তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব-২+৩

0
371

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_২

ভার্সিটির বাইরের আসতেই ফোঁ*স করে একটা শ্বাস ছাড়লো মুন। অনেক বাঁচা বেঁচে গেছে। মুন আরশির দিকে তাকাতেই দেখলো ও রা*গী চোখে তাকিয়ে আছে। মুন একটা শুকনো ঢো*ক গি*লে বললো,

— তুই জানোস তুই কার সাথে পা*ঙ্গা নিলি?

আরশি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ব্যাগ থেকে কিছু বের করতে করতে বললো,

— যেই হোক আমার কিছু যায় আসে না। সে ভুল করেছে মা*ফ চাইবে বাস্।

মুন উ*ত্তে*জি*ত হয়ে বললো,

— তুই উনাকে চিনিস না দেখে আমি আশ্চর্য হয়েছি। উনি আমাদের নতুন এমপি। কয়েকদিন আগেই নির্বাচিত হয়েছেন। সুদর্শন আর সিঙ্গেল হওয়ার কারণে সব মেয়েদের মুখে এখন উনার নাম। আর জানিস উনি কয়েক বছর আগে আমাদের ভার্সিটি থেকেই পড়াশোনা শেষ করে বেরিয়েছে। সব টিচারদের সাথেই হয়তো উনার ভালো পরিচয় আছে। তোর এমন ব্যবহারের কারণে যদি কোনো সমস্যায় পড়িস তাহলে কি হবে বুঝতে পারছিস? যদি উনি কোনো অ্যা*ক*শ*ন নেয়?

আরশি মৃদু হেসে মুনের ছি*লে যাওয়া জায়গায় ওষুধ লাগাতে লাগাতে বললো,

— তুই তো আমাকে ভালো করেই চিনিস। আমাকে এসবের ভ*য় দেখিয়ে লাভ নেই। জীবনে অনেক ক*ঠি*ন সময় পার করেছি আমি। তাই এখন এসবে ভ*য় হয় না। আমার বিশ্বাস আমার কপালে যা আছে তাই হবে। আর যা হবে ভালোর জন্যই হবে।

আরশি একটু থেমে আবার বললো,

— আচ্ছা শোন রাহুল, আবির, মোহনা কই গেলো? ওদের দেখছি না যে?

মুন আশেপাশে তাকিয়ে বললো,

— চলে গেছে মনে হয়। রাহুল কে তো ওর মা ফোন করে কি যেনো বললো। বে*চা*রা শুনেই ট্যাক্সি ধরেছে। আবির আর মোহনা কই কি জানি।

এর মাঝেই আরশি আর মুন শুনতে পেলো দুইটা ছেলে মেয়ে ঝ*গ*ড়া করতে করতে ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে। কাছে আসতেই ওরা দেখলো মোহনার চোখ মুখ কাঁ*দো কাঁ*দো হয়ে আছে। যেকোনো সময় কেঁ*দে ফেলবে। মোহনা ওদের কাঁ*দো কাঁ*দো কণ্ঠে বললো,

— জানোস দোস্ত এই খা*চ্চ*র টা আমার বিশ টাকার বেলপুরি খাইয়া ফেলছে। আমি অর্ডার দিসিলাম কিন্তু একটাও খাইতে পারি নাই এই বে*দ্দ*পে*র জন্য। এখন তোরা এর বি*চা*র কর।

মোহনার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো মুন। আর আবির তো আগে থেকেই বিশ্ব জয় করা হাসি দিচ্ছে। ওদের হাসতে দেখে কেঁ*দে*ই ফেললো মোহনা। বেলপুরি মোহনার দু*র্ব*ল*তা। প্রতিদিন খায়, না খেলে যেনো ম*রে*ই যাবে। মোহনা কে কাঁ*দ*তে দেখে এক ধ*ম*ক দিলো আরশি। আরশির ধ*ম*কে দাঁত ভিতরে ঢু*কে গেলো আবিরের। মুন এখনো মিটমিট করে হাসছে। আরশি মোহনা কে জড়িয়ে ধরে বললো,

— হয়েছে হয়েছে কাঁ*দি*স না। ছে*হঃ মানুষ যদি শুনে তুই বেলপুরির জন্য কাঁ*দি*স তাহলে কি বলবে? ওই আবির তুই ওর বেলপুরি খাইসোস কেন? তোর শা*স্তি তুই আগামীকাল আমাদের সবাইরে বেলপুরি ট্রিট দিবি। নাহলে এমন একটা ঘু*ষি দিবো যে দুইটা দাঁ*ত উ*ড়ে যাবে। কি ঠিক আছে তো মহু?

