#তোমার_আসক্তিতে_আসক্ত
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব-০২
আর্শিকা যখন গভীর চিন্তায় মগ্ন তখনই কেউ একজন আর্শিকার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“এক্সকিউজ মি ম্যাডাম,এটা আমার সিট আপনি মনে হয় ভুল করে আমার সিটটায় বসে পড়েছেন।”
আর্শিকার কানে সেই কথা কর্ণগোচর হলো না।রাদাফ এবার আর্শিকার দিকে বিরক্তির চোখে তাকালো।আবার উপরোক্ত কথা বলার আগেই আর্শিকা বলে উঠে,
“আমার ভালো লাগছে না,আপনি কি আমার সিটটায় বসুন।”
আর্শিকার এমন নির্দিদ্ধার আবেদনে রাদাফ চমকালো। রাদাফ তার বিস্ময়মুখ বজায় রেখেই আর্শিকার পাশের সিটটায় বসে পড়ল।আর্শিকা মনে মনে ভাবছে,ঠিক সে কাকে দোষ দিবে?নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে যে তার সাথে সম্পর্কে থাকা বিদ্যমান নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডকে বিয়ে করে নিয়েছে? নাকি তার বেস্ট ফ্রেন্ডকে যে সব কিছু না জেনেই তার কাছ থেকে তার প্রিয় জিনিসটাকে কেড়ে নিয়েছে?নাকি সেই মা-বাবাকে যে নিজের ছেলের জীবনের ভালোর জন্য তাকে ছেড়ে দিয়েছে?নাকি সবই তার ভাগ্যের লীলা খেলা?
আর্শিকার এসব ভেবে ভীষণ হাসি পাচ্ছে।কাঁদতে কাঁদতেই আর্শিকা হেসে দিলো।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানিটা মুছে নিলো।এত্তোক্ষণ একজোড়া চোখ আর্শিকাকে কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল।
“মেয়েটার কি মাথায় সমস্যা?না দেখে তো মনে হচ্ছে না।কিভাবে কাঁদতে কাঁদতে হাসছে আবার তখন ডাক দিলাম না তাকিয়েই অবলীলায় এমন একটা কথা বলে দিলো।একবারও আমার উত্তর জানার চেষ্টাও করলো না।আমি যদি রাজি না হতাম তাইলে?নির্ঘাত এই মেয়ে পাগল।হায় আল্লাহ, শেষ পর্যন্ত কি না পাগলের পাশে বসিয়ে যাত্রা শুরু করলা?”
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই রাদাফ আর্শিকার উপর থেকে নজর সরিয়ে নেয়।এভাবে অপরিচিত কারোর দিকে উচিত না।হুট করেই আর্শিকা কি মনে করে তার মুঠোফোনটা খুললো।মুঠোফোনটা খুলতেই ৩৩টা মিসড কল দেখা গেলো,যা দেখে আর্শিকা একটা তৃপ্তির হাসি দিলো। মুহুর্তেই আবার মুঠোফোনটা বেজে উঠলো এবার আর্শিকা আর ফোনটা বন্ধ করে নি বরং ধরলো।ফোনটা ধরতে ওপাশ থেকে ভেসে এলো,
“এতোদিন পরে এলি অথচ আমার বিয়ে পর্যন্ত থাকতে পারলি না?”
ফুঁপিয়ে ফুপিঁয়ে কান্না করছে জোহা।জোহার কান্নার আওয়াজ শুনে আর্শিকার চোখ অশ্রুতে পরিপূর্ণ হয়ে এলো।কোন অবস্থা থেকে যে সে বিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে একমাত্র সেই তা জানে। ওপাশ থেকে ফুঁপিয়ে কান্নার তেজ বাড়তে লাগলো।আর্শিকা আর সহ্য করতে না পেরে ফোনটা পুনরায় বন্ধ করে নিলো।আবার তার দৃষ্টি বাহিরে নিবদ্ধ করে সন্ধ্যার কথা ভাবতে লাগলো।
~~~~সন্ধ্যা~~~~
জোহা তার শশুড়-শাশুড়ীর সাথে আর্শিকাকে পরিচয় করিয়ে দেয়।আর্শিকা তাদের সালাম দেয়।জোহা আর্শিকার কানে কানে বলে,
“কি রে দুলাভাই হাত করতে পারলি না নাকি?তাহলে তো তোর এতো মেকাপ সব বৃথা গেলো।”
আর্শিকা জোহার কথার ভ্রুক্ষেপ না করে বলে,”অন্যের জিনিসের প্রতি আমার বরাবরই আগ্রহ কম।সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস আমি ইউজ করি না।দেখিস অন্যের নীড় দেখতে গিয়ে নিজের নীড়ই যেনো ভেঙে না যায়।”
জোহা বিনিময়ে মুচকি হেসে চলে যায়।জোহা যাওয়ার সাথে সাথে প্রতীকের মা ক্ষিপ্ত বাঘিনীর মতো আর্শিকাকে চেঁপে ধরে বলে,
“এই ছোট লোকের বাচ্চা,আমার ছেলের এখনো পিছু ছাড়লি না।বিয়ের দিনও ওর পিছু পিছু চলে এলি?লজ্জা করে না তোর?এবার তো রহম কর আমার ছেলের উপর।”
আর্শিকা কিচ্ছু বলে না।প্রতীক মায়ের কথায় বিরক্ত হয়ে বলে,”উফফ মা কি শুরু করলে তুমি?”
