তোমার আসক্তিতে আসক্ত পর্ব-০৬

0
331

#তোমার_আসক্তিতে_আসক্ত
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব-০৬

ক্যান্টিনে বসে আছে আর্শিকা, ইতিমধ্যে ৬ কাপ কফি খাওয়া তার শেষ। আর্শিকা ঘিরে বসে আছে পিহু,নয়না আর জয়া।সবাই তার কফি খাওয়াই দেখছে।পিহু আর্শিকাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“আশু বেবি এতো কফি নিজে না খেয়ে আমার সাথে একটু শেয়ার করতে পারিস?”

পিহুর প্রশ্নে আর্শিকা রাগান্বিত চোখে পিহুর দিকে তাকায়। যা দেখে পিহু একটু শুকনো ঢোক গিলে বলে,

“না থাক তুই একাই খা, আমি অন্য কিছু অর্ডার করে নিচ্ছি।”

আর্শিকা পিহু আটকিয়ে ক্যান্টিনে ছোট একটা বাচ্চাকে দিয়ে খাবারের সমস্ত কিছু অর্ডার করে।ইতিমধ্যে খাবার চলে এলে তারা দেখে ২ টো পিজ্জা,৪ টা বার্গার,৪ টা কোকাকোলা,৬ ফ্লেভারের আইস্ক্রিম।এতো খাবার দেখে পিহু,নয়না আর জয়ার চোখ ছানা বড়া।তারা ভাবছে আজ আর্শিকার মাথাই খারাপ হয়ে গেছে।আর্শিকা সবাইকে খাবার শেয়ার করে বার্গার খেতে খেতে বলে,

“আজকের খাবারের সমস্ত বিল পিহু দিবে।”

কথাটা শোনা মাত্রই পিহু গলায় খাবার আটকে গেছে।আর্শিকা পিহুকে স্বাভাবিক করতে পানি দিলে পিহু এক নিশ্বাসে সমস্ত পানি খেয়ে ফেলে।পিহু তেড়ে গিয়ে বলে,

“আমি কেন বিল দিমু?”

“যেমন করে আমি তোর জন্য ফাঁসছি ঠিক তেমনি তুই বিল দিবি।”

“আমি তো জাস্ট স্বপ্ন না সত্যি তা দেখছিলাম।”

“তা দেখার জন্য তোর আমাকে পেতে হলো। এখন এই গ্লাস তোর মাথায় মেরে দেখি আমি স্বপ্ন দেখছি নাকি সত্যি?”

হাতের গ্লাসটা উঁচু করে পিহুকে রাগ দেখিয়ে কথাগুলো বলে আর্শিকা। আর্শিকাকে এভাবে রেগে যেতে দেখে নয়না আর জয়া আর্শিকাকে থামায়। জয়া আর্শিকার সাথে তাল মিলিয়ে বলে,

“হে হে সব বিল পিহুই দিবে।”

পিহু উপয়ান্তর না পেয়ে রাজি হয়ে যায়।সবার খেতে খেতে নয়না কি মনে করে পিহুকে তড়িঘড়ি করে প্রশ্ন করে,

“পিহু তুই আবার ওই নিউ স্যারটার উপর ক্রাস খাস নি তো?”

বিনিময়ে পিহু লাজুক হাসি দেয় যার অর্থ সবারই বোঝা হয়ে গেছে যে পিহু ১২২ নাম্বার ক্রাস পেরিয়ে ১২৩ নম্বর ক্রাসটা খেয়ে ফেলেছে।জয়া মাথায় হাত দিয়ে বলে,

“এ নাকি আবার সন্ন্যাসিনী হবে।ক্ষণে ক্ষণে যে ক্রাস খায় সে নাকি আবার সন্ন্যাসিনী।”

পিহুর এরুপ দেখে আর্শিকা রেগে বলে,”তুই আর মানুষ পেলি না ওই খারুশটার উপরই তোর ক্রাস খেতে হবে?”

“আরে দেখ না স্যারটা দেখতে সেই হ্যান্ডসাম। আমার কি দোষ? আমি তো দেখেই ক্রাস খেয়ে গেছি নেহাৎ তখন তোরা ঝগড়া করছিলি তাই আর বলতে পারি নি।”

“তোকে তো আজ আমি খুনই করবো।”

“শুধু তুই না আজকে আমরাও খুন করবো।ওর ক্রাস রোগ আজ বের করছি।”

কথাটা বলেই জয়া, নয়না আর আর্শিকা পিহুর উপর হামলে পড়বে এমন সময়ই একটা ছেলে এসে বলে,

“আপনাদের মধ্যে আর্শিকা কে?”

আর্শিকা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে,”আমি কেনো?”

