তোমার নামে হৃদয় পর্ব-৩+৪

0
328

#তোমার_নামে_হৃদয়
#পর্বসংখ্যা (০৩)
#ফাহমিদা_মুশাররাত
.
ভাবনার ছেদ ঘটলো সাদিবের ডাকে। রুমের ভেতর থেকে সাদিব ডেকে বললেন, ” আলমারিতে শাড়ি রাখা আছে যেটা পড়তে মন চায় দেখে নিয়ে যাও। ”

ঠেকায় পড়েছি তাই কি আর করার! সাদিবের কথা মতো বেরিয়ে এসে আলমারির সামনে দাঁড়ালাম শাড়ি নেওয়ার উদ্দেশ্যে। আলমারি খুলতে আমার চোখ দু’টো কোটর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। এতোগুলো শাড়ি তাও একজন পুরুষ মানুষের রুমে! পরক্ষণে ভাবলাম উনি হয়তো ভালোবেসে প্রিয়ন্তির জন্যই এতো শাড়ি কিনেছিলেন। অর্থ্যাৎ আমি এখন প্রিয়ন্তির জন্য সেই কেনা শাড়ি পড়তে চলেছি। নিজেকে নিজের কাছে ভীষণ তুচ্ছ মনে হলো৷ ছোট থেকে মা যে জিনিসটা কিনতেন সেগুলো সব সময় তনিমা এবং আমার জন্য আলাদা করে কিনে দিতেন। অন্যদের ক্ষেত্রে দু’বোনকে দু’বোনের জিনিস ভাগাভাগি করতে দেখলেও আমার সাথে কখনো তার ভাগাভাগি চলতো না। দেখা গেলো যে জামাটা দু’জনই পছন্দ করেছি সে জামাটা মা একই সাইজের দু’টো করে কিনতেন। এমনিভাবে কোনো জিনিসের ভাগ তাকে আমার দিতে হয়নি। তাছাড়া তনিমা নিজেও কখনো আমার জিনিসে আগ্রহ দেখায়নি। মোট কথায় পারতে কখনো কারোর জিনিস ব্যবহার করতে হয়নি আমাকে। কতটা খারাপ সময়ের পরিস্থিতির শিকার হয়েছি বুঝতে পেরে কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে। নিজের বাসা হলে হয়তো এই কষ্টে মাটিতে এক দফায় গড়াগড়ি খেতাম।
.

.
রুম থেকে বাহিরে বেরিয়ে আসতে আরেক অস্বস্তির স্বীকার হলাম। বাসায় মেহমানরা সব এমনভাবে তাকিয়ে দেখছে যেনো কোনো ভিনগ্রহ হতে আগত এলিয়েন তাদের সামনে দিয়ে হেঁটে গেছে। সাদিবের ছোটবোন সাদিয়া আমাকে দেখা মাত্র দৌড়ে এসে “ভাবিজি!” বলে জড়িয়ে ধরলো। না চাইতেও আমাকে সাদিয়ার ডাকে মৃদু হেসে সম্মতি জানাতে হলো।

সাদিয়ার পরপর সাদিয়ার কাজিন এবং ভাবিরা এসে আমাকে ঘিরে ধরলেন৷ সবার কৌতুহল আমাকে নিয়ে। পাশাপাশি আমাকে এবং সাদিবকে ঘিরে অবান্তর কতগুলো কৌতুক চললো।

একজন তো কৌতুকের স্বরে বলে বসলেন, ” কি নতুন বউয়ের ঘুম হয়েছে তো ঠিকঠাক হ্যাঁ! ”
চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে সবার কথাগুলো শুনছিলাম। সবার কথার মাঝে সামিরা আণ্টির ডাক পড়লো। তিনি রান্নাঘর থেকে হাঁক ছেড়ে সাদিয়াকে ডাকলেন। এতোক্ষণে আমার উনার কথা মনে হলো। কাল রাতে উনাকে এক পলকের জন্যেও দেখিনি। এতোকিছু ঘটে গেলো অথচ আন্টি একদম চুপচাপ আড়ালে সরে রইলেন ঠিক কি কারণে তা মোটেও বোধগম্য হলো না।

সাদিয়া রান্নাঘর থেকে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” আমার মিষ্টি ভাবিরা সবাই এবার আমার নতুন ভাবিটাকে কিছুক্ষণের জন্য একটু ছেড়ে দিন তো দেখি! তার তো এখনো ব্রেকফাস্ট করাই হয়নি? ”

