তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব-৮+৯

0
251

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৮

নিজের রুমে একাধারে ঘু*র*পা*ক খাচ্ছে আবরার। মানে পায়চারী করছে আরকি। রাত বারোটা দশ বা*জছে এখন। আবরার এবার পায়চারী থামিয়ে আপন মনে বলতে লাগলো,

— এতো রাতে দেয়াটা কি ঠিক হবে? কিন্তু না দিয়েও যে শান্তি পাচ্ছি না। ধ্যা*ৎ দিয়েই দেখি। না তুললে বারবার দিবো। আমার ফোন তুলতেই হবে হুমম।

বলেই নিজের ফোন হাতে নিলো আবরার আরশি কে ফোন করার জন্য। নাম্বার সে গা*র্ড এর কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু নিয়ে যে এমন অ*শান্তির মধ্যে পড়বে কে জানতো। নাম্বার পেয়ে ফোন দেয়ার জন্য তার মন টা আ*কু*পা*কু করছে।

মনোযোগ সহকারে পড়ছিলো আরশি। এমন সময় হুট করে বে*জে উঠলো তার ফোন টা। আরশি ফোন হাতে নিয়ে দেখলো unknown নাম্বার থেকে কল আসছে। তাই আর রিসিভ না করে রেখে দিলো। কল কে*টে যাওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মাথায় আবার ফোন টা সশব্দে বে*জে উঠলো। বি*র*ক্ত হলো আরশি। এই রাতেই দুই তিন ঘন্টা সে একটু ভালো করে, মনোযোগ দিয়ে পড়ে। এছাড়া সারাদিন তো তেমন সময় পায় না। আর এই সময় অচেনা নাম্বার থেকে অনবরত ফোন আসায় বি*র*ক্ত হলো সে। কারোর কোনো ই*মা*র্জে*ন্সি পড়লো কিনা ভেবে ফোন রিসিভ করলো আরশি। কিন্তু রিসিভ করে কানে দিতেই একটা ঝা*ড়ি খেলো সে।

— এতক্ষন লাগে ফোন রিসিভ করতে?

সাথে সাথে মুখ টা হা হয়ে গেলো আরশির। ফোন কান থেকে সরে গেলো তার। ত্রিশ সেকেন্ড এর মতো লাগলো নিজেকে স্বাভাবিক করতে। স্বাভাবিক হয়ে ফোন টা আবার কানে দিয়ে অবাক হয়ে বললো আরশি,

— এমপি সাহেব আপনি? আপনি এতো রাতে ফোন কেনো করেছেন?

আরশির প্রশ্নে হাঁ*স*ফাঁ*স করে উঠলো আবরার। কল তো দিয়ে দিয়েছে এখন কি বলবে? বলবে যে তার আরশি কে নিয়ে চি*ন্তা হচ্ছিলো? তার আ*ঘা*ত পাওয়া স্থানের কি অবস্থা এখন তা জানার জন্য মন ছ*ট*ফ*ট করছিলো? এসব বললে মেয়ে টা আবার উ*ল্টা*পা*ল্টা বুঝবে না তো? আচ্ছা সে আবার মেয়েটার প্রেমে পড়ে যায় নি তো? আবরার নিজের চুলগুলো মু*ঠো করে পিছন দিকে ঠে*লে দিয়ে নিজেই নিজেকে শা*সা*লো,

— কি সব ভাবছি আমি? আমি কেন ওর প্রেমে পড়তে যাবো? আমার তো জাস্ট একটু চি*ন্তা হচ্ছে ওর জন্য। আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে বলে কথা। আর কিছু না। তুই একটু বেশি বেশি ভাবছিস আবরার।

আবরার নিজের গম্ভীরতা ব*জা*য় রেখে বললো,

— ইচ্ছা হয়েছে তাই দিয়েছি কোনো স*ম*স্যা?

আরশি মুখটা কে বি*কৃ*ত করে বললো,

— অ্যা… এই আপনি কেমন এমপি বলেন তো রাত বি*রাতে একটা মেয়ে কে ফোন দিয়ে বলছেন ইচ্ছা হয়েছে তাই দিয়েছি?

