও তো হতে পারে উনি আমাকে নিজের প্রেমের জা*লে ফেলে প্রথম দিনের অ*প*মা*নের প্র*তি*শো*ধ নিতে চাইছেন। হতেই পারে আরশি। এসব প্রেম পি*রি*তির চি*ন্তা বাদ দে। এটা উনার কোনো চাল ও হতে পারে। আমাকে সাবধানে থাকতে হবে উনার থেকে। এসব বড়লোকদের কাজ ই এটা। মেয়েদের মন নিয়ে খেলা।

আরশির ভাবনার মাঝে আবরার বলে উঠলো,

— আমার মতো বি*র*ক্তি*কর মানুষের দিকে এতো তাকিয়ে থেকো না। প্রেমে পড়ে যেতে পারো।

আরশি চোখ বড় বড় করে তাকালো আবরারের দিকে। আবরারের চোখ এখনো ফোনেই আ*ট*কে আছে। আরশি লজ্জা পেলো এটা ভেবে যে আবরার তাকে লক্ষ্য করেছে। আবরার এবার আরশির দিকে তাকিয়ে বললো,

— তোমার বাড়ি এসে গেছে।

আরশি উইন্ডো দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলো আসলেই তার বাড়ি এসে গেছে। অথচ সে আবরার কে দেখায় এতোটাই ব্যস্ত ছিলো যে খেয়াল ই করে নি। এটা ভেবে আরও লজ্জা পেলো আরশি। লজ্জা মিশ্রিত কণ্ঠে মিনমিন করে বললো,

— ধন্যবাদ।

আবরার যেনো শুনেও শুনলো না। আবার নিজের ফোনে মুখ গু*জ*লো। আরশির না চাইতেও খা*রা*প লাগলো আবরারের ব্যবহারে। সে ধীর পায় গাড়ি থেকে নেমে বাসার দিকে হাঁটা শুরু করলো। আবরার ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে উইন্ডো দিয়ে আরশির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। আরশি বাসায় প্রবেশ করতেই আবরার নিজের হেড গা*র্ড কে উদ্দেশ্য করে বললো,

— গা*র্ড আরও বাড়িয়ে দাও। আমি চাই না আরশি জানুক তার লাইফ রি*স্কে আছে। আজ যা হলো তা যেনো দ্বিতীয় বার না হয়। আমাদের আরও সাবধান হতে হবে। আর গা*র্ড এমন ভাবে দিবে যেনো আরশি টের না পায় তাকে কেউ পা*হা*রা দিচ্ছে। সে যেনো স্বাধীন ভাবে চলাচল করতে পারে।

গা*র্ড আবরারের কথায় মাথা নাড়ালো। মিনমিন করে বললো,

— স্যার একটা কথা জিজ্ঞাসা করি?

আবরার অনুমতি দিতেই হেড গা*র্ড জিজ্ঞাসা করলো,

— স্যার এই প্রথম ফ্যামিলি বাদে অন্য কাউকে নিয়ে আপনাকে এতো চি*ন্তি*ত হতে দেখলাম। উনি কি আপনার স্পেশাল কেউ?

আবরার গাড়ির সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে বললো,

— আমি জানি না সে আমার জন্য স্পেশাল কেউ কিনা। তবে তার কোনো ক্ষ*তি হলে আমি স*হ্য করতে পারবো না। কেনো পারবো না এর কারণ ও আমার জানা নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা আমার কারণেই ওর লাইফ রি*স্কে পড়েছে। তাই ওকে র*ক্ষা করা আমার দায়িত্ব। যাক এসব বাদ দাও। সবাই কে কি গোডাউনে আনা হয়েছে?

গা*র্ড হ্যা বোধক মাথা নাড়ালো। আবরার বললো,

— গাড়ি গোডাউনে নিয়ে চলো। আমার সেই শ*ত্রু কে যতো দ্রুত সম্ভব খুঁজে বের করতে হবে।

গাড়ি চলতে লাগলো গোডাউনের দিকে। আবরার চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো আজকের ঘটনা।

