তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব-৪+৫

0
321

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৪

জ্ঞান ফিরতেই নিজের মুখের উপর কারোর গ*র*ম নিঃশ্বাস অনুভব করলো আরশি। টিউশন শেষে বাড়ি ফেরার পথে হুট করে একজন লোক তার মুখের উপর কিছু একটা স্প্রে করে। সেখানেই জ্ঞান হা*রা*য় আরশি। আর কিছু মনে নেই তার। মুখের উপর কি স্প্রে করেছিলো ভাবতে লাগলো আরশি। এখনো ভালো মতো চোখ খুলতে পারছে না সে। আরশি আর বাম ডান না ভেবে সর্ব শ*ক্তি ব্যবহার করে হাতের ক*নু*ই দিয়ে এক ঘা বসিয়ে দিলো সামনের লোকটার গায়ে। ব্য*থা*য় গু*ঙি*য়ে উঠে সামনের ব্যক্তি। ধীরে ধীরে দৃষ্টি স্পষ্ট হয় আরশির। সামনের ব্যক্তির অবস্থা দেখে এমন একটা পরিস্থিতিতে ও খিলখিলিয়ে হেসে উঠে সে।

হাসির রিনিঝিনি শব্দে ব্য*থা ভু*লে আরশির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আবরার। সে তো আরশির জ্ঞান ফেরানোর জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে ওর কাছে গিয়েছিলো। কিন্তু আরশি যে হুট করে এ*টা*ক করবে বুঝে নি আবরার। মে*রে*ছে তো মে*রে*ছে একবারে পে*টে। সাথে গ্লাসের সব পানি তার গায়ে। আর দেখো এখন কিভাবে হাসছে। প্রানবন্ত সেই হাসি। হাসতে হাসতে আরশির সুন্দর, স্বচ্ছ চোখজোড়ায় পানি জমে টলমল করছে। আবরার এক ধ্যানে প্রাণবন্ত, হাস্যজ্জ্বল আরশি কে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। হুঁ*শ, জ্ঞান যেনো হারিয়ে গেছে তার। কিছুটা সময় অতিবাহিত হলো। আরশির হাসি ধীরে ধীরে কমে আসলো। অনেক দিন পর এতো হাসলো সে। একজন এমপির এমন অবস্থা দেখে হাসি থামাতে পারে নি সে। বিশেষ করে সেই সময় আবরারের মুখের এক্সপ্রেশন টা দেখার মতো ছিলো। মনে পড়লে এখনো হাসি পাচ্ছে তার।

আবরার কে এক ধ্যানে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হালকা কা*শি দিলো আরশি। একবার নিজের দিকে তাকালো সে। তারপর বাঁ*কা চোখে আবরারের দিকে তাকিয়ে তার ম*তি*গ*তি পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।

আরশির কা*শি*তে ধ্যান ভা*ঙ*লো আবরারের। সে দ্রুত চোখ সরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে ভাবলো,

— শি*ট আমি এতক্ষন এই মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মেয়েটা না জানি কি ভেবেছে। আমি একে এনেছি ভ*য় দেখাতে আর তা না করে এতক্ষন ওর দিকে হা*ব*লা*র মতো তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু মেয়েটার হাস্যজ্জ্বল মুখের উপর থেকে দৃষ্টি স*রা*তে পারছিলাম না, কেনো যেনো দেখতে ভালো লাগছিলো। আমার কি দো*ষ? মেয়েটাকে কে বলেছে ওভাবে হাসতে?

আবরার গ*লা ঝে*ড়ে আরশির দিকে তাকিয়ে দেখলো ও বাঁ*কা চোখে তাকিয়ে আছে। আবরার কে তাকাতে দেখে আরশি চোখ সরিয়ে নিলো। পুরো ঘরে একবার চোখ বুলিয়ে দেখলো মাঝারি সাইজের ফাঁকা একটা রুম। মাথার উপর একটা লাইট জ্ব*ল*ছে যাতে আলো খুব বেশি না। রুমে শুধুমাত্র দুইটা চেয়ার যার একটাতে আরশি বসে আছে। রুমের মধ্যে সে আর আবরার ছাড়া কেউ নেই। হয়তো গা*র্ড রা বাইরে আছে। আবরার ফাঁকা চেয়ার টা টে*নে আরশির সামনাসামনি বসলো। আরশি ও এবার আবরারের দিকে চোখ পি*ট*পি*ট করে চাইলো। দেখলো আবরার বাঁ*কা হাসছে। আবরার বললো,

— কি মিস কি যেনো নাম? ওহ হ্যা আরশি। তো মিস আরশি কেমন লাগছে নতুন জায়গায়?

