তোমাতে পর্ব-০৫

0
2416

#তোমাতে
লেখনীতে~আগ্নেস মার্টেল

/পর্ব ৫/

সারারুমে ড্রিম লাইটের হালকা নীলচে আলোদের বিচরণ। সেই আলোয় মিটিমিটি হাসছি। অনুভূতিরা পাগল করে দিচ্ছে আমাকে। কিছুক্ষণ পর পর লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢাকি। আবার হাত সরিয়ে আশপাশে তাকাই। দৃষ্টি জোড়া হঠাৎ এক ম্যাজিকের আশা করে। নয় এক অতিপ্রাকৃত ঘটনার। বোকাসোকা এই অবাস্তব চিন্তাগুলো আক্ষেপ করে জিসান ভাই কেন অতিপ্রাকৃত কিছু হলেন না? এমন কিছু যা দেয়ালের ইট, সিমেন্ট, কংক্রিটের মধ্যে অদৃশ্য শক্তির সাহায্যে হঠাৎ রুমে এসে চমকে দিবে। কি ভাল হত তাহলে! কিছু কঠিন কথা শুনিয়ে ঝাঝ মিটাতাম। তিনি তাতে অপরাধীর হাসি হাসতেন! আসলেও কি হাসতেন? নিজের এসব উদ্ভট চিন্তাগুলোয় যখন সচেতন ভাবনারদের উঁকিঝুকি মিলছে তখন নিজের বোকামিতে গুটিয়ে যাচ্ছি। অযৌক্তিক ভাবনায় লজ্জারাঙা হয়ে পরছি। সময় কত গড়িয়েছে জানি না। হঠাৎ ড্রিম লাইটের আলো ছাপিয়ে রুমের লাইট জ্বলে উঠে। তীব্র আলোর ঝলকানিতে চোখ খিচে বন্ধ করি। রেনু খালার বিস্মিত কণ্ঠ আসে, “এ কি অবস্থা!?”

চোখে আলো সয়ে আসতে সময় নিল। উঠে বসলাম চোখ কুচকে। তখনের কথা ভেবে আবার ঠোঁটে হাসি এল। রেনু খালা বিস্ময়ে বলেন, “আম্মা কি হয়ছে? হাসতেছ কেন? নিসা মামনী কেন তোমার পায়ের কাছে?”

পায়ের দিকে থাকা নিসার দিকে একবার তাকাই। ওর থেকে চোখ সরিয়ে ঠোঁট টিপে বলি, “ও ঘুমিয়ে গেছে গল্প করার সময়। ভাল করে ঘুমোতে বললাম। এখন নড়ছে না।”

খালা তীব্র দৃষ্টিতে তাকান। বলেন, “তুমি এতক্ষণ একা একা কথা বলতাছিলা?”

ঠোঁট প্রসারিত রেখেই মাথা নাড়ি। বলছিলাম না। খালার দৃষ্টি আরও সুচাতুর হয়। তীব্র কণ্ঠে বলেন, “আমি স্পষ্ট শুনছি তোমার কণ্ঠ।”

ভড়কে গেলাম এবার, “কি শুনেছেন খালা?”

খালা কেমন চোখে যেন তাকালেন। মুখটা গম্ভীর। রুমের আলোটা নিভিয়ে আবার ড্রিম লাইটের আলো জ্বাললেন। নিসাকে টেনে ঠিক জায়গায় আনলেন। আমি তখনো বসে। নিসাকে ঠিক করার পর ঘুরে আমার পাশে এলেন। বললেন, “কতক্ষণ পর সকাল হইব। তুমি ঘুমাও। আমি মাথায় হাত বুলাই দিতাছি।”

সুয়ে পরলাম। তিনি মাথার কাছে বসে চুলে বিলি কাটতে লাগলেন। এক সময় ঘুমিয়ে পরি।

ঘুম ভাঙে বেশ কয়েকজনের কণ্ঠস্বরে। তাদের মধ্যে রেনু খালার কণ্ঠই প্রকট। উঠে বসি। চোখ কচলে ভাল করে তাকাই। আমার রুমে সবাই দাঁড়িয়ে। প্রত্যেকের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। তবে নিসার মুখটা করুণ বেশি। ভীতগ্রস্তও। অবাক হয়ে বললাম, “কি হয়েছে?”