আরশির কথায় থ*ত*ম*ত খেয়ে গেলো আবরার। সে বুঝে না এই মেয়ে সব কথায় তার এমপি হওয়ার বিষয় টা টে*নে আনে কেনো। আবরার এবার টি*ট*কা*রি মে*রে বললো,

— তোমার সাথে প্রেম করতে কল দেই নি মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। সো এতো রিএক্ট করার কিছু নেই।

আরশি মুখ বা*কি*য়ে বললো,

— আপনার সাথে প্রেম করতে আমার ব*য়ে*ই গেছে হাহ।

আবরার ও আরশির মতো করেই বললো,

— তোমার সাথে প্রেম করতে আমার ব*য়ে*ই গেছে হাহ।

আরশি আবরার কে ওর মতো কপি করে বলতে শুনে নাক মুখ কুঁ*চ*কা*লো। বললো,

— কি জন্য ফোন করেছেন তাই বলুন।

আবরার গলা ঝে*ড়ে বললো,

— তোমার হাত পায়ের ক্ষ*ত এর অবস্থা জানার জন্য ফোন করেছি।

আরশি ভ্রু উঁচু করে বললো,

— এতো চি*ন্তা যে ফোন করে খোঁজ খবর নিচ্ছেন?

আবরার চোখ ছোট ছোট করে বললো,

— যতোই হোক আমাকে বাঁচাতে গিয়েই আ*ঘা*ত পেয়েছো তাই জিজ্ঞাসা না করে পারলাম না। তো বলো কি অবস্থা?

আরশি নিজের হাত পা প*র*খ করে বললো,

— ঠিকঠাক। এই সামান্য আ*ঘা*তে আমার কিছু হবে না। সো এতো চি*ন্তা করার দরকার নেই।

আবরার চি*ন্তি*ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

— ক্লিন করে আবার অয়েন্টমেন্ট লাগিয়েছিলে?

কিছুক্ষন চুপ থাকলো আরশি। কারণ সে এসে শাওয়ার নিয়ে আর কিছুই লাগায় নি। আ*ল*সা*মি লাগে তার এসব করতে। আরশি কে চুপ থাকতে দেখে আবরার আবার জিজ্ঞাসা করলো,

— লাগাও নি তার মানে?

আরশি নি*ভে যাওয়া গলায় বললো,

— না।

আবরারের কেনো যেনো রা*গ লাগলো। ভাবতে লাগলো এতো কে*য়া*র*লে*স কেনো এই মেয়ে? আবরার ক*ড়া গলায় বললো,

— লাগাও নি কেনো?

আরশি এবার গলায় জো*র বা*ড়িয়ে বললো,

— আমার ইচ্ছা তাই লাগাই নি। আপনার এতো না ভাবলেও চলবে।

চুপ হয়ে গেলো আবরার। আরশি কে কিছু নিয়ে জো*র করার অধিকার তো তার নেই। আবরার কে চুপ হয়ে যেতে দেখে খা*রা*প লাগলো আরশির। হয়তো তার কথায় আবরারের খা*রা*প লেগেছে। কতগুলো বছর পর একজন তার এতো কেয়ার করছে। কিন্তু সে কেমন ব্যবহার করলো? আরশি দেখলো আবরার কথাও বলছে না আর কল ও কা*ট*ছে না। তাই আরশি নরম গলায় বললো,

— রাখছি তাহলে। আল্লাহ হাফেজ।

কল কে*টে দিলো আরশি। টেবিলে মাথা রেখে মিনমিনিয়ে বলতে লাগলো,

— আচ্ছা এমপি সাহেব কি আমার প্রতি দু*র্ব*ল হয়ে পড়েছেন? তার আমার প্রতি এতো যত্নশীল হওয়া টা কি স্বাভাবিক? কই মুন তার কারণে আ*ঘা*ত পাওয়ার পর তো উনি মুনের খোঁজ খবর নেন নি? নাম্বার জো*গা*ড় করা তো উনার জন্য তেমন কোনো ব্যাপার না। তাহলে আমার প্রতি এতো যত্নশীল হওয়া টা… না না কি ভাবছিস আরশি? কোথায় উনি আর কোথায় তুই? উনার মতো ধনী, সুদর্শন, যোগ্যতা সম্পন্ন একজন এমপি তোর মতো কা*ই*ল্লা মেয়ের প্রেমে পড়বে? সো ফানি। আজকাল সবাই রূপ, সৌন্দর্য খুঁজে। আমার না আছে যোগ্যতা, না আছে রূপ আর না আছে অর্থ। ধ্যা*ৎ কি সব ভাবছিলাম। উনি হয়তো নরমালি খোঁজ খবর নিয়েছেন আর আমি কতো বেশি ভেবে ফেলেছি ছে*হঃ।