মোহনা দাঁ*ত কে*লি*য়ে মাথা ঝা*কা*লো। এবার আবির কাঁ*দো কাঁ*দো মুখ করে বললো,

— তুই কিন্তু অ*ন্যা*য় করতাসোস আরু। শুধু ওরে ট্রিট দিতে কইতি মা*ই*ন্না নিতাম কিন্তু তুই তো আমারে ফ*কি*র বানানোর ধা*ন্দা করতাসোস।

মোহনা মুখ বাঁ*কা করে বললো,

— আমার বেলপুরি খাওয়ার আগে মনে ছিলো না এসব?এটা তোর শা*স্তি আর তোর পূরণ করতেই হইবো। কোনো কথা নাই। আচ্ছা তোরা থাক আমি ওই মামার কাছ থেকে বেলপুরি খাইয়া আসি।

মোহনা কে বেলপুরি খেতে যেতে দেখে মাথায় হাত দিলো তিনজন। মানুষ এতো বেলপুরি পা*গ*ল কেমনে হয় মোহনা কে না দেখলে ওরা জানতেই পারতো না। আরশি, আবির আর মুন কে বললো,

— আমার টিউশনের টাইম হয়ে যাচ্ছে। আমি গেলাম। মুন তুই ও বাসায় যা। আর আবির দোস্ত তুই একটু মোহনা কে রিক্সায় উঠায় দিস। নাহলে ওই মেয়ে আবার কোনো ঝা*মে*লা পা*কা*তে পারে। জানিস ই তো ও কেমন?

আবির মাথা দু*লা*লো। আরশি আর মুন নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গেলো।

———-

আরশি। পুরো নাম আরশি রহমান। বাবা মায়ের আদরের একমাত্র সন্তান ছিলো সে। জীবনে ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলো না কিন্তু হঠাৎ এক ঝ*ড় এসে ল*ন্ড*ভ*ন্ড করে দেয় আরশির জীবন। নিজের জীবনের সুখ, ভালোবাসা হারিয়ে নিঃ*স্ব হয়ে যায় সে। বাবা নামক ছায়া উঠে যায় তার মাথার উপর থেকে। এক সময় কিছুটা রে*গে কথা বললে যেই মেয়ে হা*উ*মা*উ করে কেঁ*দে বাড়ি মাথায় তু*লে ফেলতো সেই মেয়ে এখন কাঁ*দ*তে ভুলে গেছে। যেই মেয়ে হেসে, দু*ষ্টু*মি করে সারা বাড়ি মা*তি*য়ে রাখতো, সেই মেয়ের মুখের হাসি হা*রি*য়ে গিয়েছিলো।

বাবা কে হা*রা*নো*র পর সব আত্মীয় স্বজনেরা সম্পর্ক ছি*ন্ন করে আরশিদের সাথে। ভ*য় একটাই ওদের দায়িত্ব নিতে হবে, সাহায্য করতে হবে। আরশিদের বাড়ি দ*খ*ল করে নেন ওর বড় চাচা। অ*সু*স্থ মা কে নিয়ে ছোট্ট আরশির জীবন যু*দ্ধ শুরু হয়। তখন সবেমাত্র এসএসসি দিয়েছিলো আরশি। এই ক*ঠি*ন দুনিয়ার সাথে তার কোনো পরিচয় ছিলো না। কিভাবে থাকবে তার দুনিয়া তো বাবা মায়ের মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো। যেই মেয়ে বাবা মায়ের হাত না ধরে এক পা ও চলতে পারতো না সেই মেয়ে বেরিয়ে পড়ে কাজের খোঁজে। এক প্রতিবেশীর সহায়তায় বেশ কয়েকটা টিউশনি পায় আরশি। ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়িয়ে খুব কম ইনকাম হতো তার। শুরু শুরুতে এই টাকা দিয়ে সংসার চালাতে খুব ক*ষ্ট হতো। প্রতিদিন রাতে বাবার ছবি জড়িয়ে কাঁ*দ*তো আরশি। একদিকে মায়ের অ*ব*হে*লা অন্যদিকে অ*ভা*বে*র সংসার। কতশত মানুষের হাজারো কথা শুনে এই সমাজে টি*কে থাকতে হয়েছে তাকে। ধীরে ধীরে এসবে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে আরশি।