তাদের হাস্য রসাত্মক আসর থেকে ছাড়া পেতেই সব ঝেড়ে জুড়ে আগে গেলাম সামিরা আন্টির কাছে। আন্টি সেসময় রান্নার কাজ করছিলেন। উনার পাশাপাশি আরো কয়েকজনকে রান্নাঘরে দেখতে পেলাম। আন্টি আমাকে লক্ষ্য করে মুচকি হাসলেন। তার এ হাসিটা যে জোরপূর্বক ছিলো সেটা বুঝতে আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট হয়নি। তবুও পুরাতন সম্পর্ক এবং নতুন সম্পর্কের রেশ ধরে আন্টিকে কদমবুসি করলাম। তিনি হয়তো আমার কাছ থেকে এমনটা আসা করেননি৷ বললেন, ” আরে কি করছো? পায়ে কেন হাত দিচ্ছো? ”

” আপনাকে কাল দেখিনি। আপনি কি কোনো কারণে আমার উপর রেগে আছেন? ”

আন্টি সাথে সাথে কোনো প্রতিত্তোর জানালেন না। শুধু একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বললেন, ” না রেগে থাকবো কেন? তুমি কোনো দোষ করেছো কি? ”

কথার ধরণ শুনে বুঝতে পারলাম আন্টিও মামনির মতো এ বিয়েটা মেনে নিতে পারেননি৷ শুধুমাত্র আঙ্কেলের পীড়াপীড়িতে মা ছেলে দুজনে মত দিয়েছে। বলার মতো আর কোনো কথাই খুঁজে পেলাম না। সেকেন্ড দুয়েক সময় ভেবে বললাম, ” আন্টি আমি আপনাকে হেল্প করি? ”

আন্টি এবার গম্ভীর গলায় বললেন, ” তার দরকার পড়বে না। তার চাইতে তুমি বরং সাদিবের ভাবিদের সময় দেও তারপর রেস্ট গিয়ে নেও। এদিকটা সামলানোর জন্য লোকের অভাব নেই। ”
.

.
ভর দুপুরের দিকে সাদিয়ার রুমে বসে আছি। বাসায় চেনাজানা বলতে তেমন কেউই নেই যে কারোর সাথে বসে সময় কাটাবো একমাত্র সাদিয়া ছাড়া। সাদিয়া তনিমার সমবয়সী। একই ক্লাসে পড়ে দু’জন। সে সুবাদে সাদিয়ার আর তনিমার মধ্যে বন্ধুত্বটাও বেশ ভালো। সাদিয়ার সাথে কথা বলার সময় আন্টি এসে সাদিয়াকে জানালেন, ” সাদিয়া তামান্নাকে রেডি করিয়ে দিস তো। বিকেলের দিকে তোর পাশের বাসার আন্টিরা নতুন বউ দেখতে আসবে। ”

সাদিয়া মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
.
.
.
” কি ব্যাপার ভাবি আপনার ছেলের না আমাদের পাশের বাসার প্রিয়ন্তির সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। তা বিয়ের আসরে কণে পরিবর্তিত হয়ে গেলো কীভাবে? ” উপস্থিত সবার মাঝে থেকে একজন বলে উঠলেন।

সামিরা জবাবে কি বলবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারলেন না। তবে তিনি কিছু বলার আগেই পাশ থেকে একজন বললেন, ” ভাবি বোধহয় বিয়েতে ছিলেন না তাই না? ”

” কেন বিয়েতে এমন কি হয়েছিলো যে এক ঝলকে একবারে কণে পরিবর্তন হয়ে গেলো? ” ভদ্র মহিলা অবাকের সাথে বললেন।

” ছিলেন না বলেই তো জানতে পারেননি কণে পরিবর্তনের আসল ঘটনা। ” অতঃপর মহিলা সামিরাকে উদ্দেশ্য করো বললেন, ” ভাবি ভালোই হয়েছে বিয়ের আগেই মেয়ে পালিয়েছে। ছিঃ ছিঃ কেমন মেয়ে দেখেছেন ভাবি? নিজের বাপ মায়ের কথাটাও একবারের জন্য ভাবেনি। বিয়ের আগে দেখেছিলাম তো কেমন গায়েপড়া স্বভাবের মেয়ে। আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম এই মেয়ে ভেতরে ভেতরে কোনো আকাম নিশ্চয়ই করে বেড়ায়। এখন দেখলেন তো আমার কথাই ঠিক৷ ”