আরশি এসব চি*ন্তা মাথা থেকে ঝে*ড়ে ফে*লে আবার পড়ায় মনোযোগ দিলো।

অন্যদিকে আবরার এখনো ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। সে মনে মনে বললো,

— কেমন মেয়ে এটা? আমার সাথে কথা বলার জন্য মেয়েরা মু*খি*য়ে থাকে আর এই মেয়ে আমাকে পা*ত্তা দিলো না। কেন দুই চার টা কথা কি নিজে থেকে জিজ্ঞাসা করতে পারতো না? মুখে কি ঠো*সা পড়ে যেতো এক্সট্রা দুই তিনটা কথা নিজে থেকে জিজ্ঞাসা করলে? হুহ!
“ভাবের রাণী, আরশি দি গ্রেট অদ্ভুত চোখওয়ালি।”

আবরারের মাথায় অন্য একটা বিষয় আসতেই রা*গে চোখ লাল হয়ে গেলো তার। সে আবার একজন কে কল করলো। অপর পাশের ব্যক্তি রিসিভ করতেই রা*গী কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,

— কোনো খোঁজ পেয়েছো?

অপর পাশের ব্যক্তি কিছু একটা বলতেই বাঁ*কা হাসলো আবরার। ধা*রা*লো কণ্ঠে বললো,

— গুড। তাকে আমার প্রিয় জায়গায় নিয়ে এসো। তার কাছ থেকে যে গল্প শুনতে হবে আমাকে। সা*ব*ধা*নে নিয়ে আসবে। তার সামান্যতম ক্ষ*তি যেনো না হয়। নাহলে জানোই তো কি হবে তোমাদের সাথে?

অপর পাশের ব্যক্তি আবার কিছু একটা বলমাত্র কল কে*টে দিলো আবরার। দক্ষ হাতে ফোন ঘু*রাতে ঘু*রাতে বললো,

— তুই কে তা খুব জলদিই আমি জেনে যাবো। তুই এখনো বুঝতে পারছিস না তুই কার সাথে লাগতে এসেছিস। যখন বুঝতে পারবি তখন খুব দেরি হয়ে যাবে। বাঁচার রাস্তা আর খুঁজে পাবি না। আর আমার স*ন্দে*হ যদি সত্যি হয় তাহলে তোর জন্য ভ*য়া*ন*ক মৃ*ত্যু অপেক্ষা করছে। কারণ আমার ডায়েরিতে প্র*তা*র*ক*দের জন্য ক্ষ*মা নামক কোনো শব্দ নেই। কতো গেম খেলতে চাস খেল। আমিও দেখতে চাই তুই কতো খেলতে পারিস।

আরশির কথা আবার মনে পড়তেই ফোন ঘু*রা*নো থামিয়ে দিলো আবরার। মুচকি হেসে বললো,

— থ্যাংকস মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। তুমি হেল্প না করলে এতো দ্রুত কিছু করতে পারতাম না। তোমার জন্য হয়তো তার সন্ধান শীঘ্রই পেতে চলেছি। তবে তোমার জীবন হয়তো আমার জন্য ঝু*কি*র মধ্যে পড়ে গেছে। চি*ন্তা করিও না, আমার দেহে প্রাণ থাকতে তোমার কোনো ক্ষ*তি হতে দেবো না।

চলবে?

