তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব-১০+১১

0
253

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১০

আবরার কে অন্যমনস্ক দেখে তাকে কনুই দিয়ে ধা*ক্কা দিলেন আব্বাস আহমেদ। আবরার চোখ ছোট ছোট করে তাকালো নিজের বাবাই এর দিকে। আব্বাস আহমেদ ফিসফিস করে বললেন,

— কি বেটা কোথায় মন হা*রা*লো তোমার?

আবরার বাবার মতোই ফিসফিস করে বললো,

— যা বলার সোজাসা*প্টা বলো বাবাই। আমার আবার কোথায় মন হারালো?

আব্বাস আহমেদ এক্সসাইটেড হয়ে হাতে হাত ঘ*ষে ফিসফিস করে বললেন,

— কাউকে মনে ধরেছে বুঝি? কাউকে পছন্দ হলে দেখাতে পারো। আমার আর ত*র স*ই*ছে না। কবে যে একটা লাল টুকটুকে বউ ঘরে তু*ল*বো উফঃ?

আবরার বাঁ*কা হেসে বললো,

— ওহ তাই বুঝি? কেন একটা বউ দিয়ে মন ভরছে না? ওয়েট করো একটু। বাসায় যেয়ে নেই। তারপর মা কে বলবো তোমার জন্য মেয়ে দেখতে। তোমার জন্য লাল টুকটুকে বউ আনার ব্যবস্থা করতে বলবো কেমন?

আব্বাস আহমেদের মুখ টা শু*কি*য়ে ছোট হয়ে গেলো। তিনি মুখ টা গো*ম*ড়া করে বললেন,

— তুমি আমার ছেলে না শ*ত্রু বলো তো? আমার সুখের সংসারে আ*গু*ন লাগাতে চাচ্ছ? আমি তো তোমার বউ আনার কথা বলছিলাম।

আবরার নিজের বাবাই কে ফিসফিস করে বললো,

— তোমাকে না বলেছি এতো বিয়ে বিয়ে করবে না? সময় হলে আমি ঠিক বিয়ে করবো।

আব্বাস আহমেদ রা*গ করে বললেন,

— আমরা ম*রে গেলে তারপর বিয়ে করবে বুঝি?

বাবার মুখে এমন কথা শুনে রা*গ হলো আবরারের। দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,

— আর একবারও এসব আ*জে*বা*জে কথা বলবে না। নাহলে বাসায় চলো শুধু মা কে বলবো তোমার এই বু*ড়ো বয়সে নতুন বউ লাগবে। আর জানোই তো মা আমাকে কতো বিশ্বাস করে।

বলে বাঁ*কা হাসলো আবরার। আব্বাস আহমেদ ছেলের দিকে রা*গী চোখে তাকিয়ে বললেন,

— অ*সভ্য ছেলে একটা। বাপ কে ভ*য় দেখায়। কোথায় ভ*য়ে আমার দিকে চোখ তু*লে তাকাতে পারবে না, তা না উ*ল্টো সে আমাকে ভ*য় দেখাচ্ছে।

বাবাইয়ের কথা শুনে হাসলো আবরার। কিন্তু পরোক্ষনেই হাসি গা*য়ে*ব হয়ে গেলো তার। আপন মনে বি*ড়*বি*ড় করে বললো,

— আমি এখনো তার ব্যাপারে সিওর নই। আর যদি সিওর হয়েও যাই তারপর তাকে মানাতে কতো সময় লাগবে কি জানি। সে যা চি*জ! তবে আমি তাকে জানতে চাই, বুঝতে চাই। সিওর হতে চাই তার বিষয়ে।

——

সুন্দর ভাবে বিদায় অনুষ্ঠান শেষ হলো ফাইনাল বর্ষের ছাত্র ছাত্রীদের। তবে কেউ এখনো ভার্সিটি থেকে যায় নি। সবাই ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি করছে, ফ্রেন্ডদের সাথে আ*ড্ডা দিচ্ছে। আরশিরাও ক্যাম্পাসের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই ব*ক*ব*ক, হাসাহাসি করলেও এসবে মন নেই আরশির। সে উ*দা*স হয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। কিন্তু হুট করে এমন এক কা*ন্ড ঘটলো যার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না আরশি আর তার বন্ধুরা।

