তোমার নামে হৃদয় পর্ব-১+২

0
467

#তোমার_নামে_হৃদয়
#প্রারম্ভ_পর্ব
#ফাহমিদা_মুশাররাত

বাস্তব জীবনে প্রতিটি বিয়ে বাড়ির শুরুটা হয় ছোটদের হৈ হুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে। অথচ এ মুহূর্তে যে বিয়ে বাড়িটায় আমি অবস্থান করছি তার চেহারা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মী। এখানে নেই কোনো হৈ হুল্লোড়, যা আছে তা কেবল কিছু সংখ্যক মানুষের চোখে মুখে লজ্জা এবং হতাশার লেশ। কিছুক্ষণ আগেও সব ঠিকঠাক চলছিলো বিপত্তি বাঁধলো যখন লোকমুখে শোনা গেলো, পার্লারে যাওয়ার নাম করে বিয়ের কনে পালিয়েছে। কনের বাবা শুনে সাথে সাথে মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়লেন। মেয়ের জন্য এমন লজ্জায় তাকে পড়তে হবে সেটা হয়তো তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। এতোদিনে অল্প অল্প করে জমিয়ে রাখা মান সম্মান সব যেন এক মুহূর্তে ধূলিসাৎ হয়ে গেলো। প্রতিবেশীদের মুখেও ইতিমধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। বর পক্ষ থেকে আসা সকলেই এসে পাত্রের বাবাকে বলা শুরু করে দিয়েছেন, ” কি মেয়ে দেখে যে ছেলেকে বিয়ে করাতে এসেছেন কে জানে? শেষে মেয়ে কিনা নিজের বাবা মায়ের কথা চিন্তা না করেই অন্য ছেলের হাত ধরে ভেগেছে। ছিঃ! আপনার ছেলের ভাগ্য ভালো যে বিয়ের আগেই ভেগেছে, নাহলে যে কি হতো! ঢের বাঁচা বেঁচে গেছে আপনার ছেলেটা ভাই সাহেব। ”

সাদিব রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে স্টেজের এক পাশে বসে পড়ে। জীবনে কখনো তাকে কারো কাছে এতোটা হেও হতে হয়নি। অথচ এ মেয়ে কিনা ওর সাথে ভালোবাসা নামক ছলনার জালে ফাঁসিয়ে এভাবে ঠকিয়েছে? ব্যাপারটা সে কোনোভাবেই হজম করতে পারছে না। শুধু যে তার অপমান হয়েছে তা কিন্তু নয়, তার পাশাপাশি বাবা মা, আত্মীয় স্বজন সবাইকে অপমান করা হয়েছে। প্রিয়ন্তী সাদিবের বিশ্বাসের অমর্যাদা করেছে। এটা সে কিভাবে করতে পারলো বুঝে আসে না সাদিবের। মুখে তো বেশ ভালোবাসি ভালোবাসি বলে ফেনা তুলে ফেলেছিল। শেষে বিয়ের নাম করে বাড়ি শুদ্ধ আত্মীয় স্বজনদের সামনে বর যাত্রী সাজিয়ে এনে এতো বড় ধোকা দিলো তাকে? সাদিব কিছুতেই নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না। মনে হচ্ছে সবটা স্বপ্ন, যেন একটা দুঃস্বপ্ন। হয়তো চোখ মেলে তাকালে সব আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে।
.

.
আশফাক শিকদারের মাথা নিচু হয়ে গেছে সবার সামনে। সাদিবকে এতো করে নিষেধ করা সত্ত্বেও সে তার সিন্ধান্তে অনড় ছিলো। প্রিয়ন্তী ব্যতিত সে কাউকে নিজের অর্ধাঙ্গীনি রূপে স্বীকার করতে নারাজ। এ নিয়ে অন্যসব বাপ ছেলের মতো তাদের বাবা ছেলের মাঝেও কম মন মালিন্য হয়নি। শেষে সাদিবের মায়ের কথায় এক প্রকার জোরপূর্বক রাজি হলেন আশফাক শিকদার। শত হলেও তিনি বাবা। ওপরের দিকটা যতটা কঠিন ভেতরের দিকটা ঠিক ততটাই নরম। তাই তো ছেলের সুখের কথা ভেবে অতঃপর রাজি হলেন। তবে সময়ের সৎ ব্যবহার তিনিও কম জানেন না। তাইতো বিয়ের আসর থেকে কনে পালানোর মতো কেলেঙ্কারি ঘটনায় তিনি মন থেকে বেজায় খুশি হলেন। এখন ভালোয় ভালোয় নিজের মনের চাওয়াখানি পূরণ হলেই হলো।
.
.
” বন্ধু তোকে যে কিভাবে কথাটা বলি? ” কথা খানি আমতা আমতা করে বললেন আশফাক শিকদার।