ছোট বেলা থেকেই প্রচন্ড ব্রিলিয়ান্ট ছিলো আরশি। বলা যায় একটু বেশিই মেধাবী। খুব অল্প সময়ে অনেক পড়া ক্যা*চ করে ফেলতে পারতো। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি তেমন একটা আগ্রহ ছিলো না তার। তাই মোটামোটি রেজাল্ট করতো সে। কিন্তু বাবা হা*রা*নো*র পর পড়াশোনার প্রতি সি*রি*য়া*স হয় আরশি। শিক্ষকদের সহায়তায় আর নিজের চেষ্টায় এইচএসসি তে অনেক ভালো ফলাফল করে সে। আর এখন তো অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছে। এখন আর আগের মতো অভাব ও নেই। বর্তমানে আরশি চারটা টিউশনি করে আর একটা কোচিং এ সপ্তাহে দুইদিন পড়ায়। এতেই বেশ ভালো অংকের টাকা উঠে যায় যা দিয়ে ভালো মতো মাস চলে যায় আরশির। কিছু ভালো বন্ধু পেয়েছে সে লাইফে যাদের কারণে আবার আগের মতো হাসতে পারে সে। বন্ধুগুলোই তার হাসিখুশি থাকার একমাত্র কারণ।

——

থ*ম*থ*মে মুখে বাড়ি ফিরলো আবরার। আবরারের মা বিষয় টা লক্ষ্য করেও কিছু বললেন না। ফ্রেস হয়ে খেতে বসতেই আবরারের বাবা আব্বাস আহমেদ বললেন,

— কি হয়েছে মাই ডিয়ার সান? রে*গে আছো মনে হচ্ছে? তোমাকে তো আমি সবসময়ই বলি রা*জ*নী*তি*তে মাথা গ*র*ম করার মতো কাহিনী প্রতিনিয়ত হয়। কিন্তু আমাদের মাথা রাখতে হবে একেবারে ঠা*ন্ডা।

আবরার গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— আসলে রা*জ*নী*তি নিয়ে কোনো সমস্যা না বাবাই।

আব্বাস আহমেদ বললেন,

— তাহলে কি হয়েছে? বলো আমাকে। বাবাই কে বলবে না?

আবরার ফোঁ*স করে একটা শ্বাস ফেলে রা*গী কণ্ঠে বললো,

— জানো বাবাই আজ একটা মেয়ে আমার সাথে বে*য়া*দ*বি করেছে। আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলেছে। সে যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতো তাহলে মুখটা ভে*ঙে গু*ড়ি*য়ে দিতাম।

আব্বাস চৌধুরী ছেলের কথা শুনে কিছুক্ষন থ*ম মে*রে রইলেন। তারপর হুট করে হু হা করে হাসা শুরু করলেন। আবরার বি*র*ক্তি নিয়ে চাইলো বাবার দিকে। তার বাবাই কখনো কোনো কিছু নিয়ে সি*রি*য়া*স হোন না। আব্বাস আহমেদ বললেন,

— বাহ্ কোন মেয়ের এতো সা*হ*স হলো আমার ছেলের চোখে চোখ রাখে? আমার তো এখন ওই মেয়ের সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করছে। আহা কি সা*হ*স। কিভাবে দেখা করা যায় বলো তো আবরার?

আবরারের মামা ইরফান চৌধুরী বললেন,

— আহা দুলাভাই দেখছেন ই তো আবরার বাবা রে*গে আছে। তাহলে এসব বলে ওকে আরও রা*গি*য়ে দিচ্ছেন কেনো? আবরার বাবা শোনো তুমি আমাকে ওই মেয়েটার সম্পর্কে বলো তারপর দেখো আমি ওই মেয়ের সাথে কি করি।

আবরার বি*র*ক্ত হয়ে বললো,

— তোমাদের আর কিছু বলবোই না ধ্যা*ৎ। আর মামা তোমার কিছু করতে হবে না। যা করার আমিই করবো।

আবরার ধু*প*ধা*প পা ফেলে নিজের রুমে চলে গেলো। ওই মেয়ে কে সে দেখে নিবে ব্যাপার না। কিছু একটা ভেবে বাঁ*কা হাসলো আবরার।