আরশি যখন নিজ চি*ন্তা*য় ম*গ্ন তখন হুট করে একটা ছেলে এসে হাঁটু গে*ড়ে বসে আরশির সামনে। হাতে তার এক গুচ্ছ লাল গোলাপ। এই ছেলে কে চেনে আরশি আর তার বন্ধুরা। নাম সাগর। বেশ সুদর্শন আর অনেক ব্রিলিয়ান্ট ছেলে। ফাইনাল ইয়ার এর স্টুডেন্ট। অত্যান্ত ভদ্র, আর চুপচাপ স্বভাবের। আরশিরা বেশ কয়েকবার পড়াশোনার ব্যাপারে সাহায্য নিয়েছে সাগরের কাছ থেকে। আরশি আর তার বন্ধুরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সাগরের দিকে। এর মাঝেই সাগর আরশির চোখে চোখ রেখে বললো,

— যেদিন প্রথম তোমরা আমার কাছে পড়াশোনার ব্যাপারে সাহায্য চাইতে আসলে সেদিন একজনের মায়ায় আ*ট*কে গিয়েছিলাম। সেই একজন টা তুমি আরশি। হ্যা তুমি। তোমার কথাবার্তা, চা*ল*চ*ল*ন সব কিছু আমাকে মুগ্ধ করে। প্রথম প্রথম মনে করতাম তেমন কিছু না। নিজের অনুভূতি কে গুরুত্ব দেই নি। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারি আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।

সাগর নিজের কথা থামিয়ে আলতো হাসলো। তারপর আবার বলা শুরু করলো,

— ভেবেছিলাম নিজের অনুভূতি কখনো তোমার কাছে প্রকাশ করবো না। কারণ আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না আর না কখনো সেরকম নজরে দেখেছো। কিন্তু আজ কেনো যেনো নিজেকে সং*য*ত করতে পারলাম না। বলে দিলাম আমি কি অনুভব করি তোমার জন্য। তোমার উপর কোনো জো*র নেই আরশি। আমি ভালোবাসি মানে যে তোমাকেও বাসতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তুমি রি*জে*ক্ট করলেও আমার কোনো আ*ফ*সো*স থাকবে না। ভালোবাসার মানুষের কাছে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে পেরেছি এই তো বেশি।

নিজের কথা শেষ করে মাথা নিচু করে ফেললো সাগর। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সাগরের দিকে। আরও একজন তী*ক্ষ্ণ চোখে দেখে যাচ্ছে সব টা। সবাই কে আরও এক ধাপ অবাক করে দিয়ে সাগরের হাত থেকে ফুলের গুচ্ছ টা নিলো আরশি। আরশি কে সাগরের হাত থেকে ফুলগুলো নিতে দেখে লোক টা ধু*প*ধা*প পা ফেলে বেরিয়ে গেলো ভার্সিটি থেকে।

আরশি ফুলগুলো নেয়ায় সোজা হয়ে দাঁড়ালো সাগর। আরশি মৃদু হেসে সাগর কে উদ্দেশ্য করে বললো,

— আপনি ঠিক ধরেছেন। আমি আপনাকে ভালোবাসি না আর না কখনো সেভাবে চি*ন্তা করেছি। তবে ভালোবাসা টা পা*প নয় আর না ভালোবাসা জো*র করে হয়। আমি সত্যি অবাক হয়েছি কেউ আমাকে এভাবে ভালোবাসে দেখে। এতগুলো মাস ধরে আপনি আমাকে লু*কি*য়ে ভালোবেসে এসেছেন। তবে আমি চাই না আপনার মাঝে আমাকে নিয়ে আশা জাগিয়ে রাখতে। আমি অত্যান্ত দুঃ*খি*ত কারণ আমি আপনার প্রস্তাব টা গ্রহণ করতে পারছি না। আমার জীবনে কিছু লক্ষ্য আছে, স্বপ্ন আছে। যা পূরণের জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি চাই না আমার জীবনে প্রেম ভালোবাসা আসুক। তবুও যদি কখনো চলে আসে তা হবে অ*না*কা*ঙ্খি*ত। আপনি অনেক ভালো একজন মানুষ। আপনার সাথে যতবার দেখা হয়েছে ততবারই আমার এমন টা মনে হয়েছে। আমি pray করবো আপনার লাইফে যেনো অনেক ভালো একজন আসে। আমি আপনাকে ক*ষ্ট দিতে চাই নি কিন্তু কি করবো বলুন মনের উপর যে কারোর জো*র চলে না। আমি আপনার অনুভূতি কে সম্মান করি তাই আপনার দেয়া ফুলগুলো গ্রহণ করলাম। ক্ষ*মা করবেন আমায়।