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৯

আরশিদের ভার্সিটি আজ নতুন রূপে সেজেছে। ফাইনাল ইয়ার এর স্টুডেন্টদের বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষে এতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আরশি ভার্সিটি তে প্রবেশ করে আশেপাশে চোখ বু*লা*লো। আজকের অনুষ্ঠানে আসতে চায় নি সে। কিন্তু তার বন্ধুরা জো*র করায় আসতে বাধ্য হয়েছে। কিছু টা দূরে চোখ যেতেই আরশি দেখতে পেলো মুন দাঁড়িয়ে আছে একটা গাছের সামনে। আজ মুন কে অনেক সুন্দর লাগছে। খুব সুন্দর করে শাড়ি পড়েছে সে। চুলগুলো ছেড়ে দেয়া।

আরশি মুনের কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,

— আরে দোস্ত তোকে তো আজকে সেই সুন্দর লাগছে রে। আমি তো ক্রাশ খেয়ে গেলাম। আজকে সব ছেলেরা তোর দিকে তাকিয়ে থাকবে দেখিস।

আরশির কথার মাঝেই বাকিরাও হাজির হলো। মোহনা আর আহি ও শাড়ি পড়েছে আজ। তাদের দুইজনকেও অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। আরশি ওদের দেখে বললো,

— হায় তিন সুন্দরী। আজ সবাই তোদের তিনজনের দিকেই তাকিয়ে থাকবে পা*ক্কা। আমারই না নজর লেগে যায়।

মুন আরশির কান টে*নে বললো,

— আমাদের সুন্দর দেখাচ্ছে ভালো কথা কিন্তু আপনি কেনো শাড়ি পড়েন নাই? কতো করে বললাম আমরা সবাই শাড়ি পড়বো। তুই ও একদিন একটু পড়। কিন্তু ম্যাডাম শুনলে তো?

মোহনা মুখটা কে ল*ট*কি*য়ে বললো,

— ঠিক কইসোস দোস্ত। আমরা শাড়ি পড়ে এতো সা*জু*গু*জু করে আসলাম আর এই মাইয়া ফ্রক ল*ট*কা*য় আইছে।

আহি মুখ গো*ম*ড়া করে আরশির উদ্দেশ্যে বললো,

— আমরা সবাই শাড়ি পড়েছি আর তুই ফ্রক পড়ে আসলি? এটা কি ঠিক? তার উপর একটুও সাজিস নাই।

আরশি আলতো হেসে বললো,

— কি করবো বল শাড়ি পড়তে জানলে তো পড়তাম। আর এমনিতেও আমি শাড়িতে কমফোর্টেবল ফিল করি না। এটাতেই শান্তি।

আহি আরশির হাত ধরে বললো,

— দেখি এদিকে বস দেখি।

আরশি দ্রুত হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,

— কি করতে চাচ্ছিস তুই? হাত ছাড় মাইয়া। তোর ই*ন*টে*নশন আমার ঠিক লাগতেসে না।

আহি হাত না ছেড়ে আরও জো*রে টে*নে আরশি কে একটা বেঞ্চে বসিয়ে দিলো। বললো,

— চুপচাপ বসে থাক। আমি এখন তোকে সাজাবো।

আরশি নাক মুখ কুঁ*চ*কে জো*রে বললো,

— নায়ায়ায়ায়া আমি সাজবো না ছাড়।

আহি আরশি কে ধমকে বললো,

— চুপ। একটা কথাও বলবি না। আমি জাস্ট একটু সাজাবো বেশি না। শুধু কাজল আর একটু লিপিস্টিক দিবো বাস্।

এবার মুন আর মোহনাও জো*র দিলো। বললো,

— লাগিয়ে নে না দোস্ত। বেশি না একটু।

ওদের চা*পে পড়ে রাজী হলো আরশি। তবে ক*ড়া ভাবে বলে দিয়েছে যেনো তাকে ভূ*ত বানানো না হয়। সে কালা মানুষ, কালাতেই সুন্দর।