রেস্টুরেন্ট এর সামনে ঘটা ঘটনার পর থেকেই আবরার আরশির আগে পিছে গা*র্ড লাগিয়ে রেখেছিলো। আবরার বুঝতে পেরেছিলো সেই অজানা শ*ত্রু আরশি কে তার কাছের কেউ ভেবে অ্যা*টা*ক করতে পারে। আর যা ভেবেছিলো আজ তাই হলো। আবরারের শ*ত্রু লোক লাগিয়ে আরশি কে কি*ড*ন্যা*প করায়। আবরারের গা*র্ড আবরার কে এই ব্যাপারে জানালে আবরার গা*র্ডদের বলে আরশি কে ওদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে তার কাছে নিয়ে আসতে। কারণ আবরার চায় না আরশি জানুক তার লাইফ বি*প*দে আছে। আবরারের গা*র্ড রা আরশি কে বাঁচিয়ে আবরারের কথা মতো তার কাছে নিয়ে যায়। তবে তারা সাবধানতার সাথে কাজ টা করেছে যাতে আরশি কিছু টের না পায়। আরশি ভাবে আবরার ই তাকে কি*ড*ন্যা*প করিয়েছে। এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবরার। গাড়ি গোডাউনের সামনে এসে থামতেই নেমে পড়ে সে। শ*ত্রু সম্পর্কে কিছু জানার আশায় পা বাড়ায় গোডাউনের দিকে।

চলবে?

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৩

চেয়ারে পায়ের উপর পা তু*লে বসে আছে আবরার। তার সামনে ফ্লোরে বসানো হয়েছে সেই ড্রাইভার কে যে আবরারের গাড়ি ধা*ক্কা মে*রে*ছিলো। কিছু টা দূরে বসিয়ে রাখা হয়েছে আরশি কে কি*ড*ন্যা*প করা লোক গুলোকে। আবরারের গা*র্ড রা তাদের ধরে নিয়ে এসেছে। মধ্য বয়স্ক ড্রাইভার লোক টা ভ*য়া*র্ত চোখে তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে। আবরার বাঁ*কা হেসে লোকটা কে বললো,

— কি হলো? এটাই ভাবছিস তো এতো জলদি তোর খোঁজ কি করে পেলাম? তুই হয়তো ভাবতেও পারিস নি এতো জলদি ধরা খেয়ে যাবি। উম চল তোকে জানিয়েই দেই কিভাবে এতো জলদি তোকে খুঁজে পেলাম। কেউ একজন আমাকে তোর ট্রাকের নাম্বার দিয়েছিলো। তাই তো এতো জলদি তোর খোঁজ পেয়ে গেলাম। আর কিছু সময় গেলে তো তুই গা ঢাকা দিতি। যাই হোক এখন যা যা জানিস সত্যি সত্যি বলে দিবি। তাহলে শা*স্তি কিছু টা কম হবে। আর নাহলে সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো। তো বল কে তোকে আমাকে মা*রা*র অর্ডার দিয়েছিলো?

ড্রাইভার লোকটার নাম হাসেম মিয়া। হাসেম মিয়া এই শীতেও দ*র*দ*র করে ঘামছে ভ*য়ে। কিন্তু মুখ দিয়ে একটা টু শব্দ ও করছে না। রা*গ লাগলো আবরারের। হাসেম মিয়ার গাল চে*পে ধরে দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,

— ভালোয় ভালোয় বলবি নাকি অন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে?

ভ*য়ে থ*র থ*র করে কাঁ*প*ছে হাসেম মিয়া। এবারও কিছু না বলায় কপালের রগ ফুলে উঠলো আবরারের। একটা লোহার র*ড দিয়ে বে*ধ*ড়ক মা*র*তে লাগলো হাসেম মিয়া কে। আবরার কে এমন উ*দ*ভ্রা*ন্তের ন্যায় মা*র*তে দেখে ভ*য়ে আত্মা কেঁ*পে উঠলো আরশি কে কি*ড*ন্যা*প করা লোক গুলোর। দুই মিনিট মা*র খেতেই মুখ খুললো হাসেম মিয়া। ব্য*থা*য় কা*ত*রাতে কা*ত*রাতে বললো,

— আর মা*র*বেন না আমাকে স্যার। আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। আমাকে ক্ষমা কইরা দেন স্যার।

আবরার র*ড ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,

— তাহলে বল কে তোকে আমাকে মা*রা*র অর্ডার দিয়েছে?

হাসেম মিয়া ব্য*থা*য়, ভ*য়ে কাঁ*দতে কাঁ*দতে বললো,

— সে বলেছে তার ব্যাপারে কাউকে কিছু জানালে আমার ফ্যামিলির ক্ষ*তি করবে।

আবরার র*ড ফেলে কপালে আঙ্গুল ঘ*ষতে ঘ*ষতে বললো,

— যা জানিস সব টা বলে দে। তোর ফ্যামিলি কে নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমার।

হাসেম একটা শুকনো ঢো*ক গি*লে বললো,

— বস কে কখনো দেখি নি আমি। আর তার নাম ও জানি না। উনার সাথে ফোনেই কথা হয়েছে প্রতিবার।

আবরার ক্ষি*প্ত কণ্ঠে বললো,

— হোয়াট? একজন লোকের হয়ে কাজ করছিস অথচ তাকে দেখিস নি কখনো আর তার নাম ও জানিস না? তাহলে তাকে খুঁজে পাওয়ার রাস্তা কি?