——-

ক্যান্টিনে বসে আছে মুন আর আরশি। কফির অর্ডার দিয়েছে কিন্তু এখনো আসছে না দেখে বি*র*ক্ত হলো আরশি। মুন কে উদ্দেশ্য করে বললো,

— আরে ইয়ার এতো সময় লাগে কেন? চল এখান থেকে কফি খাবো না।

আরশি উঠতে নিলেই মুন আরশির হাত চে*পে ধরে আবার বসিয়ে দিলো। বললো,

— আরে এতো অ*স্থি*র হোস কেন? কই বেশিক্ষন হয়েছে? চল আমরা কিছু গল্প করি। ক্লাস শুরু হতে এখনো সময় আছে। আর রাহুল, মোহনা, আবির, আহি কেউই তো আসে নি এখনো।

আরশি মুন কে জিজ্ঞাসা করলো,

— আচ্ছা আহি কই রে? মেয়েটা দুইদিন ধরে ভার্সিটি আসে না। আমি ফোন দিয়েছিলাম, ফোনটাও ধরলো…

কথা শেষ করতে পারলো না আরশি। তার পূর্বেই কেউ একজন ওদের দুইজনের গলা জ*ড়ি*য়ে ধরলো। চি*ৎ*কা*র করে বললো,

— বন্ধুরা আমি এসে গেছিইই……

চলবে?

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৩

— বন্ধুরা আমি এসে গেছিইই……

হঠাৎ আ*ক্র*ম*ণে লা*ফি*য়ে উঠলো মুন আর আরশি। মুন আহির মাথায় একটা চা*টি মে*রে বললো,

— এভাবে পা*গ*লা ষাঁ*ড়ে*র মতো চি*ল্লা*ই*লি কেন? আরেকটু হইলেই তো হা*র্ট টা বাইর হইয়া হাতে চইলা আইতো। থু থু উফঃ আল্লাহ কি ভ*য়*টা পাইছি।

মুনের কথায় খিলখিল করে হাসতে লাগলো আহি। যেনো খুব মজার কিছু বলেছে মুন। মুন রে*গে ওর মাথায় আরেকটা চা*টি মা*র*লো। কিন্তু এতে আহির হাসি কমার বদলে আরও বেড়ে গেলো। আরশি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ক্যান্টিনের সবাই ওদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে যেনো এখানে কোনো সা*র্কা*স চলছে আর ওরা জো*কা*র। আরশি আহি কে নিজের পাশের চেয়ারে টে*নে বসিয়ে দিলো আর মুন কেও চোখের ইশারায় বসতে বললো,

— কি সা*র্কা*স শুরু করসোস তোরা?দেখ তো একবার আশেপাশে সব কেমনে তাকায় আছে। আচ্ছা এসব বাদ দে আহি তুই দুইদিন কই গা*য়ে*ব ছিলি? কতো ফোন দিলাম তাও ধরলি না।

আহি হাসি থামিয়ে বললো,

— আরে ইয়ার বলিস না অনেক জ্ব*র উঠছিলো। তাই আসতে পারি নাই। আর এই জ্ব*র নিয়ে একাধারে ফোন গু*তা*চ্ছি*লা*ম তাই আমার জ*ল্লা*দ ভাই টা ফোন নিয়ে গেছে। তাই আর তোদের কে বিষয় টা জানাতে পারি নাই।

ওদের কথার মাঝেই ক্যান্টিনে হাজির হলো দলের বাকি সদস্যরা। সবাই সিট দখল করে গোল হয়ে বসলো। রাহুল দুঃ*খী দুঃ*খী মুখ করে বললো,

— ওই রশি জানিস কি হইছে?

আরশি রাহুলের মুখে রশি ডাক শুনে ওর দিকে রা*গী দৃষ্টিতে তাকালো। রাহুল আরশি কে রা*গ করতে দেখে দাঁ*ত বের করে হা*ব*লা*র মতো হা*স*লো। যেকোনো সময় তার পি*ঠে আরশির শ*ক্ত*পো*ক্ত হাতের থা*বা পড়তে পারে। দ্রুত বললো,

— সরি দোস্ত ওই মুখ ফ*স*কে বলে ফেলছি। যেটা কইতাসিলাম সে*ডা শুন। অনেক বড় ঘটনা ঘটে গেছে রে।

রাহুল কথা টা বলেই আবার দুঃ*খী দুঃ*খী মুখ করলো। আবির বি*র*ক্ত হয়ে বললো,

— আরে শা*লা মাইয়াদের মতো ঢং করোস কেন? কাহিনী কি সে*ডা বল।

মোহনা আবিরের কথা শুনে ওর হাতে জোরে একটা চি*ম*টি কা*ট*লো। দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,

— মাইয়াদের মতো ঢং মানে কি হ্যা? আমরা ঢং করি? তাইলে তোরা কি করোস ব*জ্জা*ত পোলা। কাল যে মাইয়াদের মতো গ*পা*গ*প আমার বেলপুরি নিজের পে*টে চা*লা*ন দিলি আমি ভু*ই*ল্লা গেছি ভাবসোস?