ওরা একে অপরের দিকে তাকায়। রেনু খালা কি যেন বলতে চাইলেন। ভাইয়া ধমকে থামিয়ে দেয়। খালা চুপসে যান। ভাইয়া বিছানায় আমার পাশে এসে বসল। বলল, “তোর নাকি শরীর খারাপ?”

মাথা নাড়ি, “না! কে বলেছে?”

ভাইয়া খালার দিকে তাকায়, “খালা তুমি বরং খাবার আনো ওর জন্য।”

খালা আমার ওপর সতর্ক দৃষ্টি ফেলে চলে যান। ভাইয়া মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলে, “কালকে ঘুম হয়েছিল?”

আমি প্রত্যেকের মুখের দিকে একবার করে তাকাই। হ্যা বোধক মাথা নাড়ি। আপু পেছন থেকে চিন্তিত মুখে বলে, “ভাইয়া একবার শাফিকে দেখালে হয় না?”

ভাইয়া চিন্তিত মুখে আপুর দিকে তাকায়, “শুধু শুধু দেখাতে যাবি কেন? ও তো ঠিকই আছে।”

“ঠিক থাকলে তো ভালই। একবার দেখালে দোষ কি। সে তো উপরের তলাতেই থাকে।”

ভাইয়া উঠে পরল, “যা মনে করিস।” আমার দিকে ফিরে, “তোর কি ঘুম হয়েছে? খালা বলল তুই ভোরেও জেগে ছিলি। না হলে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পরিস আবার!”

সদ্য ঘুম থেকে উঠা মস্তিষ্কে ওদের কথাবার্তা প্যাচালো লাগে। উলটো প্রশ্ন করাকে ঝামেলা মনে হয়। সায় দিয়ে তাই উঠে পরি। ফ্রেশ হয়ে বেরই। নিসা তখন চিন্তিত মুখে খাটের কোণে বসে। আমাকে দেখে ফ্যাকাশে হাসল। ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “তুই কি কোন কারনে আমাকে ভয় পাচ্ছিস?”

নিসা তাড়াতাড়ি মাথা নাড়ে। ভয় পাচ্ছে না। রুমে চোখ বোলালাম। আপুও চলে গেছে। বললাম, “এমন আজব ব্যবহার করছিস কেন তাহলে?”

নিসা তোতলায়, “তুই কালকে বারোটায় ছাদে গেছিলি?”

সম্মতি দেই। ওর মুখটা আরও ফ্যাকাশে হয়, “ত তোর ক কি মাথা ঝিমঝিম করছে? মনে হচ্ছে যে অন্য কেউ ভর করে আছে?”

চোখ-মুখ কুচকে বলি, “সোজা ভাষায় বল। কিসের কথা বলছিস!”

ঢোক গিলে, “বুঝে নে না। তেনাদের নাম নাকি মুখে আনতে হয় না।”

সুচালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। রাগ লাগে। অযথাই মাথা নেড়ে সম্মতি দেই। নিসা কাঁদোকাঁদো মুখে দাঁড়িয়ে যায়, “সর্বনাশ খালার কথাই সত্যি তাহলে! একা ছাদে যেতে গেলি কেন?”

“তো তোমার মতো হুশজ্ঞান হারিয়ে পরে থাকতাম?”

নিসা হতাশ চোখে তাকিয়ে থাকে। এক সময় কাছে এসে ফিসফিসায়, “উনি কি এখন তোর সাথে আছে?”

বিরক্তি নিয়ে সম্মতি দিলাম। নিসা ছিটকে সরে গেল। কিছুক্ষণ ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রুম ছাড়ল। আমি ছোট্ট শ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরই। ভাইয়ার রুমের সামনে এসে দাঁড়াই। চাপানো দরজার ফাঁক গলে কিছুটা দেখা যাচ্ছে। ভাইয়া খাটের মধ্যে বসে ল্যাপটপে কারোর সাথে কথা বলছে। দরজা ঠেলে মুখ বাড়িয়ে তাকালাম। ভাইয়া ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে তাকায়, “তুই দরজায় দাঁড়িয়ে কেন? আয় রুমে আয়।”

গুটিগুটি পায়ে ভাইয়ার পাশে এসে বসি। ভাইয়া মৃদু হাসিতে বলেন, “মুখ এমন চিমসে করে রেখেছিস কেন?”

“ওরা আমাকে ভয় পাচ্ছে কেন ভাইয়া?”