হাসেম কাঁ*পা কাঁ*পা গলায় বললো,

— আমার মোবাইলে একটা নাম্বার আছে। তবে সেই নাম্বার টা তার কিনা আমার জানা নেই। আর আমার জানামতে তার ডান হাত কাল্লু নামের একজন। কাল্লুর একটা ছবি আছে আমার ফোনে আর তার নাম্বার ও। বসের সাথে আমার যোগাযোগ কাল্লুই করিয়ে দিয়েছে। জানি না সে আমার খোঁজ কোথা থেকে পেলো।

আবরার শীতল কণ্ঠে হাসেম কে জিজ্ঞাসা করলো,

— এই বসের কথায় এর আগে কাকে কাকে খু*ন করেছিস?

হাসেম ভ*য়া*র্ত চোখে তাকিয়ে বললো,

— একটা। আমি আগে খু*ন করতাম না। কিন্তু হুট করে পাঁচ বছর আগে কাল্লু আসে আমার কাছে। আমাকে বলে একজন কে খু*ন করতে হবে। আমি ভ*য় পেয়ে যাই। রাজী হই না। কিন্তু পরে সে আমাকে বলে খু*ন টা করলে আমাকে দুই লক্ষ টাকা দেয়া হবে। এতগুলো টাকা পাবার লো*ভে রাজী হয়ে যাই আমি। আমার জীবনের প্রথম খু*ন করি। লোক টা পেশায় একজন সাংবাদিক ছিলো। হয়তো বসের গোপন কোনো বিষয় সে জেনে গিয়েছিলো তাই তাকে মা*রা*র অর্ডার দেয়া হয়। আমি তার গাড়ি এ*ক্সি*ডে*ন্ট করাই। লোক টা মা*রা যায়। এরপর এতো বছর কাল্লু বা বসের কোনো খোঁজ ছিলো না। যেই দিন আপনি একা রেস্টুরেন্ট এ গিয়েছিলেন সেই দিন সকালে কাল্লু আমার কাছে আসে। আবারও আমাকে অনেক টাকা দেয়ার লো*ভ দেখায়। আপনাকে মা*র*তে পারলে আমাকে অনেক টাকা দেয়া হবে। আমি আবারও লো*ভে পড়ে রাজী হয়ে যাই। কাল্লু আমাকে জানিয়েছিলো বস কতো টা ভ*য়ং*কর। কাজ না হলে সে আমাকে মে*রে ফেলতে পারে। আর আমি যদি তার ব্যাপারে কাউকে কিছু বলি তাহলে আমার পরিবারের ক্ষ*তি করবে। তবুও আমি টাকার লো*ভে এসব কিছু ভাবি নি। তাদের কথা মেনে নিয়েছি।

কথা শেষ করে কাঁ*দ*তে লাগলো হাসেম মিয়া। আবরার এবার গিয়ে দাঁড়ালো আরশি কে কি*ড*ন্যাপ করা লোক গুলোর সামনে। আবরার ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বাঁ*কা হাসতেই ওদের মধ্যে একজন গ*ড়*গ*ড় করে বলতে লাগলো,

— স্যার, স্যার আমরা খু*নী নই। আমাদের কাজ চু*রি, ছি*ন*তা*ই করা। আমাদেরও কাল্লু হায়ার করেছে কি*ড*ন্যাপ করার জন্য। আমাদের অনেক টাকা দেয়ার কথা ছিলো। আমরাও লো*ভে পড়ে কাজ টা করেছি। আমার ফোনেও কাল্লুর নাম্বার আছে। স্যার, স্যার আমাদের ক্ষ*মা করে দেন স্যার। আর কখনো এসব করবো না।

আবরার নিজের লোকেদের কাছ থেকে হাসেম মিয়া আর ওই ছেলের ফোন টা নিলো। ওদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে সব টা জেনে সিওর হয়ে নিলো। সে দেখলো দুই ফোনে কাল্লুর নাম্বার একই। আবরার তার এক লোক কে কাল্লুর ছবি আর নাম্বার গুলো দিয়ে বললো খোঁজ নিতে। গোডাউন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে সে তার গার্ডদের উদ্দেশ্য করে বললো,

— এদের একটু খাতির যত্ন করবে। বুঝতে পারছো নিশ্চয় কি করতে বলছি? দুই মাসের আগে যেনো বিছানা ছেড়ে উঠতে না পারে। আর আমি না বলা পর্যন্ত কাক পক্ষীও যেনো ওদের হদিস না পায়। সো বি কেয়ারফুল।