আরশি আর দাঁড়ালো না। বেরিয়ে আসলো ভার্সিটি থেকে। ভার্সিটির বাইরে আসতেই একটা কল আসলো আরশির ফোনে। ফোন রিসিভ করে এক মিনিটের মতো কথা বললো আরশি। তারপর কল কে*টে দ্রুত একটা ট্যাক্সি নিলো।

——-

আজ এতগুলো বছর পর নিজের পুরনো বাসায় পা রাখলো আরশি। যেই বাসায় তাদের সুখের সংসার গড়ে উঠেছিলো। হাজারো স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো আরশির। নিজের বাবার সাথে কতো খেলেছে এই বাড়ির আঙিনায়। অথচ এই বাড়ির উপর আজ তার কোনো অধিকার নেই।

নিজের সেই সুখের সম্রাজ্য আজ চিনতে পারছে না আরশি। বাড়িতে ঢুকার পথে নেমপ্লেটে নিজের চাচার নাম দেখে চোখ ভ*রে উঠলো তার। এখানে তো তার বাবার নাম ছিলো। অথচ এখন তার চাচার নাম জ্ব*ল*জ্ব*ল করছে। বাড়ির সামনে আগে বেশ বড় একটা বাগান ছিলো আরশিদের। আজ আর তা নজরে পড়লো না আরশির। ফুল তার ভীষণ প্রিয় ছিলো তাই তার বাবা তার জন্য অনেক ফুলের গাছ লাগিয়েছিলেন। কিন্তু এখন সেগুলোর একটাও নেই। তার বাগানের জায়গাটায় দুটো গাড়ি পা*র্ক করা।

আরশি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই তার কা*নে এসে বা*রি খেলো অনেক মানুষের কা*ন্না*র শব্দ। সে দেখলো একজন লোক কে কা*ফ*নে*র কাপড়ে মু*ড়ি*য়ে নিচে রাখা হয়েছে। শুধু মুখ টা বের করা। এই মানুষ টা আর কেউ নয় বরং আরশির চাচা।

কিছুক্ষন আগে আরশি কে তার চাচাতো বোন নাতাশা ফোন করে জানায় আরশির চাচা কে হ*ত্যা করা হয়েছে। কেউ একজন তার চাচা কে হত্যা করে বাড়ির সামনে ম*র*দে*হ ফেলে গেছে। কে করেছে এখনো কিছু জানা যায় নি। সব টা শুনে আরশি চলে আসে শেষবারের মতো বে*ই*মা*ন লোকটাকে দেখার জন্য।

আরশির চাচা লো*ভী, বে*ই*মা*ন হলেও আরশির চাচী আর চাচাতো বোন এমন নয়। যখন আরশির চাচা তাদের শেষ আশ্রয়টুকু কে*ড়ে নিচ্ছিলেন তখনও তারা দুইজন অনেক হাত পা ধরেছিলো আরশির চাচার। কিন্তু তিনি মানেন নি। লো*ভে অ*ন্ধ হয়ে স্ত্রী কে আ*ঘা*ত করেছেন, মেয়ে কে অ*কথ্য ভাষায় গা*লি*গা*লা*জ করেছেন।

আরশি লাল চোখে তার চাচার লা*শে*র দিকে তাকিয়ে বি*ড়*বি*ড় করে বললো,

— পা*প বাপকেও ছাড়ে না জানেন তো চাচা? দেখুন আজ আপনার পরিণতি। আমার বাবা আপনাকে কতোটা সম্মান করতো। আমি আপনাকে বড় বাবা, বড় বাবা বলে মুখে ফে*না তু*লে ফেলতাম এক সময়। অথচ আপনি কি করলেন? একটা এ*তি*মের শেষ আশ্রয় কে*ড়ে নিলেন যে কিনা আপনার ই ছোট ভাইয়ের মেয়ে। এক অ*ন্ধ*কা*র রাতে আমাকে আর আমার মা কে ঘর থেকে বের করে দিলেন। একবারও ভাবলেন না দুইজন মেয়ে মানুষ এতো রাতে কোথায় যাবে? রাস্তায় কতো বি*প*দ হতে পারে।