ভাইয়া এবার সশব্দে হাসতে থাকে, বলে, “কে ভয় পাচ্ছে?”

ঠোঁট উল্টাই, “ঐ যে নিসা, আপু..”

“রেনু খালা বলেছে তোকে নাকি জ্বিনে, ভুতে ধরেছে। কাল ভোর রাতে তুই বিছানায় চুল এলোমেলো করে বসে ছিলি। আর বারবার, ‘উনার স্বধিকারে আমি’ কথাটা জপছিলি হেসে হেসে।”

ভেবাচেকা খেয়ে গেলাম। এই কথাটা কখন বললাম? না বললে খালা এই স্বধিকার কথাটা বলত কিভাবে?

“থাক বাদ দে। তোর আপুর সাথে কথা বলবি?”

“না তোমার বোন খুব জাদরেল। সেও নিশ্চয় বিশ্বাস করে নিয়েছে!”

ভাইয়া আবার সশব্দে হাসে, “আরে তোর ভাবীর কথা বলছি।”

ভাইয়া ল্যাপটপ এগিয়ে দিল। ল্যাপটপের ওপাশে রূপবতী এক আপু হাসোজ্জল মুখে হাই দিল। আমি ভাইয়ার দিকে তাকালাম। আরেকবার আপুর দিকে। বললাম, “এই ভাইয়া এত রূপবতীকে পটিয়েছিস কেন? তোর সাথে যায় আপুর?”

ভাইয়া ঘাড়ে হাত রেখে মৃদু হাসে। ওপাশের আপুটা খিলখিলিয়ে হাসছে।

বেলা গড়িয়েছে বেশ। আমি তখন পিঠের নিচে বালিশ রেখে আধশোয়া। শীর্ষেন্দুর “ফুল চোর” পড়ছি। রুমের দরজাটা চাপানো ছিল। সেটা খুলে সাদা পাঞ্জাবি পরনে জিসান ভাই ঢুকল। পেছনে রেনু খালা, তার সৈন্য সামন্ত। রেনু খালারা একটা গ্রুপ হয়ে গেছেন। রুমে এলে তিনজনই একসাথে আসছেন। বেরলে তিনজনই একসাথে বেরিয়ে যাচ্ছেন। নিসার ওপর আমি তাই চরম বিরক্ত। আমার সাথে গল্প করতে এসে আমাকেই এড়িয়ে চলা হচ্ছে! রুম থেকে একবার পানি খেতে বেরিয়ে ছিলাম। ওরা তিনজন রান্নাঘরে তখন গুজুরগুজুর করছে। রেনু খালা গম্ভীর মুখে ভাষণ দিচ্ছেন। আপু, নিসা ফ্যাকাশে কৌতুহলে সেসব মনোযোগ দিয়ে শুনছে। আমি উঁকি দিতেই চুপ করে গেল। অভিমানে কিছু বলিনি। চুপ করে নিজের রুমে এসে গেছি। জিসান ভাই এসে জিজ্ঞেস করেন, “কি হয়েছে তোর?”

তিনজোটের দিকে একবার তাকালাম, “কিছুই না।”

তিনি জহুরি চোখে আমাকে পর্যবেক্ষণ করেন। রেনু খালার দিকে ফিরেন। বলেন, “কি যেন হয়েছে বলছিলেন?”

“তোমার কাজ কারবার না। সাদ’রে কইলাম আমি গ্রামের থেকে..”

জিসান ভাই মুখ বেকান, বলেন, “ওর সমস্যাটা আসলে কি? আমি তো সম্পূর্ণ সুস্থ দেখছি।”

“না মামনী সুস্থ নাই। ও রাতের বেলা হাসতেছিল কইতাছিল ‘উনার স্বধিকারে আমি!’, ঘুমানোর পরও শব্দ কইরা হাসছে। একই কথা বলছে। আমি দোয়া দুরুদ পইড়া ফু দিয়া একখান ধাক্কা মারলাম তারপর ঘুমায় গেছে!”

জিসান ভাই কেশে উঠেন। বিস্মিত হতবুদ্ধ আমি লজ্জায় উনার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নুইয়ে ফেলি। জিসান ভাইয়ের গম্ভীরস্বর আসে, “মাথায় ভুতটা দেখি ভাল ভাবেই চেপেছে!”