“তুই একদম চুপ থাক।এই মেয়ের জন্য আমার সংসারে কম অশান্তি হয় নি।শুধুমাত্র এই মেয়ের জন্য বাপ বেটার সম্পর্কের ছেদ ধরেছে।এখন আবার এখানে এসেছে এই বিয়ে নষ্ট করতে।ছোটবেলা নিজের বাপ-মা’র জীবন নষ্ট করছে এখন আসছে আমার ছেলের জীবন নষ্ট করতে আসছে।”
আর্শিকা আর চুপ থাকতে পারলো না। আর্শিকা তেজে গিয়ে বলল,
“আপনার ছেলেকে আমি ভালোবাসতে বলি নি বরং সে স্বেচ্ছায় আমার দরবারে ভালোবাসার ভিক্ষা চেয়েছিলো, আমি পারি নি তাকে ফেরাতে। আপনার ছেলে এখনো আমাকে ভালোবেসে এই বিয়ে ভেঙে দিতে চেয়েছে,কিন্তু আমি পারি নি স্বার্থপর হতে,পারি নি অন্যের নীড় ভাঙতে। আর আমার বাবা-মায়ের কথা সেই ইতিহাস আপনার না জানলেও চলবে।আমার বাবা-মা গরীব হতে পারে কিন্তু মনের দিক দিয়ে তারা আপনার চেয়ে শতগুন ভালো। আমাকে নিয়ে আপনার ছেলের এতো সমস্যার ওকে এমন যেনো না হয় আপনার ছেলে পরে আমার পিছনেই ঘোরে।”
আর্শিকা প্রতীকের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,
“মুক্ত করে দিলাম পাখি
যেতে পারিস উড়ে
ভালোবাসি এই কথাটি
বলবো না আর তোরে।”
কথাটি বলে আর্শিকা কাউকে কিছু না জানিয়ে বেরিয়ে এলো।প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে এই বুকে, হয়তো এই ব্যাথায় আর্শিকার প্রাণটাই চলে যাবে।আর কখনো এই সিলেটে সে আসবে না,এই সিলেটে যতবার এসেছে ততবারই তার জীবনের কাল হয়ে দাড়িয়েছে যেমনটা হয়েছিলো ছয় বছর আগে।
✨✨
“এই যে শুনছেন?এই যে…”
কোনো এক পুরুষালি গলায় আর্শিকার নিন্দ্রার ব্যাঘাত ঘটে। আর্শিকা চোখ মেলে নিজের মাথা কারোর কাঁধে আছে তা বুঝতে পারে।আর্শিকা নিজের মাথা তুলে প্রথমবারের মতো রাদাফকে দেখতে পায়। স্নিগ্ধ অবাধ্য চুল, ব্রাউন নীলাভ চোখ, মুখে খোঁচা খোঁচা চাপ দাঁড়ি,মেয়েলি গোলাপ রাঙা চিকন ঠোঁট আবার ঠোঁটে একটু নিচে একটা গাঢ় তিল।আর্শিকার একটু হিংসা হলো, ছেলেদের কেনো ঠোঁটের নিচে তিল থাকবে এ তো ভারী অন্যায়, আর কেনই বাহ মেয়েলি গোলাপ রাঙা ঠোঁট থাকবে?