আরশি আরেকবার পুরো রুমে চোখ বু*লি*য়ে বললো,

— যেহেতু দেখার মতো সুন্দর কোনো দৃশ্য নেই, তাই অবশ্যই ভালো লাগছে না।

আবরার আরশির জবাবে ভিতরে ভিতরে থ*ত*ম*ত খেলেও উপরে প্রকাশ করলো না। গম্ভীর স্বরে বললো,

— তুমি কি জানো তোমাকে এখানে কেনো আনা হয়েছে?

আরশি হা*ই তু*লে বললো,

— হয়তো ওই দিনের ব্যবহারের প্র*তি*শো*ধ নেবার জন্য। ওই যে মুভি তে দেখায় না যে নেতার সাথে পা*ঙ্গা নিলে তারা পরবর্তীতে সেই মানুষ কে ধরে এনে মে*রে উ*ধা*ও করে দেয়। হয়তো সেরকম কিছু করার জন্যই আনা হয়েছে।

আবরার আরশির উত্তরে মনে মনে ভাবলো,

— বাব্বাহ কতদূর চিন্তা করে ফেলেছে। এবার নিশ্চয় ভ*য় পাবে।

আবরার ভ*য় দেখানোর ভ*ঙ্গি*তে আরশি কে বললো,

— তো মিস আরশি তোমার কি ভ*য় লাগছে না? আমি যদি তোমাকে মে*রে উ*ধা*ও করে দেই?

আরশি বি*র*ক্ত হয়ে বললো,

— ভ*য় পেয়ে আর কি হবে? আপনার আমাকে মে*রে উ*ধা*ও করার ই*ন*টে*ন*শ*ন থাকলে তা আমি ভ*য় পেলেও করবেন, না পেলেও করবেন। তাই আ*জাইরা ভ*য় পাওয়ার মানে হয় না।

আবরার হ*তা*শ হলো আরশির জবাবে। আরশির চোখে সে কোনোরকম ভ*য় দেখতে পাচ্ছে না। একদম স্বাভাবিক আরশি যেনো এখানে ঘুরতে এসেছে। আবরারের চিন্তার মাঝে আরশি নাক মুখ কুঁ*চ*কে বললো,

— আচ্ছা আপনি কেমন এমপি বলেন তো? টাকা তো কম থাকার কথা না আপনার। তাও এতো কি*প্টা। আপনি চাইলেই তো পারতেন আমাকে কোনো পাহাড়ের চূ*ড়া*য় নিয়ে যেতে। তারপর সেখান থেকেই নাহয় ধা*ক্কা দিয়ে ফে*লে দিতেন। এতে করে আমি ম*রে উ*ধা*ও হয়ে যেতাম আর ম*রা*র আগে আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগটাও হতো। এখানে তো দেখার মতো কিছুই নাই। বি*র*ক্তি*ক*র।

আবরারের ইচ্ছা করছে নিজের কপাল চা*প*ড়া*তে। এ কেমন মেয়েরে বাবা? অন্য কোনো মেয়ে হলে এতক্ষনে কাঁ*দ*তে কাঁ*দ*তে নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেলতো। আবরার আরশি কে জিজ্ঞাসা করলো,

— আচ্ছা আমি যদি তোমাকে এখানে কয়েকদিন আ*ট*কে রেখে দেই তাহলে তোমার ফ্যামিলির কি হবে বলো তো? তারা নিশ্চয় তোমাকে খুঁজে না পেয়ে কা*ন্না*কা*টি করবে, অ*সু*স্থ হয়ে যাবে। আরশির মুখ এবার কিছু টা ম*লি*ন দেখালো। সে আলতো হেসে বললো,