আবরার বেরিয়ে আসলো গোডাউন থেকে। গাড়িতে বসে ভাবতে লাগলো আর আরশির সামনে পড়বে না সে। আ*ড়া*ল থেকেই তাকে সেফ করে যাবে। ভাগ্যে যদি লেখা থাকে তাহলে তাদের আবার দেখা হবে। এসব ভাবতে ভাবতে আবরারের চোখ গেলো নিজের পায়ের দিকে। গাড়ির হালকা আলোয় চকচকে কিছু একটা দেখতে পেলো সে। আবরার হালকা ঝুঁ*কে সেই জিনিসটাকে তুললো। একটু ভালোভাবে দেখেই বুঝতে পারলো এটা একটা লকেট। বেশ পুরোনো। এমন ডিজাইন এখন আর তেমন দেখা যায় না। অদ্ভুত সুন্দর কারুকাজ করা লকেট টায়। আবরার লকেট টা দেখতে দেখতে ভাবতে লাগলো এই লকেট তার গাড়িতে কি করে আসলো? পরোক্ষনেই আবরারের মাথায় আসলো আরশির কথা। সে মনে মনে ভাবতে লাগলো,

— এটা মিস অদ্ভুত চোখওয়ালির নয়তো? আজ আমার গাড়িতে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি ছাড়া আর কেউ ওঠে নি। এমন কি বাবাই ও আজ আলাদা গাড়িতে করে ভার্সিটি গিয়েছিলো। তার মানে এটা মিস অদ্ভুত চোখওয়ালির।

লকেট টা আরশির ভেবেই আবরারের ঠোঁটের কোণে চমৎকার এক হাসির রেখা দেখা দিলো। সে আপন মনে বিড়বিড় করে বললো,

— আমার মন বলছে আমাদের আবার দেখা হবে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। ভাগ্য আমাদের আবার দেখা করাবে এবং তা অতি শীঘ্রই দেখে নিও।

আবরার মুচকি হেসে আরশির লকেট টা যত্ন সহকারে নিজের কোটের বুক পকেটে রেখে দিলো।

———-

ফ্রেস হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখ মু*ছ*ছিলো আরশি। হঠাৎ তার চোখ গেলো নিজের গলার দিকে। গলা ফাঁকা দেখে দুই হাতে মুখ চেপে ধরলো আরশি। গা কাঁ*প*ছে তার। চোখ জলে টলমল করছে। আরশি কাঁ*পা কাঁ*পা গলায় বললো,

— আমার লকেট, আমার লকেট কোথায় গেলো?

আরশি সারা ঘর পা*গ*লের মতো তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলো। খুঁজতে খুঁজতে বাইরের রাস্তা পর্যন্ত খুজলো সে। কিন্তু লকেটের কোনো হদিস পেলো না। চোখ ভর্তি জল নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো আরশি। তাকে এমন আচরণ করতে দেখে তার পিছন পিছন দরজা পর্যন্ত এসেছিলো রিফা। আরশি ঢু*লু ঢু*লু পায়ে ঘরে ঢুকতেই দরজা লাগিয়ে দিলো রিফা। আরশি সহজে কারোর সামনে কাঁ*দে না। রিফা দেখে নি। সেই আরশির চোখে জল দেখে অ*স্থির হলো রিফা। তারও চোখে পানি চলে আসলো। আরশির সামনে এসে অ*স্থির কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো

— কি হয়েছে আপু মনি? কি খুঁজছো তুমি? আমাকে বলো আপু মনি। আমি খুঁজে এনে দিচ্ছি।

আরশি অশ্রু ভর্তি চোখে রিফার দিকে তাকিয়ে বললো,

— আমি আমার বাবার দেয়া শেষ উপহার হা*রি*য়ে ফেলেছি রিফা। আমি আব্বু কে দেয়া কথা রাখতে পারি নি। আমি একজন অ*যোগ্য সন্তান, আমি একজন অ*যোগ্য সন্তান।

আরশি আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না। দৌড়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। রিফা অ*সহায় চোখে তাকিয়ে রইলো আরশির যাওয়ার পানে। তার চোখ দিয়েও টপটপ করে পানি পড়ছে। সে মনে মনে আ*ফ*সোস করতে লাগলো,

— ইশ যদি আমার কাছে কোনো ম্যাজিক থাকতো? তাহলে আমি ম্যাজিক করে এক নিমিষেই আপু মনির সব ক*ষ্ট দূর করে দিতাম।

চলবে?