রেগে উনার দিকে তাকালাম। তিনি থুতনিতে আঙুল বোলাচ্ছেন। মিটিমিটি হাসছেনও। খালাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, “ওর সাথে একা কথা বলতে পারব? ওর সমস্যাটা সত্যিই ভৌতিক কিছু কিনা পরখ করে দেখব।”

রেনু খালা গাম্ভীর্য নিয়ে মাথা নাড়েন। উনার সৈন্য সামন্তকে ইশারা করেন। নিসা আপত্তি করছিল। আপুর হাতের টানে বেরিয়ে গেল। ওরা বেরিয়ে গেলে জিসান ভাই চেয়ার টেনে মুখোমুখী বসেন। তীর্যক চোখে তাকিয়ে থাকি।

“তুই তাহলে সত্যিই সেই ছেলেটার প্রেমে পরলি!”

ঠোঁটের কোণ প্রসারিত। ঠোঁট টিপে হাসি আটকাতে চাওয়ায় ঠোঁটের দুপাশ ডেবে টোল মুহূর্ত পর পর উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। লজ্জায় কুকড়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। তিনি চিন্তিত কণ্ঠে বলেন, “তোর মাথার প্রেম ভুত কি আমার পক্ষে নামানো সম্ভব? ডাক্তারি শাস্ত্রে পাইনি এসব প্রেমভুত নামানোর কিছু! এখন কি হবে? খালাকে বরং বলি উনার গ্রামের বাবাদের ডেকে এনে ঝাটার বাড়ি দিয়ে তোর মাথার ভুত দূর করাক!”

“একদম মজা নিবেন না। সব আপনার জন্য হয়েছে!”

বিস্ময়ে, “আমার জন্য? তুই আমার প্রেমে পরেছিস?”

রাগ নিয়ে উনার দিকে তাকালাম। তিনি মৃদু মৃদু হাসছেন। চোখাচোখিতে চোখ টিপে বলেন, “আয় তাহলে তোর প্রেমরোগের ট্রিটমেন্ট দেই। প্রেমভুত একেবারে চলে যাবে!”

লজ্জায়, রাগে দিকভ্রান্ত হয়ে বলি, “আপনি একটা যাচ্ছে তাই!”

তিনি নিশব্দে হাসতে থাকেন। সারাদেহ ঝাকিয়ে হাসছেন। হাসি থামিয়ে সিরিয়াস হওয়ার চেষ্টায় বলেন, “এসব আর বলিস না জনসম্মুখে!”

গাল ফোলাই, “আমি বলিনি সে কথা।”

“আচ্ছা? তাহলে রেনু খালা কিভাবে স্ব__অধিকার শব্দটা জানলেন?”

লজ্জায় এবার কুকড়ে গেলাম। এদিক সেদিক তাকাতে গিয়ে দরজার পর্দায় চোখ পরে। তা অস্বাভাবিকভাবে দুলছে। ভ্রু কুচকে আসে। নিচে তাকিয়ে থ হয়ে গেলাম। পর্দার নিচে দুজোড়া পা দেখা যাচ্ছে। সুচাতুর চোখে পর্দায় তাকিয়ে থেকে আবিষ্কার করলাম নিসা আর মিশেল আপু পর্দার পেছনে লুকিয়ে আমাদের কথা শুনছেন। জিসান ভাইও পেছনে তাকান। বলেন, “কে ওখানে?”

পর্দার নিচের পাগুলো সরে যায়। দৌড়ানোর ধুপধাপ শব্দ হতে থাকে। জিসান ভাই হতবুদ্ধ হয়ে উঠে দাঁড়ান, “তোদের বাসায় সবাই দেখি জোচ্চুরি করে! ভাগ্যিস নিজের নাম বলিনি তখন!”

আড়চোখে তাকিয়ে, “কমই বা কি বলেছেন?”

জিসান ভাই বেরিয়ে পরেন রুম থেকে। আমিও পেছনে বেরই। তিনি সরাসরি ভাইয়ার রুমে এলেন। কি কুমন্ত্র ঢালেন তা শুনতে আমিও পেছন পেছন এলাম। কুশলাদি বিনিময় শেষে দুজনের দৃষ্টি আমার ওপর পরল।

“ওর মধ্যে সত্যিই সমস্যা দেখা দিচ্ছে?”