— সবচেয়ে বড় কথা কি জানেন? আমাকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত কেউ খুজবেই না। সন্তানের কিছু হলে সবার আগে উ*ত*লা হয় বাবা মা। আর এটা এতক্ষনে জেনে গেছেন নিশ্চয় আমার বাবা নেই। আর মা তো অ*সু*স্থ, সে এমনিতেও আমাকে স*হ্য করতে পারে না। আর নিবে খোঁজ? রিফা তো বাচ্চা মেয়ে। ও অনেক নরম স্বভাবের। সব মিলিয়ে দেখা যাবে প্রথম কয়েকদিন কেউ আমার খোঁজ ই নেয় নি। বন্ধুমহলের সবাই ভাববে কোথাও জ*রু*রী কাজে গিয়েছি হয়তো। পরবর্তীতে খোঁজ খবর না পেলে তখন হয়তো খুজবে।

আরশির ম*লি*ন মুখ টা দেখে অ*জান্তেই খা*রা*প লাগলো আবরারের। সে কিছু একটা ভাবতে লাগলো। এর মাঝেই আরশি আবরারের হাতের উপর কিছু একটা দেখে সেই জায়গায় ঠা*স করে একটা বা*রি দিলো। হুট করে এতো জোরে বা*রি দেয়ায় চ*ম*কে উঠলো আবরার। আবরারের মনে হচ্ছে জায়গা টা জ্ব*লে যাচ্ছে এতোটাই জো*রে বা*রি দিয়েছে আরশি। আরশি আবরারের হাত থেকে জিনিসটাকে তু*লে নিজের হাতের তা*লু*তে নিলো। আবরার কে দেখিয়ে বললো,

— আপনি কেমন এমপি বলেন তো? আপনাকে তো মশাও ভ*য় পায় না।

একে এতো জো*রে বা*রি দেয়ায় আবার এইরকম কথা বলায় মে*জা*জ খা*রা*প হয়ে গেলো আবরারের। সে দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে নিজের এক গা*র্ড কে আওয়াজ বাড়িয়ে ডাক দিলো। তার আওয়াজ পেতেই দ্রুত রুমে প্রবেশ করলো এক পা*হা*লো*য়া*ন মার্কা গা*র্ড। আবরার রে*গে গা*র্ডটাকে বললো,

— এই পা*গ*ল মেয়েটাকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাও আর ওকে ওর বাসায় দিয়ে আসো। যাও।

বাসায় পৌঁছে দেয়ার কথা বলায় কিছুটা অবাক ই হলো আরশি। সে ভেবেছিলো আজ এখানেই প্রাণ খো*য়া*তে হবে। বেঁচে গেছে ভেবে চোখজোড়া চকচক করতে লাগলো তার। কিন্তু আবরার তাকে পা*গ*ল বলেছে মনে পড়তেই সে আবরার কে কিছু একটা বলতে চাইলো তবে আবরারের ক*ড়া দৃষ্টি দেখে আর কিছু বললো না। গার্ড তাকে উঠতে বলতেই সে দাঁড়িয়ে গার্ডের পিছনে যেতে লাগলো। দরজার কাছে যেতেই থেমে গেলো আরশি। ঘা*ড় পিছন ফিরিয়ে দেখলো আবরার গম্ভীর মুখে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আরশি হঠাৎ দাঁ*ত কে*লি*য়ে আবরার কে উদ্দেশ্য করে বললো,

— আপনি কেমন এমপি বলেন তো? মা*র্ডা*র নাহয় নাই করলেন কিছু নাস্তা পানি তো খাওয়াতে পারতেন। একটু আপ্যায়ন ও করলেন না এতক্ষন শুধু শুধু বসিয়ে রাখলেন। আপনি আসলেই কি*প্টা এমপি সাহেব।

আবরার রা*গী রা*গী চোখে তাকাতেই হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আরশি। আরশি রুম থেকে বের হতেই হেসে ফেললো আবরারও। সিল্কি চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বিড়বিড় করলো,