চোখ থেকে টপটপ করে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো আরশির। সে একটু থেমে আবার ভা*ঙা গলায় বললো,

— ভাবেন নি চাচা। একটুও ভাবেন নি। না জানি আরও কতো পা*প করেছেন আমাদের অ*গো*চরে। যা হয়তো আমরা জানিও না। যদি আমার স*ন্দে*হ সত্যি হয়ে থাকে তবে আপনার মতো নি*কৃ*ষ্ট ভাই যেনো দুনিয়ার কেউ না পায়।

আরশি চোখ মু*ছ*তে মু*ছ*তে বেরিয়ে আসলো বাসা থেকে। তার মুখ মাস্কের আ*ড়া*লে ছিলো তাই কেউ তাকে চিনতে পারে নি। সে আবার ট্যাক্সি ধরলো বাড়িতে যাওয়ার জন্য।

চলবে?

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১১

ঘাড়ে কারোর গরম নিঃশ্বাস আ*ছ*ড়ে পড়ায় মৃদু কেঁ*পে উঠলো আরশি। কিন্তু কিছু বলতে বা করতে পারলো না। কারণ তার হাত, মুখ বাঁ*ধা। এমনকি চোখটাও বাঁ*ধা। আরশি ভাবতে লাগলো ট্যাক্সি তে উঠার পরের ঘটনা। সে বাসার উদ্দেশ্যেই রওনা করেছিলো। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পর আরশির মনে পড়ে তার মায়ের ওষুধ প্রায় শেষ। তাই সে একটা ওষুধের দোকানের সামনে ট্যাক্সি থামিয়ে ওষুধ নিতে নামে। কিন্তু দোকানে যাওয়ার পূর্বেই তাকে কি*ড*ন্যা*প করা হয়। একটা চ*ল*ন্ত গাড়ি চোখের পলকে তাকে উঠিয়ে নেয়। আর গাড়িতে উঠিয়েই চোখ, মুখ বেঁ*ধে ফেলে।

কেউ একজন ধীরে ধীরে আরশির মুখের বাঁ*ধন খুলে দেওয়ায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে আরশি। সামনের মানুষ টা কাছাকাছি থাকায় পরিচিত একটা ঘ্রাণ পায় সে। মুখ থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে যায়,

— এমপি সাহেব?

থেমে যায় সামনের মানুষটার হাত। কয়েক সেকেন্ড থ*ম*কে থেকে সামনের মানুষ টা আরশির চোখের বাঁ*ধন খুলে দিলো। অনেকক্ষন চোখ বাঁ*ধা থাকায় প্রথম কয়েক সেকেন্ড কিছুই দেখতে পেলো না আরশি। ধীরে ধীরে দৃষ্টি পরিষ্কার হলো তার। নিজের খুব কাছে পরিচিত একটা মুখ আবিষ্কার করলো আরশি। তার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। আবরার কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে গলা ঝা*ড়*লো আরশি। চোখ সরিয়ে নিলো আবরার। ধীরে ধীরে আরশির হাতের বাঁ*ধ*ন খুলে দিতে লাগলো। আরশি অ*স্থি*র কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,

— এমপি সাহেব আপনি আবার আমাকে কি*ড*ন্যা*প করিয়েছেন?

আবরার মনোযোগ দিয়ে দড়ির গি*ট খুলতে খুলতে বললো,

— হ্যা করিয়েছি তো?

আরশি আবরারের দিকে তাকিয়ে বললো,

— এসব করার মানে কি? আপনি বারবার কেনো এমন করছেন? আ*জ*ব তো?

আবরার গি*ট খুলে দড়ি টা ফেলে দিলো। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— ইচ্ছা হয়েছে তাই করিয়েছি কি*ড*ন্যা*প। আবার ইচ্ছা হলে আবার করাবো। তোমার কোনো স*ম*স্যা?

আরশি চোখ ছোট ছোট করে বললো,

— এই আপনি কি পা*গ*ল? শেষমেষ কিনা একজন পাবনা প*লা*তক লোক কে এমপি বানানো হয়েছে। মানে আপনি আমাকে কি*ড*ন্যা*প করিয়ে এখন বলছেন আমার কি?