“আপনাকে নিউ প্রফেসর ডাকছে।”

বলেই ছেলেটা চলে গেলো।এদিকে তিনজন ভাবতে লাগলো হটাৎ রাদাফ স্যার কেনো আর্শিকাকে ডাকছে।পিহু আর্শিকাকে ধরে বলে,

“দেখ কত্ত কিউট? আমার বিপদ দেখে ও তোকে ডেকেছে যাতে তুই আমাকে মারতে না পারিস।”

আর্শিকা রাগান্বিত চোখে তাকালে পিহু চুপ হয়ে যায়।জয়া আর্শিকাকে বলে,

“না আশু তোর উনার কাছে যাওয়া লাগবে না।পরে কি না কি বলে?চল বাড়ি ফিরে যাই যা হবে কাল দেখা যাবে।”

জয়ার সাথে নয়নাও বলে,”হে রে চল বাড়ি যাই।যদি বলে কাল দেখা করো নি কেনো তখন বলবো বাসায় চলে গেছিলাম।এখন চল।”

“না রে,এভাবে ডেকে চলে যাওয়াটা মানে তাকে অসম্মান করা আর আমি বিনা কারণে কাউকে অসম্মান করতে পারবো না।আমি গিয়ে দেখি ওই চুলকাটা হনুমানটা আবার আমাকে কি বলে?”

আর্শিকা রাদাফের রুমে ঢুকে দেখে রাদাফ একটা চেয়ারে বসে কিছু ফাইল দেখছে।মে’বি এখানে স্টুডেন্টদের বায়ো ডাটা আছে।আর্শিকা দরজায় নক করতে নিলেই রাদাফ কামিন বলে আর্শিকাকে ভিতরে আসতে বলে।তারপর তার সামনের সিটটায় বসতে বলে।রাদাফ ভণিতা ছাড়াই প্রশ্ন করে,

“তোমার পুরো নাম কি?”

আর্শিকা একটু অবাক হয়ে বলে,”মেহেরজান মেহের আর্শিকা।”

নামটা শোনা মাত্রই রাদাফ আর্শিকার দিকে অবাক চোখে তাকায়।এই একই নাম সে আগেও শুনেছে।রাদাফ তার বিস্ময়ভাবটা গোপন রেখে বলে,

“ভার্সিটির বায়ো ডাটায় তোমার পুরো নাম নেই কেনো?”

“দিই নি তাই।”

“সেটা তো আমিও বুঝলাম কিন্তু দেও নি কেনো?”

“সেটা আমার ইচ্ছা স্যার।”

“ভার্সিটি নিশ্চয়ই তোমার মর্জি মতো চলবে না।”

“দেখুন স্যার প্রিন্সিপাল স্যারই এই নাম দিয়েছে।আর এই নামে যে কোনো প্রবলেম হচ্ছে তা তো নয়?এক নামে চিনলেই হলো সবাই আমাকে আর্শিকা নামে চিনে মেহেরজান নামে কেউ চিনে না আর আমি চিনার প্রয়োজনও বোধ করছি না।আর আমার সম্পর্কে কিছু জানার হলে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছ থেকে জেনে নিবেন।”

রাদাফ আর কিছু বলল না।কিচ্ছুক্ষণ পরে রাদাফ বলে উঠে,

“আচ্ছা তুমিই তো সেই মেয়ে যে ৬/৭ মাস আগে আমার সাথে রাত কাটিয়েছিলে?”

কথাটা শোনা মাত্রই আর্শিকার রাগ উঠে গেলো।আর্শিকা গর্জে উঠে বলে,”রাত কাটিয়েছি মানে?পরিস্থিতির চাপে একসাথে রাতে থেকেছি।রাতে থেকেছি বললেও ভুল হবে মাত্র ২/৩ ঘন্টা ছিলাম তাতে আপনি আমাকে রাত কাটানোর সঙ্গী বানাচ্ছেন কিভাবে?”

“তুমি যেটা মনে করছো আমি কিন্তু ওভাবে কিছুইই বলি নি।অযথাই তুমি উত্তেজিত হচ্ছো।”

আর্শিকা নিজের রাগ সংবরণের চেষ্টা করে।আর্শিকা নিজেও জানে রাদাফ কোনো খারাপ উদ্দেশ্য তাকে এই কথাটি বলে নি।রাদাফ আর্শিকার উদ্দেশ্য বলে,

“রাগ তো আমার করা উচিত।যেই মানুষটার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে ঝড় পেরিয়ে তাকে মাথা রাখার ঠাই করে দিলাম,বুড়িমাকে মিথ্যা বললাম,তার সেবা করলাম। কিন্তু সেই সাধারণ একটা চিরকুটে লিখ চলে গেলো আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ধরণটাও তুচ্ছের মতো।আমার ইগো কে সে হার্ট করলো কি রাগটা কি আমার করা উচিত নয় মিস মেহেরজান মেহের আর্শিকা?”

আর্শিকা নিশ্চুপ রয়েছে।এ মুহুর্তে রাগের শেষ সীমানায় কাকে ঠিক কি বলবে এই জন্য সে কিছু বলছে না।রাদাফ তার চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ভাবলেশহীন ভাবে বলে,

“ওয়েল,তোমার জন্য আমি বুড়ি’মাকে মিথ্যা বলেছি।এখন এর শাস্তি তোমার কি হবে বলো?”