আর্শিকাকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে রাদাফ অস্বস্তিতে পড়ে যায়।আর্শিকার হুস ফিরাতে হালকা শুকনো কাশি দেয়। আর্শিকার হুস ফিরতেই একরকম লজ্জার সম্মুখীন হয়ে যায়। আর্শিকা নিজের মনে মনে বকতে থাকে।
“ছিঃ আর্শিকা তুই কি না শেষে একটা ছেলেকে এভাবে খুটিয়ে দেখছিস?লজ্জা লাগা উচিত তোর?কিন্তু আমি তো ঘুমের ঘোরেই ছেলেটাকে পর্যবেক্ষণ করছিলাম তাও তো এমন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম। আমি তো মনে কোনো পাপ নিয়ে দেখছিলাম না।”
আর্শিকার ভাবনার মাঝে রাদাফ বলে উঠে,”শুনছেন?”
আর্শিকা নিশ্চুপ।রাদাফের কাছে মেয়েটাকে কেমন ভাবুক ও গম্ভীর প্রকৃতির মনে হয়।কথায় কথায় মেয়েটা যেনো কোন রাজ্যে হারিয়ে যায় তা বোঝা দায়।রাদাফ এবার একটু বিরক্ত হয়েই আর্শিকাকে জোরে চিৎকার করে বলে,
“শুনছেন আপনাকে আমি কিছু বলছিইইইই?”
রাদাফের এমন গগন ফাটানি চিল্লানোতে আর্শিকা দু’কানে হাত দিয়ে বিরক্তিমাখা কন্ঠে বলে,
“এভাবে চিৎকার করে কেনো বলছেন?আমাকে কি আপনার বয়্রা মনে হচ্ছে।”
“দেখে তো এর ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে না।” রাদাফ মিন মিনিয়ে কথাগুলো বললো যা স্পষ্ট আর্শিকার কান অব্দি গেলো না।আর্শিকা ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,
“কিছু কি বললেন?”
“কই কিছু না তো? গাড়ি এখন কিচ্ছুক্ষণের জন্য ব্রেক নিয়েছে।দূরের রাস্তা তাই ৩০ মিনিটের হালকা খাওয়া দাওয়ার জন্য এই রেস্তোরাঁয় দাঁড় করিয়েছে, সবাই নেমে গেছে শুধু আপনি আর আমিই বাকি আছি।”
আর্শিকা দায় ভার ছাড়া হিসেবে বলে,”তো আমি কি করতে পারি?আপনিও নেমে যান।”
“এতো রাতে খালি একটা বাসে একটা মেয়ের থাকা উচিত নয়।আমার মনে হয় আমার সাথে সাথে আপনারও যাওয়া উচিত।”
“আপনার সাথে গেলে যে আমি নিরাপদ তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে?”
রাদাফের দিকে তীর্যক দৃষ্টি ফেলে আর্শিকা কথাগুলো বলল।কেনো জানি আর্শিকার কথায় রাদাফের বড্ড হাসি পেলো।রাদাফ মুচকি হেসে বলে,
“বিশ্বাসে মিলাস বস্তু,তর্কে বহু দূর।আপনার যদি ইচ্ছে হয় আমার সাথে যেতে পারেন অন্যথায় আপনি গাড়িতেও থাকতে পারেন।আমি কেবল আমার প্রস্তাব দিলাম।”
প্রচন্ড ক্ষুধা থাকলেও আর্শিকা রাদাফের প্রস্তাব এই মুহুর্তে প্রত্যাখান করে।রাদাফও উপায় না পেয়ে বাস থেকে নেমে হালকা কিছু খেয়ে নেয়।রাদাফ তাড়াতাড়ি কিছু খেয়ে বাসে উঠে দেখে আর্শিকা এখনো একই ভঙ্গিতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে কোন কিছুতে গভীর মনোনিবেশ করছে।
এদিকে আর্শিকার পাশেই দু’টো ছেলে আর্শিকাকে বেশ বাজে নজরে দেখছে কিন্তু আর্শিকার যেনো এসব বিষয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই সে যেনো তার ভাবনায় ব্যস্ত।রাদাফ বিষয়টা লক্ষ করতেই আর্শিকার পাশে বসে বেশ কঠিন গলায় ছেলেগুলোকে বলে,
“কি ভাই জীবনে কি মেয়ে দেখেন নাই?নাকি রোজ মা, বোন, বউকে দেখে মন ভরে না?”
ছেলেগুলো রাদাফের কথা বুঝতে পেরে নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে।এদিকে রাদাফের কঠিন গলা আর্শিকাও শুনতে পায়।আর্শিকা পাশে রাদাফকে দেখে বলে,
“কি হয়েছে?আপনি ওভাবে ওদের বললেন কেনো?”
আর্শিকার কথা পাত্তা না দিয়ে রাদাফ একটা অভাবনীয় কাজ করে ফেললো।রাদাফ আর্শিকার কাছে গিয়ে…
#চলবে