তালিব আবসার বন্ধুকে অভয় দেখিয়ে বললেন, ” যা বলার নির্দ্বিধায় বলে ফেল। ”

আশফাক শিকদার মনের ভেতরে পুষে রাখা কথাগুলো কোনো ভণিতা ছাড়াই সরাসরি ব্যক্ত করতে চাইলেন।

” তালিব তোর নিশ্চয়ই মনে আছে ছাত্র জীবনে একবার দুষ্টমির ছলে আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের বিয়ে ঠিক করেছিলাম? তুই আমাকে বলেছিলি আমার ছেলের সাথে তোর মেয়ের বিয়ে দিবি নয়তো তোর ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিবি? ”

” হ্যাঁ বলেছিলাম তো! ”

” তাহলে এখন বল তোর মেয়েটা আমাকে দিবি, মানে আমার ছেলে সাদিবের জন্য? কথা দিচ্ছি তোর মেয়েটাকে আমি আমার নিজের মেয়ে করে রাখবো। ”

আশফাক শিকদারের কথায় তালিব আবসারের মুখখানি ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সাদিবকে ব্যক্তিগতভাবে উনি নিজেও পছন্দ করেন। তা সত্ত্বেও এমন এক কেলেঙ্কারির পর তিনি নিজের মেয়েকে তুলে দিতে বেশ সংকোচ বোধ করলেন। বললেন, ” তোর সাদিবকে আমারও অনেক পছন্দ। কিন্তু……..

” তাহলে কিন্তু কিসের? দেখ ভাই আমার ছেলেটা তো দেখতে শুনতে সব দিক দিয়েই অনেক ভালো, তাইনা? তাছাড়া ও তো তোর চোখের সামনেই বড় হয়েছে। ”

তালিব আবসার তার বন্ধু আশফাক শিকদারের কথাগুলো কিয়ৎক্ষণ সময় নিয়ে ভাবলেন। বললেন,” আমি সাদিবকে ছোট থেকে দেখে আসছি এটা যেমন ঠিক তেমনি আমার মেয়ের সুখের কথাটাও তো আমাকে ভাবতে হবে তাই না? দেখ ভাই তোর হয়তো আমার কথায় খারাপ লাগছে তবুও তুই একবার ভেবে দেখ না, যে আমি তোর কথায় রাজি হয়ে সাদিবের হাতে মেয়েকে তুলে দিলাম কিন্তু তোর সাদিব কি মেনে নেবে তাকে? তারপর তোর কথা রাখতে গিয়ে যদি আমার মেয়েটা সুখী না হয়? তখন এ দায়ভার কে নেবে? তাছাড়া আমার মেয়েরও তো একটা মতামত আছে। সে কি মানবে সাদিবকে?

আশফাক শিকদার বন্ধুকে অভয় দেখিয়ে বললেন,
” এটা নিয়ে তুই একদম ভাবিস না। তোর মেয়ে মানে আমার মেয়ে। আমি তোকে কথা দিচ্ছি ওর কোনো অসুবিধে আমি হতে দেবো না। দরকার পড়লে আমি ওর সাথে কথা বলবো। আমার বিশ্বাস ও আমার কথা ফেলবে না। তোকে কথা দিচ্ছি তামান্নাকে আমার বাড়িতে আমার পুত্রবধূ রূপে নয় বরং নিজের মেয়ে রূপে নেবো। ”

” আর সাদিব? তাকে কে রাজি করাবে? ” তালিব আবসার বললেন।

” সে ব্যাপারটাও তুই আমার ওপর ছেড়ে দে! ”
.