জিসান ভাই প্রশ্নটায় আমার দিকে তাকান। এবং শব্দ করে হেসে ফেলেন, বলেন, “না ভাই। কমবয়সী আবেগের ব্যাপার স্যাপারকে ভুতুড়ে করে ফেলেছে খালা।”

ভাইয়া বিস্মিত হয়ে আমার দিকে তাকাল। মনে হলো এই মুহূর্তে আমার কেটে পরা উচিত। করলামও তাই। তবে রুমের বাইরে রয়ে গেলাম। জিসান ভাই ভাইয়াকে বললেন আমার রিফ্রেশমেন্টের প্রয়োজন। বাইরে ঘুরিয়ে আনলে ভাল হয়! সিরিয়াসলি!? সোজা সরল ভাইটাও এই ভন্ড ইন্টার্নের কথায় নেচে নেচে উঠছে! রাগে ফুসতে ফুসতে কানটা আরও এগিয়ে দিলাম।

“কিন্তু আমার তো সময় নেই আজকে। নেহাকে ঘুরতে নিয়ে যাব বলেছি।”

জিসান ভাইয়ের হাস্যরাত্মক কণ্ঠ আসে, “বোনকে নাহয় সঙ্গে নিলা। মাঝে মাঝে মেয়েরা ডেটের সময় ছোট বোনকে আনে না? তুমি ছেলে হয়ে নিবা। ব্যতিক্রম হও মিয়া!”

ভাইয়া হয়ত জিসান ভাইকে হালকা হাতে মারল। শব্দ হলো। বলল, “হুশ মজা নিস না। বোন এখন তিন চার বছরের হলে একটা কথা ছিল!”

“নিজের রোমান্টিসিজমের জন্য বোনের সুস্থতা দেখছ না?”

“আজকেই নিতে হবে? আগামী শুক্রবারে নিলে হয় না?”

“ওর পাগলামি আরও বাড়বে তাতে। রেনু খালা নিজে মন্ত্র পড়ে তখন ঝাটার বারি দিবেন।”

আমি গাল ফোলালাম। কি নাটক পারে! দুজনের হাসির শব্দ আসছে রুম থেকে। ভাইয়া করুণকন্ঠে বলল, “নেহাকে মানা করব তাহলে?”

“তুমি চাইলে আমি তোমার বোনকে ঘুরিয়ে আনতে পারি। এমনিতেও ফ্রি আছি।”

বিস্ময় কণ্ঠে, “তুই নিয়ে যাবি?”

জিসান ভাইয়ের কৌতুকপূর্ণ কণ্ঠ আসে, “কেন ভাই তোমার বোনকে পালিয়ে নিয়ে যাবার ভয় পাচ্ছ?”

“হুস! পালিয়ে আর যাবি কই? থাকিস তো আমাদের বিল্ডিংয়েই!”

আরেক দফা হাসির শব্দ। রুমে এসে পরি। রাগ হলেও খুশি খুশিও লাগছে। আজগুবি রোগের কথা বলায় ঘুরতে তো যেতে পারব! জিসান ভাই এসময় রুমে উঁকি দেন। বলেন, “এই প্রেমবানু ঘুরতে যাবি?”

আমি নিশ্চুপে তাকিয়ে থাকি। তিনি সপ্রশ্ন চোখে তাকিয়ে। সম্মতিতে মাথা নাড়ি। তিনি এক গাল হাসেন। বলেন, “বিকেলবেলা রেডি হয়ে থাকিস।”

আমি ঘাড় নেড়ে সম্মতি দেই। তিনি চলে যান। বালিশ জড়িয়ে বিছানায় লাফিয়ে গিয়ে পরি। আহা! চারপাশে কেমন সুখ সুখ ঘ্রাণের অনুভূতি হচ্ছে। উনার ব্যবহারে আজকে পরিবর্তন পরিবর্তন ছিল না? হ্যা অবশ্যই ছিল। কি সুন্দর ঐ হাসি, ঝাকরাচুলো ঐ ছেলেটা! আমি ঝটপট উঠে বসি। আয়নার সামনে এসে নিজেকে খুটিয়ে দেখতে থাকি। আক্ষেপ হয়! উনি এত কেন সুন্দর হতে গেলেন? সৌন্দর্যের মাপ কাঠিতে কি আমাদের পাশাপাশি মানাবে? বড্ড চিন্তার বিষয়।

~চলবে❤️