আবির জি*ভে কা*ম*ড় দিলো। চো*রে*র মতো এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। সে ভেবেছিলো সবাই ভুলে গেছে। তার আর ট্রিট দেয়া লাগবে না কিন্তু এই মহিলা কি আর নিজের বেলপুরির কথা ভুলবে? অসম্ভব। এবার আহি হালকা কা*শি দিয়ে বললো,

— কিরে রাহুল বলোস না কেন কি হইছে?

রাহুল এতক্ষন আহি কে খেয়াল করে নি। সে এবার আহি কে দেখে বললো,

— কিরে আনা যে। এতদিন পর ক*ই*থ থি*কা উ*দ*য় হইসোস? এসব বাদ দে আজকে নিজের সাথে কয় আনা আনসোস?

আহির পুরো নাম আহিয়ানা। সবাই ছোট করে আহি বলে ডাকে। কিন্তু রাহুল ডাকে আনা বলে। সবার নামের বারোটা বা*জা*নো*র অভ্যাস তার। আহি রে*গে গিয়ে না*ক ফু*লি*য়ে বললো,

— এই সব চল তো? এই বে*ডা হু*দা*ই সময় ন*ষ্ট করতেসে। ওর কিছু হয় নাই। য*ত্ত*স*ব।

রাহুল মাথা না*ড়ি*য়ে বললো,

— না না সত্যিই একটা গু*রু*ত*র ঘটনা ঘটে গেছে। আম্মা আমার বিয়ে দেয়ার জন্য পা*গ*ল হয়ে গেছে। আমি তার একমাত্র পুত্র তাই সে দ্রুত আমার বিয়ে দিয়ে পুত্রবধূ আনতে চায়। এতো বুঝাইলাম আম্মারে আমি এখন বিয়া করমু না। কিন্তু সে কিছুতেই মানবে না।

মুখ ভা*র করে বসে রইলো রাহুল। মোহনা লা*ফি*য়ে উঠে বললো,

— আরে দোস্ত কি কস? আন্টি এতো ভালো একটা কা*ম করতে চাইতেসে রে। দোস্ত শুন জলদি রাজী হয়ে যা। কতদিন বিয়া খাই না।

রাহুল মুখ ঝা*ম*টা মে*রে বললো,

— চুপ থাক তুই। আমি বিয়া করমু না। দোস্ত তোরা কিছু কর। আমার আম্মারে একটু বো*ঝা।

আরশি এক ভ্রু উঁচু করে বললো,

— করবি না কেন বিয়ে? কেউ আছে নাকি?

রাহুল তো*ত*লা*তে শুরু করলো। হা*ব*লা*র মতো হাসি দিয়ে বললো,

— আরে কি বলিস? কেউ থাকলে তোরা জানতি না? কেউ নাই, কেউ নাই।

আহি স*ন্দে*হে*র চোখে বললো,

— আমার তো মনে হচ্ছে আছে কেউ। নাহলে এভাবে তো*ত*লা*চ্ছি*স কেন? জলদি বল পরে যদি জানতে পারি তাহলে তোর খবর আছে।

রাহুল ক*পা*লে*র ঘা*ম মু*ছে বললো,

— আব না মানে আসলে হইছে কি….

আবির ঝা*ড়ি মে*রে বললো,

— কি আব না মানে আসলে লাগাইসোস। জলদি ক বে*টা। নাহলে আন্টিরে গিয়া কমু জলদি তোরে বিয়ে দিতে। এই উ*সি*লা*য় আমরাও দাওয়াত খাইতে পারমু।

রাহুল মুখটা টা ল*ট*কি*য়ে বললো,

— আমি একজন কে ভালোবাসি রে। তিন মাসের রিলেসন। অনেক ক*ষ্টে*র পর তাকে প*টা*তে পেরেছি।

আরশি হা*ই তু*লে বললো,

— নাম তুলিকা। তোদের প্রতিবেশী।

বন্ধু মহলের সবাই উৎসুক চোখে তাকালো আরশির দিকে। সবার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওরা জানতে চায় আরশি কিভাবে জানলো। রাহুল চোখ বড় বড় করে বললো,

— তুই কিভাবে জানলি?