আবরার ক*ড়া চোখে তাকালো আরশির দিকে। আরশি ও স*রু চোখে তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে। আবরার কে এখনো সেই অনুষ্ঠানে পড়া পোশাকে দেখে আরশি ভাবলো,

— লোক টা কি অনুষ্ঠান থেকে বের হয়েই আমাকে কি*ড*ন্যা*প করার পা*য়*তা*রা করেছে নাকি? দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। এহহ্হঃ তখন তো এমন ঢং করলো যেনো আমাকে চেনেই না।

আবরার আরশি কে ক*ড়া লুক দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আবরার বের হতেই পুরো রুমে চোখ বু*লা*লো আরশি। আজকে সে আগের রুমে নেই। আজকের রুম টা সুন্দর। দেখে কোনো বাংলো বাড়ির বিশাল রুম মনে হচ্ছে। সম্পূর্ণ রুম দামি দামি জিনিস দিয়ে সাজানো। আরশি কে একটা চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। দুই মিনিটের মাথায় আবার রুমে আসলো আবরার। এসে এক হাঁটু গে*ড়ে বসলো আরশি সামনে। আরশি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে। ঠোঁটে আবরারের হাতের ছোঁয়া লাগতেই কেঁ*পে উঠলো আরশি। সরে যেতে চাইলেও ন*ড়ার শ*ক্তি যেনো হারিয়ে গেছে তার। আবরার আপন মনে কিছু একটা লাগাচ্ছে আরশির ঠোঁটের কোণে। আরশি বুঝলো হয়তো কোনো ওষুধ লাগাচ্ছে আবরার। অনেক জো*রে বা*ধা*র কারণে ঠোঁটের আশপাশ ব্য*থা করছিলো আরশির। আর এখন তো ওষুধ লেগে চি*ট*মি*ট করছে। আবরার কে এতো কাছ থেকে আর নিতে পারলো না আরশি। চোখ বন্ধ করে জো*রে জো*রে শ্বা*স ফেলতে লাগলো।

আরশির বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে আলতো হাসলো আবরার। ঠোঁটের কোনগুলো তে ভালো মতো ওষুধ লাগিয়ে হাত টা টে*নে রাখলো নিজের হাঁটুর উপর। আরশি ধ*প করে চোখ খুলে ফেললো। আবরার এখন মনোযোগ দিয়ে আরশির হাতের লাল হওয়া জায়গা গুলোতে ওষুধ লাগাচ্ছে। সাথে ফুঁ ও দিচ্ছে যাতে না জ্ব*লে। অ*তি*রি*ক্ত টা*ই*ট করে বাঁ*ধা*র কারণে দুই হাত ই লাল হয়ে আছে। দুই হাত ই ছু*লি*য়ে ছু*লি*য়ে গিয়েছে। আরশি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আবরারের দিকে।

আরশির কেনো যেনো একটুও ভ*য় লাগে না আবরারের কাছাকাছি থাকলে। এইতো কিছুক্ষন আগে যখন তাকে কি*ড*ন্যা*প করা হয় তখন সে মনে মনে ভ*য় পাচ্ছিলো যদিও তা বাইরে প্রকাশ করে নি। কিন্তু আবরার কে দেখা মাত্র সেই ভ*য় উ*ধা*ও হয়ে গেছে। আরশির অদ্ভুত এক বিশ্বাস জন্মেছে আবরারের প্রতি। তার বিশ্বাস আবরার তার কোনোরকম কোনো ক্ষ*তি করতেই পারে না। আরশি নিজেও জানে না তার আবরারের প্রতি এই বিশ্বাসের কারণ কি। সে তো আবরার কে ভালো মতো চেনেও না। তবুও…..

আবরার ওষুধ লাগানো শেষ করে আরশির দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো দুজনের। আরশি চোখে চোখ পড়ে যাওয়ায় অ*প্রস্তুত হলো। দৃষ্টি সরিয়ে এদিক ওদিক ফেরাতে লাগলো। কিছু টা সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে আবরার কে বললো,

— নিজে ব্য*থা দিয়ে আবার নিজেই ওষুধ লাগাচ্ছেন। ব্যাপার টা কেমন হলো না?