— মেয়েটা আসলেই পা*গ*ল। তবে মেয়েটার চোখ যেনো স্বচ্ছ আরশি। সেই চোখের দিকে তাকালে দুনিয়া ভুলে যাওয়া সম্ভব। সেই চোখে আছে শুধু সততা,দৃ*ঢ়*তা; নেই কোনো মি*থ্যা,প্র*তা*রণা। তার আঁখি জোড়ার দিকে তাকালে উপলব্ধি করা যায় তার একান্ত বে*দ*নাগুলো যা সে কখনো প্রকাশ করে না।

চলবে?

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৫

ফুলের বাগানে হাটছে আবরার। চারপাশে ফুল আর ফুল। যেনো কোনো ফুলের পৃথিবীতে চলে এসেছে সে। কোথাও নেই কোনো মানুষ। সব টা নিরব। ফুলের মোহনীয় সুবাস ছড়াচ্ছে চারদিকে। ভালোই লাগছে আবরারের। ধীরে ধীরে সামনে এগোতে লাগলো সে। হঠাৎ কোনো রমণীর খিলখিল হাসির শব্দ শুনতে পেলো আবরার। থেমে গেলো তার পা। শব্দ অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই থ*ম*কে গেলো সে। মেরুন রঙের শাড়ি পরিহিতা এক রমণী ফুলের তৈরি দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে আর খিলখিলিয়ে হাসছে। এই হাসির শব্দ তো তার চেনা, হ্যা খুব করে চেনা। সে শুনেছে এই শব্দ, খুব কাছ থেকে অনুভব করেছে।

মেয়েটার মুখ দেখতে পাচ্ছে না আবরার। কারণ মেয়ে টা উল্টো দিকে মুখ করে আছে। তার দীঘল কালো কেশ দোলনায় বসে থাকার দরুন কখনো মাটিতে লু*টি*য়ে পড়ছে তো কখনো বাতাসে দুলছে। আবরার ম*ন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে, মুগ্ধ হয়ে শুনছে তার প্রানবন্ত হাসির শব্দ। সময় পে*রো*লো, অনেক টা সময়। হঠাৎ এক দ*ম*কা হাওয়া ছুঁয়ে দিলো আবরারের চোখ মুখ। হুঁশ ফিরলো তার। মস্তিষ্কের মধ্যে না*ড়া দিলো মেয়ে টা কে? এতক্ষন সে যার দিকে তাকিয়ে ছিলো? তার তো দেখা উচিত মেয়েটা কে সামনে থেকে। সে পা বাড়ালো মেয়েটার কাছে যাওয়ার জন্য। মেয়ে টা আর হাসছে না, দোলনাও আর আগের মতো দুলছে না। হয়তো সে নেমে যাবে। আবরার দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলো এবার। মেয়েটা কে যে তার দেখতেই হবে।

দোলনার কাছাকাছি গিয়ে থেমে গেলো আবরার। দোলনা ততক্ষনে থেমে গিয়েছে। মেয়েটা এবার উঠে দাঁড়ালো। অতি সন্তর্পণে নিজের দীঘল কেশ টেনে সামনের দিকে নিলো। ধীরে ধীরে ঘুরতে লাগলো আবরারের দিকে। হৃদস্পন্দন অ*স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেলো আবরারের। কপালে সূ*ক্ষ্ম ঘা*মে*র রেখা দেখা দিলো। সে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলো অচেনা রমণীর দিকে। যেই মাত্র মেয়ে টা আবরারের দিকে ফিরলো বলে অমনি ঘুম ভে*ঙে গেলো আবরারের। লা*ফ দিয়ে উঠে বসলো সে। দ্রুত গতিতে হৃদস্পন্দন চলছে তার। এসির মধ্যে থাকা সত্ত্বেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘা*ম জ*মে*ছে। হাত দিয়ে কপালের ঘা*ম মু*ছে ভাবতে লাগলো আবরার,

— আজ দুই টা বছর পর আবার সেই মেয়ে কে নিয়ে স্বপ্ন দেখলাম আমি। ইশ একটুর জন্য মেয়েটার মুখ টা দেখতে পেলাম না। আরেকটু পর স্বপ্ন টা ভা*ঙ*লে কি হতো উফঃ!