আরশি বাঁকা হেসে বললো,

— রাস্তায় তোদের ই*টি*স*পি*টি*শ করতে দেখেছি। নি*ব্বা নি*ব্বি*র মতো একে অপরকে ফুচকা খাওয়াচ্ছিলি।

আরশির কথা শুনে কা*শি উঠে গেলো রাহুলের। আরশি দাঁ*ত কে*লি*য়ে বললো,

— আর কিছু শুনবি?

রাহুল জলদি করে বললো,

— না, না আর কিছু শুনুম না। এখন তো সবাই সব জানলি। এবার আমার মা রে একটু convince কর। তুলি এখনো অনেক ছোট। এখনো এইচএসসি ও দেয় নাই। ওর বাপ জীবনেও এইটুক বয়সে মেয়ের বিয়ে দিবো না আর আমার মতো বে*কা*র ছেলের কাছে তো নাই।

আরশি এক চোখ টি*প দিয়ে বললো,

— আমাদের সবাই কে ট্রিট দিবি প্লাস তুলির সাথে মিট করাবি তাহলে আন্টি কে বুঝাবো আর নাইলে না।

সবাই হৈ*হৈ করে উঠলো ট্রিট দিতে হবে। রাহুল চা*পে পড়ে রাজী হয়ে গেলো ট্রিট দিতে। এদের ও পরে দেখে নিবে হুঁহ।

——–

— স্যার আপনি যার খোঁজ চেয়েছিলাম তার সম্পর্কে সব জানতে পেরেছি।

নিজের কেবিনে কাজ করছিলো আবরার। তার এক লোকের মুখে কথা টা শুনে বাঁকা হাসে সে। জিজ্ঞাসা করে,

— তো কি কি জানতে পারলে?

লোকটা একাধারে বলতে শুরু করে,

— নাম আরশি রহমান। ** ভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাবা নেই। অ*সু*স্থ মা, আর একটা মেয়ে আছে নাম রিফা যাকে উনি নিজের বোন বলেন এই দুইজন কে নিয়েই উনার পরিবার। খুব পরিশ্রমী আর সা*হ*সী একটা মেয়ে স্যার। বাবা মা*রা যাওয়ার পর থেকে অনেক স্ট্রা*গ*ল করে আসছেন।

আরশির বাবা নেই শুনে খা*রা*প লাগলো আবরারের। এই সমাজে একা একটা মেয়ের টি*কে থাকা যে কতোটা ক*ঠি*ন তার কিছুটা হলেও আইডিয়া আছে তার। কিন্তু পরোক্ষনেই তার সাথে বে*য়া*দ*বি করার মুহুর্ত টা মনে পড়লো আবরারের। সে তার লোক কে কিছু একটা বলতেই লোকটা মাথা নিচু করে বললো,

— স্যার আমার বলা তো উচিত না তবুও একটা কথা বলতে চাই। স্যার আপনি তো মেয়েদের অনেক সম্মান করেন আর এই মেয়ে টা খুব অ*স*হা*য় একটা মেয়ে। তার সাথে এমন টা না করলে হয় না?

আবরার ফোঁ*স করে একটা শ্বাস ফেলে বললো,

— আমি কখনো কোনো মেয়ে কে অ*সম্মান করি নি আর করবোও না। আমি শুধু তার চোখে ভ*য় দেখতে চাই। এটাই হবে তার শা*স্তি। আমি তার কোনো ক্ষ*তি করবো না। আর তার কোনোপ্রকার সম্মানহা*নিও হতে দেবো না। তোমাকে যা বলা হয়েছে তাই করো।

লোকটা মাথা ঝা*কি*য়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। আবরার টেবিলের উপরে থাকা পেপার ও*য়ে*ট টা ঘু*রা*তে ঘু*রা*তে বললো,

— জাস্ট একটু ভ*য় দেখতে চাই তোমার চোখে মিস কি যেনো…ওহ হ্যা আরশি। এবার আমি দেখবো তুমি ঠিক কতোটা সা*হ*সী।

চলবে?