প্রথমজন যা বোঝার বুঝে গেলেন। প্রসঙ্গ পরিবর্তন করার উদ্দেশ্যে তিনি আমাকে খুঁটে খুঁটে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। ” নতুন বউ দেখতে তো খারাপ না তবে গায়ের রঙটা ঠিক যাচ্ছে না। যাই বলেন না কেন প্রিয়ন্তির সাথেই সাদিবকে বেশি মানাতো। ”

সামিরা এতোক্ষণে জবাব দিলেন, ” গায়ের রঙে কি যায় আসে। ভালোমন্দ বলেও তো কিছু আছে তাই না ভাবি? ”

” হুম। তারপরেও আমার ভাগ্নিকে দেখিয়েছিলাম তো আপনার সাদিবের জন্য। সে তো এর থেকে আরো ভালো ছিলো। ”

সন্ধ্যার পূর্ব মুহূর্ত ছিলো বিধায় সাদিব সবে মাত্র বাহির থেকে ফিরেছে। দরজার কাছে এসে সবটা না শুনলেও শেষেরটুকু শুনে বেশ বুঝতে পেরেছে তারা প্রিয়ন্তির ব্যাপারেও এতোক্ষণ কথা বলছিলো। ” ওর গায়ের নিয়ে যদি আমার কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে বাহিরের কারোর থাকারো তো কথা না! ” সাদিবের কথা শুনে সবার দৃষ্টি সেদিকে গেলো৷ সাদিবের কণ্ঠে অনাকাঙ্ক্ষিত বাক্যটি শুনে কয়েক মুহূর্তের জন্য আমি থমকে গেলাম।

সামিরার চোখেমুখে বিস্ময় ভর করলো। যে ছেলে নিজের বাবার মুখের ওপর বলেছিলো প্রিয়ন্তিকে ছাড়া অন্য কাউকে মেনে নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব না অথচ আজ সে ছেলে নিজেই বলছে তামান্নার গায়ের রঙে তার কিছু যায় আসে না!

চলবে……..

[ ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন! ♥]

#তোমার_নামে_হৃদয়
#পর্বসংখ্যা (০৪)
#ফাহমিদা_মুশাররাত
.
দেখতে দেখতে অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়েটির তিনটে দিন কেটে গেছে। এক এক করে আত্মীয় স্বজনরা সবাই এ বাসা থেকে চলে যেতে শুরু করলো। বাসাটা এখন ফাঁকা বলাই চলে। বিয়েটা যেহেতু এক প্রকার বাধ্য হয়েই হয়েছে তাই রিসিপশনের জন্য একান্ত নিকট আত্মীয় ব্যতিত কাউকে বলা হলো না। সে সুবাদে আমার বন্ধু মহলের কেউই এ বিষয়ে জানে না। জানবেই বা কেমন করে জানানোর মতো মানসিকতা এ মুহুর্তে আমার মধ্যে অনুপস্থিত। গতকাল রাতে ডিনারের পর আঙ্কেল সাদিবকে ডিসিশন জানিয়ে দিয়েছেন, নিয়ম মাফিক তাই আজ বিকেলের দিকে নিজের বাড়ি ফিরে যাওয়া হবে আমার। ভেবে মনটা খানিকটা ফুরফুরে লাগছে। মনে হচ্ছে কত যুগ ধরে নিজের বাসায় যাই না। ফুরফুরে মেজাজে তৈরি হচ্ছি বের হওয়ার উদ্দেশ্যে।

সামিরা আন্টি সেদিনের পর থেকে দরকার ব্যতিত আমার সাথে খুব একটা কথা বলেন না। আমিও উনাকে তেমন ঘাঁটি না। থাক্ না যে যার মতো থাকতে চায় থাকুক! গত কয়েকদিন ধরে ফোনটা সুইচড অফ করে রেখেছি। কারোর সাথে যোগাযোগ করতে ভালো লাগছে না বিধায়। অনেকটা চাপা অভিমানের বশে বাবা মায়ের সাথে এতোদিন কথা বলার ইচ্ছে হলেও বলিনি। কাল যখন তারা এসেছিলো মামনি তখন জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কেঁদেছেন। অপর দিকে বাবার মধ্যে তেমন হেলদোল প্রকাশ ফেলো না। ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলাম এমন সময় নিচে গাড়ির হর্ণের আওয়াজ কানে ভেসে এলো। বুঝলাম সাদিব চলে এসেছে। যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন যেন আগেভাগে তৈরি হয়ে থাকি, তিনি এসে দিয়ে আসবেন।
.