আবরার এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢ*ক*ঢ*ক করে খেয়ে ফেললো। তারপর আস্তে আস্তে বিছানায় শুয়ে কিছু একটা ভাবতে লাগলো।

——–

ভার্সিটি তে প্রবেশ করেই আরশি দেখলো ভার্সিটি সাজানো হচ্ছে। সে কিছু টা অবাক হলো। কোনো প্রোগ্রাম আছে কি? তাহলে তাকে কেউ বললো না যে? আরশি সোজা ক্যান্টিন এ চলে গেলো। সবাই ক্যান্টিনেই আছে। সে ধ*প করে একটা চেয়ারে বসে বললো,

— ভার্সিটি সাজাচ্ছে দেখলাম। কোনো প্রোগ্রাম আছে কি?

মুন বললো,

— হ্যা রে ফাইনাল ইয়ার এর স্টুডেন্টদের বিদায় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। আজকে নাকি ক্লাস ও হবে না। আমরা কিছুক্ষন আগেই জানতে পারলাম।

রাহুল নাক মুখ কুঁ*চ*কে বললো,

— ধু*র আগে যদি জানতাম ক্লাস হবে না তাহলে তুলি রে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাইতাম।

মোহনা রাহুল কে ভে*ঙি*য়ে বললো,

— তুলি কে নিয়ে ঘুরতে যাইতাম। আইছে আমার নি*ব্বা মহাশয়। হেহ!

আরশি হুট করে দাঁ*ত কে*লি*য়ে তাকালো রাহুলের দিকে। রাহুল চোখ মুখ অ*ন্ধ*কা*র করে বললো,

— কিরে কি সমস্যা এমনে তাকাস কেন? তোর নিয়ত আমার ঠিক লাগতেসে না। কি শ*য়*তা*নি বুদ্ধি আ*ট*তে*সোস?

আরশি আরও বড় হাসি দিয়ে বললো,

— চল আজকে আমাদের ট্রিট দিবি আর তুলির সাথেও মিট করাবি। আজকে যেহেতু কোনো ক্লাস নাই তাহলে শুভ কাজে দেরি কিসের?

আরশির কথা শেষ হতেই বন্ধু মহলের সবাই লা*ফি*য়ে উঠলো। আজ তারা ট্রিট নিয়েই ছাড়বে। রাহুল বে*চারার মুখ টা কাঁ*দো কাঁ*দো হয়ে গেলো। আজ যে এরা তাকে ফ*কি*র বানিয়েই ছাড়বে বুঝতে পারছে সে। সবার জ*ড়া*জ*ড়ি*তে তুলি কে ফোন দিয়ে রেস্টুরেন্ট এর ঠিকানা দিয়ে আসতে বললো রাহুল। তারপর দলবল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ফ*কি*র হওয়ার উদ্দেশ্যে।

———

বেশ বড় নামিদামি রেস্টুরেন্ট এ বসে আছে আরশি আর বন্ধুরা। রাহুল তাদের এখানেই নিয়ে এসেছে। তুলিকা এখনো আসে নি। তাই সব বন্ধুবান্ধব রা আলোচনা করছে কিভাবে আজকে রাহুলের পকেট খালি করা যায়। আর রাহুল মুখ গো*ম*ড়া করে ওদের দেখছে। অবশ্য এতে রাহুলের তেমন কোনো স*ম*স্যা হবে না। বেশ বড়লোক বাড়ির একমাত্র সন্তান সে। বাবা ব্যবসা করেন। ঢাকা শহরে নিজেদের দুইটা বাড়ি আছে। এছাড়া গ্রামেও অনেক সম্পত্তি রয়েছে রাহুলের বাবা মায়ের।