.
ভরা মজলিসের সামনে থেকে বাবা তনিমাকে দিয়ে আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গেলেন। কেন এতো জরুরি তলব সেটা পুরোটাই আমার অজানা। তনিমার মুখখানা দেখে বুঝলাম তার মনটা হয়তো কোনো কারণে খারাপ হয়ে আছে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে, মন খারাপ করে থাকার কারণ কি? মেয়েটা অদ্ভুত চাহনিতে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সামান্য ফুপিয়ে উঠলো। বলল, ” আপুরে তোরে ছাড়া আমরা একদম থাকতে পারবো না রে। প্লিজ তুই কোথাও যাস না।”

আচমকা তনিমার এমন আচরণে আমার ভীমড়ি খাওয়ার জোগাড় হলো। তনিমার কথা শুনে হেসে দিলাম। মাথায় হালকা চাপড় মেরে বললাম, ” আরে না, কি বলিস পাগল? কই যাবো আমি? এতো সুখ নাই তোর কপালে, কোথাও যাচ্ছি টাচ্ছি না। কেন আমি চলে গেলে বলেছিলি না আমার সব দখল করবি? এতো সহজে তো তোকে সবকিছু দখল করতে দিচ্ছি না! ”

তনিমার সাথে কথা বলতে বলতে বাবা মায়ের কাছে চলে এসেছি। মাকে দেখলাম তনিমার মতো মুখ কালো করে অন্যপাশ ফিরে বসে আছে। বোধহয় বাবার সাথে কিছু নিয়ে আলাপ করছিলো। আমাকে দেখতে পেয়ে চুপ হয়ে গেছে। বাবার কাছে যেতে বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ” মা তোমার অনুমতি না নিয়েই আমি তোমার আংকেলকে একটা কথা দিয়ে ফেলেছি। ”

আমি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বাবার থেকে জানতে চাইলাম, ” কি কথা দিয়ে ফেলেছো বাবা…………

To_be_continued….!

[ ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

#তোমার_নামে_হৃদয়
#পর্বসংখ্যা_০২
#ফাহমিদা_মুশাররাত
.
বাংলাদেশের ইতিহাসে বোধহয় এটাই প্রথম বিয়ের ঘটনা! যেখানে কিনা বিয়ে করতে কণে স্বয়ং তার পরিবার সমেত শ্বশুরবাড়ি এসেছে। বাবার আর আশফাক আঙ্কেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়েটা করতেই হলো আমাকে। শুরুতে ভেবেছি সাদিব হয়তো বেঁকে বসবে। কিন্তু না সে চুপচাপ বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেল। তবে শর্তস্বরূপ বললো কোনো আয়োজন ছাড়াই সে একদম ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা সম্পন্ন করতে চায়। তার কথা অনুযায়ী তাই করা হল। বিয়েটা একদম সাদামাটাভাবে হয়েছে। সব মিলিয়ে রাত দশটা নাগাদ বাবা মাও এ বাড়িতে উপস্থিত ছিল। অবশেষে আমাকে একা রেখে তারা বিদায় নিল। যাওয়ায় আগ পর্যন্ত পুরোটা সময় তনিমা পাশেই বসে ছিল। তকির সাথে কেবল যাওয়ার সময়ই দেখা হয়েছে। দু’জনকে খুব মিস করছি। ভাইবোনের সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও সারাজীবন তাদের সাথে সাপে নেউলে লেগে গেছি। অথচ আজ বাবা মায়ের সাথে তাদের জন্যেও কষ্ট হচ্ছে। এ মুহুর্তে কান্নার সাথে সাথে ভীষণ বিরক্ত লাগছে। তাইতো কান্না থামিয়ে মুখ বেজার করে বসে আছি বিছানার এক কোণায়। মনে হাজারো চিন্তার উঁকিঝুঁকি! এইতো কয়েকঘন্টা আগেও তো সব ঠিকঠাক ছিল। হঠাৎ করে জীবনে যে এতো বড় পরিবর্তন ঘটবে কে জানতো?