———

স্পেশাল গেস্ট রূপে আবরার কে ভার্সিটি তে প্রবেশ করতে দেখে ভীষণ অবাক হলো আরশি। কিছুক্ষন আগে সে শুনেছিলো কোনো স্পেশাল গেস্ট আসবে আজ। কিন্তু ভাবতেও পারে নি সেটা আবরার। আরশি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো আবরারের দিকে। আজ আবরার কে মা*ত্রা*তি*রি*ক্ত সুদর্শন লাগছে। আগের দিন আবরার পাঞ্জাবী পড়ে আসলেও আজ সুট, বু*ট পড়ে এসেছে। আবরার কোট টা খুলে হাতে নিয়ে আছে। সাদা শার্ট এ তার সুঠাম দেহ স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে। যাতে আরও আকর্ষণীয় লাগছে আবরার কে। আবরারের সাথে আরও একজন ভদ্র লোক আছেন। ভদ্র লোক বেশ বয়স্ক হলেও মা*রা*ত্ম*ক হ্যান্ডসাম। আবরারের মতোই ফিটফাট। আরশি একটু খেয়াল করতেই বুঝলো ভদ্র লোক আবরারের মতো ফিটফাট নয় বরং আবরার ভদ্র লোকের মতো ফিটফাট। অর্থাৎ এরা হয়তো বাপ ছেলে।

আরশি আবরারের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো অধিকাংশ মেয়েরা হা করে তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে। কেউ কেউ আবার নিজের সাজ ঠিক করছে হয়তো আবরারের নজর কা*ড়া*র আশায়। আরশি দেখলো মোহনাও মুখ টা হা করে আবরার কে দেখছে। আর আহি আবরার কে দেখে মিটমিট করে হাসছে। মেয়েদের এভাবে তাকানো দেখে বি*র*ক্ত হলো আরশি।

আবরার ভিতরে প্রবেশ করে এদিক ওদিক চোখ ফেরাতেই তার নজরে এলো পরিচিত এক মুখ। শত শত অসাধারণের মাঝে অতি সাধারণ একজন। বি*র*ক্তি*তে কপাল কুঁ*চ*কে আছে। তাতেই যেনো সৌন্দর্য চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। আবরার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেই অতি সাধারণ একজনের দিকে। ভাবতে লাগলো কি এমন আছে তার মাঝে?

আবরার কে নিজের দিকে আসতে দেখে ভ*ড়*কে গেলো আরশি। কপালে চি*ন্তা*র ভা*জ পড়লো। মনে মনে ভাবতে লাগলো,

— এই লোক আবার এদিকে আসছে কেনো? এখানে এদের সামনে আবার উ*ল্টা*পা*ল্টা কিছু না বলে।

আরশির ভাবনার মাঝে আবরার আরশির সামনে এসে দাঁড়ালো। আরশি হাঁ*স*ফাঁ*স করতে লাগলো আবরার আবার তার বন্ধুদের সামনে কোনো বে*ফাঁ*স কথা না বলে। কিন্তু সবাই কে অবাক করে দিয়ে আবরার আরশির পাশে দাঁড়ানো মুন কে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করলো,

— কেমন আছেন মিস?

সবার সামনে একজন এমপি মুনের সাথে কথা বলায় অ*স্বস্তি হতে লাগলো তার। তবুও জো*র করে হেসে বললো,

— ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

আবরার মা*রা*ত্ম*ক একটা হাসি দিয়ে বললো,

— ভালোই আছি। ঐদিনের ঘটনার জন্য আমি সত্যিই দুঃ*খি*ত।

মুন দ্রুত বললো,

— না না স*ম*স্যা নেই। আপনাকে স*রি বলতে হবে না। আমি বুঝতে পেরেছি আপনি ইচ্ছা করে দেন নি। ভু*ল*ব*শ*ত লেগেছে। it’s ok….

আবরার বললো,

— ধন্যবাদ মিস ব্যাপার টা বোঝার জন্য। অনেকে তো আবার না বুঝেই ঝা*মে*লা করতে ভালোবাসে।

কথা টা যে আবরার মুনের পাশে দাঁড়ানো আরশি কে উদ্দেশ্য করে বলেছে তা ঠিক বুঝতে পারলো আরশি। এতক্ষন সে ট্যা*রা চোখে আবরার কেই দেখছিলো। আবরারের কথা শুনে ক*ড়া চোখে আবরারের দিকে তাকালো সে। কিন্তু আবরার আরশির দিকে তাকালোই না। আরশি দাঁ*ত ক*ট*ম*ট করে বি*ড়*বি*ড় করে বললো,

— অ*সভ্য লোক একটা। দেখো কেমন ভা*ন করছে যেনো আমাকে চেনেই না হুহ।

আবরার আরশি কে কোনোরূপ পা*ত্তা না দিয়ে মুন কে বললো,

— আপনি কিন্তু খুব সুইট মিস আর আজকে আপনাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।