দশ মিনিট পরে ওদের টেবিলের কাছে এসে দাঁড়ালো একটা মেয়ে। গোলগাল, কিউট চেহারা। ভী*ত ভী*ত মুখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। আরশি তো আগেই দেখেছিলো তুলি কে। সে দেখেই চিনে ফেললো তুলি কে। কিন্তু ওর মুখ দেখে বুঝলো হয়তো ভ*য় পাচ্ছে বা অ*স্বস্তি বোধ করছে। তাই আরশি তুলি কে স্বাভাবিক করার জন্য ওকে নিজের পাশে বসিয়ে এটা ওটা জিজ্ঞাসা করতে লাগলো। বন্ধুমহলের সবাই বুঝতে পেরে তারাও স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে লাগলো তুলির সাথে। যেনো অনেকদিনের চেনা।

আরশি রা কফি অর্ডার দিয়েছিলো। প্ল্যান হলো কফি খেতে খেতে গল্প করবে। তারপর লাঞ্চ করে বের হবে। কফি আসতেই ওয়েটার একে একে সবাই কে দিতে লাগলো। আরশি কে দিতে গিয়ে হুট করে ব্যা*লে*ন্স হা*রি*য়ে ফেললো ওয়েটার। ফলস্বরূপ কিছু টা কফি পড়লো আরশির গলায় ঝু*লা*নো স্কার্ফ এ। ওয়েটার ভী*ত হয়ে বললো,

— ম্যাম আমি দুঃ*খি*ত। কিভাবে যেনো পা ম*চ*কে গেলো। আপনি প্লিজ ম্যানেজার স্যার কে কিছু বলবেন না। নাহলে আমার চাকরি চলে যাবে।

আরশি মৃদু হেসে বললো,

— আরে ভাইয়া ভ*য় পাবেন না। সমস্যা নেই। মাঝেমাঝে এমন টা হতেই পারে। আমি ম্যানেজার কে কিছু বলবো না। আপনি কি আমাকে একটু ওয়াশরুম টা দেখিয়ে দিবেন? স্কার্ফ টা ক্লি*ন করতাম।

ওয়েটার লোকটা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বললো,

— ধন্যবাদ ম্যাম। আপনি আসুন, আমি আপনাকে ওয়াশরুম দেখিয়ে দিচ্ছি।

মোহনা বললো,

— আমরা কেউ সাথে আসবো দোস্ত?

আরশি বললো,

— আরে না তোরা আ*ড্ডা দে, আমি যাবো আর আসবো।

ওয়েটার লোক টা আরশি কে ওয়াশরুম টা দেখিয়ে দিলো। আরশি ভেতরে গিয়ে স্কার্ফ টা ধুয়ে নিলো। হাত মু*ছ*তে মু*ছ*তে বের হলো সে। কিছু টা এগোতেই কারোর সাথে জো*রে*শো*রে একটা ধা*ক্কা খেলো আরশি। মাথায় বেশ ব্য*থা পেয়েছে সে। মাথা ড*ল*তে ড*ল*তে না তাকিয়েই বললো,

— মাগো মাথা মনে হয় ভে*ঙেই গেলো। কোন ব্রান্ডের পি*লা*র এর লগে বা*রি খাইলাম? উ*হঃ! এখন থেকে সবাই কে সাজেস্ট করবো এই পি*লা*র দিয়ে বাড়ি বানাতে।

কথা টা বলতে বলতে সামনে তাকালো আরশি। একজোড়া গভীর কালো চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। ভ্রু টা কুঁ*চ*কে আছে সামনের মানুষটার। হুডির ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢাকা, মুখে মাস্ক। চেহারা দেখা যাচ্ছে না। তবুও আরশি এক সেকেন্ড সময় ব্য*য় না করেই কিছু টা উ*চ্চ স্বরে বললো,

— আরে এমপি সাহেব যে?