.
রাস্তায় পুরোটা সময় গাড়িতে দু’জন চুপচাপ বসে কাটালাম। তিনি মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভিং করছেন এবং আমি বাহিরের পরিবেশ দেখতে ব্যস্ত। স্বভাবতই তিনি একটু কম কথা বলেন। যেটা প্রথম দিন থেকেই খেয়াল করেছি। অন্যদিকে আমি হচ্ছি বাচাল স্বভাবের। কথা না বলে থাকতে পারি না। তবে এ মুহুর্তে বাচালগিরি করার মতো দুঃসাহস হলো না। কি জানি আমার বাচাল স্বভাবের জন্য শান্তশিষ্ট একজন মানুষকে আবার রাগতে বাধ্য করে কিনা! শত হলেও আগে নিজের আত্মসম্মান বেশি। কিন্তু মাথা আর মন কি সব সময় এক কথা বলে? মাথা যদি বলে, ‘চুপ করে বসে থাক!’ তো মন বলছে, ‘ কথা বল কতক্ষণ এভাবে চুপ করে বসে থাকবি? নয়তো কথা না বলতে পারার কারণে তোর কথা সব পেটে জমে এক সময় তোর পেট ফেটে যাবে! ‘ দ্বিধা সংশয় ঝেড়ে অবশেষে মনের কথাটাই মেনে নিলাম। নিজেকে আশ্বস্ত করে সাদিবকে উদ্দেশ্য করে বললাম, ” একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? ”

সাদিব ছোট করে ” হুম! ” বলে সম্মতি জানালে বললাম, ” বলছি আপনি তো সব সময় অনেক ব্যস্ত থাকেন। তো কাজ ফেলে আমাদের বাসায় যাচ্ছেন যে কোনো সমস্যা হবে না? ”

” কাজ তো আছে বটে। কিন্তু শত ব্যস্ততার মাঝেও কখনো কখনো নিজের প্রয়োজনে সময় বের করে নিতে হয়। অন্য সব মানুষের মতো আমারো যে একটা পরিবার আছে। তাছাড়া কাল বাবা কি বললো শুনলে না, যেকোনো উপায়ে যেন তোমাকে তোমাদের বাসায় নিয়ে যাই! বাবা আবার তোমার ব্যাপারে আগে থেকেই অনেক বেশ সিরিয়াস। ”

” ওহ্! ” বলে চুপ করে বসে রইলাম। উনার বলা পরিবারের কথাটা মাথায় গেঁথে গেছে আমার। উনি কি তবে পরিবারের মধ্যে আমাকেও ফেললেন!

সাদিব পুনরায় বললো, ” এতো কথা থাকতে হঠাৎ এ প্রশ্ন করলে? ”

” না এমনি! ”

” যাও এসে গেছি আমরা। ” সাদিব কথাটা বলতে দেরি আমার গাড়ি থেকে নামতে দেরি হলো না। গাড়ি থেকে নেমে কোনো দিক না ভেবে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি হঠাৎ মনে হলো, ” এমন অভদ্রতা কোথা থেকে শিখলাম, উনাকে একবার ভেতরে আসতে বলা উচিত ছিলো। নয়তো মা জানতে পারলে ক্যালাবে। ” ভেবে পেছনে ফিরলাম। ততক্ষণে তিনি চলে যেতে নিচ্ছিলেন। আমি বললাম, ” আপনি যাবেন না? ”

” না! আমার হাতে এখন সময় নেই। পরে এসে নাহয় তোমায় নিয়ে যাবো। ” বলে দাঁড়ালেন না, চলে গেলেন।

বাসার ভেতরে ডুকতে তকি দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে চেচিয়ে বলে উঠলো, ” আপু অবশেষে তুই আসছিস৷ ছোটাপু কই গেলি তুই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আয়। বড়াপু আসছে দেখে যা। ”