সাদিবকে আমার শুরু থেকেই ভালো লাগতো। সেদিক থেকে এক কথায় বলতে গেলে সে আমার ক্রাশ। কিন্তু ক্রাশ তো ক্রাশই। ক্রাশরা সব সময় দূর থেকেই সুন্দর হয়। তাই প্রথম দেখায় তাকে ভালো লাগলেও পরক্ষণে এক বিশেষ কারণে উনার প্রতি কোনো আগ্রহ জন্মেনি। যদি এ বিয়েটা বাকি সব সাধারণ বিয়ের মতো হতো তাহলে হয়তো এতোটা খারাপ কখনোই লাগতো না। যা ঘটেছে তা আমার মোটেই কাম্য ছিলো না।

আমার ভাবনার ছেদ ঘটলো সাদিবের আগমনে। সাদিব এসেছে বুঝতে পেরেও চুপচাপ বসে রইলাম। সে আমার অভিব্যক্তি বুঝলো কিনা ঠিক ঠাওর করতে পারলাম না। তবে তার কণ্ঠস্বর আমার কর্ণকুহরে পৌঁছাতে কিয়ৎক্ষণ সময় লাগল। ” আ’ম স্যরি, আসলে কি থেকে কি হয়ে গেল…..

সাদিবের সহজসরল কথা আমাকে অবাক হতে বাধ্য করল। তার কথা শুনে মনে হলো যেন সে নিজেই চেয়েছিলো প্রিয়ন্তী পালিয়ে যাক আর তামান্না তার হয়ে যাক! আশ্চর্য!

এক পলক পেছন ফিরে তাকালাম সাদিবের দিকে। সে আগে থেকেই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে আমার পানে! আপনাআপনি আমার ভ্রুর জোড়া কুঁচকে গেল। ভাবলাম বিয়ের আসর থেকে বউ পালিয়ে গেছে বেটার, অথচ দেখো কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে সব ভুলে নাচতে নাচতে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে দিব্যি বাসর করতে চলে এসেছে। হায়রে বেডা মানুষ রে! অন্য সময় হলে ফেসবুক ট্রেন্ড ফলো করে বেডা মানুষ বলে হেসে উড়িয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা করার মতো মন মানসিকতা বা পরিস্থিতি কোনোটাই অবশিষ্ট নেই।

আমাকে অবাকের শিকড় থেকে বের করতে সাদিব নিজে থেকেই বলল, ” কি ভাবছো এতো?”

” ভাবছি আপনি এতোটা স্বাভাবিক কি করে আছেন? আপনার না বউ পালিয়েছে? ” কথাটা বলার সময় ভেবেচিন্তে বলা উচিত ছিল। এটাই হয়তো আমার জন্য মঙ্গল ছিলো। কারণ আমার থেকে এরূপ কথা শুনে সাদিব তাৎক্ষণিক রেগে গেল।

সাদিব নিজের রাগ সংযত করে বিরক্তির সাথে জবাব দিল, ” অনেক রাত হয়েছে এতো আজেবাজে চিন্তা না করে ঘুমিয়ে পড়ো আর আমাকেও দয়া করে ঘুমোতে দেও! ”
.

.
বালিশে মুখ গুঁজে কান্না করছেন মিসেস সামিরা শিকদার। পাশে বসে আশফাক শিকদার সবটা পরখ করছেন। এমনিতেই সারাটাদিন ছুটোছুটি করতে করতে তিনি হাঁপিয়ে গেছেন। কোথায় ক্লান্ত শরীরটা বিছানা এলিয়ে দিয়ে একটু শান্তির ঘুম দেবেন তা না এসে দেখছে তার অর্ধাঙ্গীনি সমানে চোখের পানিতে বালিশ ভাসাচ্ছে। বিরক্ত চেপে আশফাক শিকদার বললেন, ” কি হয়েছেটা কি? সেই তখন থেকে দেখছি কেঁদেই যাচ্ছো কেঁদেই যাচ্ছো। বলি কারণটা না বললে আমি বুঝবো কি করে? ”

সামিরা শিকদার বালিশ থেকে মাথা তুলে বললেন, ” তুমি কখনো বুঝতে চেয়েছো আমাকে? যে আজ বুঝবে? ”

” কি মুশকিলের কথা। আমি কি মন পড়তে পারদর্শী তুমি বলো তো? তুমি যদি মুখ ফুটে না-ই বললে তাহলে আমি কেন পৃথিবীর কারোর সাধ্য নেই বুঝার। ”

” বুঝবে কি করতে? তোমাকে বিয়ে করে আমার জীবনটা একদম বরবাদ হয়ে গেছে। থাকবো না আমি এ বাড়িতে চলে যাবো কাল সকালেই৷ ”