থ*ত*ম*ত খেয়ে গেলো আবরার। দ্রুত নিজের মুখের হাত দিয়ে দেখলো মাস্ক ঠিক আছে কিনা। নাহ মাস্ক তো ঠিক আছে, তবুও এই মেয়ে তাকে চিনলো কিভাবে ভাবতে লাগলো আবরার। আরশির কথা শুনে অলরেডি তার মে*জা*জ হ*ট হয়ে আছে তাও চুপ ছিলো যাতে আরশি তাকে না চেনে। নাহলে আ*জা*ই*রা কথা বলার জন্য এতক্ষনে আরশি দুই চার টা ধ*ম*ক অবশ্যই খেতো। আরশি আবরার কে কোনো কথা না বলতে দেখে দাঁ*ত কে*লি*য়ে বললো,

— আরে আর মুখ বন্ধ রেখে লাভ নেই। আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি এমপি সাহেব।

আবরার আরশির দিকে কিছু টা চে*পে ফিসফিস করে বললো,

— আস্তে কথা বলো মিস আরশি। দেখতেই পাচ্ছ কেউ যাতে না চিনে তাই এভাবে এসেছি। কিন্তু তুমি আমাকে চিনলে কি করে?

আরশিও আবরারের মতো ফিসফিস করে বললো,

— ওই যে আপনার চোখ দেখা যাচ্ছে না? ঐটাই এনাফ আপনাকে চেনার জন্য।

অবাক হলো আবরার। কই এতজনের সামনে দিয়ে আসলো। কেউ তো চিনলো না। আবরারের চি*ন্তা*র মাঝে আরশি আবার ফিসফিস করে বললো,

— আচ্ছা এমপি সাহেব আপনি এমন চো*র ডা*কা*তের মতো রূপ নিয়ে ঘুরছেন কেনো? কিছু ডা*কা*তি করতে এসেছেন বুঝি?

আবরার ক*ট*ম*ট করে তাকালো আরশির দিকে। আরশি বুঝলো আবরার রে*গে যাচ্ছে। তবে তার ও তো ভালো লাগছে আবরার কে চে*তি*য়ে দিতে। আবরার দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,

— একটু একাকী সময় কা*টা*তে এসেছিলাম। গা*র্ড, সেলফি, অটোগ্রাফ, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর এসব দিতে দিতে হাঁ*পি*য়ে উঠি মাঝে মাঝে। তখন এভাবেই মুখ ঢে*কে বের হতে হয় একা একা। যাতে কেউ না চিনে। চিনলেই এখন সবাই হু*ম*ড়ি খেয়ে পড়বে। আর আমার শ*ত্রু*রাও বুঝোই তো?

আরশি বুঝলো আবরারের ব্যাপার টা। দিনশেষে সেও তো একজন মানুষ। তারও হয়তো ইচ্ছা করে স্বাধীন ভাবে হাঁটা চলা করতে। সারাক্ষণ গা*র্ড সাথে নিয়ে থাকা আসলেই কেমন যেনো। লাইক ব*ন্দী জীবন, তাদের ছাড়া এক পা ও ন*ড়া যায় না। আবরার আরশি কে গভীর ভাবে কিছু ভাবতে দেখে ওর চোখের সামনে তু*ড়ি দিলো। জিজ্ঞাসা করলো,

— কি এতো ভাবেন মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি?

আরশি এমন অদ্ভুত নামে ডাকতে শুনে ভে*বা*চে*কা খেলো। কিন্তু পরক্ষনেই মুখে লম্বা হাসি টে*নে বললো,

— আপনি কেমন এমপি বলেন তো? সাধারণ জনগণকেও ভ*য় পান। এটাই ভাবছিলাম।

আবরার নাক, মুখ কুঁ*চ*কে ফেললো। শ*ক্ত দৃষ্টি তা*ক করলো আরশির দিকে। আরশি দ্রুত বললো,

— আপনি থাকুন ভী*তু এমপি সাহেব। আমি গেলাম। আমার ফ্রেন্ডরা অপেক্ষা করছে।

আর দাঁড়ালো না আরশি। দ্রুত হেটে চলে গেলো আবরারের সামনে থেকে। আবরার তাকিয়ে রইলো আরশির যাওয়ার পানে। সে বুঝতে পেরেছে আরশি তাকে ইচ্ছা করে রা*গা*চ্ছি*লো। হয়তো মেয়েটার তাকে রা*গা*তে ভালো লাগে ভেবে মৃদু হাসলো আবরার। তারপর চলে গেলো নিজের কাজে।

চলবে?