তকির আওয়াজে তনিমা নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। পরপর মামনিও ছুটে এলেন। বোঝা যাচ্ছে তিনি তখন নামাজ পড়ছিলেন। শুনে তিনিও সেভাবে চলে এসেছে। মামনি জড়িয়ে ধরে আমার কপালে চুমু খেলেন৷ মুখে হাত বুলিয়ে বললেন, ” আমার মেয়েটা দু’দিনে কেমন শুকিয়ে গেছে। খাওয়া দাওয়া মনেহয় ঠিক মতো করোনি! ”

আসার সময় মনে মনে ভাবছিলাম নিশ্চয়ই মা এ প্রশ্নটা সবার আগে করবে। একদম ঠিক ধরেছি। সাইড থেকে তনিমা জবাব দিলো, ” তোমার মেয়ে এমনিতেও দামড়া কদু ছিলো না কোনো কালেই। তাই না রে তকি? ”

তনিমার কথায় তকি সম্মতি জানালো। তাদের ইয়ার্কি মারা কথা শুনে মামনি তাদের চোখ পাকালেন। তকির সেই চিরচেনা সম্বোধন এবং মায়ের চোখ পাকানো দেখে আমি আমার হাসি থামিয়ে রাখতে পারলাম না। ” মেয়েটা আসতে না আসতে খোঁচা মারা শুরু করে দিলি? বলি ভালো হবি না তোরা কোনোদিন? ” মামনি আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ” সাদিব আসেনি সাথে? কই দেখছি না যে? ”

” এসেছে, গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে গেছে। ” শুনে মায়ের মুখখানি একটু ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। পরক্ষণে বললেন, ” আমি নিশ্চিত তুই আসতে বলিস নি। তোর তো এমনিতেও কান্ড জ্ঞানের অভাব আছে। ”

” বলেছি। বললো কাজ আছে এখন আসতে পারবে না। পরে এসে নিয়ে যাবে। ”

তনিমা বললো, ” রাখো তো। আসার হলে আসুক না আসতে চাইলে না আসুক। আমাদের আপাতত আপু হলেই চলবে। আপু চল তো। কতদিন তোর সাথে মারামারি লাগি না। ”

” আমারও তোদের মারতে না পেরে হাত দুইটা উশখুশ করতেছে, চল! ”
.

.
নিজের রুমে ডুকে শব্দ করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলাম। তনিমা রুমটা বেশ ভালোভাবে গুছিয়ে রেখেছে। অথচ আমি থাকাকালীন সে এখানের জিনিস ওখানে নিয়ে রাখতো না। তনিমা পাশে বসে আমার ফোন ঘাটাঘাটি করছে। গ্যালারিতে প্রিয়ন্তির ছবিগুলোকে খুঁটে খুঁটে দেখতে লাগলো। তনিমার এহেন কান্ডে বেশ বিরক্তি বোধ করলাম। বিরক্তিতে মুখ থেকে ‘চ’ শব্দটি বেরিয়ে আসলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, ” কি দেখিস এতো? ওরে দেখার মতো এতো কি আছে বুঝলাম না আমি! ”

” আপু একটা সত্যি কথা বল তো? ”

” তোর আবার এমন কি সত্যি জানার আছে? ”

” আরে শোন না, খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা কিন্তু। এটার জন্য গত দুইদিন আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারি নাই। তুই এবার সত্যিটা বলে আমার ঘুমটা এনে দে। ”

” কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা বল শুনি? ”

” প্রিয়ন্তির বয়ফ্রেন্ড কি তোরে মেনে নিছে? না মানে শত হলেও তো সাদিব ভাইয়া প্রিয়ন্তির জন্য তোকে সেবার রিজেক্ট করেছিলো। ”

তনিমা সম্পর্কে আমার ছোট বোন হলেও তার সাথে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও রয়েছে। যত ঝগড়াঝাটি মারামারি হোক না কেন দিন শেষে দু’জন দুজনের সাথে কোনো কথা শেয়ার না করে থাকতে পারি না। সেই সুবাদে প্রতিবারের মতো তনিমা নিজের আগ্রহ দমিয়ে রাখতে পারেনি।

” মেনে নেওয়াটা যদি এতোটা সহজ হতো তনিমা, তাহলে পৃথিবীতে ভালোবাসা নামক চার অক্ষরের শব্দটা ভীষণ তুচ্ছ হয়ে যেত। ”

তনিমা যা বুঝার বুঝে গেছে। তাকে আর বিশেষ কিছুই বলতে হয়নি। পরক্ষণে সে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে নিত্যদিনকার আলোচনায় মেতে উঠলো।

চলবে…….?

[ ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন! ]