আবরার আরশির চোখে চোখ রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— তোমাকে আ*ঘা*ত ও করবো আমি আর ওষুধ ও লাগাবো আমি। এর মাঝে যদি অন্য কেউ ঢু*কে পড়ে বা তোমাকে আ*ঘা*ত করে তাহলে….

আবরার কথা শেষ না করেই চোখ বন্ধ করে ফেললো। যেনো নিজেকে ক*ন্ট্রো*ল করার চেষ্টা করছে। আরশি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে। মনে মনে চলছে আবরার কি বলতে চাইছিলো? আবরার কে চোখ খুলতে দেখে আরশি অ*স্থির কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,

— কি বলছিলেন আপনি? কথা কেনো শেষ করলেন না? আ.. র আর আমাকে আবার উঠিয়ে নিয়ে আসার কারণ কি?

আবরার বাঁ*কা হেসে বললো,

— বাকি টা তোমার না শুনলেও চলবে। আর তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে আসার কোনো কারণ নেই। বললাম না ইচ্ছা হয়েছে তাই। আর প্রথম দিন আমার সাথে যে বে*য়া*দ*বি করেছিলে মনে আছে তো?

আরশি চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আবরারের দিকে। আবরার হাই তু*লে বললো,

— তোমাকে তো তার জন্য কোনো শা*স্তি*ই দেই নি। ভেবে নাও এটাই তোমার শা*স্তি। ইচ্ছা হলে তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো, ইচ্ছা হলে কল দিবো। তুমি বি*র*ক্ত হবে কিন্তু…. কিন্তু কিছু করতে পারবে না। তোমাকে বি*র*ক্ত হতে দেখে আমি শান্তি পাবো। একবারে শা*স্তি দিয়ে দিলে তো কোনো মজাই পেতাম না। এভাবে শা*স্তি দিয়ে মজা আছে। ইউনিক শা*স্তি তোমার জন্য। অনলি ফর ইউ উমম…

আরশি দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,

— সো স*রি একটুও ভ*য় পেলাম না। তবে বি*র*ক্ত হচ্ছি ট্রাস্ট মি।

আবরার স*রু চোখে তাকালো আরশির দিকে। বললো,

— তুমি অদ্ভুত একটা মেয়ে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। একেবারে তি*তা করলা। মুখ টা খুললেই করলার রস ঝ*রে ঝ*রে পড়ে। নিজের বান্ধুবীর কাছ থেকে তো কিছু শিখতে পারো। কি সুইট মেয়ে টা।

আরশি ভেং*চি কে*টে বললো,

— আমি তি*তা করলাই। এতোই যখন সুইট দরকার মুন কে নিয়ে আসলেই পারতেন। সে তো সুইট সাথে বিউটিফুল ও। ভার্সিটি তে তো এমন ভা*ন করলেন যেনো আমাকে চেনেন ই না। হুহ।

আবরার বাঁ*কা হেসে আরশির দিকে ঝুঁ*কে বললো,

— আর ইউ জে*লা*স মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি?

আবরার এভাবে ঝুঁ*কে আসায় হৃদস্পন্দন বে*ড়ে গেলো আরশির। চেয়ারের সাথে একেবারে লেগে গেলো সে। বললো,

— আমি কেন জে*লা*স হতে যাবো? জে*লা*স হতে আমার বয়েই গেছে।

আবরার হেসে দিলো আরশির কথা বলার স্টাইল দেখে। আবরার কে হাসতে দেখে নাকের পা*টা ফু*লা*লো আরশি। গাল ফু*লি*য়ে বললো,

— আপনি জানেন আপনি একটা চরম লেভেলের অ*সভ্য লোক এমপি সাহেব?

আবরার আরশির আরও কাছাকাছি যেতেই চোখ খি*চে বন্ধ করে নিলো আরশি। আবরার আলতো করে ফুঁ দিয়ে আরশির মুখের উপর পড়ে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো সরিয়ে দিলো। আরশির মনে হচ্ছে তার দম টা এবার ব*ন্ধই হয়ে যাবে। আবরার আরশির কানের কাছে মুখ টা নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— আমি অ*সভ্যই মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। সবার কাছে সভ্য হলেও তোমার কাছে নাহয় অ*সভ্য হলাম।

চলবে?