আশফাক শিকদার স্থির হয়ে বসে রইলেন কোনো প্রতিক্রিয়া জানালেন না। সামিরা শিকদারের এমন সব হুমকি নতুন কিছু নয় বরং নিত্যদিনকার। যখনই তিনি রেগে যান তখন এসব কথা জপে বেড়ান।

স্বামীর স্বাভাবিক থাকাটা মেনে নিতে পারলেন না সামিরা। তাই রয়ে সয়ে বললেন, ” আমার ছেলেটার কি থেকে কি হয়ে গেলো সাদিবের বাবা। ”

আশফাক শিকদারের কাছে পুরো বিষয়টি এতোক্ষণ পরিষ্কার হল। লম্বা করে শ্বাস ছেড়ে বললেন,” আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন বুঝলে সামিরা। ”

সামিরা অবাক হলেন। বললেন, ” তো এখানে ভালোর দেখলেটা কি? ”

” আমি শুরু থেকেই তোমার ছেলেকে বলেছিলাম প্রিয়ন্তীকে বিয়ে না করতে। সে শুনলো কই! এখন দেখলে না কি হলো। ভাগ্যিস সে মুহূর্তে তালিবটাও রাজি হয়েছিলো তাইতো এখন শান্তিতে নিশ্বাস নিতে পারছি। ”

” তাই বলে তুমি তামান্নার সাথে বিয়ে করিয়ে দিলে? কেন দুনিয়ায় আর কোনো মেয়ে ছিলো না, নাকি আমার ছেলের জন্য মেয়ের অভাব হতো?”

” শোনো সামিরা জন্ম, মৃত্যু এবং বিয়ে এই তিনটে জিনিস মানুষের হাতে থাকে না। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত বুঝলে? নয়তো আজ সকালেও কি ভাবতে পেরেছিলাম তামান্নাকে নিজের পুত্র বধূ করতে পারবো? ”

স্বামীর কথার যথার্থতা বুঝতে পেরে সামিরা চুপসে গেলেন। বলার মতো কোনো কথাই আর খুঁজে কিছুই খুঁজে পেলেন না।
.

.
রাতে কখন ঘুমিয়েছি ঠিক মনে করতে পারলাম না। চোখ খুলে নিজেকে এক নতুন পরিবেশে আবিষ্কার করলাম। কাল রাতে রাগের মাথায় পুরো রুমটা খেয়াল করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। সাদিব পেশায় একজন ডাক্তার হওয়ায় তার সারাটা রুম জুড়ে বই খাতার ছড়াছড়ি। মনে মনে ভাবলাম আমি তো সারাজীবন পড়া চুরি করে আসলাম আর আমার ভাগ্যে বুঝি জুটলো এক পড়া পাগলার। খেয়াল করলাম সাদিব পাশে বসে বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলো। হয়তো এতোক্ষণে সেও আমার অভিব্যক্তি খেয়াল করেছে৷ মৃদু হেসে বললো, ” শুভ সকাল! ”

জবাবে আমিও মৃদু হাসলাম। দেয়াল ঘড়িতে নজর যেতে দেখতে পেলাম সকাল পৌনে দশটা বাজতে চলল। হাতটা আপনাআপনি কপালে উঠে গেল। হায় আল্লাহ এতো বেলা হয়ে গেছে অথচ আমি এখনো পড়ে পড়ে ঘুমচ্ছি। আমি মানি বা না মানি বর্তমানে তো আমি এ বাড়ির বউ। নতুন বউ এতো সময় ধরে ঘুমোচ্ছে, না জানি রুমের বাহিরে লোকজন উল্টাপাল্টা কিসব মনে করছে। তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হতে যাওয়ার পরে মনে পড়লো এ বাসায় তো আমার কাপড়চোপড় কিছুই আনা হয়নি। তাহলে এখন ফ্রেশ হয়ে পরবোটা কি! আমার ভাবনার ছেদ ঘটলো সাদিবের ডাকে। রুমের ভেতর থেকে সাদিব ডেকে বললেন, ” আলমারিতে শাড়ি রাখা আছে যেটা পড়তে মন চায় পছন্দ মত দেখে নিয়ে যাও। ”

চলবে……..?

[ ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন! ]