আবরার প্রশংসা করায় লজ্জা পেলো মুন। লাজুক হেসে বললো,

— ধন্যবাদ।

আরশি আবরার কে মুনের প্রশংসা করতে দেখে মুখ বা*কি*য়ে নিম্ন স্বরে বললো,

— লু*চু এমপি একটা।

আবরার কিউট একটা হাসি দিয়ে বললো,

— ইউ আর ওয়েলকাম। তো আসি মিস ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

মুন ও লাজুক হাসি দিয়ে বললো,

— আল্লাহ হাফেজ।

আবরার আরশির দিকে না তাকিয়েই চলে গেলো স্টেজে। আরশির কেনো যেনো খা*রা*প লাগলো আবরার এভাবে ই*গ*নো*র করায়। ভাবলো রাতের ব্যবহারের জন্য আবরার রে*গে নেই তো? পরোক্ষনেই ভাবলো রা*গ*লে রা*গু*ক তার কি?

আবরার যেতেই সব বন্ধুরা ঘিরে ধরলো মুন কে। মোহনা এক প্রকার চি*ৎ*কা*র করে বললো,

— ত*লে ত*লে তাহলে এসব চলে? শেষমেষ আমার ক্রাশটা কে কে*ড়ে নিলি?

মুন ওকে বুঝানোর ভঙ্গিতে বললো,

— তুই ভু*ল বুঝছিস। আসল কাহিনী তো অন্য।

রাহুল দু*স্টু হাসি দিয়ে চোখ টি*পে বললো,

— কি কাহিনী বল বল? কেমনে কি হুম হুম?

মুন ওদের সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বললো। সব টা শুনার পর আবির বললো,

— আমার তো মনে হচ্ছে এমপি আবরার আহমেদ ধা*ক্কা খেয়ে তোর প্রেমে পড়ে গেছে। তার কথাবার্তা তে তো তাই মনে হলো।

বন্ধুরা সবাই আবিরের কথায় সায় দিয়ে হৈহৈ করে উঠলো। মুন ওদের ঝা*ড়ি দিয়ে বললো,

— আ*জা*ই*রা কথা বলিস না তো। এসব গু*জ*ব ছাড়া আর কিছু না।

আবির টি*ট*কা*রি করে বললো,

— নিজের চোখে দেখলাম তো বস।

মোহনাও মুন কে খুঁ*চি*য়ে বললো,

— আপনি কিন্তু খুব সুইট মিস আর আজকে আপনাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।

মোহনার কথা বলার স্টাইলে সবাই হেসে উঠলো। মুন ওদের বিভিন্ন ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগলো ওরা যা বুঝছে তা ঠিক নয়। কিন্তু ওরা খুঁ*চি*য়েই যাচ্ছে মুন কে। আরশির আর স*হ্য হচ্ছে না এসব। তাই সে চুপচাপ ওখান থেকে সরে আসলো। স্টেজের সামনে অনেক চেয়ার পা*তা*নো হয়েছে। আরশি সেখানে তৃতীয় সারির একটা চেয়ারে বসে পড়লো। মুখ টা গো*ম*ড়া করে রেখেছে সে। মন টা তার একটুও ভালো না। আরশির মনে হচ্ছে আবরার তার করা রাতের ব্যবহারে ক*ষ্ট পেয়েছে। তাই তো তাকে দেখেও না দেখা করলো।

কিন্তু আরশি এটা খেয়াল করলো না কেউ একজন তার দিকে একধ্যা*নে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখে নিজের চোখ জু*ড়া*চ্ছে মানুষ টা। তার উ*দা*স কাজল টা*না চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। তার দিকে তাকিয়ে যেনো দুনিয়া ভু*লে গেছে, ভু*লে গেছে পলক ফেলতে। মানুষটার চাহনি তে রয়েছে এক আকাশ সমান মুগ্ধতা, এক সমুদ্র সমান ভালোবাসা। হয়তো সেই ব্যক্তি নিজেও জানে না সে আরশির মায়ায় ডু*বে যাচ্ছে, যেই মায়া থেকে হয়তো আর তার নি*স্তা*র নেই।

চলবে?