“ও তাই, আমার তো খুব বড় ভুল হয়ে গেছে।চলুন চলুন আমরা এখুনি বুড়ি’মার কাছে গিয়ে বলব বুড়ি’মা আমরা কিন্তু স্বামী-স্ত্রী শুধু স্বামী-স্ত্রী না আমাদের একটা বেবিও হবে।কিছুদিন পর আমাদের বেবি বড় হলে তার বিয়ে দিবো। আপনি কিন্তু আসবেন।চলুন দাওয়াত দিয়ে আসি।”

আর্শিকা রাগী মাথায় কি থেকে কি বলেছে তা নিজেরও জানা নেই।এদিকে আর্শিকার কথা শুনে রাদাফ থ মেরে গেছে।তারপর আর্শিকার দিকে এগিয়ে গিয়ে মুচকি হেসে বলে,

“বাহ মিস আর্শিকা আপনি তো ভেরি ফার্স্ট।আমি তো বিয়ে পর্যন্ত ভাবতে পারেন না আর আপনি বাচ্চা।সেই রোমান্টিকও দেখছি তাহলে তো মনে হচ্ছে আপনার হাজবেন্টকে কোনো কষ্টই করতে হবে না।”

রাদাফের কথায় আর্শিকা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।সত্যিই তো রাগের মাথায় সে এটা কি বলে ফেলল?আর্শিকা পুনরায় রাগ উঠিয়ে কথা বলতে যাওয়ার আগেই ওর মাথা ঘুরাতে শুরু করে।মাথা ঘুরানোর মাত্রা প্রকোপ হতেই ওর বমি পায়।দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। এদিকে আর্শিকার হটাৎ এরুপ মাথা ঘুরানোর কারণ রাদাফের অজানা।আর্শিকা ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে এলেই রাদাফ মজার ছলে বলে,

“এই আমি কিন্তু তোমাকে ছুইঁও নি।তাই আমি কিন্তু এসব জানি না।”

রাদাফের কথাটা বুঝতে আর্শিকার পাক্কা দু’মিনিট লাগে।রাদাফের কথায় আর্শিকা অবাক হয়ে বলে,

“এই কি যা তা বলছেন আপনি?আপনি যা মনে করছেন ওমন কিছুই না নেহাৎ….”

আর কিছু বলতে পারলো না আবারও ওয়াসরুমে দৌড় দিলো বমি করার জন্য। আর্শিকা বেরিয়ে আসতে দূর্বল শরীর আর চলছে না। শরীরের ভার ছাড়তেই রাদাফ গিয়ে আর্শিকাকে ধরে সামনের চেয়ারে বসিয়ে দেয়।ফ্যানের ভলিউম বাড়িয়ে দিয়ে পানি এগিয়ে দেয়।চিন্তিত গলায় রাদাফ বলে,

“আর্শিকা আর ইউ ওকে?”

আর্শিকা কিছু বলতে পারলো না। দুহাত দিয়ে মুখে ঢেকে শুয়ে আছে।রাদাফ আর্শিকার এমন অবস্থা দেখে ওর এক ফ্রেন্ডকে ডাক দেয়।কিছুক্ষণের মধ্যেই জয়া হাজির।জরা আর্শিকা এই অবস্থা দেখে রাদাফকে প্রশ্ন করে,

“স্যার ওর কি হয়েছে?”

“সেটা তো তোমরা বলবে?ওর সাথে তো তোমরা থাকো আমি না?ওর এখানে আসতেই বমি হয়েছে।”

“কিইই এই জন্য বলেছিলাম খালি পেটে কফি না খেতে?

” কি? কফি?”

“জ্বি স্যার খালি পেটে ৭/৮ কাপ কফি খেয়ে ফেলেছে।”

“হোয়াট আর সি ক্রেজি অফ হার মাইন্ড?এতো কাপ কফি বাট হোয়াই?”

“স্যার ওর একটা অভ্যাস আছে রাগ উঠলে বেশি কফি খায়।তাই আরকি..”

“তা তোমরা ওকে আটকাতে পারলে না?জানো না খালি পেটে কফি খাওয়া শরীরের জন্য কত ক্ষতিকর?ভালো হয়েছে বমি করে সব ফেলে দিয়েছে।তুমি ওকে আস্তে আস্তে নিয়ে যাও।”

“জ্বি স্যার।”

জয়া আর্শিকা হালকা ধরে রুম থেকে চলে যায়।রুম থেকে চলে যাওয়ার সাথে সাথে রাদাফ চেয়ার টেনে পুনরায় ফাইলদেখা শুরু করলেই সামনেই একটা লকেট দেখতে পায়।লকেটটা খুব দামী আর আকর্ষনীয়ও বটে।দেখে মনে হচ্ছে হোয়াইট গোল্ডের লকেট। রাদাফ লকেট নিয়ে ভালো করে দেখতেই চমকে উঠে।পুরোনো সব কথা ভেসে উঠে। রাদাফের মুখে রহস্য হাসি ফুটে উঠছে। রাদাফ লকেটটা হাতে নিয়ে ডেভিল হাসি দিয়ে বলে,

“ইউর ফিয়ার হ্যাস কাম নাও,মাই ক্রেজি কুইন।”

#চলবে